#অরূপ_জ্যোৎস্না
পর্ব-২৮
লেখনীতে-তানিয়া শেখ
ভোরে উঠে নিরুপমা টের পেল শুধু ঠান্ডা সর্দি লাগেনি, গায়ে হালকা জ্বরও এসেছে। ঔষধ খেয়ে নিলো। কোনোরকমে নাস্তা বানিয়ে ফ্লোরে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল একেবারে দুপুরে। শরীরটা তখন আরও দুর্বল। নাক ও চোখ দিয়ে অনবরত টপটপ করে পানি পড়ছে। মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। মাথা ধরেই উঠে পড়ল। টিউশনিতে যেতে হবে। ঘরে কাঁচা তরকারি নেই, আনাজপাতিও আজই শুধু চলবে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বোরকা পরছিল। বিছানায় বসা ওর মা জিজ্ঞেস করল,
“আবার শরীরলডা খারাপ হইল তোর? কেমনে চলোস আমি বাপু বুঝি না!”
“তুমি খেয়েছ সকালে?” নিরুপমা উপেক্ষা করল মায়ের অনুযোগ। নিলুফা বেগম হাঁপ ছেড়ে বললেন,
“খেলাম! তা তুই এই শরীল নিয়া এহন কই যাস?”
“টিউশনিতে। গত মাসে অনেকদিন বন্ধ গেল। প্রতিমাসে এমন হলে না করে দেবে না? এই ক’টা টিউশনিই বাড়তি টাকার উৎস। ও চলে গেলে এই বাজারে বাবার পেনশনের টাকায় চলা মুশকিল হয়ে যাবে। ঘরে আনাজপাতিও নেই। একেবারে বাজার করেই ফিরব।”
রান্নাঘরে গিয়ে দেখল এখনও পাঁচটা রুটি রয়ে গেছে। মোট বানিয়েছিলই আটটা। ওর মাকে খাইয়ে লোকটা খায়নি? নিরুপমা ও রুমে গেল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইলে গেমস খেলছে। জিজ্ঞেস করবে কেন খায়নি? কী দরকার! কাল অকারণে কত কথা শোনাল। তার কারণেই নিরুপমার এই দুরবস্থা।
“নিরুপমা!”
নিরুপমা ফিরে তাকায়। চোখ আর নাক মুছে নিলো। ঘুম ঘুম পাচ্ছে বেজায়। ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় দিনভর এমন হবে।
“আজ টিউশনি থাক। সন্ধ্যার পরে আমি গিয়ে বাজার আনব। তুমি রেস্ট করো।”
কথাগুলো বলল এহসাস মোবাইল থেকে চোখ না তুলেই। জোর করে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে এখন দরদ দেখানো হচ্ছে! নিরুপমা কেন শুনবে? শুনবে না। কিন্তু ওর সত্যি খারাপ লাগছে। এত ক্লান্ত আর অবসন্নতা পেয়ে বসেছে যে নড়তে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে ঘাপটি মেরে বিছানায় শুয়ে থাকতে। নিরুপমা বোরকা খুলে মোবাইলটা চাইতে এলো,
“কল করে জানিয়ে দিই অসুখ করেছে আজ আর টিউশনিতে যেতে পারব না।”
এহসাস কিছু বলতে গিয়েও বলল না। অনিচ্ছায় মোবাইলটা দিয়ে দিলো। প্রতি মাসে এভাবে অসুখের নাম করে টিউশন বন্ধ দেওয়াটা গার্ডিয়ানদের ভালো লাগল না। যদিও ওকে কিছু বলল না সামনা-সামনি। কিন্তু কথার ধরনে নিরুপমা বেশ বুঝল। ওর নিজেরও বার বার টিউশন কামাই দিতে খারাপ লাগে। এত সমস্যা কেউ মেনে নেবে না। কথা শেষ করে মোবাইলটা বিছানায় রাখল। এহসাস ওর মলিন মুখে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। একটু পর মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল,
“জানো যে বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না তাহলে ভিজতে গেলে কেন?”
