#মায়াবতী
#পর্ব_৩৯
#সুলতানা_পারভীন
“রাহাত, জানো?
জুলি মেয়েটার বিছানায় তোমাকে শুয়ে থাকতে দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার। তবু তোমার বন্ধ চোখ জোড়া দেখে মনে হয়েছিল তোমাকে মেয়েটা ফাঁসিয়েছে বা তোমার হয়তো কোন দোষই নেই। মেয়েটাকে কয়টা থাপ্পড় লাগিয়ে ড্রাইভার আর আমি তোমাকে ধরে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালাম। তারপর সোজা বাসায়। তখনও হুঁশে ছিলে না তুমি। কি সব যেন বলছিলে বিড়বিড় করে। বুঝতেও পারিনি। জানো? রুমে আসতেই তুমি আমাকে জাপটে ধরেছিলে। কেমন একটা ঘোর কাজ করছিল যেন তোমার মাঝে। জানো তুমি? এর আগে কখনো তুমি এতো গভীরভাবে ভালোবাসো নি। তোমার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম যেন৷ আর জানো? কতোটা পাগলামি করেছ কাল তুমি? আমার সাধের শাড়িটা সেইফিপিনের সাথে টান লেগে অনেকটা ছিঁড়েও ফেলেছ। অনেকটা কাছে পেয়েছিলাম জানো তোমাকে? একসময় তুমি পাগলামি করতে করতেই আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েও পড়লে। তখন হাসবো কি কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
অবশ্য পরের দিন সকালে বেশ বেলা করে তোমার ঘুম ভাঙলো। দেখে মনে হলো তোমার কিছুই মনে নেই। আমিও আর কিছু বলিও নি। জিজ্ঞেসও করি নি। কি জিজ্ঞেস করবো বলো?”
রাহাত পুরো থতমত খেয়ে গেল লেখাটা পড়ে৷ সেদিনের সেই মেয়েটা তাহলে আর কেউ নয় মায়া ছিল!! শিট!! নিজের গাধামির জন্য নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে রাহাতের। কয়েকটা পেইজ উল্টাতে আরো কিছু লেখা আছে ডায়েরিতে।
“জানো??
আজ আমাদের সেকেন্ড মেরেজ এনিভার্সারি। তোমার মনে নেই এবারও। অবশ্য সেটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু গত দুটো দিন বাসায়ও ফিরলে না? কেন?? এতোই ব্যস্ত?? জানো? আজ আমি তোমার জন্য তোমার দেয়া গিফ্টটায় নিজেকে সাজিয়েছিলাম, পুরো ঘরটা তোমার পছন্দমতো সাজিয়েছি মোমের আলোয়। সবই আছে শুধু তুমি নেই। ভিষণ কান্না পাচ্ছে জানো?”
“সকালে ঘুম ছুটতেই দেখলাম বিছানাটা খালি। তুমি আজও বাসায় ফিরলে না৷ প্রথমে ভাবলাম হয়তো কাজে ব্যস্ত তুমি। কিন্তু একটা মেসেজ আমার সমস্ত ভুল ভেঙে দিলো। মেসেজটা জুলির। তুমি গত দুদিন নাকি তুমি ওর সাথেই—। জানো আজ তোমাকে অবিশ্বাস করতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু জানো তো? বিশ্বাস বলো আর অন্ধবিশ্বাস বলো সবটারই একটা সীমা থাকে। হয়তো আমার সেই সীমাটা শেষ হয়ে গেছে। তাই চলে যাচ্ছি–। তোমার পথের বাঁধা হতে চাই না। তাই মুক্তির ব্যবস্থা করে গেলাম৷ পারলে ক্ষমা করে দিও প্লিজ। ”
এর পরে আর লেখা নেই। মায়া ডায়েরিটা রেখেই চলে গিয়েছিল সেদিন। দূরত্ব ব্যাপারটা কতোটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে সেটা ভালোই টের পাচ্ছে রাহাত। সেদিন পার্টিতে ড্রিংকস করার পর কি হয়েছিল একদমই মনে নেই রাহাতের। তবে এটা বেশ বুঝতে পারছে জুলি ইচ্ছে করেই ওদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি করানোর চেষ্টা করেছে এবং সফলও হয়েছে। জুলির সাথে তো সে মোটেও ছিল না। ভুল করেছিল ঠিক। তবে সবটা মায়াকে না বললে মেয়েটা আরো কষ্ট পাবে, হয়তো আরো ভুলও বুঝবে।
