#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব১২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” জ্বী শেহজাদ আনান বলছেন?”
ফোনের ওপাশ থেকে আসা প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলে আনান।সাথে সাথে ফোনের বিপরীত পাশ থেকে ব্যক্তিটি বলে সে জুঁইয়ের মামাতো ভাই নীল বলছে। জুঁইকে নিয়ে সে আজ বিকালে আনানের কাছে আসবে।জুঁই তার সাথে কথা বলতে চায়।আনান লোকেশন জিজ্ঞাসা করে।ওপাশ থেকে জুঁই বলে,,,
” ঠিক সেই জায়গায় যেখানে একান্তভাবে তোমার আমার প্রথম কথা হয়েছিলো।”
” আচ্ছা।”
আনান ফোন কেটে দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।মায়া কাটাতে শুরু করতে না করতেই নতুন করে মায়ায় জড়িয়ে যাবে না তো সে?জুঁই মেয়ে শ্যামবর্ণের হলেও সৃষ্টিকর্তা ওকে বানানোর সময় মনে হয় মায়া ঢেলে দিয়েছিলেন।তাই ভয় হয় আনানের।নতুন করে জড়িয়ে যায় যদি সে?আনান জানে সে জুঁইয়ের সামনে নিজেকে কখনোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।বিশেষ করে ওর চোখ দুটো।টানা টানা চোখ দুটোয় সৃষ্টিকর্তা পুরো মহাবিশ্বের মায়া ঢেলে দিয়েছেন।যেখানে চোখ পরলেই আনান হারিয়ে যেতে বাধ্য।তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় জুঁইয়ের দিকে তাকাবে না।মামা মামী জুঁইয়ের অভিভাবক।নিশ্চয়ই তারা জুঁইয়ের খারাপ চাইবে না।যা করবেন জুঁইয়ের ভালোর জন্যই করবেন।
ঘন্টাখানেক আগেই সেই রেস্ট্রুরেন্টে যায় আনান।প্রথম দিনের মতো করেই সুন্দর করে শেষ দিনের সমাপ্তি দিতে চায় সে।শুরুটার মতো শেষটাও হোক সুন্দর। থাক না কিছু অপূর্ণতা।
মামাতো ভাই নীলের বাইকে করে জুঁই আসে।রেস্ট্রুরেন্টে ঢুকেই সে আনানকে দেখতে পায়।জুঁইয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে আনান দাঁড়িয়ে যায়।কিন্তু তাকায় না জুঁইয়ের দিকে।তাকাবে না সে।ওই চোখের দিকে ওই মুখের দিকে তাকালে সে কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।যে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই সেই মায়ায় নতুন করে জড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। জুঁইও বিষয়টা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করে।যে চোখের দিকে তাকালে আনানের পলক পরতো না সে আনান জুঁইয়ের চোখে তাকাচ্ছে না বিষয়টা মেনে নিতে জুঁইয়ের কষ্ট হয়।জুঁই আনানের মুখো মুখি বসে আর পাশে বসে নীল।
” আনান আমার দিকে তাকাও।”
আনান তাকায় না।কিছু বলেও না সে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
” আনান প্লিজ?”
আনান এবারও তাকায় না।মাথা নিচু করে বলে,,,
” কি খাবে?”
” আনান তোমার কি মনে হয় আমি এখানে খেতে এসেছি?”
” কোল্ড কফি আর ডোনাট অর্ডার দিলাম।”
জুঁইকে পাত্তা না দিয়ে বলে আনান।আনানের এমন ব্যাবহারে জুঁই প্রচন্ড কষ্ট পায়।
” তুমি কেন আমার দিকে তাকাচ্ছো না বলবে আনান?”
