হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব -২০+২১

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_২০
#মোহনা_হক

-‘আপনারা বিয়ের তারিখ ঠিক করতে পারেন এবার।’

উপস্থিত সবাই আয়াজের মুখপানে তাকায়। ফজলুল চৌধুরী মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আয়াজের পিছনে রুয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজ সেখান থেকে সরে আসতেই রুয়াত কে দেখেই শাহরীন তার কাছে যায়।

-‘হান্নান সাহেব আপনি যদি আমাকে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বলেন তাহলে আমি বলবো ১১ ই এপ্রিল মানে পরশুদিন বিয়েটা হোক। আর বিয়ের তারিখ পেছানো হলে আয়াজের সমস্যা হবে। কারণ সামনেই ইলেকশন আর এই মুহুর্তে তার কাজের চাপ খুব বেশি। আপনারা সবাই যদি সম্মতি জানান তাহলে পরশুদিনই বিয়েটা হবে।’

প্রথমে হান্নান মজুমদার ঠিক মানতে রাজি হলো না। কারণ এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিবে একটু তো সবকিছু গোছানো লাগবে। আর তিনি চান তার একমাত্র মেয়ের বিয়েটা দুমদাম করে দিতে। তাই তিনি একটু আকটু করে সবকিছুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আবার ফজলুল চৌধুরীর কথা ও ফেলে দিতে পারেননি। একবার তিনি তার স্ত্রী মেহরুবার দিকে তাকান। মেহরুবা মাথা নেড়ে বোঝায় সে রাজি আছেন। কিছু বলার আগে হান্নান মজুমদার গলাটা পরিষ্কার করে নেয়। শান্ত স্বরে বলে-

-‘আমি আপনার কথা মেনে নিচ্ছি ভাই সাহেব। আপনি যেটা বলেছেন তাই হোক।’

আমজাদ সাহেব আর আরহাম একসাথে হেসে দেয়। খুশিতে মেহরুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঠিক এরকম অনুভূতিটা ইনিমার বিয়ের সময় ও হয়েছিলো। মায়া চৌধুরী আয়াজের পাশে দাঁড়ায়। আর তাহার দৃষ্টি রুয়াতের পানে। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলছে। মনে অসংখ্য খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আরহাম ও এসে আয়াজের পাশে দাঁড়ায়। আয়াজ আরহামের দিকে তাকায়। কিন্তু আরহাম মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছে। তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলছে

-‘তোমার ছোট ছেলের বউ আসছে এবার। এখন যদি তোমার ছেলেকে একটু মানুষ করতে পারে আরকি।’

মায়া চৌধুরী তার বড় ছেলের কথায় হাসলেন। আয়াজ আড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আরহাম একটা মেকি হাসি দিলো। এরপর ভাব দেখিয়ে তার শালীকার কাছে চলে যায়। আরহাম কে দেখেই রুয়াত মাথা তুলে তাকায় সেদিকটায়।

আরহাম হেসে বলে-
-‘কংগ্রাচুলেশনস শালীকা।’

সৌজন্যবোধক হাসে রুয়াত। সবাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিভাবে কি করবে। হান্নান মজুমদার তিনি তার সিদ্ধান্ত জানানোর আগে আয়াজ কে জিগ্যেস করে বিয়ের তারিখের ব্যাপারটা। সে রাজি হয়। অতঃপর আয়াজের অনুমতি নিয়েই পরশুদিন বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। মাঝখান দিয়ে রইলো আর মাএ একটা দিন। বিয়েটা খুব দুমদাম করেই হবে। আয়াজ তার সব মতামত জানিয়ে দিলো। ফজলুল চৌধুরী আর হান্নান মজুমদার মেনে নিয়েছেন। এসবের মাঝে রুয়াতের বেশ অস্বস্থি লাগছিলো। তাই শাহরীন কে নিয়ে অন্য একটা রুমে চলে আসে। চৌধুরী বাড়ির সবার যেতে যেতে প্রায় রাত এগারোটার উপর বেজে গিয়েছিলো। যদিও তাদের থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু মায়া চৌধুরী কোনো মতেই রাজি হলো না। কারণ তাদের ও তো সবকিছু গোছানো লাগবে।

