ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -০৮+৯

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

—“এটা কেমন কথা অর্ষা।কিছুক্ষণ পর ইরহাম তোমার স্বামী হবে তাকে তুমি জব্দ করার কথা ভাবছো,মোটেও এইসব উল্টাপাল্টা জিনিস মাথায় আনবে না”

—“উফ আব্বু উনি একজন ঘ্যাড়ত্যাড়া লোক।কথায় কথায় আমায় অপমান করে তাকে আমি কিভাবে ছেড় দেবো”

আসিফ আহমেদ কিছু বলেন না।আহিন আহমেদ ডাক দিতেই তিনি চলে যায়।অর্ষা এখন রুশানের রুমে আছে।কিছুক্ষণ আগেই তাকে এই রুমে পাঠানো হয়েছে।সবার প্রতি বেশ বিরক্ত হয় অর্ষা নিজের রুম ছেড়ে কেনো তাকে রুশানের রুমে থাকতে হবে।
অর্ষার ভাবনার মাঝেই রুশান মুহিব উশা নাইম ভেতরে প্রবেশ করে।অর্ষার অথৈয়ের কথা মনে মাথায় আসে।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

—“অথৈ কোথায় রে ও আসলো না কেনো?”

অথৈয়ের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হয় সবাই।অথৈয়ের ব্যবহার বেশ কিছুদিন ধরে সবাই লক্ষ করছে।অদ্ভুত আচরণ করা ধরেছে ক’দিন যাবত।নাইম সকালে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে সে অসুস্থ তাই আসবে না।

কিন্তু নাইম অর্ষাদের বাড়ি আসার সময় দেখলো বোনের সাথে ঘুরে বেড়াতে।এতে নাইমের মেজাজটা বিগড়ে যায় তবুও কিছু বলে না।
নাইম বিরক্ত হয়ে বলে,,

—“চুপ কর তুই ওই মাইয়ার কথা বলবি না।সকালে ফোন দিয়ে বললাম যাবি না বলে অসুস্থ পরে দেখি বোনের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তোরে বলছিলাম না মাইয়া সুবিধার না তাও ফ্রেন্ডশিপ করলি”

—“উফ নাইম থামবি তুই হয়তো কোনো প্রবলেম হয়েছে তাই আসেনি।”

উশার এবার মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে যায়।সে রাগি কন্ঠে বলে,,

—“অর্ষা নিজের বিয়েতে ফোকাস দে।ওকে আমরা কেউই পছন্দ করি না তুই বেশ ভালো করেই তা জানিস।সত্যি বলতে আমি অনেক খুশি হয়েছি ও আসেনি বলে।”

অর্ষা তর্কে জড়ায় না আর।অথৈয়ের সাথে তাদের ফ্রেন্ডশিপ মাত্র ৬ মাসের।আর বাকি সবাই ছোটবেলা থেকেই বন্ধু।মুহিব নাইম রুশান সব সময় আগলে রেখেছে অর্ষা উশাকে।অর্ষা মুহিব নাইমকে রুশানের মতোই নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।

উশা রুশান আর মুহিবকে ভাইয়ের নজরে দেখলেও গত চার বছর ধরে নাইমকে ভালোবাসে।কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে কখনো বলে উঠতে পারিনি।

কিছুক্ষের ভেতরেই ডাক পরলো অর্ষাকে নিয়ে যাওয়ার।রুশান অর্ষাকে নিয়ে যেতে লাগলো সাথে আরিশা উশা নাইম মুহিব তো আছেই।দুজনকে ফুলের পর্দার দুপাশে বসানো হলো।অর্ষার এখন কেনো জানি লজ্জা লাগছে ভীষণ।সেও কিছুক্ষণের মধ্যে ইরহাম নামক মানুষটার ব্যক্তিগত সম্পদ হয়ে যাবে।

