#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০২
ফুপির পাশে সোফায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছি আমি। মেহমান আসা মানেই আমার মাঝে ভদ্রতা বিরাজমান।। এই যেমন এখন। মেহমান না থাকলে এতক্ষণে হয়তো পা তুলে সোফায় শুয়ে থাকতাম। কিন্তু মেহমান থাকায় বিষয়টা আর সম্ভব হচ্ছে না। আবার এখান থেকে যেতেও পারছি না। কারণ ফুপি আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। ঠিক পাশের সোফায় সাদি ভাই বসে ফোন ঘাটছেন। ঠিক এই কারণেই আমি এখানে বসে থাকতে চাইছি না। এই লোকটাকে আমার সহ্যই হয় না। পুরো ফেমেলিতে শুধু ওনারি প্রশংসা হবে? কেনো? আমি কি দোষ করেছি?কথাগুলো ভেবেই মুখ ভেংচি কাটলাম আমি। ভাবনায় ছেদ পড়লো ফুপির কথায়,
___” আজ আমি একটা প্রস্তাব রাখবো তোমাদের সামনে। সাদির আব্বুর সাথে কথাও বলেছি। সে শুনে সম্মতি দিয়েছে।তাই না সাদির আব্বু?”
ফুপা সম্মতি দিলেন। মাথা নাড়িয়ে বললেন,
___” হ্যা একদম।আমি আর সাদির আম্মু আপনাদের একটা প্রস্তাব দিতে চাই। আশা করছি আপনারা না করবেন না।”
আব্বু মুচকি হেসে বললো,
___” বলেন দুলাভাই। আমাদের সাধ্যের মধ্যে হলে না করবো না।”
আম্মু আর দাদীও সম্মতি জানালো। আম্মু বেশি একটা কথা বলেন না। তাই দাদীই বললেন,
___” আরে কি প্রস্তাব দিবি সেটা বল। আজকে আমার সাদি দাদুভাই এতদিন পর এসেছে। আজ যা চাইবি তাই পাবি।”
বলেই ওনার পাশে বসে থাকা সাদি ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। সাদি ভাইও ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দাদীর হাত ধরে মুচকি হাসলেন।
ফুপি হেসে বললো,
___” এত বড় কিছুও চাইবো না। আমি শুধু অনুকে কয়েকদিনের জন্য আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইছি।”
চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার। ফুপির দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালাম।ফুপি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
___” কিরে তুই খুশি তো?”
আমি কিছু না বলে জোরপূর্বক হাসলাম। সাদি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। মুখে লেগে আছে বাঁকা হাসি। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো আমার। পরক্ষনেই ভাবলাম,আব্বু কখনোই আমাকে যেতে দিবেন না।এটা ভেবেই মনে একটু আশার সঞ্চার হলো। ঠিক তখনই আব্বু বললেন,
___” হ্যা তো নিয়ে যাও সমস্যা নেই তো।কিন্তু আপা ও তো সবে মেডিকেলে উঠেছে ওর পড়াশোনা…”
আব্বুকে আর কথা বলতে দিলো না দাদী বলতে লাগলো,
___” আরে রাখ তো তোর পড়াশোনা। কয়েকটা দিন ঘুরে আসুক। ভালো লাগবে।”
আমি অবাকের শীর্ষে।আবার রাগও হলো। চোখ ছোট ছোট করে দাদীর দিকে তাকালাম। দাদী তখনও হাসি হাসি মুখ নিয়ে সাদি ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আমি বিরবির করে বললাম,
___” এহহ!বুড়ির যেন আমার ভালো নিয়ে কত চিন্তা! ঘুরবার জন্য তো কখনোই রাজি হয় না। তাহলে আজ কেন!”
ফুপিও দাদীর কথায় সায় জানিয়ে বললো,
___” হ্যা। অনু তো কোথাও ঘুরতেও যায় না।আমাদের বাসায় গেলে ভালো লাগবে। আর আমরাও আনন্দ-ফূর্তি করতে পারবো।”
সবাই-ই সম্মতি দিচ্ছে। আমি পড়েছি চাপের মধ্যে। হ্যা ও বলতে পারব না আবার না-ও বলতে পারবো না। আমার মুখটা তখন কাঁদো কাঁদো অবস্থায় রয়েছে। ফুপি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___” যা মা!কাপড়চোপড় গুছিয়ে নে। আর বইগুলোও নিয়ে নিস। সাদি হেল্প করে দিবে।”
আমি অসহায় চোখে আব্বুর দিকে তাকালাম। কিন্তু আব্বু তো ফুপার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। এদিকে আমার হার্টবিট বেচারা লাফাচ্ছে। আম্মু আরেকবার তাড়া দিতেই আমি দৌড়ে চলে গেলাম রুমে।
রুমে এসে আপন মনে কাপড় গুছাচ্ছি আর বলছি,
___” কলেজে তো ফুপির বাসা থেকেও যেতে পারবো।কিন্তু এই রাক্ষসটার হাত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে? লন্ডন গিয়েছিল, বেশ সুখেই তো ছিলাম। ধূর ভালো লাগে না কিছু। আল্লাহ মাবুদ জানে আবার আগের মত আমার উপর জোর জবরদস্তি শুরু করবে কি না!একদমই পছন্দ না লোকটাকে আমার।”
