হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব -১৬+১৭

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১৬
#মোহনা_হক

সকাল সকাল আয়াজ কে নিয়ে আসা হলো বাসায়। সাহেদ হসপিটালে। ওর অবস্থা বেশি খারাপ। আরহাম সকালেই আয়াজ কে নিয়ে বাসায় আসে। কাল রাতে
হসপিটালে তুমুল ঝগড়া শুরু হয় দু’জনের। আয়াজ যেহেতু খুব কম জায়গায় ব্যাথা পেয়েছে তাই সে আর হসপিটালে থাকতে ইচ্ছুক নয়। মাথায় শুধু ইকরামুল কে কিভাবে শাস্তি দিবে সেটাই ভাবছে।

মায়া চৌধুরী ছোট ছেলে কে দেখে জড়িয়ে ধরে। একপাশে আরহাম ধরে আছে। আয়াজের ব্যাথা পায়ে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
-‘মা তোমাকে আর কতো বোঝাবো বলো?’

আরহাম বিরক্ত স্বরে বললো-‘
-‘আহা মা ওকে ছেড়ে দাও এখন। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? রুমে যেতে দাও ওকে।’

মায়া চৌধুরী আয়াজ কে ছেড়ে দিলো। তার দু গালে হাত দিয়ে ছেলের কপালে চুমু খেলো।

-‘আমি চাই তুই সব সময় ভালো থাক বাবা।’

আয়াজ হাসে। আরহাম আর মায়া চৌধুরী ধরে নিয়ে যায় রুমে। তারা রুম থেকে চলে যাওয়ার পর আয়াজ একা একা চেঞ্জ করে ফেলে। এই সময়ে রুয়াত কে মনে পড়ছে খুব। সঠিক সময় বিয়ে করলে আজ রুয়াত তার বউ হয়ে থাকতো। এসব কাজে সাহায্য করতো মেয়েটা। রুয়াতের কথা মনে পড়তেই হাসি ফুটে আয়াজের।

(*)

-‘স্যার আয়াজের তো কিছুই হলো না। সে উল্টো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে।’

ইকরামুল টেবিলে মাথা দিয়েছিলো। আয়াজের কথা শুনেই মাথা তুলে তাকালো তার দলের ছেলেটার দিকে। রক্তিম আভা মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়লো মুখে। আয়াজের জায়গায় সাহেদ এসে পড়েছিলো। দলের লোকদের গাফিলতির ফল এটা। মাথায় ভরপুর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে তার দোকান বন্ধ হয়ে আছে। ইনকামের একটা জায়গা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়েছে। সাংসারিক ঝামেলা। আর আয়াজের এরূপ অবস্থার জন্য আয়াজ যদি পুলিশের কাছে তার নাম বলে দেয় নিশ্চয়ই পুলিশ তাকে ধরবে সে খেয়াল ও আছে। সব মিলিয়ে বেহাল দশা ইকরামুলের।

-‘তোদের সবার গাফিলতির কারণে আয়াজ সুস্থ আছে। তোদের আসলে আমি আমার দলে রাখি কেনো? কেনো এতো টাকা দিই মাঝেমধ্যে সেটাই বুঝতে পারছি না। এমন ল’ম্প’ট কতগুলো কে রেখে আমি নিজেই নিজের দূর্নাম করছি।’

ইকরামুলের চিৎকারে ছেলেটা একদম চুপসে যায়। বাকি সবাই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইকরামুল যে শুধু আজ তাদের এসব বলছে তা না এটা তার নিত্যদিনের বলা কথা। এমন কোনো দিন নেই যে ইকরামুল তার দলের লোকদের উপর চিৎকার করেনি। রাগে ফুসছে সে।

-‘আয়াজের দলের আশরাফ কে জলদি বল আমার সাথে দেখা করতে। কাল দেখলাম না ওকে। বউয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছে নিশ্চয়ই?’

কটমট করে কথাটি বলে ইকরামুল। তার মন চাচ্ছে আশরাফ কে মাটিতে পুতে ফেলতে। মেজাজ চরম পর্যায়ে গরম আছে। আশরাফ কে কল দেওয়ার প্রায় বিশ মিনিট পর ইকরামুলের অফিসে। আশরাফ কে দেখেই ইকরামুলের যেনো শরীরে আগুন ধরে যায়। এতো কিছুর পর ও আশরাফের কোনো দেখা পায়নি সে। রাগে টেবিলের উপর থাকা গ্লাসের পানি আশরাফের মুখে মারে।

-‘খুব আনন্দে আছিস তাইনা! খুব পুর্তি করছিস। একবারও কাল দেখা করতে আসলি না। বলেছিলাম না আয়াজের সম্পুর্ণ প্ল্যান আমায় জানাবি কিন্তু তুই কি করেছিস? আর তুই জানিস আয়াজের জন্য আমার সব দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে? শুনেছিস কারো থেকে? আয়াজ এতো প্রমাণ কোঁথায় পেলো বল।’