ডায়েরি রেখে কলাপাতা রঙা জামদানি শাড়িটা নিয়ে হাসপাতালে ছুটলো রাহাত। মায়া বাসায় ফিরলে সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে ওকে। আর কেউ যেন ওদের মাঝে সন্দেহ ঢোকাতে না পারে এবার সেটাই করবে রাহাত। আর জুলিকেও ও দেখে নিবে।
সাতটা দিন মায়াকে হাসপাতালে একেবারে চোখে চোখে রেখেছে রাহাত। সময় মতো ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে৷ কপালের ব্যান্ডেজ খোলার পর মলম লাগিয়ে দিয়েছে কপালে, চুল ধুয়ে দিয়েছে, চুলে তেল লাগিয়ে চুল আঁচড়ে দিয়েছে। সকালে ঘুম ভাঙা থেকে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত প্রত্যেকটা কাজে হেল্প করেছে মায়াকে ও। রাহাতের সেবায় হোক বা সবার দোয়ায় মা খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ কপালটা আরেকবার ড্রেসিং করে দিয়ে তাই মায়াকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়া হলো। তাই রাহাত মায়াকে নিয়ে খুশি মনে বাসায় ফিরলো। মায়াবতীটাকে আর কিছুতেই রাগ করে থাকতে দিবে না রাহাত।
মায়াকে নিয়ে বাসায় ফিরলো রাহাত। সবার সাথে একটু কথা বলে মায়া রুমে চলে গেল। রাহাত একটু পরে রুমে এসে মায়াকে দেখে থমকে গেল। মায়ার মোবাইলটা নিচে মায়ার সামনেই পড়ে আছে। মায়াও ফ্লোরে বসে আছে৷ চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। রাহাত বুঝতেই পারছে না এই কয়েকটা মিনিটের মধ্যে কি এমন হলো যে মেয়েটা এভাবে পাগলের মতো হয়ে গেছে!?! রাহাত একটু এগিয়ে এসে মায়ার সামনে বসে মুখটা তুলে ধরার চেষ্টা করলো। মায়াও প্রায় সাথে সাথে রাহাতের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল।
-মায়া?? এই মায়াবতী? কি হলো??
-খবরদার এই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে তুমি ছোঁবে না একদম৷
-আরে?? এই মায়া?? কি বলছো এসব? আমি আবার কি করেছি!??
-কি করেছ জানো না তুমি? জানো না কি করেছ!!? দাঁড়াও–। দেখাচ্ছি–।
মায়া নিচে থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাহাতের দিকে দেখালো। রাহাত মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো। চারটা ভিডিও পাঠানো হয়েছে জুলির নাম্বার থেকে। রাহাত আবার মায়ার দিকে তাকালো।।
-মায়া? আই ক্যান এক্সপ্লেইন–।
-কি ব্যাখ্যা দিবে তুমি?? ঘরে বউ থাকার পরও কেন তুমি অন্য কোন মেয়ের কাছে যাবে? আমি কি এতোটাই অক্ষম রাহাত? এতোটাই যে তোমার সাথে অন্য কারো বিছানার—ভিডিও দেখতে হবে!!
-মায়া?? সেরকম কিচ্ছু হয় নি—।
-কি বলতে চাও তুমি??! এক একটা ভিডিওতে যে তোমার কয়েক ঘন্টার নোংরা রূপটা ফুটে উঠেছে, তার সবটাই মিথ্যে!!??
রাহাত আর কিছু না বলে চোয়াল শক্ত করে মায়ার মোবাইলের সাথে টিভির কানেক্ট করলো। তারপর মায়াকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে টিভি অন করে ভিডিও প্লে করলো৷ মায়া মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলেই রাহাত মায়ার গাল শক্ত করে চেপে ধরে টিভি সেটের দিকে ফেরালো।
-মায়া?? সবটা যখন জেনেই গেছ তখন পুরোটা জানা উচিত–তাই না? কি বলো??
