ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ২৮

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ২৮

রোদেলা বাসায় পৌছানোর পর থেকেই ঘোমোট হয়ে বসে আছে.. নিজের রুমে কুলুপ এটে বসে আছে সে.. কারো সাহস ই হচ্ছে না রোদেলাকে গিয়ে ডাক দেয় তারা।। হাসনাতের অবস্হা ও সেইম.. যদিও অনেকটা সাহস করে বিয়েটা করে ফেলেছে সে..কিন্তু এখন তার গলাটা বারবার শুকিয়ে আসছে… এ নিয়ে দশ গ্লাস পানি খেল সে… শামীম সাহেব পানির জগটা সরিয়ে রেখে বলল– কিরে?? বাঘডাস.. বিয়ের সময় তো খুব বাঘ সেজেছিলি.. হঠাৎ বাগডাশ হয়ে গেলি কেন?
তার এই কথা শুনে হিমেল সাহেব শমীমের সাথে ক্ল্যাপ করে হেসে দিল.. হাসনাত দুইজনের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল– তোমাদের মতো হয়েছি আর কি. বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া। সেইম. নিজেরা যখন বৌ এর নামে বদনামি কর তখন বাঘ থাকো.. কিন্তু বৌয়ের সামনে আসতেই বিড়াল হয়ে বসে ম্যাও ম্যাও কর.. এইবলে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো.. শামীম সাহেব হিমেলের দিকে রেগে তাকিয়ে বলল– আরো বল গা নিজের পারসোনাল কথা নিজের ছেলের সামনে.. তারপর হাসনাতের দিকে তাকিয়ে বলল– আমি তোর শশুর লাগি.. সুতরাং এখন থেকে এইসব বলা অফ ওকে…
হাসনাত পিছন দিকে লাফ দিয়ে টেবিলে বসতে বসতে বলল– ওকে শশুরপাপ্পা.. তবে যেহেতু শশুর হয়েছেন.. জামাইয়ের সাহায্যটা ও করে দিন না…
শামীম ব্রু কুঁচকে বলল– শশুরপাপ্পা কি?? আব্বা ডাকবি.. আর হেল্পটা কি…
হিমেল হাসতে হাসতে বলল– আর কি.. ওর বাসর টা বৌকে বলে ঠিক করে দেওয়া আর কি..
শামীম চমকে হাসনাতের দিকে তাকালো.. আর হাসনাত সুবোধ বালকের মতো তাকে চোখ মেরে মুচকি হাসি দিল.. শামীম মাথা দোলিয়ে বলল– আহা,, আমাদের সেই কি যুগ ছিল.!!!.শশুরকে দেখলে হাটু কাপতো আমাদের। আর আজকালকার ছেলেদের!!!
হিমেল মুচকি হেসে বলল– সবই মৌহমায়া!!
হাসনাত দুজনের দিকে মুখ বাকিয়ে তাকিয়ে বলল– তো আর কিভাবে বলব তোমাদের… একত্রিশটা বসন্ত আর শীতকাল চলে গেছে জিবন থেকে আর কতো??
তখনই হঠাৎ ইফতি ওদের কথা শুনে বলল– ভাই,,, তোমার কপালটা কতো ভালো.. আমার কপালের সাথে একটু ঘষা দিয়ে দাও না.. আমিও একটু আমার শশুরকে দুকথা শুনিয়ে দিয়ে আসি…
তখনই ইফ্ফাতের বাবা ঐ রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন!! তিনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো— কি নিয়ে কথা ইফতি??
ইফতি পরপর কয়েকবার ঢুক গিলল.. যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা কেন হয়?? বড় ভাবনার বিষয়!!
সে আমাতাআমাতা করার আগেই হাসনাত বলল– কিছু না আন্কেল,,, আমাকে জ্বালানোর জন্য বলছে..
ওনি ওহ আচ্ছা… বলে ঐখান থেকে চলে গেল.. আর ইফতি আটকে রাখা নিশ্বাস টা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল…
হাসনাত দুপাশে মাথা দুলিয়ে রোদেলার কাছে যাওয়ার জন্য নতুন প্লান রেডি করতে ভিতরে চলে গেল…

