#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৯
নির্ঝর পিছনে ফিরে নিরবের মুখোমুখি হয়। অতঃপর কিঞ্চিত হেসে বলে..
– মেহেরিন শুধু আমার মেহু পাখি! তুমি বরং ওর থেকে সামলে চলো। নয়তো এটার পর ভালো হবে না।
– মেহু পাখি!
– হুম আমার মেহু পাখি!
নিরব হেসে বলে..
– সময় বলবে কার মেহু পাখি হয় আর কার জীবন সঙ্গী!
নির্ঝর হেসে বলে..
– মেহু পাখি একান্ত’ই আমার। এর জন্য সময়ের উপর নির্ভর করবো না। তাকে আমার’ই হতে হবে!
বলেই চলে আসে নির্ঝর। তার কথায় রেগে যায় নিরব।সে কিছু না কিছু একটা করবে বলেই মনস্থির করে। অতঃপর মেহেরিন’র কাছে যায় সে।
নির্ঝর অবশেষে খুঁজে পায় মেহেরিন কে। তার কাছে যেতেই দেখে নিরব সেখানে। মেহেরিনের কিছু কথা তখন কানে যায় নির্ঝরের!
মেহেরিন বলে..
– একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলে তুই তাই সব ভুলে আবার বন্ধুত্ব’ই করছি। আশা করি এবার সেরকম কিছু করবি না।
নিরব হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– বিশ্বাস রাখ এবার আর ভাঙবো না।
অতঃপর মেহেরিন পেছনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে। নির্ঝর মেহেরিন’কে বলে..
– দা বলেছে তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে!
– আমার হাত পা আছে!
– হ্যাঁ তবে গাড়ি নেই, ডেভিল গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। তাই দা বলেছে আমার সাথে আসতে।
মেহেরিন বিরক্ত মাখা মুখে নিরব কে বাই বলে হাঁটা শুরু করে। নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকায় নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায় মেহেরিন’র সাথে!
.
মাঝ রাতে…
নীলাশা কে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে নীল। নীলাশা চিমটি দিয়ে দিয়ে নীল কে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে নীলাশা কে জরিয়ে ধরে বলে..
– হাতি বাচ্চাটার কি হয়েছে?
– ক্ষুধা পেয়েছে!
– এতো রাতে!
– ভুলে যাবেন না আমি প্রেগন্যান্ট!
নীল চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে। অতঃপর নিলাশা কে নিজের কোলে বসিয়ে বলে..
– কি খাবে বলো!
– চিপস আর চকলেট!
– হেলদি কিছু খেলে বলো এসব দিচ্ছি না।
নীলাশা ঠোঁট উল্টে বলে…
– এমন করছেন কেন একটু এনে দিন না।
– কিছুদিনে পর বাচ্চার মা হবা এখন বাচ্চামি করো না।
নিলাশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে..
– আপনি এখন আমায় আর ভালোই বাসেন না। সবসময় বকা বকি করেন। এ্যা এ্যা…
নীল নীলাশা’র গালে আলতো ভাবে কিস করে বলে..
– কে বললো ভালোবাসি না অনেক ভালোবাসি তবে এভাবে তুমি আমাকে দিয়ে কাজ হাসিল করতে পারবে না। আমি কিছু ফল এনে দিচ্ছি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
অতঃপর নীলাশা কে বিছানায় রেখে নীল বাইরে যায়। নীলাশা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর নীল ট্রে তে করে কিছু ফল, এক গ্লাস গরম দুধ চিপস আর চকলেট আনে। চিপস আর চকলেট দেখে নীলাশা এক গাল হেসে বলে…
– আমি জানতাম আপনি আনবেন!
নীল মুচকি হেসে বলে..
– এনে তো দিয়েছে তবে এক শর্ত আছে বুঝলে, প্রথমে ফল গুলো খাবে, অতঃপর দুধের গ্লাস পুরোটা খালি করবে এরপর চিপস আর চকলেট।
নীলাশা চোখ ঘুরিয়ে বলে..
– ঘুমানোর আগে খেয়েছি!
– এখন আবার ঘুমানোর আগে খাবে। আর আগে তো হাতি বাচ্চা ছিলে এখন তো প্রেগন্যান্ট খেতে সমস্যা হবে না।
– আপনি খাবার নিয়ে আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন!
– আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা বলো! কিন্তু আমার কথা না শুনলে তুমি কিছুই পাবে না।
নীলের কথায় নীলাশা মুখ ভেংচি দেয়। নীল বিছানার পালে ট্রে টা রেখে বিছানায় বসে। অতঃপর নীলাশা কে নিজের কোলে বসিয়ে খাওয়াতে থাকে। এখানে নীলাশা বক বক করতেই থাকে। খাচ্ছে আর বক বক করছে। ওর কথা জেনো কিছুতেই শেষ হয় না। এক কথা একশ বার শোনাবে নীল কে। কিন্তু নীলের এখন এসব অভ্যাস হয়ে গেছে! সে খুব আনন্দের সাথেই নীলাশা’র প্রত্যেকটা কথার জবাব দেয়!
.
পরদিন ভার্সিটিতে…
মেহেরিন আর আরিশা বসে আছে। তাদের সাথে নিরব ও। ৩ জন বসে গল্প করছে। কথার এক পর্যায়ে মেহেরিন আরিশা কে জিজ্ঞেস করে..
– তোর কোনো বফ আছে আরিশা!
– এক কথা কতো বার বলবো!
নিরব বলে উঠে..
– মেহেরিন কে বার বার বলতে হবে অভ্যাস করে নে।
মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– আচ্ছা এমন কেউ যাকে ভালো লাগে!
আরিশা হেসে বলে..
– আরে আমার ক্রাশ রানবির কাপুর!
মেহেরিন হেসে বলে..
– গাধী একটা, ওকে কখনো বিয়ে করতে পারবি।
– স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?
নিরব হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– ঠিক বলেছিস স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়? তবে বাস্তবে কেউ এমন আছে যাকে বিয়ে করতে চাস!
– না এখনো এমন সৌভাগ্য আমার হয় নি।
নির্ঝর পেছন থেকে বলে উঠে..
– তবে সেই সৌভাগ্য আমার হবে।
মেহেরিন বিড় বিড় করে বলে..
– শুরু হয়ে গেল মহাভারত!
আরিশা হেসে বলে উঠলো…
– আরে নির্ঝর ভাইয়া যে, কেমন আছেন?
নির্ঝর হেসে তাদের সাথে বসে বলল..
– ভালো আছি তুমি!
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মেহেরিন আরিশা কে খোঁচা মেরে বলে…
– এতো আদিখ্যেতা দেখাচ্ছিস কেন?
আরিশা মেহেরিন দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই নির্ঝর বলে উঠে…
– তা এতো ভাগ্য নিয়ে সবাই পড়লে কেন?
– না ভাইয়া আসলে জীবনসঙ্গী নিয়ে কথা হচ্ছিল। তা আপনার কেউ আছে নাকি।
নির্ঝর কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– জীবনসঙ্গী হতে হলে প্রথমে কি প্রয়োজন বিশ্বাস না ভালোবাসা!
– হঠাৎ এই কথা কেন?
– জিজ্ঞেস করলাম বলো তোমার কি মনে হয়?
নিরব বলে উঠে..
– ভালোবাসা!
আরিশা বলে উঠে..
– এর কারন কি? বিশ্বাস কেন নয়!
নির্ঝর হেসে বলে..
– কারন মানুষের মস্তিস্ক অদ্ভুত! তারা যত সহজে কাউকে ভালোবাসতে পারে তত সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। তবে যদি কাউকে ভালবাসে তবেও তাকে বিশ্বাস করে। ভালো না বাসলে তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারন নেই। ভালোবাসে বলেই তাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর এই আকাঙ্ক্ষা তখন জোরালো হয় যখন সে তাকে বিশ্বাস করে। তাহলে যদি ধরো আমার মতে ভালোবাসা আগে। আর ছোট শব্দে যদি বলি… “ভালোবাসা এভাবেই হয়ে যায় এতো ভাবতে হয় না কিন্তু যদি বিশ্বাসের কথা আসে তখন সেটা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়। ভালোবাসা মন থেকেই হয় আর বিশ্বাস মস্তিষ্ক থেকে”!
আরিশা আর মেহেরিন হা হয়ে শুনতে থাকে। আরিশা বলে উঠে..
– আপনার তো কবি হওয়ার দরকার ছিল।
মেহেরিন বলে উঠে..
– আচ্ছা এগুলো শুনে লাভ কি!
আরিশা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। নির্ঝর একটা মুচকি হাসে কারন এটা হবে সে জানত। তবে নিরব একটু জোরেই হেসে উঠে। বলে..
– তোকে কি বোঝাল আর তুই কি বুঝলি!
নির্ঝর বলে উঠে..
