#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_13+15
আনহা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না তার সামনে অভ্র দাঁড়ানো। সে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র ও তাকিয়ে আছে আনহা’র দিকে। তার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না তার সামনে আনহা দাঁড়ানো। বাকি আর কেউ অবাক হয় নি কারন তারা সবাই জানতো। শুধু অভ্র’ই জানতো না, আর এদিকে আনহা। নিহা অভ্র’কে খোঁচা দিয়ে বলে..
– কি হলো দা এতো অবাক কেন?
অভ্র’র এতোক্ষণে হুশ ফিরল। এদিকে মেহেরিন গিয়ে আনহা কে ধরে ভিতরে আনলো। আনহা’র হুশ ফিরল। নীল এসে অভ্র’কে ধরে সামনে নিয়ে গেল আর মেহেরিন আনহা কে। দুজনকে দুজনের সামনে আনা হলো। দুজনেই দুজনকে দেখে অবাক। নীল অভ্র’র কানে কানে বলে উঠে..
– কি দা আর কতোকাল এভাবে তাকিয়ে থাকবে!
নীলের কথায় অভ্র এবার মাথা নিচু করে ফেলে। রোদ্দুর এসে বলে..
– ছবিতে তো বউ কে দেখতে চাইলে না আর এখন তো দেখছি….
কাব্য বলে উঠে..
– এখন তো দেখছি চোখ’ই সরছে না।
ইহান বলে উঠে..
– তাহলে বলতে হবে বউ’কে পছন্দ হয়েছে!
মেহেরিন বলে উঠে..
– পিন্চ দেওয়া বন্ধ কর। ভাই নাও হাত ধরে ওই খানে বসার আসন দেওয়া আছে। সেখানে নিয়ে যাও!
অভ্র মেহেরিন’র দিকে একবার তাকায়। অতঃপর আনহা’র সামনে গিয়ে হাত এগিয়ে দেয়। আনহা ওর হাতের দিকে তাকিয়ে অভ্র’র মুখের দিকে তাকায়। অভ্র চোখের ইশারায় হাত ধরতে বলে। আনহা কাঁপা কাঁপা হাতে অভ্র’র হাতটা ধরে। অতঃপর একগাল হেসে তাকিয়ে থাকে। এতোক্ষণে বিশ্বাস হলো ওর সামনে আসলেই অভ্র দাঁড়ানো। মেহেরিন মুচকি হেসে ডেভিল কে বলে..
– ডেভিল কে জানি বিয়ে করতেই চাইছিলো না আর এখন একটু বেশি’ই খুশি!
মেহেরিন’র কথায় আনহা লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে।এদিকে অভ্র’র লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। নিহা আর নিশি কিছুক্ষণ পিন্চ মেরে মারে। অতঃপর অভ্র আনহা ধরে নিয়ে বসায় আর নিজেও বসে। কিন্তু হাত’ই ছাড়ে না অভ্র’র! অভ্র বলে উঠে..
– হাত ছাড়ো সবাই দেখছে!
– আমার না বিশ্বাস’ই হচ্ছে না এটা আপনি!
– আসলে আমার’ও না।
– ধুর মজা করছেন আমার সাথে।
– আরে না সত্যি বলছি!
– আচ্ছা একটা কথা বলি,
– হাত’টা ছাড়ো আগে!
– না ছাড়বো না।
– ছাড়ো সবাই দেখছে।
– দেখুক গে ছাড়বো না।
নিশি বলে উঠে..
– সমস্যা নেই মিষ্টি ভাবো ধরে রাখো! এভাবে সারাজীবন আমার দা কে ধরে রাখলেই হবে!
নিশি’র কথায় সবাই জোরে জোরে হেসে উঠে। আনহা লজ্জা পেয়ে হাত’টা ছেড়ে দিতে নিলে অভ্র ধরে রাখে। আনহা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র জবাবে কিঞ্চিত হেসে বলে..
– কি জানি বলবে বলছিলে?
– হুম!
– কি?
– আচ্ছা এখন বিয়ে করবেন আমায়?
– বলেছিলাম তোমায় আমার বোনের যাকে পছন্দ তাকেই বিয়ে করবো। ওর যদি তোমাকে পছন্দ হয় তাহলে তোমাকে বিয়ে’ই করবো!
– ইশ আমি যদি আগেই ছেলেটার ছবি দেখে ফেলতাম তাহলে হয়তো এতো কিছু হতো না।
জবাবে অভ্র মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ গান বাজনা চলতে থাকে। শুভ্র খান আনহা’র মা বাবা’র সাথে কথাবার্তা বলেন। অতঃপর বিয়ের কাজ শেষ হয়। আনহা বিদায় নিয়ে খান বাড়ির জন্য রওনা হয়।
অতঃপর খান বাড়িতে…
আনহা কে ভিতরে আনা হবে। বাড়ির সবাই উপস্থিত সেখানে। আনহা বাড়ির ভেতর পা রাখতে যাবে তখন নিহা বলে উঠে..
– আরে আরে কি করছো কি থামো থামো!
আনহা কপাল কুঁচকে পিছনে চলে যায়। তার সাথে সাথে সবাই অবাক। কিন্তু কাব্য বলে উঠে..
– নতুন বউ’কে কি হেঁটে নিয়ে যাবে নাকি দা!
অভ্র মৃদু হেসে কোলে তুলে নেয় আনহা কে। হুট করেই এমন কোলে তুলে নেওয়ায় ভয় পেয়ে যায় আনহা। মেহেরিন লাফিয়ে হাত তালি দিতে থাকে। অভ্র আনহা কে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে যায়!
.
ঘরের ভিতরে এসে দু’জনেই অবাক। বেশ চমৎকার ভাবে মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো ঘর। নীল বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আনহা অভ্র’র কোলে থাকা অবস্থায় পা দুলাতে থাকে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে বলে..
– নামো আমার কোল থেকে!
– যাহ বাবা কোলে তুললেন আপনি! আমাকে বলছেন কেন?
– হ্যাঁ আমিই তুলেছি এখন নামো!
– কেন নামবো। আমার বরের কোলে আমি উঠেছি কার কি?
