এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ১৪

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-১৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

—- ওমারে….আবে শালা আস্তে দে…! এমনিতেই হাড়গোড় সব ভাইঙ্গা পাউডার হয়া গেছে তার ওপর তোর এতো ভারী ভারী দরদ! লাগতো না আমার কোনো দয়া, যা বাল একটু শান্তি মতো অন্তত শুয়ে থাকবার দে।

সানির কথায় অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকালো রিভান। সানির পিঠে আস্তে আস্তে মলম লাগাতে লাগাতে ঠোঁট উল্টালো সে।

তখনকার “সানি ধোলাই” মিশন শেষ হবার পর অন্বিতা যখন নিজের বিনুনি ঘুরিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে নিজেদের গন্তব্যের পথে রওনা দেয় তখন রিভান দৌড়ে গিয়ে টেনে তোলে সানিকে। প্রহারে প্রহারে সেরকম রক্তপাত না হলেও হাড়গোড় ভেঙে যাবার সম্ভাবনা ছিলো প্রবল। সেই সম্ভাবনা অতি সম্ভব হলেও অস্বীকার করে সানিকে অভয় দেয় রিভান। “দোস্ত কিচ্ছু হবে না তোর!” বলে আশ্বাস জানাতেই সানি দাঁত কটমট করে রক্তিম চোখে তাকায় রিভানের মুখপানে। চিৎকার করে ক্রন্দন মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে,

—- “হারামী……….!”

বর্তমানে সানিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে রিভান তবে মলম লাগাতে গিয়ে শত কম হাজার বেশি গালি খেতে হচ্ছে তাকে। তবুও মলম লাগানো থেকে অব্যাহত হতে চাইছে না রিভান। যতোই হোক এই দূর্ঘটনার মুলে যেহেতু সেই রয়েছে সেহেতু তারই দায়ভার সর্বাধিক। যার দরুন করুন চোখে চেয়ে সানির পিঠে এই মলম লাগাবার প্রতিযোগিতা তার।

মলম লাগাতে লাগাতে একটা পর্যায়ে এসে থামলো রিভান। নিশান্ত এখনোও একনাগাড়ে সেই একই রকম ভাবে হেসে চলেছে। শতবার হাসতে বারন করবার পরও কোনো পজিটিভ ফলাফল লাভ করতে পারে নি রিভান। তার ইচ্ছে করছে শুই নিশান্তের পেট ফুটো করে পেটে যতো লাফিং গ্যাস রয়েছে সব “ফুসসস!” করে বের করে ফেলতে। তবে সেটাও করা সম্ভবপর নয়! যার দরুন রিভান বিরক্তিতে কপাল কুঁকালো। সানির উদ্ভট সব গালিগালাজ পাশাপাশি নিশান্তের গা জ্বলানো হাসি। সব মিলিয়ে এক কথায় বারো মিশালী খিচুড়ি টাইপ অবস্থা রিভানের।

আরোও মিনিট কয়েক হেসে নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করবার চেষ্টা চালাতে চালাতে খানিকটা সফল হয়ে নড়েচড়ে বসলো নিশান্ত। সানি কোমড় ধরে উঠে দাঁড়ালো। নিশান্তের দিকে ফিরে চোখমুখ কুঁচকে বললো,

—- ভাবী কি বক্সিং চ্যাম্পিয়ন নাকি ভাউ?

নিশান্ত বিস্ময়ে গোলগোল চোখে তাকালো, মুহুর্তেই চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ম করে বললো,

—- নিজেই প্রপোজ করিস আবার নিজেই ভাবী ডাকিস? কাহিনী কি?

সানি থতমত খেয়ে গেলো। রিভান তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে উঠলো,

—- আরে সেটাই প্রবলেম, ব্যাটায় প্রপোজ করতে গিয়ে ভুলে ভাবী ডেকে ফেলছে! এখনোও সেই ভাবী ভাবী করে যাচ্ছে। আমি শিওর ওর মাথায় স্ক্রু-বল্টু লুজ হয়ে গেছে।

রিভানের কথায় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো সানি। খপ করে গিলে খাওয়ার রিয়াকশন দেখাতেই চোখের ইশারায় মাফ চেয়ে নিলো রিভান। মুখে আবারও জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,

—- হেহে আরে তুইও না কিসব কথা ধরে বয়ে রইছোস! বাদ দে! তোর ওইটার খবর বল। মেয়েটার কোনো খোঁজ পেলি?