– আমি তো আরিশা কে বোঝাচ্ছিলাম। এনিওয়ে তোমার কেউ আছে আরিশা এরকম জীবনসঙ্গী যাকে তুমি ভালোবাসো!
– না নেই ভাইয়া! তবে ভাইয়া একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেলো!
– কি?
– আপনি বললেন জীবনসঙ্গী’র জন্য প্রথমে ভালোবাসা দরকার অতঃপর বিশ্বাস তবে এটা কি বলবেন একটা সম্পর্কের জন্য তো প্রথমে বিশ্বাস দরকার তাই না। কারন হলো..
এখানে মেহেরিন বলে উঠে..
– দু’টো অচেনা মানুষ তখন’ই একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয় যখন তারা একে অপরকে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস না থাকলে সেই সম্পর্কের কোনো মূল্যে থাকে না এটাই তো!
আরিশা বলে উঠে…
– ঠিক বললি! তো ভাইয়া বলুন কি বলবেন!
নির্ঝর মৃদু হেসে বলল…
– কথার যুক্তি ঠিক। একটা সম্পর্কে প্রথমে বিশ্বাস দরকার তবে একটা কথা বলি। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে কি হয়। দুটো অচেনা মানুষ বিয়েতে মতো একটা চমৎকার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু তারা কেন এরকম একটা মানুষকে বিয়ে করে যার সম্পর্কে তার কোনো ধারনাই নেই। সে এটাও জানে না সে তার বিশ্বাসের যোগ্য কি না কিন্তু তবুও তাকে বিয়ে করে। তাকে ভালোবাসে বলে না তা কখনো হয় না কারন তাকে তো সে দেখেই নি তাহলে! তাহলে আবার আসে সেই বিশ্বাসের মতো একটা শব্দ! একবার তাকে বিশ্বাস করেই দেখা যাক না জীবন কোথাও যায়। কিন্তু এখানে আরেকটা কথা আছে সেটা হলো যদি তার কোনো ভালোবাসার মানুষ না থাকে তখন’ই কিন্তু সে সেই বিশ্বাসের আশ্রয় টা নেয়। কারন ভালোবাসা সহজ তবে কাউকে বিশ্বাস করা খুব জটিল। যদি তুমি কাউকে ভালোবাসে তখন’ই তাকে বিশ্বাস করার ভাববে। বিশ্বাস করতে শুরু করবে। বিশ্বাসের প্রকিয়া খুব জটিল।কোনো সম্পর্কেই একেবারেই তাকে বিশ্বাস করে সম্পর্ক শুরু হয় না। তারা শুধু তাদের ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করে একটা চান্স দেয়। দেখে তাদের জীবন কোথায় যায়। তবে এটা সবার জন্য এক না। আমি তো আমার মনের কতাটা বললাম। ছোট একটা মুক্তি!
মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে..
– আমি ক্লান্ত এসব শুনে!
আরিশা চোখ ঘুরিয়ে বলে..
– তুই শুনেই ক্লান্ত তাহলে একটা সম্পর্কে তুই থাকবি কি করে।
মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলে…
– থাকবো না! কারন আমি কাউকে ভালোই বাসি না তাহলে সম্পর্ক কিসের। আর এগুলো আমার জন্য না, লাইক বিয়ে, সংসার, বাচ্চা নো ইট’স নট ফর মি!
নিরব বলে উঠে..
– কারন তুই নিজেই একটা বাচ্চা, তোকেই সামলাতে হবে তুই আবার কাকে সামলাবি!
– এই তো তুই বুঝেছিস!
নির্ঝর বলে উঠে…
– এক জনের বোঝ আরেকজন’র তরমুজ!
মেহেরিন জোরে হেসে উঠে!
.
বিকালে…
মেহেরিন বসে বসে চকলেট খাচ্ছে আর টম অ্যান্ড জেরি দেখছি। হঠাৎ করেই ওর পাশে ধপাস করে রোদ্দুর বসল। মেহেরিন জানে রোদ্দুর এখন কি জিজ্ঞেস করবে তাকে। তবুও সে চুপচাপ থাকে। এদিকে রোদ্দুর খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠে..
– চুপচাপ বসে আছিস যে কিছু বল!
– আমি কি বলবো!
– এটাই যে..
– যে…
রোদ্দুর এবার জড়োসড়ো হয়ে বসে। অতঃপর বলে…
– আরিশা কি বললো?
– কি আবার বলবে!
– জান!
– ওয়াট!
