তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৪৫+৪৬+৪৭

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৫

নিশুতি রাত। হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। বিছানায় বসে দুয়া। হাতে বই। বইয়ের পাতায় ভাসমান শব্দগুচ্ছ উচ্চারিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। বাঁ কাঁধে মাথা এলিয়ে বসে মানুষটি। চক্ষু বদ্ধ করে অর্ধাঙ্গীর মুখনিঃসৃত বর্ণনা শুনছে। কক্ষের আলো নিভিয়ে রাখা। শুধু সাইড ল্যাম্পের আলো বিদ্যমান। সে আলোয় উজ্জ্বল বইয়ের পাতা। বিগত আধ ঘন্টা ধরে এমনটিই চলমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে তূর্ণ। মাইরা’র এতটা সন্নিকটে সে। মেয়েলি সুবাস ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে কড়া নাড়ছে। হারিয়ে যেতে চাইছে মন ওই দীঘল কালো কেশের রাজ্যে। নে!শা ধরে যাচ্ছে তনুমনে। একটুখানি ছুঁয়ে দেয়ার জন্য আনচান করছে হৃদয়। কতদিনের তৃষ্ণার্ত চিত্ত আজ প্রেম তৃষ্ণা মেটাতে উদগ্রীব। নিজেকে সামাল দেয়া হয়ে উঠলো দুষ্কর। আস্তে আস্তে করে নড়ে উঠলো তূর্ণ। নাসিকা ছুঁয়ে দিতে লাগলো কাঁধের কোমল ত্বকে। আকস্মিক ছোঁয়ায় শিউরে উঠলো মেয়েটি। পড়ার তালে তালে নড়তে থাকা অধর থমকে গেল। শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো বই। তূর্ণ নড়েচড়ে আরাম করে বসলো। কাঁধে মুখ লুকানো অবস্থাতেই বাঁ হাতে কাঁধ হতে কেশ সরিয়ে দিলো। সেথায় অঙ্কন করতে লাগলো ওষ্ঠের আদুরে কিছু স্পর্শ। আবেশে মুদিত হয়ে এলো দুয়ার নেত্রপল্লব। অনাদরে বইটি পড়ে রইলো কোলে। ধীরজ গতিতে বাঁ হাতটি চলতে লাগলো। পৌঁছে গিয়ে স্থাপিত হলো স্বামীর পৃষ্ঠদেশে। হঠাৎ কাঁধের কোমল আবরণে দন্তের আলতো ছোঁয়ায় মৃদু কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি। নখ বিঁধে গেল স্বামীর পৃষ্ঠে।

মৃদু আর্ত পৌঁছালো তূর্ণ’র কর্ণ কুহরে। থেমে গেল মানুষটি। দন্ত আ.ক্রমণের শিকার লালচে স্থানে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। ক্ষমা চাইলো ফিসফিসিয়ে। দুয়া কোমল হাত বুলাতে লাগলো স্বামীর পৃষ্ঠে। বুঝিয়ে দিলো তার মনোভাব। ক্ষমা চাইতে হবে না। তূর্ণ’র অধরে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো। দুষ্টুমি করে পুনরায় কাঁধের ত্বকে দন্ত ছুঁয়ে দিলো। দুয়া মৃদু কঁকিয়ে অর্ধাঙ্গের পৃষ্ঠ ইচ্ছাকৃতভাবে খামচে ধরলো। নিঃশব্দে হেসে উঠলো মানুষটি। আদুরে ছোঁয়ায় তার মাইরা’কে বাহুডোরে আগলে নিলো। শুইয়ে দিলো বালিশের বুকে। বিছানায় শুয়ে দুয়া। উপরিভাগে একান্ত জন। দু’জনের নয়নে মিলিত নয়ন। লাজে রাঙা মেয়েটি বেশিক্ষণ ওই নয়নে ডুবে থাকতে পারলো না। আসন্ন প্রেমময় অনুভূতির আবেশে আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে পড়লো কপোলদ্বয়ে। তূর্ণ বিমুগ্ধ চাহনিতে সে লাজুক আভা দর্শন করলো। পুলকিত হলো হৃদয়। নিজ ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে লালাভ আভায় ছেয়ে থাকা দু কপোলের মসৃণ আবরণে ওষ্ঠ চাপ বসালো। সম্মোহনী স্বরে আওড়ালো,

” আমার একান্ত মাইরা! ”

অসুস্থ মানুষটি সহধর্মিণী এবং পরিবারের সদস্যদের যত্নশীল আচরণ, দিনরাত প্রার্থনা, সর্বোপরি স্রষ্টার অশেষ রহমতে সুস্থ সবল হয়ে উঠলো। সম্পূর্ণ সুস্থ সবল হতে সময় লাগলো প্রায় দেড় মাস। সবল মানুষটি অবশেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে‌। আগের মতো ভার্সিটি, পরিবার, বন্ধুমহল এবং তার একান্ত মাইরা। দিনকাল বেশ কাটছিল।
.

বন্ধুরা মিলে আজ সিনেপ্লেক্স এসেছে। পরপর দুই সারির একই কলাম দখল করে বসেছে ওরা। দুয়া, তৃষা, পুষ্পি, বিন্দু বসে পাশাপাশি। ওদের ঠিক পেছনেই বিশাল। একাকী বসেছে বেচারা। পড়ুয়া তিয়াশ সঙ্গে আসেনি। ওরা এই মুহূর্তে দেখছে হৃত্বিক রোশন এবং টাইগার শ্রফ অভিনীত ‘ ওয়্যার ‘ মুভিটি। বরাবরের মতই ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে চলেছে পুষ্পি। কখনো হৃত্বিক, কখনোবা টাইগার শ্রফ। কাকে রেখে কাকে মন দেবে কনফিউজড। দুয়া নাকমুখ কুঁচকে মৃদু স্বরে বললো,

” তোর মতো লুচি আমি এক পিসও দেখিনি। দিনের মধ্যে কত শতবার যে ক্রাশ খাস! অত বার তো খাবারও খাস না। ”

” মানে কি? তুই কি চাস? আমি অত বার খাবার খেয়ে জলহস্তী হয়ে যাই? আমার শখের ফিগার বরবাদ করি?” পুষ্পি অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে।

তৃষা বিদ্রুপ করে বললো,

” ইহ্! জিরো ফিগার ওয়ালা আসছেন! যেই না বডি! ভিতরে মাংস আছে টাছে? হুদা তো হাড্ডি। ”