অভ্র আনহা’র দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে তাকে খাটে ধপাস করে ফেলে দেয়। আনহা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র বলে উঠে…
– আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি।
– কিহহ?
– হুম!
বলেই অভ্র আলমারি দিকে গিয়ে জামা কাপড় বের করে। সামনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আনহা তার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র বলে উঠে..
– কি হলো?
– আপনার সামনে আমি দাঁড়ানো আর আপনি যাচ্ছেন ফ্রেশ হতে!
– তো কি করবো! ফ্রেশ হবো না।
– না ফ্রেশ তো হবেন আমি বলতে চাচ্ছি ফ্রেশ হয়ে এসেন কি করবেন!
– কি করবো মানে! তুমি জানো না কাল আমাদের একটা ইম্পর্ট্যান্টে একটা মিটিং আছে, সেটার কিছু কাজ সেটা করবো, তারপর ঘুমাবো! কাল তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে, সকাল সকাল অফিসে যেতে হবে। আর হ্যাঁ আমার সাথে তুমি ও তো যাবে। তাহলে এখনো কি করছো। যাও ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে নাও। নাহলে সকাল সকাল উঠতে পারবে না। শেষে অনেক ঝামেলা হবে আর আমার পিএ তুমি। তোমার কাজ বেশি। আচ্ছা পিএ’র কাজটা কি করবে নাকি ছেড়ে দিবে!
আনহা অভ্র’র দিকে কিছুক্ষণ মুখ ঘুরিয়ে বলে..
– এইটা আশা করছিলাম আপনার থেকে। এতোটা নিরামিষ একটা বরের প্রেমে যে কিভাবে আমি পড়লাম সেটাই ভাবছি!
– বলেছিলাম না তোমার ডাক্তার’র কাছে যাও। তোমার চোখে সমস্যা আছে, যখন তখন যেখানে সেখানে পড়ে যাও!
– আপনি!
– হোয়াট!
– আপনি আপনি আপনি একটা… ধুর!
– কি?
– কিছু না কিছু না! সামনে একটা সুন্দরী বউ দাঁড়িয়ে আছে কোথায় বউ’র এর সাথে মিষ্টি কিছু কথা বলবেন না তা না। মুখ দিয়ে যা বলেন তাই তেতো লাগে।
– তো কি করতে বলছো আমায়?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে..
– কিছু না যান ফ্রেশ হয়ে আসুন!
বলেই আনহা চলে যেতে নেয়। হুট করেই অভ্র আনহা’র বাহু ধরে ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঠেকিয়ে দেয়। আনহা অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে অভ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই অভ্র তার কাছে আসতে থাকে। আনহা অভ্র’র কাছে আসা দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভ্র’র খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো আনহা’র গালে লাগে। অভ্র আনহা’র গালে হালকা করে একটু চুমু খায়। আনহা চোখ বন্ধ করে তার প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করতে থাকে। কিছুক্ষণ বাদে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে অভ্র তার সামনে নেই। আনহা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে অভ্র ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হেসছে। আনহা তাকে দেখে মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে।
ভোরবেলা..
আনহা ঘুম থেকে উঠে থেকে অভ্র নেই। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘরের বাইরে বের হয়। পুরো বাড়ি শান্ত, সবাই মনে হয় ঘুমে বিভোর এখন। কিন্তু অভ্র এখন কোথায়? এতো ভোরে কোথায় গেলো সে? আনহা হাঁটতে হাঁটতে ডয়িংরুমে এসে পৌঁছাল। কেউ আছে রান্না ঘরে মনে হচ্ছে। রান্না করার শব্দ আসছে। সার্ভেন্ট কি রান্না করছে তাহলে। আনহা ভাবল তাকেই জিজ্ঞেস করা যাক অভ্র’র কথা। তাই সে হেঁটে রান্না ঘরের দিকে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে চমকে উঠল। কারন অভ্র রান্না করছে। আনহা কে অভ্র মুচকি হেসে বলে..
– গুড মর্নিং!
– মর্নিং! কিন্তু আপনি এখানে, এখন, এভাবে কি করছেন?
– দেখতেই পাচ্ছো রান্না করছি!
– কিন্তু আপনি কেনো? আমাকে বললেই পারতেন। আমি করে দিতাম!
– ঘুমি তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে। তাই! আর বড় কথা হলো তুমি এই বাড়ির নতুন বউ তোমাকে আমি রান্না করতে বলবো! আমি ঘাড়ে কটা মাথা শুনি!
– কিন্তু আপনি..
– আমি রান্না করতে পারি, আর রান্না টা বরাবরই আমি করি। একটু পরেই আদুরী এসে খেতে চাইবে। কালকে রাতে নিশ্চিত না খেয়ে ঘুমিয়েছে। খাবার না খেয়ে শুধু নেচেছে আর দৌড়াদৌড়ি করেছে। ক্ষুধার কারনে দেখবে এই ভোর বেলা উঠে পড়বে সে।
– এতো ভালো করে জানেন আপনি!
– আমার বোন ও আমি জানবো না তো কে জানবে! তোমার কিছু লাগবে!
– হুম এক কাপ চা,পাওয়া যাবে!
– দু’মিনিট বসো আমি দিচ্ছি।
– হেল্প করি একটু আপনার!
– না আমি পারবো।
– জানি তো তাও একটু করি!
– আচ্ছা তাহলে এই খাবার গুলো একটু টেবিলে রাখো।
– হুম!
সত্যি সত্যি খানিকবাদে দা দা বলে ডাকতে ডাকতে মেহেরিন উদয় হলো। অভ্র মুচকি হেসে বলল..
– আমি এখানে!
মেহেরিন সোজা এসে মেঝেতে বসে পড়ল। আর বলতে লাগলো…
– আমার খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও!
অভ্র নিচ থেকে মেহেরিন কে কোলে তুলে সোফায় বসিয়ে দিল। অতঃপর খাবার নিয়ে মেহেরিন কে খাইয়ে দিতে লাগলো। আনহা এক পাশে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখতে লাগলো। অনেকক্ষন পর মেহেরিন’র চোখে পড়ল আনহা কে। সে আনহা’র দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল..
– তুমি আমাদের বাসায় কি করছো মিষ্টি আপু ?তাও এতো সকাল সকাল!
