#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃসাদিয়া_আক্তার
_____________________
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে বাইরে।আকাশটা কিছুটা পরিষ্কার ও লাগছে।এমন আকাশের বৃষ্টির ছোয়া উপভোগ করতেই লিজা আর ইরা চা হাতে বেলকনির স্কাউচে বসে গল্প করতে ব্যস্ত।
এরই মাঝে লিজা হঠাৎ ইরাকে প্রশ্ন করে বসল,
——ভাবি ভাইয়া কতো লাকি যে আপনার মতো এমন কাউকে পেয়েছে।আর তা না হলে আমিও এমন ভাবি পেতাম না।
——দুর!তুমি একটু বেশিই বলে ফেললে লিজা।তূর্য কেনো লাকি হবে?আমিও তো লাকি তোমার ভাইকে পেয়ে।আচ্ছা তারপর বল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তোমার?
——এখনো এইচএসসি দেয়নি ভাবি।তবে ফ্যামিলি তো শুধু প্রেসার দেয় ডক্টর হওয়ার জন্যে।বাট আমার তো তা হওয়ার ইচ্ছে নেই।(মন খারাপ করে)
——কারো কথায় পাত্তা দিও নাতো।নিজের মন যেটা হতে বলে সেরকমই কোনো ভালো কাজ করো।দেখবে ওইটাতেই আনন্দ খুঁজে পাবে।
——-যাক ভাবি তোমার কথা টা শুনে তৃপ্তি পেলাম।নয়তো বাড়ির সবাই তো আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছে। আমার তো ইচ্ছে প্রফেসর হওয়া।আর পাশাপাশি গরীব বাচ্চাদের পড়ালেখা বিনা খরচে করার ব্যবস্থা করা।
——-হ্যা তাই করো তুমি।
——“ইরা,ইরা….এই আমার ঘড়িটা কথায় রাখছো।পাচ্ছি না তো” তূর্য ইরাকে ডাকছে জোর গলায়।
——লিজা তুমি বসো।তোমার ভাই আমাকে ডাকছে।না গেলে রুম উজার করে ফেলবে এখন।
——আচ্ছা যাও ভাবি।
লিজা একাই চা ইনজয় করে খাচ্ছে।হঠাৎই একটা কাগজে মুড়ানো পাথর এসে লিজার পায়ের কাছে এসে বিধেছে।লিজা কিছুটা রেগে বলে,
——উফফ!এতো জোরে কে টিল ছুড়ে মারলো রে?
বলে পাথরটা পায়ের কাছ থেকে কুড়িয়ে নিলো।খুলে দেখে,
প্রিয়তমা,
জানি খুব রেগে আছো।বাট প্লিজ বেশিক্ষণ রেগে থেকো না।রেগে থাকলে তোমার ওই লাল নাকটা দেখতে খুবই বাজে লাগে।হাহাহা।এমন কিছু না। তোমার সব কিছুই আমার ভালো লাগে।তবুও এভাবে রেগে থেকো না।আর তোমার সেই চোখ সেদিনের প্রথম দেখার মতো এখনো আমাকে আগের মতই ঘায়েল করে।আহা রে!কি রাগের চাহনিই নাই ছিলো তোমার।দেখে পুরো ফিদা।”
ইতি
তোমার A
—–ওয়াট!কি এগুলো। যত্তসব পাগল ছাগলের কাজ।
বলেই লিজা চিঠিটা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।আর নিজের রুমে চলে আসে।না চাইতেও ভাবতে থাকে আসলে কে দিলো তাকে এই চিঠি।নাকি তার ফ্রেন্ডগুলো মজা নিচ্ছে।তা বুঝতে পেরেই লিজা আর ভেবে নিজের মাথা ব্যথা করতে আগ্রহী না তাই ঘুমিয়ে পরে।
ইরা তূর্যর ঘড়ি খুজে দিয়ে এসে দেখে লিজা নেই চলে গেছে।
🍁
আমিরের ফোনে একটা নাম্বার থেকে কল আসে।আমির রিসিভ করেই বলে,
——হ্যা বল।
——স্যার।সরি স্যার একটা ভুল হইয়া গেছে।
——মানে?কি ভুল?(রেগে)
——স্যার আপনে যে চিডিডা ধরাই কইছিলেন যে বারান্দায় এমন কইরা ফেলতে যে তা ইরা ম্যাডামের হাতে পরে। কিন্তু স্যার
——-হ্যা কিন্তু?