” তুমি বিশেষ করে তোমার চোখজোড়া আমার কাছে মায়ার অতল সমুদ্র।যার দিকে তাকালে আমি ডুবিয়ে যেতে বাধ্য।এই সমুদ্রে আগে নিজে থেকেই ডুবে যেতাম।স্বর্গসুখ পেতাম।ভেবেছিলাম আজীবনের মতো পেয়েছি।এখন বুঝতে পেরেছি সেগুলো।সুন্দর কল্পনা ছিলো।তাই কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।”
” খুব কঠিন কঠিন কথা বললে তুমি আনান।আমি জানি এগুলো তুমি মন থেকে বলো নি।”
” মস্তিষ্ক থেকে বলেছি।আমাদের মন আবেগকে প্রাধান্য দেয়।আর মস্তিষ্ক বাস্তবতাকে।”
আনানের এমন কথার জবাবে জুঁই কি বলবে পায় না।আনান বেশ যুক্তিবাদী। কথা কম বলে কিন্তু যা বলে কঠিন যুক্তি দিয়ে বলে।এই কঠিন যুক্তি কথা গুলোর সাথেই জুঁই পেরে উঠে না।পাশে নীল বসে আছে।আনান জুঁইয়ের মাঝে কথাগুলো তার কর্ণকুহর অব্দি যায় না।তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে সে প্রবেশ করতে চায় না।তাই কানে ইয়ারফোন গুঁজে বসে আছে।ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে আসায় জুঁই কিছু বলতে চেয়েও পায় না বলতে।
” আনান আমি তোমায় ভালোবাসি।”
” আমিও।কিন্তু সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।জীবন সাথী হতে না পারলাম,শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো।”
” চাইলেই পারবে জীবনসাথী হতে।তুমি শুধু একবার বলো আনান। এক কাপড়ে আমি বেরিয়ে আসবো।”
” সম্ভব না জুঁই।আমি নিজেই টেনেটুনে চলি।ফ্যামিলির অবস্থা তো তুমি জানোই।এই ফ্যামিলিতে কেউ জেনে শুনে আসবে না আমার যতটুকু ধারণা।তুমি ভালো থাকবে জুঁই।”
” কিন্তু আমার ভালো থাকা যে তুমি।”
” সময়ের সাথে মানুষের ভালো লাগা,কমফোর্ট জোন,তার আশেপাশে পরিবেশ, মানুষের চাহিদা সব বদলায়।যেমন আমরা ছোটবেলায় কেউ ঘুমাতে চাইতাম না দুপুরে। কিন্তু দুপুরে আমাদের মা দাদি নানিরা ঘুম পাড়াতো।আগে আমরা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাতাম।অথচ এখন বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই ক্লান্তিতে ঘুম আসে।”
” তুমি তোমার জটিল যুক্তি বাদ দাও।বলো আমি কি করবো?”
” যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে নিয়ে সুখে থাকবে।আনানকে ভুলে যাবে।”
” মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাওকে ভোলাও যায় না সুখেও থাকা যায় না।”
” মনকে পরিবর্তন করে মেনে নিলেই সুখে থাকা যায় কাওকে ভুলে থাকা যায়।”
জুঁই তার উত্তর পেয়ে গেছে।আনান তার ভাগ্যে এই পর্যন্ত ইই ছিলো।মানতে মন চাইছে না কিন্তু মানতে হবেই।যেভাবেই হোক সেটা।নীলকে নিয়ে উঠে যায় জুঁই।আনান পেছন থেকে ডাক দেয়।
” খেয়ে যাও।”
জুঁই ওর কথার জবাব দেয় না পিছন ফিরেও তাকায় না।অশ্রুসিক্ত ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।আনান যদি জুঁইকে অতীত করতে পারে তাহলে জুঁই কেন পারবে না আনানকে অতীত করতে?
_____💗
ঈদ উল আজহার দ্বিতীয় দিন আজ।আজই জুঁইয়ের বিয়ে।ঈদের পরের দিন গুলোতে বাংলাদেশে মানুষের গণহারে বিয়ে হয়।ঘুম থেকে উঠ অনলাইনে ঢুকতেই আনান জুঁইয়ের আইডি থেকে একটা লম্বা মেসেজ পায়।
প্রিয় প্রাক্তন
কখনো যদি কেউ তোমাকে জিজ্ঞেস করে- “কেন ছাড়লে ভাই মেয়েটাকে?”বিনিময়ে তুমি তোমার সেই হৃদয়ভোলানো হাসি ফিরিয়ে দিও এবং তারপর তাকে বলবে,