অর্ষা ভবিষ্যতের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই বিয়ে আদেও টিকবে কিনা সন্দেহ। তার উপর ইরহাম অন্য কাউকে ভালোবাসে।অর্ষা মাথা নিচু করে আছে।কাজি বিয়ে পরাতে শুরু করে।কবুল বলার সময় গলা ধরে আসছিলো তার।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলে ফেলে।

ইরহাম তাড়াতাড়ি বলে দেয়।সবাই তো ওহো বলে ওঠে।কিন্তু অর্ষা তো জানে ইরহাম বিরক্ত হয়ে দ্রুত কবুল বলেছে।সেও আজকে থেকে কারো বউ ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে অর্ষার।তার সামনে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষটা তার বর,একান্তই তার ব্যক্তিগত সম্পদ।

ইরহাম অর্ষাকে পাশাপাশি বসানো হয়।বিয়ের রীতি অনুযায়ী কারুকার্য করা আয়নায় তাদের দুজনের মুখ দেখতে হবে।অর্ষার লম্বা ঘোমটার ভেতরে ইরহামকে ঢুকিয়ে দেয় উশা আর আরিশা মিলে।ইরহাম প্রচন্ড বিরক্ত হয়।

সবাই ইরহামকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
—“ভাইয়া আয়নার দিকে তাকান।আর কি দেখছেন আপনি আয়নায় তাই বলুন”

ইরহাম আয়নার দিকে তাকায় অর্ষা তার দিকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বিরক্ত হয় ইরহাম।আয়নায় মুখ দেখে এখন কি বলবে সে।সে তো দেখতে পাচ্ছে এক আটা ময়দা মাখা রমনীকে যাকে চেনাটাও কষ্টসাধ্য।তাও বাবার সম্মান রক্ষার জন্য হেসে বলল,,,

—“আমি আমার ভবিষ্যতেকে দেখতে পাচ্ছি আয়নায় যা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

সবাই ওহহহো বলে চেচিয়ে ওঠে।রুশান বলে ওঠে,,,

—“তা স্যার আই মিন ইরহাম ভাইয়া আপনি আয়নায় নিজের কেমন ভবিষ্যতে দেখতে পাচ্ছেন।”

কথাটা বলেই রুশান সহ সবাই হাসিতে ফেটে পরে।ইরহাম পরে যায় অস্বস্তিতে।অর্ষা বুঝতে পারে তাই সবাইকে ধমক দিয়ে বলে,,,

—“চুপ করবি তোরা।আমার সুন্দর বুইড়া বরটাকে আর পচানি দিস না”

ইরহাম রেগে যায় ভীষণ।পেছন থেকে অর্ষার কোমড় চেপে ধরে অনেক জোরে।অর্ষাও কম কিসে বাম হাত দিয়ে হাত খামচে ধরে সবার আড়ালে।ইরহাম ব্যথা পায়।অর্ষার নখগুলো অনেকটাই বড় বড় তাই ইরহামের ব্যাথা লাগছে অর্ষারও বেশ ব্যাথা করছে কিন্তু কেউই ছাড়চছেও না টু শব্দ ও করছে না।

—“অর্ষা তুই আয়নাতে কি দেখতে পারছিস”

মুহিবের কথায় অর্ষা হাসে।তারপর আয়নার ভেতর দিয়ে ইরহামের চার চোখা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“আমি ওই চোখে আমার সর্বনাশ দেখতে পারছি”

সবাই অনেক সময় ধরে মজা নেয় ইরহাম অর্ষার।অর্ষাও কম না কোনো অংশে সেও সবার সাথে কথার ছলে জিতে যায়।ইয়াদ এতো সময় তার আম্মুর অর্ডার করা রিং আনতে গিয়েছিলো।তাই বিয়ে বা বউ কাউকেই দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

রিংটা মায়ের কাছে দিয়েই ছাদে চলে আসে ইয়াদ।সামনে তাকিয়ে ইয়াদ স্তব্ধ হয়ে যায়।চোখে পানি চলে আসে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার।নিজের ভালোবাসার মানুষকে তারই ভাইয়ের সাথে দেখতে হচ্ছে।ইয়াদ এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে যায় অর্ষাদের বাড়ি থেকে।

১৬.

