মায়াবতী পর্ব ১৮

#মায়াবতী
#পর্ব_১৮
#সুলতানা_পারভীন

লিজা রুমে ঢুকতেই রাহাত ওকে দেখে হাসলো একটু। দিহান লিজার দিকে পিঠ করে চেয়ারে বসা তাই ওরা একজন অন্যজনকে দেখে নি।

-হেই লিজা? মিট মিস্টার দিহান–। আমাদের নতুন সিকিউরিটি ইনচার্জ–। মিস্টার দিহান? শি ইজ মাই পি.এ লিজা—-।

রাহাতের কথায় দিহান মাথা ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়েই হা হয়ে গেল। একজন অন্যজনকে দেখে এতোটা অবাক হল যে বলার মতো না।

-তুমি?

-তুমি জবটা পেয়ে গেছ! কংগ্রাচুলেশনস দিহান—।

-কিন্তু তুমি এখানে কি করে!

-আমি তো রাহাত স্যারের পি.এ–।

-হোয়াট!

রাহাত ওদের দুজনের সারপ্রাইজড চেহারা দেখে ভিষণ মজা পাচ্ছে। দুজনের বিস্ময়ের ঘোর কাটানোর জন্য একটু গলা খাঁকারি দিল রাহাত। লিজা আর দিহান দুজনেই লজ্জা পেয়ে রাহাতের দিকে তাকালো।

-সরি-সরি স্যার—।

-ইটস ওকে লাভ বার্ডস—–। লিজা তুমি ওকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও—। দিহান? সবার সাথে পরিচিত হও–। আর নেক্সট ডে জয়েন করো—।

-ইয়েস স্যার—।

-দিহান–। আপনি সামনের রুমটায় গিয়ে দু মিনিট অপেক্ষা করুন-। ওটা লিজার রুম—। আমার লিজার সাথে একটু কথা আছে–।

-ইয়েস স্যার—-।

দিহান বেরিয়ে যেতেই রাহাত হেসে লিজাকে আরো একবার কংগ্রাচুলেশন চালিয়ে একটা চেক দিল। লিজা চেকটা হাতে নিয়ে দেখলো এমাউন্টে ৫০০০০ টাকা লেখা আর রাহাতের সাইন করা।

-স্যার?

-রাখো এটা–। আর মিস লিজা– বিয়েতে কিন্তু গ্রান্ড পার্টি চাই—।

-জি অবশ্যই স্যার—।

-পিয়নকে একটু আমার রুমে পাঠাও—।

-স্যার? ভাবি কেমন আছে?

-জানি নাহ—–।

-কালকে————-।

-মায়াবতীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে লিজা। ওকেই খোঁজার চেষ্টা করছি—-। অন্যায় তো কম করিনি ওর সাথে—। ভালোবেসে সেটার সম্মান করতে না পারাটা কত বড় অন্যায় সেটা আজ টের পাচ্ছি–। মেয়েটাকে প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়াচ্ছি—। কখনো ক্ষমা চাওয়ার জন্যও ওকে পাবো কিনা কে জানে!

-স্যার? এতো আপসেট হবেন না প্লিজ—। ম্যামকে ঠিক পেয়ে যাবেন—।

-থ্যাংকস—। তুমি পিয়নকে পাঠাও–। সে যদি জানে মায়াটা কোথায়—-।

——————————

-তাড়াতাড়ি করো লিজা–। আমি মায়াকে খুঁজতে বের হবো–। ওকে আমার যে করেই হোক খুঁজে পেতেই হবে—।

-জি স্যার–। অল দা বেস্ট—।

মায়াকে খুঁজে বের করতে পিয়ন কি করবে সেটা ভাবতে ভাবতেই লিজা বেরিয়ে গেল। পিয়নকে রাহাতের রুমে যেতে বলে দিহানকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেয়েটা।

এদিকে পিয়ন রাহাতের রুমে এলো। পিয়নকে দেখে রাহাত একটু অবাক চোখে তাকালো।

-তুমি? তুমি কে?

-স্যার- আমি পিয়ন– জামাল–।

-জা-জা-জামাল! পি-পিয়ন তো শ-শফিক ছিল! তুমি কবে পিয়ন হলে!