“আমার সাথে পরিচয় হওয়ার সময় সে ছিল সবচেয়ে চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে।যে সব সময় হাসতে জানতো।দুষ্টুমিতে ভরিয়ে রাখতো চারপাশ। কেবল তার হাসিটাই নয় তার খুশিটাও ছিল মধুময়।আমি তাকে পাওয়ার জন্য সব কিছুই করেছিলাম।আমি তার কষ্ট, ভয়,আবেগ এবং দুশ্চিন্তাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে ফেললাম।একটা সময় সে আমার প্রতি ভরসা করতে শিখলো ঠিক তখনি আমাদের প্রেমের শুরু।মেয়েটা আমার সাথে নিজের ভবিষ্যৎ দেখা শুরু করলো আর আমি?শুরু করলাম তাকে ব্যবহার করা। এই যেমন প্রচন্ড রাগ হলে তার উপর ঝারতাম,আমার নিজস্ব সমস্যা, বন্ধুদের সাথে ঝামেলা,পারিবারিক সমস্যা কিংবা অসফলতা! সবটার দোষ এই মেয়েটার উপরেই যেত।আর প্রতিটা বার বিনাবাক্যে আমাকে মাফ করে দিতো সে। সে তার চেষ্টা, শরীর,ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং জমানো আবেগ সব ঢেলে দিতো আমাদের সম্পর্কে । আমি নিংড়ে নিতাম সব অমৃত।একটা সময় তাকে হারানোর ভয়টা আমি হারিয়ে ফেললাম।সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে নিতে লাগলাম এবং সময়ের সাথে বদলে গেলাম।নিজেকে এমন ভাবে গড়লাম।যাতে তার থাকা না থাকায় আমার কিচ্ছু যায় আসে না।সে বলতো,
” আমি হয়তো এভাবে আর কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না। জানো?আমি আমার সব সফলতায় তোমাকে চাই।আমার ভয় হয়, তোমাকে হারানোর ভয়।”
সে আমার সাথে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো। আমি তাকে ফিরিয়ে দেই।মেয়েটা নিজের সর্বস্ব দিয়ে আমার সাথে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি তাকে রাখি নি।বারবার ফিরিয়ে দেই।একটা মেয়ে যে একটা মানুষের জন্য এমন ভয়ংকর ভাবে ছ্যাচড়া হতে পারে তা আমি কল্পনাও করি নি।মেয়েটা আমায় তার সরল মনের নির্ভেজাল ভালবাসা টুকু দিয়েছিলো আর আমি সেই ভালোবাসায় জটিল যুক্তি দিয়ে এক্টার পর একটা আঘাত করে সেই সরল মনকে ক্ষত বিক্ষত করেছি।ইচ্ছা করলেই পুর্ণতা পেতো আমাদের সম্পর্ক।কিন্তু আমার তো সেই ইচ্ছাটাই মরে গেছিলো।আর পূর্ণতা।একটা সম্পর্ক তখন ইই পূর্ণতা পায় যখন দুই পক্ষের ইই তীব্র ইচ্ছা থাকে। যেখানে আমার ইই ইচ্ছা মৃত সেখানে কিভাবে জুঁইয়ের একার ইচ্ছায় পূর্ণতা পেতো সম্পর্ক?
মেয়েটা বড্ড বোকা ছিলো।বড্ড।
আনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেসেটা পরে।জুঁইয়ের কথাটাই হয়তো সত্যি ম রে গেছিলো আনানের ইচ্ছা তাই অপূর্ণ থেকে গেলো একটা মিষ্টি সম্পর্ক।কতটা কষ্ট পাথর চাপা দিয়ে জুঁই এগুলো লিখেছে তা অনুভব করছে আনান।এটাই শেষ অনুভুতি জুঁইয়ের জন্য।আস্তে আস্তে এটাও ম রে যাবে।আর আনান হয়ে যাবে রক্ত মাংসের যন্ত্রমানব।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” তুই তৃপ্তিকে মে রে ছি স?”
” হু।”
ভাবলেশহীন জবাব দেয় শালিক।আহান রেগে যায়।দিন দিন মেয়েটার আচরণ কেমন হিংস্র হয়ে উঠছে।আহান শালিকের কোমলতাকে ভালোবাসে, হিংস্রতাকে নয়।ধমক দিয়ে বলে,,
” কেন মে রে ছি স?যদি ম রে যেত?”
” ম র লে ম র তো।আমার কি তাতে?”
” জেলের ঘানি টানতে খুব শখ হয়েছে না?কেন মে রে ছিস ওকে।”
” আচ্ছা!আমার দিকে যদি কোনো ছেলে তাকায় তাহলে তুমি তাকে কি করবে?”
” চোখ উ প ড়ে ফেলে দিবো।”
শালিক রহস্যময় হাসি দেয়।ভ্যানিলা ফ্লেভারের কোর্নেটো আইসক্রিমের ঠোঁটের আলতো স্পর্শ মুখে তুলে খেতে খেতে বলে,,,
” তৃপ্তির ভাগ্য ভালো ওর চোখ উ প ড়ে দেই নি আমি।কয়েকটা চ ড় মে রে ছি।”
” কি জন্য মে রেছি স বলবি না?”
