মিঠা প্রেম পর্ব -১০

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

আড়াই মাসের মতো হলো জুঁইয়ের সাথে আনানের কোনো যোগাযোগ হয় না। দিন কে দিন জুঁইয়ের জন্য আনানের মনের অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে।ফোন যে দেবে তারও উপায় নেই।মামা-মামী জানলে জুঁইয়ের বিপদ।এদিকে কয়েকদিন পর ইই ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।পড়ায়ও মন বসছে না।
আনানের মনের মতো বাংলা দেওয়াল পঞ্জিকায়ও চলছে আষাঢ় মাস।ঝুপঝাপ বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর পর বিরতিহীন ভঙ্গিতে নামছে।হলে ফিরে কিছুক্ষণ নির্বাক ভঙ্গিতে সে বর্ষণশীল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে।জুঁই বৃষ্টি ভিষণ পছন্দ করতো।কিন্তু কখনো দু জনের একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয়ে উঠে নি।জুঁই খুব করে চাইতো আনানের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু আনান তাতে সায় দেয় নি।আজ আনানের খুব করে বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাচ্ছে।কিন্তু আফসোস আজ জুঁই নেই।
দুমুখো মনের সমস্ত বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আনান বাইরে বেরোয় বৃষ্টিতে ভিজতে।গায়ে শীতল বৃষ্টির জল পরতেই সেই জলের ছোঁয়ায় আনান জুঁইকে অনুভব করে। মেঘের দল যখন বোঝা আর বইতে পারে না তখনই স্বর্গের কান্না হয়ে ধরণীতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়।আনান চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভেজে।হলের সামনের ফাঁকা জায়গাটায় বৃষ্টি ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে পরে আনান। সেদিন টানা দুই আড়াই ঘন্টা ঝুম বৃষ্টি হয়।আনান সেই দুই আড়াই ঘন্টা ইই বৃষ্টিতে ভেজে।আনানের যদি সাধ্য থাকতো সারাদিন এই বৃষ্টিকে বর্ষিত করতো।কেন যেন এই বৃষ্টির মধ্যেই সে জুঁইকে খুঁজে পাচ্ছিলো।

______💗

সিগারেট ওষ্ঠাধরের মধ্যিখানে নিয়ে পকেট থেকে লাইটার বের করতে গিয়েই আহান খেয়াল করে পকেটে লাইটার নেয়।হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে থাকে লাইটার।পরক্ষণেই কেউ এসে তার সিগারেটে অনলের ছোঁয়া দেয়।আহান চোখ তুলে দেখতে পায় শালিককে।হতভম্ব হয়ে যায় সে শালিককে দেখে।অবশেষে ধরা টা খেয়েই নিলো আহান।শালিক তাকে পই পই করে না করেছিলো যাতে সে সিগারেট না খায়।আহানের কাছে শালিক নেহাৎ ইই বোকাসোকা মেয়ে।তাই এতদিন বেশ বহালতবিয়তেই সিগারেট খাচ্ছিলো।অবশ্যই শালিকের অগোচরে কিন্তু ধরাটা যে এমন লজ্জাজনক হবে কে জানতো।

” তোকে আমি না করছিলাম।”

বিরক্ত আর অভিমানি কন্ঠে বলে শালিক।আহান শুকনো ঢোক গিলে।

” এইটা আমি না তো নাবিল খাবে।”

কথাটা বলেই হন্তদন্ত হয়ে সিগারেটটা নাবিলের হাতে ধরিয়ে দেয়।ধরিয়ে দিতে যাওয়ার সময় অবশ্য আহান ইই ছ্যাকা খায় নাবিল না।নাবিল সিগারেট হাতে নিয়ে বেকুবের মতো চেয়ে থাকে আহানের দিকে।শালিক কিছু বলছে না। চুপচাপ আহানের আচার আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে।আহান শালিকের সামনে দাঁড়িয়ে আবার শুকনো ঢোক গিলে।

” দেখছিস নাবিল খাচ্ছে ওইটা।ওই সব ছাইপাঁশ কে খায়।ইউ! পচা।মানুষ কেন যে সিগারেট খায়।আমি ভালো হয়ে গেছি ঐসব ছুঁই না।”

” আর কত মিথ্যা বলবি?লজ্জা করে না?”

