কোন আলো লাগলো চোখে পর্ব শেষ

#কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#শেষ পর্ব
.
মিনুর জ্বর কমে গেছে সন্ধ্যার দিকেই। পরেরদিন অনেক সুস্থ হয়ে উঠে,তবে ঠান্ডা ভাব টা রয়ে গেছে।
মিনু খেয়াল করেছে রাহাত লিজার সাথে অনেক কথা বলে বেশ কয়েকদিন ধরে।
কখনো ফোন আসলে মিনুর সামনে থাকলে সরে যায়।এখন ফোন আসলে মিনু নিজেই সরে যায়।
রাহাত এসে বললো একজন গেস্ট আসবে।ডিনার করবে এখানে। ভালো করে রান্না করতে।
মিনু জিজ্ঞেস করলো – কে আসবে?
– একজন স্পেশাল গেস্ট।
– তা তো বুঝতেই পারছি।তা স্পেশাল গেস্ট কি লিজা?.
– আরে..ধারুন তো।আমি তো বলিনি কিন্তু তুমি বুঝে গেছ কিভাবে?
– লিজা কিনা সেটা বলুন।
– একদম ঠিক বলেছ।লিজাই।
– এ বাসায় আজ রান্না হবে না।
– রান্না হবে না মানে? গেস্ট আসবে বললাম না!
– সেই জন্যই রান্না বন্ধ! কেন রেস্টুরেন্ট কি সব বন্ধ হয়ে গেছে? রাত বিরাতে সিনেমা দেখে, আড্ডা দিয়ে সেখানে খাবার জুটে না?
– কি বলতেছ এগুলো?
– ঠিকই বলছি।এই মেয়ে এই বাসায় আসলে ঠ্যাং ভেঙে দেব।বজ্জাত মেয়ে!
বলেই মিনু নিজের কাজে চলে গেছে।। রাহাত মুখটিপে হাসছে- ‘ এইবার ঠিক যায়গায় মেডিসিন পড়েছে! ‘
রাহাত মিনুর পিছনে গিয়ে বললো
– দেখ মিনু,সিরিয়াসলি বলছি।মা তো বাসায় নেই। লিজা আসতেই পারে। আজ আমার বের হতে ইচ্ছে করছে না। আমার রুমে বসেই মুভি দেখবো আড্ডা দিবো।চাইলে তুমিও জয়েন করতে পারো আড্ডায়!

– কি! আমার রুমে?
সাহস তো কম না আপনার! একটা বাইরের মেয়েকে আমার বেডরুমে নিয়ে মুভি দেখবেন!
– বাহ! বাহিরের হবে কেন? আজকে তো ঠিক করেছি তাকে প্রপোজ করবো।
এবার মিনু চুপ হয়ে গেছে। বললো – ওহ! আচ্ছা সমস্যা নেই।

রাতের রান্না শেষ করে মিনু রেহানা বেগমের রুমে শুয়ে আছে।
চোখমুখ কালো হয়ে গেছে। আকাশে ঘন কালো মেঘ, থমথমে ভাব।যেকোনো সময় ঝড়োবৃষ্টি শুরু হতে পারে।
– মিনু।অন্ধকার রুমে কি করছো? ‘
রাহাত রুমের লাইট অন করলো।
– একি! আবার জ্বর উঠলো নাকি? নাতো,জ্বর নেই। (কপালে হাত দিয়ে)

– আপনি এখানে কেন? লিজা আসেনি এখনো?
– আচ্ছা মিনু,আজ আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। তুমি যা ই ভাবো আমাকে, আমি কিন্তু তোমাকে একজন বন্ধু ভাবি।আমি চাইছি তুমি এই সময় টা আমার পাশে থাকো। প্লিজ,থাকবে তো?
– আপনি একজনকে প্রপোজ করবেন আর আপনার বউ পাশে দাঁড়িয়ে দেখবে? বাহ! দারুণ ব্যাপার! ইউনিক!
– দারুণ না? চলো তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– চলুন।
বলেই মিনুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে।
– তোমার চোখে আবার কি হয়েছে? নিশ্চয়ই কিচেন থেকে এসে ভালো করে হাত ওয়াশ করনি!
আর সেই হাত চোখে লেগেছে?!