আনহা থতমত খেয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারলো না। অভ্র মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। হুট করেই রোদ্দুর বলে উঠল…
– এখন মিষ্টি আপু না ভাবী হবে! এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি! কাল না বিয়ে হলো!
মেহেরিন দাঁত বের করে হেসে..
– সরি সরি ভুলে গেছিলাম তুমি এখন আমার মিষ্টি ভাবী। তো আজকে তো রিসেপশনে’র অনুষ্ঠান আছে নাহ।
অভ্র বলে উঠে…
– হুম সেটা তো সন্ধ্যায়! তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমি অফিসে যাবো।
নিহা বলে উঠে..
– আজও! গুড মর্নিং মিষ্টি ভাবী!
– মর্নিং!
– হুম একটা ইম্পর্ট্যান্টে কাজ আছে। দুপুরে চলে আসবো।
মেহেরিন বলে উঠে..
– ভালো যাও! আমি মিষ্টি ভাবী কে নিয়ে সময় কাটিয়ে দেবো।
– না আনহা যাবে আমার সাথে। আমার পিএ ও। সে না গেলে আমার কাজ হবে কি রে?
এমন সময় শুভ্র খান ও চলে আসে। সে এসব শুনে বলে উঠে..
– নতুন বউ কে দিয়ে আজও অফিসের কাজ করাবি!
আনহা শুভ্র খান কে দেখে বলে উঠে..
– গুড মর্নিং বাবা!
– মর্নিং মা। সমস্যা হচ্ছে না তো তোমার!
– না বাবা একদম না।
– এখন এই বাড়ির বউ তুমি! সব কিছু দেখে শুনে তুমি’ই রাখবে। এতোদিনের অগোছালো সংসার সামলাবে।
মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি মোটেও অগোছালো নই!
মেহেরিন’র কথায় সবাই ফিক করে হেসে দেয়। অভ্র ও হেসে উঠে। মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে বলে…
– বাপি আজকে তুমি ব্যাক করবে মনে আছে তো।
– আছে মামনি!
আনহা বলে উঠে..
– বাবা আজ’ই চলে যাবেন!
নিহা বলে উঠে..
– হুম!
– আর ক’দিন থাকলে হতো না।
– না মিষ্টি ভাবী! আমাদের শত্রুদের অভাব নেই। কে কখন হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে জানি না।
আনহা শুভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– সাবধানে যাবেন বাবা!
– অবশ্যই মা!
.
দুপুরের দিকে রওনা হয় শুভ্র খান। ডেভিল নিজে তাকে পৌঁছে দিতে যায়। বিকালের দিকে সবাই মিলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে থাকে। হঠাৎ একজন গার্ড এসে বলে..
“শুভ্র’র গাড়ি নাকি ব্লাস্ট হয়েছে!”
কথাটা শোনা মাত্র সবার মুখ মলিন হয়ে গেল। আনহা ভয়ে অভ্র’র হাত চেপে ধরল। অভ্র তার দিকে মুখ করে মৃদু হাসল। আনহা অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। দেখল মেহেরিন বাঁকা হেসে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান বলে উঠল..
– জান সেই লেভেলের প্ল্যানিং করলি। বাট তুই বুঝলি কিভাবে এমন কিছু হবে না।
– এটা হবে সবার জানা’ই ছিলো। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পাগলও ছাড়ে না আর তাড়া তো আমাদের শত্রু।
নিশি বলে উঠল..
– ডেভিল কে ফোন করে জিজ্ঞেস করি বাপি পৌঁছেছে কি না।
– হুম করো!
অতঃপর ডেভিল জানাল শুভ্র খান ফ্লাইটে উঠে পরেছে। আনহা এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তবে সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে গেল। তাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাল। নিহা বলে উঠল..
– মিষ্টি ভাবী টেনশন নিয়ো না। সকালে তোমাকে বললাম না শত্রুদের অভাব নেই আমাদের।
– কিন্তু কি করে কি হলো!
কাব্য বলে উঠে..
– তেমন কিছু না, যেই গাড়ি করে মামা বের হয়েছিল মাঝপথেই সেটা থেকে নেমে গেল। অতঃপর অন্য গাড়ি আর অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেল। যারা নজর রেখেছিল তারা ভুল গাড়ি কেই উদ্দেশ্য করে চলতে লাগল। তারপর তারা তাদের প্ল্যানিং মতো কাজ করে মারার চেষ্টা করলো তবে পারলো না। যাই হোক আদুরীর প্ল্যান টা দারুন ছিল। অন্য রাস্তায় গেলেও সেখান থেকে আরো কয়েকবার গাড়ি চেঞ্জ করানো হয়েছিল!
আনহা মেহেরিন’র দিকে তাকাল! মেহেরিন চকলেট খেতে খেতে বলল..
– মিষ্টি ভাবী চিল! অভ্যাস করে নাও এসবের। এখন এ বাড়ির বউ তুমি। এরকম আরো অনেক কিছু দেখতে হবে!
.
সন্ধ্যায় যথা সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। সবাই উপস্থিত সেই অনুষ্ঠানে বিজনেস পার্টনার, মিডিয়া এছাড়া আরো কিছু ব্যক্তিবর্গ। মেহেরিন আনহা কে সবার সাথে পরিচয় করাচ্ছে। অনেক মজা করছে সবাই মিলে। এক জোড়া চোখ দৃষ্টিহীন ভাবে দেখছে মেহেরিন কে। মেহেরিন’র মুখের হাসি সহ্য হচ্ছে না তার। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে সে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে..
– নিজের বাপি কে তো বাঁচিয়ে নিলে তুমি কিন্তু তোমাকে কে বাঁচাবে মেহেরিন বর্ষা খান! আমিও দেখবো এই হাসি নিয়ে কতোদিন থাকো তুমি!
.
