#রুপালির_রূপ
সাইয়্যেদাতুন_নেছা_আফনান
পর্ব:০৪
বোনাস পর্ব,
রুপালিরা চলে গিয়ে এক ঘন্টা হয়েছে। রাইয়ান শেখ মিসেস রাহিকে ডাকেন। মিসেস রাহি তখন রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলেও এখন অনুশোচনা করছেন। মেয়েটার কথাটা একবার শোনা উচিত ছিল। সেই সঙ্গে যেখানে রাইয়ান শেখ আছেন সেখানে তার সামনে নিজের সিদ্ধান্তটাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে দিয়েছেন। লজ্জা,অনুশোচনায় সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না তার।
রাদ নিজের রুমে বসে সব শুনেছে। পা ভাঙা থাকায় অসহায় হয়ে শুনেছে সবটা। নিজের অকারণের রাগের জন্য সব শেষ হয়ে গেল।
রাইয়ান শেখ গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। সামনে হাত গুটিয়ে বসে আছে মিসেস রাহি। রাইয়ান শেখ বললেন,
– ছেলেটা তোমার মানলাম, সিদ্ধান্ত তুমি জানাতেই পারো সেটাও মানলাম৷ তবে তুমি শিক্ষিত মেয়ে হয়ে কীভাবে মুখের উপরে অপমানজনক কথা বললে? তোমার বাড়িতে কি তারা খেতে এসেছিল? ডেকে এনে এটা কোন ধরনের অপমান?
মিসেস রাহি চুপ থেকে বলেন,
– বাবা, আমি বুঝে উঠতে পারি নি। তখন এতটাও মাথায় আসে নি। ছেলেটার কষ্ট দেখে খারাপ লাগছে অনেক,তাই রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।
রাইয়ান শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। রাগ মানুষের বড় শত্রু। সম্পর্কের মোড় নিমিষেই বদলে দিতে পারে!
———-
হানিফ সওদাগরের সাথে রুপালি কথা বলার অনেক সুযোগ খোঁজে কিন্তু হানিফ সওদাগর রুপালিকে এড়িয়ে যান।
রুপালি রুমে এসে পিয়াসাকে ফোন দেয়।
– পিয়াসা, হলের সীট খালি আছে?
– বইন যার জন্য খুঁজতাসোস তার কপালটা এত বড়! আধঘন্টা আগে একজন চলে গেসে। একটা সীট খালি।
– আমি আসতেছি।
– তুই হলে থাকবি? এটাও আমার বিশ্বাস করা লাগবে?
– কথা বলতে ভাল্লাগছে না, এসে সবটা খুলে বলবো।
ফোনটা কেটে মিসেস রেহানার কাছে যেয়ে বলে,
– মা, আমি হলের একটা সীট পেয়েছি সেখানে যাচ্ছি। বাসার সব ঠিক হলে তখন নাহয় আসবো।
– এটা কোন ধরনের কথা রুপালি? বাবা রাগ করেছে তার একটা রিজন আছে এজন্য বাসা ছেড়ে যেতে হবে?
– তা নয় মা, আমাকে প্লিজ বাঁধা দিও না।
– তুমি বাসা থেকে কোথাও যাবে না, নাকি আমি অনুমতি না দেয়ায় তোমার বন্ধুদের বলে আমার পা ভাঙবে?
রুপালি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হানিফ সওদাগরের দিকে। চোখের কোণের অশ্রু মুছে বললো,
– তার একার কথা শুনে তুমি আমার উপর রাগ করে আছো বাবা, আমি পিয়াসার সাথে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করার পরে ও বললো তার পা ভেঙে দিবে, সেটাকে আমি সিরিয়াস ভাবি নি, ভেবেছি মজা করে বলেছে। সকালে উঠে শুনি সত্যিই ওরা পা ভেঙে দিয়েছে। এখানে আমার দোষ কোথায়?
