#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_৩৩
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
পরীক্ষা শেষে প্রিয়া, রাঢ়ী আড্ডা দিচ্ছে। নীল, শ্রাবণ দুইজনেই এদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এই দুইজন বিবাহিত মহিলার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। তারা এদেরকে চিনে না। নীল তো ভীষণ ক্ষেপে আছে রাঢ়ী, প্রিয়ার উপর। রাঢ়ীর বিয়ে হলো সেও তাদের ইনবাইট করলো না। এখন প্রিয়া সেও তাদের কে ধোঁকা দিলো। এরা বেষ্টফেন্ড হতেই পারে না।
শ্রাবণের চোখে জল ছলছল করছে। সে পারছে না মেয়েদের মত ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে। কত নিষ্টুর বান্ধুবী তাদের একটু দাওয়াতও দিলো না। সে একটু না হয় বেশীই খায় তাই বলে বিয়ের দাওয়াতে যেতে বলবে না। আরে সে’কি গ্রিফট ছাড়া যেতো না’কি। মেয়েরা সত্যিই হারামি হয়। এদের দিলে দয়া-মায়া হয় না।
কিন্তু নীলের চোখে জল না হলেও সে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়া, রাঢ়ীর উপর। তার ইচ্ছে করছে এই দু’জনকে একসাথে উঠিয়ে রাজাঝির দিঘিতে চুবাইতে। লুবনা তাদের পাশে বসে ফ্যাচ ফ্যাচ করে চোখের জল ফেলছে। তাকে তো সৌরভের মা দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো। বিয়ের কথা অনেকটাই পাকা হয়ে গিয়েছিলো। শুধু সৌরভের মা’ গেলেই তাকে আংটি পরাতো। কিন্তু সেদিন বিকেলে আচমকাই সৌরভের মা’ ফোনকল দিয়ে বললো তাদের ছেলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পরেরদিন না’কি বিয়ে হবে মেয়েদের গ্রামের বাড়িতে। মেয়ে হিসেবে প্রিয়ার নাম শুনে লুবনায় ঠাঁই বসে পড়েছিলো। প্রিয়া বলেছিলো তার আর সৌরভের বিয়ে কখনই হবে না। তাহলে এখন কিভাবে হয়ে গেলো এই ভেবে লুবনার চোখের জল ক্রমাগত স্রোতের ন্যায় উপচে পড়ছে। সৌরভ তাকে এভাবে রিজেক্ট করলো। সে দেখতে কি এতই খারাপ। প্রিয়ার থেকে তো দ্বিগুণ সুন্দরী সে। তাহলে সৌরভ কেনো তাকে পছন্দ করলো না। এই দুঃখ তার কখনো যাবে না।
প্রিয়া অনেক সাহস সঞ্চার করে নীল, শ্রাবণের পাশে বসে। মুখে কিঞ্চিৎ হাসি তার। নীল, শ্রাবণ ভাবলেশহীন বসে আছে। প্রিয়া আমতা আমতা করছিলো প্রথমে। পরে নিজেকে স্থির করে বললো,
বিশ্বাস কর। এই বিয়ে নিয়ে আমি অনেক দো’টানায় ছিলাম। সৌরভকে স্বামী হিসেবে মানতে আমার অনেক সময় লেগেছে। আর সত্যি বলতে কি আমার প্রচুর লজ্জা লাগছিল। তোদের দাওয়াত দেওয়া তো পরের কথা আমি নিজেই নিজের সাথে চোখ মিলাতে পারছিলাম না। কিভাবে সৌরভকে বিয়ে করবো তাকে কিভাবে স্বামী মানবো। এসব দোটানায় থাকতে গিয়ে আমি তোদের যে দাওয়াত দিই নাই তা নয় কিন্তু। আসলে লজ্জায় তোদেরকে দাওয়াত দিই নাই। তোরা যদি জানতি তাহলে আমাকে প্রচুর পঁচাইতি। কিন্তু রাঢ়ীকে তো আমি দাওয়াত দিই নাই। সে তো পরশ ভাইয়ার স্ত্রী হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে। আমি তো কাউকে দাওয়াত দিই নাই।
পরশের কথা শুনে নীল, শ্রাবণ বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো রাঢ়ীর দিকে। শ্রাবণ কটমট করে রাঢ়ীকে বললো,
কত বড়ো হারা’মি দেখছো। নিজের জামাইয়ের নাম পর্যন্ত বলে নাই আমাদের। কত ধুরন্ধর ভাইরে ভাই।