পুষ্পি দুয়া’কে অতিক্রম করে তৃষার বাহুতে চাপড়ে দিলো।

” অ স ভ্য মাইয়া! আমারে কিনা বডি শেমিং করে! তোর নামে মামলা করমু। ”

” হ কর কর। আমি অগ্রীম জামিন করাইয়া রাখতেছি। ”

দুয়া দুই পাশে বসে থাকা দু’জনের হাত চেপে ধরলো। মৃদু স্বরে বললো,

” চুপ করবি তোরা? মুভি দেখতে এসে ঝগড়া করছিস? থাম। ”

পেছন থেকে বিশাল ফোঁড়ন কাটলো,

” এই হইলো বেডি মানুষ। যেহানে যায় খালি ঝামেলা। ”

চার ললনা ক্ষে.পে একসঙ্গে পিছু ঘুরে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। বিশাল আবহাওয়া গরম অনুধাবন করে বোকা হাসলো। স্বেচ্ছায় সারেন্ডার করলো। নইলে যে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আসন্ন। বোকা বোকা হেসে বললো,

” সামনে চা। তোগো ক্রাশ বাঘ পর্দায় আইছে। ”

বিন্দু তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো,

” সম্মান দিয়ে কথা বল। হি ইজ টাইগার শ্রফ। নট বাঘ। ওকে? ”

” আরে একই তো হইলো। যাহা ইংলিশে টাইগার তাহাই আবার বাংলায় বাঘ। ভিন্নতা কি? ”

” খা টা শ। ”

বিন্দু বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তাকালো সমতল বৃহৎ পর্দায়। পুষ্পি যথারীতি টাইগারে ফিদা হলো। একটু পর হৃত্বিক এলে আবার তার ওপর ফিদা হবে। হায় রে ক্রাশ পার্টি!

মাস দুয়েক পরের কথা। দুয়া’দের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। যথারীতি মাস্টার তূর্ণ তার সহধর্মিণী এবং বোনকে প্রপার গাইড করছে। ওরাও বাঁ!দরামি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হলো। তূর্ণ বারবার করে বলে দিয়েছে,

” ভালোমতো প্রিপারেশন নে। এই পরীক্ষার পর ফাইনালের বেশি দেরি নেই। ফার্স্ট ক্লাস যেন নির্বিঘ্নে আসে। ওকে? ”

দুই সখী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। দুয়া’র মনে পড়ে গেল সে পুরনো এক স্মৃতি।
___

দিনভর চিন্তায় চিন্তায় পাড় করলো দুই সখী। চিন্তা হবে না? আজ সন্ধ্যায় প্রথম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। কি থেকে যে কি হবে! নাওয়া-খাওয়া ভুলে দু’জনেই দুশ্চিন্তায় দিশেহারা। তূর্ণ তা দেখে বিরক্ত হলো।

” তোদের অবস্থা দেখে আমি সত্যিই অবাক। আরে ভাই পরীক্ষা তো একদা আমরাও দিয়ে এসেছি। তাই বলে নাওয়া খাওয়া ভুলে এমন করেছি? করিনি তো। কারণ এমন করে বিন্দুমাত্র লাভ নেই। পরীক্ষার খাতায় যা লিখে এসেছিস রেজাল্ট ঠিক তাই হবে। একটুও এদিক ওদিক হবে না। সো ভুংভাং টেনশন না করে খাবার খেয়ে নে। ”

” খাবো না। ” আপত্তি জানালো দুয়া।

তূর্ণ কিঞ্চিৎ কড়া কণ্ঠে বললো,

” দুয়া বেশি ফটরফটর করবি না। খেয়ে নে বলছি। পড়ে ফিট খেলে রেজাল্ট দেখবি কি করে? ”

” বাজে লোক একটা। খালি অলক্ষুনে কথা বলে। ”

অসন্তুষ্ট বদনে সেথা হতে প্রস্থান করলো মেয়েটা। তৃষা নখ খুঁটতে খুঁটতে একবার ভাবি আরেকবার ভাইয়ের দিকে তাকালো। অতঃপর প্রস্থান করলো সেথা হতে। নইলে ভাইয়ের এক্সট্রা জ্ঞান শুনতে হবে। যা কান ও মস্তিষ্কের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।

সেদিনটা বেশ চিন্তায় চিন্তায় অতিবাহিত হলো। অবশেষে এলো মাহেন্দ্রক্ষণ। সন্ধ্যার পর প্রকাশিত হলো প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল। খুশিতে চিৎকার করে উঠলো তৃষা। বসা থেকে দাঁড়িয়ে লাফাতে লাফাতে দু হাতে ওষ্ঠাধর লুকিয়ে বলতে লাগলো,

” ও মাই আল্লাহ্! ফার্স্ট ক্লাস ডান! থ্যাংকস আল্লাহ্। থ্যাংকস অ্যা লট! উফ্। ফেবুতে পোস্ট দিতে হবে। আমার মোবাইল? মোবাইল বোধহয় রুম। ওহ্ হো! ”

ঠে*লাগুতোঁ খেয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে তৃষা রানী। খুশিতে আত্মহারা। দৌড়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে করতে হয়ে গেল ক্লান্ত। তবুও থেমে নেই। ওদিকে জাহিরাহ্ দুয়া? মেয়েটা ছলছল নয়নে ল্যাপটপের পর্দায় তাকিয়ে। সিজিপিএ ৩.৬৯ এসেছে। ফার্স্ট ক্লাস! আবেগে আপ্লুত হয়ে ডানে থাকা স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো দুয়া। তূর্ণ’র অধরে তৃপ্তির আভা। মুচকি হেসে অর্ধাঙ্গিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সফল তারা। স্বার্থক তাদের পরিশ্রম। মনে মনে মহান স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করলো। নিশি খুশি খুশি কক্ষ হতে বেরিয়ে এলো। সুসংবাদ জানালো পরিবারের সকলের কাছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো ‘ ছায়াবিথী ‘। দুই পরিবারের সকলেই সন্তুষ্ট। বেশ খুশি। স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করলো তারা। নিজাম সাহেব ছোট ভাইকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লেন। খুশিতে ক্রয় করলেন সাত কেজি মিষ্টি। কয়েক পদের মিষ্টি রয়েছে তন্মধ্যে। সেদিনটা ছিল সকলের জন্য খুশির দিন। আনন্দঘন মুহূর্ত।
___

