#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-২০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
—- ওমগো, ওবাবা গো! গাড়ির ভিত্রে ভূ…..ভূ….ভূউউউউউত………!
শুনশান রাতের আধারে ঘেরা রাস্তায় “ভূত” বলে এক প্রকান্ড চিৎকার জুড়ে দিয়ে সকলের রুহু কাঁপিয়ে ফেললো সানি। গঙ্গাফড়িং এর মতো লাফাতে লাফাতে একছুটে ট্রাঙ্কের ডোর ধাম করে বন্ধ করে সোজা গিয়ে নিশান্তের কোলের উপর উঠে পড়লো সে।
তখনকার “চিকামরা” টাইপ গন্ধের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধান চালাতে চোখমুখ কুঁচকে শুকতে শুকতে নিশান্তের নাক গিয়ে ঠেকে সানির পরিহিত হাফপ্যান্টের নিকটে। রিভান দুহাতে চোখমুখ ঢেকে স্টিয়ারিং এ হেলে পড়ে, চাপা আওয়াজে ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠে,
—- ওইটা ওর মুতের গন্ধ দোস্ত! আর এগোস না, শেষমেশ গন্ধের চোটে নির্ঘাত ফ্লাট লাইগা পইড়া থাকবি!
রিভানের কথায় চোখ বড়বড় করে সানির দিকে তাকায় নিশান্ত। সানির দাঁত কেলানো বোকা হাসি দেখে সন্দেহ হয়ে ওঠে আরো জোড়ালো। চোখের দৃষ্টি সরু করে সানির প্যান্টের দিকে তাকাতেই হুশ উড়ে যায় তার। এক ছুটে জায়গার স্বল্পতায় এক-হাত পিছিয়ে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে সে। নাক-মুখ সিটকিয়ে বলে,
—- ইয়ায়ায়ায়ায়ায়াকক…! ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ জঘন্য ছেলে কোথাকার! দূর হ শালা নোংরা চ্যাংড়া! প্যান্ট লিক করে ফেলছোস আর ওই প্যান্ট পরেই আমার কোলের উপর বইছোস কোন আক্কেলে? দূরে যায়ায়ায়া….!
সানি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায়। নিজের অসহায় ভেজা প্যান্টের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
—- কেউ কি ইচ্ছে করে মাইনষের সামনে হিশু করে? আমি তো মাত্র হিশু কইরা ফেলাইছি, তুই হইলে পটি কইরা ফেলতি নির্ঘাত!
সানির কথায় নিশান্ত ক্ষেপে ওঠে দ্বিগুণ হারে। চেঁচিয়ে “শাট আপ!” বলেই দরজা খুলে ধাক্কা মেরে সানিকে বের করে দেয় গাড়ি থেকে। হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে নাক কুঁচকে বলে,
—- এই নে পানি, ধুয়েমুছে যা চেঞ্জ করে আয় ফটাফট, ছিঃ কারো হিশুর এতো বিশ্রী গন্ধ হয় তা তোরে না দেখলে জানা হতো না। ইয়াক! সব সিগারেট খাওয়ার পরিণতি! আরো গিল ছাইপাঁশ এইরকমই হবে।
সানি আবারও করুন চোখে তাকায়। ঠোঁট উল্টে আহত কন্ঠে বলে,
—- যা খামু না আর সিগারেট, তাও সিগারেটের এতো বদনাম করিস না৷ বেনসন এই অত্যাচার সইবে না হু!
বলেই গুটিগুটি পায়ে গাড়ি থেকে নিজের সাথে করে আনা ট্রাভেলার ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় বের করে এগিয়ে যায় ট্রাঙ্কের উদ্দেশ্যে। মনে মনে শতবার নিজের অপ্রয়োজনীয় বুদ্ধিকে ধন্যবাদ দেয়। রওনা দেওয়ার পথে নিশান্তের কথা শুনে জামা-কাপড় না আনলে আজ এরকম ভেজা হাফপ্যান্ট পড়েই থাকতে হতো তাদের ভাবতেই কান্না কান্না ভাব আরো তীব্রতর হচ্ছিলো তার।
সানি চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ট্রাঙ্কের দরজা খুলে। ডাকাতদের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে তার পা দুটো। কাঁপা হাত নিয়েই ভেতর থেকে নিজের ব্যাগটা বের করতে যাবে ঠিক তক্ষুনি তার নজর পড়ে নিজের ব্যাগের ওপরে উল্টেপাল্টে শুয়ে থাকা এক বিকট লম্বা লম্বা কালো চুল বিশিষ্ট পেত্নীর ওপর! ভয়ের চোটে বর্তমানে নিশান্তের কোলের ওপরই বিচরণ হলো তার।
নিশান্ত চটজলদি সানিকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। দাঁত কটমট করতে করতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
—- ওই ব্যাটা আমার ওপর আবার উঠসোস কেন? যা ভাগ এখান থেকে!