আশরাফ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। তার বউয়ের ডেলিভারি ছিলো কাল। এমন না যে আয়াজের কাছেও গিয়েছে। কারও সাথে দেখা করেনি। বউয়ের জন্য চিন্তায় কোনো কিছুর খবর নেওয়া হয়নি। ইকরামুল যে প্রতিশোধের আগুনে পাগল হয়ে
গিয়েছে বুঝতে বেশি সময় লাগলো না আশরাফের। নিজেকে তটস্থ করে বলে-

-‘স্যার আমার বউয়ের কাল ডেলিভারি ছিলো। আয়াজ স্যারের যে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমি সেখানেও যাইনি। কাল শুধু

ইকরামুল আর বলতে দিলো আশরাফ কে। ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।
-‘শুন বেশি চালাকি কখনো করার চেষ্টাও মাথায় আনিস না। যদি আমার সাথে এমন করার দুঃসাহস দেখিয়েছিস তাহলে বুঝবি এই ইকরামুল কি জিনিস।’

দ্রুত পা ফেলে ইকরামুল চলে যায়। আশরাফ মাথা দু পাশে ঘুরিয়ে সবাই কে দেখে নিলো। উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে আছে। এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আশরাফ। আবার তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আপাতত তার মাথায় শুধু তার বউ আর সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের কথা মাথায় ঘুরছে। সন্ধ্যার পর
একবার আয়াজের সাথে দেখা করতে যাবে।

(*)

আজ বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে। রুয়াত জাফরি কে কোলে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’জন বৃষ্টি দেখছে। কারেন্ট ও নেই তাই তারা বারান্দায় এসেছে। রুমে ইনিমা আরহামের সাথে কথা বলছে। জাফরি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ভিতরে এনে রুয়াতের মুখের উপর ঝাড়া দিচ্ছে। রুয়াত বাচ্চাটির আনন্দ উপভোগ করছে।

ইনিমা ফোনের একপাশে শুয়ে আছে। আরহাম ভিডিও কল দিয়েছে।

-‘আজ আসবে বাসায়?’

ইনিমার শরীর খুব দূর্বল তাও বলে-
-‘হ্যাঁ আসবো। আমার তো উচিৎ একবার আয়াজ কে দেখে আসা। নাহলে মানুষ কি ভাববে।’

-‘শুনো ইনিমা শরীর ভালো থাকলে আসবে নাহলে আসার দরকার নেই। আর মানুষের ভাবাভাবি কে এতো পাত্তা না দেওয়াই ভালো। আজ অনেক পলিটিক্যাল লোকজন বাসায় আসবে আয়াজের সাথে দেখা করার জন্য।’

-‘তাহলে তো মায়ের উপর আজ অনেক চাপ পড়বে। আর আমি মা কে একটু টুকটাক হেল্প না করলে ওনার কাজ শেষ হয় না। আমি আসবো আজ। তারপর বিকেলেই চলে আসবো। এখন তো সবেমাত্র এগারোটা বাজে।’

আরহাম তার অফিসে বসে আছে। বউয়ের কথায় মাথা দোলায়।
-‘এসো সমস্যা নেই। আমি গাড়ি পাঠাবো তোমার জন্য?’

-‘হ্যাঁ।

-‘আচ্ছা শুনো রুয়াত কে ও নিয়ে এসো তোমার সাথে। তারপর দু’জন একসাথে বিকেলে চলে যেতে পারবে সমস্যা নেই। তুমি আমায় রেডি হয়ে আবার একটা কল দিও আমিই আসবো তোমাদের নিতে।’

ইনিমা মাথা নাড়ায়৷ কল কেটে দেয়। শোয়া থেকে উঠে বসে। হালকা করে হাত খোঁপা করে ফেলে। এক্ষুনি গেলে মায়া চৌধুরীর কিছু হেল্প করতে পারবে। সে ঠিক করলো এই সময়েই যাবে ওই বাড়িতে। রুয়াত কে বলার আগে আগে মেহরুবার কাছে গেলো। পারমিশন নেওয়ার জন্য। মেহরুবা শোনার পর রুয়াত কে ও যাওয়ার অনুমতি দিলো। ইনিমা আবার আসে রুমে। রুয়াত কে ডাক দেয়। ইনিমার ডাকে রুয়াত তাড়াতাড়ি জাফরি কে নিয়ে রুমে আসে।

-‘আপু ডেকেছিলে?’