রোদ্দুর পকেট থেকে চকলেট’র দুটো প্যাকেট বের করে মেহেরিন’র হাতে দিয়ে বলল..
– এবার বল!
– এতে আমার কি হবে?
– আচ্ছা আরো দেবে এবার বল!
মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– শোন ওর কোনো বফ নেই আপাতত সিঙ্গেল আছে!
– সত্যি!
– হ্যাঁ তবে কতদিন থাকবে জানি না!
– বেশি দিন আর সিঙ্গেল থাকবে না ওয়েট কর তোর ভাবি হয়েই আসবে!
– আমিন!
রোদ্দুর মেহেরিন’র কথা শুনে হেসে উঠে!
.
রাতে…
নির্ঝর হোটেলে নিজের রুমে বসে মেহেরিন’র ফটো দেখছে।তার চোখে ঘুম নেই। তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার ঘুম পরি মেহু পাখি! নির্ঝর মেহেরিন’র ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..
– কি আছে তোমার মাঝে আমি বুঝতে পারি না। শুধু মন চায় সারাদিন তোমার ভাবনায় ঢুবে থাকি। তবে এই কি ভালোবাসা! ভালোবাসা কেন এতো নির্দয় বলো তো, তোমাকে এতো ভালোবাসি অথচ তুমি বোঝ না আর ভালো না বেসেও থাকতে পারি না। কারন আমি যে নিরুপায়। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায় মেহু পাখি। মন চায় ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। তো বসে আসি কেন যেয়ে দেখি আসি আমার ঘুম পরি কে।
বলেই নির্ঝর এই রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ল মেহেরিন কে দেখার উদ্দেশ্যে! খান বাড়ির কাছাকাছি এসে গাড়ি থামাল নির্ঝর! অতঃপর গাড়ি থেকে সামনে যেতেই কাউকে দেখল বাড়ির প্রাচীর টপকাতে। নির্ঝর খানিকটা অবাক হলো। এসময় কে যাচ্ছে এই বাড়িতে। নির্ঝর তার পিছু পিছু যেতেই দেখল সে একটা মই নিয়ে মেহেরিন’র রুমের বেলকনিতে রাখল। নির্ঝরের কৌতূহল এবার বেড়ে গেল। কে এ? নির্ঝর দেখল সে মেহেরিন’র ঘরের মধ্যে চলে গেছে। নির্ঝর দেরি না করে দ্রুত মই বেয়ে মেহেরিন’র ঘরে এলো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আড় চোখে চেয়ে রইল ঘরের মধ্যে! সে মেহেরিন’র বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়র। তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। অতঃপর তার হুডির টুপি’টা নামিয়ে ফেলল। নির্ঝর এবার তার মুখ দেখে চমকে বলে উঠে..
– নিরব! #Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১০
নির্ঝর নিরব কে দেখে চমকে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো..
– এই শালা এখানে কি করছে এতো রাতে! এতো রাতে এখানে আসতে কে বলেছিলো ওকে! কিন্তু কেনো এসেছে ও এখানে। মতলব কি ওর!
নির্ঝর দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল নিরব কি করে। এদিকে নিরব এখানে এসেছে মেহেরিন কে দেখতে। মেহেরিন কে অনেক ভালোবাসে সে। কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে মেহেরিন কে দেখছিলো। ঘুমন্ত মেহেরিন দেখতে ভালো লাগছিলো তার। ইচ্ছে হলো এই ঘুমন্ত মেহেরিন কে একটু ছুঁইয়ে দিতে। সেই নেশায় মেহেরিন’র গালে হাত দিতে যাবে হঠাৎ করে তার হাত কেউ ধরে ফেলল। নিরব চমকে উঠলো অতঃপর সামনে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর! সে কিছু বলতে যাবে নির্ঝর চোখের ইশারায় তাকে কথা না বলতে বললো। অতঃপর তাকে টেনে নিয়ে বেলকনিতে এলো।
নির্ঝর রেগে নিরব কে বলে..
– এখানে এতো রাতে কি করতে এসেছিলে?
– তুমি কি করতে এসেছিলে।
– আমি যাই করতে আসি না কেন সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
– সেইম কথা আমারো! আমার মেহেরিন’র ঘরে তুমি কি করতে এসেছো
– তোমার মেহেরিন মানে আমার মেহু পাখি!
