মিঠা প্রেম পর্ব -১১

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১১
(অনুমতি ব্যাতিত কপি নিষেধ)

শরবত মুখে দিতেই আহানের চেহারার ভাবভঙ্গি বদলে যায়।আম তেঁতো না শালিক চিনির জায়গায় নিমের রস বা করলার রস দিয়ে দিয়েছে?আবার করলা নিমের শরবত করে তাতে হলুদ ফুড কালার দেয় নি তো?আহানের অবস্থা দেখে শালিকের পেট ফে টে হাসি আসে।কিন্তু সে হাসে না।হাসিকে গিলে ফেলে করুনার দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” খারাপ হয়েছে ভাইয়া?”

” মোটেও না।অনেক মজা হয়েছে।”

কোনো রকমে জুসটা গলাধঃকরণ করে বলে আহান।শালিক খুশী হয়।হাসোজ্জ্বল কন্ঠে বলে,,,

” তাহলে পুরোটা খেয়ে নাও।”

” তুই খেয়েছিলি?”

” শোয়ামীরা না খেলে ইস্ত্রিরিদের খেতে নেই।”

” আমি তো খেয়েছি।নে এবার তুই খা। ”

” মিষ্টি জিনিস খেতে পাই জানোই তো।”

” এটা মিষ্টি না।খেয়ে দেখ।”

” এটা আম। আম মিষ্টি হবে না তো কি তেঁতো হবে?আর আমি তোমার জন্য বানিয়েছি।পুরোটা তুমিই খাবে।”

আহান পুরো বোতল শেষ করা না পর্যন্ত শালিক উঠে না।পুরোটা খাওয়া শেষ হলে শালিক উঠে যেতেই আহান দৌড়ে বাথরুমে যায়।বমি আসছে।কিন্তু হচ্ছে না।পানি দিয়ে কয়েক দফা কুলকুচি করে সে।কিন্তু তেঁতো ভাব যাওয়ার কোনো নাম নেই।আহান নিশ্চিত শালিক এটা ইচ্ছে করে করেছে।না হলে আমের শরবত এরকম তেঁতো হয় কি করে!

______💗

সকাল থেকে আনানের ফোনে অনবরত কল করে যাচ্ছে জুঁই।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।এদিকে মামী পারলে আজ ইই তার বোনের ছেলের সাথে জুঁইকে বিয়ে দিতে পারলে বাঁচে।এই কয়েকদিন পড়াশোনার চাপে আনানের সাথে কথা হয় নি।সারাদিন ঘরের কাজ করে রাত্রে পড়তে বসতো জুঁই যার দরুন আনানের সাথে কথার কোনো সুযোগ ইই ছিলো না ওর।পরীক্ষা শেষ হলেও মামী এটা ওটা কাজ দিয়ে জুঁইকে ব্যস্ত রাখতো।তাছাড়া এডমিশনের প্রস্তুতিও সে নিজে থেকেই শুরু করে দেয়।কোচিং করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।জাতীয় ভার্সিটি ছাড়া গতি নেই।তাও চেষ্টা করলে ক্ষতি তো নেই।বরং লাভ।

এদিকে আবার সেদিন বৃষ্টিতে ভেজায় আনানের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।অবস্থা বেগতিক দেখে বন্ধুরা ওকে হসপিটালে ভর্তি করায়। কথায় বলে না বিপদ যখন আসে অষ্টদিক থেকে আসে। এই মুহুর্তে সেটাই হয়েছে।জুঁই আনানের সাথে এক কাপড়ে বেরিয়ে যেতে রাজি।কিন্তু যে মানুষটার সাথে সে পালাতে চাচ্ছে সে মানুষটাই তো নিরুদ্দেশ।জুঁই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজেকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামরঙা।ঠোঁট দুটোও কিঞ্চিৎ কালচে।আচ্ছা আনান জুঁইয়ের সাথে টাইম পাস করে নি তো?না হলে কোন ছেলে ঠেকা জুঁইয়ের মতো কালো মেয়েকে ভালোবাসবে?কিন্তু আনানের জীবনের অতীত ওর অগোছালো ফ্যামিলির সম্পর্কে জুঁইকে বলার বিষয়টাও ফেলে দেবার মতো নয়।মামা মামীকে জুঁই নিজে থেকেই বলবে আনানের কথা?কিভাবে নেবে তারা?এমনও হাজারো প্রশ্ন জুঁইয়ের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগে।জীবনটা তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না।কেন এমন হলো?কোথায় আনান?সে কি ভুলে গেছে জুঁইকে? দম বন্ধ হয়ে আসছে জুঁইয়ের।মনে হচ্ছে এখনই সে মরে যাবে। ভালোবাসলে কি এমনই হয়?প্রিয় মানুষের জন্য তীব্র অস্থিরতা সর্বক্ষণ পীড়া দেয়?আগে জানলে এসব থেকে সত্তর হাত দূরে থাকতো জুঁই।