ইনিমা আলমিরা থেকে একটা থ্রি পিস বের করতে করতে বলে-
-‘আমি আর তুই এখন ওই বাসায় যাচ্ছি।’

রুয়াত কিছুটা অবাক হয় কথাটা শুনে।
-‘আপু আমি কিভাবে? আর মা যেতে দিবে না বোধহয়।’

-‘আমি মা কে বলেছি। আর মা অনুমতি ও দিয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যা। একটু পর আরহাম আসবে আমাদের নিতে।’

রুয়াত মাথা নাড়ায়। জাফরি কে বেডে বসিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সে ও ইনিমার মতো একটা থ্রি পিস বের করে পড়ে নেয়। তাদের রেডি হওয়া শেষে ইনিমা কল দেয় আরহাম কে। আরহাম এসে তাদের নিয়ে যায়। আজকে অনেক গার্ড বাসার সামনে। রুয়াত তাদের দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। তার মাথায় শুধু এটাই ঘুরছে আর সময় কেনো এরা থাকে না? আজ এতো গার্ড বাসার সামনে থাকার কারণ বুঝছে না রুয়াত। আরহাম গাড়ি থামায় বাসার সামনে। ইনিমা রুয়াতের হাত ধরে ঢুকে বাসার ভিতরে। মায়া চৌধুরী বেশ অবাক হয় তাদের দেখে। এসেই ইনিমা আর রুয়াত কে এক সাথে জড়িয়ে ধরে।

-‘তোমরা আসবে আমি ভাবিওনি। এসেছো আমি খুব খুশি হয়েছি।’

ইনিমা এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে মায়া চৌধুরী কে।
-‘আপনার ছেলে বললো আজ বাসায় অনেক অতিথি আসবে। আমাদের আরও পরে আসার কথা ছিলো কিন্তু আপনি একা সামলাতে পারবেন কিনা সবকিছু তাই তাড়াতাড়ি এসে পড়েছি।’

রুয়াত ইনিমার দিকে তাকায়। তার বোন একবারও বলেনি আজ যে এই বাসায় অতিথি আসবে। মায়া চৌধুরী হেসে বলে-

-‘আচ্ছা যাও তোমরা আয়াজের সাথে দেখা করে এসো। তোমাদের দেখলে ও আমার থেকে বেশি অবাক হবে।’

ইনিমা সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
-‘জ্বী মা যাচ্ছি। কিন্তু বাবা বাসায় নেই?’

মায়া চৌধুরী জাফরি কে কোলে নিয়ে বলে-
-‘আরে আর বলো না। সে কাউকে না জানিয়ে কিছু কাজের জন্য ঢাকায় গিয়েছে। গত রাতে আমাকে বলেছে। আরহাম আজ সকালে বাসায় এসে তো অনেক বকেছে তার বাবা কে।’

রুয়াত চুপ করে ইনিমা আর মায়া চৌধুরীর কথা শুনছে। আপাতত সে নিরবতা পালন করছে।

-‘মা জাফরি কে আমার কোলে দিন। আমরা সবাই দেখা করে আসছি আয়াজের সাথে।’

ইনিমা জাফরি কে কোলে নিলো। রুয়াতের হাত ধরে নিয়ে গেলো আয়াজের রুমে। রুমটা অন্ধকার করে রেখেছে। রুয়াত ইনিমা কে বললো-‘

-‘আপু ওনি মনেহয় ঘুমাচ্ছে।’

গলার স্বর একটু উঁচু করে ইনিমা বললো-‘
-‘দেবর সাহেব ঘুমাচ্ছেন আপনি?’

আয়াজ রুমের সব লাইট বন্ধ করে শুয়েছিলো। ইনিমার কথা শুনে ঘুম উবে যায় তার। উঠে বসে।

-‘না লাইট অন করুন। ঘুমাইনি আমি।’

ইনিমা লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আয়াজ হঠাৎ রুয়াত কে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায়। ইনিমার সাথে যে রুয়াত আসবে এটা যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ইনিমা আয়াজের পাশে দাঁড়ায়। জাফরি কে আয়াজ তার কাছে টেনে নেয়। মেয়েটা চাচ্চু কে পেয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে ফেলে। আয়াজ আধ শোয়া হয়ে বসে আছে।

-‘কি অবস্থা এখন তোমার।’

আয়াজ মাথা নাড়ায়।
-‘আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছি। কখন এসেছেন?’

