#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১৮
#মোহনা_হক
আজ রুয়াতের পরীক্ষার শেষ দিন। শুরুটা খুব ভালো হয়েছিলো এখন শেষ ভালোটা দেখতে চায়। কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে রেডি সে। এই কয়টা দিন আয়াজ তাকে যথেষ্ট হেল্প, সাহস, কেয়ার সব কিছুই করেছে৷ আর এতো কিছুর জন্য বিশাল বড় ধন্যবাদ তাকে। আয়াজের কথা মনে উঁকি দিলেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে মুখে। রুয়াত তার মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। হান্নান মজুমদার ও সেখানে আছেন। আজ রুয়াতের সাথে তিনি যাবেন। গত রাতে আয়াজ বলেছিলো সে ও আসবে। কিন্তু সেটা পপরীক্ষার পর। সকাল সকাল ভীষণ কাজের চাপ থাকে তার। মেহরুবা জাফরির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। ইনিমা ৭-৮ দিনের মতো থেকে আবার চলে যায়। হান্নান মজুমদার রেডি হচ্ছে। রুয়াত তার মায়ের রুমে যায়। মেহরুবার পাশে বসে।
রুয়াত হাস্যজ্জ্বল চাহনিতে তাকায় জাফরির দিকে। পাশেই ইনিমা বসে আছে। জাফরি বাচ্চা তো তার মিম্মিম কে দেখে খুশিতে হাতে তালি দেওয়া শুরু করলো। রুয়াত তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই আয়াজের জন্য মোবাইলটা অন করে রাখতে হতো। একবার অনেক বকাও দিয়েছিলো আয়াজ। এরপর থেকে শুধু আয়াজের সাথে কথা বলার সময় মোবাইল অন করে রাখতো। যখন কথা হতো না তখন মোবাইল বন্ধ করে রাখতো রুয়াত। আর এই কারণেই জাফরি কথা বলতে পারে না। কল ও দিতে পারে না। হান্নান মজুমদার নিচে এসে তাড়া দিচ্ছে। রুয়াত কিছু সময় ইনিমার সাথেও কথা বললো। মেহরুবা কল কেটে দিয়ে রুয়াতের পিছন পিছন আসে। মা কে বলে বাহিরে অগ্রসর হয়। শেষ পরীক্ষা এই নিয়ে মোটামুটি একটু টেনশনে আছে।
মেহরুবার সামনে রুয়াত দাঁড়ায়।
-‘মা দোয়া করো।’
রুয়াতের কাঁদো মুখ দেখে মেহরুবা হেসে দেয়। প্রতিবার রুয়াত এমন করে। ছোট বেলা থেকেই। বড় হলো কিন্তু স্বভাবের আর পরিবর্তন হলো না।
-‘টেনশন করিস না। ভালো হবে। মা দোয়া করি তো সব সময় তোর জন্য।’
মাথা নাড়ায় রুয়াত। হান্নান মজুমদারের ডাকে সেদিক ছুটে। আর অপেক্ষা করলো না। দেরি হয়ে গেলে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই কয়েক দিনে এমন অহরহ ঘটনা দেখে ফেলেছে। বোর্ড পরীক্ষা তাও শিক্ষার্থীরা এতো অসচেতন। হান্নান মজুমদারের সাথে রুয়াত পৌঁছায় সেখানে।
(*)
-‘তো আশরাফ কি অবস্থা তোমার? এতো মোটা হয়ে যাচ্ছো আজকাল।’
আশরাফ অবাক চোখে আয়াজের দিকে তাকায়। মুখে সুন্দর করে কথা বললেও চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে৷ আয়াজ আশরাফ কে একটু সময় দিয়েছিলো। কিন্তু না অগোচরে ঠিকই আশরাফ ইকরামুলের হয়ে কাজ করছে। উত্তর দিতে বেশি সময় দেয় নি আয়াজ। পুনরায় জিজ্ঞেস করে-
-‘ইকরামুলের দূর্নীতির টাকা মাসে মাসে পেয়ে যাচ্ছো। ভালো ভালো খাচ্ছো। মোটা হয়ে যাচ্ছো দিনকে দিন।আমার থেকেও টাকা নাও। আবার আমার দলের সাথে কাজ করে সেই দলের গোপন খবর পাচার করছো। তোমাদের মতো মানুষদের আসলে কি করা উচিৎ বলো? ভালো হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। সব জেনেও চুপ ছিলাম। তুমি তো আর ভালো হলে না। আয়াজের সাথে বেইমানি করার শাস্তি তুমি পাবে আশরাফ। আর যার হয়ে কাজ করছো না সে এই অবস্থানের থাকবে আর দু’দিন। তারপর? তারপর কি করবে শুনি। এইযে এখানে তোমার সহযোগী যতজন আছে সবাই কে খুব ভরসা, বিশ্বাস করি আমি। বর্তমানে ভরসা আর বিশ্বাসের জায়গা থেকে তুমি সরে গিয়েছো। তোমাকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। একবারও বুক কাঁপলো না তোমার? এতোই সাহস তোমার? তোমাকে আমি আমার দলে নিয়ে খুব ভুল করেছি। আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল এটা।’