পুরনো স্মৃতি মনে করে আবেগী হয়ে পড়লো দুয়া। আগামীতে আরো ভালো ফলাফল করার স্পৃহা জন্মালো অন্তঃপুরে। ইনশাআল্লাহ্ দ্বিতীয় বর্ষে আরো ভালো ফলাফল হবে।

সুষ্ঠু রূপে পরীক্ষা শেষ হলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া, তৃষা যুগল। আনন্দে কাটালো কয়েকদিন। এদিক ওদিক ঘুরতে গেল। ছোটখাটো পার্টি করলো। বন্ধুমহলের কত কি মুহূর্ত কাটলো। সময়ের পরিক্রমায় অতিবাহিত হলো আরো কতগুলো দিন। হঠাৎ একদিন এলো চমকপ্রদ মুহূর্ত। এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না কেউ। ‘ ছায়াবিথী ‘তে এ কি বি*স্ফোরণ ঘটালো তূর্ণ! এতে যে পরিবারের সদস্যরা কতটা চমকিত হয়েছে সে কি জানে?

চলবে.

[ গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ইলেকট্রিসিটি নেই। লিখেছি বহু কষ্ট করে। পর্বটি ছোট হয়েছে। আশা করি পাঠকবৃন্দ অবস্থাটা বুঝতে পারবেন। এবার বলুন তো কি এমন করলো তূর্ণ? আর হ্যাঁ।
মাত্র পাঁচদিন পর থেকে শুরু হতে চলেছে আমার পরীক্ষা। তাই আপাতত কিছুদিন অনিয়ম হবে। চেষ্টা করবো একদিন পরপর আপলোড করার। আশা করি পাঠকবৃন্দ আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৬

” আব্বু আমি বিয়ে করতে চাই। ”

তূর্ণ’র মুখনিঃসৃত শব্দমালায় ছোটোখাটো বি*স্ফোরণ হলো লিভিংরুম জুড়ে। হতভম্ব পরিবারের প্রতিটি সদস্য! নাজমুল সাহেব অবাক স্বরে বললেন,

” কি বললি ভাতিজা! আমি কি ভুল শুনলাম? ”

তূর্ণ লিভিংরুমের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে। সকলের দৃষ্টি তার পানে নিবদ্ধ।

” না চাচু। তুমি ভুল শোনোনি। আমি সত্যিই বিয়ে করতে চাই।”

নিজাম সাহেব রাগত স্বরে বললেন,

” সকাল সকাল বোধহয় মাথায় ব্যামো হয়েছে। তুমি ভুলে যাচ্ছো যে তোমার ইতোমধ্যে একটা বউ আছে। ”

” হাঁ। আছে। আমি কি তা অস্বীকার করেছি? ”

” করোনি। তাহলে বিয়ের কথা কোন মুখে বলছো? লজ্জা করে না? ”

তূর্ণ তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,

” ওহ্ আব্বু। এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন? লজ্জা করবে কেন? জানো না বিয়ে করা সুন্নত? ”

তৃষা বলে উঠলো,

” ভাইয়া তুমি কি বিয়ে করা সুন্নত এটাই বলতে চাইছো? নাকি চার বিয়ে সুন্নত সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছো? ”

তূর্ণ ওর পানে কেমন দুর্বোধ্য চাহনিতে তাকালো। তাসলিমা এবার মুখ খুললেন। কঠিন বাক্যে বললেন,

” তূর্ণ সকাল সকাল মশকরা বাদ দিয়ে নিজের কাজে যা। শুধু শুধু ফাজলামি করে আমাদের মাথা গরম করিস না। ”

” আম্মু আ’ম সিরিয়াস। ”

ছোট এক বাক্য। তাতে নৃ!শংসভাবে ক্ষ.তবিক্ষত হলো মেয়েটির কোমল হৃদয়! নোনাজলে ভরপুর আঁখি যুগল। বাঁ হাতে খামচে ধরলো সোফা। র-ক্তাক্ত হৃদয়ের অলিগলি। অবাক নেত্রে তাকিয়ে স্বামীর পানে। মানুষটি এসব কি বলছে? দ্বিতীয় বিয়ের মতো নির্দয় কথা বলছে! কি করে? তারা তো দম্পতি। একে অপরের পরিপূরক। অর্ধাংশ। দু’জনে তো খুব জমিয়ে সংসার করছিল। চার বর্ণের জাদুকরী শব্দ ‘ভালোবাসি’ না বলেও ভালোবেসে যাচ্ছিল। একে অপরের সনে কাটাচ্ছিল জীবনের অন্যতম মধুর লগ্ন। তবে কি হলো আজ? বিয়ের বেশ কয়েক মাস পাড় হতে না হতেই সবটা সমাপ্ত? উড়ে গেল হাওয়ায়? পালিয়ে গেল হৃদয়ে জমানো সবটুকু ভালোবাসা? দুয়া’র অক্ষিকোল গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা। তাসলিমা উঠে দাঁড়ালেন। ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন,

” মাথা গরম হয়ে আছে। রুমে যাও। বিশ্রাম নাও। পরে কথা হবে। ”

তূর্ণ দু হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।

” আম্মু তোমরা বুঝতে পারছো না। শুধু শুধু রিয়েক্ট করছো। আমি বিয়ে.. ”

অসম্পূর্ণ রয়ে গেল কথাটি। তাসলিমা গলা হতে হাত সরিয়ে নিলেন। দাঁড়ালেন কয়েক কদম পিছিয়ে। কাঠিন্যতায় মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,

” আর একটা বাজে কথা বললে এই বয়সে আমার হাতে মা*র খাবে। খুব লায়েক হয়ে গেছো তাই না? ঘরে বউ থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করার শখ জেগেছে? চরিত্রের এতটাই অবনতি?”