– তোর মাথা! বলেই মিনু কান্না শুরু করলো।
বজ্জাত ছেলে! কোনোদিন নিজের বউকে বলেছিস? আজ অন্য মেয়েকে প্রপোজ করবি?
ঘরে বউ রেখে লিজার সাথে ঘুরে বেড়ায়!
মিনু বাচ্চাদের মতো চেঁচাচ্ছে আর কান্না করছে।

– উহহ! হিংসে হচ্ছে? লাভ নাই হিংসে করে।নিজেই তো অন্য ছেলে সাথে কি হেসে হেসে কথা বলছিলে! মনে নেই, অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে?
– ওইটা তো আমার স্কুলের বন্ধু ছিল।ওর একটা মেয়ে আছে। আমি কি ওরে প্রোপোজ করছি নাকি?
– হয়েছে হয়েছে। আর কেঁদে লাভ নেই।এখন আর কিচ্ছু করার নেই।
বলে মিনুর হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে যাচ্ছে।
– ছাদে নিয়ে যাচ্ছো কেন? আমাকে ছাদ থেকে ফেলে মেরে ফেলবে তাই না? তারপর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে লিজাকে বিয়ে করবে।
সব বুঝেছি আমি।
– সব বুঝেছ যখন চুপচাপ চলো, চেচামেচি করলে গলাটিপে ধরবো!

মিনু ফুপিয়ে কেঁদেই চলছে।

ছাদের দরজা খুলে ঢুকার পরে মিনু স্তম্ভিত হয়ে গেছে। সারাটা ছাদ ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো। মিনু অবাক চোখে দেখছে।
রাহাত আচমকা মিনুর সামনে এসে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে –
” আমি জানি না আমি কেমন! হয়তো খুব খারাপ। আমার কাছে জীবন অন্যরকম ছিল…
কখনো বুঝিনি বৃষ্টিতে ভিজে কি সুখ, শান্ত শীতল বাংলা গানের মাঝে কতটা আকুতি! জীবন কত সুন্দর সেটা বুঝিনি। আমার জানার বাইরেও অন্য একটা জগৎ আছে সেটা বুঝেছি তোমায় দেখে।
মিনু,এক অন্য আলোয় দাঁড়িয়ে আছি আমি। নিজেকে নতুন করে চিনেছি।
অনেকটা সময় চলে গেছে মিনু,আর যেতে দিও না।
ফিরিয়ে দিও না আমাকে।
তুমিই আমার প্রেম! তুমিই সত্য! সব আয়োজন তোমায় ঘিরে!
তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না মিনু, অনেক আশায় হাত বাড়িয়েছি।গ্রহণ করবে আমায়?”

মিনু কান্নায় ভেঙে পড়লো।
সব সময় কথা বলতে হয়না।কিছু মুহূর্ত চুপচাপ অনুভব করতে হয়।।

-‘ বাবা! তুমি এখানে? আমি তোমাকে সব যায়গায় খুঁজলাম। ‘
মেয়ের ডাকে রাহাতের ভাবনায় ছেদ পড়লো। ঝিনুক কোমরে দুহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে বিরক্তি।
– এইতো মা, কিছু বলবি?
– আসো তো।তুমি একা ছাদে কি করছো?
– তুই যা , আমি আসছি।
– না, তুমি আমার সাথেই যাবে এক্ষুনি। আসো।
বলেই ঝিনুক রাহাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
– আচ্ছা বাবা যাচ্ছি তো,চল।
রাহাতের হাসিমুখে মেয়ের সাথে চললো।

ঝিনুক রাহাতের একমাত্র মেয়ে।সাত বছর বয়স। ঠিক মিনুর মতো হয়েছে। মিনুর মতোই রাগী, রাহাতকে খুব শাসনে রাখে। মেয়েটা গম্ভীর প্রকৃতির , ছোট মেয়ের চোখের চশমাটা ওর গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছ।

রাহাতের জীবন ভরিয়ে দিয়ে ঝিনুক আসে তাদের ঘরে। রাহাত আর মিনু তাদের ঝিনুককে নিয়ে সুখে- শান্তিতে বাস করছে – এমনটা হতে পারতো,
কিন্ত ঈশ্বর হয়তো অন্য কিছু চেয়েছিলেন।
তাই ঝিনুকের বয়স যখন দুই,তখন মিনু চলে যায় না ফেরার দেশে।
সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটা মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠিয়েছেন। কার কখন সময় ফুরিয়ে যায় একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানেনা।
উপর থেকে কারও ডাক আসলে, কোনো শক্তি নেই তাকে বেঁধে রাখার।

রাহাতের জীবন থেকে একটা প্রদীপ নিভে গিয়েও রেখে গেছে তার আলো।। এই আলোয় বাকিটা পথ অনায়াসে চলা যায়।

#সমাপ্তি
#Rose( Munni)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here