আশরাফ আয়াজের দু পা জড়িয়ে ধরে। আজ যদি আয়াজ ক্ষেপে যায় তাহলে সে নিশ্চিত আয়াজ তাকে মেরেই শান্ত হবে। ইকরামুলের ফাঁদে পা দিয়ে মস্ত বড় ভুল হয়েছে। আগেই সাবধান হওয়া উচিৎ ছিলো তার। লোভ লালসা তার জীবনটা তছনছ করে দিলো। আয়াজ মুখ খিঁচে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টায় আছে। ভয়ে সবার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আর কিছু একটা হবে এখানে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে তারা।
-‘স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর একটি বার আমাকে সুযোগ দিন স্যার।’
কাঁদতে কাঁদতে কথাটি বলে আশরাফ। এ কথায় যেনো আয়াজের রাগ তীব্র গতিতে বেড়ে যায়।
-‘পা ছাড়ো। তোমার নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ধরবে না।’
আশরাফ ছাড়লো না। আয়াজ একবার পা ঝাড়া দেয় কিন্তু সে ছাড়ছে না। সাহেদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি তে চেয়ে বলে-
-‘সাহেদ গা’ন বের করো।’
একটু সংকোচ বোধ করলো সাহেদ। আয়াজ সচরাচর এসব হাতে নেয় না। আজ কি সত্যিই আশরাফ কে কিছু করে ফেলবে নাকি?
-‘কানে কথা যাচ্ছে না তোমার?’
প্রচন্ড জোরে কথাটি বলে আয়াজ। সাহেদ মাথা নিচু করে ফেললো। স্যার কে একটু বোঝানোর দরকার। এভাবে হুটহাট কিছু করে ফেললে হবে না।
-‘স্যার বলছিলাম কি একটু বসে যদি কথা বলতেন।’
আতংকে আশরাফের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। আয়াজ কি তাকে মেরে ফেলবে নাকি?
-‘তোমাকে এতো কথা বলার অধিকার দেইনি। ওর যা প্রাপ্য আমি তাই দিবো ওকে। আর এখানের প্রত্যেকটা মানুষের উদ্দেশ্যে বলছি বেইমানি করলে এমন শাস্তি ভোগ করতে হবে।’
সাহেদ গা’ন এগিয়ে দেয় আয়াজ কে। আশরাফ চোখ বন্ধ করে ফেলে এই বুঝি আজ তাকে মেরে ফেলবে। আয়াজ একবার ভ্রু কুচকে তাকায়। এক আকাশ সমান ভয় দেখছে আশরাফের চোখ মুখে। কিন্তু শাস্তি তো দিতেই হবে।
-‘স্যার আশরাফের ২২ দিনের একটা সন্তান আছে। নতুন জন্ম নেওয়া। আরও দুটো ছেলে মেয়ে আছে স্যার। ওকে মারবেন না স্যার। সন্তান গুলো বাবা ছাড়া হয়ে যাবে স্যার।’
আয়াজ হাত থেকে গা’ন ফেলে দেয়। আশরাফের কানে সাহেদের কথা গুলো যায়। চোখ খুলে সবার আগে আয়াজের দিকে তাকায়। নিচে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পড়ে আছে। নিজের শরীর চেক করে না কোথাও কোনো ব্যাথা লাগেনি। আয়াজ তাকে কিছুই করেনি। পরপর আয়াজের দিকে দু’বার তাকানোর ফলে আয়াজ তার শরীরের সব শক্তি কে কাজে লাগিয়ে আশরাফের গাল বরাবর থাপ্পড় দিলো। সাথে সাথে যেনো গাল’টি জ্বলে ওঠলো। আয়াজের হাতের চারটি আঙুলের ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে মুহুর্তেই।
-‘আশরাফ কে সম্পুর্ণ আলো হীন রুমে তিন দিন বন্ধি করে রাখবে। কোনো রকম খাবার দিবে না শুধুমাত্র পানি ছাড়া। এর হেরফের হলেই তোমাদের অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম। এই জা’নো’য়া’র কে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও। এর মুখে থু থু ফেলতেও আমার ঘৃণা লাগছে। তার স্বার্থপর চেহেরা আমি দেখতে পারছি না। নিয়ে যাও একে।’
একজন এসে সাথে সাথে আশরাফ কে নিয়ে যায়। বের হয়ে আসে নিজের অফিস থেকে। সাহেদ ও চলে আসে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ। রাগে তার শরীর ফেঁটে যাচ্ছে। সাহেদ আয়াজের সামনে এসে দাঁড়ায়।
-‘স্যার বাসায় ফিরবেন এখন?’
