#মায়াবতী
#পর্ব_১৭
#সুলতানা_পারভীন
-হ্যাঁ লিজা? বলো?
-স্যার? আপনি অফিসে আসবেন না? ১১ টা বাজে এলরেডি—-।
-না আজ আসবো না—। তোমার টাকাটা ম্যানেজার থেকে বলে নিয়ে নাও—। আমি বলে দিচ্ছি—-।
-না স্যার—। টা-টাকা-টাকার জন্য কল করি নি স্যার—।
-আচ্ছা বুঝতে পারছি–। টাকার জন্য কল করো নি—। বাট টাকাটা তো আর্জেন্ট লাগছে তাই না? তাই নিয়ে নাও—। আর শোনো? আজকে অফিসে আসবো না–। একটু মিটিংগুলো ক্যানসেল করো–।
-স্যার?
-ইয়েস লিজা–। বলো?
-স্যার? জাস্ট ১০ মিনিটের জন্যও আসতে পারবেন না?
-এনিথিং আর্জেন্ট?
-স্যার–। আপনি যে সিকিউরিটি ইনচার্জ নিয়োগ করবেন বলেছিলেন– তার কেন্ডিডেটদের ভাইভা আজকে—-।
-ওহ শিট—-। তোমরা একটু ম্যানেজ করে নাও প্লিজ?
-স্যার? আসলে একটু সমস্যা আছে—।
-হুম–? কি সমস্যা বলো?
-আসলে আমি জানতাম না যে দিহানও ওই পোস্টে এ্যাপ্লাই করেছে–। প্রাইমারি ভাইভাতে ম্যানেজার স্যার ওকে সিলেক্টও করেছে–।
-ওয়াও! কংগ্রাচুলেশনস–। এতে সমস্যা কি!
-না মানে স্যার–। এখন ফাইনাল সিলেকশনে যদি আমি ওকে সিলেক্ট করি– আর পরে সবাই যখন জানতে পারে ও আমার– ফিয়োনসে— আর আমিই ওকে সিলেক্ট করেছি–। তাহলে সবাই ওর ইফেসেন্সি-কোয়ালিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে স্যার—। তাই বলছিলাম যে—-।
-তোমরা মেয়েরা এতো বেশি বুঝো কেন বলো তো? আজব! ম্যানেজার সাহেব তো সিলেক্ট করলো—-।
-বাট ফাইনাল সিলেকশন তো আপনাকে বা আমাকে করতে হবে স্যার—। আর আমি তো—-।
-ওফফফফ—।
-সরি স্যার—–।
-ওকে ফাইন—। আমি হাফ এন আওয়ার পরে আসছি—। সবাইকে ওয়েট করতে বলো—। আর হ্যাঁ সবার একসাথে ভাইভা নেয়া হবে-। তাতে যে সিলেক্ট হবে সেই ফাইনাল–। দিহান সিলেক্ট হলে তো ভালোই–। না হলে আর কিছু করার থাকবে না—। আর সিলেকশনের সময় তুমিও থাকবে না। ওকে? গট ইট?
-ইয়েস স্যার—-।
-ওকে। আম কামিং–।
রাহাত শাওয়ার নিয়েই গাড়ি ছুটিয়ে মায়ার ফ্ল্যাটে এলো। বেশ অনেকক্ষণ ধরেই ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজিয়ে চলেছে রাহাত৷ দরজা খোলার নাম গন্ধও নেই। লকিং সিস্টেমটা এমন যে বোঝাই যায় না ভিতরে কেউ আছে কি নেই। তাই রাহাতও সিউর হতে পারছে না মায়া বা অন্য কেউ বাসায় আছে কিনা। বেশ অনেকটা সময় বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে গেইটের কাছে ফিরে এলো রাহাত। এক তলা এক ফ্ল্যাটের বিল্ডিং বাসাটা। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবে এমনও নেই আশেপাশে। ভাবতে ভাবতেই কেউ এসে সালাম ঠুকলো। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে সিকিউরিটি গার্ড।
-তুমি?
-স্যার আমি এই সোসাইটির গার্ড। আপনাকে এই বন্ধ ফ্ল্যাটের সামনে দেখে কথা বলতো এলাম–। কাউকে কি খুঁজছেন স্যার?
-ফ্ল্যাটটা বন্ধ কবে থেকে? আর মায়া কোথায়! ওর ফ্যামেলি?
-ফ্ল্যাটটা তো স্যার দু বছর আগে থেকেই খালি পড়ে আছে–।
-মানে!
-মায়া ম্যাডামের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরই ম্যাডামের মা আর মিহান স্যার উনাদের আগের বাসায় ফিরে গেছে–। সবাই বলেছিল থেকে যেতে–। উনারা রাজি হয় নি–। ম্যাডাম তো চাকরির খাতিরে ফ্ল্যাটটা পেয়েছিল–। বিয়ের পর তাই চাকরিটাও নেই তাই উনারা আর থাকে নি–। আর মিহান স্যারও নাকি একটা ভালো জব পেয়েছেন–। উনাদের নিজের বাড়ি থেকে উনার যাতায়াত করতে সুবিধা হবে—-।
-শিট! এতো কিছু হয়ে গেছে আমি জানিও না! ড্যাম ইট! তুমি জানো মায়াদের আগের বাসাটা মানে নিজেদের বাসাটা কোথায়!
