তোমারই আমি আছি পর্ব ৯

#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০৯
#SaraMehjabin

ক‍্যাম্পাসের মেইন সি.সি. টিভি ফুটেজের বিশাল স্ক্রিনজুড়ে দেখাচ্ছে একটা শাড়ি পড়া মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে নাচছে। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে মেয়েটার শরীরের সাথে শাড়িটা লেপ্টে গেছে। তার হলুদ রঙের পেটটা শাড়ির ফাঁকে পুরোপুরি দেখা যায়।। অথচ মেয়েটির এসব দিকে কোনো হুশ-ই নেই। কারন সে কোনদিন ভাবতে পারে নি তার এই ভিডিওটা একদিন জনসমাগমের মাঝখানে ছাড়া হবে। আর সেই ভিডিওতে দেখে তার শরীরটাকে একগাদা অচেনা-অজানা ছেলে আইটেম সংয়ের মেয়েদের মতো গিলে খাবে-তাও তার-ই সামনে। হ‍্যা, ভিডিওতে দেখানো মেয়েটাই সারা।

ভিডিওটা দেখে আকাশ পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাগে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর শরীর।

“স্টপ ইট” আকাশ চিৎকার করে হাতে থাকা মোবাইলটা সি.সি. ফুটেজের কাঁচ বরাবর তাক করে।

“যারা বিনা টিকেটে মুভি দেখার জন্য এসেছো তাদের হাতে টাইম পাঁচ সেকেন্ড। তারপরে যদি কেউ এখানে থাকে তার ভাগ্য খুব খারাপ হবে। আর এইখানে যা দেখেছ তা এই মুহূর্তে ভুলে যাও। যদি এই ঘটনা ভুলতে না পারো তাহলে ভুলে যাও তোমরা এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আই হোপ ইউ অল আন্ডারস্ট‍্যান্ড। ডোন্ট থিংক ইট’স মাই অর্ডার; ইট’স মাই ওয়ার্নিং।”

আকাশের কথাগুলো শোনামাত্র জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। তবে এতে সারার চোখে ঘৃনার আগুন একটুও কমে নি।

: কি ক্ষতি করেছি? বল্ তোর কি ক্ষতি করেছি? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছিস তুই? আজকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবি।

আকাশকে খামচে ধরে ওর উপর ইচ্ছামতো চড়-থাপ্পড়ের আক্রমন চালাচ্ছে সারা। কারন যা হয়েছে সবকিছুর জন্য আকাশ দায়ী। এই ভিডিওটা শুধুমাত্র আকাশের কাছেই ছিল। একদিন ছাদে নাচার সময় তুলেছিল। সারা কোনদিন ভাবতেও পারে নি আকাশ এই কাজটা করবে। যে সারার আশেপাশে কাউকে সহ‍্য করতে পারত না,,,যার ভয়ে সারার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সাহস কেউ পায় নি,,,সেই আকাশ-ই আজ সারাকে অপমান করার জন্য সবাইকে ওর শরীর দেখানোর ব‍্যবস্থা করে দিল। সারা জানত আকাশ অনেক নিচে নেমে গেছে কিন্তু তাই বলে এত নিচে!

:ছিঃ মাকসুদুল সাদাত আকাশ,,, ছিঃ,,, আমাকে পছন্দ করেন না ভালো কথা। তাই বলে একটা মেয়েকে এইভাবে অসম্মান করবেন? কাজটা করতে বিবেকে বাঁধল না? সব ছেলেরা কিভাবে হায়েনার মতো আমার ভিডিওটা দেখছিল,,,এইবার আপনি খুশি তো?

আকাশ: বিশ্বাস কর্ সারা,,,,আমি কিছু করি নি।

সারা: বিশ্বাস ,,,আপনাকে? আপনাকে বিশ্বাস করেই আমার আজকে এই অবস্থা। আমি জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট পেয়েছি সব আপনাকে বিশ্বাস করার ফল। আমার আপনার উপর নয় নিজের ওপর ঘৃনা হচ্ছে এই আপনার জন্য আমি নিজের জীবনটাও দিতে রাজি ছিলাম। আকশভাই,,আপনি যদি বলতেন আপনার জীবন থেকে সরে যেতে আমি আর কখনো আপনার পায়ে পড়ে ভালবাসার ভিক্ষা চাইতাম না। এতটা অপমান করার দরকার ছিল না।

সারা কেমন উদভ্রান্তের মতো হয়ে গেছে। কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। বেনী করে বাধা চুলগুলো অগোছালো হয়ে গেছে। সারাকে এভাবে সহ‍্য হচ্ছে না আকাশের। কাছে টানার জন্য গায়ে হাত দিতেই সারা চিৎকার করে ওঠে, খবরদার ছুঁবেন না। আপনি টাচ করলেই আমি চিৎকার করব। বলব আপনি আমাকে রেপ করতে চাচ্ছেন।