“শখ হয়েছিল তাই।” চিবিয়ে চিবিয়ে বলল নিরুপমা। জোর করে ভিজিয়ে আবার বলছে ভিজতে গেলে কেন! আর সেখানে দাঁড়াল না। এহসাস নিঃশব্দে হাসল। হাসিটা ঠিক ওর চোখ পর্যন্ত পৌঁছাল না। ভাবলেশহীন দৃষ্টি মোবাইলের স্ক্রিনে। গেম শুরু হতে সময় নিচ্ছে।
সন্ধ্যা নামার পর এহসাস বোরকায় আবৃত হয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। জীবনে এই প্রথমবার হয়তো বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়েছে। একটু পর ওর পিছু পিছু চললো নিরুপমা। ঠাণ্ডা -সর্দিতে নাক টানছে। জ্বর এখন নেই।
“তোমার আসার প্রয়োজন ছিল না।” বলল এহসাস। প্রয়োজন অবশ্যই ছিল। পাঁচশ টাকা নিরুপমার কাছে পাঁচ হাজার টাকার সমান। বিগত দিনগুলোতে এই লোকের হাবভাবে ও বুঝে গেছে আলালের ঘরের দুলাল সে। কোনোদিন বাজারের ব্যাগ ধরেছে কি না সন্দেহ রয়েছে। শেষমেশ ওর পাঁচশ টাকা না জলে যায়! তাই তো সাথে যাচ্ছে। কিন্তু সে কথা মুখের ওপর বলবে না নিরুপমা। লোকটার সাথে কথা বলতে গেলে কেন যেন ঝগড়া হয়ে যায়। অথচ, ও বেজায় চেষ্টা করছে সৌজন্য বজায় রাখতে।
নীরবে হাঁটছে দুজন। পথচারীদের কয়েকজন যেতে আসতে লোকটার দিকে তাকাল। প্রায় ছ ফুটের কাছাকাছি লম্বা। বোরকাতে কেমন যেন লাগছে। নিরুপমা তার চলার ভঙ্গি লক্ষ্য করল। মেয়েলিভাবে নেই। পথচারীরা কি সন্দেহ করছে কিছু? তাদের দৃষ্টি বুঝার চেষ্টা করতে গিয়ে কারো গায়ে ধাক্কা খেলো। ডান হাতে বেশ জোরেই লেগেছে। উফ! করে এককোণে জবুথবু হয়ে গেল। মধ্য বয়স্ক লোকটার মধ্যে কোনো ভাবোদয় হলো না। নির্লিপ্ত ভাবে হেঁটে চলে গেল।
“চোখের মাথা খেয়েছ?” চাপা ধমকটা এলো সামনে থেকে। নেকাবে অনাবৃত চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে রেগে আছে৷ ডান বাহু ডলতে ডলতে নিরুপমা বিড়বিড় করে,
“লোকটা ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরেছে। ধাক্কা মেরে এরা কী সুখ পায়?”
“গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসব?”
“হুঁ?”