তূর্ণ কিছু বলতে উদ্যত হতেই নিজাম সাহেব বলে উঠলেন,

” তূর্ণ! আর একটাও বাজে কথা নয়। যাও এখান থেকে। ”

নিশি বললো,

” ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো? দুয়াকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে! তুমি এমনটা করতে পারো না। দুয়া? দুয়া ভাবির কি হবে তাহলে? ”

” দ্বিতীয় বিয়ে। আর কি? ”

তূর্ণ’র খাপছাড়া আচরণে স্তম্ভ সকলে! নিজাম সাহেব ক্ষি প্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

” তূর্ণ! এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরো। আমার মাথায় রীতিমতো আগুন জ্বলছে। কি থেকে কি বলে বসবো কষ্ট পাবে। যাও এখান থেকে। ”

তূর্ণ সকলের পানে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বললো,

” কি আশ্চর্য! বিয়ে করা বউকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো। বাড়ির লোক তা-ও হতে দেবে না? ”

” না। দেবো না। ”

নিজাম সাহেব বলে তো উঠলেন। হঠাৎ হুঁশ ফিরল ওনার। উপস্থিত সকলের অবস্থাই এক।

” কি! ” বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে নিজাম সাহেব।

তূর্ণ মিটিমিটি হাসছে। প্যান্টের দু পকেটে গলিয়ে রাখা হাত। স্টাইল করে দাঁড়িয়ে। তৃষা ও নিশি উঠে দাঁড়িয়েছে সে-ই কখন।

” ভ্ ভাইয়া! তুমি এসব কি বলছো? দুয়াকেই বিয়ে করবে? ” তৃষা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে।

” আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ। তাকে ছাড়া আর কাকে বিয়ে করবো? ”

দুয়া ক্রন্দন ভুলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে। তূর্ণ ওর পানেই তাকিয়ে। আকস্মিক চোখ টিপে দিলো। হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। তড়িৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অধর কা’মড়ে হাসলো তূর্ণ। সম্বিৎ ফিরল মায়ের কণ্ঠে।

” তুই দুয়া’কে বিয়ে করার কথা বলছিলি? ”

” হুম। ও ছাড়া আর কে আছে আমার? সেধে সেধে কেউ তো আর সুদর্শন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই সুশ্রী পেত্নীটাকেই কবুল করতে হবে। ”

রাগে মেয়েটার নাকের ডগা ফুলে উঠলো। নিজাম সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

” কতবড় অ স ভ্য ছেলে দেখলে? কিভাবে আমাদের ঘোল খাইয়ে দিলো। ”

” আমি কোথায় খাওয়ালাম? তোমরাই তো স্বেচ্ছায় খেলে। এখন যত দোষ তূর্ণ ঘোষ? ”

তূর্ণ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো। নিজাম সাহেব রাগত চাহনিতে তাকিয়ে। এবার নাজমুল সাহেব প্রশ্ন করলেন,

” তা ভাতিজা। হঠাৎ পুনর্বিবাহ এর শখ হলো যে? ”

” হঠাৎ নয় চাচু। এটা বহু পুরনো ইচ্ছে। শুধু আমার একার নয়। আমাদের দু’জনার। ”

” মানে? দুয়া মা-ও বিয়েতে ইচ্ছুক? কই কখনো বলেনি তো। ”

” এই মুখচোরা মেয়েটা আর কি বলবে? কখনো কি নিজের সমস্যা মুখ খুলে বলে? বিয়ের পর উনি পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছেন কিনা। শাবানাগিরী দেখায়। ”

তৃষা ও নিশি মুখ টিপে হাসছে। তূর্ণ বলতে লাগলো,

” তোমরা তো জানোই আমাদের বিয়েটা ঠিক কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিল। বিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সবার কত স্বপ্ন থাকে। ইচ্ছে থাকে। তোমাদের ছিল। আমাদের দুজনেরও ছিল। কিন্তু কিছু হলো আর কোথায়? পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিয়েটা হলো। তাই ভাবলাম এবার সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের সহিত বিয়েটা হোক। মাস গেলেই তো আমাদের ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি। তখনই না হয় বিয়েটা হবে। ”

তূর্ণ এবার মধুর কণ্ঠে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

” উইথ ইয়্যুর পারমিশন উই ওয়ান্ট টু রি-ম্যারি। ”

বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতির অপেক্ষায় তূর্ণ। ওনারা দুয়া’র পানে তাকালেন। মেয়েটা দুই ননদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে। নিজাম সাহেব ধীরপায়ে হেঁটে পুত্রবধূর কাছে গেলেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” কি রে মা? তোর কি মতামত? এই বদ ছেলেটিকে স্বামী হিসেবে মঞ্জুর করিস? নাকি সম্বন্ধ বাতিল করে দেবো? ”

তূর্ণ হতবিহ্বল! পরিবারের সদস্যরা মিটিমিটি হাসছে। দুয়া আড়চোখে তাকালো স্বামীর পানে। মানুষটা কেমন অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে। চোখের ইশারাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে তার মনোভাব। আকাঙ্ক্ষা। সে চোখে বেশিক্ষণ তাকানো সম্ভব হলো না। আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো দুয়া। তাতে আশাহত হলো প্রেমিক চিত্ত। হতাশায় নিমজ্জিত হলো মানসলোক। নিজাম সাহেব মৃদু স্বরে শুধালেন,

” কি রে মা? বল। ”

দৃষ্টি অবনত করে মেয়েটি মিহি স্বরে বললো,

” বাবা-মা হিসেবে তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাতেই রাজি। ”

হো হো করে হেসে উঠলেন নিজাম সাহেব। স্মার্ট জবাব। লাজে রাঙা মেয়েটি তড়িঘড়ি করে সেথা হতে প্রস্থান করলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তূর্ণ। বক্ষস্থল হতে নেমে গেল কয়েকশ’ মণ ওজনের পাথর। তবে এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বাবা ওর দিকে ক্ষ্যা পা ষাঁড়ের মতো তাকিয়ে।

” হ*তচ্ছাড়া! অহেতুক স্টার জলসার ড্রামা করে সকাল সকাল আমাকে দিয়ে কত কথা বলালি। সুন্দর মেজাজ খারাপ করে দিলি। তোকে তো আমি.. ”

তেড়ে গেলেন উনি। দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ছুটলো তূর্ণ। পিছু নিলেন নিজাম সাহেব।

” দাঁড়া। দাঁড়া বলছি। বদ ছেলে। তোর কাছে আমি মেয়ে দেবো না। অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। ”

তূর্ণ লিভিংরুমে ছুটতে ছুটতে বললো,

” পারলে দিয়ে দেখাও। সে পাত্রের হাত-পা ভেঙে যদি কাঙালি ভোজের আয়োজন না করেছি তো আমার নাম তূর্ণ নয়। ”

নিজাম সাহেব বুড়ো বয়সে আরো তেড়ে গেলেন। অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো উপস্থিত সকলে।