ইহান, রোদ্দুর,কাব্য আর নিশি এক্সাম কয়েকদিন আগে এক্সাম দিয়েছে। রেজাল্ট বের হলেই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে সবাই। এদিকে নিহা কাজের জন্য একজন কে ফলো করছিল। তাকে ফলো করতে করতে তার আস্তানায় পৌঁছে গেল সে। সেখানে সব অবৈধ অস্ত্রের কাজ চলছিল! নিহা সমস্ত কাজের প্রমাণ জোগাড় করছিল এটা তাদের জন্য অনেক লাভবান হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ধরা পড়ে গেল নিহা। সে সেখান থেকে পালিয়ে দৌড়ে চলে আসল। কিন্তু তার পিছন পিছন কিছু লোক দৌড়ে আসতে লাগল। নিহা তার গায়ের জ্যাকেট টা খুলে রাস্তায় ফেলে দিয়ে একটা চলন্ত বাসে উঠে পরল। লোক গুলো তাকে আর পেলো না। গায়ে একটা কালো রঙের টি শার্ট আর জিন্স। নিহা হাঁফাতে হাঁফাতে বাসের একটা সিটে এসে বসল। কিছুক্ষণ বসার পর পাশের সিটের থাকা লোকটা তাকে বলে…
– এই যে মিস ভূতনি!
নিহা চমকে তাকাল। দেখল এতো আহিয়ান। তাকে খেয়াল করিনি সে এতোক্ষণ। সে বলে উঠে…
– আপনি!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৪
– এই যে মিস ভূতনি!
নিহা চমকে উঠে বলল..
– আপনি!
আহিয়ান মুচকি হেসে বলে…
– ওহ্ আচ্ছা তাহলে মনে রেখেছো আমায়!
– ..
– এভাবে তাকিও না!
– কেন?
– আমার দিল এ লাগে!
– ভালো ছিল কিন্তু কাজ হলো না!
– তোমাকে ইমপ্রেস করার কথা বলছো।
– হুম যেটা করার চেষ্টা করছেন সেটাই।
– তা এতো দিন কোথায় ছিলে? ভার্সিটিতে গেলে না যে।
– আপনাকে কেন বলবো? বাই দ্যা ওয়ে আপনি ফলো করছিলেন আমায়!
– না মানে খোঁজছিলাম!
– কেন?
আহিয়ান দাঁত বের করে হেসে বলে..
– ইমপ্রেস করার জন্য!
– সেটা সম্ভব না!
বলেই বাস থেকে নেমে যায় নিহা। নিহার পিছু পিছু আহিয়ান ও নেমে যায়। নেমেই ডাকতে থাকে…
– নিহা! এই যে মিস নিহা!
নিহা না শোনার ভান করে চলে যেতে নেয়! হঠাৎ করেই আহিয়ান বলে উঠে..
– এই ভূতনি!
নিহা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর পিছনে ফিরে দেখে আহিয়ান দু’হাত পকেটে দিয়ে দাঁত বের করে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিহা দাঁতে দাঁত চেপে আহিয়ান’র সামনে গিয়ে বলে..
– কিসব বলে ডাকছেন আপনি!
– কি করবো বলো নাহলে তুমি সাড়া দেও না!
– আমার থেকে সাড়া পাওয়ার আশা করিয়েন না!
– না সুযোগ চাই ইমপ্রেস করার!
নিহা ভ্রু কুঁচকে বলে…
– সুযোগ দিলেই বুঝি ইমপ্রেস করতে পারবেন।
– তুমি চান্স দিয়ে তো দেখো আমার প্রেমে পড়ে যাবে।
নিহা হেসে বলে..
– এই তো বলছিলেন ইমপ্রেস করবেন আর এখন সোজা প্রেমে করতে বলছেন।
আহি নিহা’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– ইমপ্রেস হলে প্রেমে পড়তে বাধ্য তুমি!
– এতো কনফিডেন্স!
নিহা’র কথায় আহি মৃদু হাসে। নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা দিলাম চান্স পারলে আমাকে ইমপ্রেস করে দেখান!
– চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড!
– হুম ডান!
– তাহলে দিন গুনতে শুরু করো কারন কিছুদিন পর’ই তুমি মিস ভূতনি থেকে মিসেস ভূতনি হতে যাচ্ছো!
নিহা হেসে বলে..
– সেটা তো সময় বলবে মিঃ আহিয়ান চৌধুরী!
– সময় এখন আমার সাধ দিচ্ছে!
জবাবে নিহা কিঞ্চিত হাসে!
.
দুদিন পর…
অনেক রাত হয়েছে, নিহা নিজের ঘরে ল্যাপটবে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ করেই কিছু’র শব্দ পেলো সে। শব্দটা কোথা থেকে আসল, খুঁজতে লাগলো। মনে হলো শব্দটা বেলকনি থেকে আসছে। নিহা উঠে টেবিল থেকে গান টা নিলো। অতঃপর ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বেলকনির কাছে গেল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। মনের ভুল ভেবে চলে আসতে নিলো। হুট করেই কেউ তার কোমর ধরে নিজের কাছে টানল। নিহা থমতম খেয়ে গেল। তাকিয়ে দেখে আহিয়ান! চাঁদের আলোতে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। রাতের ঠান্ডা বাতাসে নিহা’র চুল গুলো উড়ে আসছিল। আহি চুল গুলো তার কানে গুঁজে দিল। নিহা’র ধ্যান ভাঙল। সে বলে উঠে..
– কি হচ্ছে কি ছাড়ুন আমায়!
– ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি তোমায়।
– এইসব করে!
– আরে না আর দুমিনিট পর…
– দুমিনিট পর মানে!
আহিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগে ঘরের দরজায় মেহেরিন কড়া নাড়তে লাগল। সে দি দি বলে চেঁচাচ্ছে আর দরজা বাড়ি দিচ্ছে। নিহা তাড়াতাড়ি করে আহিয়ান থেকে সরে ভাবতে লাগল কি করা যায়। কারন মেহেরিন আহি কে দেখলেই এক গাদা প্রশ্ন করবে তখন কি বলবে। এদিকে আহিয়ান একটু অবাক এরকম দেখে। নিহা আহিয়ান কে বলে..
– বের হয়ে যান এখান থেকে ফার্স্ট!