___” কাকে পছন্দ না তোর?”
চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার। পিছনে ঘুরে দেখলাম, আমার রুমের দরজায় হেলান দিয়ে হাতের উপর হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে সাদি ভাই। মুখে লেগে আছে হালকা হাসি।আমি উঠে দাঁড়ালাম। অস্বস্থিতে হাতের মধ্যে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ঘষে চলেছি।বেশ ইনজয় করছেন সাদি ভাই।আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আমি হাত উঁচু করে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
___” দাঁড়ান। ওখানেই দাঁড়ান। ”
সাদি ভাই দাড়িয়ে গেলেন।ভ্রু কুঁচকে বললেন,
___” কি হলো?”
আমি আঙুল উঁচিয়ে বললাম,
___” একদম রুমে ঢুকবেন না। বাহিরে বাহিরে”।
সাদি ভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
___” তোর রুমে ঢুকতে আবার পারমিশন লাগে নাকি। ফুট!”
বলেই আবারো ঢুকতে নিলেন। আমি হালকা চেঁচিয়ে বললাম,
___” এই না! একদম না। একদম আমার রুমে আসবেন না বলছি।”
উনি চোখমুখ কুঁচকে বললেন,
___” ওয়াট দা হেল আর ইউ ডোয়িং!!”
___” নাথিং। আপনি শুধু বাহিরেই থাকুন।”
___” মামুকে বলবো?”(শয়তানী হেসে)
___” ক..কি ব…বলবেন?”(তুতলিয়ে)
উনি নিজের থুতনিতে হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবার অভিনয় করে বললেন,
___” উমমম,, বলবো যে আমি অনুর ওয়াশরুম ইউজ করতে চেয়েছি তাই তুমি আমাকে অনুর রুমে পাঠিয়েছিলে মামু। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি অনু কার সঙ্গে যেন ফোনে মধুর আলাপ করছে। আমি দেখে ফেলেছি তাই আমাকে রুমে ঢুকতে দেয়নি। এখন তুমি বিচার করো মামু।দ্যাটস ইট!”
বলেই চোখ টিপলেন উনি। আমার চোখ গুলো রসগোল্লার মত বড় হয়ে গেলো। আর মুখটাও হা হয়ে গেছে। কি বললো এটা? একটা অক্ষরও কি সত্যি? উনি ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
___” এবার বল! আসবো কি আসবো না?”
আমি কিছু না বলে রেগে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। আর হাত ঘষছি হাতের উপর। এবার অস্বস্তিতে না! রাগে!!আর ভাবছি,
___” লোকটা এতটা বাজে কেন? ভালো করেও তো কথা বলা যায়।আর উনাকে ঢুকতে না দেয়াটা কি আমার অন্যায় হয়েছে? বরং উনিই তো ছোটবেলা থেকে আমার সাথে অন্যায় করে আসছেন। দেখতেই পারেন না একদম আমাকে। খালি অত্যচার করেন। বকা খাওয়ান। এত কিসের শত্রুতা ওনার আমার সাথে?”
ভেবেই মুখ ভেঙালাম। আচমকা কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। চোখ বড় করে সামনে তাকাতেই হেঁচকা টানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমায় সাদি ভাই। চোখ পড়লো ওনার চোখে। আর হাত পড়লো ওনার বুকে। বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরলাম ভয়ে। সাদি ভাই হালকা হেসে বললেন,
___” তখন কি বলছিলি?”
___” ক..কখন!”
উনি আমার কপালে পড়ে থাকা ছোটছোট চুলগুলো নিজের আঙুলের সাহায্যে সরাতে সরাতে বললেন,
___” ওইযে, কাকে যেন পছন্দ না তোর!”
আমি ওনার বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বললাম,
___” কিছু না, ছাড়ুন আমায়।”
উনি ছাড়লেন না। আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করেই চলেছি। সাদি ভাই আচমকা আমার পিছনে বাঁধা চুলের খোপাটা খুলে দিতেই থেমে গেলাম আমি। চুলগুলো দুলতে দুলতে কোমড় ছাড়িয়ে পড়লো।কিছু চুল সামনে এসে গেলো। সাদি ভাই এবার আমার কোমড় ছেড়ে আমার গালে হাত দিলেন। দুই হাতে আমার গাল স্পর্শ করে বললেন,
___” নাউ ইউ লুকিং পারফেক্ট ধানিলংকা।”
আমি কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।তারপর শান্ত গলায় বললাম,
___” আপনি কি চান একটু বলবেন?”
সাদি ভাই কিছু না বলে বাঁকা হাসলেন। আমি রেগে বললাম,
___” দুদিনও হলো না ফিরেছেন আর শুরু করে দিয়েছেন আমার পিছনে লাগা?আপনাকে আমার সহ্য হয় না সাদি ভাই। আপনি বুঝেন না কেন? হুয়াই!”
সাদি ভাই আমাকে ছেড়ে দিলেন। পকেটে দুহাত রেখে একটু দূরে গিয়ে হালকা হেসে বললেন,
___” তোর ভালো লাগুক আর না লাগুক!সহ্য হোক আর না হোক! তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে ধানিলঙ্কা। আমার সব অত্যাচার তোকে সহ্য করতে হবে।”
আমি হালকা চেঁচিয়ে বললাম,
___” পাগল আমি? আমি কি পাগল যে আপনার কথা শুনবো! কেন থাকব আপনার সাথে? কেন সহ্য করবো? হু আর ইউ হাহ?”
সাদি ভাই নিঃশব্দে হেসে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। একে তো অয়নের সেই কথাটা মনের মধ্যে দাগ কাটছে৷শান্তিতে কাঁদার সময়টাও পাচ্ছি না। তার মধ্যে আরেকজনের আগমন।বুঝতে পারছি না কি করবো আমি৷
.
.
.
.
চলবে……❤️
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)