আয়াজ সাহেদের কলার ধরে উচ্চস্বরে বলে-
-‘কেনো আশরাফের পরিবারের কথা টেনেছো? কেনো এভাবে বাঁধা দিয়েছো আমায়? তোমাকে আমার কাজে বাঁধা দেওয়ার সাহস কে দিয়েছে?’
সাহেদ মাথা নিচু করে মুচকি হাসে। সে জানে এখন আয়াজ তাকে এসব বলবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। এমন তুলকালাম তান্ডবে আয়াজ কে কি জবাব দিবে সব কিছুই তার পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো। আশরাফ তার পরিবারের কথা সাহেদের কাছে বলে। আর সে এটাও জানে যে আয়াজ আশরাফ কে কিছু না কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতো সহজে যে তাকে ছেড়ে দিবে না সেটাও জানে সাহেদ। নাহ্ আশরাফের সাথে কোনো খাতির নেই তার। শুধুমাত্র আশরাফের পরিবারের কথা ভেবেই এসব করেছে।
-‘স্যার মেরে ফেললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো? ওকে আপনি শাস্তির ডোজ বাড়িয়ে দিবেন তাও মৃত্যু দিবেন না স্যার। ভবিষ্যতে আপনি বাবা হবেন। যাদের বাবা নেই তারা বাবার মর্ম বুঝে। আমি শুধু আশরাফের পরিবারের কথা ভেবে আপনাকে আটকিয়েছি স্যার।’
-‘তুমি জানো তুমি আমার সাথে বেইমানি করলে আমিও তোমাকে মেরে ফেলতে পারি?’
সাহেদ হাসে।
-‘স্যার আপনি আমায় অকারণে মেরে ফেললেও আমি কোনো অভিযোগ রাখবো না। কিন্তু আপনার সাথে বেইমানি করার সাহস নেই আমার স্যার।’
সাহেদ কে ছেড়ে দেয় আয়াজ। গাড়িতে ওঠে পড়ে। ঠায় সে জায়গায় সাহেদ দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ছাড়ার পর পরের গার্ডদের গাড়িও চলে যায় আয়াজের গাড়ির পিছনে। সাহেদ সেখানে দাঁড়িয়ে সবার আগের গাড়িটা কে দেখে যাচ্ছে। যাক স্যার কে তো বোঝাতে পেরেছে তাতেই খুশি।
(*)
রুয়াতের পরীক্ষা শেষ। নিমির জন্য ওয়েট করছে। এখনো বের হয়নি নিমি। আজ যেহেতু শেষ পরীক্ষা তাই নিমির সাথে দেখা করেই যাবে। আবার কবে না কবে দেখা হয় তাদের। অবশেষে নিমি বের হয়ে আসলো। রুয়াত কে দেখেই ঝাপটে ধরে।
-‘এক্সাম কেমন হয়েছে দোস্ত?’
রুয়াত হেসে বলে-
-‘ভালো হয়েছে তোর?’
-‘ভালো। কিন্তু আমার মন খারাপ হচ্ছে তোর সাথে কবে দেখা হবে আবার?’
রুয়াত হেসে নিমির কাঁধ জড়িয়ে বলে-
-‘তোর দাওয়াত রইলো আমার বিয়ে তে। তুই তো বলেই দিয়েছিস তোকে দাওয়াত দেওয়া লাগবে। না বললেও দিতাম। আসিস।’
মুখে দু’হাত চেপে ধরলো রুয়াত। নিমির সাথে একটু মজা করেছে। নিমি ভ্রু কুচকে ফেলে।
-‘মজা করছিস?’
মাথা দু’পাশে নাড়ায় রুয়াত।
-‘একটুও মজা করিনি।’
নিমি ভেবেছে রুয়াত মজা করেছে কিন্তু না মজা করে বলেনি তাহলে তার দাওয়াত কনফার্ম। রুয়াত আর বেশিক্ষণ কথা বলেনি। তাড়াতাড়ি বিদায় দিয়ে চলে আসে।
আয়াজের গাড়ি দূর থেকে দেখতে পায়। তাই সে চলে আসে। হাসি মুখে গাড়িতে ওঠে পড়ে। মাস্ক পড়ে মাথা সিটে হেলিয়ে দিয়েছে তার পাশের পুরুষটা। রুয়াত অধর কামড়ে ধরে। লোকটার কি হয়েছে? আর আয়াজ সব সময় মাথা সিটে হেলিয়ে রাখার পর ও কথা বলেছে। আজ একবারও বলছে না। কিছু পথ যাওয়ার পর ট্রাফিকে আটকা পড়ে গাড়ি। ভাবার বিষয় হলো আয়াজ এখনো চুপচাপ। রুয়াত আয়াজের পাঞ্জাবীর হাতের উপরের অংশ ধরে হালকা টান দেয়।
আয়াজ তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন করলো না। সে অবস্থায় থেকেই উত্তর দিলো।
-‘কি?’