– আরে কিভাবে যাবো! আমি তো তোমাকে…
নিহা কর আহিয়ান কে কথা বলার সুযোগ দেয় না। এদিকে মেহেরিন আরো জোরে জোরে ডাকতে থাকে। নিহা আহিয়ান কে ধরে আলমারি’তে ঢুকতে বলে। আহিয়ান ঢুকতে না চাইলেও নিহা তাকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়। এদিকে আহিয়ান উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে নিহা কি করছে। নিহা ধীরে দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে মুখ ফুলিয়ে। পুরো শরীরে আটায় ভরপুর। নিহা মেহেরিন কে ঘরে এনে জিজ্ঞেস করে..
– কি হয়েছে তোমার? এরকম অবস্থা কেন?
– দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগলো কেন?
– ঘুমিয়ে ছিলাম তাই! আচ্ছা তুমি দু’মিনিট বসো আমি তোয়ালে এনে তোমাকে পরিষ্কার করে দিচ্ছি!
– আরে আপু শোন তো!
– হুম বলো!
এরমধ্যে ১২ টা ঘন্টা বেজে গেলো। ঘন্টার আওয়াজ বাজতে শুরু করলো। নিহা ভ্রু কুঁচকে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন আটা লাগা হাতে নিহা’র দুই গালে লাগিয়ে দিয়ে বলল..
– Happy birthday di! অনেক অনেক উম্মাহ তোমাকে!
বলেই নিহা’র কপালে চুমু খেল। নিহা হেসে মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমায়!
– এখন চলো চলো কেক কাটবে। দা এতোক্ষণে ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে এসেছে।
বলেই নিহা’র হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে গেল। নিহা বের হবার পর আহিয়ান আলমারি থেকে বের হলো। কিছুক্ষণ নিহা’র রুম ঘোরাঘুরি করল। অতঃপর বিছানায় গিয়ে বসে নিহা’র অপেক্ষা করতে লাগল।
এদিকে..
অভ্র নীল কে নিয়ে এসেছে আর মেহেরিন নিহা কে। মেহেরিন নিজের হাতে তাঁদের জন্য কেক বানিয়েছে। কাব্য বলে উঠে..
– জান নিজে কেক বানিয়েছে, তাই তার অবস্থা মারাত্মক।
ইহান বলে উঠে…
– রান্না ঘরের কথা না বললেই বোধহয় ভালো হয়!
সবাই হেসে উঠে। মেহেরিন ফুল ফুলিয়ে বলে..
– সরো সবাই সামনে থেকে!
বলেই নীলের সামনে দাঁড়ায়। অতঃপর হাতের থাকা আটা দিয়ে নিহা’র মতো করে তাকেই উইস করে। সবাই হাসতে হাসতে শেষ। অতঃপর সবাই মিলে উইস করে কেক কাটে। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই সবাই মিলে আড্ডা দেয়। এসবের এক সময় নিহা আহিয়ান’র কথা ভুলেই যায়। অভ্র সবাইকে জোর করে রুমে পাঠায় ঘুমানোর জন্য। তখন প্রায় রাত ১.৩০ টা বাজে। নিহা হাসতে হাসতে ঘরে ঢোকে। দেখে তার বিছানায় কেউ শুয়ে আছে। নিহা ভ্রু কুঁচকে সামনে যায়। গিয়ে দেখে আহিয়ান ঘুমিয়ে আছে তার বিছানায়। নিহা চমকে উঠে। আহিয়ান’র কথা তো সে ভুলেই গেছিলো। নিহা আহিয়ান কে ডাকতে গিয়েও কেন জানি ডাকতে পারে না। তার ইচ্ছে করছিলো না তার ঘুম ভাঙাতে। ঘুম শান্ত ভাবেই ঘুমিয়ে আছে আহিয়ান। নিহা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে আহিয়ান কে দেখতে থাকে। অতঃপর কি মনে করে আহিয়ান’র ওপর বালিশ দিয়ে মারতে থাকে। হুট করেই এমন’টা হওয়াই আহিয়ান লাফ দিয়ে উঠে পড়ে ঘুম থেকে। চোখ ঢলতে ঢলতে দেখে তার সামনে নিহা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আহিয়ান হাই তুলতে তুলতে বলে..
– হেই ভূতনি!
– রাখুন আপনার ভূতনি, কি করছেন এখানে?
– আরে তোমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম! কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। আর তোমার আসার সময় এখন হলো!
– হ্যাঁ হলো! আমার ফ্যামিলি আমার কাছে আগে।
– হুম জানি। কিন্তু যাই হোক আমি অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। ভেবেছিলাম আমি তোমাকে আগে উইস করবো কিন্তু..
– আমার বোন আগে করেছে!
– হুম তোমার ছোট বোন আদুরী! বলতে হবে অনেক কিউট সে!
নিহা একগাল হেসে বলে..
– হুম অনেক কিউট অনেক সিউট!
আহিয়ান হুট করেই নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। অতঃপর বলে উঠে..
– তুমি ও কম না। যাই হোক আমি জানি আজ তুমি ইমপ্রেস হয়েছো!
– কি করলেন যে ইমপ্রেস হবো।
– এতো কষ্ট করে তোমার বাসায় আসলাম তাও রাতে, জানো কতো কষ্ট হয়েছে তোমার। তোমাদের বাসার গার্ড গুলা যে কি চালাক কি বলবো।
– চোরের মতো এসেছেন, ভাগ্যিস চোখে পড়েন নি তাহলে আপনার অবস্থা দেখে নিতেন।
– আসার সময় তো পড়ে নি কিন্তু যাবার সময় তো..
– নির্ঘাত পড়বেন। আপনার এখানে আসা’টাই ব্যর্থ হলো। এলেন তো এতো কষ্ট করে তার পর আমি আবার ইমপ্রেস হলাম না। প্রোজেক্ট শুরু হবার আগেই লস হয়ে গেল!
– প্রোজেক্ট জিতে কি হবে যদি না তোমার মন জিততে পারি!
নিহা নিজেকে আহিয়ান’র থেকে সরিয়ে বাঁকা হেসে বলে..
– দেখা যাক!
আহিয়ান আবারও নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে বলে..
– পালিয়ে যাচ্ছো কেন? আচ্ছা যাই হোক হ্যাপি বার্থডে মিস ভূতনি! আশা করি পরের বার আমি তোমাকে মিসেস ভূতনি মানে আমার ভূতনি বউ বলে উইস করবো!