তমস্র রজনী। সিঙ্গেল সোফায় পা তুলে বসে মেয়েটি। হাতে সমরেশ মজুমদার রচিত বই। মনোযোগ বইয়ের পাতায়। পেরিয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। হঠাৎ ধ্যান ভঙ্গ হলো। বাঁ কর্ণে উষ্ণ শ্বাসের আঁকিবুঁকি। খাড়া হয়ে যাচ্ছে লোমকূপ। শিহরণে আবিষ্ট তনুমন। মানুষটি ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন করছে। তাকে আদুরে জ্বালাতনে অতিষ্ট করে তুলছে। তবুও সাড়া দিলো না মেয়েটি। সে যে রাগ করে রয়েছে। সকালের ঘটনা এখনো ভোলেনি। মনে আছে। তূর্ণ আলতো করে কর্ণে ফুঁ দিতে লাগলো। তবুও আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পেল না। মেয়েটি জোরপূর্বক বই পড়ছে। তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বসলো সে। কর্ণ পাতায় ছুঁয়ে দিতে লাগলো ওষ্ঠ। প্রেমময় সে পরশ আস্তে ধীরে নিম্নে ধাবিত হতে লাগলো। কর্ণ পাতা পেরিয়ে কাঁধ, সেথা হতে গলদেশ। আবেশিত রমণীর হাত খসে পড়ে গেল বইটি। আয়ত্ত্বে পেয়ে তূর্ণ বক্র হাসলো। দ্রুত তুলে নিলো পাঁজাকোলে। ভীত রমণী দু হাতে বেষ্টিত করে নিলো অর্ধাঙ্গের গলদেশ। তূর্ণ মোহনীয় হেসে গোল গোল করে একবার ঘুরলো। টুপ করে কোমল ওষ্ঠে এঁকে দিলো জাদুকরী পরশ। ভ্যাবাচ্যাকা খেল দুয়া।

” উহ্! ছাড়ো আমাকে। নামাও। ”

” হুয়াই? ”

” আমি তোমার মতো বদ লোকের কোলে থাকতে ইচ্ছুক নই। তাই। ”

তূর্ণ ওকে পাঁজাকোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

” আচ্ছা? তাহলে কার কোলে উঠতে চাও? আব্বুর পছন্দ করা পাত্রের? ”

দুয়া কথাটা ঠিক বুঝলো না। তবুও ইতিবাচক সাড়া দিলো।

” হাঁ। হাঁ। তার কোলেই উঠবো। নামাও আমাকে। ”

বিছানার সন্নিকটে তখন দু’জনে। তূর্ণ কঠিন চোখে তাকিয়ে। আকস্মিক ওকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। নরম বিছানায় ডুবে গেল মেয়েটি। তেমন আঘাত লাগেনি। তবুও মিথ্যা কঁকিয়ে উঠলো। তখনই আ.ক্রমণ করে বসলো ক্ষ্যা পা ষাঁড়। ওর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো দু হাত। চোখে চোখ রেখে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

” কার কোলে উঠবি? হুঁ? আমার ওপর মন উঠে গেছে? আরেকজন চাই? আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবি? মে রে ভূত বানিয়ে দেবো। ”

সশব্দে হেসে উঠলো মেয়েটি। স্বল্প উঁচু হয়ে টুপ করে অর্ধাঙ্গের নাকে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। অতঃপর বিছানায় মাথা এলিয়ে মধুরতম স্বরে বললো,

” আচ্ছা? আমাকে মে রে ভূত বানিয়ে নিজে আবার দেবদাস হয়ে যাবে না তো? নাকি চন্দ্রমুখী খুঁজে বেড়াবে? ”

সুডৌল নাকে দন্তের আলতো আ.ক্রমণে মৃদু কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি।

” ইশ্ রা.ক্ষস। এখন থেকেই ভ*য়ঙ্কর রা.ক্ষস হওয়ার ট্রেনিং শুরু করে দিয়েছে। ”

” বেশ করেছি। তোকে মে রে ভূত বানিয়ে আমিও রাক্ষস হয়ে যাবো। এরপর পেত্নী আর রাক্ষসে মিলে সুখেশান্তিতে সংসার করবো। হ্যাপিলি এভার আফটার।”

বলে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো তূর্ণ। হাতের বাঁধন আলগা অনুভব করে পুরুষালি হাতের মাঝ হতে নিজের হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিলো দুয়া। স্বামীর গলা দু হাতে জড়িয়ে বললো,

” বাহ্! কি সুন্দর! মানে তূর্ণ-দুয়া মানুষ কিংবা ভূতুড়ে নগরীর বাসিন্দা। যাই হোক না কেন, তারা একে অপরের সঙ্গী। তাই তো? ”

হেসে সম্মতি জানালো তূর্ণ। বিপরীতে দুয়াও হেসে উঠলো। তূর্ণ স্বল্প ঝুঁকে গেল। সঙ্গিনীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

” তূর্ণ নামক প্রেমিক পুরুষটিকে ভালোবেসে আরো একবার কবুল করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন বিবিজান। ”

ভানু’র কিরণে উজ্জ্বল বসুন্ধরা। পুষ্পির সঙ্গে হাসিঠাট্টায় মেতে তৃষা। হাঁটতে হাঁটতে দু’জনে বেরিয়ে এলো ভার্সিটি হতে। অপেক্ষারত রিকশার জন্য। হঠাৎ তৃষার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বিপরীত দিকের পথে। অতটাও অবাক হলো না তৃষা। ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষটি দাঁড়িয়ে। স্বেদজলে পরিহিত শার্ট সিক্ত। লেপ্টে সুঠামদেহে। মৃদু এলোমেলো মসৃণ চুল। গরমে লালাভ আভা ছড়িয়ে মুখশ্রীতে। তবুও অবর্ণনীয় সুদর্শন লাগছে! আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মেয়েটি। তাতে আশ্চর্যান্বিত হলো নিশাদ! কোনোরূপ নিজেকে ধাতস্থ করে রাস্তা পাড় হতে উদ্যত হলো। ঠিক সে মুহূর্তে রিকশা হাজির। তৃষা, পুষ্পি রিকশায় বসে পড়লো। চলতে আরম্ভ করলো রিকশা। একটিবারের জন্যও পিছু ঘুরে তাকালো না নির্দয় মেয়েটি। রাগে ক্ষো ভে গাড়ির বনেটে ঘু.ষি মে রে বসলো নিশাদ। কঠিন হলো মুখখানা।

একমাস পর তূর্ণ এবং দুয়া’র প্রথম বিবাহবার্ষিকী। সে দিনে ওদের পুনর্বিবাহের সময়কাল ধার্য করা হলো। একই তারিখে দ্বিতীয়বারের মতো বাঁধা পড়বে ওরা। পূর্ণতা পাবে ওদের সম্পর্ক। ধর্মীয় এবং সামাজিক ভাবে পরিচিত পাবে তূর্ণয়া জুটি।

হাতে মাত্র একমাস সময়। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। বিবাহ বলে কথা। কত আয়োজন! খুশিতে আত্মহারা পরিবারের প্রতিটি সদস্য। কি থেকে কি করবে পরিকল্পনা চলছে দিবা-রাত্রি।

চলবে.