ফুলে সজ্জিত রুমে বসে আছে অর্ষা।রুমে সাদা লাল গোলাপের সমাহার।বিছানায় বসে আছে।আজকে নাকি ইরহাম তার সাথে থাকবে কথাটি শোনা মাত্রই অর্ষা মনে মনে কিছু একটা প্লান করে ফেলেছে।বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায় অর্ষা।

উঠে দাঁড়িয়ে কাবার্ড থেকে প্লাজু আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশে হয়ে এসে দেখে ইরহাম এখনো আসেনি।অর্ষা চকলেট এনে বসে বসে খেতে লাগে।ইরহাম ১২ টার দিকে রুমে প্রবেশ করে।

কোনো দিকে না তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ওয়াশরুমে আসতেই মনে পরে তার তো এখানে কোনো জামা নেই।তাই অগত্যা তাকে খালি গায়ে বের হতে হয়।অর্ষা আপন মনে বসে সেলফি তুলছিলো।

ইরহাম বিরক্ত হয় অর্ষার কাজে।অর্ষার কাছে এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,,,

—“আমার টিশার্ট লাগবে এনে দাও”

অর্ষা ইরহামের দিকে তাকাতেই চোখ ঢেকে চেঁচিয়ে ওঠে।ইরহাম হকচকিয়ে যায় অর্ষার এমন আকস্মিক কাজে।সে দ্রুত অর্ষার মুখ চেপে ধরে।

—“ইডিয়ট কোথাকার এভাবে কেউ চেচামেচি করে।চেঁচালে কেনো তুমি হঠাৎ”

অর্ষা উমম উমম করে যাচ্ছে।ইরহামের বোধগম্য হতেই ছেড়ে দেয় অর্ষার মুখ।অর্ষা জোরে জোরে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বলে,,,

—“অসভ্য নিলর্জ্জ লোক কোথাকার।মেয়ে মানুষের সামনে খালি গায়ে আসে।”

অর্ষার কথায় ইরহামের বিরক্তিরসীমা পেরিয়ে যায়।মুড এমনিতেও ভালো না।
—“পুরুষ মানুষের লজ্জা এমনিতেও কম থাকে।আর লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের নয়।”

অর্ষা ইরহামের কথা শুনে ভেংচি কেটে রুশানের রুমের দিকে পা বাড়ায়।রুশান আর ইরহাম দুজনই প্রায়ই একি লম্বা।ইরহাম একটু বেশি হতে পারে রুশানের থেকে।

—“আরে আরে নতুন বউ যে তা বাসর ফেলে আমার রুমে কি আপনার,নাকি বর লাথি মেরে বের করে দিয়েছে।”

—“কি বললি তুই দাড়া সয়তান পোলা তোর একূিন কি আমার একদিন!

রুশানের রুমে রুশান মুহিব তিনজন থাকবে আর উশা আরিশার সঙ্গে।রুশানের রুমে আসতেই রুশান অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে।অর্ষা বালিশ তুলে দিলো কয়েকটা।রুশানও দিলো।এরপর আর কি মারামারি শুরু।মুহিব নাইম দুই ভাই বোনের মারামারিতে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গিয়েছে।ওরা হা করে দেখছে।

ক্লান্ত হয়ে দুজনেই ধপাস করে বসে পরে।কিছুক্ষণ বাদেই অর্ষার মনে পরে সে এই রুমে কি করতে এসেছিলো।দ্রুত উঠে কাবার্ড থেকে ট্রাউজার টিশার্ট নিয়ে ছুট লাগালো।তিনজন বসে হা করে সব দেখলো।বোঝার পরে তিনজনই হাসলো বেশ।

১৭.