নিহা আহি’র কথা শুনে মুচকি হেসে বলে..
– কনফিডেন্স দেখে আমি অবাক হচ্ছি!
আহিয়ান নিহা’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– এটা কনফিডেন্স না ভালোবাসা!
.
কয়েকদিন পর..
নিশি, রোদ্দুর , ইহান আর মেহেরিন এসেছে শপিং করতে। রোদ্দুর আর ইহান অন্য দোকানে গেছে এদিকে নিশি আর মেহেরিন অন্য দোকানে। নিশি কিছু জিনিস কিনতে থাকে তখন হুট করেই মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে। কারন ওর ঠিক সামনে’ই কিছু দূরে একজন আইসক্রিম ওয়ালা আইসক্রিম নিয়ে বসে আছে। নিশি মেহেরিন কে দু’মিনিট দাঁড়াতে বলে কিন্তু মেহেরিন কথা না শুনেই দৌড় দিয়ে চলে যায় আইসক্রিম কিনতে। মেহেরিন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে একটা চকলেট ফ্লেভার আইসক্রিম দিতে! লোকটাকে দেখে তেমন বয়স্ক লাগছিলো না তবে তার অনেক সাদা দাড়ি ছিল। মেহেরিন অবাক চোখেই সেগুলো দেখছে। হুট করেই পেছন থেকে কেউ মেহেরিন’র ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করে। মেহেরিন’র চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু চোখ বোঝার আগে ঝাপসা ঝাপসা চোখে সে ওই আইসক্রিম ওয়ালা কে হাসতে দেখল। এরপর আর কিছু মনে নেই তার!.
কিছুক্ষণ পর’ই নিশি এলো সেখানে, সেখানের আইসক্রিম’র দোকান তো ছিল কিন্তু কেউ ছিল না। নিশি অস্থির হয়ে আশপাশ দেখতে থাকে। ফোন বের করে কল করতে শুরু করে কিন্তু কল বেজে কেটে যাচ্ছে। কেউ তুলছে না। নিশি ঘামতে শুরু করে, হাত কাঁপছে তার। কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে বার বার কপালের ঘাম মুছতে থাকে। হঠাৎ করেই দোকানের পাশে একটা চিরকুট দেখতে পায় নিশি। নিশি ভ্রু কুঁচকে চিরকুট টা হাতে নেয়। অতঃপর চিরকুট পড়ে নিশি নিস্তব্ধ হয়ে যায়!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৫
খান বাড়ির সবাই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে, চিরকুট এ মেহেরিন’কে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিহা রেগে ঘরের কিছু জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলল। আনহা তাকে সামলাচ্ছে তবে সে কিছু শুনতে বাধ্য না। অভ্র উঠে ডেভিল কে বলল গাড়ি বের করার জন্য!
এদিকে..
চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে মেহেরিন, তার সামনে চেয়ারে বসে আছে একজন লোক। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। তার এতো বছরের রাগ যেন আজ মিটবে মনে হচ্ছে। মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরেছে তবে চোখে সব’ই ঝাপসা দেখছে। নেশার ইনজেকশনের কারনে সব কিছুই তার কাছে এখন ধোঁয়াশা। তবে এটা ঠিক’ই বুঝতে পারছে তার সামনে বসে থাকা লোকটা তাকে মারার জন্য সমস্ত প্ল্যান করে রেখেছে। লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, মেহেরিন বলে উঠে…
– দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনো লাভ আছে কি?
– কি বলতে চাইছো তুমি!
– যা আপনি বলতে চান।
– তোমাকে মেরে ফেলবো এটাই বলতে চাই।
– তাহলে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কি?
– কষ্ট পেতে দেখবো। আমার খুব ইচ্ছে জানো তোমাকে আমি কষ্ট পেতে দেখবো
– আমাকে এভাবে বেঁধে রাখলে বুঝি সেই আশা পূরণ হবে।
– হয়তো তুমি কষ্ট পাবে না তবে তোমাকে মরতে দেখে অভ্র, নিহা, নীল, নিশি তোমার বন্ধুরা সবাই কষ্ট পাবে। সেটার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।
– তাহলে শত্রুতা শুধু আমার সাথে না।
– তোমরা ভাই বোনরা কোন কাজ একা করো। তোমাদের জন্য আমি আমার সব হারিয়েছে।
– তবুও নিজেকে লুকানোর এতো প্রচেষ্টা!
– কি বলতে চাও!
– আমার কি মনে হয় জানেন, আপনি আমাকে মারতে পারবেন না।
– কেন?
– যদি মারতে পারতেন তাহলে এভাবে আমাকে বেঁধে রাখতেন না আর না আমাকে ইনজেকশন দিতেন যার কারনে আমি সবকিছু ধোঁয়াশা দেখছি।
– এখন তো তবুও ধোঁয়াশা শিঘ্রই অন্ধকার দেখবে।
– সেটা তো সময় বলবে। আসলে আমার ভাগ্য খুব অদ্ভুত তো তাই!
– সেই জন্যই সবসময় বেঁচে যাও।
– এর মানে আগের অ্যার্টাক গুলো আপনি করিয়েছেন।
– সন্দেহ আছে কোনো!
– না তবে একটা কথা বলতে পারি। প্রতিবারের মতো এবারও হেরে যাবেন।
মেহেরিন’র কথায় লোকটা রেগে মেহেরিন’র গলায় ছুড়ি ধরল। অতঃপর বলল..
– খুব বেশি কথা বলছো না আদুরী!
– সত্যি সবসময়ই অতিরিক্ত লাগে।
– কি ভাবো এবারও বেঁচে ফিরবে।
– বললাম না ভাগ্য!
– তোমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি কেন জানো! তোমাকে চোখের সামনে মরতে দেখে তোমার ভাই বোনদের আমি তিলে তিলে মরতে দেখবো!
– সেই আশা কখনো পূরণ হবে না।
মেহেরিন’র গলায় ছুরি ঘুরিয়ে…
– হবে হবে!
এমন সময় আরেকটা লোক আসে। সে ওই লোকটাকে বলে..
– ওরা চলে এসেছে!
বাঁকা হেসে বলে..