রাঢ়ীর ছেড়ে দে মা’ কেঁদে বাঁচি অবস্থা এখন। এই ভয়ে সে পরশের নাম বলেনি। সে জানতো এই হারা’মি দোস্তগুলা তার ইজ্জতের ফালুদা বানাবে। তাই বলতে গিয়েও সে পরশের নাম মুখে আনেনি। তার মুখে কিঞ্চিৎ মেকি হাসি। সে শ্রাবণকে বললো বিশ্বাস কর আমি জানতামই না আমার বিয়ে পরশের সাথে হচ্ছে। বিয়ের পর আমি ওর মুখ দেখেছি। আমি দাওয়াত দেয়নি ভাইয়াদের উপর রাগ করে। কিন্তু পরশের নাম বলেনি লজ্জায়। তোরা সবগুলা মিলে আমাকে পঁচাইবি তাই।
লুবনা আচমকা কান্না থামিয়ে বললো,
তোরা দু’জন কি সুন্দর জা’ হয়ে গেলি। আর আমার পোড়া কপাল। আচ্ছা সৌরভের আর কোনো দোস্ত নাই যে আমাকে বিয়ে করবে? তাহলে আমিও তোদের জা’ হয়ে যাবো।
প্রিয়া লুবনার কথা শুনে চমকে উঠে। আরে সে তো একবারও খেয়াল করেনি রাঢ়ী তার একদিক থেকে জা’ হয়। রাঢ়ী প্রিয়ার দিকে তাকালো দুজনে চোখাচোখি হয়ে লাজুক হাসলো। তবে লুবনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।
আহারে! বেচারির জন্য সৌরভের একজন বন্ধুকে পাত্র হিসেবে খুঁজতে হবে তাহলে।
__________________
দীর্ঘক্ষণ কলেজ ফটকে অপেক্ষা করেও যখন সৌরভের দেখা পেলো না প্রিয়া অবাক হলো। তাকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে বলেছিল। তাহলে এই সৌরবিদ্যুত এখন কোথায়? সেই আধাঘন্টা ধরেই সে অপেক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু এই সৌরবিদ্যুত এর আসার নামগন্ধও নাই। ভারী অদ্ভুত তো। তার রাগ বাড়ছে ধীরে ধীরে। পরে সে অগত্যা হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তার চোখ পড়লো
রেষ্টুরেন্টের কাঁচের জানালা ভেদ করে ভেসে আসা এক পুরুষ অবয়বের দিকে। তার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। সৌরভ আনতে যাবে বলে যাইনি। কিন্তু রেষ্টুরেন্টে বসে অন্য মেয়ের সাথে গল্প করছে। তার কাছে কি আমার একটুও মূল্য নাই। অন্য মেয়ের সঙ্গ পেয়ে নিজের বউকেই ভুলে গেছে। এটাই কি তার দায়িত্ব? প্রিয়ার শীতল দৃষ্টি মূহুর্তে রক্তবর্ণ ধারণ করলো। অনেক হয়েছে। সে কেনো সহ্য করবে তার স্বামী অন্য মেয়ে নিয়ে ডেট করবে? দরকার হলে তার সাথে ডেট করবে। তার সাথে ঘুরবে কিন্তু অন্যমেয়েকে নিয়ে সে ঘুরতে দিবে না।
প্রিয়া চোয়াল শক্ত করে সে সৌরভের দিকে এগিয়ে গেলো। কাঁচের দরজা খুলে সোজা সৌরভের গা ঘেঁষে এক হাত সৌরভের কাঁধ ধরে সে বসলো।
সামনে বসা পিউ মূহুর্তে হতবিহ্বল হয়ে গেছে প্রিয়ার কান্ডে। তার চক্ষুদ্বয় কোটর থেকে বের হবার উপক্রম। এই মেয়ে নাকি সৌরভকে পছন্দই করে না শুনেছে। কিন্তু এখন তো চোখের সামনে যা দেখছে তাতে তো তার চক্ষু ছানাবড়া।
বাপ্রে! সৌরভ নিজেও প্রিয়ার কান্ডে হতবাক। কিন্তু এভাবে তার বউ এসে তার কাজ সহজ করে দিবে সে ভাবতেই পারিনি। সে তো এতক্ষণ বউয়ের কাল্পনিক প্রশংসা করছিল পিউর কাছে। তার বউ তাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। সারাক্ষণ তাকে ফোনকল করে, সারারাত তার সাথে কথা বলার জন্য বায়না করে, একটু দেখা না হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে। তাকে পাগলের মত ভালোবাসে তার বউটা। কিন্তু এখন তো সত্যিই দেখছে তার বউটা তাকে কিভাবে ধরে রেখেছে। সে নিজেও তার হাত প্রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনমনে মিট মিট করে হাসছে সে। যাক অবশেষে তার বউ তাকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে। নয়তো সে একটু ধরলে বলবে অসভ্য, বেয়াদব আরও কতকিছু। সে তো ভয়েই বউয়ের কাছেই ঘেঁষে না।
