তোমারই আমি আছি পর্ব ৮

#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০৮
#SaraMehjabin

ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির গ‍্যারেজে এসে চাবি ঘুরিয়ে সবেমাত্র বাইক স্টার্ট দিয়েছে আকাশ। আকাশের পেছন পেছন মেধাও হাজির। মেধার পেছন পেছন তার চব্বিশ ঘন্টার এ্যসিস্টেন্ট।

মেধা হুট করেই এ্্যসিস্টেন্ট মেয়েটার গালে চড় বসিয়ে দিল। মেয়েটা এতে একটুও অবাক বা দুঃখিত হলো না। কারণ মেধার মুড অফ থাকলেই ওর গায়ে হাত তোলে। তাই এটা তার জন্য খুব স্বাভাবিক।

: হাউ ডেয়ার ইউ! কোন সাহসে আমার পিছন পিছন আসছ তুমি? কতবার নিষেধ করব আমি আর আকাশ পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করার সময় তোমাকে যেন আশেপাশেও না দেখি।
: না মানে আপনার যদি কিছু লাগে তারজন্য…
: আবার মুখে মুখে তর্ক-ও করছ। একটা থার্ড ক্লাস সার্ভেন্ট হয়ে এতো সাহস আমার ওপর কথা বলো। বাপিকে এক্ষুনি কল দিচ্ছি। বলছি কি একটা বেয়াদপ মেয়ে পাঠিয়েছে। আমার এই মুহুর্তে অন‍্য লোক চাই।
:স‍্যরি ম‍্যাম স‍্যরি আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করেন ম‍্যাম। দয়া করে আমার চাকরিটা কেড়ে নেবেন না। প্লিজ ম‍্যাম।
: নাও জাস্ট লিভ। দরকার থাকলে আমি ডেকে নিব।

মেয়েটা যাবার সাথে সাথে মেধা আকাশের সামনে গিয়ে আকাশের কলার টেনে ধরে। মেধার আচরনে চোখেমুখে একরাশ বিরক্তির সাথে রাগ নিয়ে মেধার দিকে তাকাল। তারপর অনেক কষ্টৈ নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্তস্বরে বলল,মেধা এটা আমার বাসা। ডোন্ট সিনক্রিয়েট। কলার ছাড়ো।

মেধার হাত থেকে কলার ছাড়াতে গেলে মেধা আরো জোরে চেপে ধরে। ওর বডির সঙ্গে নিজের বুক মিশিয়ে দেয়। ছেলে হয়েও আকাশের অসস্তি লাগছে অথচ মেধার কোন লজ্জাবোধ নেই।

“মাকসুদুল সাদাত আকাশ,,, কাজটা ভালো করো নি। নিজেকে অনেক চালাক ভাবো না? দিনের পর দিন অজুহাত দিয়ে বিয়ে পেছাচ্ছ অথচ আমাদের কোম্পানির সাথে বিজনেস ডিলটা সুন্দরভাবে ফাইনাল করিয়ে নিলে। তুমি কি চাও বুঝি না?”

আকাশ: মেধা আমি জানতাম মেয়েদের সেল্ফ-রেসপেক্ট অনেক বেশি হয়। কিন্তু তোমার দেখলাম সেল্ফ-রেসপেক্ট দূরে থাক,,,মিনিমাম লজ্জাটজ্জাও নেই। বিয়ের কথা কিভাবে বলো তুমি? পৃথিবীতে কেউ না জানুক আমরা তো জানি আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই, কোনদিন ছিল না, আর ভবিষ‍্যতেও থাকবে না। জাস্ট একটা শর্তের জন্য সাত বছর ধরে তোমার সাথে রিলেশনের নাটক করেছি আমি। নাহলে নিজেকে শেষ করে দিতাম অনেক আগেই। তোমার সঙ্গে সাত বছর নিঃশ্বাস বন্ধ করে জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে আছি।