” আমার বয়ফ্রেন্ডের দিকে নজর দিবে ওকে মা র বো না তো কি পূজো করবো? মা*** কোথাকার।”
শালিকের মুখে গা লি শুনে আহান ঠাস করে চ ড় মা রে।এমন উশৃংখল কোনো মেয়ে হয়?শালিক থ মে রে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর ঠাস করে আহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।বাচ্চাকালের মতো আহানের হাতে কামড় দিয়ে নিজের সব রাগ নিংড়ে নেয় শালিক।আহান চিৎকার করে।শালিক ছাড়লে আহান স্থানটায় হাত ডলতে ডলতে বলে,,,
” কু ত্তা নাকি?ছোটবেলার অভ্যাস এখনো যায় নাই?”
” নাহ যায় নাই।হুদাই মা র বি কেন তুই?”
” আমার দিকে নজর দিয়েছে তাই বলে তোর ওকে মা র তে হবে?এমন বিশ্রী গা লি দিতে হবে?”
” আলবাত মা র তে হবে,আলবাত গা লি দিতে হবে।মেয়েরা সব কিছুর ভাগ দিতে পারে কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষের না।”
” কিন্তু আমি তো চারটা বিয়ে করবো।”
দুষ্টুমি করে বলে আহান।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শালিক আহানের দিকে তাকায়।ভেংচি কেটে বলে,,,,
” উহুম উহুম অত বড় কলিজাটাই আছে তোমার?”
_____💗
জুঁইয়ের সাথে আকাশের বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হলো।বিয়ের সপ্তাহ খানেক পর ইই আকাশ কর্মক্ষেত্রে চলে যায়।মানুষটা আসলেই ভীষণ ভালো।জুঁই আনানের ব্যাপারে আকাশকে জানায় এবং সময় চেয়ে নেয় আকাশের কাছে।আকাশ হাসি মুখে বলে,,
” ভালোবাসার অপর নাম অপেক্ষা।তোমার জন্য আমি আমৃত্যু অপেক্ষা করতে পারি।”
তবে জুঁইয়ের শ্বাশুড়িটা বেশি সুবিধার লোক না।ওয়ারিশ সুত্রে জুঁই তার বাবার ভাগের যেটুকু পেয়েছিলো সবটুকু আকাশের নামে লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই চাপ দেন আকাশের মা।বিয়ে হওয়ার পর জুঁইয়ের বাইরে যাওয়া লেখাপড়া সব বন্ধ হয়ে গেছে।আকাশ অনার্সে ভর্তি করাতে চাইলেও আকাশের মায়ের তাতে রাজ্যের আপত্তি। ভারতীয় উপমহাদেশে কেন যেন ছেলের বউকে শ্বাশুড়ি মেয়ের চোখে দেখতে পায় না।নয়তো বউ শ্বাশুড়িকে মায়ের চোখে দেখতে পায় না।বলতে গেলে এখানে মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু।একটা মেয়ে বা মহিলা কখনো অন্য মেয়ে বা মহিলার ভালো দেখতে পায় না।
ছেলেকে মাছের টুকরো বড়টা দিয়ে মেয়ের প্লেটে ছোট টুকরোটা দেওয়ার ভুল কখনোই বাবা করেন না।এটা মা করেন নতুবা দাদি করেন।
নতুন বউ ঘরে আনার পর গয়না খুলে নেওয়ার কাজটাও করেন শ্বাশুড়ি বা ননদ ননাশরা।
বউকে বেশি সময় দিলে বাড়ির মা ফুফু বোনেরাই আগে আগে সমালোচনা করে
ছেলের কাছে মায়ের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগ করে মাকে খারাপ বা দোষী সাব্যস্ত করার কাজটা করতেও বিবেকে বাঁধে না বউয়ের
আবার,বউয়ের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে ছেলের দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি করতেও পিছপা হয় না মা বোন
ছেলেটা বিবাহিত জানা সত্ত্বেও তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে এক মেয়ের বৈবাহিক/সাংসারিক জীবনে আশান্তি লাগানোর কাজটাও দায়িত্ব নিয়ে করে আরেক মেয়ে
এরা সবাই কিন্তু একই জাতের।এরা সবাই নারী।প্রত্যেক্টা ঘরের কোণে একজন নারী কাঁদে আরেকজন নারীর জন্যই। মূল কথা এরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করে।পুরুষ নয়!