ইনিমা থেকে গেলো। মায়া চৌধুরী বলেছেন কাল আরহাম কে পাঠাবে এতো রাতে ইনিমা কে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টায় মত দিতে পারেনি। সে হিসেবেই ইনিমা আজ থেকে গিয়েছে। কাল রুয়াত আর আয়াজের হলুদ অনুষ্ঠান করা হবে। এই অনুষ্ঠান ফজলুল চৌধুরী চেয়েছে তাদের বাসায় হোক। তাই কাল আয়াজ আর রুয়াতের হলুদ চৌধুরী বাড়িতে দেওয়া হবে। হান্নান মজুমদার আজ সারারাত ঘুমাবেন না বলে দিয়েছেন। রুয়াতের বড় মামী, মেহরুবা, আমজাদ সাহেব, আর হান্নান মজুমদার সবাই মিলে লিস্ট তৈরি করছেন। আর তাদের লিস্ট তৈরি করতে করতেই প্রায় ভোর পাঁচটা বেজে যায়। শাহরীন সবাইকে বললো তারা আজ সবাই মিলে আড্ডা দিবে। ইনিমা, সায়রা, রুয়াত রাজি হয় শাহরীনের কথায়। বাসার প্রত্যেকটা মানুষ ঘুমোয়নি। এবার যেনো বিয়ে বিয়ে লাগছে। বিয়ের একটা আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। শাহরীন বুদ্ধি করে রুয়াতের দু’হাতে মেহেদী পড়িয়ে দেয়। খুব সুন্দর করেই পড়িয়ে দিয়েছে। আবার হাতের তালুর মাঝ বরাবর “Ayaz” নামটিও লিখে দিয়েছে। রুয়াত কিছু বললো না শুধু তাকিয়েছিল। আয়াজ নামটা এখন তার খুব পছন্দের। আর তার সাথে মানুষটাও। আনমনে হাসে রুয়াত।

.

মোটামুটি দুপুর বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে রুয়াত। তার পাশেই জাফরি ইনিমা শুয়েছিলো। চোখ খুলতেই দেখে তারা উধাও। বাসায় কোনো সাড়াশব্দ নেই। সবাই কোঁথায় কে জানে। ফ্রেশ হয়ে রুয়াত নিচে নামে। রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসছে। সেখানে গিয়ে দেখে মেহরুবা দাঁড়িয়ে নাস্তা রেডি করছে। ঘুম এখনো ঠিক মতো হয়নি রুয়াতের। বারবার চোখ ডলছে। যেনো ঘুমটা চলে যায়। কিন্তু ঘুম তো গেলো না উল্টো চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেলো। এক সময়ে রুয়াত রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। মেহরুবা তার মেয়ের দিকে তাকালেন।

-‘কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’

ঘুম ঘুম স্বরে রুয়াত বলে-
-‘আপু আর জাফরি কোথায়? রাতেও তো আমার পাশে শুয়েছিলো।’

মেহরুবা চা বানাচ্ছেন। আর মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।
-‘আরহাম এসে নিয়ে গিয়েছে তাদের।’

রুয়াত ছোট করে বললো-
-‘ওহ্। কিন্তু বাসার সবাই কোঁথায়?’

-‘আমি বাদে সবাই শপিংয়ে গিয়েছে। অনেক কেনাকাটা করা লাগবে তো। সকালে তোর দু মামা এসে পড়েছে। তোর বাবা কে হেল্প করার জন্য। আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি নাস্তা দিচ্ছি তোদের। সাথে শাহরীন আর সায়রা কে ও আনিস।’

মাথা নেড়ে চলে যায় রুয়াত। রুমে গিয়ে তাদের ডাকে। একসাথে নাস্তা সেরে নেয়। আর এইদিকে সবাই এসে গিয়েছেন। বাড়ি ডেকোরেশন করার লোকদের রুয়াতের বড় মামা নিয়ে এসেছেন। তারা আসামাত্রই কাজ শুধু করে দেয়। শাহরীন খুলে খুলে দেখছে সবকিছু। সোফায় বসে রুয়াত চা খাচ্ছে আর তার ছোট মামার সাথে কথা বলছে। বয়সে বেশ কয়েক বছরের বড় হলেও একদম তাদের সমবয়সীদের মতো চলাফেরা কথাবার্তা। এই একটি মানুষের সাথেই রুয়াতের জমে বেশি।

মজুমদার বাড়ির চারপাশে বেশ কয়েক রঙের লাইট ও জ্বালানো হয়েছে। সেরকম ভাবে স্টেজ করা হয়নি কারণ বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারেই হবে। বিকেল 3টায় রুয়াত কে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে তিনজন মহিলা আসে। মুলত শাহরীন তার খালামণি কে রাজি করিয়ে আনিয়েছে তাদের। মেহরুবাও আর মানা করেনি কারণ বিয়ে তো একবারই হয়। মেয়েকে একটু সুন্দর সাজে দেখতে চান তিনি। রুয়াত কে আজ সবুজ জামদানী শাড়ি দেওয়া হয়েছে। আর মেকওভার আর্টিস্টরা রুয়াত কে সেরকম’ই শাড়ির সাথে মিল রেখে মেকআপ করিয়ে দিয়েছে। নিজেকে আয়নাতে এতো ভারি মেকআপে দেখে রুয়াত একটু ভড়কে যায়। নিজের কাছেই নিজেকে খুব অচেনা মনেহচ্ছে। শাহরীন আর সায়রা ও সেজে নেয় তাদের কাছে। ওদের মেকআপ শেষ হলে রুয়াতের খালামণি সাহেদা রুমে আসে।

