অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ১৯

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৯

ইমরান মাথা চুলকাচ্ছে আর চোখ বড়বড় করে তাকাচ্ছে।
-“রিপা শাড়িটা না খুললে কী হতো??? শাড়িটা পড়েই শুয়ে পড়না। শরীরে কাপড় না থাকলে যে আমার ভীষণ লজ্জা লাগে।

-“আহ্ যতসব ন্যাকামির কথা শুরু করছে এই রাতে। তুমি মনে হয় শাড়ি ছাড়া আমার পাশে ঘুমাও নি?

-“কবে ঘুমিয়েছিলাম। দিন,,তারিখ,,,মাস বলে দাও তো। আমার যে মাথায় কিচ্ছু আসছেনা।

-“বাহ্ রে আমি এখন সময়ের গনিত কষতে বসবো নাকি!!
শোন আমি শাড়ি খুলেই তোমার পাশে ঘুমাবো। তা ও আবার জড়িয়ে ধরে। (অন্য দিকে ফিরে হাসতে লাগলো রিপা)

-“কী যে বলো না তুমি। আমার পাশে কেনো ঘুমাবে। ফ্লোরে শুয়ে পড়ো।

-“এই রে কত্ত শান্তি তোমার। আমি বিছানায় না ঘুমিয়ে ফ্লোরে ঘুমাবো। আমি বলি কী তোমার যদি এতই ফ্লোরে ঘুমাতে ইচ্ছা করে তাহলে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
.

রিপা দরজটা আটকে দিয়ে ইমরানের দিকে এগিয়ে আসছে।

—এ কী তুমি দরজা…..আটকালে কেনো?? তোমার উদ্দেশ্যটা কী বলতো?? তুমি কী আমার……!

-“আমি কী করবো তোমার?? আমার কী কিছু করার আছে তোমাকে?? যা করার তা তো তোমাকেই করতে হবে।

-“রিপা বিছানার পাশে এসে গায়ের ওড়ণাটা খুলে খাটের পাশে রাখতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে ইমরান।

-“কী ব্যাপার রিপা তুমি দেখছি ব্লাউজ ও খুলে ফেলার চেষ্টা করছো কিন্তু আমি ও বলে দিলাম আমার জানি কোন ক্ষতি না হয়। তা হলে তোমার খবর করে দিবো।

.
.

রিপার হাসতে হাসতে প্রায় পেটের চামড়াসহ ব্যাথা করছে তবুও ইমরান আবোল তাবোল বলেই যাচ্ছে। থামার নামই নিচ্ছেনা।

আমি পড়েছি থ্রি-পিচ আর সে স্বপ্ন দেখছে আমি শাড়ি পড়েছি।
এত পরিমাণে কী যেনো খেলো বললো।
ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়ছে হুইস্কি। বাহব্বা কী নাম রে বাবা।
কোন ব্যাটায় এমন নাম দিলো শালাকে পেলে জুসের মতো খেয়ে নিতাম।
.

রিপা গিয়ে বিছানার উপরে বসলো।
ইমরান আরেকটু নড়েচড়ে বাসলো। তারপর রিপার দিকে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে।

-‘এভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন??

-“আমি তোমাকে ডাবল ডাবল দেখছি। মনে হচ্ছে তুমি ২ টা। ওই খানে একটা আর এখানে একটা। আজকে তুহিন আমাকে দু-পেগ বেশী খাইয়ে এই হাল করেছে। শালারে পেলে হয় আমি ও হারে হারে বুঝিয়ে দিবো। বেশী খাওয়ার পরে তো কথাই বলতে পারছিনা। দুনিয়াটা গোল গোল করে ঘুরছে।
.

রিপা শাড়ি আর ব্লাউজটা খোলা কী খুব বেশী জরুরী ছিলো। মাই মিন না খুলতে কী ঘুমানো যেতো না।
.
ভাবছো একটা কথা কতবার বলছে।

রিপার এবার ভীষণ রাগ উঠলো। তারপর বললো,,,
শাড়ি আর ব্লাউজ না খুলে ঘুমানো তো যায় না। একটা কাজ করেন??

-“আপনি হয় খাট থেকে নামেন না হলে এক সাইড করে শুয়ে পড়েন।

-“এএএএএএ,,,,,ইইই রিপা তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো??

-“কী সাংঘাতিক ব্যাপার আমি আপনি করে বললাম সেটা মনে আছে আর আমি কী পড়ে আছি সেটা দেখছো না।
.
রিপা এদিকটায় আসো তো। কথা বলার ছিলো।
-“তুমি শুয়ে পড়তো কালকে বলো।
-“না,,,এখুনি বলবো।
-“একদম না। তুমি চুপ করে শুয়ে পড়ো।

ইমরানকে জোর করে বিছানায় শুয়ে দিলো রিপা।
তারপর গায়ের শার্ট খুলে দিলো,,পা থেকে জুতা খুলে দিলো। যেই না প্যান্টের দিকে হাত বাড়াবে ওমনি শোয়া ছেড়ে এক লাফ দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো সে।

-“কী করছো ইমরান??