প্রিয়া মুচকি হেসে সৌরভের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
আমার আসতে একটু লেইট হয়ে গেলো। সর্যিই জামাইটা। তুমি অনেক আগে আসছো, তাই না? এবারের মত ক্ষমা করে দাও, পরের বার আর ভুল হবে না। একদম সময় মত আমি হাজির হয়ে যাবো।
প্রিয়া আলগোছে সৌরভের হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে পুরো হাত নিজের দখলে করে নেয়। তারপর দু’জনের হাত পিউকে দেখিয়ে টেবিলের উপরে রাখে। সে পিউর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়। তারপর রগড় গলায় বললো,
পিউ আপু ভালো আছো। তোমার সাথে আমাদের বিয়ের পরে এই প্রথমবার দেখা হলো। তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে তোমার। কিন্তু আমাদের কথা একদমই জিজ্ঞেস করো না। আমার জামাই তো আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। সারাক্ষণই মুখের কোণে লেগেই থাকে বউ’ বউ’। একটু না দেখলে পাগল হয়ে যায়। আমার বউটা কোথায় রে? আমার প্রিয়ারানী, আমার বেগমটা কোথায়? আরও কতকিছু যে ডাকে সব তো তোমাকে বলা যাবে না। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি?
সৌরভ যারপরনাই অবাক প্রিয়ার মুখ নিঃসৃত এমন বাক্যে শুনে। যে মেয়ে লজ্জায় তার সামনে মাথা তুলতে পারে না। আর এখন দিব্যি কিভাবে পিউর সামনে কথা বলে যাচ্ছে। তার উপর তার বাহু ধরে নিজের হাতটা কত সুন্দর করে ধরে আছে। এই না হলে তার রণচণ্ডী বউ। জামাইকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে জেলাস ফিল করছে। ভালোই হয়েছে তার জন্য।
পিউ দু’জনের দিকে তাকিয়ে আত্মগ্লানির একটা নিশ্বাস ছাড়লো। হয়তো তার জন্য সৌরভ ছিলই না। প্রিয়া আসবে বলেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তবে দিন শেষে তার নিজের কাছে একটু হতাশ লাগছে সৌরভ তার সাথে এভাবে কখনই কথা বলেনি যতটা প্রিয়ার সাথে বলছে। তার মুখে বিতৃষ্ণার হাসি। বেদানার্ত নয়ন দুটি তার। মলিন মুখে সে সৌরভের দিকে তাকিয়ে তার ব্যাগ থেকে চকচকে নতুন একটা খাম বের করলো।
প্রিয়া পিউর গতিবিধি খেয়াল করছে। এত বড়ো খাম দেখে প্রথমে সে চমকালো। কিন্তু পরক্ষণেই পিউর বলা কথায় তার অস্থির বদন শান্ত হল। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললো,
‘আলহামদুলিল্লাহ’ আপু শাদী মোবারক আপনাকে। সৌরভ আর আমি অবশ্যই যাবো। তারপর সে সৌরভের দিকে তাকিয়ে তার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো, এ্যাই’ বলো না আপুকে, আমরা যাবো।
সৌরভ ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। প্রিয়ার এভাবে তার থুতনিতে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে এভাবে আদুরে ভাবে কথা বলতে দেখে। সে অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে আছে এটা তার বউ তো!