“হুঁ, হুঁ করবে না। আগে হাঁটো।” নিরুপমাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে পিছু পিছু চলল এহসাস। পাশ দিয়ে কোনো পুরুষ যেই যাবে অমনি নিরুপমার পাশে গিয়ে হাঁটে। ওই লোকটা তাড়াতাড়ি চলে না গেলে আজ ওকে দেখে নিতো এহসাস। ছদ্মবেশে না থাকলে যে হাতে নিরুপমার হাত ছুঁয়েছে সেটা ভেঙে ফেলত। এখন পারছে না বলে দাঁত কামড়াচ্ছে।
নিরুপমার ধারণা সত্যি হলো। একটা কিছুও ঠিকমতো দরদাম করতে পারল না সে। যে যা দাম চাচ্ছে তাই দিতে রাজি হয়ে গেল। এভাবে পাঁচশতে নিরুপমার বাজার অসমাপ্ত রয়ে যাবে। নিরুপমা তাই রাগ করেই বলল,
“আপনি পিছু পিছু আসুন বাজার আমি করছি।” ও ভেবেছিল প্রতিবাদ করবে। আশ্চর্য! তা আর করল না। সুবোধ বালকের মতো ব্যাগ হাতে নিরুপমার পিছু পিছু পুরো বাজার ঘুরে বাজার কিনল। এই পুরোটা সময় নিরুপমাকে স্পর্শ করতেও কেউ পারেনি। ভালো কি লাগেনি নিরুপমার? কিন্তু স্বীকার করবে না। বাজার করে যখন ফিরবে হঠাৎ এহসাস থেমে গেল।
“থামলেন কেন?” বলল নিরুপমা। সামনের বড়ো রুই মাছটা দেখিয়ে এহসাস বলল,
“ওই রুই মাছটা কিনব।”
“এই মাছ কেনার সামর্থ্য আমার নেই।”
“আমার আছে। আমি কিনব।”
“আপনি মাছ খান না, তবে?” তখনই ওর মনে পড়ল মায়ের কথা। গতকাল মা বলেছিল জ্যান্ত বড়ো একটা রুই মাছ খেতে ইচ্ছে করছে তার। নিরুপমা বড়ো বড়ো চোখে তাকাল,
“আপনি আমার মায়ের জন্য কিনবেন?”
“কত বুদ্ধিমতিই না তুমি!” দোকানদারের দিকে ফিরল এহসাস। তারপর ওকে চাপা গলায় বলল,
“জিজ্ঞেস করো সবচেয়ে বড়ো মাছটার দাম কত।”
“জীবনেও না।” নিরুপমা এগিয়ে যাচ্ছিল। এহসাস ওর হাত চেপে ধরল।
“নিরুপমা!”
বাজার ভর্তি লোক। দোকানদার ওদের দেখছে। কী বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললো লোকটা! হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“মা ওরকম বলেই। এক টুকরো কী দু টুকরো খাবে। খামোখা অত টাকা নষ্ট করার মানেই হয় না। আপনি বাদ দিন।”
“তোমাকে যা বলেছি তাই করো। টাকা আমার সিদ্ধান্তও আমার।”
নিরুপায় হয়ে নিরুপমা মাছের দাম করল। আটশ টাকার মাছটা কেটেকুটে ব্যাগে ভরে শান্ত হলো লোকটা। রাগে থম ধরে রইল নিরুপমা। মা কেন যে ইদানীং বাচ্চাদের মতো এটা ওটার বাহানা করছে! আর এই লোক পূরণ করছে সবগুলো বাহানা। নিরুপমা মোটেও খুশি না এসবে। ওর অপারগতা ওকে যেন কটাক্ষ করে। ঋণী করে, মুখাপেক্ষী করে এই লোকের সামনে। নিরুপমা আর যার কাছে মুখাপেক্ষী হোক এই লোকের কাছে হতে চায় না।
“চলো।” কী প্রসন্ন শোনাচ্ছে তাকে! নিরুপমার ঠিক তার ভিন্ন অবস্থা। এখানেই বুঝি দাতা আর গ্রহীতার পার্থক্য।
নিরুপমা আগে আগে হাঁটছে। একটু ফাঁকা রাস্তায় এসে এহসাস ওকে বলল,
“মিছেই রাগ করছ। আটশ টাকা এ আর কী!”
শ্লেষের সাথে হাসল নিরুপমা।
“আপনার কাছে আটশ টাকা হয়তো হাতের ময়লা। ওই আটশ টাকা আয় করতে পুরো মাস লেগে যায় আমার।”
“তুমি এখন উপার্জনের খোঁটা দিচ্ছো।”
“ভুল। আমি আমার জীবনের বাস্তবতা বলছি। এই যে আমার মা যখন যা আবদার করছে এনে দিচ্ছেন সেটা আপনার জন্য আহামরি কিছু হয়তো না। কিন্তু এই বিলাসিতার অভ্যাস গড়ে আমাকে বিপদে ফেলছেন তার ধারণা আছে? আপনি যখন থাকবেন না তখন আমি কী করে আমার মায়ের এত এত আবদার পূরণ করব? কিছু দিতে না পারলে অকর্মা, অপয়া, বোঝা মেয়ের মানুষ বলে গালমন্দ আমাকেই তো শুনতে হবে। আমার মায়ের কাছে আমি এমন এক সন্তান যে তাকে সুখ, শান্তি কিছুই দিতে পারেনি। আপনি তার শূন্যতা, তার জ্বালা আরও বাড়িয়ে দিয়ে যাবেন। এরপর সে চাইবে আমি তার সন্তান না হয়ে যদি আপনি হতেন! এই তাচ্ছিল্য, ক্ষোভ বড্ড অসহ্যের!”