নিশান্ত হতাশাগ্রস্ত চাহনি নিক্ষেপ করলো। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোট্ট করে বললো, “নাহ!” রিভান মুখ বাঁকালো, তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

—- আগেই বলছি তোরে মাইয়াডারে পাওন যাইবো না। বাট তুই তো শুনিস না৷ সেই এক মরিচীকার পেছনে ছুটে যাচ্ছিস! আল্লাহ না করুক এতোদিনে মেয়েটা বোধহয় মরে ভূত হয়ে গেছে গা!

রিভানের কথায় বিস্ফোরিত চোখে তাকালো নিশান্ত। রক্তিম চোখে জমাট বাঁধতে শুরু বিন্দু বিন্দু জল। রিভান বুঝলো এভাবে তার সামনে কথাটা বলা উচিৎ হয় নি তাই চটজলদি প্রসঙ্গ পাল্টে পরিস্থিতি সামাল দেবার তাগিদে আমতাআমতা করে বললো,

—- ওহ ডুড! আই ওয়াস জাস্ট জোকিং! বুঝোস না কেন?

নিশান্ত চোখ দুটো বুজে নিলো, গম্ভীর গলায় বললো,

—- এরকম জোক্স দ্বিতীয় বার যেনো কানে না আসে আমার, নয়তো আমি ভুলে যাবো তুই আমার বন্ধু!

_____________________________

ভার্সিটিতে অফ টাইমে শিখা-বাবলীকে এক্সামের বেশ কিছু টপিক বুঝিয়ে দিয়ে ক্লান্ত পায়ে ছোট্ট ছোট্ট ধাপ ফেলে বাড়ি ফিরলো অন্বিতা। নিশান্ত ছেলেটা স্বভাবে যতোই খিটখিটে হোক না কেনো পড়ায় বেশ ভালো। মাত্র ৩-৪ দিনেই এক্সামের হাফ প্রিপারেশন করিয়ে ফেলেছে সে। যার দরুন মনটা আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে অন্বিতার।

অন্বিতা ক্লান্ত দুপুরে হেটে বাড়ি ফিরে সবার প্রথমে ব্যাগ থেকে ক্যাটফুডের প্যাকেট বের করে রাখলো। সেই ছোট্ট বিড়ালছানাটি ওরফে “কিট্টু”র জন্য ক্যাডফুড একটা বাটিতে ঢেলে নিয়ে টেবিলের নিচে রেখে দিলো। ঠোঁট দিয়ে শিস বাজাতেই বাড়ির কোনো এক চিপা থেকে লেজ খাঁড়া করে দৌড়ে এলো কিট্টু! অন্বিতা মুচকি হাসলো। যেখানেই থাকুক শিটি বাজানো মাত্রই অন্বিতার আগমন অনুভব করতে পেরে কিট্টুর দৌড়ে আসা বড্ড ভালো লাগে তার। অন্বিতা কিট্টুর পশম বেষ্টিত মাথায় হাত বুলালো। কিট্টু লেজ নাড়াতে নাড়াতে খেতে শুরু করলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো অন্বিতা। সে জানে আনন্দ এখনও না খেয়ে রয়েছে। হাজার চেষ্টা করলেও অন্বিতার খাবার বেড়ে না দেওয়া অবধি ভাতের একটা দানাও মুখে তোলে না আনন্দ যার দরুন বড্ড চিন্তিত সে। ভাই বড় হয়ে যে কিভাবে সবটা মেইনটেইন করে চলবে ভেবে পায় না অন্বিতা। তবু সে নিজ মনে হাসে, নিজের ভাইয়াটাকে যে বড্ড ভালোবাসে!