——-স্যার আমি জহন চিডিখানা ছুইড়া দিলাম তহনি ইরা ম্যাডাম উইঠা চইলা গেছিলো।
——তার মানে ইরার হাতে যাইনি চিঠি।ওহ শিট!রাখ কল। সব কাজ বিগড়ে ফেলছিস।
——-সরি স্যার।ইচ্ছা কইরা করিনি নি।
——-চুপ একদম।এখন যা করার আমাকেই করতে হবে।বলেই আমির কল রেখে দিল।
🍂
ইরা সোফায় বসে টিভি দেখছে।হঠাৎ আমির এসে হাজির ইরার সামনে।ইরা একটু অবাক সুরেই বলে,
——আমির আপনি হঠাৎ এখানে?আই মিন কোনো দরকার ছিলো।
——হ্যাঁ। এইযে তুমি যে এতোদিন ভার্সিটির ক্লাসগুলো কামাই দিলে সেই ক্লাসগুলোরি কিছু ইমপ্রোট্যান্ট নোট তোমার জন্যে এনে দিলাম।
——-আল্লাহ!আপনি এতো কষ্ট করতে গেলেন কেনো আমির।আমি নিজেই চৈতীকে বলে মেনেজ করে ফেলতাম।
——-আমার কি তোমার ফ্রেন্ড হিসেবে এইটুকু করার অধিকার নেই?
——-তা থাকবে না কেনো?
——-এখন কি আমাকে দাড়া করিয়েই রাখবে নাকি?
——-ইরা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে,
আরে না।আপনি বসেন।আমি আসছি।
ইরা যেতেই আমির আসেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কিনা।”না সবাই মেবি যার যার রুমে।এই সুযোগ চিঠিটা ইরার রুমে রেখে আসার।”মনে মনে এই বলেই ইরার রুমের দিকে গেলো আমির।ওই কবির শালা বলেছিলো ইরার বেলকনিতে কোথাও ফেলেছে বাট কোথায় পাচ্ছি না কেনো?খুজেঁও পেলো না।বাট পাথরের টুকরো টা দেখতে পেয়ে হাতে যে নিলো তা আর আমিরের রাখতে মনে নেই। চিঠি না পেয়ে রেগেমেগে ইরার রুম থেকে বের হতেই আবারও বড়সড় এক ধাক্কা এবার আমির পেতে পেতে বাচঁলো।তাকিয়েই দেখে সামনে লিজা দাঁড়িয়ে আছে।
——আরে তুমি এখানে কি করছো?(আমির)
——ভ্রু কিছুটা বাকিয়ে, এই প্রশ্নটা তো আমার আপনাকে করা উচিৎ? (লিজা)
——আমি কেনো বলতে যাবো কোনো মালীনি কে যে আমি কে?
——মানে?কি বলছেন আপনি এইসব?মালীনি?
——হ্যা সকালে না দেখলাম তোমাকে গাছে পানি দিতে!মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে, পকেটে হাত গুজে।
——কি বললেন!আ আপনি কি হ্যাঁ? আপনাকে তো দেখলে মুচির মতো লাগে ।গাড়ি ধোয়াতেই দিন যায় মনে হয়।
——বুঝলাম না কি বলতেছো।ঠিক আছো তো নাকি মুচি আবার কবে থেকে গাড়ি পরিষ্কার করার কাজে নামলো।মাথা ঠিক আছে তো।
লিজা মাথায় হাত দিয়ে ঘষে বলল,
—– তাই তো।
এরই মাঝে ইরা আমির আর লিজাকে দেখে তাদের কাছে গিয়ে বলল,
—–আমির তুমি এখানে?আমি তোমাকে লিভিং রুমে খুজঁলাম।
—–ওহ,আমি আসলে ওয়াসরুমটা খুঁজ পাচ্ছিলাম না তাই খুজঁতে খুজঁতে এখানে চলে আসা।
—–ওহ আচ্ছা।ইরা লিজাকে দেখিয়ে বলে,
—–আমির ওহ হচ্ছে আমার ছোটো আদরের একমাত্র ননদ লিজা।
—–ওহ তাই নাকি।একটু মুখ বাকিয়ে।(আমির)
ইরা লিজার দিকে ফিরে বলে,
—–লিজা ওহ আমার ফ্রেন্ড আমির আর আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ছেলে।
—–ওহ তাই।আমি তো অন্য কিছু ভেবেছিলাম। (লিজা)
—–কি ভেবেছিলে?(আমির রেগে)
ইরা আমির আর লিজার কথা কাটাকাটি দেখে কিছুটা অবাক হয়ে আছে।বাট তাদের কথা বন্ধ করতেই তূর্য এসে হাজির।তূর্য আমিরকে দেখে কিছুটা বিরক্তি ফিল করলেও মুখে প্রকাশ করেনি।যাই হোক আমিরকে ক্ষমা করে দিলেও সেই বিশ্বাসটা আর আগের মতো করতে পারছে না,সে তার কাছ থেকে তার প্রিয়তমা ইরাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো যা তূর্য না চেয়েও ভুলতে পারছে না তাই মনের ভিতর সন্দেহ চিপকেই আছে।
আমির তূর্যকে দেখে কিছুটা হেসে বলে,
—–কেমন আছো তূর্য মাই ফ্রেন্ড?