রুয়াত চমকায়।
-‘তারমানে আপনি এতোক্ষন ঘুমোন নি? আমি ভেবেছি আপনি ঘুমাচ্ছেন।’
আয়াজ চোখ মেলে তাকায় রুয়াতের দিকে। চোখ গুলো ভীষণ লাল হয়ে আছে। সে কেউ দেখলেই ভয় পাবে এমন অবস্থা। রুয়াত একটু নড়েচড়ে বসে।
-‘এতো বেশি বুঝতে কে বলেছে তোমায় হ্যাঁ?’
কন্ঠস্বর ও অন্য রকম শোনাচ্ছে আয়াজের। একটু ভীতু গলায় বললো-
-‘কি হয়েছে আপনার?’
-‘পা’গ’ল হয়ে গিয়েছি আমি। তোমার জন্য পা’গ’ল হয়েছি। এই কথা আমি আগেও একবার রিপিট করেছি। আর কিছু শুনতে চাও? বড্ড বেশি কথা বলছো আজকাল। সব কথা শোনা চাই তোমার?’
রুয়াত হাত চেপে ধরে আয়াজের। হঠাৎ এমন ব্যবহার হজম করতে পারল না। সে তো তেমন কিছুই বলেনি। কিন্তু আয়াজ এমন ভাবে কথা বলছে কেনো? একবার ড্রাইভারের দিকে তাকায়। খুব অপমান লাগছে তার। আর আয়াজ তো আগে খুব বিরক্ত হতো যখন রুয়াত খুব কম তার সাথে কথা বলতো। এখন নিজ থেকে একটু বলাতে রেগে গিয়েছে। রুয়াত ধরে নিয়েছে সে নিজে সত্যিই একটা বিরক্তিকর মানুষ। ছোট থেকেই তার সাথে একটু জোরে কথা বললে কেঁদে ফেলে। আর এই কারণে হান্নান মজুমদার কখনো জোরে কথা বলেনি রুয়াতের সাথে। রুয়াত কান্না আটকানোর
চেষ্টায় আছে। কিন্তু বেহায়া চোখের পানি সুড়সুড় করে পড়ে গেলো।
-‘ সামনে ড্রাইভার আছেন।’
ভাঙা গলায় রুয়াত কথাটি বলে। আয়াজ একবার তার পানে চায়। আজ মন মেজাজ খুব বেশি খারাপ। নিজেকে অসংখ্য বকা দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটার সাথে জোরে কথা না বললেই হতো। এখন প্রেয়সী কে কাঁদিয়ে ভালো লাগছে না। আবার রাগ ও ভাঙাতে মন চাচ্ছে না। কাঁদুক তার প্রেয়সী। একেবারে রাগ ভাঙিয়ে দিবে।
-‘গাড়িটা ম্যাডামের বাসার সামনে যাবে।’
ড্রাইভার মাথা নাড়ায়। আড়চোখে রুয়াত কে একবার দেখে নিলো। সে আপাতত তার হাত দিয়ে চোখের পানি ক্রমশ মুছেই যাচ্ছে। গাড়িটা রুয়াতের বাসার সামনে রাখা হয়। তড়িঘড়ি করে সে নেমে পড়ে। যেসব জিনিস দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলো সেগুলো ও নেয়নি। আয়াজ হাসে রুয়াতের কান্ডে। মনে মনে বলে-
❝আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা প্রেয়সী। প্রস্তুতি নাও আয়াজের নামে নিজেকে লিখে দেওয়ার জন্য। তোমার এসব ক্ষণিকের রাগ আমি আদর দিয়ে পুষে দিবো।❞
#চলবে…#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১৯
#মোহনা_হক
সকাল নয়টা পনেরো। এক প্রকার হৈ-হুল্লোড়ে রুয়াতের ঘুম ভেঙে গেলো। কাল ও তাদের বাসা একদম নিরব ছিলো। আজ এমন চিৎকার চেচামেচি তে বাসা যেনো ফেঁটে যাচ্ছে। রুয়াত উঠে বসলো। বাহির থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মেহরুবা। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখলো। আজ অনেক ঘুমিয়েছে। কাল সারা রাত আয়াজের অপরিচিত ব্যবহার তাকে ঘুমোতে দেয়নি। বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে। রাতের খাবার ও খায়নি। মূলত আয়াজের ব্যবহার সহ্য করতে পারেনি। সে তো সম্পুর্ণ নির্দোষ ছিলো। রুয়াত উঠে দরজা খোলার আগে একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। চোখগুলো ফোলা ফোলা লাগছে। নাক ও লাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখে লাল আভা। দরজা খুলতেই দেখে মেহরুবা দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে শাহরীন আর সায়রা। এরা রুয়াতের খালাতো বোন। রুয়াত কে দেখেই হাসি দেয়।
মেহরুবা একটু রাগ দেখিয়ে বললেন-
-‘আজ কি তুই জানিস না? এতো বেলা ঘুমিয়েছিস কেনো? আর তোর চোখ মুখ এতো লাল আর ফোলা লাগছে কেনো? ঘুম হয়নি নাকি?’