নিরুপমা কাঁদুনে না। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর চোখে অশ্রু এলো। গলা ভেঙে গেল। ঠান্ডা সর্দিকেই দোষ দিলো।
এহসাস বাজারের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে। থামল ওর পা। ওর মনে নিরুপমাকে নিয়ে অনেক ভাবনা আছে। যার নিরানব্বই ভাগই নিরুপমার জন্য সুখকর না। একদিন সেই সব কারণে কাঁদবে মেয়েটা। এই তো এখনও কান্না প্রায় অবস্থা। কিন্তু এহসাসের ভালো লাগছে না। নিরুপমার মা কোনোকিছু আবদার করে না পেলে ওকে বকে, কথা শোনায়। এহসাসের কেন যেন ভালো লাগে না। প্রথম প্রথম সেই কারণেই আবদার পূরণ করত। আজকাল ভালো লাগায় করে। এ যে নিরুপমার কান্নার কারণ হবে তা ও কল্পনাও করেনি।
“তোমার মায়ের আবদার পূরণ না করলে যদি তোমার ভালো লাগে তবে করব না।” এহসাস পাশে এসে বলল। নিরুপমা তাকায় ওর দিকে ছলছল চোখে। কান্নার পানি না ঠাণ্ডার ঠিক বুঝে উঠল না।
“আমি আর তোমার কষ্টের কারণ হতে চাই না নিরুপমা। সুখের কারণ হতে চাই।” বলল এহসাস। মিথ্যা বলল। একদিন ওরই কারণে জীবনের সবচেয়ে বড়ো কষ্টটা পাবে। অবিশ্বাস করুক, অবিশ্বাস করুক। মন্ত্রের মতো জপতে লাগল ও মনে মনে। নিরুপমা অনিমেষ চেয়ে রইল। এক মুহূর্ত মনে হলো অবিশ্বাস নেই ওই দৃষ্টিতে! পস্তাবে এই মেয়ে। নিরুপমার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ল। চোখ মুছে বলল,
“ঠাণ্ডা লাগলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কান্না ভাববেন না যেন।” হাসল মনে হয় একটু। হাসল! আবার কিছু পথ চুপচাপ হাঁটল। নিরুপমা এবার নীরবতা ভেঙে আস্তে আস্তে বলল,
“আপনি সত্যি আমার পরোয়া করেন?”
“নিজের চাইতেও বেশি।” ফের মিথ্যা! কিন্তু কোথাও একটু সত্যি আছে। এহসাস তা মানে না, মানবে না।
নিরুপমা একটু অবাক হলো। ও আশা করেনি এই সত্যি বা স্বীকারোক্তি।
“কেন? দুদিনের পরিচয়ে এত পরোয়া কে করে?”
“আমি। সেটাও শুধু তোমার, নিরুপমা। দিনক্ষণের হিসেব করে অনুভূতি চলে না। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট বোঝো? যদি বলি ওটাই হয়েছে তোমাকে দেখে আমার। বিশ্বাস করবে?”