ইনিমা হেসে বলে-
-‘এইতো কিছুক্ষণ আগে এসেছি।’

আয়াজ রুয়াতের দিকে তাকিয়ে ছোট করে উত্তর দেয়।
-‘ওহ্।

-‘আচ্ছা আমি মায়ের কাছে যাই। রুয়াত তুই কথা বল আয়াজের সাথে। আমি একটু মা কে হেল্প করি গিয়ে।’

রুয়াত বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো। ইনিমা চলে গেলো। আয়াজ চোখগুলো ছোট ছোট করে রুয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘ওদিক ঘুরো।’

রুয়াত বুঝলো না আয়াজের কথা।
-‘বুঝিনি।’

আয়াজ কাঠকাঠ গলায় বললো-
-‘ওদিক ঘুরতে বলেছি।’

রুয়াত অবুঝের মতো ওদিক ঘুরলো। আয়াজ হেসে রুয়াতের হাত ধরে টেনে বসালো তার সামনে।রুয়াতের
পিঠ ঠেকে আয়াজের বুকে। রুয়াত মুখ খিচে অধর কাটে।

-‘আসবে বলোনি তো।’

কাঁপা স্বরে রুয়াত বলে-
-‘আপু নিয়ে এসেছে। আমিও আগে জানতাম না। বলার পর তারপর জেনেছি।’

আয়াজ এক হাত দিয়ে রুয়াতের হাত চেপে ধরে আছে। আরেক হাত দিয়ে জাফরি কে আলতো করে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।

-‘জাফরি তোমার মিম্মিম কে একটু মাইর দিই?’

জাফরি মাথা নাড়ায় দু’পাশে। রুয়াত মাথা ঘুরিয়ে জাফরি কে দেখলো। আয়াজ মাথা ঠেকায় রুয়াতের মাথায়।

-‘প্রেয়সী তুমি আমার হৃদয়ে বয়ে আনা অদৃশ্য শান্তি, সুখ। এইযে এখন তোমায় দেখেছি আমার সব ব্যাথা সেরে গিয়েছে।

#চলবে….#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১৭
#মোহনা_হক

সবার মাঝে আয়াজ বসে আছে। বিকেলের শেষ সময়ে সব লোকজন আসে। সবাই একত্রিত হয়ে কথা বলছে। আয়াজ চুপচাপ কথা শুনে যাচ্ছে। অনেক মানুষ এসেছে তাকে দেখার জন্য। রুয়াত ইনিমার কাছে যাওয়ার সময় আয়াজ কে চোখে পড়লো তার। সেদিক আর না দেখে ইনিমার কাছে চলে গেলো।

ইনিমা একা রুমে শুয়ে আছে। জাফরি এতক্ষণ রুয়াতের সাথে ছিলো। এখন সে আবার বলছে তার মায়ের কাছে যাবে।

-‘আপু জাফরি তোমাকে খুঁজছে।’

ইনিমা তড়িঘড়ি করে ওঠলো। ভীষণ খারাপ লাগছে তার। আজ কাজের চাপ অনেক ছিলো।

-‘এই মেয়েটাও আমায় ছাড়া থাকে না। জানে মা অসুস্থ তার পরেও এমন করা লাগবে তার।’

রুয়াত ভ্রু কুচকে চাইল বোনের দিকে।
-‘এমন করছো কেনো? বাচ্চা মানুষ বুঝে না এসব।’

জাফরি কে ইনিমা কোলে নিলো। বাচ্চাটা একদম চুপ হয়ে আছে। মায়ের রাগ কে বরাবরের মতো খুব ভয় পায়। রুয়াতের কথায় ইনিমা তাকালো তার দিকে। রুয়াত আবারও বলে-

-‘বাসায় যাবে কখন? সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই। আর সন্ধ্যা করে গেলে মা বকবে তোমায়।’

ইনিমা মাথা নাড়ায়।
-‘হ্যাঁ যাবো। মা কে বলে নিই।’

মায়া চৌধুরী এসে উপস্থিত হলেন ইনিমার রুমে। রুয়াত কে দেখেই মায়া চৌধুরী হাসি দিলেন। প্রতিউত্তরে রুয়াত ও হাসলো। ইনিমা বিছানা থেকে সরে জায়গা করে দিলো মায়া চৌধুরী কে বসার জন্য।

ইনিমা স্বাভাবিক স্বরে বলে-
-‘মা আমাদের তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে। আর সন্ধ্যা হয়ে গেলে মা বকবে।’

মায়া চৌধুরীর হাস্যজ্জ্বল মুখটি মুহুর্তেই উধাও হয়ে গেলো।
-‘তুমি এখন আর বাসায় থাকো না। কেমন খালি খালি লাগে সব। কবে যে দু’বোন একেবারের জন্য আমার বাসায় আসবে আমি শুধু সে কথাই ভাবি সারাক্ষণ। আচ্ছা তোমরা তৈরি হয়ে থাকো আরহাম কে বলবো দিয়ে আসতে।’