প্রিয়া সৌরভের তাকানো দেখে চোখ সরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি। কিন্তু সৌরভ সরাতে দিলো না। সে প্রিয়ার কানে ফিসফিস করে বলল,
আজকে আমার প্রিয়ারানীকে একদম বউ বউ লাগছে। পুরাই মিসেস সৌরভ লাগছে গো বউ।
পিউ আর বেশিক্ষণ বসলো না। তার কাছে অস্থির লাগছে। দুই নব দম্পতির মাঝে নিজেকে কেমন অসহায় লাগছিল। সে দ্রুতই বের হয়ে গেলো তার বেদানার্ত আর তৃষার্ত বদন নিয়ে।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_৩৪
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
প্রিয়ারানী তাহলে সত্যিই আমার সাথে ডেটে যেতে যান, ঠিক আছে চলেন। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আমি যদি উল্টা পালটা কিছু করি তখন কিন্তু বেহায়া, অসভ্য বলে গালি দেওয়া যাবে না।
এদিকে প্রিয়ার কোনো হেলদোল নেই। সৌরভের কথা সে নিশ্চুপ শুনে যাচ্ছে। তার মনে এই মূহুর্তে অভিমানের বড্ড পাহাড় জমে আছে। সেইটা হয়তো সৌরভের সম্পূর্ণ অজানা। প্রিয়া সৌরভ থেকে সরে বসতে চাইলো। কিন্তু সৌরভ তার বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আরও শক্ত করে প্রিয়াকে আঁকড়ে ধরে আছে। সৌরভ প্রিয়ার কানে ফিসফিস করে বললো,
কি ব্যাপার ছুটতে চাইছো কেনো? নিজ থেকেই তো কাছে এলে। তাহলে আবার পালাতে চাইছো কেনো?
প্রিয়ার মুখে মলিন হাসি। সে সৌরভের দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে বললো,
আপনার লুবনাকে বিয়ে করা উচিৎ ছিল। মেয়েটা আপনাকে বড্ড ভালোবাসে।
আচম্বিত প্রিয়ার মুখে এহেন বাক্য শুনে সৌরভ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে ভেবে পায় না এই মেয়ে আচমকা এমন কথা কেনো বলছে? তার মাথা ঠিক আছে তো? সে কেনো লুবনাকে বিয়ে করতে যাবে? সেও সম্পূর্ণ দৃষ্টি স্থির রেখেছে প্রিয়ার দৃষ্টিতে। তার জিগ্যেসু দৃষ্টি অনেক প্রশ্ন করতে চাইলেও সে করলো না। রগড় গলায় বলল,
তাহলে তোমার সতীনের সংসার করার ইচ্ছে আছে দেখছি। আগেই বললে পারতে। এই যে পিউ সেও আমাকে বড্ড ভালোবাসে। আমাকে বড্ড ভালোবাসে এরকম আরও অনেকজন আছে সবার লিষ্ট করে নিও একদিন। তারপর সবাইকে একসাথে বিয়ে করে নেবো। কেমন!
প্রিয়ার মুখটা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলো। সৌরভ কেনো তাকে বুঝে না। সে তো এখন বললেই পারত আমি তো আমার প্রিয়ারানীকে ভালোবাসি। অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করবো। প্রিয়ার অভিমানের পারদ থরথর করে বাড়তে লাগলো। একে তো তাকে কলেজ থেকে আনতে যাইনি। তার উপর পিউর সাথে বসে রেষ্টুরেন্টে ডেট করছে। সে যে কলেজ ফটকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো সেই হুঁশও তার নেই। থাকবে কেনো? প্রাক্তনকে পেয়ে তার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। নাজমা আন্টি তো লুবনার সাথে বিয়ের কথা অনেকটাই পাকা করে ফেলেছিল তাহলে তাকেই বিয়ে করতো। তাকে কেনো শুধু শুধু বিয়ে করল? প্রিয়া সৌরভের কথার জবাব দিলো না। তার বক্ষস্থলে তো চাপা অভিমান জমে আছে।
সৌরভ প্রিয়ার কোনো জবাব না পেয়ে পুনরায় রগড় গলায় বললো,
তা কবে বিয়ে করতে হবে এদেরকে?
প্রিয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো সে সৌরভ থেকে ছুটতে চাইলো। ধস্তাধস্তি করছিল বেশ। সে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
আমি বাসায় যাবো। ছাড়ুন।
“তুমি বাসায় যাবে। কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আমার সাথে তুমি ডেটে যাবে।”
“আপনি ঐ পিউর সাথেই ডেট করেন। কেমন! আমি চলে যাবো। ছাড়ুন আমাকে।”
“যদি না ছাড়ি কি করবে?”