কিছুক্ষণ বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে রিপার দিকে।
রিপা তো রাগে ফোসাতে থাকলো।
-“তুমি নিচে নেমেছো কেনো?? উপরে আসো।
-“প্যান্টের উপরে হাত দিয়ে বললো,,,
তুমি কী করছিলে এতক্ষণ??
-‘কী করছি??
-“নিজে তো সব কিছু খুলে বসে আছো আর এখন আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছো।
এখন আমার সব খুলে দিয়ে কালকে সকালে পেপারের হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা থাকবে বউয়ের হাতে স্বামী ধর্ষণ!

রিপা এবার রাগী গলায় বললো,,,,
-“আমি তোমাকে ধর্ষণ করবো??? কীভাবে শুনি??

-“ইমরান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,,,
এই রে নেশাটা বোধহয় বেশী হয়ে গেছে।
রিপার মাথায় কোন কাজ করছে না। সত্যি কী ইমরান নেশার ঘোরে আছে নাকি অন্য কিছু।
রিপা ইমরানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তারপরে ইমরানের মুখের কাছে কোমড়টা একটু ভাজ করে মুখটা নিতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে ইমরান।
-“তুমি তোমার নগ্ন শরীরটা নিয়ে দূরে যাও।

রিপার শরীরে এবার রাগ কটমট করে জ্বলছে।
.

এবার সত্যি সে গায়ের কাপড় খুলে ইমরানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কপালে চুমো এঁকে দিলো।
এতক্ষণ অনেক সহ্য করেছি।

তুমি কী নেশার ঘোরে আছো???আমি এবার তোমাকে নেশা ধরিয়ে দিবো।
কথাটা বলেই ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে ইমরানের মাথায় ঢেলে দিলো।

কিছুক্ষণ পরে নেশার তন্দ্রা কেটে গেলে রিপাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলো ইমরান।
-“কী নেশা কেটেছে??

তারপরে দুজনে ডুব দিলো দুজনের মাঝে। হারিয়ে গেলো ভালোবাসার দুনিয়ায়। মান অভিমাণ,,,কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন করে দুজনের আত্না আজ এক হয়ে সমুদ্রের অতল তল দেশে হারিয়ে গেলো। যেখানে শুধু সুখ আর সুখ।
.
মধ্যরাতে দুজনে উঠে শাওয়ার নিয়ে নামায পড়ে ইমরান ঘুমিয়ে পড়লো।
রিপা রান্নাঘরে গিয়ে রাতের খাবার গরম করতে করতে প্রায় ৮টা বেজে গেলো।
.
রিপা প্রথমে ইতির ঘরে গেলো। দরজা নক দিতেই দেখে দরজাটা খোলা। ভিতরে তাকিয়ে ইতিকে না দেখে রুমের ভিতরে ঢোকে। তারপরে ওয়াশরুম চেক করে কিন্তু ইতি কোথায় ও নেই। রুম থেকে বেড়িয়ে এসে হাসির শব্দ ভেসে আসে ইমরানের রুম থেকে। দৌড়ে গিয়ে দেখে ইতি আর ইমরান হাসছে।
.
রিপাকে দেখে ইমরান বললো,,
-“এদিকে এসো।
রিপা ইমরানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর রিপার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বললো,,,ইতি এই তোর ভাবী।
আমার লাভলী ওয়াইফ। অনেক ভালোবাসি তাকে।
.
-“কালকে পরিচিত হয়েছিলাম ভাবীর সাথে আর আজকে তুমি বলায় পুরোটা হলাম। ভাবী অনেক ভাগ্যবতী। তাই তো ইমরান ভাইয়ের মতো একজন স্বামী পেয়েছে। আমার ও ইচ্ছা এমন একটা স্বামী যেনো আমার ভাগ্যে জোটে।

