রুপালির রূপ পর্ব -১৪

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:-১৪

রাত একটা বাজে। রাদ চেয়ে আছে রুপালির দিকে। রুপালি ঘুমে বিভোর। রুপালির সৌন্দর্য যেন বেড়ে গিয়েছে রাদের চোখে। ঘুমকে টানতে ইচ্ছে করছে না চোখের পাতায়। ইচ্ছে করছে এই রমনিকে দেখেই জীবন কাটিয়ে দিতে!

ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠে রুপালি। উঠেই চমকে যায়। রাদকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। বলে,

– ঘুমান নি রাত?

– আপাত সুন্দরী বউ পাশে থাকলে ঘুমানো যায়? চেয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।

রুপালি লজ্জায় মাথা নিচু করে। দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়।

সকাল হতেই ব্রেকফাস্ট করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে বাসার উদ্দেশ্যে। রাতেই স্টাফদের টাকা দিয়ে বলে রেখেছিল গাড়িটা সাড়িয়ে রাখতে।

———-

আফরা এসেছে মিসেস রেহানার রুমে। এসে বলে,

– আম্মু, তোমার একটা শাড়ি দাও তো।

– আমার তো তেমন ভালো শাড়ি নেই, আমি পরি না দেখে কিনিও না। তুই যেয়ে রুপালির আলমিরা থেকে শাড়ি বের করে পর।

– রুপালি কিছু মনে করবে না তো?

– তুই রুপাকে চিনিস না?

– চিনি তো, কিন্তু ওরও তো পার্সোনাল কিছু থাকতে পারে।

– হ, শাড়ির মধ্যে পার্সোনাল কিছু থাকবে, খামোখা কথা বাড়াস না তো! যা যেয়ে যেটা পছন্দ হয় পরে নে।

আফরাও কথা বাড়ায় না। রুপালির রুমে যেয়ে আলমিরা খুলতেই একটা বাক্স পরে যায়। বোঝাই যায় তাড়াহুড়ো করে রেখেছে। বক্সটা তুলতে যেয়ে একটা চিরকুটও পায়। লেখা,

” রূপ, আমার দেয়া সবুজ শাড়ি আর সবুজ হিজাব পরে নিচে এসো, তবে বুঝবো এ জীবনের সাথী হিসেবে তুমি আমাকে চাও, আমি আশাকরি অবশ্যই পরবে”।

আফরা অবাক হয়। সাথে সাথেই ভাবে, রুপালি যদি কাউকে ভালোবাসে তবে তার সাথেই রুপালির বিয়ে দিবে কিংবা তাদের এক করতে সকল উপায় অবলম্বন করবে। কারণ ভালোবেসে না পাওয়ার কষ্টটা কখনোই সাড়ে না। যেমন ফাহিম ভাই! দীর্ঘশ্বাস বেড়োয় অন্তর থেকে। ধক্ করে ওঠে বুক। চোখের নোনাজলে ভরে যায়। ভাবে, ” আসলেই ফাহিম ভাই কি আমাকে ভালোবাসে?”

আলমিরা বন্ধ করে ফাহিমের রুমের দিকে এগোয়। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই দেখে ফাহিম উদাস মনে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহিমের কাছে যেয়ে বসে আফরা বলে,

– ফাহিম ভাই, একটা সত্যি কথা বলবে!

– কি?

– তুমি তো মোহনা আপুকে ভালোবাসো, তাকে বিয়েও বিয়েছো। তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করতে চাইছো? আমাকে তো তুমি ভালোবাসো না।

– হু বাসি না, তবে তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না?

– আমি বাসি তাই আমি বিয়ে করতে চাইছি, কিন্তু তুমি কেন চাইছো?

– কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার বিশ্বাস তোমার এই ভালোবাসা দিয়ে আমার এই বিষাক্ত অতীত ভুলিয়ে দিবে, চিনিয়ে দিবে, ভুল ভাঙিয়ে দিবে আসলেই ভালোবাসা সত্য! যেটা অন্য কোনো মেয়ে পারবে না। অন্য কোনো মেয়ে তোমার মতো আমার জন্য অপেক্ষা করবে না। বলতে পারো এক প্রকার স্বার্থে তোমাকে আমি বিয়ে করছি। তবে ওয়াদা করছি কখনো কষ্ট দিবো না।

আফরা শব্দ করে কেঁদে ফেলে। ফাহিম উঠে বসে। চোখের পানি মুছিয়ে বলে,

– আফরা, তুমি আমাকে ভালোবাসো তোমার ভালোবাসা দেখে ইনশাআল্লাহ তোমাকেও আমি ভালোবাসবো। আর পবিত্র বন্ধনে আল্লাহ ভালোবাসা ঢেলে দেয়।

আফরা ছুটে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। ফাহিম উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। চিৎকার করে ওঠে। মোহনাকে ভৎসনা দিয়ে বলে,

” মোহনা কেন ঠকালে আমায়! আর আমি কত বোকা! কতটা বিরক্তিকর পার্সোন যে, একটা মেয়ে আমাকে পাগলের মতো গত কয়েকটা বছর ভালোবেসে যাচ্ছে, তাকে আমি ভবিষ্যতে ভালোবাসবো এই কথাটা তাকে বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে!”

ফাহিম চিৎকার করে কাঁদছে আর কথাগুলো বলছে। ইট সিমেন্টের চারপাশে বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে বারান্দায় বাতাসে উড়ে চলে যায়।

———–

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায় রাদ। রুপালি নেমে যেতে চাইলে রাদ টেনে ধরে। কপালে চুম্বন করে বলে,

– কাল পুরো দিন-রাত আমার শ্রেষ্ঠ রাত। রূপ এভাবেই আমার প্রতিটা দিন শ্রেষ্ঠ করে তুলো। ভালোবাসি বউ।

রুপালি ছাড়িয়ে গাড়ি থেকে বের হয়েই গেটের ভিতর ঢুকে যায়। গেটের ভিতর ঢুকে আবারো গেট থেকে উঁকি দিয়ে দেখে রাদ এখনো চেয়ে আছে। রুপালিকে উঁকি দিতে দেখে রাদ শব্দ করে হেসে দেয়। রুপালি লজ্জা পেয়ে উপরে চলে যায়। রাদও গাড়ি স্টার্ট দেয়।

কলিংবেল বেজে ওঠায় মিসেস রেহানা দরজা খোলেন। বলেন,

– কীরে, তুই পিয়াসাদের বাসায় থাকবি এ কথা আমাকে বলে যাস নি কেন?

– আ…মি তো ভাইয়াকে বলতে বলেছি বলে নি?

— হ্যা জানিয়েছে, তবে ঘটনা তো ঘটে গিয়েছে, শুনেছিস?

– কি ঘটনা? আর বাইরের দাঁড়িয়ে থাকবো?

– ঢং, ভিতরে আয়। শোন, আফরাকে নাকি বিয়ে করবে তোর ভাই, আজ তোর আঙ্কেলরাও আসবে।

– ইকবাল চাচ্চুরা?

– হুম, তুই অবাক হলি না কেন? নাকি তুই জানতি!

– জানতাম না, তবে অবাক হই নি খুশি হয়েছি।

– ভালো হয়েছে, শাড়ি পরে গেলি, শাড়ি কই?

– আব…. পিয়াসাদের বাসায়।

– এই ড্রেস কার?

– পিয়াসার।

– পিয়াসা তো মোটা, ওর ড্রেস তোর পায়ে সঠিক হলো কীভাবে?

– উফ মা! কি শুরু করেছো?

– ভালো কথা শোনো এবার। রাদের সাথে বিয়েতে কি মত আছে তোমার? তাহলে তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে হবে, নয়তো বারণ করে দিবো। এভানে ঝুলিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।

– না না বারণ করবে কেন..!

রুপালি দ্রুত কথাটা বলেই জিহ্বা কাটলো। মিসেস রেহানা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,

– যাক সুবুদ্ধি হয়েছে। তাদেরও আসতে বলি তাহলে। তুমি যাও গোসল করে ভালো শাড়ি পরে সাজগোছ করো। আর আফরা হয়তো তোমার আলমিরা থেকে শাড়ি নিয়েছে।

রুপালি চমকে তাকায়। বলে,

– আমার আলমিরা থেকে কেন?