-ছাড়ো আমাকে রাহাত–। আমি দেখবো না–।
-দেখতে তো তোকে হবেই—। আমি এতো ময়না-তোতা করে তোকে বোঝালাম–। তুই বুঝলি না। জুলির উপরেই তোর সব ভরসা না? হ্যাঁ আমি মানছি আমি এসব করেছি–। সব করেছি–। ডজন খানেক মেয়ের সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভড হয়েছি—। এখানে তো শুধু কয়টাই আছে—। এগুলোই দেখ আগে–। মন ভরে দেখ—-।
-ছাড়ো রাহাত—। লাগছে আমার–।
-লাগুক—। এই প্রত্যেকটা ভিডিও এখন তুই দেখবি—। আমার সামনে দেখবি–। তারপর যা বলবি আমি শুনবো। তার আগে না। এর পর যদি তুই চলে যেতেও চাস আমি আটকাবো না তোকে—–।
-রাহাত??
-কি রাহাত?? তুমি জানতে চাইছিলে না তোমার অক্ষমতা টা কি?? সেটাই দেখো মন দিয়ে–। জুলির সাথে ভিডিওটা বেশি হট—। ওটা সবগুলোর শেষে দেখো–। ওকে?? প্লে করছি—।
রাহাত মায়াকে শক্ত করে চেপে ধরে ভিডিও প্লে করলো। মায়া না পারছে ছুটতে না পারছে সরে যেতে। রাহাত চিবুক শক্ত করে মায়াকে দেখছে। ভিডিওতে একটা মেয়ে রাহাতের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে মায়া চোখ বুজে নিলো।
-মায়া? চোখ খুলো??
-পারবো না আমি–। কিছুতেই না।
-মায়া? চোখ খুলতে বলছি তোকে–। আমাকে আর রাগাস না ভালোয় ভালোয় বলছি—।।
———————
-আমি কতটা নিচ, কতোটা নোংরা, চরিত্রহীন–তার প্রত্যেকটা জিনিস তোকে আজ দেখতেই হবে–। তারপর যা হবার হবে—। চোখ খোল মায়া—-।।
মায়া চোখ শক্ত করে বুজে রইলো। আর চোখের কোণা দিয়ে পানি ঝরছে। রাহাত সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ভিডিওর ভলিউম বাড়িয়ে দিলো। মায়ারও তো সবটা জানা উচিত। এভাবে লুকোচুরি খেলা আর কতো!!!
চলবে
(প্রিয় পাঠক,
Nice, nxt, n, nxt— এসব ছাড়া যা ইচ্ছে বলতে পারেন। চাইলে রাইটারকে ঝাড়ি দিয়েও কমেন্ট করতে পারেন। কিন্তু দয়া করে এই চারটি কথা বলবেন না। আমি রিপ্লাই দেই বা না দেই, কিন্তু খুব আগ্রহ নিয়ে আপনাদের কমেন্টগুলো পড়ি। 😊 ভুল হলে দুঃখিত)#মায়াবতী
#পর্ব_৪০ (#শেষ_পর্ব)
#সুলতানা_পারভীন
টিভি থেকে কাচ জাতীয় কিছু একটা ভাঙার শব্দ শুনতে পেল মায়া। ভিষণ ইচ্ছে করছে চোখ খুলে দেখতে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আরো শক্ত করে চোখ বুজে দুহাতে চোখ ঢাকলো মায়া। কয়েক সেকেন্ড পরেই রাহাতের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল ভিডিওতে।
-তুমি এভাবে এই ড্রেসআপে কেন এসেছ!! এই মেয়ে? জুলি তোমাকে বলে নি আমি জাস্ট তোমাকে কয়টা প্রশ্ন করব??
-আজব লোক তো মাইরি–!! আমার কাজ টাকা নিয়ে বড়লোকদের রাত রঙিন করে দেয়া–। এতো প্রশ্নের জবাব দিতে যাবো কেন!?