– তাহলে এই Game শুরু করো।
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে…
– শুভকামনা রইল! দেখো জিততে পারো কি না!
লোকটা রেগে সেখান থেকে চলে গেল। হঠাৎ মেহেরিন বুঝতে পারল তার সাথে বোম রাখা হয়েছে। কারন বোম ব্লাস্টের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেক গুলি’র আওয়াজও আসতে লাগল। মেহেরিন হঠাৎ করেই রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য’র ডাক শুনতে পেলো। বুঝতে বাকি নেই তারা এসে পরেছে। তারা দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। বোম ডিফিউজ করার চেষ্টা করছে তবে এটা তাদের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ফোনে ও কাউকে পাচ্ছে না। কাকে ডাক দিবে তারা?
রোদ্দুর নীল কে ডাকার জন্য যেতে যাবে তখন মেহেরিন বলে উঠে..
– রোদ্দুর একা না ইহান, কাব্য তোরাও যা।
– পাগল হলি নাকি আমরা কোথায় যাবো?
– আরে শোন তোরা কি আসতে আসতে যদি বোম ব্লাস্ট হয়ে যায় তখন আমার সাথে সাথে তোরাও মরবি। এর চেয়ে ভালো আমি একাই মরি।
– কে বললো তুই মরে যাবি। শোন তুই থাকবি আর আমাদের সাথে থাকবি।
– ভাগ্য যদি না চায় তখন!
– ঠিক আছে তাহলে আমরাও এখানে থাকবো। ব্লাস্ট হলে সবাই একসাথে’ই মরবো।
– মরে গিয়েও আমাকে শান্তি দিবি না তোরা!
– না দেবো না।
– তোর সাথেই মরবো।
– তুই না থাকলে আমরা থেকে কি করবো।
– তোদের সাথে নিয়ে মরলে আমি সোজা জাহান্নামে যাবো। যা এখান থেকে!
– তোর কথা শুনতে বাধ্য নই!
এরমধ্যে নীল চলে এলো। সে দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। নীল কে দেখে যেনো সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কারন বোম ডিফিউজ নীল করতে পারে। তাই সে সময় নষ্ট না করে বোম ডিফিউজ করতে লাগলো। এরমধ্যে নিশি এলো। পুরো শরীর রক্তে রাঙানো তার! মেহেরিন’র হাত দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে। এই হাত ছাড়ার কারনে বোধহয় আজ মেহেরিন’র এই অবস্থা!
বোম ডিফিউজ হয়ে গেল, কিন্তু মেহেরিন ঠিক ভাবে দাঁড়াতেও পারছে না। ইনজেকশনের কারনে সব কিছুই ধোঁয়াশা তার কাছে তবে সবার কথা ঠিকই শুনছে সে। অভ্র, নিহা আর ডেভিল একসাথে আসছে দৌড়ে। নিহা এসে ধরল মেহেরিন কে। অভ্র মেহেরিনর কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল।
এদিকে সেই লোক দু’টির কথোপকথন..
– এটা কি হলো? ওরা এবারও কিভাবে জিতে গেল।
– ভুলটা তোমার’ই ছিল। আমি তো বলেছিলাম তোমায় তুমি এতো সহজে পেরে উঠবে না। মেহেরিন এভাবে এভাবে মাফিয়া দলের লিডার হয় নি। সাহস ওর থাকবে না তো আর কার থাকবে। এছাড়া অভ্র আর নিহা’র বুদ্ধির সাথে তুমি পারবে না তার সাথে নিশি চালাকি আর নীলের বোকা বানানোতে।
– তুমি কি ওদের প্রশংসা করছো!
– হুম এটাই বলতে পারো তবে শত্রুর প্রশংসা করা মন্দ না। এখানে তার সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জানা যায়। এছাড়া মেহেরিন’র একটা বড় শক্তি তার বন্ধুত্ব। এটা থাকতে তুমি ওর কিছুই করতে পারবে না এতো দিনে এটাও বুঝলে না। আমাদের আরো প্রস্তুতি নিতে হবে। একটা পরিপূর্ণ প্ল্যান নিয়ে আসতে হবে। এমন একটা চোরাবালি যেখানে মেহেরিন বর্ষা খান নিজ থেকেই পড়বে কিন্তু নিজ ইচ্ছায় উঠতে পারবে না।
– ওর বন্ধুত্ব! এটা কেন নয়! অনেক গর্ব করে আদুরী তার বন্ধুত্ব নিয়ে!
– তবে আর কি? এটাকেই হাতিয়ার করো!
– কিন্তু আমি আজ আবারও হেরে গেলাম।
– যাই হোক একবার কেন বার বার হারো। বুঝতে শিখো কি আছে এমন ওর মধ্যে যা তোমাকে জিততে দেয় না।
– কি করবো আমি বলো, তুমিই বলো কি করবো। ওর দুর্বলতা কিসে? কি ওর দুর্বলতা! ওর বাবা! যাকে আজ পর্যন্ত আমি পাবো বলে মনে হয় না।
– তো কি! অন্য দুর্বলতা খোঁজে! কোনো মানুষের একটা দুর্বলতা থাকে না। আরেকটা নিশ্চিত পাবে কিন্তু তার আগে ওকে বুঝতে শিখতে হবে তোমায়! বোঝার চেষ্টা করো কে এই মেহেরিন বর্ষা খান। এতো শক্তি কোথায় সে। কি আছে এমন ওর মধ্যে! খুঁজতে থাকো পেয়ে যাবে।
.
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলতে থাকে..
– আমাকে বুঝবে? মেহেরিন বর্ষা খান’কে। অধরা খানের মেয়ে আমি! এতো সহজ না আমাকে বোঝা। আমি একটা গোলক ধাঁধা! যাকে বুঝতে বুঝতে যুগ পেরিয়ে যাবে!
অভ্র বলে উঠে..
– আরেকটু’র জন্য ধরতে পারলাম না ওকে!
নিহা বলে উঠে..
– ধরা প্রায় পড়ে যেত কিন্তু তখন’ই কোখান থেকে একটা হেলিকপ্টার এসে নিয়ে গেল। না হলে আজ’ই জেনে নিতাম কে আমাদের এই নতুন শত্রু!