রোদেলার মা মিতা আর হাসনাতের মা মায়া একসাথে নিজেদের সুখ দুঃখে গল্প করতে করতে হেসেলের বাকি কাজগুলো শেষ করছে.. আর তাদেরকে দেখতেই হাসনাতের মাথায় দারুন এক বুদ্ধি খেলে গেল.. নিজেকে নিজে কয়েকবার শাবাসি দিল সে।।আসলেই সিরিয়াল দেখে অনেক কিছু শিখে ফেলেছে সে…মেয়েদের মাথায় তাইতো এতো বু্দ্ধি!! এইসব ভাবতে ভাবতে কিচেনের দিকে রওনা হল সে..হঠাৎ কি মনে করে ফ্রিজ থেকে একটা লেবু নিয়ে চোখে হালকা লেবুর রস দিয়ে কিচেনে চেয়ারের ওপর ধুপ করে বসে পড়লো হাসনাত! ..
মিতা হঠাৎ হাসনাতকে এভাবে বসতে দেখে ছোটে আসলো তার কাছে. পরম মমতায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল– কি হয়েছে আব্বু??
হাসনাত মুখে মেকি কান্না ঝুলিয়ে বলল– এখানে ভালো লাগছেনা আর ফুফু.. রোদেলা রুম থেকে বের ই হচ্ছে না.. আজ বিয়ে হল আর আজ ই ও এভাবে…. সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে..
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার ছেলের দিকে.. মায়া খুব ভালো করে বুঝতে পারে কোনটা ছেলের আসল কান্না আর কোনটা নকল..এখন যে নকল কান্না করছে বেশ বুঝছে সে!!
বেবি হওয়ার আগে খুব করে আল্লাহর কাছে একটা মেয়ে চেয়েছিল সে.. কিন্তু আল্লাহ তাকে একটা ছেলে দিয়ে দিল.. এতেও তিনি অনেকটাই খুশি ছিলেন.. আল্লাহর নিয়ামত বলে কথা.. কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে আল্লাহ হয়তো তার দোয়া অর্ধেকটা কবুল করে নিয়েছিলেন তাই তো মেয়েদের মতো ড্রামাবাজ একটা ছেলে তাকে গিফট দিয়ে দিয়েছেন..
এইসব ভেবে দির্ঘশ্বাস ফেলে মায়া যেই কিছু বলবে তার আগে মিতা তীব্র ঝাঝের সাথে বলল– তোর কোন দোষ নেয় সব দোষ রোদেলার… আয়.. তুই আজকে রোদেলার সাথে থাকবি.. হাসনাততো খুশিতে আটখানা.. তার ইচ্ছে হচ্ছে লুঙ্গী ডান্স দিতে.. তাও আবার রোদেলার প্লাজু পড়ে.. সে খানিকটা মনে মনে ভাবলো— স্কার্ট প্লাজু তো লুঙ্গীর মতোই!!!
হঠাৎ মায়া তার সকল আশায় পানি ফেলে বলল– নাহ রাতে বাসায় চলে যাব..মেয়েটা মানসিক ভাবে ডিস্টার্ব.. রেস্ট নিক..এমনিতেও কালকে তো গল্প করতেই পারবে.. পরশু না হলুদ অনুষ্টান…
হাসনাত মুখ হা করে তার মার দিকে তাকালো.. তার ইচ্ছে হচ্ছে এমন একটা মুভি বানাতে যার নাম হবে ” মা কেন রোমান্সের ভিলেন”” সে মুখ কালো করে মিতার দিকে তাকালো.. মিতার অনেক ইচ্ছে ছিল একটা ছেলের.. তাই তার ছেলে সন্তানের প্রতি আলাদা দূর্বলতা কাজ করে .. সে হাসনাতের দিকে তাকিয়ে বলল– থাকনা ভাবি.. রাতে না থাকলেও কিছুখন গল্প করুক..
মায়া মিতার অবস্হা দেখে হেসে দিল.. এতো সহজ সরল কেন তার এই ননদটি!! সে মুচকি হেসে বলল– আচ্ছা.. ঠিক আছে…
সাথে সাথে মিতা রোদেলার রুমের সামনে গিয়ে জোরে জোরে দরজা বাড়ি দিতে লাগলো সাথে তার নানা রকম হুমকি..
রোদেলা ভিতরে কানে হেডফোন গুজে গান শুনছিল। হঠাৎ তার কাছে মনে হল খুব জোরে ভূমিকম্প হচ্ছে চারদিকে.!! কানের হেডফোনটা খুলে চরম হতাশ সে!! হাসনাত ভাইয়ার কি খেয়ে দেয়ে সত্যিই কাজ নেই!!! একদিনও কি শান্তি দিবে না তাকে।।। এইসব বিরবিরিয়ে খাট থেকে ওঠে বসলো সে।।। সে পুরো নিশ্চিত তার মায়ের এই কান্ডের জন্য হাসনাত ভাই ই দ্বায়ী.. তবে সে তো এতো তাড়াতাড়ি হাসনাতকে মাফ করবে না.. এইসব ভেবে মুখে পৈশাচিক হাসি হেসে সে দরজা খুলে গোমড়ামুখ করে বলল– কি সমস্যা এই আপদটাকে বিদেয় করনি এখনো??
মিতা কটমটিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো..তার আজ মনে হচ্ছে এইটা নির্ঘাত তার মেয়ে না..হসপিটালে হয়তো পাল্টে গেছে!!! সে রেগে বলল– এইসব কেমন কথা. স্বামীর সাথে কি কেও এভাবে কথা বলে??
রোদেলা—- স্বামী!!! এইটা আবার কি জিনিস?? খাই না মাথায় দেয়?? যাই হোক.. আমি আজকের পুরো দিনের কথা মাথা থেকে ডিলেট করে দিয়েছি.. তোমরা ও দুস্বপ্ন ভেবে ভূলে যাও..
মিতার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ওল্টো লটকে রাখতে.. এই মেয়ের মাথায় এতো গন্ডগোল মা হয়ে এতোদিন বোঝলো না কেন সে???
সে যেই কিছু বলবে তার আগে হাসনাত বলল– আম্মা আপনি আপনার কাজ শেষ করুন.. আমি ওকে বুঝাবো…
মিতা তারদিকে কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে আর রোদেলাকে চোখ দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়ে চলে গেল..
রোদেলা হাসনাতের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্চি কেটে বিছানায় বসে টিভির দিকে তাকিয়ে রইলো।। এমন ভাবে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে সে যেন আজ তার টিভি দেখার দিবস!!..
হাসনাত খাটের অন্যপাশে বসে একদৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে!! মেয়েটা এতোটা সুন্দর কেন!! হাসনাতের মনের মাঝে শুধু এই একটা ধ্বনিই বারবার বাজছে!!!..
এইযে রোদেলা লং টপসের সাথে স্কার্ট প্লাজু পড়ে পায়ের ওপর পা দিয়ে শোয়ে টিভি দেখছে!! মেয়েটাকে যে কতোটা আবেদনময়ী লাগছে সেই খেয়ালটা কি তার আছে!! গায়ে যে ওড়নাটাও একপাশে পড়ে আছে সেই হুসটুকুও নেই তার!! ফর্সা পা গুলোর দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে হাসনাতের!! বিশেষ করে টাকনুর ওপর সেই তিলটা… ওফ!! হাসনাত নিজের বুকে হাত রাখলো.. তার কন্ট্রোল ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করছে বারবার.. সে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগলো. কিন্তু মাথার ভিতর বেহায়া শয়তানগুলো শুধু একটাই সিগনাল দিচ্ছে.. বৌ তো আমারই!!!
হাসনাত রোদেলার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করতে লাগলো যাতে সে ইজি হতে পারে রোদেলা যেন কুলুপ এটে বসে আছে.. শেষে বলল– দেখুন ভাইয়া,, যা হয়েছে তা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভূলে যান..