[ কেমন লাগলো চমক? কেউই পুনর্বিবাহের কথা আন্দাজ করতে পারেননি। যারা ভেবেছিলেন দুয়া প্রেগন্যান্ট, তাদের জন্য এক পুকুর সমবেদনা! হি হি। ]#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৭

” কনগ্রাচুলেশন ভাই ও বেহনা। ওপস্! ভাবিজি। ”

আয়তাকার যান্ত্রিক পর্দায় উপস্থিত কাজিনমহল। ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা সংযুক্ত। মিহাদের কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। তূর্ণ এবং দুয়া পাশাপাশি বসে। তৃষা এবং নিশিও রয়েছে দু পাশে। ল্যাপটপে নিবদ্ধ তাদের দৃষ্টি। দুয়া দুষ্টুমি করে বললো,

” ভাইয়া এ কিন্তু অবিচার হলো। সম্পর্কের রদবদলে বোন ই শুধু ভাবি হয়ে গেছে? ভাই বুঝি বদলে যায়নি? ”

সিনথিয়া সাথে সাথে বললো,

” নিশ্চয়ই বদলেছে। ভাই এখন বোন জামাই। হা হা হা। ”

সশব্দে হেসে উঠলো ওরা। তৃষা সুরে সুরে বললো,

” ও ও ও। ভাইয়া এখন সাইয়্যা.. ”

ওর মাথায় গাট্টা মে রে থামিয়ে দিলো তূর্ণ। মুখ বেজার করে তাকালো মেয়েটা।

” ভাইয়া! ”

তানজিনা মুখ টিপে হাসতে হাসতে বললো,

” এই যে তূর্ণ ভাই। শুধু শুধু মা*রছো কেন? তৃষা ভুল কিছু বলেনি তো। ”

দুয়া লজ্জায় পড়ে গেল। মিনমিনে গলায় বলল,

” উফ্ আপু। সাইয়্যা! এটা আবার কেমন ভাষা? ছাড়ো না এসব। ”

তূর্ণ বসে বসে মজা নিচ্ছে। বিমোহিত নয়নে দেখছে একান্ত নারীর লজ্জালু আভা। তানজিনা এবং সিনথিয়া হেসে উঠলো।

” হায়! লজ্জা লজ্জা। ” নিশি দুষ্টু হাসছে।

তৃষা বললো, ” ও য়ে! আমার শ্রদ্ধেয় ভাবী! কিছু তো লজ্জা বিয়ের দিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখ। সবটা এখনই ওয়েস্ট করে ফেলিস না। ”

এবার মুখ খুললো তূর্ণ। সবার উদ্দেশ্যে বললো,

” হয়েছে হয়েছে। আমার একমাত্র বউকে বেশ টিজ করেছিস। এবার থাম। তোদের চক্করে মেয়েটা বিয়ের দিন বেলাজ না হয়ে যায়। ”

সকলে হেসে উঠলো। কিন্তু দুয়া? কটমট করে তাকালো অর্ধাঙ্গের পানে। যেন এক্ষুনি কাঁচা খেয়ে ফেলবে। তা লক্ষ্য করে তূর্ণ মিথ্যা মিথ্যা ভীত হওয়ার ভান করলো। মিহাদ ওপাশ থেকে বললো,

” বোন? হেব্বি রাগ হচ্ছে? মনে হচ্ছে এ লোকের সাথে সংসার করা সম্ভব নয়? ”

দুয়া কিছু শুনলো কি? ক্ষ্যা!পা ষাঁড়ের মতো স্বামীর দিকে তাকিয়ে।

” বোন এক কাজ কর। একে রিজেক্ট করে অন্য কাউকে চুজ করে ফেল। ”

তূর্ণ আঁতকে ওঠার ভঙ্গিমায় মিহাদের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” মিহুর বাচ্চা! আমার সোনা-রুপার সংসারে কাঁচ দিয়ে ঘষামাজা করছিস? তোকে হাতের কাছে পেলে না কে’লিয়ে ভূত বানাবো। ”

দুয়া দৃষ্টি সরিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

” পারে তো খালি ওসবই। ”

তূর্ণ তৎক্ষণাৎ ওর কর্ণ কুহরে মুখ ঠেকালো। ফিসফিসিয়ে বললো,

” আরো অনেক কিছুই পারি। ফরগট দ্যা মর্নিং সিন? ”

আর’ক্ত হলো মেয়েটির বদন। সবার অলক্ষ্যে স্বামীর উরুতে চাপড় মে রে দিলো। বক্র হাসলো তূর্ণ। বাকিরা অবশ্য এসব লক্ষ্য করেনি। তারা নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে মত্ত।

ভানু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। লিভিং রুমে ফোনালাপে লিপ্ত নাজমুল সাহেব উপস্থিত হলেন। কথা বলতে বলতে বসলেন বড় ভাইয়ের পাশে।

” আচ্ছা আচ্ছা। থ্যাংক ইয়্যু সো মাচ। ”

” …. ”

” ওকে। ডোন্ট ওয়ারি। ”

” …. ”

” হাঁ। আমরা সময়মতো চলে আসবো। ”

” ….. ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। থ্যাংকস এগেইন। ”

” ….. ”

” রাখছি তাহলে। আসসালামু আলাইকুম। ”

” …. ”

কল কেটে গেল। নিজাম সাহেব খবরের কাগজ পড়তে পড়তে প্রশ্ন করলেন,

” কার সাথে কথা বলছিলি? ”

” ভাইয়া ওই রিসোর্টের ম্যানেজারের সাথে। গুড নিউজ। বুকিং হয়ে গেছে। ”