অন্ধকার রুমে নিজেকে বন্ধি করে রেখেছে ইয়াদ।অর্ষার প্রতিটা ছবি ছিঁড়ে ফেলছে ইয়াদ।নিজের নিজের প্রতি রাগ লাগছে কেনো সে আগে মামনি বাবাকে বলেনি অর্ষার কথা।তাহলে আজকে তার দা ভাইয়ের জায়গায় সে থাকতো।

—“আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি অর্ষা।জানি এখন তোমায় ভালোবাসাটা জায়েজ না।তুমি অন্যকারো বউ,কি করবো বলো মনকে এখনো বোঝাতে পারছি না তুমি অন্যকারো।”

ইয়াদ অর্ষার একটা ছবি রেখে সবগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিলো।গত তিনটা বছর ধরে যাকে ভালোবেসেছে সেই আজ অন্যকারো।ভালোবাসার মানুষকে নিজের চোখের সামনে অন্যকারো হয়ে যাওয়া দেখাটা এতো কষ্টের কেনো!সে তো কম ভালোবাসিনি অর্ষাকে তাহলে আল্লাহ কেনো তার ভাগ্যে অর্ষাকে রাখলো না।

ইয়াদের পরমুহূর্তেই মনে পরলো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।এমন অনুভূতি যেনো কারো না হয়।ইয়াদ বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।আফসোস করছে কেনো সে অর্ষাকে মনের কথাটা জানালো না।

১৮.

অর্ষা দরজার খুলে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ইরহাম কোথায়।খুঁজে পেলো না।দরজা খুলে আরেকটু দেখতে যাবে তখনই ইরহাম টেনে সামনে নিয়ে আসে তাকে।অর্ষা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে থাকে।

—“তোমাকে আমি কখন টিশার্ট আনতে পাঠিয়েছিলাম হ্যা।আধা ঘন্টা যাবত আমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছি।তোমার কি কমনসেন্সের অভাব,ইডিয়ট গার্ল”

ইরহাম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কথাগুলো বলে।অর্ষার মেজাজ বিগড়ে যায়।কিন্তু নিজেই অপরাধ করেছে তাই রাগটাকে কন্ট্রোল করলো।তারপর বলল,,,

—“সরি আমি আসলে রুশানের সাথে….”

অর্ষার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরহাম অর্ষার হাত থেকে টিশার্ট ট্রাউজার নিয়ে চলে যায়।অর্ষা রাগে ফুঁসতে থাকে।বিড়বিড় করে বলে,,,

—“নিজেকে কি মনে করে কি এই লোক।অসভ্য বদমাশ লোক কোথাকার।হতেই পারে একটু লেট তাই বলে এই ধরনের কথা বলবে।আমার কমনসেন্স নেই নাকি আপনার নেই অসভ্য স্যার”

চলবে~#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯

ইরহাম গোসল সেরে বের হয়।পরনে রুশানের কালো রঙা টিশার্ট আর ট্রাউজার।দেখতে ভীষণ সিগ্ধ লাগছে ইরহামকে।চুল থেকে পানি পরছে টপটপ করে।চোখে চশমা নেই।দেখতে বেশ লাগছে।অর্ষা ড্যাব ড্যাব করে কিছুক্ষণ চেয়ে রই।অতঃপর নিজেকেই গালি দেয় এভাবে তাকানোর জন্য।

—“অর্ষা কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ এই অসভ্য পুরুষ মানুষের উপর ক্রাশ খাওয়া মোটেও যাবে না।তার উপর অন্যকাউকে ভালোবাসে।”

অর্ষা মনে মনে নিজেকে কথা গুলো বলে ধমকায়।ইরহাম চুল মুছে অর্ষার দিকে তাকায়।অর্ষা দেওয়ালের দিকে তাকে একমনে কিছু একটা ভাবছে।ইরহাম পাত্তা না দিয়ে চশমা চোখে দিয়ে বিছানার উপর বসে।ফোন বের করে ফোন ঘাটতে শুরু করে।

অর্ষা একমনে ভাবছিলো সকাল থেকে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো।অর্ষার ঘুম এসেছে অনেক।তাই লাইট অফ করে এসে শুয়ে পরে।ইরহাম এক নজর তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।অর্ষার একটা ছেলের সাথে থাকতে একটু অস্বস্তি হলেও কিছু করার নেই।ইরহাম তার স্বামী এখন থেকে থাকতেই হবে।

১৯.