– না ও আমার মেহেরিন।
– আমার মেহু পাখি।
– বেশি হচ্ছে কিন্তু আমি চাইছি না কোনো ঝামেলা করতে।
– ইয়েস আমিও চাই না। আমার মেহু পাখির থেকে দূরে থাকবে।
– আমার মেহেরিন’র কাছে আমি আসবো। তুমি কে আমাকে না বলার!
– আমার মেহু পাখি ও।
– আমার মেহেরিন!
এর মাঝে হঠাৎ মেহেরিন এসে বলে উঠল..
– আমি আমার দা এর আদুরী আর কারো সম্পত্তি না!
নিরব আর নির্ঝর ঝগড়া ধামিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। দুজনেই অবাক, কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করেই মেহেরিন বলে উঠে..
– আমার ঘর থেকে দূর হও দুজন!
তারপর ধপাস করে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। এদিকে নিরব আর নির্ঝর দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইল।
.
পরদিন বিকালে…
নির্ঝর সবে এসেছে মেহেরিন’র বাসায়। আজ অফ ডে বলে মেহেরিন কে দেখে নি সে। তাই বাসায় চলে এসেছে। এখানে এসে দেখে নিরব আগে থেকেই বসে আছে এখানে। সবাই মিলে আড্ড দিচ্ছে। নিহা নির্ঝর কে দেখতে পেয়ে ডেকে বললো তাদের সাথে বসতে। অতঃপর নির্ঝর তাদের সাথে যোগ দিলো। খানিকক্ষণ ধরেই নির্ঝর আর নিরব দুজনে খেয়াল করছে মেহেরিন তাদের দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। তারা দু’জনই ভয়ে আছে মেহেরিন না কাল রাতের ঘটনার কথা সবাইকে বলে দেয়। ও যা মেয়ে বলতে বেশিক্ষণ লাগবে না।
হুট করেই মেহেরিন বলে উঠলো..
– জানো দা কাল কি হয়েছে?
নিরব আর নির্ঝর দু’জনেই শুকনো ঢোক গিলল।
– কিহ?
– কাল রাতে আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম…
বলার আগেই নিরব বলে উঠে..
– দা আমি বলছিলাম কি চলো আমরা কোথায় ঘুরতে যাই!
নির্ঝর বলে উঠে..
– দা আমিও কিন্তু এই কথাই ভাবছিলাম!
– ভালোই হয় তোমার ডিসাইড করো কোথায় যাবে। আচ্ছা আদুরী তুমি কি বলছিলে?
– বলছিলাম কি কাল রাতে আমি যখন..
নিরব আবার বলে উঠে..
– দা আরিশা ও যাক আমাদের সাথে!
আরিশার কথা শুনে রোদ্দুর খানিকটা খুশি হয়ে যায়। দা বলে..
– তোমরা বন্ধুরা যাবে এতে আমি কি বলতে পারি!
মেহেরিন বিরক্ত হয়ে বলে..
– আমি কি বলতে চাই সেটাও কেউ শোন!
– আচ্ছা বলো!
মেহেরিন বলতে শুরু করল। নিরব আর নির্ঝর দুজনে একসাথে মাথা নিচু করে নিলো। অতঃপর মেহেরিন বলল..
– কাল আমি ঘুমানোর পর স্বপ্নে এই দু’জন কে একসাথে দেখেছিলাম!
– একসাথে!
স্বপ্নের কথা শুনে দুজনেই হাফ ছেড়ে বাঁচে। এদিকে দুজনে একসাথে স্বপ্নে এই কথা শুনে সবাই অবাক। নির্ঝর বলে উঠে..
– বাবা.. আমাকে স্বপ্নেও দেখলে তুমি!
নিরব বলে উঠে..
– আমাকেও দেখেছে!
– তো!
– কিছু না এমন ভাবে বললে যে খুব কাছের কেউ তুমি.
– আমি তো কাছের’ই।
– আমিও ফ্রেন্ড ওর
– কতোদিন আর থাকবে!
– কি বলতে চাও তুমি!
নীল বলে উঠে..
– আরে আরে চুপ! দুজনেই চুপ কর। মেয়েদের মতো এতো ঝগড়া কেন করছিস?
হঠাৎ নীলাশা বলে উঠে..
– কি বলতে চান আপনি আমি আপনার সাথে ঝগড়া করি।
– আরে আমি তো!
– কি আপনি!
– আচ্ছা সরি!
নীলাশা মুখ ভেংচি কাটল। সবাই হেসে উঠল!
আনহা বলে উঠে..
– মেহেরিন স্বপ্নে কি দেখলে সেটা বলো!
