অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ২০

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২০

ইমরান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত কাটছে। তুহিন এসে ইমরানের কাঁধে হাত দিতেই চমকে উঠলো ইমরান।
-“ইমরান এত টেনশন নিস না দোস্ত। অফিসে চল।
-” হুম চল।

.
তুহিন মটরসাইকেল স্টার্ট দিলো। ইমরান গিয়ে পিছনের সিটে বসলো। তারপর কিছুক্ষণ পরে অফিসের সামনে গিয়ে গাড়িটা পার্কিং করে দুজনে অফিসে ঢুকলো।
ইমরান গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। একদম ভালো লাগছেনা। যেভাবেই হোক রাহাতের কাছ থেকে ভিডিও ক্লিপটা সংগ্রহ করতেই হবে।
কাজের প্রতি কোন মন নেই ইমরানের। সারাক্ষণ মাথার ভিতরে শুধু একটাই চিন্তা।
.
.

হঠ্যাৎ ইমরানের ফোনটা বাজতে লাগলো। কিন্তু সে কলটা রিসিভ করছেনা। কয়েকবার বাজার পরে মোবাইলটা হাতে নিলে স্ক্রিনের উপরে ভেসে ওঠে ইতির নামটা। ফোনটা রিসিভ করলে,,,,
-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,,,,ভাইয়া।
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কী খবর ইতি?? তুই হঠ্যাৎ
কল দিলি??
-“দরকার ছিলো।
-“কী দরকার??
-“তোমার আজকে সময় হবে??
-“কোন কাজ আছে?

-“হ্যাঁ। আমার কিছু জিনিসপত্র কেনার ছিলো। কিন্তু ঢাকা শহর তো চিনি না তাই একা বের হতে ভয় লাগছে। যদি তুমি আমার সাথে যেতে তাহলে ভালো হতো।

-“আমি তো সময়ই পাইনা। একটা কাজ করলেই তো হয় তোর ভাবীকে সাথে করে নিয়ে গেলেই তো পারিস।

-“না ভাইয়া। তুমি গেলেই ভালো হবে কারণ ভাবীও তো এখানে নতুন। প্লিজ ভাইয়া না করোনা। সময় করে সন্ধ্যার পরে আসো।

-“আচ্ছা দেখি কী করা যায়।

-“দেখি বললে আমি শুনছিনা। আমাকে তোমার নিয়ে যেতেই হবে এটাই ফাইনাল বলেই কলটা কেটে দিলো ইতি।
.
কথা শেষ হতেই মোবাইলটা পাশে রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসলো ইমরান। নিজে আছি নিজের চিন্তায়। এখন ইতিকে নিয়ে কী করবো? মেয়েটা আগে থেকে এমনি জোর করতো। বাবা মায়ের একমাত্র আহ্লাদী কণ্যা।
.
রিপাকে একবার কল দিয়ে জিজ্ঞাস করি কী করছে?? আর ইতির ব্যাপারটা ও বলি।
.
.
মোবাইলটা হাতে নিয়ে রিপার নাম্বারে কল দিলো,,,
কিন্তু নাম্বারটা ওয়েটিং বলছে। ভ্রু-কপাল একত্রে করে ভাবলো,,,,,রিপার নাম্বার ওয়েটিং কেন?? কার সাথে কথা বলছে? একটু পরে আবার ও কল দিলো ইমরান। কিন্তু এবার ও ওয়েটিং। সাথে সাথে মেজাজটা বিগড়ে গেলো। মোবাইলটা ডেস্কের উপরে ছুরে মারলো।
.
বিকাল ৫.৩০ বাজলে স্যারের কাছে বলে ছুটি নিলো। যাওয়ার সময়ে তুহিনকে বললো,,,
-“দোস্ত। ঐ ব্যাপাটা আজকেই খোঁজ নিস কিন্তু। আমার জানাটা ভীষণ জরুরী। না হলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

-‘ইমরান তুই অযথাই চিন্তা করছিস। আমি যখন প্রমিজ করেছি আজকেই জানাবো তাহলে মনে কর কথার হেরফের হবেনা।

-“তোর উপরে আমার বিশ্বাস আছে তাই তো তোকে দ্বায়িত্বটা দিলাম।
-“ঠিক আছে।
-“তাহলে আমি বাসায় যাচ্ছি। তোর সাথে রাতে কথা হবে।

-‘হুম।
.
অফিস থেকে নেমে রিক্সা করে বাসায় যায় ইমরান। শরীরের ভিতরে সকাল থেকে রাগ টগবগ করছিলো রিপার নাম্বার ওয়েটিং দেখে।
.
.