– কেন? সমস্যা কি?

– না না, কোনো সমস্যা নাই, কোনো সমস্যা নাই।

রুপালি দ্রুত পায়ে ড্রয়িং রুম ত্যাগ করলো। রুমে এসেই আলমিরা খুলে দেখে গুছিয়ে রাখা বক্সটা। বুঝে নেয় আফরা সবটা দেখেছে। ভিষণ রাগ হয় আফরার উপর। বারান্দা থেকে হেঁচকির শব্দ শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে আফরা কাঁদছে। আলমিরা বন্ধ করে আফরার কাছে এসে পিঠে হাত দেয়।

আফরা পিছন ঘুরে রুপালিকে দেখে কেঁদে ওঠে। বলে,

– রুপা, ফাহিম ভাই আমাকে কেন ভালোবাসে না?

– বাসে তো, না বাসলে তোমাকে কেন বউ করতে চাইছে বলো?

– চাইছে কারণ আমি যাতে তাকে ভালোবাসি তাই।

– তুমি বলো, ভালোবাসার মানুষটাকে ভালোবাসতে কি ভালোলাগে না? তাকে ভালো থাকতে দেখে অন্তরে কি শান্তি লাগে না বলো? জানি এটা স্বার্থপরের মতো কথা। তবে আমি বলবো, যে ভালোবাসে তার জন্য একটা সুযোগ ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো থাকতে দেখা, ভালো রাখতে পারা।

– তুমি তাহলে রাদকে ভালোবাসে রুপা?

রুপালি চমকে যায়। বলে,

– তুমি কীভানে রাদকে চেনো?

– চিনি বলতে তোমার একটা চিরকুট পরেছি, সেজন্য দুঃখিত।

রুপালি বিস্তারিত বললো আফরাকে। তবে এড়িয়ে গেল বিয়ের কথাটা।সব শুনে আফরা বললো,

– তোমার উচিত রাদকে আপন করে নেয়া।

– হুম সেটাই ভাবছি।

———–

রাদ বাসায় এসেছে মাত্র, এসেই শোনে ও বাড়ি থেকে দাওয়াত এসেছে। আজই ফাইনাল কথা হবে।

রাদও খুশি মনে রুমে এসে ফ্রেশ হয়।

———

ইকবাল হোসেন দুঃশ্চিন্তায় আছে মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটা ফাহিমের জন্য কতটা পাগল সবাই জানে। ইকাবল হোসেনও অমত নন, তবে ফাহিমই রাজি ছিল না। মেয়েটাও জিদ ধরে আছে ফাহিম ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করবে না। বিয়ের বয়সও চলে যাচ্ছে মেয়ের।

আজ ভাইয়ের বাসা থেকে দাওয়াত এসেছে। শুনেছে মিসেস রেহানা ফাহিমের জন্য মেয়ে দেখছে। ইকবাল হোসপন ভেবেছে সে বিষয়ে আলাপের জন্য হয়তো। সে নিয়েও চিন্তা ভিষণ। মেয়েটা পাগলামি শুরু না করলে হয়!

একরাশ চিন্তা নিয়ে স্ত্রী’কে নিয়ে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

চলবে,

( অনেকেই অভিযোগ করেন গল্পের পার্ট ছোট হয়। আমার ব্যস্ততা ভিষণ, বাসার কাজ সামলানো, ছোট বাচ্চা সামলানো এরপরে যেটুকু সময় পাই রেস্টের সাথে টুকটাক করে লিখি। শব্দসংখ্যা ৮০০ কিংবা ৯০০ পর্যন্ত যায়। এর কম যায় তখন যখন ভিষণ ব্যস্ত থাকি। মাঝে একদিন গ্যাপ যায় যেদিন সেদিন আমি রেস্টের সময় পাই না তাই লেখা হয় না। আমি দুঃখিত। আমার এই নগন্য লেখার জন্য আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here