-মানে!! চুপ থাকো। সেদিন কি কি হয়েছিল সেটা বলো আমাকে।
-কি ক্যাঁচালে পড়লাম রে বাপ! কোনদিনের কথা বলছেন বলুন তো! আপনার এই বিশাল বাংলোয় আজই তো আসলাম!!
-আমাকে তুমি চিনো না? তুমি সিউর আজকের আগে আমাকে দেখো নি কখনো!!
-কি প্যাঁচাল!! বললাম তো!! আর কাস্টমারদের চেহারা ভুলে না এই বিজলি—।
-কিন্তু জুলি যে বললো তুমি সেদিন আমার সাথে ছিলে!!
-আরে মাইরি–!! আমি কি বলি আর সে কি বলে!! জুলি ফুলি চিনি না–। আসো শুরু করি–। হাতে সময় নেই আমার–। যেতে হবে।।
-জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
-ওকে—। টাকা দাও-। চলে যাই–। অপমান করার কি আছে!?
কথাগুলো শুনেই মায়া চোখের উপর থেকে হাত সরালো। টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকাতে দেখতে পেল মেয়েটা টাকা নিয়ে হাতের পার্স ঘুরাতে ঘুরাতে বেরিয়ে গেছে৷ আর রাহাত জুলির নাম্বারে কল করলো।
-এই জুলি!!? কাকে পাঠিয়েছিলি? আর আজাইরা মেয়েগুলোকে ফার্ম হাউজে পাঠালে খবর আছে বলে দিলাম—।
কলটা কেটে দিয়েই দরজা লক করে এসে ঘুমিয়ে গেল রাহাত। মায়া হা করে একবার রাহাতকে আর একবার টিভি স্ক্রিন দেখছে। রাহাতের হাত থেকে রিমোট কন্ট্রোলটা নিয়ে ভিডিওটা ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে শেষ পর্যন্ত দেখলো মায়া। পুরোটা সময় জুড়ে সকালে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত রাহাত ঘুম!!পরের আরেকটা ভিডিওতেও সেইম। পরের ভিডিওটা লিজার ভিডিও। সেটা দেখেও থমকে গেল মায়া। প্রথম কয়টা মিনিট অসহ্য লাগলেও লিজার আর রাহাতের কথাগুলো শুনে চমকে গেল মায়া।
-“স্যার? সরি—।।—- We can start now.——–.
-Just get out liza——.
-What??!!
-I said get out. পারলে ছেলেটার কাছে ফেরত যাও—। আর হ্যাঁ টাকার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তোমার এ্যাকাউন্টে কালই টাকা পৌঁছে যাবে—। নাউ লিভ—-।
-স্যার???
-কেউ ভালোবাসলে তাকে ধোঁকা দেয়া উচিত নয় লিজা—। ভয় পেও না। এই ব্যাপারটা তোমার আমার মাঝেই থাকবে। চাকরিটা ছাড়তে চাইলে অবশ্য——।
– না স্যার–।।
-ওকে যাও এখন।৷ আমি বাসায় ফিরবো—-। আমার মায়াবতীটা অপেক্ষা করছে—। তুমি ফিরে যাও লিজা—। যত বড়ই সমস্যা হোক না কেন নিজের সম্মানটা অনেক বেশি দামি—। কথাটা মাথায় রেখো।।”
কথাগুলো শেষ হতেই লিজা আর রাহাতের দুজনেরই তাড়াহুড়ো করে বের হওয়া দেখে মায়া ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লো। কি হচ্ছে বা কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মেয়েটা। কোন রাতের কোন মেয়ের খোঁজ করছে রাহাত!! আর যদি সত্যিই মেয়েগুলোর কাছে রাত কাটাতেই যাবে তবে এভাবে তাড়িয়ে দিলো কেন!! রাহাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসে মায়ার পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো৷ মায়ার হাত থেকে রিমোটটা নিয়ে জুলির ভিডিওটা ওপেন করলো। সেদিনের ভিডিও-যেদিনের ঘটনাটা রাহাতের মনে নেই বিন্দুমাত্রও। রাহাত বিছানায় শুয়ে আছে, মায়া আর ড্রাইভার এলো, জুলিকে থাপ্পড় দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রাহাতকে নিয়ে চলে আসলো ওরা।