বাসার সামনে এসে দরজায় কলিং বেল বাজালে ইতি এসে দরজাটা খুলে দিলো।
ইমরানকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়েই রুমের ভিতরে গেলো। রিপা এসে ইমরানকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
-“ইমরান তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কেনো?? আর মুখটা এমন করে রেখেছো কেনো??

ইমরান কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে প্রথমেই রিপার মোবাইলটা খুঁজতে থাকে।
মোবাইলটা না পেয়ে রিপা বলে জোরে ডাক দিলে সাথে সাথে রিপা দৌড়ে আসে।
-“কী হয়েছে?? তুমি এভাবে চিৎকার করছো কেনো??
-“তোমার মোবাইল কোথায়??
-“আমার মোবাইল?
-“এত ন্যাকামি সেজো না। আমি কিন্তু এখন নেশার ঘোরে নেই। সম্পর্ণ সুস্থ। তাই যা বলবা সাবধাণে বলবা।

-“ইমরান তোমার কী হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেনো??

-“রাগের ভাষায় বললো,,আগে তোমার মোবাইলটা আমাকে দাও।
.
.
.

রিপা দেরী না করে মোবাইলটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথায় ও পাচ্ছেনা।
মোবাইলটা তো সকালে বিছানার উপরেই দেখেছিলাম। তারপর তো আমি আর এ রুমে আসিনি। তাহলে মোবাইলটা গেলো কোথায়??

-“আমি কোন কৈয়ফত জানতে চাইনি। তাড়াতাড়ি মোবাইলটা দাও।
-“মোবাইলটা সব জায়গায় খুঁজলো তবুও পেলো না।

ইমরান ভ্রু কপাল একত্রে করে বললো,,,পাচ্ছো না মানে?? সকালে তো ঘন্টার পর ঘন্টা কার সাথে জানি কথা বলছিলে এখন পাচ্ছো না মানে টা কী??

-“কী বলছো এসব?? কথা বলছি মানে?? কী সব উল্টা পাল্টা বলে যাচ্ছো?? আজকে ও কী নেশার ঘোরে আছো নাকি??

ইমরান কোন উত্তর না দিয়ে হঠ্যাৎ খাটের পাশে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো। সামনের দিকটায় এগিয়ে গিয়ে দেখে রিপার মোবাইলটা পড়ে আছে।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করলো কিন্তু কোন নাম্বার না পেয়ে সন্দেহ হলো রিপার উপরে। কথা বলছিলো তাহলে নাম্বার ডিলিট কেনো করবে?? তার মানে কী আবার ও…………!
না না এটা হতে পারেনা।

ইমরান কথাগুলো ভাবছে আর আড়চোখে রিপার দিকে তাকাচ্ছে।
.
একটুপরে ইতি এসে রুমে ঢুকলো।
.
ইমরান ভাইয়া আসতে পারি??
-“হ্যাঁ আয়।
-“যাবে না তুমি??
-“যাবো। তুই রেডী হয়েছিস??
-“না।
-“তাহলে রেডী হয়ে আয়।
-“আচ্ছা আমি ও রেডী হয়ে আসছি।

ইতি রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেলো।
.
রিপা ইমারানের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাতটা ধরে বললো,,,
-“কোথায় যাবে??
-“ইতি কিছু কেনাকাটা করবে মনে হয় তাই আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
-“তাই!
-“হুম।
-“কখন বললো মার্কেটে যাওয়ার কথা?? আমি তো একবার ও শুনলাম না।
-“সকালে কল দিয়েছিলো ইতি। আমি তোমাকে জানানোর জন্য কল দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার নাম্বারটা ওয়েটিং ছিলো।
-“কিন্তু ইমরান বিশ্বাস করো আমি কারো সাথে আজকে কথা বলিনি।

-“আচ্ছা এই বিষয়টা বাদ দাও।
.
.

প্রায় আধা ঘন্টা পরে ইতি সাজগোজ করে ইমরানের ঘরে এলো। মনের মতো করে সেজেছে সে। আজ প্রথম ইমরানের সাথে বের হচ্ছে। গোল্ডেনের উপরে সাদার কম্বিনেশনে জামদানি শাড়ি পড়ছে।

ইমরান ভাইয়া তুমি কী রেডী হয়েছো?? ইতির দিকে চোখ পড়তেই ইমরান যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। মুখ থেকে কোন কথা সরে না। ইতিকে আজকে দারুণ লাগছে। কিন্তু ও যে এমন অদ্ভুত সুন্দরী আগে কোনদিন দেখেনি সে। এতদিনের সেই পিচ্ছি ইতি আজকে এত বড় হয়ে গেলো। বিমুগ্ধ চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে ইমরান।
.
ভাইয়া শাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে বলতো??
-‘ভালোই লাগছে।

এদিকে রিপার পুরো শরীর রাগে জ্বলছে। কী শুরু করেছে দুজনে। আর ইমরান কী পাগল হয়েছে নাকি?? মেয়েটির সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেনো সে তার গার্ল ফ্রেন্ড।
.
ইমরান বললো ইতি চলো।
তারপর দুজনে বেড়িয়ে গেলো।
.