সকাল আয়রা এসে ইয়াদের ঘরে দরজায় নক করে।আয়রা বুঝতে পারছে না ইয়াদ কেনো কালকে কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছিলো।এতে অবশ্য বেশ বিরক্তই হয়েছে সে।রাতে কয়েকবার নক করলেও দরজা খুলেনি ইয়াদ।আয়রা ভেবেছিলো ইয়াদ হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিলো।ইয়াদ এলোমেলো অবস্থায় গিয়ে দরজা খোলে।

ছেলের অবস্থা দেখে আয়রার বুক ধক করে ওঠে।ইয়াদকে আগে কখনো এমন অবস্থায় দেখেনি সে।ইরহাম যতটা না গম্ভীর ইয়াদ ততটাই হাসিখুশি।সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করে।আয়রা ভেতরে ঢুকলো দ্রুত।ইয়াদ বিছানায় বসে আছে।আয়রা ইয়াদে কাছে গিয়ে বলে,,,

—“কি হয়েছে ইয়াদ তোকে এমন কেনো দেখাচ্ছে বাবা”

ইয়াদ মায়ের কথায় চোখ তুলে তাকায়।আয়রা থমকে যায়।ইয়াদের চোখগুলো লাল হয়ে ফুলে আছে।আয়রা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,

—“আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড বল বাবা কি হয়েছে।তুই কেঁদেছিস কেনো?”

ইয়াদ মাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেদে ওঠে।আয়রা বুঝতে পারে না তার ছেলেটার হলো কি।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,,,

—“বাবা বল কি হয়েছে।মাকে না বললে বুঝবে কি করে”

—“মামনি আআআআই ললললাভ অর্ষা”

আয়রার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।স্তব্ধ হয়ে যায়।তার মানে ইয়াদ তাকে অর্ষার কথায় বলেছিলো।ইয়াদ আয়রাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড মনে করে।তাই সব কথাই বলে।ইয়াদ রাজশাহী ভার্সিটিতে পরে।যার কারণে তার সেখানেই থাকতে হয়।মাঝখানে একবার এসে আয়রাকে ইয়াদ বলে আমি একজনকে ভালোবাসি।

আয়রা ভীষণ খুশি হয়েছিল শুনে।সে তার ছেলে মেয়েকে কখনোই এসবে মানা করেনি।সবারই কাউকে পছন্দ করার অধিকার আছে।সে নিজেও ইসফাক চৌধুরীর সাথে প্রেম করে পরিবারকে রাজি করয়ে বিয়ে করেছেন।

—“বাবাই বাবাই তাকা আমার দিকে,মামনি জানতো না অর্ষাই সেই মেয়ে।তুই আমায় কেনো বললি না ইয়াদ”

—“মামনি আমার বুকে ভীষণ ব্যাথা করছে।রক্তক্ষরণ হচ্ছে মামনি।আমি সয্য করতে পারছি না”

অয়রার চোখে পানি চলে আসে।তার হাসিখুশি ছেলেটার এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে না সে।যদি জানতো এটাই ইয়াদের ভালোবাসার মানুষ তাহলে অয়রা কখনোই ইরহামের সাথে বিয়ে দিতো না।আল্লাহ হয়তো এটাই চেয়েছিলেন।