-মায়া?? জানো এতো কিছু কেন হয়েছে?? সেদিন প্রজেক্টের কাজে আমি আর জুলি একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম। সেখানে জাস্ট একটা পেগ নিয়েছিলাম। কি হয়েছে জানি না। নেশা হয়ে গেছিলো প্রচন্ড। কোথায় আছি সেটাও বুঝতে পারি নি। শুধু একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। চেহারাটাও মনে ছিল না সকালে। তার পড়নের শাড়িটার কথা আর তার সাথে কাটানো সময়, তার স্পর্শগুলোর কথা মনে ছিল। কোথা থেকে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সকালে যখন নিজেকে বাসায় দেখলাম তখন তোমাকেও কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় নি। বারবার মনে হচ্ছিল তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছি—। তাই মেয়েটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম–। জুলি একবার একজনকে পাঠিয়ে বলে ওই মেয়েটা নাকি এই—। আমিও পাগলের মতো জুলির কথায় বিশ্বাস করে চলেছি—। বিশ্বাস করো কারো সাথে জড়িয়ে তোমাকে ঠকাই নি।। আর লিজার ব্যাপারটাও ক্লিয়ার করা দরকার—। এতো কিছু পর কেন জানি মনে হলো সেদিনের মেয়েটা লিজাও হতে পারে–। তাই লিজাকে ওভাবে বলে ওর মুখ থেকেই কথা বের করতে চেষ্টা করেছিলাম–। মেয়েটাকে কাছে টেনেই বুঝতে পেরেছিলাম ও সে নয়–। আর তোমার মুখটাও ভাসছিলো চোখের সামনে। মনে হলো যা হয়েছে তা তো বদলাতে পারবো না। আর এসব খুঁজতে গিয়ে তোমার থেকেও দূরে সরে যাচ্ছিলাম–। আমাদের দূরত্বের কেউ এতো ফায়দা নিবে বুঝতে পারি নি গো মায়াবতী–। সে দিন রাতে তোমাকে সবটা বলতে ওভাবে ছুটে এসেছিলাম বাসায়—। কিন্তু এসেই দেখি আমার অবহেলা তোমাকে আমার থেকে বহুদূরে ঠেলে দিয়েছে ততক্ষণে—। আম সরি মায়াবতী।
-সেদিন রাতের মেয়েটা আমি ছিলাম রাহাত—।
-জানি গো মায়াবতী–। তোমার আলমারিতে শাড়িটা দেখে চমকে গিয়েছিলাম–। ডায়েরি পড়ে সবটা জেনে কি খুশি লাগছিল বিশ্বাস করতে পারবে না—-।
-অসভ্য লোক —। খুশি লাগছে না তোমার?? খুন করে ফেলবো একদম–।
-খুন করেই ফেলো আজকে—। দেখি কেমন খুন করতে পারো?? হুম??
-আরে!! এই??
রাহাত আচমকা মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো।
-মায়াবতীটা রাগ করেছে তাই না? রাগ অভিমানগুলো আমি নিজের স্টাইলে ভাঙাই? কি বলো??
-ছাড়ো—-??
মায়াকে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে মায়ার হাত দুটো চেপে ধরে মায়ার দিকে ঝুঁকলো রাহাত। মায়া রাহাতের চোখে মুখে সেই নেশা ধরানো চাহনিটা দেখতে পেলো। রাহাত কিছুক্ষণ মায়ার মুখটা দেখে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে রাখলো। তারপর আলতো করে নিচের ঠোঁটটা একবার কামড়ে ধরে ছেড়ে দিলো।
-এটা কিন্তু ঠিক না মায়াবতী–। তুমি তোমার কথা রাখো নি—।
-কি কথা রাখি নি!?!