মাথা নাড়ায় ইনিমা। মায়া চৌধুরী চলে গেলেন। রুয়াত শুধু কোনোমতে ওড়না পেচিয়ে নিলো। এখন আবার হিজাব বাধতে বিরক্ত লাগবে তার। ইনিমা তার আলমিরা থেকে কিছু ড্রেস নিলো। ওই বাড়িতেও আছে কিন্তু যেহেতু সে অনেকদিন থাকবে আবার মাঝে মাঝে হসপিটালে চেকাপ করাতে যাবে তাই সে অনেকগুলো ড্রেস নিয়ে নিলো। প্রায় একটা বড় ব্যাগ নিয়েছে। রুয়াত বেডে বসে পা নাড়াচাড়া করছে। জাফরি পায়ের উপর পা তুলে তার মায়ের কান্ড দেখে যাচ্ছে। মায়া চৌধুরী আরহাম কে ডেকে আনলো। আরহাম কোমড়ে হাত দিয়ে ইনিমা কে দেখে যাচ্ছে। তার বউটা চলে যাবে ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে। ওই বাসায় গিয়ে ইনিমা কে দেখে আসতে পারবে কিন্তু তার কাজের এতো চাপ থাকে খুব কম সময়েই যেতে পারবে ওখানে।

-‘আরহাম বাবা তুই ওদের দিয়ে আয় বিকেল থাকতে থাকতে। ইনিমা তো অসুস্থ তাই তাড়াতাড়ি দিয়ে আসা ভালো।’

মায়া চৌধুরীর কথা আরহাম তাকায় তার দিকে। ইনিমা ও ওড়না পেচিয়ে নিলো। আরহাম স্বাভাবিক স্বরে বলে-

-‘ঠিক আছে।’

-‘আচ্ছা তোরা বের হয়ে নিচে আয়। আমি রুয়াত কে
নিয়ে আয়াজের কাছে নিচে যাচ্ছি।’

মায়া চৌধুরী রুয়াত আর জাফরি কে নিয়ে নিচে চলে গেলো। ইনিমা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। আরহাম এখনো তার কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভাবভঙ্গীর কোনো পরিবর্তন নেই। ইনিমা আরহামের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরহামের দু’পাশের কোমড় থেকে হাত সরিয়ে দেয়।

-‘চলো নিচে যাই।’

আরহাম ইনিমার হাত ধরে টেনে এনে তার সাথে একদম মিশিয়ে নিলো। ইনিমা দু’হাতে আঁকড়ে ধরেছে আরহাম কে।

আরহাম একটু নিচু স্বরে বললো-‘
-‘তুমি চলে যাবে ভালো লাগছে না গো। তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে?’

ইনিমা ভ্রু কুচকে ফেলে। হঠাৎ আরহামের এরূপ ভালোবাসা ঠিক হজম করতে পারছে না।
-‘আজ এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছো যে?’

আরহামের মুখটা ছোট হয়ে যায়। আবার তৎক্ষনাত হেসে ইনিমার গালে মৃদু কামড় দিয়ে বলে-
-‘না ভালোবাসলে তোমার এক মেয়ে হয়েছে কিভাবে? আবার আরেকজন আসছে কিভাবে বলো?’

ইনিমা তার গাল ধরে দাঁড়ায়। একটু রাগী স্বরে বলে-
-‘বুড়ো হয়েছো তারপরও এসব কথা আর কমলো না। নির্লজ্জ্ব পুরুষ কোথাকার।’

আরহাম একটু উচ্চস্বরে হাসে। ইনিমার কপালে তার অধর ছুঁয়ে দেয়।
-‘ইনিমা ফাইরোজের জন্য বরাবরের মতো আরহাম ত্বায়ীম চৌধুরী নির্লজ্জ্ব পুরুষ।’

বেডে থাকা ব্যাগ আরহাম হাতে নিলো। ইনিমার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

.

মায়া চৌধুরী রুয়াত কে বসালো আয়াজের পাশে। তাদের মধ্যে দুরত্ব অনেক বেশি। যারা যারা আয়াজ কে দেখতে এসেছিলো সবাই চলে গিয়েছে। ফজলুল চৌধুরী বাসায় না থাকার কারণে আয়াজ একাই বসে ছিলো নিচে। জাফরি আয়াজ আর রুয়াতের মাঝে যে জায়গাটা ছিল ওখানে বসে পড়লো। আয়াজ তার দিকে তাকানো মাএই একটা মুচকি হাসি দিলো৷ মায়া চৌধুরী আয়াজের আরেক পাশে এসে বসে।

-‘রুয়াতের পরীক্ষার মাঝখান দিয়ে আর একটা দিন বাকি। আমি ওর প্রথম পরীক্ষার দিন যাবো ওদের বাসায়। তুই শুধু আরহাম কে বলিস আমাকে যেনো দিয়ে আসে।’

আয়াজ পরপর মাথা নাড়াচ্ছে। রুয়াত আয়াজ কে দেখে হাসছে। মায়া চৌধুরী আয়াজের হাত ধরে বললো-‘
-‘তুই যাবি না? আর তুই তো অসুস্থ এখনো যাবি কিভাবে?’