সানি অকপট ভঙ্গিতে রিভানকে ঝাপটে ধরলো। কাঁপাকাঁপা গলায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বললো,
—- ভূ….ভূত! ট্রাঙ্কের ভেতরে ভূত! বাঁচা আমাকে!
রিভান নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। হাফাতে হাফাতে বললো,
—- ধুর ব্যাটা, কিসের ভূত! পাগল হইলি নাকি?
সানি আবারও ঝাপটে ধরলো তাকে। কাঁপাকাঁপা গলায় দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বললো,
—- আমি সত্যি বলতেছিরে বাপ! সানি লিওনের কসম! আমার ব্যাগের ওপর ভূত শুয়ে আছে!
নিশান্ত কপালে ঠাস করে হাত ধরে চেপে “হোয়াট ননসেন্স!” বলে উঠলো। বিরক্তিতে সিক্ত শরীরটাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সঞ্চালন করে এগিয়ে গেলো ট্রাঙ্কের উদ্দেশ্যে। নিশান্তকে ফলো করে এগিয়ে গেলো রিভানও। যেতে যেতে সানিকে উদ্দেশ্য করে দাঁত কটমট করতে করতে বললো,
—- যদি কোনো ভূতের দেখা না পাইছি তাইলে আই সোয়্যার, তোরেই ভূত বানায় রাস্তায় ফেলায় চলে যাবো আমরা।
________________________
—- “ওহ শিট!”
আনমনেই বাক্যটা উচ্চারণ করে একে ওপরের দিকে তাকালো নিশান্ত-রিভান। রিভান ঠোঁট কামড়ে ধরলো। একহাতে নিশান্তের হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
—- দোস্ত এতো সত্যি সত্যি ভূত কম পেত্নী বেশি!
নিশান্ত বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। “শাট আপ ড্যাম ইট! এটা কোনো ভূত নয়, মানুষ!” বলেই ঝুঁকে অন্বিতার হাত টেনে কোনোরকমে বাহিরে এনে বসালো। কাঁপাকাঁপা হাতে অন্বিতার মুখ থেকে চুলগুলো সরাতেই আঁতকে উঠলো নিশান্ত। আনমনেই ওষ্ঠদ্বয় কতৃক নিসৃত হলো “অন্বিতা!”
নিশান্তকে অনুসরণ করে রিভানও চমকে তাকালো। অবাক কন্ঠে বললো,
—- ইয়া আল্লাহ! অন্বিতা এখানে? কখন, কেম্নে, কিভাবে? হাও ইজ দিস পসিবল ম্যান!
—- এখন এতো কোয়েশ্চেনের টাইম নয় রিভান! ওপেন দ্য ডোর ফাস্ট!
নিশান্তের আদেশানুযায়ী চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে দিলো রিভান। সানি তাড়াহুড়ো করে নেমে যেতেই নিশান্ত অন্বিতাকে কোলে উঠিয়ে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। নিশান্ত অস্থির ভঙ্গিতে ডান হাত চেপে ধরলো অন্বিতার। পালস চলছে! শুধুমাত্র জ্ঞান হারিয়েছে উপলব্ধি করতে পেরে ছোট্ট করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। সিটের পাশে রাখা পানির বোতল থেকে সামান্য পরিমাণে পানি নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে অন্বিতার চোখেমুখে ছিটালো। অন্বিতা হুশ ফিরছে কি না তা দেখবার জন্য সচেতন চোখে তাকালো সানি-রিভান! দ্বিতীয় বারের বেলায় পানির ছিটা চোখে-মুখে পড়তেই কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকালো অন্বিতা। নিশান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদগ্রীব হয়ে মায়াভরা চোখে তাকালো। অন্বিতার শুকনো মুখটা কেনো জেনো সোজা গিয়ে লাগছে তার বুকে। অস্থিরতা গ্রাস করে চলেছে তাকে নির্মমভাবে। নিশান্ত অবুঝ মনেই অন্বিতাকে নিয়ে চিন্তার জাল বুনছে। কি এর কারণ? জানা নেই তার। শত অজানার মাঝে শুধু এটুকুই জানা যে “এই মেয়েটার কিছু হতে দেওয়া চলবে না! নিজের জীবন দিয়ে হলেও না!”