মেধা: হা হা হা। তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে যে জুড়ে আছে তার নিঃশ্বাস সচল রাখতে তোমাকে বাকি জীবন নিঃশ্বাস বন্ধ করেই আমার সাথে কাটাতে হবে। জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয় মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমার সঙ্গে বাকি জীবন জীবন্ত লাশ হয়েই বাঁচতে হবে তোমায়। এছাড়া কিছুই করার নেই আকাশ। তোমার প্রানভোমরা আমার হাতে। আমি যা বলব তোমাকে তাই করতে হবে। নাহলে ইউ নো হোয়াট আমি কি করতে পারি। তোমার একটা ভুলে বেচারির জীবনটাই তছনছ হয়ে যাবে।

কথাটা শোনামাত্র নিমেষেই আকাশের চোখমুখ পাল্টে গেল। রক্তের মতো লাল হয়ে এল চোখদুটো। চোয়াল কঠিন হয়ে গেলো। হাতের মুঠো শক্ত করে মেধার দিকে এগোতে থাকে আকাশ। আকাশের এই অগ্নিমূর্তি দেখে মেধা ভালোই ভয় পেয়েছে। ও জানে রেগে গেলে কতটা ভয়ানক হতে পারে আকাশ। তাই আকাশের থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছিল তার আগেই আকাশ ওর মুখ চেপে ধরে।

শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মেধার মুখ চেপে ধরে বলে,,খবরদার মেধা। ঐ কাজটা করা দূরে থাক,,,চিন্তাও করো না। জানে মেরে মাটিতে পুতে ফেলব। ইউ নো আমি চাইলে সব করতে পারি স্পেশালি একজনের জন্য।
—————————————————————————–
কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে নতুন করে ভি.পি. ইলেকশন হবে। আকাশের দলের ছেলেরা প্রচুর ব‍্যস্ত‌। কিভাবে কি করতে হবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতে আজকে কনফারেন্স রুমে মিটিং ডেকেছে আকাশ। জরুরি কথাবার্তা চলছে। সেই মুহুরৃতেই বাইরে হৈ-হট্টগোলের আওয়াজ।

“আরে কি আজব,,,এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছ তুমি? ভিতরে জরুরি মিটিং চলছে। এখন বাইরের কারো ঢোকা নিষেধ।”

“ছাড়েন,,, আমার দরকার আছে,,আমি ভিতরে যাব।”

“আরে মিটিং চলছে। ভাই খুব ব‍্যস্ত‌। ভিতরে কারো যাওয়া যাবে না। কথা শুনছ না কেন তুমি? তুমি জানো আমরা কার লোক,,,,তুমি আমাদের কথার অমান্য করো? দেখে তো মনে হয় ফার্স্ট ইয়ার,,,নতুন এসেই এত তেজ। বুঝছি এই মেয়ে ভালো কথার মানুষ না,, এই ধর তো এটাকে।”

ছেলে দুটো সারাকে সরানোর জন্য ওর দুই হাত ধরে টানতে শুরু করে। সারা খুব ভয় পেয়ে যায়। ছেলে দুটোর হাত থেকে ছোটার জন্য চিৎকার শুরু করে।

“ছেলেমানুষ হয়ে একটা মেয়েকে টানাটানি করছেন লজ্জা করে না? ছাড়েন আমাকে,,, আমার লাগছে,,,ছেড়ে দেন না,,আহ।”

চিৎকার-চেচামেচির শব্দে আকাশ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।

: এই কি হয়েছে রে? বাইরে এত চিৎকার?

: আর বইলেন না ভাই-এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে কথা নাই,,বার্তা নাই,,,মিটিং এর মধ্যে ঢুকে পড়ছিল। বারবার বলতেছি তাও কথা শোনে না। এখন কি করব ভাই বলেন হাতে ধরে আটকাইছি তাই চিল্লানি দিছে।

সারাকে এভাবে আটকানো হয়েছে দেখে আকাশের মাথা গরম হয়ে গেল। এর উপযুক্ত শাস্তি ওরা পাবে। কিন্তু সারা হঠাৎ এখানে কেন? একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরছে।

আকাশ: তোদের কতবার বলতে হবে কোন মেয়ে আমার কাছে আসতে চাইলে বাধা দিবি না। আসতে দিবি। মেয়েদের অনেক ধরনের বিপদ হয়,,,এই ভার্সিটিতে তারা সাহায্যের জন্য আমার কাছে আসে। আর তোরা তাদের সাথে এইরকম আচরণ করিস?মেয়েটা জোর করে ঢুকতে চাইছিল ভালো কথা তারজন্য তোরা ওর গায়ে হাত দিয়েছিস। কি ধরনের অসভ‍্যতা এগুলো?