—“বাবাই শোনো আল্লাহ আমাদের ভালোর জন্যই সব করেন।দেখো হয়তো আল্লাহ অর্ষার সাথে ইরহামের জুটি বেঁধে রেখেছিলো তাই অর্ষা ইরহামের হয়েছে।আল্লাহ উত্তর পরিকল্পনা কারী।উনি অবশ্যই তোমার জন্য সামনে ভালো কিছু রেখেছেন।”

ইয়াদ মন দিয়ে কথাগুলো শুনলো।মেনে নেওয়ার চেষ্টা করলো।আয়রা ছেলের মুখ দেখে বুঝে যান।ইয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,

—“বাবাই ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে তার কোনো কথা নেই।তুমি না হয় দূর থেকে ভালোবাসো।কিন্তু হ্যা কখনো ইরহাম অর্ষা আলাদা করার কথা ভাববে না।আমি জানি আমার ছেলে কেমন তবুও মানুষের মন তো কখন কি মনে চায় বলা যায় না”

—“উহু আমি কখনোই ওদের ক্ষতি করার কথা মাথায় ও আনবো না আম্মু।আমি ভালোবাসি দুজনকেই।দুজনই আমার প্রিয় ভীষণ প্রিয়।”

আয়রা ছেলের কপালে চুমু দিলেন।ইয়াদ মাকে বসিয়ে কোলে মাথা রেখে বলল,,,

—“মামনি একবারে তো ভোলা সম্ভব নয় তবে আমি অর্ষাকে ভোলার চেষ্টা করবো।অর্ষা না হয় আমার অপ্রাপ্তির খাতার থাকুক।”

আয়রা চলে গেলো।ইয়াদের চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরে যাচ্ছে।এমন অসয্য অনুভূতি যেনো কারো না হয়।ইয়াদ বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে।চোখ বন্ধ করতেই ইরহাম আর অর্ষার হাসি মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে।যা মনে করতেই অসয্য রকম যন্ত্রনা হয় ইয়াদের।

ইয়াদ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।পুরুষ মানুষ নাকি সহজে কাঁদে না,আর যার জন্য কাঁদে সে সত্যিই প্রচুর ভাগ্যবান।ইয়াদ হয়তো সত্যি ভালোবেসে ছিলো অর্ষাকে।কিন্তু ভাগ্যে ছিলো না বলে পেলো নাহ।ইয়াদ নিজের দোয়াতে রেখেও পেলোনা তার প্রেয়শীকে আর ইরহাম কোনো সাধনা ছাড়াই পেলো গেলো।ইয়াদ ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

২০.

কারো ধাক্কায় ইরহাম নিচে পরে যায়।ঘুমের মাঝে নিচে পরায় বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।চোখ খুলে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।বিছানার উপরে চোখ যেতেই অর্ষাকে এলোমেলো অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ইরহাম।প্লাজু হাঁটুর উপরে উঠে গিয়েছে,টিশার্ট উঠে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে।ইরহাম চোখ সরিয়ে নেয়।

ইরহামের বুঝতে বাকি নেই অর্ষাই ঘুমের ঘরে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।ইরহাম বিরক্ত হয় বেশ।মেয়েটা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না।এমনি তো জেগে থাকলে তাকে সারাদিন জ্বালিয়ে মারে এখন ঘুমিয়েও শান্তিতে থাকতে দেবে না।ঘুমের ভেতরেও জ্বালাচ্ছে।

ইরহাম ফ্রেশ হতে চলে যায়।অর্ষা ঘুম ভাঙতেই নিজেকে একা রুমে আবিষ্কার করলো।উঠে বসে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।এটা অর্ষার অভ্যার।ঘুম থেকে উঠার পর কিছুক্ষণ বসে থাকা।ইরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়।অর্ষা ইরহামকে দেখে চমকে উঠে,ইরহাম এখানে কেনো ভাবে।

পরে মনে পরে যায় কালকেই বদ অসভ্য লোকটার সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অর্ষা নিজের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়।গায়ে ওড়না নেই।পাশ থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয়।ইরহাম অবশ্য তার দিকে তাকায়নি তবুও অস্বস্তি হচ্ছে।

