বসন্ত এসে গেছে পর্ব ৩০

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ৩০

,
,
সকালে ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করে অপু।
অন্যকোনদিকে তার কোন হুশ নেই।
তার পাশের চেয়ারে বসে ক্রমাগত উশখুশ করে চলে নোমান। অপুর সাথে কথা বলার জন্য ভেতরটা তার ছটফট করছে।
অপুর মুখের একটু কথা শোনার জন্য হা পিত্তেশ করে মরছে সে।
কিন্তু অপু?সে তো নির্বিকার।
কাল থেকে সে একটা টু শব্দ ও করেনি।নোমানের সাথে কথা বলা দুরের কথা ফুলির সাথেও কোন কথা বলেনি।
পুরোপুরি চুপচাপ হয়ে গেছে সে।
হুট করে এতোটা নিরবতায় নোমানের মনে অজানা কোন ভয় দানা বাঁধছে।
অপুর সাথে কথা বলার জন্য মন টানছে খুব।
কিন্তু কি বলবে?
কিভাবে বলবে?নোমান কিছুই বুঝতে পারছেনা।
কি বলবে সে?আমার ভুল হয়ে গেছে?
ক্ষমা চাইবে অপুর কাছে?
নোমান খান কখনো কারো কাছে ক্ষমা চাওয়া দুরের কথা ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবতে পর্যন্ত পারেনি।আর আজ সে কিনা ক্ষমা চাইবে?
তবু চাইবে।অপুর রাগ ভাঙানোর জন্য যদি ক্ষমা চাইতে হয় নোমান তাতেও রাজি।
কিন্তু কিভাবে কি বলা শুরু করবে নোমান কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তাছাড়া অপু তো নোমানের সাথে কোন কথাই বলছেনা।
নোমানের দিকে একবারও ফিরে পর্যন্ত তাকাচ্ছেনা।

কাল রাতেও অপু নোমানের রুমে আসেনি।
অন্য রুমে ঘুমিয়েছে।
নোমান কয়েকবার গিয়েছিলো সে রুমের সামনে।
দরজার কাছ দিয়ে ঘুরঘুর করেছে কিন্তু অপু দরজা খোলেনি।
সে নিজের মতো থেকেছে।

নোমান ভেবে পায়না এতোটা রাগ করেছে অপু,সে রাগ কি এতো সহজেই ভাঙাতে পারবে সে?
তবুও একবার চেষ্টা তো করা যাক।এভাবে থাকলে তো তারই বেশি কষ্ট হচ্ছে।
বুকের ভেতরটা যে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।

কথা বলার জন্য নোমান টেবিলের কর্নারের জগ ধরার চেষ্টা করে।
এমন ভাব করে যেনো জগটা সে ধরতে পারছেনা,তার খুব পানির তেষ্টা পেয়েছে।
যদিও তার পাশেই আরেকটা জগ রাখা আছে।নোমান বলে,

–একটু জগটা এগিয়ে দাওনা অপরুপা।

অপু তবুও নির্বিকার।
নোমানের কথা শুনেছে কিনা তাও বোঝা গেলো না।

নোমান হতাশ হয়।তার বুদ্ধিটা কাজে লাগলো না ভেবে বড় নিশ্বাস নেয়।
মনে মনে আরেকটা বুদ্ধি বের করে।
বলে,

—বুঝলে অপরুপা,দাদি না খুব অসুস্থ জানো?
ঐ যে?দাদিকে চিনেছো তো?
গ্রাম থেকে এসেছিলো?
বাবার মৃত্যুর দুদিন পর যে বাড়িতে চলে গেলো?