আয়াজ রুয়াতের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয়।
-‘যাওয়ার কথা পরে। সেটা তো আমি নিজ ইচ্ছতেই যেতে পারি। তোমার হবু ছোট বউমা যদি বলে তাহলে যাবো অসুস্থ থাকার পর ও যাবো।’

মায়া চৌধুরী তাকায় রুয়াতের দিকে। রুয়াত ঘাবড়ে যায়। সে এখন কি বলবে? মাথাই আসছে না। এই এমপি সাহেব শুধু তাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। এমন মুহূর্তে আরহাম আর ইনিমা আসে। রুয়াত উঠে দাঁড়ায় তাদের দেখে। আয়াজ একবার রুয়াতের দিকে তাকালেও পরক্ষণে ইনিমা আর আরহামের দিকে নজর দেয়। জাফরি তার বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আরহাম তার একমাত্র রাজকন্যা কে দেখে কোলে নেয়। ইনিমা মায়া চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

ইনিমা আয়াজের উদ্দেশ্য বলে-
-‘ঠিকমতো চলবেন দেবর সাহেব।’

আয়াজ হাসে ইনিমার কথায়।
-‘জ্বী আপনিও।’

মায়া চৌধুরী এসে ইনিমার কাঁধে হাত রাখে।
-‘শুনো বউমা নিজের খেয়াল রেখো। খাওয়া দাওয়া সঠিক সময়ে করো। আর শুনো তুমি এখন অসুস্থ তাই জাফরির সাথে খাবার নিয়ে এতো দৌড়াদৌড়ি করো না। নিজের ভালো থাকাটা আগে ভেবো। সুন্দর মতো চলো। মা সব সময় দোয়া করি তোমার জন্য ।’

ইনিমা হাসে মায়া চৌধুরীর কথায়। বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে কিন্তু কখনো মায়া চৌধুরী তার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেনি। প্রথম প্রথম তার কাজ করতে অসুবিধে হলে তিনিই সব সামলে নিতেন। যেভাবে একজন মা তার সন্তান কে স্নেহ করে ঠিক একইভাবে মায়া চৌধুরী ইনিমা কে প্রতিনিয়ত তার সন্তানের মতো স্নেহ করে। ইনিমার চোখে বিন্দু বিন্দু পানি এসে জমা হয়। পানি গড়িয়ে পড়ার আগে আঙুল দিয়ে মুছে ফেলে। ইনিমা আর আরহাম বের হয়ে আসে বাসা থেকে৷ মায়া চৌধুরী এবার রুয়াতের হাত ধরে।

-‘শুনো তুমিও তোমার খেয়াল রেখো। পরীক্ষা নিয়ে বেশি টেনশন করো না। তুমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো।’

রুয়াত একবার আয়াজের দিকে তাকালো। আয়াজ শান্ত চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। যাওয়ার সময় সে ভেবে রেখেছে আয়াজ হয়তো বা কিছু বলবে। কিন্তু আয়াজ কিছুই বলেনি। রুয়াত বের হয়ে আসে বাসা থেকে। মায়া চৌধুরী ও আসে তাদের পিছনে। প্রায় আধ ঘন্টা পর তারা বাসায় আসে। আরহাম আবার চলে গিয়েছে বাসায়। অন্য একদিন এসে থাকবে।

(*)

পাঁচদিন পর আয়াজ সম্পুর্ণ সুস্থ। পাঞ্জাবী পড়ে আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জেল দিয়ে চুলগুলো সেট করে নেয়। হাতে ঘড়ি পড়ে। আজ অনেক দিন পর নিজেকে একটু স্বাধীন লাগছে। পুরো পাঁচদিন একদম বাসায় ছিলো। বাসায় প্রচুর হাঁটার ফলে মাঝখান দিয়ে পা ফুলে গিয়েছিল। এরপর থেকে মায়া চৌধুরী আর বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। আয়াজ তৈরি হয়ে নিচে নামে। মায়া চৌধুরী টেবিলে নাস্তা রেখে দিয়েছে। আয়াজ নাস্তা করে। একবার মোবাইলে সময় দেখে। এখন থেকে নিজের সঙ্গে গার্ড রাখবে। সবাই কে খবর দেওয়া হয়েছে। এ পাঁচদিন ছুটিতে ছিলো। আয়াজ’ই তাদের ছুটি দিয়েছে। সাহেদ এখনো সুস্থ হয়নি। আয়াজ আজ সর্ব প্রথম সাহেদের সাথে দেখা করতে যাবে তার বাসায়। আয়াজ নাস্তা সেরে বের হয়। মায়া চৌধুরী বারবার বলে দিয়েছে সে যেনো মাথা ঠান্ডা রাখে। কিন্তু তার মনে শুধু ইকরামুল কে শাস্তি দেওয়ার কথা ঘুরছে। মায়া চৌধুরী জানে আয়াজ কোনো না কোনো ভাবে ইকরামুলের সাথে দেখা হলেই নিশ্চয়ই মাথা গরম করবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মায়া চৌধুরী কথাটা বলে।