রিপা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,
-“দোয়া করি তোমার মনের আসা যেনো পূরণ হয়।
এখন কথা হলো কাল রাতে এত কষ্ট করে সবার জন্য রান্না করলাম কিন্তু কেউ খেলে না। তাই এখন সব আবার গরম করলাম। তাই সময় নষ্ট না করে এখুনি চলো নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
.
-“চলো ভাবী।
.
ইমরান আর ইতি গিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে বসলো।
.
রিপা একে একে দুজনের প্লেটে খাবার বাড়লো।
-‘রিপা তুমি খাবেনা।
-আগে তোমরা খাও তারপরে না হয়………
-“একদম না। তুমি আমার পাশে বসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
-“তুমি খেয়ে ওঠ আমি প………! কথাটা শেষ করার আগেই রিপার হাত ধরে ইমরানের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজের হাতে করে এক লোকমা খাইয়ে দেয় আরেক লোকমা নিজের মুখে দেয় ইমরান।
.
ইতি পাশে বসে দাঁতে দাঁত কেটে সাপের ন্যায় ফুসাতে থাকে। একটু পরে খাবার পুরোটা শেষ না করেই উঠে যেতে নিলে রিপা বাঁধ সাধলো।
-“কী হলো ইতি সম্পূর্ণ খাবারটা শেষ করলে না যে??
-“পেট ভরে গেছে। আর খেতে পারছিনা।
-“এতটুকু খেলে কী চলে??
-“আমি এমনই খাই ভাবী।
-“খাই বললে শুনছিনা। আমার কাছে যখন এসেছো বেশী করেই খেতে হবে।
.
ইতি চলে গেলো।
.
খাওয়া শেষ হলে রিপার মুখটা মুছিয়ে দিয়ে তারপরে নিজে হাত ধুয়ে মুখটা মুছলো।
রিপা একটা কথা বলার ছিলো।
.
-“হুম বলো।
-‘গতকাল আমি কী করেছিলাম আমার না কিচ্ছু মনে নেই। কালকে একটু ড্রিংকস বেশী করে ফেলছিলাম তাই সব আবোল তাবলো বলছি মনে হয় মাথার চুল টানছে আর বলছে।

-“কইইই,,,না তো সব কিছু ঠিকই ছিলো।(হেসে হেসে রিপা)
-“সব ঠিক ছিলো?
-“তা নয় তো কী??
-“ওহ্।
.
ইমরান রুমে গিয়ে রেডী হয়ে রিপাকে বলে বের হলো।
শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিলো তাই গাড়ি বের করেনি। গেটের সামনে এসে রিক্সা করে অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। ঠিক তখুনি রিক্সার সামনে কেউ এসে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। ইমরান রিক্সা দিয়ে নেমে ধরতে যাবে তখনি মুখ তুলে তাকায় রাহাত।

রাহাতকে দেখেই শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে লাগলো ইমরানের।
তারপরে রাহাতের শার্টের কর্লার টেনে ধরে জিজ্ঞাস করলো,,
-“ভিডিও ক্লিপ কোথায়??
-“কী ভিডিও ক্লিপ??
-“রিপার।
-“জানিনা।
-“জানিনা মানে কী??ভালো ভাবে বলছি ভিডিও ক্লিপটা দিয়ে দে।
-“দিবো না। কী করবি তুই??
-“আমি কী করবো সেটা তুই হারে হারে টের পাবি। দাঁড়ানোর জন্য পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাবিনা তখন।
রাহাত ইমরানকে ধাক্কা মেরে যেতে নিলো।
সাথে সাথেই রাহাতের গালে ঘুষি মারলো ইমরান। ক্ষিপ্ত হয়ে ইমরানের বুকে ও ঘুষি মারে রাহাত। দুজনের ঝামেলা দেখে অনেক লোকজন চলে আসে।
ঠিক তখুনি তুহিন এসে ইমরানকে মটর সাইকেলে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

একটু দূরে গিয়ে তুহিন গাড়িটা দাঁড় করিয়ে বললো,,
-“কী রে ইমরান। তুই রাস্তায় বসে মারামারি করছিলি কেন??
-“মারামারি না। ঘরের সম্মান ফিরে আনার জন্য লড়াই করছিলাম।
-“মানে??
-“তোকে পরে সব বলবো দোস্ত। কিন্তু ওই শালা হসপিটালের সামনে কী করছিলো?? আমাকে জানতেই হবে।
-“ওহ্ ভালো কথা কাল রাতে এই ছেলেটাকে তো হসপিটালের ফার্মেসির সামনে দেখছিলাম। হাতে ওষুধ ও ছিলো। আমার মনে হচ্ছে ওর কোন রিলেটিভ ভর্তি আছে এই হসপিটালে।
-“আচ্ছা দোস্ত। আমার একটা উপকার করে দিবি??
-“কী দোস্ত??
-“এই ছেলেটার সমস্ত খবর আমাকে বের করে দিবি।
-“ওকে ডান। আমি আজকের ভিতরে তোকে সব জানাবো।
.
-“ওকে।


রাহাতকে দেখার পরে এখন মাথায় কোন কাজ করছেনা ইমরানের। যেভাবেই হোক ভিডিও ক্লিপটা নিতেই হবে।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here