আকাশ সারার মনের অবস্থা বুঝছে। তাই সারার কথাগুলো ও কিছুই মনে করছে না। ওর মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন এই কাজটা কে করল? কার এত বড় সাহস হবে? তাছাড়া ভিডিওটা শুধু তার ফোনেই আছে তাও সিক্রেট করা। সেটা কিভাবে অন‍্য কারো কাছে গেল? কাজটা যে করেছে সে নিশ্চয়ই সারার ক্ষতি করতে চায় এবং ভাবিষ‍্যতে আবারও করবে এরচেয়ে ভয়ংকর কিছু। আকাশকে যেভাবেই হোক তাকে খুঁজে বের করতে হবে।

এই ঘটনার পর ঠিক করলাম বাসায় চলে যাব। ক্লাস করার কোন মন-মানসিকতা নেই। ভার্সিটি গেটে কিছু ছেলে আমাকে ঘিরে ধরল। একজন হাতে ধরে টান দিতেই”হাত ছাড়ুন” বলে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেগুলো একযোগে হেসে উঠল।

” ওমা,, মামনির শরীরে শুরু কারেন্ট না,,তেজ-ও আছে। মামনি মনে হয় পয়সা ছাড়াছুঁতে দেয় না।”

“মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিনে আমাদের ডেকো। তোমার নাচ দেখব। শাড়ি পড়ে নাচতে অনেক ঝামেলা। চিন্তা করো না আমরা শাড়ি খুলে দিতে পারব। হা হা হা।”

কথাগুলো গায়ে কাটার মতো বিঁধছিল। প্রতিবাদ করার কোন ভাষা পেলাম না। বুক চেপে কান্না আসছে শুধু। কাঁদতে কাঁদতে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার ভালবাসার মানুষই আমাকে সম্মান দেয় নি,,সেখানে ওরা তো অসম্মান করবেই।

আকাশ চিন্তিত মুখে নিজের বেডরুমে বসে আছে। অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। প্রথমত, কে এই কাজটা করল? দ্বিতীয়ত, সারার ঐ ভিডিওটা শুধুই আকাশের কাছে আছে,,,যে কাজটা করেছে সে কিভাবে এটা পেল? তৃতীয়ত, ভার্সিটির সি.সি. ফুটেজে এরকম একটা ভিডিও দেখানো সহজ নয়। কাজটা সে কিভাবে করল?

আকাশের মস্তিষ্কে প্রথমত মেধার নামটাই উঠে এসেছিল কিন্তু সেই সম্ভাবনা একেবারেই বাতিল। কারন মেধার ব‍্যাপারে আকাশ ভীষণ সাবধান। ওর চব্বিশ ঘন্টার খবর আকাশের জানা। এরকম কিছু ওর প্ল‍্যানে থাকলে আকাশ জানতেই পারত। তাছাড়া এত সাজিয়ে-গুছিয়ে প্ল্যান বের করার ক্ষমতা মেধার নেই।

রিংটোনের শব্দে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে ফোনটা হাতে নিল। আননোন নাম্বার। রিসিভ করার পরমুহুর্তেই অপরপাশ থেকে অপরিচিত নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো, কি? ফোন করে ডিস্টার্ব করলাম? আপনি কত মনোযোগ দিয়ে আমার কথা ভাবছিলেন। ফোন করে আপনার ভাবনায় ব‍্যাঘাত ঘটালাম বুঝি? স‍্যরি,, ভেরি স‍্যরি। একটা কথা বলি,,আমি সঠিক সময়মতো আপনাকে দেখা দেব। কিংবা অলরেডি দেখা দিয়েছি। বাট আপনি চিনবেন না আমায়। কাজেই আমাকে নিয়ে ভাবনা বন্ধ করুন। যা হওয়ার তাই হবে। মাকসুদুল সাদাত আকাশ,,,এইবার আপনি বুঝবেন ভালবাসার মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রণা কতটা। যে যন্ত্রণা আপনি আমাকে দিয়েছেন আমার ভালবাসার মানুষকে শেষ করে।

আকাশ: কে, কে আপনি? হ‍্যালো হ‍্যালো।

অপরপক্ষ সাড়া শব্দহীন। ফোন কেটে দেওয়া হয়েছে।

—————————————————————————-
কতটা যন্ত্রণার হতে পারে যখন ভালবাসার মানুষের কাছে ঘৃনার মানুষ হতে হয়। যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস, সবচেয়ে বেশি ভরসা করা হয় সেই যখন ক্ষতি করে কেমন লাগে তখন। এই মুহূর্তে সারার জগতটাই তছনছ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়ে সব বন্ধন থেকে মুক্তি নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে। সে তো চেয়েছে আকাশভাইয়ার জীবন থেকে সরে যেতে। তাও এত রাগ এত ঘৃনা কেন তার জন্য? আকাশভাইয়া কিসের প্রতিশোধ নেয়?

সারা ভাবনার জগতে এতটাই বিভোর যে পিছনে গাড়ির হর্নের আওয়াজ-ও কানে যায় নি। গাড়িটা সারার খুব কাছাকাছি,,, গাড়িটা প্রায় ধাক্কা দিবে দিবে এমন সময়ে একটা হাত সারাকে টেনে রাস্তার একপাশে দাঁড় করায়। ভয়ে-আতঙ্কে সারার চোখ বন্ধ ছিল। চোখ খুলে দেখে…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here