-ওহ! আপনি শফিক ভাইকে খুঁজছেন স্যার? শফিক ভাই তো গ্রামের বাড়িত গেসে—। হের মার অসুখ–। তার জন্য আমি ডিউটি করতিসি স্যার——।

-ওহ——। শফিক কবে ফিরবে জানো?

-হের মায় নাকি বেশি অসুস্থ স্যার–। কবে ফিরবে জানি না–। হের কাছে তো ফোন নাই–। তাই যোগাযোগ করার উপায়ও নাই—।

-ওকে—। তুমি যাও—–।

পিয়ন চলে যেতেই রাহাত দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। এবার কি করবে সে! মায়ারা পুরোনো বাসা থেকে অফিসের দেয়া ফ্ল্যাটে শিফ্ট করার সময় পিয়ন শফিক সব কাজে হেল্প করেছে। তাই রাহাত ভেবেছিল মায়ার পুরোনো বাসা কোথায় সেটা শফিকের কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে। লোকটা তো নেই আর উপরে তার সাথে যোগাযোগ করারও কোন ব্যবস্থা নেই। মায়াকে খুঁজে বের করার ছোট্ট সম্ভবনাটাও যেন চিরতরে শেষ হয়ে গেল রাহাতের।

রাহাত চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে এক মনে মায়ার কথা ভাবছে। মেয়েটা ঠিকই বলেছিল। কেউ হারিয়ে যেতে চাইলে তাকে খুঁজে বের করা একেবারেই অসম্ভব। অবশ্য মায়া তো নিজের ইচ্ছেয় হারিয়ে যায় নি। মায়াকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আর সেই বাধ্যটা করেছে রাহাত নিজে। দিনের পর দিন মেয়েটা রাহাতের কাছে অবহেলা ছাড়া আর কি পেয়েছে! শুধু অত্যাচার করেছে মেয়েটাকে সে। অত্যাচারই তো! শুধু কি হাতে মারলে সেটাকে অত্যাচার বলে! এভাবে দিনের পর দিন অবহেলা করলে সেটাও অত্যাচার। মানসিক অত্যাচার। তবুও তো বিনিময়ে শুধু ভালোবেসে গেছে পাগলীটা ওকে!

কি করবে, মায়াকে কোথায় খুঁজবে কিছুই মাথায় আসছে না আর রাহাতের। বাবার নিশ্চয়ই মায়ার বাসার ঠিকানা জানে। জানেই। কারণ আগেই মায়ার বাসায় কথা বলতে গিয়েছিলন রাহাতের বাবা। কিন্তু বাবা তো কিছুতেই বলবে না মায়ার ঠিকানা। আর রাহাতও বা কোন মুখে বাবার কাছে মায়ার বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করবে! কোন মুখেই বা বাবার সামনে দাঁড়াবে সে! কিন্তু মায়াকে না পেলেই বা তার চলবে কি করে! মায়াটা যে তার একেবারে আত্মার সাথে মিশে আছে। মেয়েটা চলে যাওয়ার দমটা আটকে আসছে রাহাতের একা থাকতে। কেন যে জুলির ফাঁদে পা দিয়েছিল সে! ভাবতেই রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে রাহাতের। শয়তান মেয়েটা সামনে থাকলে খুন করে ফেলতো ওকে রাহাত।

রাহাত আর কিছু ভাবতে না পেরে টেবিলে মাথা রাখলো। চোখের কোণা দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে রাহাতের। ওর মা মারা যাওয়ার পর আজ রাহাত কাঁদছে। মায়ের মৃত্যুর পর ওর কান্নার সময় সাপোর্ট হিসেবে শান্তনা দেয়ার জন্য ওর বাবা পাশে ছিল। আজ মায়াকে হারিয়ে ওর পাশে কেউ নেই। ওর বাবাও না। রাহাত একেবারে একা। মায়াকে ফিরে না পেলে ওর যে কি হবে রাহাত নিজেও জানে না। অথচ মেয়েটাকে কি করে ফিরে পাবে তারও কোন পথ চোখে পড়ছে না রাহাতের। এই মূহুর্তে কাউকে মন থেকে পাশে চাইছে রাহাত। জাস্ট মায়াটাকে খোঁজার রাস্তা বাতলে দিবে ওকে। আর কিচ্ছু চাই না রাহাতের। জাস্ট ওর মায়াবতীটাকে ফিরে পেতে চায় এখন। এটাই এখন তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here