নিজাম সাহেব প্রসন্ন হলেন। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

” বাহ্! বেশ ভালো করেছিস। সময় থাকতেই করে রাখা ভালো। নাহলে শেষ মুহূর্তে গণ্ডগোল হয়ে যায়। ”

” হাঁ ভাইয়া। চিন্তার কোনো কারণ নেই। অল ওকে। আমরা শুধু সময়মতো পৌঁছালেই হবে। ”

” হুম। যা যা বলতে বলেছিলাম বলেছিস? ”

” হাঁ। হাঁ বলেছি। তারা রাজী। ”

” ভেরি গুড। ” খুশি হলেন নিজাম সাহেব।

নাজমুল সাহেব আমতা আমতা করে বললেন,

” তবে? ”

” তবে কি? বল। ”

” ও ই.. খরচ পড়বে বেশি। ”

” তাতে কি হয়েছে? আমাদের ছেলে-মেয়ের বিয়ে বলে কথা। আমি দু হাত ভরে খরচা করবো। নো চিন্তা ডু ফুর্তি। ”

” আচ্ছা। ” হেসে উঠলেন নাজমুল সাহেব।

দুই ভাই বিবাহ সম্পর্কিত আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে রইলো। পরিকল্পনা করতে লাগলো কত কি।

নিশাকরের কিরণ জমিনের বুকে। কক্ষের ভেজানো দ্বার উন্মোচন করে প্রবেশ করলো দুয়া। বিছানায় শায়িত সাজ্জাদ সাহেব। ঘুমন্ত মানুষটির চোখে চশমা। বুকের ওপর বই। পড়তে পড়তে নিদ্রায় তলিয়ে পড়েছে। দুয়া মিষ্টি করে হাসলো। মনে পড়ে গেল পুরনো কত স্মৃতি। আব্বু সর্বদা এমনটি করে থাকে। বই হোক কিংবা অফিসিয়াল পেপার। পড়তে পড়তে নিদ্রায় তলিয়ে যায়। ভুলে যায় চশমা খুলতে। জ্বলে রয় কক্ষের আলো। তখন বেশিরভাগ সময় এগিয়ে আসতো সে। মাঝেমধ্যে আম্মু। আব্বুর চোখের চশমা খুলে আলো নিভিয়ে দিতো। কখনো কখনো সাজ্জাদ সাহেব কারো উপস্থিতি টের পেয়ে উঠে পড়তেন।‌ কখনোবা রয়ে যেতেন ঘুমন্ত। আজো সেই একই অবস্থা। আব্বুর স্বভাব পরিবর্তন হয়নি। আগের মতই রয়ে গেছে। দুয়া নিঃশব্দ পদচারণায় এগিয়ে গেল। পাছে ঘুম ভেঙে না যায়। আব্বুর শিয়রে দাঁড়িয়ে আলতো ভাবে চশমা খুলে দিলো। বুকের ওপর হতে সরালো বই। দেহে জড়িয়ে দিলো পাতলা কাঁথা। অতঃপর আব্বুর মাথায় হাত বুলিয়ে ললাটে এঁকে দিলো চু মু। প্রস্থান করলো কক্ষের আলো নিভিয়ে। সে মুহূর্তে চোখ মেলে তাকালেন সাজ্জাদ সাহেব। অধরকোলে ফুটে উঠলো তৃপ্তিকর হাসির রেখা।

আদিত্যর কিরণে আলোকিত ধরিত্রী। শহরের অভিজাত এক শপিং কমপ্লেক্সে প্রবেশ করলো নারীগণ। বিশালাকার জায়গা জুড়ে অবস্থিত শপিং কমপ্লেক্সটি। লোক সমাগমে মুখর চারিপাশ। প্রবেশ দ্বার বরাবর লম্বা এস্ক্যালেটর। দুই পার্শ্বে অসংখ্য শো-রুম। নারীগণ আস্তে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলেন। হাঁটতে হাঁটতে তাসলিমা বললেন,

” প্রথমে জুয়েলারি চুজ করা যাক। পছন্দ হলে এখান থেকেই কিনবো। নইলে আমিন’স জুয়েলার্স কিংবা আপন এ যাবো। ঠিক আছে? ”

তাহমিদা বললেন,

” আপা শুনেছি এখানেই বেশ কিছু ব্র্যান্ড নিউ কালেকশন এসেছে। ইনশাআল্লাহ্ পছন্দ হয়ে যাবে। ”

” তাই নাকি? চল তাহলে। দেখা যাক। ”

তাসলিমা, তাহমিদা, তানজিনা এবং সাজেদা এস্ক্যালেটর ধরে ওপর তলায় অগ্রসর হতে লাগলেন। ওনারা পৌঁছে গেলেন তিনতলায়। সাজেদা একটা দোকান দেখিয়ে বললেন,

” আগে ওখানে যাই? ”

তাহমিদা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন। ওনারা পৌঁছে গেলেন সেই দোকানে। সুসজ্জিত এক সেলস গার্ল স্বাগতম জানালো।

” হ্যালো ম্যাম। ওয়েলকাম টু আওয়ার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডস্ ।”

তাসলিমা মুচকি হেসে বললেন,

” থ্যাংক ইয়্যু। ”

” বলুন ম্যাম কিভাবে আপনাদের হেল্প করতে পারি? আপনারা কেমন টাইপের জুয়েলারি খোঁজ করছেন? আমাদের কালেকশনে সব অ্যাভেলেবল। ”

তানজিনা বললো,

” আমরা প্রথমে রিং দেখতে চাইছি। ডায়মন্ড রিং। ”

” এনগেজমেন্ট এর জন্য? নাকি গিফট? ”

সাজেদা বললেন,

” না না। গিফট না। আমার দুয়া মায়ের এনগেজমেন্টের জন্য। সুন্দর দেখে আংটি দেখান তো। ”

সেলস গার্ল মুচকি হেসে বললো,

” ইয়াহ্। শিওর। ”

অতি শীঘ্রই সেলস গার্ল একটি কালো রঙা বাক্স উন্মুক্ত করলো। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো অসংখ্য রিং। ডায়মন্ড রিং। তাসলিমা এবং তাহমিদা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মিষ্টি হাসলো। দেখতে লাগলো আংটি গুলো। অনেকগুলো ই তাদের পছন্দ হলো। তবে কোনটা রেখে কোনটা নেবে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে। অবশেষে সমাধান বের করলো তানজিনা।

” ওয়েট ওয়েট। যার এনগেজমেন্ট সে-ই নাহয় চুজ করুক। ”