শালিক আড়চোখে চেয়ে বলে।আহান তীব্র আত্মবিশ্বাস বুকে নিয়ে আবার মিথ্যা বলতে লাগে।

” আমি তো ভালো হয়ে গেছি।ভালো ছেলেরা মিথ্যা বলে?”

” না বলে না।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তুই ভালো ছেলে না।”

” তুই বেশি জানোস।আমার মতো ভালো ছেলে আর একটা পাবি তুই?”

শালিক চুপ করে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।সেই চাহনিতে ছিলো বিরক্তি আর রাগ।আহান তা বুঝতে পারে।কিন্তু প্রকাশ করে না বোধগম্য।নাবিল ও বাকীরা শালিকের চাহনি দেখে আহানমে জিজ্ঞাসা করে চল্লিশায় বিরিয়ানি দেবে কি না।আহান ধমক দেয় ওদের।শালিক কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,,

” জ্বী ভাইয়া অবশ্যই বিরিয়ানি পাবেন।স্পেশাল বিরিয়ানি।আহানের মা ং সে র বিরিয়ানি।সাথে বোরহানিও দেওয়া হবে।”

শালিকের কথা শুনে আহান ভয় পায়।এই মেয়ে দিন কে দিন কেমন হৃদয়হীনা হয়ে যাচ্ছে।ডর ভয় এই মেয়ের জীবন থেকে যেন মুছেই যাচ্ছে।আহান করুনা দৃষ্টিতে শালিকের দিকে চেয়ে বলে,,,

” কেমন বউ তুই জামাইয়ের মা ং স দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করতে চাস।”

” তুই কেমন জামাই?বউয়ের কথায় কই উঠবি বসবি তা না করে চোরের মতো সিগারেট খাস।”

বলেই তেড়ে যায় আহানের দিকে।আহানও ভো দৌড়।পুরো কলেজ মাঠ চক্কর দেওয়ার পর শালিক আহানকে ধরতে সক্ষম হয়।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,,

” তুই শা লা বেঈমান।প্রমিজ করিস।কথা রাখতে পারিস না। ”

” তোকে যেভাবে আমি ছাড়তে পারবো না তেমন সিগারেটকেও আমি ছাড়তে পারবো না।তুই হৃদয় হলে সিগারেট কলিজা।”

” ছা গ ল সিগারেট তোর কিডনি ফুসফুস কলিজা নাড়িভুড়ি সব ইন্না-লিল্লাহ করে দেবে।”

” আসছে ডাক্তারনি।”

” হ্যাঁ আসছি।”

হাঁপিয়ে কথাটা বলে শালিক ধপ করে মাটিতে বসে পরে।ঘন ঘন জোরে জোরে সে শ্বাস নিচ্ছে।আহান কাছে গিয়ে বসতেই শালিক আহানের শার্ট খামচে ধরে।আহান প্রশ্ন করে,,,

” কি হয়েছে শালিক?এমন করছিস কেন?”

শালিক বলতে পারে না।ঘন ঘন আর জোরে শ্বাস নেওয়া তার বেড়েই চলেছে।ইনহেলারের জন্য ইউনিফর্মের পায়জামার পকেটে হাত দেয় শালিক কিন্তু পায় না।ক্লাসে ব্যাগে মনে হয় ফেলে এসেছে সে ইনহেলারটা। শব্দের মাঝে লম্বা বিরতি নিয়ে সে আহানকে ইনহেলারের কথা বলে।আহান তৎক্ষনাৎ ক্লাস থেকে ইনহেলার নিয়ে আসে।ইনহেলার নিয়ে স্বাভাবিক হতে শালিকের বেশ সময় লাগে।আহান আড়চোখে তাকিয়ে বলে,,

” তোর এই রোগ হলো কবে থেকে?”

” অনেক দিন আগে থেকেই ছিলো।রিসেন্টলি খুব প্যারা দিচ্ছে এটা।আর তোমার জন্যই তো হয়েছে!”

শালিকের কথায় আহান অবাক হয়ে যায়।অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,,

” আমার জন্য?”

” হু,তুমি সিগারেট খাও দেখেই আমার শ্বাসকষ্ট বেশি হয়েছে।এভাবে একদিন দেখবে শালিক পাখি ঠুস করে….

শালিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই আহান শালিকের মুখ চেপে ধরে।ধমক দিয়ে বলে,,

” উল্টাপাল্টা কথা না বললে তোর পেটের ভাত হজম হয় না? ”

______💗

ব্লেন্ডারে আমের শরবত করেছেন মিসেস শান্তা কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শরবত মুখে দেওয়া যাচ্ছে না।বিশ্রী ভাবে তেঁতো।পরক্ষণেই মিসেস শান্তার মনে পরে শালিক গত শুক্রবারে ব্লেন্ডারে কিছু একটা ব্লেন্ড করছিলো।ঘুমে থাকায় শুধু আওয়াজ শুনেছেন।কি ব্লেন্ড করেছিলো তা উনার জানা নেই।

” শালিক।”

মায়ের ডাক শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে শালিক।

” কি হইছে?”

” ব্লেন্ডারে সেদিন কি ব্লেন্ড করেছিলি?”

” মুখে তো ব্রণ আর ব্রণের দাগ ভর্তি তাই নিমপাতা এনে ব্লেন্ড করে মুখের প্যাক বানিয়েছিলাম।তাই তো দাগ ব্রণ কমেছে মুখের।এই শুক্রবারও দেবো।”

মেয়ের কথা শুনে মিসেস শান্তার চোখ ছানাবড়া।এখন মেয়েকে মা র বে ন না কা ট বে ন বুঝে আসে না তার।

” পাটা থাকতে ব্লেন্ডারে কে বাটতে বলছে?”

” পাটায় আদা রসুনের কাঁচা গন্ধ।আমার কেমন গা গুলায় সেই গন্ধে।সেই গন্ধ ওয়ালা প্যাক মুখে দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই হয় না।”

” এত গুলা যে আমের শরবত বানালাম সেগুলোর কি হবে?”

” খাবে।”

” তেঁতোর চোটে মুখে দেইয়া দুস্কর আর বলে খাবে।”

এক প্রকার ধমক দিয়েই বলেন মিসেস শান্তা।তৎক্ষনাৎ শালিকের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।এই শরবত সে আহানকে খাওয়াবে। কতটা ভালোবাসে আহান ওকে তারও পরীক্ষা হয়ে গেলো মাঝখান থেকে শরবতও শেষ হলো।শালিক রান্নাঘর থেকে একটা কোকের বোতল এনে সবটুকু শরবত ভরে ফেলে বোতলে।রুম থেকে চুল আঁচড়িয়ে কোনো রকমে হাত খোঁপা করেই আহানের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়।

” কই যাস তেঁতো শরবত নিয়ে?”

” তোমার বাপকে খাওয়াতে।”

” মানে?”

” আহি ভাইয়াদের বাসায়।”

বেরিয়ে যায় শালিক।মিসেস শান্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ। বয়স বাড়ছে আর দিনকে দিন ছোট হচ্ছে মেয়েটা।

কলিং বেল বাজতেই মিসেস লাকী দরজা খুলে দেন।শালিককে দেখে এক প্রকার চমকেই যান তিনি।নিজে থেকেই শালিক ভেতরে ঢুকে।চাঞ্চল্যতাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মিসেস লাকীকে আহানের কথা জিগ্যেস করেন।সে বলে আহান ওর ঘরে আছে।

” কিন্তু তুই হঠাৎ এই সময়ে?”

” আম্মু শরবত বানিয়েছে।আহান ভাইয়ার জন্য নিয়ে আসলাম।আম ওর পছন্দ তো।”

” তাহলে আমাকে দে।তোর ফুপা এই মাত্র বাসায় ফিরলো।বাপ বেটা এক সাথে খাবে নি।”

কথাটা বলে মিসেস লাকী বোতল নিতে গেলেই শালিক না না বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।চমকে যান মিসেস লাকী।ফুপিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আহানের ঘরে চলে যায় শালিক।

” প্রাণপ্রিয় শোয়ামী আমার।আমি আপনার জন্য আপনার পছন্দের ফল আমের শরবত করে এনেছি।”

বলতে বলতে ভেতরে ঢোকে শালিক।আহান উঠে বসে বলে,,,

” কি ব্যাপার আজকে হঠাৎ তোর মুখ থেকে নিম্রমের রসের জায়গায় মধু ঝড়ছে যে!”

” রিসেন্টলি ডিব্বা ধরে চিনি খাওয়া ধরেছি তো!তোমার জন্য আমের শরবত এনেছি।নিজে বানিয়েছি আমি।”

” তাহলে তো খেতেই হয়!”

কথাটা বলে আহান বোতলটা নিয়ে শরবত খেতে শুরু করে।মুখে দিতেই তার চেহারার ভাবভঙ্গি বদলে যায়।

চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here