____💗

দুই দিন বন্ধ ছিলো আনানের ফোন।আজ চার্জ তুলে ফোন অন করতেই এক গাদা মেসেজের নোটিফিকেশনে কেঁপে উঠে ফোন।সব গুলোই জুঁইয়ের মেসেজ।লাস্ট মেসেজটা ছিলো।

” আনান তুমি ঠিক আছো তো?তোমার ফোন বন্ধ কেন?”

” জ্বর হয়েছিলো।হসপিটালাইজ ছিলাম।তাই বন্ধ ছিলো ফোন।”

রিপ্লাই দেয় আনান। সাথে সাথে জুঁইয়ের থেকে রিপ্লাই আসে।

” আনান তুমি আমায় বিয়ে করতে পারবে?”

মেসেজটা দেখা মাত্রই আনানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।বিয়ে তাও এই মুহুর্তে? সবে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলো।রেজাল্টও দেয় নি।কিভাবে জুঁইয়ের মামা মামীকে জুঁইকে বিয়ের কথা বলবে আনান?কোন মুখ নিয়ে বলবে।পরিবার ভালো হলে তাও কথা ছিলো।যেখানে পরিবারের অবস্থাই করুন সেখানে বেকার অবস্থায় কাওকে বিয়ে করা নেহাৎ ইই কল্পনা।আনান রিপ্লাই দেয়।

” হঠাৎ বিয়ের কথা?”

” মামী পারলে আজই তার বোনের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবেন।ছেলে চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম আছে।সামনে কোরবানি ঈদ।ঈদে ছুটি নিয়ে আসার কথা।হয়তো তখনই…..”

আনান বেশ কিছুক্ষণ মেসেজের দিকে তাকিয়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে মেসেজ টাইপ করে,,,

” করে নাও বিয়ে।ছেলে ভালো হলে আপত্তি করো না।”

” আনান আমি তোমায় ভালোবাসি আর বিয়ে তোমাকেই করবো।আর ছেড়েই যদি চলে যাবে তাহলে এসেছিলে কেন জীবনে?”

” এই পরিস্থিতি আসবে জানলে কখনোই আসতাম না তোমার জীবনে।”

” তুমি বললে এক কাপড়ে আমি চলে আসবো।”

” তা সম্ভব নয় জুঁই।এগুলো সস্তা আবেগ।আমি বেকার।সবে মাত্র ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিয়েছি।তারমধ্যে আমার ফ্যামিলিও কিছুটা অন্যরকম বলতে গেলে পুরোটাই।এমন ফ্যামিলিতে কেউ জেনে শুনে মেয়ে দেবে না।”

” তুমি বোধহয় ছেড়ে যেতেই এসেছিলে না আমার জীবনে?”

” ধরে নাও তাই।”

” জ্বর থেকে উঠে তুমি পাষাণ হয়ে গেছো আনান।জুঁই খুব কষ্ট পেয়েছে তোমার এমন মেসেজে। কাঁদছে সে।বাকীদের মতো তুমিও জুঁইকে কাঁদালে।অথচ জুঁই তোমায় আলাদা ভেবেছিলো সবার থেকে আলাদা।যে জুঁইকে কোনো কষ্ট দেবে না।আর সেই তুমি ইই না তার হৃদয়ে এক্টার পর একটা আঘাত করে যাচ্ছো!তুমি বড্ড পচা আনান।বড্ড।”