প্রিয়ার মুখে বক্র হাসি। সে আলগোছে সৌরভের গেঞ্চির ফাঁক গলিয়ে তার হাত ঢুকিয়ে দিলো। তারপর খুব জোরে সৌরভের উদরে চিমটি কাটলো। সৌরভ আহ্! করে চিৎকার দিয়ে উঠল। আর এই সু্যোগে প্রিয়া পগারপার। তাকে আর কে পায়?
সৌরভ হতভম্ব হয়ে বসে আছে। তার বউ তাকে বেশ বড়োসড়োই চিমকি কেটেছে। কিন্তু মুখে তার প্রশান্তির হাসি। তার চিৎকার শুনে পাশের কেবিন থেকে এক ভদ্রলোক উঠে এলেন। বয়স সম্ভবত ত্রিশের কোঠায় হবে। ভদ্রলোক কাছে এসে সৌরভের সামনে মুখ প্রশস্ত করে হাসলেন। সৌরভকে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
ভাই টিনেজার বিয়ে করেছেন।
সৌরভ ভদ্রলোকের কথা শুনে হাসলেন।
ভদ্রলোক সৌরভের হাসি দেখেই যা বুঝার বেশ ভালোভাবে বুঝে ফেলেছেন। নিজ থেকেই আবারও বললেন,
টিনেজার বউ কিন্তু বেশ মারমুখী হয়। এরা কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে। আপনার নতুন বিয়ে হয়েছে বুঝাই যাচ্ছে। দু’এক বছর কিন্তু বেশ ভোগাবে আপনাকে। পরে অবশ্যই,,, বাকি কথা বলার আগেই তাদের সামনে এক নারী ছায়ামূর্তি এসে দাড়ায়। ভদ্রলোক আর কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। সেই নারী ছায়ামূর্তিই বললো,
আর তোমরা ছেলেরা ধোয়া তুলসীপাতা। তোমরা কিছুই করো না। সব বউয়ের দোষ।
সৌরভ এদের কান্ড দেখে হাসলো। কিন্তু আর বেশিক্ষণ বসলো না। ভদ্রলোক আর তার বউকে বিদায় বলে দ্রুতই বের হয়ে গেলো। তার যে রণচণ্ডী বউকে সামলাতে হবে।
রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই তার রণচণ্ডী বউকে খুঁজতে লাগলো। খুঁজে খুঁজে অবশেষে দেখলো সে রিকশা করে চলে যাচ্ছে। সৌরভ আর দেরি করলো না সেও প্রিয়ার পিছু পিছু বাইক নিয়ে ছুটলো।
কিঞ্চিৎ ব্যবধানে প্রিয়ার রিকশা আর সৌরভের বাইক পাশাপাশি চলছে। সৌরভ বাইকের গতি কমিয়ে রেখেছে। প্রিয়া লজ্জায় আর তাকাচ্ছে না। কিন্তু সৌরভ মিট মিট করে হেসে যাচ্ছে। সৌরভ আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
ম্যাডাম, আপনি আমার সাথে ডেট করবেন বলে এখন রিকশাই কেনো যাচ্ছেন। রিকশা থেকে নামুন।
প্রিয়া সৌরভের দিকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাকালো। সত্যিই যদি এখন তাকে কোথাও নিয়ে যাই। সে নামতে চাইলো না। কিন্তু সৌরভ রিকশার সামনে গিয়ে তার বাইক দাঁড় করালো। প্রিয়া ভয়ে ভয়ে রিকশা থেকে নামলো। তাকে বাইকে উঠতে বললো। সে অগত্যা বাইকে উঠলো। সৌরভ পিছনে তাকালো অগ্নিদৃষ্টিতে। কিন্তু মুচকি হেসে বললো রেষ্টুরেন্টে যেভাবে শক্ত করে ধরেছিলে ঠিক সেইভাবে এখন আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
প্রিয়া ভালোই ফ্যাসাদে পড়েছে। সে এক হাত সৌরভের কাঁধে রাখলো। সৌরভ মিট মিট করে হাসছে। তারপর প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আমরা এখন ডেটে যাবো অনেক দূরে কোনো এক অজানা শহরে। যেখানে থাকবো শুধু তুমি আর আমি। একটা নির্জন খোলামেলা মাঠ থাকবে। সেখানে তুমি আমার কাঁধে চুপটি হয়ে বিড়ালছানার মত গুটিশুটি হয়ে মাথা রাখবে। কিন্তু আমি দু’হাতে তোমাকে জড়িয়ে নেবো আমার বক্ষস্থলে। তখন তোমার উষ্ণ নিশ্বাসের প্রতিটি শ্বাস আমি মুগ্ধ হয়ে দেখবো অপলক। তোমার তির তির করে কাঁপা ওষ্ঠদ্বয়ও আমাকে ভীষণভাবে টানবে তখন। হয়তো তখন নেশাকাতুর হয়ে সেখানে ডুবে যেতে পারি অনিমেষ। হয়তো আরও কত নিষিদ্ধ চাওয়াও জাগ্রত হতে পারে। তারপর নিজেদের ভুবনে হারাবো আমরা, যেখানে অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমাদের ডেট কেমন হবে প্রিয়ারানী?