হকচকিয়ে যায় রুয়াত।
-‘রাতে একটু দেরি করে ঘুমিয়েছিলাম। তাই হয়তো এমন লাগছে। কিন্তু আজ কি?’
ভ্রু কুচকে মেহরুবা রুয়াতের দিকে তাকায়।
-‘আজ ইনিমার শ্বশুড় বাড়ি থেকে সবাই আসবে। তোর আর আয়াজের বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। কতো কাজ পড়ে আছে আর মেয়ের ঘুম শেষ হয়না। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে নাস্তা দিয়েছি। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। আর ডাকতে পারবো না।’
মেহরুবা শাহরীনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-‘ওকে আজ তুই সাজিয়ে দিস মা। ইনিমা তো তাদের সাথে আসবে। তাই আজ ওকে সাজানোর দায়িত্ব তোর। আমি ঠিক সময়ে এসে তোকে শাড়ি দিয়ে যাবো।’
তাড়াহুড়োয় মেহরুবা নিচে চলে আসে। শাহরীন মাথা দুলায় তার খালামণির কথায়। রুয়াতের থেকে দু বছরের বড় শাহরীন। তার ও বিয়ে হয়েছে এক বছরের বেশি সময় হয়েছে। শাহরীন রুয়াতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে-
-‘কেমন আছিস? আমি তো জানি আমি জিগ্যেস না করলে তুই কখনো জিগ্যেস করবি না। তোকে তো আমরা চিনি ছোটবেলা থেকে।’
রুয়াত হেসে শাহরীনের হাত জড়িয়ে ধরে।
-‘ভালো আছি আপু। তোমরা কখনো এলে? আর কে কে এসেছে? মনেহচ্ছে বাসায় আজ অনেক মানুষ।’
-‘আমরা এসেছি। আর মামিরা এসেছে। নানু আর নানাভাইয়া ও এসেছে। নিচে গেলেই সবাইকে দেখতে পারবি। আগে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। খালামণি কি বলে গেলে শুনেছিস তো?’
মাথা নাড়ায় রুয়াত। একবার পাশ ফিরে সায়রা কে ও দেখে নেয়। এবার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। রুয়াত সায়রার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। প্রতিত্তোরে সায়রা ও হাসে। অতঃপর রুয়াত ফ্রেশ হয়ে আসে। নিচে গিয়ে দেখে এ এক এলাহী কান্ড। রুয়াতের নানা আমজাদ সাহেব মাছ কাটছেন। পাশে মেহরুবা আর রুয়াতের বড় মামি দাঁড়িয়ে। বাড়িতে যেনো উৎসব মুখোর পরিবেশ তাদের। সচারাচর এ বাড়িতে তেমন কেউ বেড়াতে আসে না। কারণ রুয়াতের নানুর বাড়ি অনেক দূর হওয়াতে বেশি একটা তারা তাদের নানুর বাড়িতে যায় না। আবার এখানেও কেউ আসে না। যোগাযোগ প্রতিনিয়ত মোবাইলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। রুয়াতের নানা বরাবরই খাবারের বিষয়ে বেশ পারদর্শী। বাল্যকাল থেকেই তিনিই সব কাজ করতে জানেন। এরকম কাহিনী নতুন কিছু না। রুয়াত নানুর বাড়িতে গেলে দেখে এসব। রুয়াত গিয়ে তার মামী ও খালামণির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। মায়ের বকাবকি তে তাড়াতাড়ি নাস্তাটা সেরে নেয়।
চৌধুরী বাড়ি থেকে সবাই মজুমদার বাড়িতে আসবেন বিকেলে। ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। দুপুরে মেহরুবা এসে রুয়াত কে গাঢ় মেরুন রঙের একটা শাড়ি দিয়ে যায়। শাহরীন রুয়াত কে শাড়ি পরিয়ে দেয়। মোটামুটি একটা সাজ ও দেয় রুয়াতের ফেইসে। রুয়াত চুপচাপ বসে আছে। শাড়ি পড়েছে সেজেছে এর মানে এই না যে আয়াজের উপর থেকে অভিমান চলে গিয়েছে। রাগ এখনো আছে। তবে তা কোনো কাজ কর্মে প্রকাশ করলো না। যা বলার আয়াজ কে বলবে। রুয়াতের সাজ শেষ হলে তাকে রুমে বসিয়ে শাহরীন নিচে চলে আসে।
(*)
মায়া চৌধুরী আর ফজলুল চৌধুরী তৈরি হয়ে বসে আছেন। আরহাম আর ইনিমা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আয়াজ বাসায় আসেনি এখনো। মায়া চৌধুরী তার ছেলেকে বারবার কল দিচ্ছেন প্রতিবার কল কেটে দিচ্ছে আয়াজ। সকালেই তো বলে গেলো আজ’ই যেনো রুয়াতের সাথে তার বিয়ের তারিখ জানাতে ওই বাড়িতে যাবে। যে বলছে এখন তার খবর নেই। এক সময় রাগ করে মায়া চৌধুরী কল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ইনিমা তার শ্বাশুড়ির রুমে আসে। এসে দেখে তিনি মুখটা ছোট করে বসে আছে। আর নিচে ফজলুল চৌধুরী সোফায় বসে বসে খবর দেখছে।
-‘মা কি হয়েছে বসে আছেন যে এভাবে?’