আনন্দ-অন্বিতা দুজনে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আজমাদ হোসেন এই সময়টা অফিসেই খান বিধায় দু ভাই-বোন মিলেই খাবার বেড়ে খেয়ে নেয় সময় মতো। অন্বিতা থালা-বাসন পরিষ্কার করে র‍্যাকে সাজিয়ে রাখলো। আনন্দ খেলনা রোবট নিয়ে খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই হাক ছাড়লো,

—- আনন্দ, আমি গোসলে গেলাম আব্বু এলে দরজা খুলে দিস।

আনন্দ রোবট টাকে উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতেই জবাব দিলো,

—- আচ্ছা আপু…!

অন্বিতা ওয়াশরুনে ঢুকেছে ৫ মিনিট হলো ঠিক এমন সময়েই আনন্দর রিমোট কন্ট্রোল কার টা অকেজো হয়ে নেতিয়ে পড়লো। আনন্দ কপালে ভাঁজ ফেলে ঠোঁট উল্টালো। বেশ কয়েকবার কার টাকে উল্টেপাল্টে দেখে কোনো সমস্যাই আঁচ করতে না পেরে চিন্তায় পড়লো আনন্দ। গালে হাত রেখে “কি করা যায়, কি করা যায়” ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার মুখে আশার আলোর মতো মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। “আরে নিশান্ত ভাই তো ইঞ্জিনিয়ার! ম্যাজিকের মতো ঠিক করে দিতে পারবে।” কথাটা নিজ মনে আওড়ে নিয়েই ছুট লাগালো আনন্দ।

____________________________

গানে হেডফোন গুঁজে রিল্যাক্স করছিলো আনন্দ। পাশেই সুক্ষ্ম চোখে সার্কিটের সমস্যা খুঁজছিলো নিশান্ত। এমন সময় কানে এলো কারো “আনন্দ আনন্দ” বলে করা চিৎকার। নিশান্ত সচেতন চোখে তাকালো, অন্বিতা আবারও হাক ছেড়ে বললো,

—- আনন্দ টাওয়াল টে দে তো জলদিইই…নিতে গেছি…..!

অন্বিতার ডাক শুনে নিশান্ত আনন্দর পাশ ফিরে তাকালো। আনন্দর কোনো হেলদোল নেই, “একি আনন্দ তো বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছে!” নিশান্ত কপাল চাপড়ালো। এতো জলদি কেউ ঘুমিয়ে যেতে পারে তা আনন্দকে না দেখলে বোধহয় অজানাই থেকে যেতো তার। নিশান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়ালো। গুটিগুটি পায়ে অন্বিতার বেডরুমের দিলে পা বাড়ালো অগত্যাই।

অন্বিতা আবারও ভেতর থেকে চেঁচালো। দরজা হাল্কা খুলে হাত বের করে নাড়িয়ে বললো,

—- আনন্দ, মাথা ফাটানি খাবি? জলদি দে রে বাপ!

নিশান্ত নারভাসনেসের বশে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। কাঁপাকাঁপা হাতে বিছানা থেকে টাওয়েল টা নিয়ে এগিয়ে দিতেই অন্বিতা হাস্তাতে লাগলো। নিশান্ত আরো একটু এগিয়ে দিতেই বিরক্তিতে দাঁতেদাঁত চেপে ধরলো অন্বিতা।

—- কি করতেছিস তুই? ভালো করে দিতে পারতেছিস না…দে….!

বলেই ধারাম করে দরজা খুলে ফেললো অন্বিতা। সাথেসাথেই বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললো নিশান্ত। ভেজা সালোয়ার গায়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অন্বিতার। ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে বিন্দু বিন্দু পানি ঝড়ছে তার। শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠেছে নির্দ্বিধায়! অন্বিতা মুখ “হা” সাইজ বানিয়ে বিস্মিত চোখে একবার নিশান্তের দিকে তাকালো, পরমুহূর্তে নিজের ভেজা শরীরের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে গলা ফাটিয়ে চিৎকার জুড়ে দিলো তৎক্ষণাৎ,

—- আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া…………!