-‘তোদের হয়েছে? আপা বকাবকি করছে।’

সায়রা উত্তর দেয়।
-‘হয়েছে আম্মু। তুমি খালামণি কে বলো আমরা আসছি।’

সাহেদা নিচে চলে যায়। বের হওয়ার সময় রুয়াত আবারও নিজেকে দেখে নেয়। তার কাছে নিজেকে খুব অদ্ভুত লাগছে আজ। শাহরীন রুয়াত কে ধরে ধরে নিচে নামায়। হাতের চুড়িগুলো খুব বেশি ভারী ছিলো আর চুড়ির ঝুমকো গুলোও বেশ লম্বা ছিলো তাই শাহরীনের সাহায্য নেয় সে। হান্নান মজুমদার সবাই কে এক এক করে গাড়িতে তুলে দিচ্ছে। রুয়াত তার পাশে দাঁড়াতেই তিনি একবার মেয়ের দিকে তাকালেন। চোখের কার্ণিশে পানি এসে জমা হয়। হান্নান মজুমদার তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। মনেহচ্ছে তার মেয়েটা একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে। রুয়াত চুপটি করে তার বাবার বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে। মেহরুবা এসে তাদের ছুটিয়েছে। হান্নান মজুমদার ছাড়তেই চাইছিলেন না। গাড়িতে গান দেওয়া হয়েছে। রুয়াতের এক পাশে শাহরীন আরেক পাশে তুলি বসেছে। রুয়াতের শাড়ির সাথে ম্যাচ করা আনা দোপাট্টা পড়ানো হয়নি। তাই গাড়িতে বসেই শাহরীন রুয়াতের দোপাট্টাটা পড়িয়ে দেয়।
.
চৌধুরী বাড়িতে মানুষের সমাগম বেড়েছে খুব। আজ সারাটা দিন আরহাম আর ফজলুল চৌধুরী মানুষদের দাওয়াত দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাসার আশেপাশে গার্ডদের সংখ্যা আজ খুব বেশি। আয়াজ তার গুরুত্বপূর্ণ কাছের মানুষদের স্পেশাল ভাবে ইনভাইট করেছিলো। প্রেসদের ও দেখা যাচ্ছে আজ। আরহাম তাড়াতাড়ি কোনোমতে রেডি হয়েছে। আজ দু দন্ড শান্তিতে বসতে পারেনি। বিশ্রাম নেওয়ার ও সময় পায়নি। আর এইদিকে ইনিমার হয়েছে নাজেহাল অবস্থা। জাফরির জ্বর এসেছে যার কারণে মেয়েটা আজ জ্বালিয়ে মারছে।
রুমের মধ্যে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে আয়াজ। প্রায় সবদিক সামলে এখন সে ক্লান্ত। রুমে এসেছে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। একটু পর উঠে যাবে আবার। কিন্তু সে আর ঘুমোতে পারলো না। আরহাম কল দিয়েছে। মাথা তুলে দেখে স্ক্রিনে আরহামের মোবাইল নাম্বার ভাসছে। বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে।

-‘বলো। তোমাকে বলে এসেছি না আমি একটু রেস্ট নিতে যাচ্ছি?’

আরহামের যেনো এখন দুষ্টুমি করার সময় যে ভাইকে কল দিয়ে একটু বিরক্ত করবে। রেগে বলে-

-‘তোকে অযথা কল দেওয়া মতো সময় আমার নেই। কল দিয়েছিলাম একটা কারণে। সারা বাড়ি জুড়ে সাংবাদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রুয়াতদের যদি গেইটের সামনে ধরে তখন? তারা ঠিক কেমন মানুষ তোর থেকে ভালো কে জানে? রেডি হয়ে নিচে আয়। আমি একা এদের সামলাতে পারবো না।’

উঠে বসে আয়াজ।
-‘আসছি আমি।’

আয়াজ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে। সবুজ কালার পাঞ্জাবি পড়ে নেয়। তার উপর গোল্ডেন কালার কটি পড়ে। রেডি হওয়া শেষে নিচে আসে।
মজুমদার বাড়ির অতিথিদের আগমন হয় অবশেষে। এতক্ষণ প্রেসদের সাথে আয়াজ আর আরহাম কথা বলছিলো। গেইটের কাছেই ছিলো তারা। গাড়ি ঢুকতেই গার্ডদের ইশারা করে এগিয়ে যেতে। আরহাম আর আয়াজ সবাইকে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়। রুয়াত এখনো নামে নি। যে গাড়িতে রুয়াত ছিলো ও গাড়ির কেউই নামেনি। গাড়ির দরজা খুলে দেয় আয়াজ। রুয়াত গাড়ি থেকে নামে। আর তার প্রেয়সীর এরূপ রূপ দেখে আয়াজের হৃদয় থমকে যায়। বুকের মধ্যিখানে ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে। বড়সড় ঢোক গিলে। অন্য রকম সুন্দর লাগছে রুয়াত কে। গাড়ি থেকে রুয়াত বের হতেই প্রেস ঘিরে ধরে তাদের। আচমকা এমন হওয়াতে ভয় পায় রুয়াত। আয়াজের হাতের পাঞ্জাবী খামচে ধরে। একবার পিছন ফিরে দেখে আয়াজ। রুয়াতের হাত তার হাতের মুঠোয় নেয়।