অর্ষা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুশানের রুমে চলে আসে।এটা তার অভ্যাস।ছোট বেলা থেকেই দুজন একসাথে বড় হয়েছে,একসাথে খেলেছে খেয়েছে।সব কিছুই একসাথে তাদের।এখনও অর্ষা ঘুম থেকে উঠেই রুশানের রুমে এসে ওকে জ্বালাতন করে।

অভ্যাসগত কারণে আজও চলে এসেছে।রুমে এসে দেখে সবাই ফোন নিয়ে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে ব্যস্ত।অর্ষা ভীষণ বিরক্ত হয়।মোটেও পছন্দ না তার এই গেম খেলা।অর্ষা ওদের কাছে গিয়ে তিনটা ফোনই টেনে নিয়ে নেয়।আচমকা এমন হওয়ায় তিনজনই হতভম্ব হয়ে যায়।
রুশান বুঝে উঠতেই চিল্লিয়ে বলে,,,

—“সয়তান মাইয়া সমস্যা কি তোর।ফোন নিলি কেনো?”

অর্ষা কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলে,,
—“তোদের না বাড়ন করেছিলাম ঘোড়ার ডিমের গেম না খেলতে তাও খেলছিস।”

রুশানের কিছু একটা মনে হতেই বাঁকা হেসে বলে,,,

—“অর্ষা জানটুস কেমন কাটালি কালকের রাতটা বল বল।”

রুশান ভেবেছিলো অর্ষা হয়তো লজ্জা পাবে কিন্তু অর্ষা সরাসরি উত্তর দেয়,,,
—“তোর আউল ফাউল কথা তোর কাছেই রাখ।তুই খুব ভালো করেই জানিস বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় করিনি।”

অর্ষা হনহন করে বেরিয়ে যায়।রুশান মুহিব কি হয়েছে বুঝতে পারে না।সব ওদের মাথার উপর দিয়ে গেলো।এই মেয়ের কখন কি মন চায় তা শুধু ওই জানে।তিনজনই কপাল চাপড়ায়।

২১.

অর্ষা রুশানের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসতেই বাবা চাচা দাদ মিলে বসে গল্প করতে দেখে।অভ্যাসগত ভাবে এসে দুজনের মাঝখানে বসে পরে।অতঃপর আসিফ আহমেদের কাছ থেকে চা নিয়ে খেতে থাকে।আসিফ আহমেদ হাসেন পাগলি মেয়ে একটা তার।

বিয়ে হয়েছে কাল দেখে মনেই হচ্ছে না।এখনো সেই ছোটই আছে তার কাছে।ইরহামও নিচে নামে রুমে বশে বোরিং হচ্ছিল তাই নিচে নেমেছে।ইরহাম নামতে দেখে আসিফ ও আহিন ইরহামকে নিয়ে পরলো।অর্ষা বিরক্ত হলো।এতো আদিক্ষ্যেতা দেখানোর কি আছে ভেবে পেলো না।

আহিন এবং আসিফ আহমেদ ইরহামকে টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করছে আর ইরহামও সুন্দর করে তার উত্তর দিচ্ছে।অর্ষা ভেংচি কেটে উঠে চলে যায়।রান্নাঘরে ঢোকার আগে পেছনে ফিরতেই একটা বড়সড় ক্রাশ খায় সে।ইরহাম হাসছে।হাসলে মারাত্মক সুন্দর লাগে।

অর্ষা রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নিজেকে ধমক দিয়ে মনে মনে বলে,,,

—“অর্ষা বার বার কেনো ভুলছিস লোকটা ভালো নাহ।তার উপর অন্যকাউকে ভালোবাসে।ছি ছি ছি অর্ষা তুই এতো খারাপ হয়ে গেলি যে অন্যকারো জিনিসের দিকে তাকাচ্ছিস।কিন্তু উনি তো আমার বর”

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here