প্রিয়ার তো কাঁদো কাঁদো অবস্থা। সে এখন কোথাও যাবে না। সে সৌরভকে অনুরোধ করলো তাকে এখন কোথাও না নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে তো এমনিই মজা করেছে ডেটের কথা বলে।
কিন্তু সৌরভের মুখে কুটিল হাসি। সে প্রিয়ার অনুরোধ শুনলো না। বাইক ঘুরিয়ে অন্য রাস্তার দিকে ছুটলো। প্রিয়া ভয়ে হাঁসফাস করতে লাগলো। কিন্তু দীর্ঘভ্রমণের পর সৌরভের বাইক তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালে সে পুরাই হতবাক হয়ে গেলো। প্রিয়া দ্রুত নামলো বাইক থেকে কিন্তু সৌরভ পিছন থেকে তার হাত খপ করে ধরে ফেললো। প্রিয়াকে তার সামনে নিয়ে এসে ক্ষীণস্বরে বললো,
রেষ্টুরেন্টে যা করেছো তার জন্য কিন্তু তোমাকে আমি মাফ করবো না। মহা অন্যায় করেছে তুমি আমার সাথে। কেউ নিজের স্বামীর সাথে এরূপ ব্যবহার করে। তুমি আমার কাছে এখন মাফ চাইবে। আমি যতক্ষণ না ক্ষমা করছি তার আগে বাসায় প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রিয়ার এবার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। সে সৌরভকে আমতা আমতা করে বললো,
সর্যিই, আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন।
সৌরভ প্রিয়ার সরি একসেপ্ট করলো না। সে প্রিয়ার হাত আরও শক্ত করে ধরলো। তারপর আবারো ক্ষীণস্বরে বললো,
প্রথমে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে। তারপর রেষ্টুরেন্টে যেভাবে হাসি-খুশি মুখে বলেছো। ঠিক সেইভাবে বলবে জামাইটা সরি ভুল হয়ে গিয়েছে। আর কখনো করবো না।
প্রিয়া বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো সৌরভের দিকে। শুকনো ঢোক গিলল সে। এভাবে বলা তার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। সে ভয়ে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো। পুরো শরীর হিম হয়ে গেছে তার সৌরভের কথা শুনে। লজ্জায় যখন কাঁচুমাচু করছিলো। আচমকাই কারো রগড় গলায় বলা কথা শুনে সে থমকালো।
তিন তলার বারান্দা থেকে গৌরব প্রিয়া আর সৌরভকে দেখতে পায়। তারপর সে মুচকি হেসে বলে উঠল,
এ্যাই যে নিউ কাপল, রোমান্স করার হলে রুমের দরজা বন্ধ করে করুন। কেউ দেখবে না। কিন্তু দয়া করে এভাবে খোলামেলা রোমান্স করতে যাবেন না। এতে আপনাদের ভবিষ্যৎ বাচ্চারা নির্লজ্জ হবে কিন্তু।
সৌরভ ভাইয়ের ইশারা বুঝলো। সে দ্রুতই প্রিয়ার হাত ছেড়ে দিলো। কিন্তু যাওয়ার আগে প্রিয়াকে বলল,
রাতে ছাদে আসবে কিন্তু। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। বিয়ের রাতের সেই শাড়িটা পরে এসো কিন্তু। তোমাকে শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। যদি না আসো তবু্ও সারারাত অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
প্রিয়া সৌরভের প্রতিত্তোর করলো না। সে নিশব্দে নিজের কদম বাড়ালো। সৌরভ পিছন থেকে ডাকলো,
আসবে তো প্রিয়া?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,
কি মনে হয়, সৌরভের কথা রাখতে প্রিয়া কি যাবে?