স্টেজে রুয়াত বসে আছে। আয়াজ এখনো আসেনি। আজ একবারও ইনিমার সাথে দেখা হয়নি। আসার সাথে সাথে মায়া চৌধুরী তাকে স্টেজে বসিয়ে দেয়। রুয়াত একা স্টেজে বসে থাকলেও সামনে তার সব চিরচেনা মানুষ জন। আরহাম এসে আয়াজ কে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে যায়। একবার প্রেয়সীর পানে চায় তার অবাধ্য প্রেমিক পুরুষ। ক্যামেরা ম্যান ছবি তুলছে। কিন্তু আয়াজ কে ভয়ে কিছু বলতে পারছে না কিভাবে ছবি তুললে ভালো লাগবে। আয়াজ একটু রুয়াতের কাছে এসে বসে। পাশ ফিরে রুয়াত আয়াজ কে একবার দেখে নিলো।

-‘হাতে আমার নাম লিখেছো?’

চোখ বড় বড় করে আয়াজের দিকে তাকায় রুয়াত। আয়াজ তার হাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। মাথা নাড়ায় সে।

-‘শাহরীন আপু লিখে দিয়েছিলো।’

শান্ত স্বরে আয়াজ বললো-
-‘নিজ থেকে আমার হাত ধরো।’

-‘বুঝিনি।’

বিরক্তিকর শব্দ করলো আয়াজ।
-‘না বোঝার কি আছে? তুমি ইচ্ছে করে আমার হাত ধরো।’

-‘উহু অনেক মানুষ আছে দেখছেন তো।’

-‘ধরতে বলেছি। নাহয় আমি কিন্তু এখান থেকে উঠে চলে যাবো।’

রুয়াতের মনটা খারাপ হয়ে যায়। আয়াজের হাত ধরে। হাসছে আয়াজ। রুয়াত একটু তাকালো আয়াজের দিকে নিজে লজ্জ্বায় ধরতে পারছে না উল্টো তাকে বলেছে হাত ধরতে। রুয়াত আর আয়াজ স্টেজে বসে বসেই আজকের অনুষ্ঠান উপভোগ করে। সবাই একটু একটু করে হলুদ লাগায় তাদের। একবার জাফরি রুয়াত কে অনেকগুলো হলুদ লাগিয়ে দেয় মুখে। আয়াজ তা টিস্যু দিয়ে মুছে দিয়েছে। ক্যামেরাম্যান একট সুযোগ পেয়েছে ইচ্ছেমতো ছবি তুলে ফেলেছে।

রাত নয়টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়। এবার রুয়াতের বাসায় যাওয়ার পালা। আরহাম সবাইকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আয়াজ নিয়ে আসছে রুয়াত কে। মাঝপথে থামে তারা।

আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে টেনে তার কাছে আনে।
-‘আর মাএ একদিন প্রেয়সী। তারপর তুমি আমার হয়ে যাবে। আর কোনো বাঁধা থাকবে না আমাদের মাঝে। নিজেকে আয়াজের নামে করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও। তোমার এমপি সাহেব তোমাকে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।’

রুয়াতের কপাল বরাবর কপাল ঠেকায় আয়াজ।
মোলায়েম স্বরে বলে-

❝এই মন তোমাকে দিলাম।
এই প্রেম তোমাকে দিলাম প্রেয়সী।❞
#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_২১ [বিয়ে স্পেশাল]
#মোহনা_হক

মজুমদার বাড়িতে ব্যস্ততা বেড়েই চলছে। ১১ই এপ্রিল অর্থাৎ আজ রুয়াত আর আয়াজের শুভ বিবাহ এর দিন। সঠিক একটা সময় দেওয়া হয়েছে। হান্নান মজুমদার সেই অনুযায়ী সময় বজায় রেখে কাজ শুরু করেছেন। কোনো কাজকেই হেরফের করেননি। কাল চৌধুরী বাড়ি থেকে আসার পর কেউ একটু ঘুমাতে পারেনি। সকাল হতেই না হতেই শাহরীন ছুটেছে রুয়াত কে নিয়ে পার্লারে। এতো সকাল রুয়াতের ও যেতে ইচ্ছে করছিলো না। শাহরীন ধরে বেঁধে নিয়ে গিয়েছে তাকে।