আয়াজ সাহেদের বাসায় আসে। সাহেদের চিকিৎসার পুরো খরচ আয়াজ বহন করে। সোফায় আয়াজ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। ইদানীং এখন আর আশরাফ কে দেখা যায় না। সেদিন আশরাফ ও দেখা করতে আসে। আয়াজ বেশি কথা বলেনি তার সাথে। ভেবেছে আশরাফ কি কি করছে কিছুই আয়াজ জানে না কিন্তু সে সব জেনে গিয়েছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তারপর আশরাফ কে ও আয়াজের ভয়ংকর রূপের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।

সাহেদ কে নিয়ে আসে তার ছোট বোন। আয়াজ কে দেখামাত্রই সালাম দেয়। সাহেদ আয়াজের সাথে কাজ করার পর ও এই প্রথম আয়াজ সাহেদের বাসায় এসেছে। সাহেদ কে কাঠকাঠ গলায় বলে-

-‘এভাবে কতোদিন বাড়িতে থাকবে? সূর্যের আলো, দিনের প্রাকৃতিক বাতাস, রাতে চাঁদের আলো কেউ তোমাকে দেখে তো আসলে?’

সাহেদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো আয়াজের কথায়। এটা কি তাকে অপমান করা হলো নাকি! মাথা নিচু করে সাহেদ বললো-‘

-‘স্যার আপনি তো দেখতেই পারছেন আমি অসুস্থ। সুস্থ হলে কাজে ফিরবো।’

থমথমে অবস্থা। পর্দার আড়াল থেকে সাহেদের বোন আর তার মা কথা শুনছে। আয়াজ সেদিকটায় ও একবার তাকালো।

-‘আয়াজ তার পাশের জায়গাটায় সব সময় সাহেদ কে মিস করে।’

সাহেদ ছলছল নয়নে তাকায়। চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি পড়ে তার। একদিকে এরকম অসুস্থতা আরেকদিকে কাজ, আয়াজ স্যার, দলের প্রতি মায়া। কোনোটিই ভুলতে পারছে না সে। আয়াজ ওঠে সাহেদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘

-‘তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই শুরু করবো না। আয়াজ তার পাশে খুব তাড়াতাড়ি সাহেদ কে দেখতে চায়। যতোদিন আয়াজ বেঁচে থাকবে ততদিন সাহেদ কে বাঁচিয়ে রাখার সর্বএ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আয়াজ নাম যতোদিন থাকবে ততদিন সাহেদ নামটিও থাকবে। তুমি আমায় বাঁচিয়েছো। নিঃসার্থ ভাবে দিন রাত খেটেছো আমার এবং আমার দলের জন্য। তোমার এসব কথা আয়াজের মনে চিরকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে। খুব জলদি আমি সাহেদ কে সুস্থ দেখতে চাই। শরীরের সুস্থতার দিকটা আল্লাহর হাতে আর মনের সুস্থতা তুমিই ফিরিয়ে আনবে। মজবুত রাখবে।’

হাস্যজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে পড়ে সাহেদের চোখ মুখে। দূর থেকে তার মা পর্দার আড়াল থেকে ক্রমাগত চোখ মুছে যাচ্ছে। মানুষটা সত্যিই উদার মনের। সাহেদের বোন আয়াজের এমন কান্ডে হেসে যাচ্ছে। তার বান্ধুবীদের থেকে শুনেছে আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী অমায়িক মনের মানুষ আজ প্রত্যেকটি কথা হিসেবে হিসেবে মিলে যাচ্ছে। আয়াজ বের হয়ে আসে সাহেদের বাড়ি থেকে। এবার তার অফিসে যাবে। অনেক দিন পর তার চিরচেনা জায়গা দেখে হাসলো। এবার পুরনো কাজ নাড়া দিতে হবে। আজ ও বেশ কয়েকজন দেখা করতে আসলো আয়াজের সাথে। সব পলিটিক্যাল মিটিং, কাজ শেষ করে ইকরামুল কে নিয়ে রিসার্চ করতে বসলো। ল্যাপটপে ডুবে আছে। তিন ঘন্টা পর তার সব কাজ সফল হলো। এবার শুধু ইকরামুল তার ফাঁদে পা দিলেই হবে। আয়াজ তার চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে হাসছে। ইকরামুলের জন্য এবার সত্যিই ভীষণ কষ্ট।

