#কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্ব -২
.
রাহাত মিনুকে খায়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা বড্ড বেশি জেদি। বিয়ের প্রায় পাঁচ মাস হতে চললো এখনো সেই জেদ নিয়েই বসে আছে আর রাহাত প্রতিনিয়ত নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর সময় রাহাত চুপচাপ শুয়ে আছে। আজ একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। মিনুকে এভাবে উপোস রাখায় একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। কি করতো রাহাত?
মিনুকে অন্যকারো সাথে দেখে সহ্য হয়নি তার।কিভাবে হেসে হেসে কথা বলছিলো দেখেই গা জ্বলে যাচ্ছিলো রাহাতের।
এতো হেসে কথা বলার কি আছে?
ছেলেটা কে? কেন মিনু বলতে চাইছে না ছেলেটির বিষয়ে? এরকম সাতপাঁচ ভাবছে রাহাত।মিনু কি তবে…..!
-মিনু! এই মিনু, ঘুমিয়ে পড়লে?
– কি হয়েছে?
– ঘুমিয়ে পড়লে কিনা দেখলাম!
রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো মিনু।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ- ‘কি সমস্যা কি? বাহবাবাহ! ঘুম থেকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করে ঘুমিয়ে পড়লে?!!
কমনসেন্স বলে কিছু আছে আপনার? ডাকছেন কেন? কি সমস্যা? ‘
– আজব! একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম আর দশটা শুনিয়ে দিলো।
– উহ! কথা শোনার মতো কাজ করলে শুনতে তো হবেই।আমি কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম! ‘ চোখেমুখে খুশির ঝিলিক! পরক্ষণেই মিলিয়ে গেলো।
‘ দিলেন তো ভেঙে! এখন কি ঘুমালে দেখবো! ‘
রাহাত চোখ বড় করে তাকিয়ে দেখছে।পাগল নাকি! – ‘ দেখবে, দেখবে, স্বপ্নের ভিডিও রেকর্ডার অন করলেই যেখানে ভেঙেছে সেখান থেকেই দেখবে! ‘
– দেত্তেরি! আমি কি বলেছি নাকি সেখান থেকেই দেখবো? আমার আফসোস হচ্ছে সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গেছে!
– তা কি স্বপ্ন ছিলো শুনি? নিশ্চয়ই সেই ছেলেটা!
– তো? আপনার কোনো সমস্যা?
– একশোবার সমস্যা,হাজারবার সমস্যা! আমার বিয়ে করা বউ অন্য ছেলেকে কেন স্বপ্ন দেখবে! সে আমাকে স্বপ্ন দেখবে। তার চিন্তা চেতনা ভাবনা জুড়ে তার এই স্বামী থাকবে।
– ওরে,ওরে আমার স্বামীটা! আহ্লাদী গলায় বললো মিনু।
– বলো আমার বউটা! খুশিতে গদগদ ভাব নিয়ে রাহাত উত্তর দিলো।
– বলবো?
– বলো
– বলবো?
– প্লিজ বলো না!
-‘ আপনি এই রুম থেকে বের হয়ে যাবেন নাকি আমি যাবো? ‘
– যাহ বাবা!এতো চেচাচ্ছো কেন!! আর আমি বের হতে যাবো কোন দুঃখে? আমার রুম তুমি দখল করে এখন আমাকে বের হতে বলছো?
– এটা এখন আমার রুম! বের হতে হলে আপনি হবেন। যান।অন্যরুমে গিয়ে ঘুমান।মশার মতো কানের কাছে বাজবেন না!
– আমি মশা?
– সন্দেহ আছে?
– আছে বৈকি! আমি শুধু মশার মতো কানের কাছেই বাজি নাকি আরও কিছু করেছি?
– মানে?
– মানে সোজা! মশার উদ্দেশ্য আর কাজ কেবল গান গাওয়া না।আরও কিছু করে।আমি কি তেমন কিছু করেছি নাকি? এই বলো না! প্লিজ বলো, বলো।
– কি বেহায়া লোক! থাকুন আপনি। আমিই চলে যাচ্ছি।
বলেই মিনু যাবার জন্য উঠতেই রাহাত পিছন থেকে হাত ধরে ফেললো -‘ কই যাও? আচ্ছা সরি সরি।আর বিরক্ত করবো না। ঘুমাও এখানেই। ‘
মিনু তাকাতেই আবার বললো – সত্যি বলছি।
– মনে থাকে যেন!
– জ্বি মেডাম! থাকবে।
মিনু শুয়ে পড়লো।
দুইতিন মিনিট পরে – এই রে, কি জন্যে ডেকেছিলাম সেটাই শুনো নাই! বলি?মুখটিপে হাসছে রাহাত।
– আবার?
– সরি,সরি ঘুমাও।তুমি ঘুমাও।
আর জ্বালাতন না করে রাহাত পাশফিরে শুয়ে পড়লো।
মেয়েটার রাগি রাগি মুখটা খুব ভালো লাগে রাহাতের।মিনু সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললেও রাহাতের সাথে কখনো হেসে কথা বলে না।সবসময় রাগী একটা চেহারা নিয়ে কথা বলে।
ভাবতে ভাবতে ঘুম নেমে এলো চোখে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো রাহাতের। মিনু বিছানায় নেই।দেখলো টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে লিখছে। এতো রাতে কি লিখছে?
ভালো করে খেয়াল করে দেখলো ডায়েরি।
মিনুর ডায়েরি লেখার অভ্যেস আছে। রাহাত চুপচাপ আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন বৃহস্পতিবার, সকালবেলা নাস্তা সেরে দুজনই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলো। রাহাত মিনুকে অফিসে দিয়ে নিজে অফিসে যায়।মিনু, সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার। যদিও রাহাতের পরিবারের কাউকে চাকরি না করেও স্বাচ্ছন্দ্যে চলার মতো অঢেল প্রাচুর্য আছে তবুও সে বা তার পরিবার কখনো মিনুর কাজে বাধা দেয়নি। তার এই পেশাকে সম্মান করে সবাই। মিনু নিজের পরিচয় নিজে তৈরি করে নিয়েছে। রাস্তায় মিনু কথা একদমই বলে না। চুপচাপ থাকে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রাহাতও আজ তেমন কোনো বললো না।
মিনুকে পৌছে দিয়ে ‘ বাই’ বলে নিজের গন্তব্যে চললো রাহাত।
তবে তার অফিসে নয়, বাসায়!
চলবে…….
#rose