চৌধুরী বাড়িতেও ঝামেলা কম যাচ্ছে না। এখানে আত্ময়ীদের থেকে বাহিরের মানুষ বেশি। কড়া সিকুউরিটি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যাদের কাছে কার্ড আছে তারাই ঢুকতে পারবে। মায়া চৌধুরী ইনিমা কে দিয়ে আয়াজ কে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। কেউ যেনো ডাকতে না পারে তাই রুম লক করে রেখেছিলো আয়াজ। ফজলুল চৌধুরী আর আরহাম সেই সেন্টারে গিয়েছেন যেখানে বিয়েটা হবে। আগের দিন রাতেই সব ডেকোরেশন কমপ্লিট করা হয়। এমপির বিয়েতে কোনোরকম ত্রুটি রাখবে না ফজলুল চৌধুরী।

(*)

প্রায় একটার সময় উঠে ফ্রেশ হয় আয়াজ। একবার ব্যালকনি থেকে ঘুরে আসে। বেডের উপর থেকে মোবাইল নেয়। সময় দেখে নিলো। আজ রুয়াত আর সে একসাথে একই গাড়ি করে সেন্টারে যাবে। চারপাশ নিরব তার মানে ঝড় আসার পূর্বাভাস। আর আয়াজ কখনোই চায় না তার জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা মোমেন্টে কোনো রকম ঝামেলা হোক। সে কোনোমতেই রুয়াত কে নিয়ে রিস্ক নিতে চায় না। কাল যেহেতু রুয়াত কে প্রকাশ্যে এনেছে তার মানে শত্রুরা তো আর হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবে না। বিশেষ করে ইকরামুল কে কোনো প্রকার ভরসা সে করে না।
আয়াজ রুয়াতের নাম্বারে কল দেয়। ভেবেছিলো রিসিভ করবে না। বন্ধ বলবে। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে কল রিসিভ করে রুয়াত।

অস্থির কন্ঠে আয়াজ বলে-
-‘কোঁথায় তুমি? বাসায়?’

একটু ভ্যাবাচ্যাকা খায় রুয়াত। অসময়ে আয়াজের কল পেয়ে একটু অবাক ও হয়।

-‘না আমি পার্লারে এসেছি।’

আয়াজ কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর আবারও বললো-‘
-‘পার্লার থেকে বের হওয়ার সময় কল দিবে আমায়। আমি তোমায় নিতে আসবো। আর লোকেশনটা একটু পাঠিয়ে দিও।’

মাত্র রুয়াত হাঁ করলো কিছু বলতে যাবে তার আগেই কল কেটে দেয় আয়াজ। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রুয়াত। লোকটার একটু মায়া দয়া বলতে কিছুই নেই। আর সেই লোক তার ভাগ্যে জুটেছে। রুয়াত তার মোবাইল শাহরীনের কাছে দিয়ে বললো এই পার্লারের লোকেশন আয়াজ কে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিতে। শাহরীন ও তাই করলো। মেহরুবা তার ছোট ভাই কে নিয়ে পার্লারে আসে। আয়াজদের বাসা থেকে গয়না, লেহেঙ্গা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো নিয়েই এসেছে। আবার জিনিসপত্র দিয়ে বিল পেমেন্ট করে দু’জন চলে গিয়েছে।

রুয়াতের সাজ শেষ হতে হতে প্রায় পাঁচটার মতো বেজে যায়। সেই সকালে এসেছে তারা। মুলত সবকিছু করতে করতে প্রায় পাঁচটার মতো বাজে। রুয়াতের সাজ সম্পুর্ণ কমপ্লিট হয়েছে। মেকআপ আর্টিস্টরা কালকের তুলনায় আজকে আরও অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। শাহরীন তাদের কাজের খুব প্রশংসা করলো। আর রুয়াত কে দেখতেও অপরূপ সুন্দরী লাগছে। পার্লার থেকে বের হওয়ার ১০ মিনিট আগে
রুয়াত আয়াজ কে কল দেয়। রিসিভ করার পর জানিয়েছে সে আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে। আয়াজ বেশ কয়েক মিনিট পর আসলো। রুয়াত সিড়ি দিয়ে নামতে পারছে না। এতো ভারী লেহেঙ্গা। আয়াজ পার্লারের ভিতর আসে রুয়াতের জন্য। প্রথমে তার প্রেয়সীর দিকে না তাকালেও একবার চোখ যায় রুয়াতের উপর। কখনো বিয়ের সাজে রুয়াত কে কল্পনা করেনি। কিন্তু আজ তার মনেহচ্ছে হয়তো কল্পনা করলে আজকের রুয়াত সাজের কাছে সেই সাজ বড্ড বেমানান লাগতো। লেহেঙ্গার এক পাশ আয়াজ ধরে আরেক পাশ শাহরীন ধরে রুয়াত কে গাড়িতে তুলে।