চিন্তিত স্বরে মায়া চৌধুরী বললেন-
-‘আয়াজ এখনো এসে পৌছায়নি। আমরা তো রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু ওর আসার নাম নেই।’
-‘মা হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছে চলে আসবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আর যেহেতু আয়াজ সকালে বলেছে আজ আমাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসবে তার মানে সে যাবেই।’
মায়া চৌধুরী এখনো স্থির হয়ে বসতে পারছেন না।
-‘আজ ও তাকে ব্যস্ত থাকতে হবে? আরহাম কে ডেকে আনো যাও।’
ইনিমা গিয়ে আরহাম কে ডেকে আনে। আরহাম এসে মায়ের পাশে বসে বলে-
-‘কি হয়েছে মা?’
-‘দেখ না বাবা আমি তোর ভাইটা কে কতোবার কল দিলাম ধরেনি। তুই ওকে কল দে। কতক্ষণে যাবো আমরা?’
-‘দিচ্ছি কল। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।’
আরহাম উঠে বাহিরে চলে যায়। সে ও আয়াজ কে কল দিচ্ছে কিন্তু আয়াজ ধরছে না। কিছু সময় পর আয়াজের গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে । আরহাম সেদিক চেয়ে আছে। মহাশয় গাড়ি থেকে নামছেন।
আরহাম আয়াজের সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু ধমক দিয়ে বলে-
-‘কল রিসিভ করে কি বলা যায় না আমি আসছি? মা কতো টেনশন করছে তোর জন্য।
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আয়াজ আরহামের দিকে তাকায়।
-‘সেরকম পরিস্থিতি থাকলে তো কল রিসিভ করা হতো।’
-‘মানুষের টেনশন তো তোর গায়ে লাগে না। আমিও বা কি বোকা এই পাথরের কি সেই ফিলিংস আছে নাকি?’
আয়াজ সামনের দিকে অগ্রসর হয়। ভাইয়ের এরূপ কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে কালো রঙের পাঞ্জাবী পড়ে নেয়। তারপর মায়ের রুমে যায়। আরহাম আগেই বলেছে আয়াজ এসেছে। কিন্তু মায়া চৌধুরী রাগ করে আর যায়নি ছেলের কাছে। তাই আয়াজ নিজ থেকেই আসে। মায়া চৌধুরী প্রথমে রাগ করে কথা বলেনি। ছেলের সাথে তো আর রাগ করে থাকা যায়না তাই অনেক পরে কথা বলেছে। আর এসব করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। ইনিমা আর আরহাম এক গাড়িতে গিয়েছে। পরের গাড়িতে আয়াজ, ফজলুল চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী আসছে।
মজুমদার বাড়িতে আয়াজের ঢুকার সাথে আগেই হান্নান মজুমদার এগিয়ে যায়। ফজলুল চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী জাফরি কে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। আয়াজ আরহাম এখনো ভিতরে যায়নি। দু’জন বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
আরহাম আয়াজের দিকে এগিয়ে আসে। কাঁধ বরাবর হাত রেখে বলে-
-‘শুন ভাই তখন মেয়েটার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তোর কারণে তার পরিবার ও তার মতামত নেয়নি। আমার একান্তই ইচ্ছা তুই রুয়াতের মতামত নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বলবি।’
আয়াজ হাসে আরহামের কথায়।
-‘এতো টান শালীকার জন্য?’