চিৎকার করার সাথে সাথে ভুলবশত পা স্লিপ কেটে পরে যেতে লাগলো অন্বিতা। নিশান্ত অন্বিতার গলা ফাটানো চিৎকারে ক্ষত-বিক্ষত কান নিয়ে দৌড়ে পালাতে উদ্যত হতে চাইলেও দৌড়ে পালানো হলো না তার। অন্বিতাকে পড়ে যেতে নিতে দেখে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে তাকে আটকাবার চেষ্টা চালালো নিশান্ত। তবে ভাগ্য সহায় হলো না! নির্মমভাবে এক্সিডেন্টলি সেও স্লিপ কেটে অন্বিতাকে সাথে নিয়েই প্রকান্ড শব্দ করে পড়লো বাথ টাবে। সাথেসাথেই পুরো ওয়াশরুমের দেয়াল পর্যন্ত ছিটকে উঠলো পানি। বাথ টাবের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকায় আঘাত না লাগলেও ইজ্জতের ফালুদা হলো দুজনেরই। ভিজে চিপচিপে হয়ে একাকার হয়ে রইলো দুজনেই। অন্বিতা চোখ বড়বড় করে তাকালো, একসাথে এভাবে পরে যাওয়ার দরুন দুজনের কপালে কপাল লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে দুজনেই। নিশান্ত চোখ মুখ কুঁচকালো, এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কি রিয়াক্ট করা উচিত জানা নেই তার, শুধু একটাই জানা কথা। “পালাতে হবে, এই পরিস্থিতি থেকে যে করেই হোক বের হতে হবেই তাকে।”

—- আপনি! এখানে কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন? ছিঃ ছিঃ লজ্জা করে না আপনার?

অন্বিতার প্রশ্নে মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠবার প্রচেষ্টা চালালো নিশান্ত তবে লাভ হলো না আবারও ধপাস করে অন্বিতার ওপরই পড়তে হলো তাকে। নিশান্ত চোখ দুটো বুজে নিলো, প্রতিবাদী সুরে বললো,

—- শাট আপ! আমি ইচ্ছে করে আসিনি, আপনার ভাই আমায় ডেকে এনেছে, বাট কপাল আমার! আপনার ভাইও আপনার মতো অসময়ে ঘুমে কাতর তাই বাধ্য হয়েই আমায় এসে আপনার হাতে টাওয়েল ধরাতে হাসতে হয়েছে, গট ইট?

অন্বিতা নাক সিটকালো নিজেকে কিভাবে ঢাকবে ভেবে না পায়ে দ্বিধা ভরা চোখে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো,

—- দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি, আমার মতো ভোলাভালা মেয়ের সাথে কোনো ধরনের অসভ্যতা করবেন না। আমি কিন্তু ক্যারাটে জানি আগেই বলে রাখলাম। উঠুন, উঠুন বলছি!

নিশান্ত আবারও দু হাতে ভর করে উঠবার প্রচেষ্টা চালালো, বাথটাবে সাবানের ফেনায় পিচ্ছিল ভাব আসায় আবারও স্লিপ কেটে মুখ থুবড়ে সোজা গিয়ে পড়লো অন্বিতার ওপরই। তবে এবার এক্সিডেন্টটা হলো আরোও অপ্রকাশিত! অন্বিতার ঠোঁটে ঠোঁট লাগলো নিশান্তের, অন্বিতা বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললো।

আনন্দ হাই তুলতে তুলতে বোনের ঘরে এসে দরজা খোলা থাকায় এমন দৃশ্য দেখে চট করে চোখ ফুটবলের ন্যায় বড়বড় করে ফেললো। বিস্মিত কন্ঠে বললো,

—- উরিম্মা! তোমরা খুল্লাম খুল্লাম রোমান্স করতেছো? রোমান্সের টাইমে দরজা লাগাতে ভুলে যায় কেউ নাকি! ইশশস!
.
.
.
চলবে……………💕

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ, কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট সেকশনে জানাবেন অবশ্যই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here