মেহেরিন বলে উঠে..
– নতুন না অনেক পুরোনো শত্রু। অনেক ক্ষোভ তার আমার প্রতি। তার প্রতিটা নিঃশ্বাস জুড়ে আমাকে ঘৃণা করে সে।
– যাই হোক তুই আমার বোন! এতো সহজে তোর কিছু হতে দেবো না আমি। খুব তাড়াতাড়ি শেষ করবো এই নতুন শত্রু কে!
– হুম!
.
কয়েকমাস পর…
মেহেরিন কে কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে আজ প্রায় ১ সপ্তাহ তবে এখন পর্যন্ত তাকে কলেজে পাঠানো যায় নি। এদিকে নিহা নিত্যদিন আহিয়ানের সব পাগলামি সহ্য করছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আহিয়ান নিহাকে ইমপ্রেস করতে পারে নি।
নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর আজ একসাথে ভার্সিটি যাচ্ছে। প্রথম দিন আজ ভার্সিটির। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ আজ নিশি’র। নতুন ভার্সিটিতে এসে তার কৌতুহল অনেক। নিশি একা একা’ই পুরো ভার্সিট ঘুরে দেখতে লাগল।
এদিকে ক্যাম্পাসে নিশান আর তার বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ করেই নিশানের এক ফ্রেন্ড বলে উঠে..
– চল ট্রুথ আর ডেয়ার খেলি!
– আচ্ছা প্রথমে নিশান! তুই বল..
– নিশান ট্রুথ নে, ডেয়ারের সাহস তোর নেই।
নিশান চোখের সানগ্লাসটা খুলে বলল…
– ডেয়ার নিলাম বল কি করতে হবে।
– আজ তুমি ফাঁসবে চান্দু।
– হুম দেখা যাক।
– আচ্ছা ঠিক আছে বেশি কিছু না ছোট একটা কাজ করতে হবে।
– কি?
– ওই যে ওই মেয়েটাকে দেখছিস তাকে সবার সামনে জরিয়ে ধরতে হবে!
– কিহহহহহ?
– জ্বি হ্যাঁ এখন করে দেখান।
– নিশান কখনো মেয়ের পিছনে ঘুরে না মেয়েরা ঘুরে আর সে কিনা একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরবে!
– ডেয়ার ইজ ডেয়ার!
নিশান মুখ ভেংচি দিয়ে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করে। মেয়েটা কে দেখেই নিশান হা হয়ে যায়। ওর সব বন্ধুরা হাসতে শুরু করে। নিশান বলে ওঠে..
– এতো নিশান নিশি খান! ওকে জরিয়ে ধরবো!
– হ্যাঁ হ্যাঁ!
– পাগল হলি নাকি, যদি জানতে পারে নিহারিকা নিহা খান’র বোন জানতে পারে তার বোনকে তুই জরিয়ে ধরেছিস তাহলে আর আস্ত রাখবে না।
– আমি কি জানি! কিন্তু নিশান যদি না পারে তাহলে তাকে হার মানতে বল!
নিশান ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে..
– নিশান কখনো হার মানে না। দেখ তোর ডেয়ার কিভাবে পূরণ করি!
বলেই নিশান নিশি’র কাছে গেল। নিশি দাঁড়িয়ে ছিল,নিশান পেছন থেকে “জান পাখি” বলে উঠে নিশি কে জরিয়ে ধরল। অতঃপর তাকে নিয়ে ঘুরতে লাগল। নিশি তো চমকে উঠলো এদিকে রোদ্দুর পানি খাচ্ছিল এরকম দেখে তার মুখ থেকে পানি পড়ে গেল। ইহান আর কাব্য হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিশি চেঁচানো শুরু করলে নিশান তাকে নামিয়ে দিলো। নিশি রেগে পেছনে ফিরে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিশান চেঁচিয়ে উঠলো। বলল..
– আ…প..নি! আপনি কে?
– আমার মনে হয় এটা আমার ডায়লগ!
– সরি আপু আসলে আমি আমার জান পাখি ধুরি গফ কে ভেবেছিলাম। সে পিছন থেকে দেখতে পুরো আপনার মতো।
– নিজের গফ কে চিনেন না আপনি!
– আসলে পেছন থেকে দেখতে তো পুরো একই লাগছিলো কিন্তু এখন তো দেখি এখানে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে!
– আপনি আপনাকে তো আমি!
– সরি ভুল হয়ে গেছে!
নিশি ভেবো পেলো না কি বলবে। রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলো। নিশি যাবা’র পর’ই নিশান নাচতে শুরু করলো। নাচতে নাচতে নিজের ফ্রেন্ডদের কাছে গেল।
– দেখলি কিভাবে ডেয়ার পূরন করলাম!
– নিশি খান তোকে চড় মারল না।
– আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে চড় কখনো না।
– কিস ও তো করলো না!
– চুপ থাক না তুই!
– আচ্ছা কি এমন বললি যার কারনে কিছুই হলো না।
অতঃপর নিশান শুরু থেকে শেষ বলতে লাগলো। নিশানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। হঠাৎ সবার হাসি থেমে গেল। নিশান অবাক হয়ে গেল। একজন ইশারা করে তাকে পিছনে তাকাতে বলল! নিশান কপাল কুঁচকে পিছনে তাকাল। মারাত্মক চমকে উঠলো সে কারন পিছনে নিশি দাঁড়ানো। তার সাথে রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য! নিশান ভেবে নিলো আজ তাকে হসপিটালে যেতেই হবে। এদিকে নিশি শান্ত ভাবে ওর কাছে আসতে লাগলো। নিশান শুকানো ঢোক গিলে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছে না। নিশি হাত তুললে নিশান চোখ বন্ধ করে নিলো। নিশি হাত দিয়ে নিশানের গাল চেপে ধরে তার গালে হালকা ভাবে কিস করলো। উপস্থিত সবাই রীতিমতো অবাক! রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য তো এখন আগের থেকেও বেশি অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক তো নিশান নিজে। কি ভাবলো আর কি হলো। সে চোখ বড় বড় করে নিশি’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি মুচকি হেসে বলল..
– সরি মিস্টেক!
#চলবে….