শাহরীন কে রুয়াতদের বাসার সামনে নামিয়ে দেয়। কারণ সে এখনো রেডি হয়নি। আয়াজ কে বলার পর আয়াজ তাকে রুয়াতদের বাসার সামনে নামিয়ে রুয়াত কে নিয়ে সোজা সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এতক্ষণ গাড়িতে শাহরীন থাকার কারণে আয়াজ একদম চুপ হয়েছিলো। টু শব্দটি ও করেনি। এখন সে তার প্রেয়সীকে একটু একা পেয়েছে। রুয়াতের দিকে ঘেঁষে বসলো।

একটু নিচুস্বরে আয়াজ বলে-
-‘সুন্দর লাগছে খুব।’

আচমকা আয়াজের এরূপ কথা শুনে হকচকিয়ে যায় রুয়াত।
-‘আমাকে পার্লার থেকে আপনি এনেছেন কেনো? আমি তো আমার বাবা মায়ের সাথেও আসতে পারতাম।’

আয়াজ রুয়াতের হাত তার হাতের মুঠোয় পুড়ে।
-‘উহু তুমি আমার সাথে যাবে। আমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে তোমার পাশে ভরসা করতে পারি না। এমনটা না যে তোমার বাবা মা কে আমি ভরসা করি না। আমি চেয়েছি তুমি আর আমি একসঙ্গে যাবো।’

রুয়াত ঘাড় ঘুরিয়ে আয়াজ কে দেখে। আয়াজ গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানী পড়েছে। রুয়াতের লেহেঙ্গার সাথে অনেক মিল রয়েছে। হয়তো আয়াজ নিজ ইচ্ছেতেই এমন এমন ম্যাচিং কিনেছে সব। মানুষটা কে ও আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। লজ্জায় রুয়াত মুখ সরিয়ে নেয়।

আয়াজ তার প্রেয়সীর এমন কান্ডে হেসে দেয়।
-‘নিজ ইচ্ছেতেই আমার দিকে তাকাও আবার নিজেই লজ্জা পাও!’

.

কালকের মতো আজও কিছুর ব্যতিক্রম হলো না। গাড়ি থেকে নামতেই প্রেসের লোকজন ঘিরে ধরে। এদের আর কাজ নেই এই ছাড়া। ফজলুল চৌধুরী, আরহাম আর হান্নান মজুমদার এগিয়ে আসে তাদের নেওয়ার জন্য। রুয়াতের বাড়ির লোকেরা অনেক আগেই চলে এসেছে। আয়াজ হান্নান মজুমদারের হাতে রুয়াতের হাত দিয়ে বলে রুয়াত কে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার প্রেয়সীর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো কতোটা অস্বস্থি ফিল করছে। হান্নান মজুমদার রুয়াত কে নিয়ে ভিতরে চলে আসে। ইনিমা জাফরি কে নিয়ে রুয়াতের কাছে আসে। একটা সোফায় বসানো হয়েছে রুয়াত কে। আর বাহিরে আয়াজ প্রেসের লোকদের সাথে কথা বলছে। একের পর এক প্রশ্ন করছে তাকে। ছাড়তেই চাইছেনা। এক সময় আরহাম কে কল দেয় আয়াজ। তারপর সে এসে প্রেসের লোকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে আয়াজ কে সেখান থেকে নিয়ে আসে। অনেক পলিটিশিয়ানরা বিয়েতে আসে। আয়াজ তাদের সাথেই কথা বলছে। সাহেদের পুরো পরিবার ও এসেছে। আয়াজ নিজে গিয়ে তাদের বলে এসেছিলো।

মোটামুটি একটা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই বিয়েটা শেষ হয়। কবুল বলার সময় মেহরুবা আর হান্নান মজুমদার রুয়াতের পাশেই ছিলো। একদিক দিয়ে রুয়াত কেঁদেছে অন্য দিক দিয়ে তারা কেঁদেছেন। বিয়েটা শেষ হতেই প্রায় অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। এবার বিদায়ের পালা। অনেক আগে থেকেই মেহরুবা রুয়াতের পাশ থেকে সরে আসে। মেয়ের সামনে কাঁদলে তার মেয়ের মন ছোট হয়ে যাবে। তাই অন্য একটা জায়গায় এসে অনেক্ক্ষণ যাবত চোখের পানি ফেলছেন। রুয়াতের ফুপি, মামী মেহরুবা কে স্বান্তনা দিচ্ছেন। কিন্তু তার কান্না বন্ধ হচ্ছেনা। মেয়ের বিদায়ের সময় মায়ের কেমন অনুভূতি হয় সেটা একমাত্র মায়েরাই বুঝতে পারে।