মেহেরিন বলল…
– দেখলাম দুজনে আমার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। ঠিক এভাবেই ঝগড়া করছিল।
কাব্য বলে..
– ঠিক কি বলছিলো আদুরী!
– একজন বলছিলো আমার মেহেরিন আরেকজন আমার মেহু পাখি!
ইহান বলে..
– কেমন জানি বাস্তব বাস্তব লাগছে!
আহিয়ান বলে..
– তো তুমি কি করলে শালিকা!
– আমি! আমি উঠে বললাম আমি তো আমার দা’র আদুরী। তারপর ধপাস করে বেলকনির দরজা বন্ধ করে টপাস টপাস করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম
মেহেরিন’র কথায় এক ঝড় হাসির বন্যা বয়ে গেল।কারো হাসি থামার নাম নেই। সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা! নিশি মাঝে বলে ..
– বাস্তবে এই দুজনের সাথে এমন’ই হবে!
অতঃপর সবাই আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর ঠিক করলো সবাই কক্সবাজার যাবে ঘুরতে।এতেই সবাই রাজি হলো। আরিশা কেও তাদের সাথে যাবার জন্য বলা হলো!
অতঃপর কক্সবাজার যাওয়ার দিন…
আজ সকালেই সবাই কক্সবাজার যাবার জন্য রওনা দিবে। সবাই সকালের মধ্যে’ই তৈরি হয়ে এসে পড়ে খান বাড়িতে। নীল আর নীলাশা এক গাড়িতে। অভ্র, আনহা, আহিয়ান আর নিহা এক গাড়িতে। নিশি, ইহান, কাব্য, রোদ্দুর এক গাড়িতে তবে মেহেরিন ইচ্ছে করেই এই গাড়িতে নিজে আর আরিশা উঠে। অতঃপর আরিশা কে রোদ্দুর’র পাশে বসায়। এই গাড়িটা বড় ছিল বিধায় শান্ত আর অরনি উঠে পড়ে এই গাড়িতে। এই দিকে গাড়িতে সিট আর একজনের। নিরব আর নির্ঝর দুজন দুজনকে দেখছে। তাদের কেউ না কেউ এই গাড়িতে উঠবে ব্যস।
নির্ঝর গাড়িতে উঠবে তখন অভ্র ডাক দেয় যার কারনে নিরব উঠে পড়ে গাড়িতে। নির্ঝর মুড অফ করে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে ডেভিল আর তার পাশে নিরব। পরের সিটে ইহান, নিশি, রোদ্দুর আর আরিশা। আর পিছনের সিটে মেহেরিন, অরনি , শান্ত আর তার পাশে কাব্য। নির্ঝর রাগে কিছুই বলতে পারছে না। গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যাবে এর আগেই অরনি বলে উঠে..
– আমি ব্যাঙ আংকেল এর সাথে বসবো!
( মেহেরিন’র থেকে শুনে শুনে অরনি ও এই নামেই ডাকে, তবে ও একটু ছোট করে ডাকে )
মেহেরিন বলে উঠে..
– আম্মুজান এখানে আর জায়গা নেই তো!
– আমি আংকেল’র সাথেই বসবো। উনি আমাকে চকলেট দেয়।
সবাই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে এমনকি নির্ঝর নিজেও বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু অরনি তবুও মানে না। অবশেষে কাব্য বলে..
– আচ্ছা নির্ঝর তুমি বরং আম্মু জান কে কোলে নিয়ে বসো। ঠিক আছে আম্মু জান!
অরনি হেসে বলে..
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ব্যাঙ আংকেল’র কোলেই বসবো!
নির্ঝর হেসে অরনি কে কোলে নিয়ে মেহেরিন’র পাশে বসে। এদিকে আয়নায় নিরবের দিকে তাকাতেই সে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
.
নিরব কিছুক্ষণ পর পরই গাড়ির সামনের আয়নায় তাকিয়ে তাকিয়ে নির্ঝর কে দেখছে। এখানে নির্ঝর তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। সে গেইম খেলায় ব্যস্ত। শান্ত’র সাথে বাজি ধরে লুডু খেলছে। তার কোনো খেয়াল নেই এখানে তারা দুজন কি করছে।
এখানে আরিশা এখন কমফোর্টেবল ফিল করছে রোদ্দুর’র সাথে। গাড়িতে বসার পর থেকেই কথা আর কথা। রোদ্দুর ও কথা বলছে বেশ। নিশি আর ইহান দুজন দুজনকে খোঁচা মেরে দেখছে তাদের হাল।
#চলবে….