যাওয়ার সময় রিপাকে বলে যায়নি। তাই ভীষণ কষ্ট পেলো রিপা।
.

.

গলির সামনে গিয়ে রিক্সা ভাড়া করে দুজনে পাশাপাশি বসলো।
.
.

রিক্সা চলছে ধীর গতিতে। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। ইতির ও ইচ্ছা রিক্সা আস্তে চলুক। ইমরানের সাথে কখনও পাশাপাশি রিক্সায় ওঠেনি। তাই ভীষণ ভালো লাগছে তার। আজকের অনুভূতিটা একটা স্মারণীয় দিন হিসাবে মনে থাকবে ইতির। ইমরানের প্রতিটি স্পর্শ আজ তার ভিতরে অদ্ভুত শিহরণ জাগাচ্ছে।
.
.
.

হঠ্যাৎ ইমরানের চোখ যায় সেই হসপিটালের দিকে।
রাহাত চায়ের দোকানের বসে পায়ের উপরে পা তুলে চায়ের মগে চুমুক দিচ্ছে আর সিগারেট টানছে।
রাহাতের মুখটা দেখে শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো।
কিন্তু পাশে ইতিকে দেখে আর কোন কথা বলনি।

.
.
ইতিকে সাথে নিয়ে মার্কেট করা হয়ে গেলে বাসায় ফিরবে ঠিক তখনি তুহিনের কল।
-“হ্যালো দোস্ত,,,গুড নিউজ। খোঁজ নেওয়া শেষ।

-“রিক্সায় নড়েচড়ে বসলো ইমরান। তুহিন কী জানতে পারলি??
-“যে ছেলেকে তুই দেখাইছিস ওর নাম রাহাত। ছেলেটি তো তোদের বিভাগেরই।
-“ওই ব্যাটা আমি তো তোকে আগেই বলেছি আমি ওকে চিনি। কিন্তু কী কারণে এসেছে সেটা খোঁজটা নিতে বলেছি তোকে।

-“আমাকে বলতে দে। আমি তো সব কিছু একদম ভালো করে খোঁজ নিয়েছি। রাহাতের বউয়ের গতকাল রাতে ছেলে হয়েছে তাই সে হসপিটালে এডমিট আছে। এর জন রাহাত এখানে।
.
.
তুহিনের কথাশুনে হা হয়ে যায় ইমরান। কী বলছিস রাহাতের ছেলে হয়েছে মানে??
-“এই শালা তুই খালি মানে মানে করিস কেন?? তুই তো বিয়া করছিস এখন তো তোর বউ ও প্রেগন্যান্ট হতে পারে তাই বলে কী আমি চমকে উঠবো।

-“তুই এখন কোথায়??
.”আমি হসপিটাল থেকে নেমেই তোকে কল দিলাম।

-“তাহলে দাঁড়া আমি আসছি।
-“ওকে।

ইমরান রিক্সাটা দাঁড় করায় হাসপিটালের সামনে।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে বললো,,দোস্ত তোর গাড়িটা দে তো। আমি ইতিকে বাসায় দিয়ে আসছি।
.

তারপর ইতিকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসায় সামনে এসে গাড়িটা থামলে রিপা জানালার পর্দা ফাঁক করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দুজনকে দেখেই
বড্ড অভিমাণ হলো। ইতি ইমরানের কোমড় জড়িয়ে বসে ছিলো। ইতিকে তেমন সুবিধে মনে হয়না রিপার।
.

.

ইতিকে রেখে চলে যায় ইমরান।
হসপিটালের সামনে গিয়ে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে তুহিনকে সাথে নিয়ে হসপিটালে ঢুকলো।

-“তুহিন কত নাম্বার কেবিন??
-“৩০৬ নাম্বার।
-“ওকে।

কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় দুজনে। হঠ্যাৎ নার্স কেবিনের দরজাটা খুলে বেড়িয়ে আসলে ভিতরের দিকে ইমরানের চোখ পড়লে হতভম্ভ হয়ে ওঠে ইমরান।
কী দেখছে সে?? স্বপ্ন না তো।

নিজের হাতে চিমটি কাটলে ব্যাথা অনুভব করলে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন না সত্যি।

কিন্তু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
বিথী রাহাতের ওয়াইফ!
.

চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here