#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫
৮.
অর্ষা রেডি হয়ে নিলো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।রুশানকে আজকে সে নিয়ে যাবে মানে যাবেই।প্রতিদিন দেরি করে যাওয়া আজকে অর্ষা বের করবে।রুশানের রুমে এসে দেখে রুশান হা করে ঘুমাচ্ছে।অর্ষা সয়তানি হাসি দিয়ে ফোন বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।সেগুলো সিক্রেট ফাইলে রেখে রুশানের গায়ে পানি ছুঁড়ে মারলো।
রুশান বেচারা ধরফরিয়ে উঠে বসে।অর্ষাকে হাসতে দেখে বুঝতে বাকি নেই অর্ষাই কাজটা করেছে।রুশান রেগে বোম হয়ে যায়।অর্ষার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,,
—“মজা লাগলো না অনেক।তোর জন্য আমার প্রতি দিন একা একা যাওয়া লাগে নিজে তো নবাবজাদার মতো ঘুমাইস ছোট চাচ্চু আর ছোট আম্মুকে কি বলা লাগবে।”
—“অর্ষার বাচ্চা আমি কি তোর ড্রাইভার নাকি যে নিয়ে যাব।সয়তান মাইয়া গেলি তুই।তোর ডং রাখ তোর কাছে বান্দর মাইয়া।”
রুশান রেগে অর্ষার দিকে বালিশ ছুড়ে মারে।অর্ষা সরে যায় যার ফলে গায়ে লাগে না।অর্ষা বালিশ তুলে রুশানের গায়ে মেরে বলে,,,
—“১০ মিনিট এর ভেতরে নিচে আসবি না হলে ফ্রেন্ডশিপ নাই তোর সাথে”
অর্ষা কথাটা বলেই রুম ছেড়ে চলে যায়।রুশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে ফ্রেশ হতে যায়।এই মেয়ে তাকে শান্তি মতো থাকতে দেবে না মনে হয়।রুশান ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দেখে অর্ষা টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখছে আর হাসতে হাসতে আরিশার গায়ে পরছে।রুশান গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
—“তুই কি যেতে চাইছিস না।ঠিক আছে আমি গেলাম থাক তুই।”
কথাটা বলেই রুশান বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।অর্ষা দ্রুত ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় রুশানের পিছনে পিছনে।পেছন থেকে ইরিনা বেগম চিল্লিয়ে বলে,,,
—“তোরা না খেয়ে কেনো যাচ্ছিস।খেয়ে যা তো”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
—“এই মেয়ে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।ওর জন্য রুশানটাও না খেয়ে বের হলো।বাপ বেটি সব মিলে জ্বালিয়ে মারে আমায়”
অর্ষা বের হয়ে যেতেই ইরিনা বেগম বকরবকর শুরু করেন একা একা।মৌ রহমান টেবিলে বসতে বসতে বলেন,,,
—“আরে বুবু তুমি চিল্লিও না ছোট মানুষ তাই এমন করেছে ভার্সিটিতে যেতে হয়তো লেট হচ্ছে।আমি রুশানকে ফোন করে বলছি ক্যান্টিন থেকে দুজন যেনো খেয়ে নেয়।”
—“তুই চুপ কর মৌ।তোদের সবার জন্য এই মেয়ে বাদর হচ্ছে দিন দিন।সেদিন সবার সামনে কিভাবে ইরহাম বাবাকে অপমান করলো।”
মৌ ইরিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
—“বুবু তুমিও না,ও তো বাচ্চা মেয়ে ওতো বুঝে নাকি।”
ইরিনা বেগম মৌকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে যেতে যেতে বলে,,,
—“ও বাচ্চা না মৌ যথেষ্ট বয়স হয়েছে ওর।তবুও তোদের এই আহ্লাদ দেওয়ার কারণে এমন হয়েছে।ওরা ভালো মনের মানুষ ছিলো বলে অপমান করেনি।”
মৌ হাসলো।ইরিনা আর মৌ যতই জা হোক না কেনো তাদের সম্পর্কটা দুবোনের মতো।তাদের কেউ প্রথমবার দেখলেন ধরতেও পারবে না তারা বোন নয় জা হয়।মৌ বিষন ভালোবাসে ইরিনাকে,সম্মানও করে অনেক।মৌ অর্ষার রুমের দিকে ছুটলো।প্রতিদিনই সেই অর্ষার সব কিছু গুছিয়ে রাখেন।মেয়েটা বড্ড অগোছালো।
৯.
ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই রুশান অর্ষার সাথে কথা বলছে না।অর্ষাও বাকি বন্ধুদের সাথে গল্প করছে।রুশান নিজেই নিজের কপাল চাপড়ায় সে বারবার ভুলে যায় সে কার সাথে রাগ করে,অভিমান করে।মুহিব সয়তানি করে অর্ষাকে বলে,,,
—“জানু তোকে তো আজকে সেই লাগছে মনে হচ্ছে বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেলি।”
অর্ষা হাসে মুহিবের কথায় কিছু বলবে তার আগে মুহিবের গার্লফ্রেন্ড অর্না এসে ওর কান মনে দিয়ে বলে,,,
—“ফাজলামি হচ্ছে না অর্ষা আপুর সাথে।তোমার মতো বেআক্কালের সাথে আমি অর্ষা আপুকে বিয়ে দিতাম নাহ”
—“উফ অর্না কান ছাড়ো লাগছে তো।আমি মোটেও বেআক্কেল না।আমি তোমার অর্ষা আপুকে বিয়েও করতাম না ওর মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে বিয়ে করলে দেখা যাবে আমার বাসায় আমি নেই রেলস্টেশনে ভিক্ষা করছি”
সবাই হেসে দেয় মুহিবের কথায়।অর্ষা কটমট চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,
—“আমি ঝগড়ুটে না বাদর ছেলে দাঁড়া”
বলেই মুহিবের পেছনে ছুট লাগায় অর্ষা।অর্না হাসে ওদের দুষ্ট মিষ্টি খুনসুটি দেখে।অর্নার এতে মোটেও হিংসা হয় না।সে জানে এই ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই একে অপরের জন্য জান পর্যন্ত দিতে পারে।সে নিজেও খুব আফসোস করে এক ক্লাস জুনিয়র হওয়ার জন্য।
মুহিবকে তাড়া করছে অর্ষা।আশেপাশের কিছুই তার খেয়াল নেই।হুট করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তাকে নিয়েই অর্ষা পরে গেলো।চোখ মুখ খিচে তার শার্টের কলার আঁকড়ে ধরলো।
—“সমস্যা কি তোমার এভাবেই থাকার চিন্তাভাবনা করেছো।তাড়াতাড়ি উঠো ইডিয়ট”
ঝাঁজালো কন্ঠ কানে আসতেই অর্ষা চোখ খুলে তাকায়।চোখ খুলে নিজেই বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়।সে সয়ং ইরহামের উপরই পরেছে।তার থেকে বড় কথা সে এখনো ইরহামের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।অর্ষা দ্রুত উঠতে নিলে চুলে টান খেয়ে আবারও ইরহামের বুকের উপরই পরে।ইরহাম বেশ ব্যাথা পায়।ইরহাম বিরক্ত হয়ে বলে,,,
—“তুমি কি অন্ধ দেখে শুনে চলতে পারো না।এমন ভাবে দৌড়াচ্ছিলে মনে হচ্ছিল তোমাকে বাঘ বা ভাল্লুক তাড়া করছে স্টুপিড তোমার জন্য এখন এমন হলো।”
ইরহাম সাবধানে অর্ষাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।অর্ষার কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে,সাথে লজ্জাও লাগছে।কই আগে তো এমন হয়নি আজ কেনো হচ্ছে।ও দ্রুত চুলগুলো ছাড়িয়ে চলে যায়।ইরহাম কিছুটা অবাক হয় যেই মেয়ে কিছু একটা হলে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলে সে আজ চুপচাপ চলে গেলো।
ইরহাম মাথা না ঘামিয়ে চলে গেলো নিজের কাজে।সে যে সেই হৃদয়হরনীকে খুঁজছে।কালকে থেকে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে কিন্তু এখনও তার দেখা মিলেনি।আদেও তাকে পাবে কিনা সন্দেহ।কিন্তু তার আজকে অর্ষা কাছে আসাতে একটু অদ্ভুত লেগেছে।
১০.
