আমার সংসার পর্ব ৩

#আমার_সংসার
পর্ব-০৩
Sara mehjabin

আজমী যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ আজমীর ব্লাউজের প্রথম হুকটা খুলে দেয়। এরপর একটানে পুরো ব্লাউজটিই ছিঁড়ে ফেলে। নগ্ন পিঠে লোকটির হাত পড়তেই আজমীর সারা শরীরে ভয়ের শিহরণ বয়ে গেল। সে খুব ভালো করেই জানে পিছনের লোকটি কে।

“আপনি? কেন এসেছেন? প্লিজ চলে যান। আমি দয়া চাইছি আপনার। আর ধ্বংস করবেন না আমার জীবন।”

আজমী লোকটির সামনে হাতজোড় করে।

“আমি কোথাও গেলে এতো সহজে চলে যাই না তুমি ভালো করেই জানো। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ তোমার জীবন। এতোকিছুর পরেও তোমার জীবন থেকে চলে গেছি কি? হা হা হা‌।”

“আপনি কি চান? কেন আমাকে ছাড়ছেন না? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?”

“আমি কি চাই সেটা তুমি জানো না, বেইবি।”

আজমীর সামনের চুলগুলো কানের সাইডে গুজে হিংস্রভাবে হাসি দেয়। ঐ হাসিই আজমীর রক্ত শীতল করে দিল‌। লোকটি সমানে আজমীর দিকে এগিয়ে আসছে‌। ভয়ে দিশেহারা আতঙ্কগ্রস্ত আজমী বুঝতে পারছে না কি করবে সে, তার কি করা উচিত। বৌভাতের অনুষ্ঠানের জন্য সবাই নিচে। এই মুহুর্তে কাউকে ডাকলে সেটা তার-ই বিপদ। তাকেই সবাই ভুল বুঝবে। কিন্তু একা লড়াই করে এই লোকের সঙ্গে সে পারবে না। এই ভয়ংকর উন্মাদ লোক যা খুশি করতে পারে; আজমীর সাধ‍্য নেই এর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর।

পিছাতে পিজাতে আজমী দেয়ালের সাথে মিশে গেছে। লোকটিও এগিয়ে আসছে সামনে। মুখে কুটিল হিংস্রতার হাসি। ভয়ে আজমীর হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে না পেরে ফারহানের কর্নার টেবিল থেকে পেপারওয়েটটা তুলে লোকটার মাথা বরাবর ঢিল মেরে দৌড়ে চলে যায়।

“এই সিফাত তোর কপালে কি হয়েছে?”

ফরিদা খাতুন তার ছোট ছেলে সিফাত বাড়িতে প্রবেশ করামাত্র তার কপালের অবস্থা দেখে আঁতকে উঠলেন। সিফাতের কপালের একপাশ অনেকখানি কেটে গেছে। সমানে রক্ত পড়ছে। দেখে বোঝা যায় মাত্রই কেটেছে।

“নিশ্চিত কোথাও বারি খেয়েছিস। চোখ তো সাথে থাকে না; চোখ থাকে আকাশে। ইশ্, কিভাবে কাটছে! বাড়ি ঢুকেই কপালটা কাটলি। তাও বড় ভাইয়ের বৌভাতের দিন।”

“বাদ দাও তো আম্মু। গেটের সাথে বারি খেয়েছি। জাস্ট একটু কেটেছে। এতো প‍্যানিক করার কিচ্ছু নেই। আজকে ভাইয়ার বৌভাত এইসব ছোটখাটো ব‍্যথা আমার কাছে কিছুই না। তোমার বড় ছেলে আমার কল রিসিভ করে না; ফেসবুক থেকে আমাকে ব্লক মারছে। সাহস কতো বড় চিন্তা করো। আজকে ওর একদিন কি আমার। ফারহাইন্নার বাচ্চা আই অ্যাম কামিং”

ছেলের কথা শুনে ফরিদা খাতুন হেসে কুটিকুটি হয়ে গেলেন। দুই ভাই এতো বড় হয়েছে; কিন্তু সব অভ‍্যাস ছোটবেলার মতোই; কথায় কথায় ঝগড়া মারামারি তারপর কথা বন্ধ। কিন্তু দুইজন কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না।

সিফাত ফারহানের ছোট ভাই। তিন বছর আগে রাজশাহী মেডিকেল থেকে পাশ করেছে। এখন রাজশাহীর একটা হসপিটালে চাকরি করছে। ফারহানদের ঝামেলা মিটে গেলেই বাসা থেকে সিফাতের মেয়ে দেখা শুরু হবে ;ফারহানের বিয়ের জন‍্য-ই এতোদিন অপেক্ষা‌ করা হচ্ছিল।

বৌভাতের অনুষ্ঠানে সারাটাদিন ভীষণ ক্লান্তভাবে কাটল আজমীর। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ক্লান্ত শরীরে ব‍্যাগে কাপড়-চোপড় গোছাচ্ছে। কালকে আজমীর ফিরতি অনুষ্ঠান। আজমীর বাবা-মা আজকের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। এতোলোকের মাঝখানে তেমন কথা হয় নি। শুধু রিশানকে আজমীর কোলে দেখে আজমীর মা নাজমা বেগম মেয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে গেছেন, এইসব কি আজমী? বৌভাতের অনুষ্ঠানে তুই বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছিস কেন? বিয়ে দিয়েছি কি পরের বাচ্চা মানুষ করার জন্য?”

সেইসময় আজমী বেডরুমের সেই ঘটনা নিয়ে মনে মনে প্রচণ্ড ডিস্টার্বড ছিল। এরমধ্যে রিশান “মাম্মা কোলে বসব” বলে কোলে উঠে গেছে। আজমী আর কিছু বলে নি। মায়ের কথা শুনে হঠাৎ রেগে গেল, তুমি যাও তো। আমার মন চেয়েছে আমি বাচ্চা কোলে বসে আছি। তোমার কি? যাও এখান থেকে।”

মায়ের সাথে ঐভাবে হয়তো বলাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু মা যা বলেছে সেটাও ঠিক কথা নয়। আশেপাশে কেউ শুনলে কি মনে করত

যাই হোক, আজমীর বাবা ইমদাদ হোসেন আগামীকাল ফারহান-আজমীকে ফিরতি নিতে চেয়েছেন। ফরিদা খাতুনকে বারবার অনুরোধ করেছেন ওদের পাঠানোর জন্য। অনুষ্ঠান শেষে ফরিদা খাতুন আজমীকে বলেছেন যতদিন ইচ্ছা বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। কি যে ভালো লাগছে আজমীর তা বলে বোঝানো যাবে না।

“তোমাকে কিছু কথা বলব আজমী। খুব জরুরি।”

হুট করেই ঘরে ঢুকেই ফারহান দরজা আটকে দিল। আজমী কাপড় গোছানো বন্ধ করে চমকে ওঠে।

ফারহান ধীরে ধীরে আজমীর কাছে বসে। আজমীর হাতের ওপর হাত রাখে। আজমী ফারহানের স্পর্শে কেঁপে উঠলে ফারহান আরো শক্তভাবে ওর হাত আকড়ে ধরে।

“আমাকে ক্ষমা করে দিও আজমী। যদিও আমরা সবাই তোমার সাথে অনেক বড় অন‍্যায় করেছি যার কোন ক্ষমা হয় না।”
আজমী ফারহানের কথা কিছুই বুঝল না। তার মনে পড়ে গেল কালকে রাতেও ফারহান তাকে এরকম কিছুই বলার চেষ্টা করছিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here