আয়াজ বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট করলো। মন কে তো আর রেস্ট দেওয়া যাবে না রুয়াত কে ছাড়া। তাই সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। প্রায় টানা তিনদিন তার প্রেয়সীর সাথে দেখা হয়নি। আয়াজ আজ তার গার্ডদের নিয়েই আজ সেখানে গেলো। প্রতিবার যে জায়গায় রুয়াতের সাথে দেখা হয় সেখানেই গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে বের হয়। বাহির থেকে অন্য একটা রুমের জানালা দেখা যাচ্ছে। আয়াজ কল দেয় রুয়াতের মোবাইলে। অনেকবার ট্রায় করার পর বন্ধ বলছে। এবার ইনিমার মোবাইলে কল দেয়। একবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে। আয়াজ রুয়াতের সাথে দেখা করবে এবং করার জন্য তাদের বাসার নিচে অপেক্ষা করছে কথাটি কোনো রকম ভনিতা না করেই সোজাসাপ্টা ইনিমা কে বলে। আশ্চর্যের বিষয় ইনিমা রাজি হয়ে গেলো। কলটা কেটে দেয় আয়াজ।

ইনিমা যেহেতু তার রুমে ছিলো তাই সে আবার রুয়াতের রুমে গেলো। রুয়াত পড়ছে বসে বসে। ইনিমা সহজ সরল ভঙ্গীতে বলে-

-‘আয়াজ এসেছে দেখা করতে। তুই যা দেখা করে আয়।’

হঠাৎ এমন সময়ে আয়াজের কথা শুনে পরপর পলক ঝাপটায়।
-‘ওনি এখন? কিন্তু কেনো?’

-‘দেখা করতে এসেছে তোর সাথে। বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে। এখন আর আসবে না এদিকটায়। তুই নিশ্চিন্তে যেতে পারিস।’

মাথায় ঘোমটা টেনে নিলো। আপুর কথায় ভরসা পায় রুয়াত। রুয়াত বাসা থেকে বের হয়ে আয়াজ কে দেখতে পায়। গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজ হাসছে প্রেয়সী কে দেখে। রুয়াত অনেকটাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

-‘উহু একদম আমার সামনে এসে দাঁড়াও। সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে দাও।’

রুয়াত পলকহীন চাহনিতে তাকায়। অনেকটাই সামনে এগিয়ে যায়। তবুও আয়াজের কাছে সেই দূরত্ব’ই লাগছে৷ রুয়াতের কব্জি ধরে টেনে তার সামনে দাঁড়া করায়। একটু জোড়েসোড়ে ধমক দিয়ে বললো-‘

-‘এই বলেছি না সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে দাঁড়াতে? কথার অবাধ্য হও কেনো তুমি?’

আয়াজ ভালো করে দেখে নিচ্ছে তার প্রেয়সীকে। যেনো কতো বছর দেখেনি এই মায়াময়ী কন্যাকে।
-‘এক্সাম কেমন হচ্ছে তোমার?’

রুয়াত মাথা নাড়িয়ে বলে-
-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো হচ্ছে।’

রুয়াতকে একটু জ্বালানোর জন্য বললো-‘
-‘হু আমি তোমার ভালো রেজাল্ট চাই। নাহলে জনগণ বলবে এমপির বউ এইচএসসি তে ভালো রেজাল্ট উঠাতে পারেনি। পরিশেষে মান সম্মানটা আমার’ই যাবে ম্যাডাম।’

ভ্রু কুচকে তাকায় রুয়াত।
-‘আমার এক্সাম ভালো হচ্ছে আশাবাদী আপনার মান সম্মান যাবে না এমপি সাহেব।’

আয়াজ অবাক হয়। ‘এমপি সাহেব’ খুব সুমধুর ছিলো বাক্যটি। এক হাত দ্বারা পিঠ আঁকড়ে ধরে আরেকটু সামনে আনে রুয়াত কে। সাথে সাথে রুয়াত চোখ বন্ধ করে ফেলে। পরক্ষণেই আবার দূরে সরিয়ে দেয় আয়াজ। দু’বাহুতে হাত রেখে হেসে বলে-

-‘উহুম আপনার এমপি সাহেব এতোটা বেসামাল নয়। একটি পবিত্র শব্দ তিনবার উচ্চারণ করে আপনাকে সম্পুর্ণ ভাবে আমার করে নিবো রুয়াত ফাইরোজ তয়ত্রী। যেখানে থাকবে না কোনো রূপ বাঁধা। আর সেই দিনটি খুব কাছে।’

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here