অন্বিতার জ্ঞান ফিরে আসা মাত্রই খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো নিশান্তের মুখে। ব্যস্ত হয়ে ডান হাতে অন্বিতার গালে হাল্কাভাবে চাপড় দিতে লাগলো সে। অস্ফুটস্বরে বললো,
—- আপনি ঠিক আছেন মিস অন্বিতা? কোথাও চোট লাগে নি তো আপনার?
বলেই অন্বিতার মাথাটা নিজের কোলের ওপর এনে রাখলো নিশান্ত। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লেগে পড়লো আদৌ কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা ভেবে! অন্বিতা তখন পুরোপুরি হুশে ফেরে নি। পিটপিট করে চোখ মেলে চারিপাশ ঠাওর করবার চেষ্টায় ব্যস্ত সে। অন্বিতার প্রতি নিশান্তের পাগলামো দেখে সকলের অগোচর মুচকি হাসলো রিভান। স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার বুক চিরে।
নিশান্তের কোল থেকেই এক হাতে মাথা চেপে ধরে বোকা চোখে তাকালো অন্বিতা। রিভান-সানিকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় আবিষ্কার করে জ্ঞান হারাবার পূর্ব মুহুর্তগুলো মনে করবার চেষ্টা চালালো। সাথেসাথেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো তার। একপ্রকার লাফিয়ে নিশান্তের কোল থেকে উঠে বসে পড়লো সে। ভয়ার্ত গলায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো,
—- ও..ওই লোকগুলো আর পেছনে ধাওয়া করছে না তো…? আ..আর এতো জোড়ে ব্রেক কষলো কে বলুন তো? উফফফ…! আমার মাথাটা! বাই দ্য ওয়ে আপনাদের জামা-কাপড়ের এই আধাঢাকা অবস্থা কেন হলো?
বলেই কপালের আঘাত লাগা জায়গাটায় হাত বুলালো। সানি-রিভান নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে ছিটকে সরে দাঁড়ালো। এতোক্ষণ অন্বিতাতেই মগ্ন থাকায় নিজেদের অর্ধনগ্নতার দিকে বিন্দুমাত্রও খেয়াল ছিলো না তাদের। নিশান্ত সন্দিহান চোখে তাকালো। অন্বিতার হাবভাব দিকে স্পষ্ট হলো তখনকার গাড়ির জাম্পিং ঝাপাং প্রসেস অন হওয়ার মূল কারণ। সানি-রিভানকে দৌড়ে পালাতে দেখে ফিক করে হেসে ফেললো অন্বিতা। নিশান্তের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো,
—- আচ্ছা উনারা এরকম আধাছিলা পেঁয়াজের মতো কাপড় পড়ে আছেন কেনো? আমার না হেব্বি হাসি পাচ্ছে মাইরি! হায় হায় কি দৌড়ানিটাই না দিলো লোকগুলো!
অন্বিতার কথার বিপরীতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলো নিশান্ত। দু হাতে কোমড় চেপে ধরে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
—- আগে আপনি বলুন, আমাদের গাড়ির ট্রাঙ্কের ভেতরে কি করছিলেন আপনি?
নিশান্তের প্রশ্নে ভড়কে গেলো অন্বিতা। মাথা চুলকোতে চুলকোতে দাঁত বের করে বললো,
—- হেহে আমি তো শুধু চোর ধরতে চুপিচুপি গাড়ির ট্রাঙ্কে ঢুকে পড়েছিলাম। হাজার হোক আপনি আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে বলে কথা, আপনাকে কি পঁচা পঁচা কাজ করতে দেওয়া চলে বলুন? তাইতো আপনাদের চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ি থেকে অন্য কোথাও পালাতে দেখে পিছু নেই আমি। বাট দেখুন নিয়তি! আপনাদের ধরতে এসে নিজেই ধরা খেয়ে ফেললাম! এটা কি আদৌ ঠিক হলো বলুন? জানেন না? আচ্ছা আমিই বলছি তবে। এর উত্তর চোখ বন্ধ করে “একদম না!”