-‘রুয়াত কে আমি আমার বোনের মতো দেখি। সে হিসেবে আমি আমার মন্তব্য জানিয়েছি। বাকিটা তোর ইচ্ছে।’
আরহাম চলে যায়। ইনিমা দুই ভাইয়ের কথোপকথন শুনে ফেলে। আরহামের কথা বেশ পছন্দ হয় তার। আর যতোই আয়াজ আরহামের সাথে এসব কথা বলে দুষ্টুমি করে ভাইয়ের কথা কখনো ফেলে দেয় না সে। ইনিমা আয়াজ কে বলে ভিতরে আসার জন্য। আয়াজ ভিতরে আসে।
মায়া চৌধুরী মেহরুবার সাথে কথা বলছেন। ইনিমা এখনো রুয়াতের সাথে যায়নি। নিচে তার শ্বশুড়ের পাশে বসে আছে। আয়াজ আর আরহাম এক জায়গায় বসেছে। জাফরি সবার মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছে। রুমে একা একা বসে আছে রুয়াত। একটু আগে সায়রা এসে বলে গিয়েছে ওই বাড়ি থেকে
সকলে চলে এসেছে। রুয়াত আয়াজের কথা ভাবছে। প্রথমদিন আয়াজের কথায় বিয়েটা এক্সামের কারণে পিছিয়েছে। এখন তো এক্সাম শেষ। আর আয়াজ আজ কি বলে বিয়ে নিয়ে সেটাই ভাবছে। ‘বিয়ে’ কথাটি মনে পড়তেই বুক কেঁপে ওঠে রুয়াতের। সব কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার।
-‘ইনিমা চলো আমার সাথে। রুয়াতের সাথে দেখা করে আসি।’
ইনিমা মাথা নাড়িয়ে বলে-
-‘চলুন মা।
মায়া চৌধুরী আর ইনিমা রুয়াতের সাথে দেখা করতে যায়। রুয়াত তাদের দেখে দাঁড়িয়ে যায়। মায়া চৌধুরী রুয়াতের থুতনিতে হাত রেখে বলে-
-‘কেমন আছো মা?’
রুয়াত একবার ইনিমার দিকে তাকায়। হেসে উত্তর দেয়।
-‘ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’
-‘ আমি তো খুব ভালো আছি। কারণ এখন থেকে তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।’
রুয়াত বুঝেছে মায়া চৌধুরী কি বলতে চাচ্ছেন। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাসি দেয়। মায়া চৌধুরী কিছু সময় রুয়াতের সাথে বসে কথা বলে। ইনিমা ও ছিলো রুয়াতের পাশে। মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে নিচে চলে যায়। রুয়াত খুব মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনেছে। ইনিমার উঠে রুয়াতের সামনে দাঁড়ায়। মাথা তুলে দেখে তার বোন কে। একটু সংকোচ বোধ হচ্ছে ইনিমা কে তার মনের কথা বলবে কিনা!
-‘কিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস?’
ঢোক গিলে রুয়াত ইনিমার দিকে তাকায়। আবারও কাল করা আয়াজের বা’জে ব্যবহারের কথা মনে পড়ছে। রুয়াত ইনিমা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথেই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে তার। ইনিমা অবাক হয়ে বোনের পিঠে হাত রাখে। হঠাৎ রুয়াত কাঁদছে কেনো? তার মানে কি রুয়াত রাজি না এই বিয়েতে? এখনো কি মত দিতে পারেনি?
ইনিমা রুয়াত কে শান্ত করার চেষ্টায় আছে।
-‘কাঁদছিস কেনো বোন? তুই কি এখনো এই বিয়েতে রাজি না?’
দু দিকে মাথা নাড়ায় রুয়াত। কাঁদার ফলে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ইনিমা চেয়েও ছাড়াতে পারছে না।
-‘ কি হয়েছে বলবি তো। এভাবে অকারণে কেঁদে কোনো মানে আছে?’