হাসনাতের মেজাজ যেন সপ্তআাসমানে ওঠে গেল.. বিয়ের পর কিসের ভাইয়া.. আবার নাকি দুঃস্বপ্ন!! হাসনাত নিজের ওপর কন্ট্রোল শক্তি পুরোপুরিই হারিয়ে ফেলল.. আচমকা রোদেলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার ঠোট রোদেলার ঠোটে ডুবিয়ে দিল..
রোদেলা এমন এ্যাটাকের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না.. সে হাসনাতের পিঠে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি মারতে লাগলো..কিন্তু হাসনাত যেন সেই খেয়ালেই নেয়.. সে রোদেলার ঠোটের সেই মিষ্টি সুধা পান করতে লাগলো.. রোদেলার সেই মিষ্ট উষ্ণতায় যেন হাসনাতের আরো বেশি নিজেকে বিলিন করে দিতে চায়লো.. রোদেলাও শান্ত হয়ে গেছে অনেকটা!!
হাসনাতের হঠাৎ বোধ হলো এতো তাড়াতাড়ি এতোসব ঠিক না.. সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো.. তারপর বলল– এর পর থেকে ভাইয়া ডাকলে ডোজ আরো বেড়ে যাবে.. তবে চায়লে দুঃস্বপ্ন ভেবে এইটাও ভূলে যেতে পারো…এই বলে সে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল..

রোদেলা অবাক হয়ে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো.. আটকে রাখা নিশ্বাসটা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল সে।। কিন্তু ঘোরটা যেন রোদেলাকে বারবার কাবু করে ফেলছে!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here