ছেলেগুলো ছেড়ে দিলে সারা ভিতরে ঢুকল। আকাশের কেমন যেন লাগল সারাকে দেখে। অদ্ভুত একটা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সারার কিছু হয় নি তো? মেধা কি আবার কিছু করেছে?

সারা হঠাৎই কনফারেন্স রুমের এতগুলো ছেলের সামনে আকাশকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিল। সাথে সাথেই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল পুরো রুম। কেউ ভাবতেও পারে নি যে ব‍্যক্তির ভয়ে পুরো ক‍্যাম্পাস কাঁপে,,,যার উপর এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট দূরে থাক প্রফেসর থেকে শুরু করে ভি.সি. পর্যন্ত কোনো বাক‍্যব‍্যয় করে না যার বাইকের সাউন্ডে পুরো ক‍্যাম্পাসে শিহরন বয়ে যায় সেই মাকসুদুল সাদাত আকাশকে একজন থাপ্পড় মারল। তাও একটা বাচ্চা মেয়ে। সেটাও আবার এতগুলো লোকের সামনে।

“কি চান আপনি? কি ক্ষতি করেছি আপনার? আমার জীবনটা একেবারে তিলে তিলে নষ্ট করে দিতে চাচ্ছেন কেন? আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন? ওহো আপনি তো তাই চাইবেন,, আমি মরে গেলেই তো আপনার সুবিধা। আপনার রাস্তা একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

সারা যেন নিজের মধ্যেই নেই। এতটাই চিৎকার করে কেঁদেছে যে কথা বলার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। ভেজা চোখমুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। খামচিয়ে-আচড়িয়ে আকাশকে একাকার করে ফেলেছে।

সারার এই অবস্থা আকাশের সহ‍্য হচ্ছে না। ইচ্ছা করছে সারাকে এক্ষুনি বুকের সাথে মিশিয়ে একদম হৃৎপিন্ডে ভরে রেখে দিতে যেখান থেকে পৃথিবীর কোন দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ওর পুতুলকে স্পর্শ ক‍রতে না পারে।

: এই মেয়ে তোমার এত সাহস,,,তুমি জানো উনি কে? উনার সাথে এরকম করছ? উনি কি করেছেন তোমার?

উনি কে আমি খুব ভালোভাবে জানি। উনি আমার দেখা সবচেয়ে জঘন্য মানুষ যার মধ্যে মনুষ‍্যত্বটাই নেই। উনি কি করেছেন দেখতে চান,,ক‍্যাম্পাসের মেইন সি.সি ফুটেজটা দেখেন।

বলেই আকাশকে টানতে টানতে ক‍্যাম্পাস গ্রাউন্ডে নিয়ে আসল। দেখা গেল অনেক ছেলেমেয়ের ভীড়। সবাই ভীড় করে কি যেন দেখছে।

এই ভার্সিটির মেইন সি.সি. ফুটেজটা বেশ বড়। অনেকটা এল.ই.ডি টিভি স্ক্রিনের মতো। ক‍্যাম্পাসে কোথায় কি হচ্ছে সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। কিন্তু আজ সেখানে শুধু একটাই দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। যে দৃশ‍্যটা সিনেমার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সেটা উদগ্রীব হয়ে দেখছে সবাই।

দৃশ‍্যটা দেখার পর মুখের কথা হারিয়ে ফেলল আকাশ। এগুলো কে করল? কিভাবে সম্ভব এটা? সারার এত বড় ক্ষতিটা করল কে?
(গল্পের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here