কান্না জড়িত স্বরে রুয়াত বলে-
-‘আপু কাল ওনি আমায় বকেছে। বকার তো কোনো কারণ থাকা লাগবে। এই যে আমি এখন অকারণে একটু কাঁদছি না বরং কাল ওনি আমায় অকারণে বকেছেন। তুমি তো জানো আমি কারও জোরে কথা বলা সহ্য করতে পারি না। কাল ড্রাইভারের সামনে আমার সাথে জোরে কথা বলেছেন ওনি।’
বোনের কথায় ইনিমা হাসে। বয়স ১৯ এর গন্ডিতে আর এখন শিশুসুলভ আচরণ করছে রুয়াত। রুয়াতের জায়গায় ইনিমা হলে সহ্য করে নিতো। কিন্তু আয়াজ ভুলে বোধহয় রুয়াতের সাথে এমন করে ফেলেছে। রুয়াত সব মুখ বুজে সহ্য করতে পারলেও কারও জোরে কথা বলা সহ্য হয় না তার। এটা খুব ভালো করেই ইনিমা জানে। বোনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে-
-‘এখন থেকে সবকিছুর সাথে কারও জোরে কথা বলাটা ও সহ্য করে নিতে হবে। তুই কিন্তু এখনো আর ছোট নেই। বড় হয়েছিস। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখতে হবে তোর। আর আয়াজের হয়তো কিছু কারণে মাথা গরম ছিলো তাই এমন করেছে।’
রুয়াতের কান্না হুট করেই বন্ধ হয়ে যায়। ইনিমার শক্তপোক্ত স্বরের কথায় মাথা নাড়ে। রুয়াতের রুম থেকে বের হয়ে আসে ইনিমা।
.
-‘ভাই সাহেব আপনি বিয়ের তারিখটা ঠিক করলে আমি খুশি হবো।’
হান্নান মজুমদার আর ফজলুল চৌধুরী কে রুয়াত আর আয়াজের বিয়ে ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফজলুল চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আয়াজ বলে উঠে
-‘আমি রুয়াতের সাথে একটু কথা বলে আসছি। এর আগে কেউ বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন না।’
আয়াজের কথায় সহমত জানান তারা। আয়াজ উঠে রুয়াতের রুমের দিকে যায়। আরহাম হাসছে আনমনে। তার ভাই তার কথাটি মোটেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফেলে দেয়নি। একটু আরামসে নড়েচড়ে বসে সে।
রুয়াত ওয়াশরুম থেকে মুখটা ধুয়ে আসে। প্রচুর খারাপ লাগছে তার। হঠাৎ আয়াজ এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। এমন সময়ে আয়াজ কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে রুয়াত।
-‘রাগ করে আছো খুব ভালো করেই জানি। আর রাগ করেই যে চোখ মুখের এই অবস্থা বানিয়েছো সেটাও ভালো করে জানা আছে আমার। সোজাসাপ্টা কথা বলছি, তোমার আর আমার এনগেজমেন্টের সময় আমি তোমার মতামত নেইনি। তখন তুমি আমায় ভালোবাসো নি। তাই খুব ভালো করেই জানতাম তুমি প্রথমেই আমাকে রিজেক্ট করে দিতে। তখন সম্পুর্ণ আমার মতামতে এনগেজমেন্ট হয়। আমি বলেছিলাম বিয়ের আগে তোমার মতামত নিবো। তুমি অনুমতি দিলেই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে। তুমি আমায় ভালোবাসো। মুখে প্রকাশ না করলেও কাজ কর্মে বুঝেছি। ভালোবাসো না আমায়?’
রুয়াত একটু পিছিয়ে যায়। তা দেখে আয়াজ বলে-
-‘উহুম পিছোবে না। যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। নাহয় আমি আসতে বাধ্য হবো।’
পা থেমে যায় রুয়াতের।
-‘বিয়েতে রাজি তুমি?’
রুয়াত গলার স্বর শক্ত করে।
-‘না।’
কথাটি যেনো আয়াজের বুকে এসে লাগে। রাগে রুয়াতের সামনে এসে তার হাত চেপে ধরে।
-‘সামান্য একটু রেগে কথা বলায় এতো রাগ হয়েছে তোমার?’
পরক্ষণেই আয়াজ থামে। শান্ত হয়। রেগে নয় ভালো করে বুঝাতে হবে। গলার স্বর একটু নরম করে বলে-
-‘শুধু রাগটাই দেখেছো প্রেয়সী? আমি যে প্রচন্ড ভালোবাসি তোমায় সেটা দেখোনি? রাগ করো না। তোমার ‘না’ বলা শব্দ বাদ দিয়ে হ্যাঁ বলো। আমি সত্যিই আর কখনো তোমার সাথে জোরে কথা বলবো না। কক্ষনো আমার জানটা কে কষ্ট দিবো না। রাজি হয়ে যাও না।’
আপাদমস্তক চেয়ে আছে রুয়াত। বিয়েতে রাজি করানোর জন্য কতো আহাজারি তার এমপি সাহেবের। আয়াজ কে অবাক করে দিয়ে রুয়াত জড়িয়ে ধরে তাকে।
-‘আমি আগে থেকেই রাজি ছিলাম। শুধু আপনার রাগ ভাঙানোটা দেখতে চেয়েছিলাম। বিয়ে আমি রাজি রাজি রাজি।’
আয়াজ হেসে রুয়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
-‘উহু বিয়ের আগে এসব ভালোবাসা নয়।’
রুয়াত লজ্জায় মুখে হাত দিয়ে ফেলে। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে।
#চলবে….