-কথা ছিল আমি ভুল করলে তুমি ভালোবাসা দিয়ে সেটা শুধরে দিবে। কিন্তু কখনো ফেলে যাবে না—।।
-নিজের স্বামীকে অন্যের সাথে– অন্যের বিছানায় দেখা কতোটা কষ্টের সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না–। এমন হলে পৃথিবীর কোন মেয়ে মাথা ঠিক থাকে কিনা সেটা আমার জানা নেই—। আর তোমার অবহেলাগুলো আমার অবিশ্বাসটাকে আরো সায় দিচ্ছিলো রাহাত–। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত বা কি করবো–।
-সে সব কিচ্ছু শুনছি না।। কথা রাখো নি–। সো এখন শাস্তি হবে–।
-হুম? তাই?? কি শাস্তি??
-শাস্তি হলো আজ তুমি আবার সাজবে—। ম্যারেজ এ্যানিভার্সির রাতটা মিস করেছি–। আজকে কোন মিস হবে না–। তবে আমি আজ কিচ্ছু করবো না–। দেখি তুমি কতোটা পাগলের মতো আমাকে চাও—।
-অসভ্য লোক একটা—। পারব না আমি—।
– বাবা!! এতো লজ্জা!!? সেটি হচ্ছে না ম্যাডাম–। আর ভুলে গেলে চলবে?? সেদিন না আদর দিয়ে মায়াবতীটার লজ্জা ভেঙে দিলাম—।
-পারবো না। সরো—-।।
-মায়া?? শাস্তি কিন্তু বাড়বে আমার কথা না মানলে বলে দিলাম—-।।
পনেরো দিন পর।
আজ দিহান আর লিজার বিয়ে ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে একটু আগেই ফিরেছে মায়া আর রাহাত। ওরা যাওয়ায় দু জনেই ভিষণ খুশি হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানটা শেষ হওয়ার পর বাসায় ফিরেছে ওরা। এই মূহুর্তে মায়া গায়ের ভারি গহনা গুলো খুলছে। আর রাহাত দেয়ালে হেলান দিয়ে মায়াকে দেখছে। মায়ার গহনা খোলা হলে মায়াকে শাড়ি বদলানোর জন্য উঠে দাঁড়াতে দেখে রাহাত এগিয়ে এসে মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবালো।।
-মায়া?? একটা জিনিস চাই–।। দিবে??
-হুম? কি চাও!! বলো!!?
-আমার একটা পিচ্চি মায়াবতী চাই।
-ইশ—। সরো তো?? মায়াবতী টায়াবতী হবে না–। আমার পিচ্চি রাজকুমার আসবে—। হুহ–।
-নাহ—-। বলছি না আমার ছোট্ট রাজকন্যা চাই–। ছোট্ট একটা মায়াবতী চাই।
-না না না–।
-বলছি না মায়াবতী চাই–? চাই মানে চাই–।
-সরো—-। দিবো না মায়াবতী। হুহ—।
-আচ্ছা। দিতে হবে না। দেখা যাক আগে কে আসে–। মায়াবতী নাকি তোমার দুষ্টু রাজকুমার–??
-কি বললা তুমি??
-আসো—। মায়াবতী হোক বা রাজকুমার- আনার ব্যবস্থা করি?
-অসভ্য লোক একটা—। মুখে কিছু আটকায় না??
-আটকাতে পারবো না। তুমিই তো?
-ছাড়ো—।৷ চেইঞ্জ করবো। গায়ে কিটকিট করছে শাড়িটা—।।
-আহারে!! আসো মায়াবতীটার কষ্ট হচ্ছে না খুব —??
রাহাত মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মায়াও রাহাতের স্পর্শে হারিয়ে গেল ভালোবাসার অন্য এক দুনিয়ায়। কয়েক বছর পর হয়তো মায়াবতীর মায়ার রাজ্যে গুটি গুটি পায়ে হেসে খেলে বেড়াবে কোন ছোট্ট মায়াবতী রাজকন্য বা ছোট্ট দুষ্টু রাজকুমার। এভাবেই মায়াবতীকে নিয়ে নাহয় মায়ার রাজ্যে সুখে থাক রাহাত। সমস্ত দূরত্ব, সমস্ত অবিশ্বাস, সন্দেহ ঘুচে গিয়ে জিতে যাক ভালোবাসারা। নিজেদের মায়ার সংসার নিয়েই নাহয় সুখে থাক সমস্ত মায়াবতীরা।।
সমাপ্ত