অপু চোখ তুলে তাকায়।নোমানের দিকে ফিরে কৌতুহলী শ্রোতার মতো কথা শোনে।

নোমান মনে মনে হাসে।
তার প্রথম বুদ্ধিটা ফেল হলেও দ্বিতীয় বুদ্ধিটা কাজে লাগায় খুশি হয়।
আবার বলে,

—সেই দাদি খুব অসুস্থ বুঝলে।
খুব মানে খুব।
বাবার মৃত্যটা তো সে মেনে নিতে পারেনি।যতো যাই হোক, ছেলে তো।
সে নাকি তোমাকে খুব দেখতে চাচ্ছে।
আমাকে ফোন করেছিলো তো।
তোমায় নিয়ে যেতে বললো গ্রামে।

একটু থেমে আবার বললো,

—তুমি কি যাবে অপরুপা?

কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও অপুর মুখ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে একরাশ হতাশা ভর করলো নোমানের উপর।

এবারের বুদ্ধিটাও ফেল হলো?
কতো ভেবে ভেবে বুদ্ধিটা বের করেছিলো নোমান।
ভেবেছিলো গ্রামে গেলে অপুর মনটা একটু ভালো হবে।তখনি নাহয় অপুর রাগ ভাঙাবে নোমান।
কিন্তু তা আর হলো কই?

প্লেটে অর্ধেক খাবার রেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো নোমান।
খাওয়ার মতো কোন ইচ্ছে হচ্ছে না তার।
কেমন যেন হতাশ লাগছে।
অপুকে হারানোর ভয়টা ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।

একপা এগোতেই অপুর গলা পেলো সে।

—আমি যাবো।

নোমানের নিরাশ হওয়া অন্ধকার মুখ হুট করে আলোকিত হয়ে উঠলো।
অপুর দিকে একপলক ফিরে হাসি মুখে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো সে।

—–

আলমারি থেকে বেছে বেছে কয়েকটা শাড়ি নিয়ে ব্যাগে ভরছে অপু।
গ্রামে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাতে বলেছে নোমান। কাল সকাল সকাল নাকি তারা রওনা হবে।সে উদ্দেশ্যে যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে সে।

এমন সময় দড়জা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে নোমান।
অপুর দিকে একপলক দেখে সেও আলমারির দিকে এগোয়।
অনেক ঘাটাঘাটি করেও একটা জামা বের করেনা সে।
মুখটা খুব বিরক্ত দেখায়।
আমলামির প্রত্যেকটা জামা-কাপড় এলোমেলো করে।এদিক-সেদিক ছিটায়।
এসবের মাঝে আঁড়চোখে অপুর দিকে তাকায়।
মুলত এসব সে অপুকে দেখানোর জন্যই করছে।
যাতে অপু যেচে এগিয়ে আসে নোমানকে সাহায্য করার জন্য।
কিন্তু এতেও অপুর ভাবগতির বিশেষ কোন পরিবর্তন লক্ষ না হওয়ায় মন খারাপ হয় নোমানের।
মুখ ফুটে বলে ওঠে,

—অপরুপা?

অপু উত্তর নেয়না।উত্তর যে দেবে এমনটা আশাও করেনি নোমান।
সে আবার বলে,

—আমার জামা কাপড় একটু গুছিয়ে দেবে?
আমি ঠিকমতো কিচ্ছু খুজে পাচ্ছিনা।

কথাটা বলে আবার আলমারিতে হাত দেয় নোমান।
অপু পাশ কাটিয়ে এগিয়ে আসে।
ঠান্ডা স্বরে বলে,

—আমি দিচ্ছি।

এতটুকু কথাতেই নোমানের চোখেমুখে বিশ্ব জয় করা হাসি ফুটে ওঠে।
বুকের ভেতর দিয়ে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়।
দ্রুত হেটে অপুকে জায়গা করে দেয়।
অপু বেছে বেছে যত্ন করে নোমানের জামা গোছায়।নোমান একধ্যানে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখে।প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে।

মনে মনে ভাবে,গ্রামে যাওয়ার আগেই এতটুকু কথা বলেছে অপু,গ্রামে যাওয়ার পর পুরোটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে সে।
,

,

,
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here