সেই ঘটনার পর থেকে অর্ষা কেমন চুপচাপ আছে।সবাই খেয়াল করেছে এটা।মুহিব সরি বললেও অর্ষা রিয়াক্ট করেনি।সবাই মিলে অর্ষার মন ভালো করার জন্য ভাবে নৌকায় চড়বে আজকে।আজও আকাশ মেঘলা মেঘলা।আষাঢ় মাসের শুরু হয়তো তার জন্যই।
অর্ষা নৌকায় চড়ার কথা শুনে লাফাতে থাকে।সব মন খারাপ এক নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়।কেনো যেনো তার হুট করেই মন খারাপ ছিলো এতো সময় বাট এখন ফুরফুরে মেজাজে আছে।
মুহিব অর্না একটা বাইকে।রুশান অর্ষা একটা বাইকে।নাইম,উশা,অথৈ একটা রিকশায়।সবাই মজা করতে করতে যাচ্ছে।অথৈ রুশানের সাথে যেতে চাইছিলো কিন্তু অর্ষার জন্য হলো না।মুখ ফুটে বলতেও পারলো না।অথৈ এর ভীষণ হিংসা হয় অর্ষাকে নিয়ে।রুশানকে পছন্দ করে তাই হয়তো।
সবাই নদীর সামনে এসে দাঁড়ায়।আকাশটা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে অর্ষার কাছে।একটা বড় নৌকা ভাড়া করে ছয়জন উঠে বসে।রুশান অর্ষাকে ছবি তুলে দিচ্ছে।অর্ষার পরনে ল্যাভেনডার রঙের টপস গলায় সাদা ওড়না ঝুলানো,চুলগুলো ঝুটি করা।সবাই টুকটাক ছবি তুলছে।
অর্ষা অথৈকে একা বসে থাকতে দেখে ওর কাছে গিয়ে বলে,,,
—“কিরে শাঁকচুন্নি তুই এখানে চুপচাপ বসে আছিস কেনো চল ছবি তুলি সবাই।”
অথৈয়ের কতগুলো কড়া কথা শুনাতে ইচ্ছে করলো অর্ষাকে কিন্তু বলল না।অথৈ জানে যদি এখন অর্ষার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সে তাহলে রুশান তার ছায়া ও মাড়াবে না।সাথে সব বন্ধুরাও।কেনো জানো সবাই অর্ষা বলতে পাগল যা মোটেও সয্য হয় না ওর।নিজেকে সংযত করে জোরপূর্বক হেসে অথৈ বলল,,,
—“আমার একটু শরীর খারাপ করছিলো অর্ষা তাই আরকি এখানে চুপচাপ বসে আছি।তুই যা ছবি তোল ওদের সাথে।”
—“না না আমরা এখন সবাই গ্রুপ ফটো তুলবো চল চল”
রুশান খেয়াল করে বলল,,,,”কিরে অথৈ আসিস না কেনো আয় দ্রুত গ্রুপ ফটো তুলবো।”
রুশানের বলাতে ভীষণ খুশি হয় অথৈ মনে মনে।সামনে তা প্রকাশ না করে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে এগিয়ে আসে ওদের কাছে।অথৈ দেখে রুশানের একটু কেমন লাগে।অথৈকে রাগি দৃষ্টিতে অর্ষার দিকে তাকাতে দেখেছে সে।
চলবে~