-নাহ স্যার—-।
-আহ—-। শিট!
-স্যার? আপনি মায়া ম্যাডামের কে হন?
-আমি ওর কেয়ারলেস হাসবেন্ড–।
রাহাত রাগের চোটে রাস্তায় পড়ে থাকা ছোট্ট একটা পাথরে জোরে লাথি বসিয়ে কথাটা বললো। গার্ড বেচারা ফ্যালফ্যাল করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাহাতও কোনমতে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। রাগ সামলাতে না পেরে আবার স্টিয়ারিংয়ে জোরে একটা ঘুষি বসালো রাহাত। কাজের চাপের কারণে হোক বা অনিহার কারণে বিয়ের দুদিন পরে একদিনের জন্যই শুধু রাহাত মায়ার সাথে ওর মায়ের বাসায় বেড়াতে গেছে। তাও সেটা এই বন্ধ ফ্ল্যাটটায়। মায়ার মা আর ভাই যে এখান থেকে শিফ্ট করেছে এটা সে জানেই না। এরকম মায়ার জীবনের আর কত ঘটনা সে জানে না রাহাত ভাবছে। মায়াকে ফিরে পাওয়ার যে ছোট্ট একটা আশা ছিল সেটাও শেষ। ওর আগের বাসাটা কোথায় ছিল তার শুধু গলিটা চিনে রাহাত। এই ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত গলির হাজারো মানুষের ভিড়ে কি করে খুঁজে পাবে তার মায়বতীকে!
কিছু একটা মনে পড়তেই রাহাত অফিসে ফিরলো। রাহাত না জানলেও মায়ার পুরোনো বাসার ঠিকানা আরেকজন জানে অফিসের। তার কাছ থেকে নাকে খত দিয়ে হলেও ঠিকানাটা ভিক্ষে চাইবে রাহাত। যে কোন ভাবে মায়বতীর খোঁজ রাহাতের চাই। স্পিড বাড়িয়ে গাড়ি ছুটিয়ে অফিসে এলো রাহাত। সিলেকশনের কথাটা ভুলেই গিয়েছিল সে। রুমে ঢুকে পিয়নকে ডেকে পাঠানোর দু মিনিট পর ক্যান্ডিডেটরা রুমে ঢুকলো।
রাহাত মুখ তুলে সবাইকে দেখলো। পাঁচজন ক্যান্ডিডেট। সবাই ফরমাল গেটআপে। সবাইকে বসতে বলে একে একে প্রশ্ন করলো রাহাত। কোন সিচুয়েশনে কি করতে হবে এসব নিয়ে সবার সাথে কথা হলো। কে কোন বিষয়ে দক্ষ সেটাও জেনে নিল। পাঁচজনের মধ্যে একজনকে পোস্টটার জন্য দারুণ পছন্দ হলো রাহাতের। ফিট বডি, লম্বা চওড়া দেহ, অমায়িক মুখভঙ্গি-সব মিলিয়ে বেশ ছেলেটা। তার চেয়ে বড় কথা সে ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন-রেড বেল্ট উইনার। সিকিউরিটির ইনচার্জের দায়িত্বটা সে ভালোই পালন করতে পারবে বলে ধারণা রাহাতের।
বাকি চারজনকে বিদায় জানিয়ে ছেলেটার সাথে হ্যান্ডশেক করলো রাহাত।
-কংগ্রাচুলেশনস ব্রো–। বাই দা ওয়ে- আপনার নামটাই জানা হয় নি–।
-স্যার আমি দিহান আহমেদ।
-ওয়াও! নাইস নেইম মিস্টার দিহান। বাই দা ওয়ে–। এগেইন কংগ্রাচুলেশনস–।
-থ্যাংক ইউ স্যার–।
-ওয়ান পারসোনাল কোশ্চেন—। আর ইউ মেরেড?
–আম—। এখনো বিয়েটা হয় নি–। চাকরিটা পেয়ে গেছি–। শীঘ্রি বিয়েটা করে ফেলবো—।
-তা ফিয়োনসে কি করে আপনার?
-একচুয়েলি–। ও একটা কোম্পানিতে এম.ডি র পি.এ—।।
-কোন কোম্পানি?
-কোম্পানির নামটা আমি জানি না স্যার—।
-হা হা হা—। আচ্ছা। আপনি দু মিনিট বসুন-।
-জি স্যার?
-আরে বসুন মিস্টার দিহান—।
দিহানকে বসতে বলে রাহাত হেসে ফেলে টেলিফোনে ১ প্রেস করে কল করলো। কল রিসিভ হতেই কিছু না শুনে ছোট্ট কয়েকটা কথা বলে লাইন কেটে দিল। কথাগুলো ছিল–।
-রুমে এসো এক্ষুণি—।
চলবে