____💖
বছর তিনেক পর,,,,
আনান আজ পুলিশের এসআই।বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ তার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ।আহি মাঝে মধ্যেই ফোন দেয়।প্রাইভেট একটা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সে।শালিক উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে।জুঁইয়ের ব্যাপারটা দু জনেই জানতো।আনান যে নিজে থেকে বিচ্ছেদ করেছে এই বিষয়টাও শালিক আহানের অজানা নয়।বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধের একটা কারণ রয়েছে বটে।ফোন দিলেই এরা আনানের বিয়ের প্রসঙ্গ তোলে।মেসেজেও প্রায়ই বায়োডাটা পাঠায় বিভিন্ন মেয়ের।কিন্তু আনান যে আর বিয়ে করবে না।জুঁইকে ছাড়া সে আর কাওকে অর্ধাঙ্গিনীর সম্মান দেবে না।যদিও এটা অসম্ভব। আনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ওয়ালেটটা বের করে জুঁইয়ের ছবিতে আলতো করে হাত বোলায় সে।এতদিনে মনে হয় জুঁই পুরোদমে সংসারি হয়ে গেছে।বাচ্চার মা ও হয়তো হয়ে গেছে আর আনানকেও ভুলে গেছে।ও ভালো থাকলেই ভালো।কিন্তু আনানের বুকের ভেতরটা আজও সেই শ্যামাঙ্গিনীর জন্য হাহাকার করে। সেদিন জুঁইকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলো আনান।প্রকৃতি হয়তো তার ইই ফল আনানকে দিচ্ছে।
” স্যার আপনি যা যা রান্না করতে বলছিলেন রান্না হইছে।”
বাবুর্চির ডাকে ধ্যান ভাঙে আনানের।আজ ১৪ই সেপ্টেম্বর। জুঁইয়ের জন্মদিন।প্রতিবছর এই দিনটাতে আনান এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়।মোরগ পোলাও ছিলো জুঁইয়ের ভীষণ পছন্দের।গত তিন বছর ধরে আনান এই দিনটি এভাবে উদযাপন করে আসছে। আনান রান্না ঘরে গিয়ে নিজ দায়িত্বে সব খাবার গুলো প্যাকেট করে।তারপর গাড়িতে তুলে এতিমখানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
___💗
” শালিক কখনো কি তোর মনে হয় নি তুই ঠকেছিস?”
” হু,তামিমের সাথে প্রেম করে মা রা খাওয়ার পর খুব মনে হতো এটা।সর্বক্ষণ মাথায় এটা ঘুরপাক খেতো।”
শালিকের কথা শুনে আনান বিরক্ত হয়।এক লাফ দিয়ে উঠে বসে সে।হাল্কা রাগ নিয়ে বলে,,,
” তোকে বলছি না তামিমকে আনবি না আমাদের মাঝে।”
” তুমিই তো আনলা।ওহ ভালো কথা।তোমার ব্যাচমেট ছিলো না?কায়েস নাকি কি নাম?কমার্সের।”
” হু।ওই কায়েস কি করছে।”
” হুদাই মেসেজ দেয়।মতলব সুবিধার লাগতেছে না।ও কি জানে না?তোমার আমার সম্পর্কের কথা?”
” ইগ্নোর করবি।বেশি করলে মুখের ওপর দু চারটা কথা শুনিয়ে ব্লক দিবি।”
” আসবে কবে?অনেক দিন হলো দেখি না তোমায়।”
” টার্ম চলছে।টার্মের পরে প্রুফ।এরপরেই এসে ঘুরে যাবো।তোর পড়াশোনার খবর কি?”
” তুমি বয়ফ্রেন্ড। তুমি রোমান্টিক কথা বলবা।তুমি কেন পড়াশোনার কথা জিগ্যেস করবা?”
রেগে গিয়ে বলে শালিক।পড়াশোনায় আজকাল তার এক্টুও মন বসে না।শিক্ষা বোর্ডকে যদি গিয়ে বলতে পারতো,! “এতদিন যা পড়ছি তার ওপর একটা সার্টিফিকেট দিয়া দেন যাই গা।” আহানও আগে ভীষণ ছন্নছাড়া ছিলো এই পড়াশোনার ব্যাপারে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো এখন পড়াশোনা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। এ প্লাস না পেলে ব্রেকাপেরও হুমকি দিয়েছে আহান শালিককে।এমন বয়ফ্রেন্ডও কি হয়?
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