মনে মনে বলে,
“বিশ্বাস করো না নিরুপমা। তুমি অবিশ্বাসী। তাই থাকো।” নিরুপমার পা থমকে যায়। তাকায় না। তারপর আবার হাঁটে।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করব?” ইতস্তত করে বলল নিরুপমা। ওর গলা আরও কোমল, আরও মধুর শোনাচ্ছে। এহসাসের জন্য ভালো। এহসাস স্বভাবতই মৃদু হাসল,
“শুধু একটা? আমি তো চাই হাজারটা করো। সেই অছিলায় তোমার এই কোকিল কণ্ঠ শোনার ভাগ্য হবে।”
“আপনি দেখছি ফ্লাটিংএ বেশ ওস্তাদ। কতজনকে পটিয়েছেন এমন করে।”
“চেষ্টা তো করেছি অনেক। কিন্তু কেউ পটেনি। তুমি পটবে? প্লিজ পটে যেয়ো, নিরুপমা। জীবন সার্থক হবে আমার।”
ফের মৃদু হাসল নিরুপমা। এহসাস হাসল না।
“আপনি পারেনও।”
“পটলে?”
“একদমই না। আমাকে পটানো এত সহজ না।” তোমার জন্য ভালো। মনে মনে বলল এহসাস। মুখে বলল,
“চ্যালেঞ্জ করছ? এহসাসকে চ্যালেঞ্জ করা বিপজ্জনক জানো তো?”
এহসাস! নিরুপমা চকিতে ঘুরে দাঁড়ায়। এই নাম জানতেই এতক্ষণ ইতস্তত করছিল।
“আপনার নাম এহসাস?”
“এহসাস আরমান।”
নামহীন একটা মানুষের নাম জানাতে এত সুখ লাগে! পরিচিত লাগল নামটা। মনের ভুল না এই নামে কাওকে চিনত? খামোখা এক নাম নিয়ে এত কেন ভাবছে।
“সুন্দর নাম।”
“আর আমি?”
“সুন্দর না।” অতি সুন্দর। মনে মনে বলল নিরুপমা। এহসাস মন খারাপের ভান করে বলল,
“একটুও না?”
“একটুও না।”
নিরুপমা ঠোঁট চেপে হাসি সংবরণ করে বলল। এহসাস চুপ। নিরুপমা পেছন ফিরে বলল,
“রাগ করলেন?”
এহসাস জবাব দিলো না। ওকে পাশ কাটিয়ে হেঁটে চললো। নিরুপমার ঠোঁটের হাসি নিভে যায়। একটু বেশিই মজা করে ফেললো কী! এই ওর সমস্যা! কখন কতটুকু মজা করতে হয় জানা নেই।
“আমি মজা করে বলেছি।”
“তাহলে সিরিয়াসলি বলো এবার।” এহসাস থামল।
“বলো আমি সুন্দর, সুদর্শন।”
নিরুপমা ঠোঁট চেপে রইল। জীবনেও বলবে না। এহসাস ফের রাগ করার ভান ধরে হাঁটতে লাগল। নিরুপমা চুপচাপ পিছু পিছু এগোলো।
“আপনার হাতে দুটো ভারি ব্যাগ। একটা ব্যাগ আমাকে দিন।”
এহসাস কথা বলল না। ব্যাগও দিলো না। ওর হাঁটার গতির সাথে পেরে উঠছে না নিরুপমা।
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“কী ঠিক আছে?”
“আপনি যা বললেন তাই।”
“কী বলেছি?”
“উফ! আমি আর কিছু বলব না। যা বলার বলেছি। তাতেও যদি আপনার ইগো সন্তুষ্ট না হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই।”
এহসাস হাসল। কিন্তু বুঝতে দিলো না।
“ইগো! আমার তোমার মতো অত ইগো নেই, নিরুপমা। আমাকে তোমার সম্পর্কে ওই একই কথা বলতে বললে আমি বিনা বাধায় বলব, পৃথিবীতে বহু সুন্দরী নারী আছে। কিন্তু তুমি নিরুপমা একটাই, আমার চোখে অনিন্দিতা, অপরূপা।”
নিরুপমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। কী বলবে! হাসি মিলিয়ে গেল ঠোঁট থেকে। সামনের রাস্তায় দৃষ্টি স্থির রেখে হাঁটতে লাগল। পা দুটো এত ধীরে চলছে কেন! কখন ঘরে পৌঁছাবে! বাড়ি দেখা যেতে ও এক প্রকার দৌড়ে সিঁড়িতে উঠে গেল।
চলবে,,,