রুয়াতের পাশে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। হান্নান মজুমদার মেয়েকে বোঝাতে গিয়ে নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর এইদিকে কাঁদতে কাঁদতে রুয়াতের অবস্থা নাজেহাল। কিছু কিছু মেকআপ নষ্ট হয়ে যায় একদম।

হান্নান মজুমদার আয়াজের হাতে রুয়াতের হাত মিলিয়ে দেয়। কান্নারত অবস্থায় বলে-

-‘বাবা আমার মেয়েটা কে তোমার হাতে খুব ভরসা করে তুলে দিলাম। আমার মেয়েকে ভালো রেখো।’

হান্নান মজুমদার মেয়ের কান্না সইতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসে। ইনিমা আরহামের পাশে এসে দাঁড়ায়। আরহাম ইনিমার দিকে বে’ক্ক’লের মতো তাকিয়ে আছে।

-‘ওমা তুমি কাঁদছো কেনো? তোমার সাথেই তো এখন থেকে রুয়াত থাকবে।’

ইনিমা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিয়েছে। রাগী স্বরে আরহাম কে বলে-

-‘তুমি বুঝবে কি? পুরুষ মানুষ কি আর এসব বুঝে?’

আরহাম মুখটা ভেঙচি দিলো। এভাবে কাঁদার কি আছে একটু পর রুয়াত ও তো ইনিমার সাথে যাবে। একসঙ্গে থাকবে। একদম ফাও কাঁদছে।

-‘শুনো মা আসেনি রুয়াতের সাথে দেখা করতে। তুমি একটু যাও না নিয়ে আসো মা কে। একটু পরই তো রুয়াত কে নিয়ে চলে যাবো আমরা।’

মেহরুবা কে নিয়ে আসতে যায় আরহাম। কোনো মতেই তিনি রাজি হচ্ছিলেন না রুয়াতের সাথে দেখা করতে। দূর থেকেই এতো কষ্ট হচ্ছে মেয়ের মুখোমুখি দাঁড়ালে তো কলিজা ছিঁড়ে যাবে। আরহাম জোর করে মেহরুবা কে নিয়ে আসে। রুয়াত একটু পর চলে যাবে এখন তার সাথে দেখা না করলে পরে তার’ই বেশি কষ্ট লাগবে। এই ভেবে আরহাম জোর করে নিয়ে আসে মেহরুবা কে।
রুয়াত তার মাকে দেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আয়াজ পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য। রুয়াতকে মানা করার পর ও বেঘোরে কাঁদছে। মেহরুবা রুয়াত কে ছেড়ে আয়াজের কাঁধে হাত দিয়ে বলে-

-‘বাবা আমার মনে হচ্ছে আমি আমার কলিজা ছিঁড়ে তোমার হাতে দিচ্ছি। শুধু একটা কথাই বলবো আমার কলিজাটা যেনো তোমার কাছে ভালো থাকে।’

রুয়াতের বড় মামী এসে তাকে নিয়ে যায়। সবার চোখেই পানি। এক সময় রুয়াত কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যায়। ইনিমা তাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। রুয়াতের হাত পা যেনো ভেঙে আসছে এমন অবস্থা। গায়ে এক ফোঁটাও শক্তি। মোটামুটি সব মেহমান চলে গিয়েছে। এখন যারা আছে সবাই তাদের আত্মীয়।

-‘আয়াজ চল বাসায়। এখানে আর আমাদের কোনো কাজ নেই। অলরেডি একটা বাজতে চললো। আর রুয়াত মনেহয় খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এখানে থাকা ঠিক হবে না।’

আরহামের কথায় আয়াজ তার দিকে তাকায়।
-‘রুয়াতের বাবা মা কে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছো তো?’

-‘হ্যাঁ সবাইকে পৌঁছে দিয়েছি শুধু আমাদের সাথে ইনিমাদের দুটো কাজিন যাবে।’

আয়াজ মাথা নাড়ায়। রুয়াত কে ধরে গাড়িতে তুলে। তাদের গাড়িতে সায়রা, তুলি আর ইনিমা বসে। পরের গাড়ি করে ফজলুল চৌধুরী আর আরহাম আসে। বাসায় আসার সাথে সাথেই মায়া চৌধুরী বেশিক্ষণ রুয়াত কে নিচে বসিয়ে রাখেননি। আয়াজের রুমে পাঠিয়ে দেন। আয়াজের রুমে এই পর্যন্ত গুণে গুণে চারবার এসেছে রুয়াত। সারা রুমে গোলাপ সহ আরও অনেক ফুল মিক্সড করে রুমটা সাজানো হয়েছে।
রুয়াত বেডের একপাশে বসলো। লেহেঙ্গা পড়ে আর বসে থাকতে পারছে না। হঠাৎ রুমে ইনিমা আসে। তার হাতে একটা ট্রলি।

-‘এভাবে বসে আছিস কেনো?’