সাজেদা মুচকি হেসে বললেন,

” এটাই ভালো হবে। কর কর। ফোন কর। ”

তানজিনা ভিডিও কল করলো। ভাগ্যক্রমে সেসময় দুয়া অনলাইনে ছিল। স্বল্প সময়ের মধ্যেই কল রিসিভ করলো।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। হাঁ বড়াপু। বলো। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বোন তোর একটা হেল্প লাগবে। তুই কোথায় এখন? ফ্রি আছিস? ”

” হাঁ আপাতত আছি। ব্রেক টাইম চলছে। কিন্তু কেন? ”

তাসলিমা তানজিনা’র পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,

” ফ্রি আছিস তাহলে আমাদের সাথে এলি না কেন? আসলে কত উপকার হতো। ”

” মামণি। তোমাকে তো বলেছি আজ ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। মিস্ করা যাবে না। এছাড়াও গয়নাগাটির প্রতি আমার তেমন আগ্রহ নেই। যদি ড্রেস হতো আমি আসার চেষ্টা করতাম। এখন বলো তো। কি হয়েছে? ”

” আর কি হবে? রিং চুজ করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। তোকে কতগুলো ফটো সেন্ড করেছি। একটু দেখে বল তো কোনটা ভালো লেগেছে। তোর পছন্দ মতোই সিলেক্ট করবো। এবার দেখ তো। দেখে বল। ”

বোনের কথামতো কল কেটে দুয়া হোয়াটসঅ্যাপে আগমন কৃত ফটোগুলো দেখতে লাগলো। এখানে নয়টা ফটো রয়েছে। সবগুলোই বেশ সুন্দর। বেচারি পড়ে গেছে দ্বিধায়। সে-ও তো কনফিউজড। এবার কি হবে! পাশে থাকা বিন্দু এবং তিয়াশ ওর হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছে। তারা এই মূহুর্তে সবুজাভ ক্যাম্পাসের জমিনে বসে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বুদ্ধি উদয় হলো মেয়েটির। অধর কা’মড়ে হাসলো। মেসেজ পাঠালো বর সাহেবের কাছে। সাথে ফটোগুলো। মেসেজ ছিল এরকম,

‘ মামণি, আম্মু ওরা শপিংয়ে গিয়েছে। এনগেজমেন্ট রিং চুজ করতে গিয়ে কনফিউজড। আমিও চুজ করতে পারছি না। মাস্টার মশাই। আপনি যদি ফ্রি থাকেন একটু দেখে বলবেন? নাহয় আপনার পছন্দমতো রিং লেপ্টে নিলাম অনামিকায়। ‘

তূর্ণ তখন ভার্সিটির লন ধরে এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ মোবাইলে নোটিফিকেশন এলো। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। পকেট হতে মোবাইল বের করলো। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখতে পেল প্রিয়তমার ক্ষুদে বার্তা। তৃপ্তিময় হাসলো সে। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে ভালোমতো দেখতে লাগলো রিংয়ের ফটোগুলো। দেখার এক পর্যায়ে একটি রিং তাকে বেশ আকর্ষিত করলো। ছোট্ট গোলাকার রিং এর মধ‌্যমণি একটি লাভ শেইপ ডায়মন্ড। তূর্ণ মিষ্টি হেসে সেই রিং এর ফটোতে লাভ ইমোজি রিপ্লাই করলো। ওপাশে জবাব পেয়ে গেল অপেক্ষায় থাকা রমণী। তার অধরকোলে ফুটে উঠলো লাজুক রেখা।

পূর্বের ন্যায় আজো রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষটি। তবে আজ আর ওপাড়ে নয়। বরং পার্শ্বে। ঠিক বামেই। ভীত রমণী শুকনো ঢোক গিললো। অসন্তুষ্ট মানব মৃদু স্বরে বললো,

” সিস্টার। আই নিড সাম প্রাইভেসি। ইফ ইয়্যু.. ”

অসম্পূর্ণ বাক্যটি বোধগম্য হলো পুষ্পির।

” জ্বি নিশ্চয়ই। ”

ওদের একাকী ছেড়ে সেথা হতে সরে গেল পুষ্পি। তৃষা আরো ঘাবড়ে গেল। অজানা ভীতিতে স্বেদজল উপস্থিত। ধক ধক করছে অন্তঃস্থল। পলায়ন যে করবে সে শক্তিটুকু অবধি নেই। পদযুগল যেন আটকে মাটিতে। অস্ফুট স্বরে শুধু বললো,

” আ আমি আসছি। ”

যেই না প্রস্থান করতে উদ্যত হলো ওমনি কোমল হাতটি বন্দী হলো পুরুষালি হাতের মুঠোয়। শক্ত সে বাঁধন। হতবিহ্বল তৃষা! প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের এমন স্পর্শ। শিরশিরানি অনুভূত হলো তনুমনে। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে সে। নিশাদ একদম নির্বিকার। শুধু কঠিন গলায় সে শুধালো,

” এসবের মানে কি? ”

” ম্ মানে? কি বলছেন? আমার হাত ছাড়ুন। আমি বাড়ি যাবো। ”

” যাবে সোনা। নিশ্চয়ই যাবে। আগে আমরা একটু প্রেম আলাপ করি তারপর যাবে। ”

” প্রেম আলাপ! কি যা তা বলছেন? ছাড়ুন। ” হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো তৃষা।

নিশাদ তাতে আরো তেঁতে উঠলো। ওর হাতটি শক্ত করে ধরে সম্মুখে এগিয়ে এলো‌। চোখে চোখ রেখে আকুল কণ্ঠে শুধালো,

” কেন এভয়েড করছিস আমায়? কেন জ্ব!লন্ত বহ্নিতে দ গ্ধ করছিস এ হৃদয়? বল না রে। ”

সে আকুলতা কোমল হৃদয় স্পর্শ করতে সক্ষম হলো। অজান্তেই ছলছল করে উঠলো মায়াবী আঁখি যুগল। তবে সময়মতো নিজেকে ধাতস্থ করতে সক্ষম হলো তৃষা। হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,

” রাস্তাঘাটে সিন ক্রিয়েট করবেন না। ছাড়ুন আমাকে। ”

” ছাড়বো না। ”

দৃঢ় সে কণ্ঠস্বর। অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা। এ কি জ্বালায় পড়লো সে। করবে টা কি এবার?

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here