হানিফ সওদাগর কিছু না বলে চলে যান। রুপালি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– মা, বিয়ের জন্য তোমরা পাত্র দেখো, বিশ্বাস করো কোনো অমত করবো না। আমি হলে উঠতে চাই যাতে তোমাদের থেকে দূরে থাকাটা অভ্যাস হয়।
মিসেস রেহানাও অনুমতি দিলেন। রুপালিরও বাসায় ভালো লাগবে না আর হানিফ সওদাগরও বুঝতে পারবে এক পাক্ষিক কথা শুনে বিচার করা উচিত না।
———-
বিকাল বেলা রুপালি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে হলে উঠে। পিয়াসা এসে রুপালিকে হেল্প করে গুছাতে।
ফ্রেস হয়ে রুপালি নিজ সীটে এসে বসে। পিয়াসাও পাশে এসে বসে। রুপালিকে বলে,
– রুপা কি হয়েছে রে? হুট করেই এখানে আসলি আবার মুডও অফ!
রুপালি ক্ষানিকটা সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে, হুট করেই পিয়াসার দিকে ঘুরে ওকে ধরে কেঁদে দেয়। বলে,
– পিয়াসা তোরা কেন আমাকে না জানিয়ে ওই লোকের পা ভাঙলি?
– আরে আমরা ভাঙি নি, হাতে লাঠি দেখে দৌড় দিয়েছে, গাড়ি ধাক্কা দিয়ে পায়ের উপর থেকে চলে যায়। আমরা অবাক হয়ে যাই, দৌড়ে গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে ভর্তি করি। কেন কোনো সমস্যা হয়েছে?
রুপালি একে একে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে পিয়াসা রুপালিকে আগলে নেয়।
——–
হানিফ সওদাগর ডাইনিংয়ে এসেছিলেন পানি খেতে। সন্ধ্যায়ও রুপালির ঘর অন্ধকার দেখে মিসেস রেহানাকে ডাকেন। বলেন,
– রুপার ঘর অন্ধকার কেন? লাইট অন করে নি?
– রুপাকে হলে ওঠার জন্য আমি অনুমতি দিয়েছি। ও হলে উঠেছে তাই ওর রুম অন্ধকার।
হানিফ সওদাগর মিসেস রেহানার দিকে তাকিয়ে বলে,
– ভালোই হয়েছে অনুমতি দিয়েছো, একটু বন্ধুদের সাথে থাকুক, ঘুরুক মনটা ভালো হবে।
– আর ও বলে গিয়েছে ওর জন্য পাত্র দেখতে, বিয়ে করবে।
– মন থেকে বলেছে নাকি রাগের মাথায়?
– দু’টোই।
———
রাদের রুমে মাহি এসেছে রাদের খাবার দিতে। রাদ মাহিকে বলে,
– শোন, মা কখন যাবে রুপালিদের বাসায়?
– এইতো কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবে।কেন?
– মা’কে একটু ডেকে দিবি?
-আচ্ছা দিচ্ছি।
মাহি মিসেস রাহির কাছে যেয়ে বলেন,
– মা, ভাইয়া ডাকছে।
– কেন?
– জানি না।
মিসেস রাহি রাদের রুমে এসে বলেন,
– কি বলবি?
– মা, আমাকে নেয়া যায়?
– কেনো?
– আমিও তো রুপালির সাথে বাজে ব্যবহার করেছি ওর কাছে মাফ চাইতে চাই।
– দেখি আগে রুপালির বাবা মানেন কীনা!
রাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সুন্দর চলমান সময়টাকে নিজের ইচ্ছেতে ভেঙে ফেললো!
চলবে,
(বোনাস পার্ট দিলাম তাই ছোট করে দিয়েছি। কাল একটু ঝামেলা আছে, সময় পেলে ইনশাআল্লাহ দিবো তবে সময় না পেলে রাগ করবেন না পাঠক।)