—–ভালো।তুমি এই সময় হঠাৎ?
——ওইযে ক্লাসের কিছু নোট আমাকে আমির নিজেই দিতে এসেছে কষ্ট করে।(ইরা)
—–ওহ আচ্ছা।আমির চল বসি আমরা ওখানে।(তূর্য)
—-হ্যা চল।(আমির)
আমিরের পিছনে হাটার দিকে অজান্তেই লিজার চোখ তার হাতে থাকা পাথরের টুকরোর দিকে পরে।কিছুটা অবাক হয়ে যায় লিজা।মানে বুঝতে পারছে না আমিরের হাতে পাথের টুকরা দেখে।তার মানে কি আমিরই সেই চিঠির লেখক।আরে দুরু কি বলছি এইসব।এই আমির মুচি লিখবে চিঠি তাও আমার জন্যে।না বিশ্বাস হচ্ছে না।আমার সাথে তো যতবারি দেখা হয়েছে শুধু ঝগড়ায় করেছে।দুর এত কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না।এই সব মনে মনে গরগর করে বলে লিজা চলে যায়।
🌿
ইরা,তূর্য,আমির,লিজা বসে আছে লিভিং রুমের সোফায়।তূর্যের ছোটোবেলার ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথাগুলো জেনে সবাই হেসে দিলো।কি দুষ্টই না তূর্য ছিলো।আর তূর্যের এই দুষ্টমির সব দোষ লিজার ঘাড়ে এসে পরতো।আর মায়ের হাতে সব মার তাকেই পেতে হতো।হঠাৎ তাদের হাসির মাঝে কারো আসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তার আওয়াজ পেয়ে লিজা গেলো খুলতে।কিন্তু অনেকক্ষন হয়ে যাওয়ায় লিজা আসছে না।তা দেখতেই ইরা গেলো। ইরা জোরে বিকট আওয়াজে তূর্য আর আমির দুইজনেই দৌড়ে গেলো।দেখল,লিজা অজ্ঞান অবস্থায় মুখ ঢাকা কালো কাপড়ের এক লোকের কোলে ঢোলে পরে আছে আর লোকটি বন্দুক হাতে লিজার দিকে তাক করে রেখেছে।
তা দেখে তূর্য কিছু করার সাহস পাচ্ছে না।কারণ বেপারটা তার বোনের।যদি তার বোনের কিছু হয়ে যায় তার জোরাজোরিতে।তাই কিছুটা নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমির ইরার কাছে চলে যায়।ইরাকে সেভ করাই যেনো আমিরের নজরবন্দী।বাট হঠাৎ আরেকজন কালো কাপড়ে ঢাকা লোকাটি ইরাকে এক টানে নিজের কাছে টেনে আনে।ইরার দিকে এখন বন্দুকের নিশানা।তা দেখে এখন আমির আর তূর্য দুইজনেই ঘামছে।তূর্য কি করবে বুঝতে পারছে না।একদিকে তার বোন আর আরেকদিকে তার ইরু।লোকটি আমির আর তূর্যকে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে বলে যেটি রাস্তার ওপারে রাখা কালো রংয়ের মাইক্রো।উপায় না পেয়ে আমির আর তূর্য কালো মাইক্রোতে উঠে পরে সাথে লিজা আর ইরাকেও ওরা উঠায় মাইক্রোতে।পিছন থেকে আমির আর তূর্যের মাথায় সজোরে আঘাত মারায় তারাও বেহুশ হয়ে পরে যায়।
_____________
চলবে🍁