-‘আপু মা আমার জামাকাপড় পাঠিয়েছে কিছু? আমি আর এই লেহেঙ্গা পড়ে থাকতে পারছি না।’

ইনিমা ট্রলি থেকে একটা ড্রেস বের করে দেয় রুয়াত কে। মুলত ড্রেসটা টপস টাইপের। এটা পড়লে রুয়াত কম্ফোর্ট ফিল করবে। ড্রেস রুয়াতের হাতে দিয়ে বলে-

-‘এখন এটা পড়। সকালে আমি এসে তোকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো।’

-‘আচ্ছা। লেহেঙ্গার ওড়নার পিনগুলো একটু খুলে দাও।’

ইনিমা রুয়াতের লেহেঙ্গার ওড়নার সব পিন খুলে দিলো। এর ফাঁকে আয়াজ রুমে আসে। ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়। কাজ শেষ হলে ইনিমা চলে যায়। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে ব্লু কালারের একটা টি-শার্ট পড়ে নিচ্ছে।

রুয়াতের উদ্দেশ্যে আয়াজ বলে-
-‘ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।’

মাথা নাড়ায় রুয়াত। অতঃপর ফ্রেশ হতে চললো। রুমের সোফায় বসে বসে আয়াজ মোবাইল দেখছে। একটু চারপাশের খবর নেওয়া দরকার। রুয়াত ফ্রেশ হয়ে আসে। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে আয়াজ সেদিকটায় তাকায়। হাতে তার বিয়ের লেহেঙ্গা। ট্রলির উপর লেহেঙ্গা রাখতেই আয়াজ একটু উচ্চস্বরে বলে উঠলো-

-‘হ্যাঙ্গারে রাখো।’

সেখানটায় রুয়াত লেহেঙ্গা রাখে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার গায়ের সব ভারী গহনাও খুলে ফেলে। এতক্ষণে যেনো দম ফিরে এসেছে। কি যে পরিমাণ অস্বস্থি লাগছিলো তার।

-‘একটু এখানে আসো রুয়াত। তোমার কপালে কি জানি লেগে আছে।’

রুয়াত আয়নায় দেখে নিজের কপাল। কিছুই নেই।
-‘কোঁথায় কিছু তো নেই।’

বিরক্তিকর শব্দ করলো আয়াজ।
-‘এদিকে আসো। আর যদি আমায় উঠাও তাহলে কিন্তু আমি তোমায় ছাড়বো না।’

ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে রুয়াত। ধীর পায়ে আগায় আয়াজের সামনে। রুয়াত তার সামনে দাঁড়াতেই আয়াজ হেসে রুয়াত কে ঘুরিয়ে তার কোলে বসিয়ে দেয়। একদম শক্ত করে পেচিয়ে ধরেছে। পুরো শরীর কেঁপে উঠে রুয়াতের। আয়াজ তাকে বোকা বানালো।

কাঁপাস্বরে বলে উঠে।
-‘এটা কিন্তু ঠিক না।’

রুয়াতের ঘাড়ে অধর ছোঁয়ায়।
-‘উহু দু’বছরের বেশি সময় ধরে ভালোবেসেছি। এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি মিসেস আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী! পাগল হয়ে গিয়েছি আমি। পাগল হয়ে গিয়েছি।’

আয়াজের চুল আঁকড়ে ধরে রুয়াত। শরীর রীতিমতো কাঁপছে।

-‘আমায় ভালোবাসো প্রেয়সী?’

রুয়াতের হাত এখন আয়াজের কাঁধে। মাথা নিচু করে বলে-

-‘জ্বী।’

আয়াজ তার গায়ের টি-শার্ট খুলে ফেলে। রুয়াতের চোখ বড় হয়ে যায়। চোখে হাত দিয়ে ফেলে সে।

-‘তাহলে আজ আর বাঁধা কিসের?’

রুয়াত কে কোলে করে বেডে বসায়। সর্বাঙ্গ শরীরে আয়াজ তার অধরের ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে কা’ম’ড়ে’র আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় রুয়াত ও সাড়া দেয়। দু’জন দুজনায় মত্ত। আয়াজের উন্মুক্ত বুক মিশে আছে রুয়াতের মাঝে। ভয়ংকর প্রেমিকের ভয়ংকর ভালোবাসা খুবই প্রখর। চোখের কার্ণিশ থেকে বিন্দু বিন্দু নোনাপানি গড়িয়ে রুয়াতের ঘাড় পড়ছে। আয়াজ এতক্ষণ ডুবে ছিলো রুয়াতের মাঝে। মাথা তুলে তৃপ্তির হাসি দিয়ে রুয়াতের চোখের পানি মুছে দেয়। প্রেয়সীর অধরে তার অধর ছুঁয়ে মাতাল কন্ঠে বলে-

-‘কষ্ট হচ্ছে জান? সহ্য করে নাও।’

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here