অন্বিতার বিপরীতে ঠিক কি বলা উচিত জানা নেই নিশান্তের। তার এখন ইচ্ছে করছে নিজের কপালে নিজেই স্যুট করে মুহুর্তেই টপকে যেতে। তবু নিজেকে কোনোরকমে সামলালো নিশান্ত। দাঁতে দাঁত চেপে অন্বিতার দাঁত কেলিয়ে রাখা মুখের দিকে চেয়ে বললো,
—- বাহ! খুব ভালো কাজ করেছেন তো আপনি! তা আপনি কি জানেন এখন কোন ঠিক জায়গায় বিচারণ করছেন?
বিনিময়ে চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এদিক-ওদিক তাকালো অন্বিতা। তবে চেনা কোনো রাস্তাঘাট আবিষ্কার করতে না পারায় ঠোঁট উল্টে বললো,
—- ওমা আপনারা এখনোও বাসায় ফেরেন নি? আমি তো ভাবলাম আমার অজ্ঞান থাকার সময়ই ইউটার্ন মেরে বাসায় ফিরে গিয়েছেন আপনারা!
—- আজ্ঞে না মিস, আমরা বাড়ি ফিরে যাইনি, আর না আপাতত যাওয়ার কোনো প্লানিং আছে। আমরা ঢাকা থেকে প্রায় ১৭০ কি.মি দূরে অবস্থান করছি। আগামী ৩ ঘন্টায়ও একই হারে এগিয়ে কোনো এক গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছানোর কথা ছিলো আমাদের! বাট এই যে আপনি, আপনার অতি বুদ্ধিমতী টাইপ কার্যকলাপের জন্য নিজে তো চিপায় পড়লেন সাথে আমাদের যাত্রারও ব্যাঘাত ঘটালেন! এখন বলুন আপনার কি ব্যবস্থা করা যায়, আপনার জন্য তো আর ব্যাক করা পসিবল নয়। আপনি কি একা একা ফিরে যেতে পারবেন নাকি এখানেই ফেলে রেখে যাবো আপনাকে?
নিশান্তের প্রতিটি বাক্য খুব মন দিয়েই শুনছিলো অন্বিতা। পুরো কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে নিমিষেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো তার। অন্বিতা শুকনো ঢোক গিললো। মিনমিন করে লেজ গুটিয়ে রাখা বেড়ালের মতো বললো,
—- ইয়ে মানে…! আমার তো কোনো তাড়া নেই! আপনারা যেখানে যাচ্ছেন আমাকেও সেখানে নিয়ে যান, ব্যাস প্রবলেম সলভ!
অন্বিতার কথার মাঝেই চিন্তিত ভাবমূর্তি ধরে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে এলো রিভান। অন্বিতার রেশ ধরেই বলে উঠলো,
—- ওয়েল, অন্বিতার কথাটাই কিন্তু ঠিক দোস্ত! এই মাঝ রাত্তিরে ওকে কিভাবে একা একা বাসায় পাঠাবি বল?
রিভানের প্রতিউত্তরে চেঁচিয়ে উঠলো নিশান্ত। প্রতিবাদী সুরে বললো,
—- হোয়াট! পাগল হয়ে গেছিস তুই? আমরা নাহয় বাসায় ম্যানেজ করে নিতে পারবো কিছু একটা বলে বাট ও? ওকে নওগাঁ পর্যন্ত নিয়ে যাবো? লাইক সিরিয়াসলি! ওর বাসায় তো জানেই না মেয়ে এতোদূর চলে এসেছে। বুঝতে পারছিস সব জানাজানি হলে কতোটা ভয়ংকর ফলাফল হতে পারে?
নিশান্তের চিৎকারে কেঁপে উঠলো প্রত্যেকেই! সানি ঠোঁট উল্টে গালে হাত দিয়ে ভাবার ভান করলো। বিচক্ষণ ভঙ্গিতে বললো,
—- দেখ মামা এখন কিন্তু দুইডা পথই খোলা! হয় ভাবীরে বাড়ি অবধি ড্রপ করে দিয়ে আবারোও আমাগো রওনা দেওন লাগবে নয়তো ভাবীরে নিয়াই যাওয়া লাগবো! এখন গেলেও ধরা খাইবো না গেলেও ধরা খাইবো। এর থেকে বেটার টাইম ওয়েস্ট না কইরা যতো তাড়াতাড়ি পসিবল যেই কামের জন্য যাইতেছি হেইডা সাইরা আসাই মঙ্গল।
সানির কথার সাথে তাল মিলিয়ে একসাথে মাথা নাড়ালো রিভান-অন্বিতা। সানির কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত হওয়ায় ভাবনায় ডুব দিলো নিশান্ত। অন্বিতা হঠাৎ কোনো কিছু মনে পড়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
—- ওয়েট ওয়েট, আমি আপনার ভাবী হলাম কবে থেকে?