আনান এই মেসেজের রিপ্লাই খুঁজে পায় না।বেশ কিছুক্ষণ পরকটা ইমুজি দিয়ে রিপ্লাই দেয়।আনান জানতো জুঁই আনানের এমন মেসেজে কষ্ট পাবে কাঁদবে।কিন্তু কিছু করার নেই।মানুষ পরিস্থিতি ভাগ্যের কাছে অসহায়।আনানেরও প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।আগে কখনো এমন পরিস্থিতিতে সে পরেনি।সর্বশেষ মায়ের বিয়ের সময় এমন দম বন্ধ লাগছিলো তার।পাষাণের মতো যে কথাগুলো আনান জুঁইকে মেসেজে বললো সেগুলো কখনোই সে সামনাসামনি জুঁইকে বলতে পারতো না।গলায় এসে আটকে যেত কথাগুলো।কাঁপা হাতে মেসেজগুলো টাইপ করে সে দিব্যি নিজের অনুভুতি লুকাতে সক্ষম হয়েছে।ভার্চুয়াল লাইফের এই এক সুবিধা।অনুভূতি প্রকাশ পায় না।যে কথা গুলো আমরা কাঁপা হাতে টাইপ করে ক্ষুদেবার্তায় প্রিয়জনকে বলি সে কথাগুলো হয়তো আমরা কখনো সামনাসামনি তাকে বলতে পেতাম না। কখনো না।

বিছানার চাদর খামচে জুঁই কাঁদছে।জ্বর থেকে উঠে ছেলেটা সত্যিই পাষাণ হয়ে গেছে।এভাবে আনান জুঁইকে বলবে সে কখনোই ভাবে নি।আচ্ছা আনান কি সত্যিই জুঁইকে ভালোবেসেছিলো?ভালোবাসলে কি এভাবে সে জুঁইকে বলতে পারতো?সে তো জানে জুঁইয়ের দুর্বলতা শুধুই আনান।আনানকে ছাড়া জুঁইয়ের দম বন্ধ লাগে।মনে হয় কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে বুকের ওপর। বাঁচবে কিভাবে সে আনানকে ছাড়া?মানুষটার ওপর বড্ড নির্ভর হয়ে গেছিলো জুঁই।বালিশ খামচে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে জুঁই।

পরের দিন সকালে জুঁই আবার আনানকে মেসেজ দেয়।সময় আছে আনান এখনো।একই রিপ্লাই আনানের ছেলে ভালো হলে না করো না।বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে জুঁইয়ের।না হলে সে যেভাবেই হোক আনানের কাছে গিয়ে সামনাসামনি কথা বলতো।তার দৃঢ় বিশ্বাস।মেসেজের কথা গুলো আনান মন থেকে বলে নি।বলতে পারে না সে।মুখে স্বীকার না করলেও জুঁই জানে আনান জুঁইকে কতটা ভালোবাসে।মেসেজে মানুষ কিভাবে অনুভতি লুকোয়। সকালের কাজ গুছিয়ে দুপুরে মামীর সাথে কাজে হাত লাগায় জুঁই।আগে বাসায় থাকতে ফরমায়েশের ওপর রাখতেন মামী জুঁইকে।ইদানীং জুঁইকে তিনি কুটোটিও নাড়তে দেন না।তাও জুঁই নিজে থেকেই করে।

বিকালের দিকে গোসল করে আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো জুঁই।হঠাৎ ইই জুঁইয়ের মামাতো ভাই নীল ঘরে আসে।

” কিছু বলবে ভাইয়া?”

” তুই তো ভালোই হাসিখুশি মেয়ে ইদানীং মনমরা হয়ে থাকছিস যে?”

” এমনি কিছু ভালোলাগে না ইদানীং।”

” কেন?তোর তো খুশী হওয়ার কথা।আকাশ ভাইয়া ভীষণ ভালো মানুষ।সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বিয়ের পর তোকে তার কাছে নিয়ে যাবে।”

” ভাইয়া,তোমায় যদি অদ্রি আপুর থেকে বেটার কাওকে এনে দিই তুমি কি তাকে মেনে নিতে?বিয়ে কর‍তে তাকে?”

” প্রশ্নই আসে না।ভালো অদ্রিকে বাসি।বিয়ে করলেও ওকে ইই করবো।”

” জানো আমিও একজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি।”

” তাহলে বাবা মা কে বল।”

” বলতাম।কিন্তু সে ইই না করেছে।বেকার সে।কোন মুখ নিয়ে যেত সে মা বাবার কাছে?তার সাথে দেখা করে কথা বলতে পারলে ভালো হতো।আমায় একটু বাইরে নিয়ে যেতে পারবে?”

” আচ্ছা।দেখছি বিষয়টা তুই মন খারাপ করিস না।”

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here