বিনিময়ে শুকনো ঢোক গিললো সানি। আমতা-আমতা করে বললো,
—- হেহে! এ…একচুয়ালি, মেয়ে মানুষ দেখলেই আমার কেনো যেনো ভাবী ভাবী ফিলিংস আসে। ইটস টোটালি মিসটেইক!
অন্বিতা আর বেশি মাথা ঘামালো না। নিশান্ত খানিক বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করে ভ্রু কুঁচকালো। ডান সাইডের ভ্রু উঁচু করে বললো,
—- আপনি শিওর যেতে পারবেন তো? পরে কিন্তু আবার আমায় দোষারোপ করা চলবে না, আগে থেকেই বলে রাখলাম।
বিনিময়ে বাধ্যমেয়ের মতো এক বাক্যে মাথা নাড়ালো অন্বিতা। নিশান্ত ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। রিভান-সানিকে পেছনের সিটে বসতে ইশারা করে বললো,
—- সো গাইস! লেটস গো ফর এডভেঞ্চার…….!
________________________
পূর্বাকাশে হলদেটে উজ্জ্বল বর্ণের সূয্যিমামা ক্রমাগত কিরণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। যার তেজে শুকিয়ে উঠছে রাস্তাঘাটের পথচারীদের ক্লান্ত বুক! রাতের ঘন আধার কাটিয়ে বেলা ৭ টা নাগাদ নওগাঁ সদরে এসে পৌঁছালো নিশান্তরা। গত সাড়ে তিনঘন্টা যাবৎ একনাগাড়ে মাথা খেয়ে চলেছিলো অন্বিতা। একের পর এক হাজারো প্রশ্নের মালা তার। তার প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝেশুনে সচেতনতার সাথেই উত্তর দিয়ে চলেছিলো নিশান্ত। মাঝেমাঝে একটা দুটো প্রশ্ন ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে গিয়েছিলো বেশ কৌশলে। এইত মাত্র ১০ মিনিট হলো মেয়েটা ঠিক সময়ই ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়েছে অজান্তেই। সানি-রিভান এখনও সজাগ। কোনো বিশেষ এক কারণে পুরো রাত গেলো তবুও বিন্দুমাত্র ঘুমের ছিঁটেফোঁটাও ধরা দেয় নি তাদের চোখে।
নিশান্ত আরো বেশ কিছুদূর এগিয়ে সেই লোকটির বলা এড্রেসমতো পজিশনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। রিভানকে গাড়ি থেকে চোখের ইশারায় নামতে বলে নিঃশব্দে নেমে পড়লো সেও। সানিকে ফিসফিসিয়ে বললো যাতে অন্বিতাকে দেখে রাখে সাবধানে। সানি ঠোঁট উল্টে সম্মতি জানালো। নিশান্তদের সাথে যেতে ইচ্ছে হলেও তাত ভাবীর দেখভালের জন্য তাকে থেকে যেতে হলো অগত্যাই।
নিশান্ত ফোন বের করে “রবিউল হোসেনের” নম্বরে ডায়াল করলো। প্রথমবারে রিসিভ না হলেও দ্বিতীয়বারের বেলায় চট করেই রিসিভ করলেন তিনি। আমোদিত সুরে বললেন,
—- মি. নিশান্ত আপনারা পৌঁছোলেন?
এপাশ থেকে চটজলদি উত্তর দিলো নিশান্ত,
—- জ্বি আমরা পৌঁছেছি। আপনার বলা এড্রেস অনুযায়ী ফ্লাট নম্বর ২০১ এর নিচেই দাঁড়িয়ে আছি আমরা!
—- তাহলে অপেক্ষা করছেন কেনো? উপরে উঠে পড়ুন! সেকেন্ড ফ্লোরের লেফট সাইডের ফ্লাটটাই আমাদের। জলদি আসুন, মেয়েটি তো অপেক্ষা করছে আপনার জন্য সেই দু ঘন্টা যাবৎ!
নিশান্ত জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। বুকের ডিবডিবে আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো তার। উত্তেজনায় রীতিমতো থরথর করে কাঁপতে লাগলো পা। তবে কি সত্যিই এতো দিনের সাধনা পূর্ণতা পেতে চললো? ফিরে পেলো কি সে তবে তার প্রেয়সী কে?
.
.
.
চলবে…………………💕
(বানান ভুল হতে পারেন অনেক। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ!)