Game 2 পর্ব -১১+১২+১৩

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_11+12+13

সারাদিনের জার্নি শেষে অবশেষে তার পৌঁছায় কক্সবাজার। সেখানে একটা রিসোর্টে তাদের রুম বুক করা হয়। তারা আসতে আসতে প্রায় রাত ‌১.৩০ বেজে যায়। রিসোর্টে’র মালিক নিজে এসে তাদের ফুল দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। এতো জার্নির পর সবাই বেশ ক্লান্ত বিধায় কেউই আর দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই তাদের নিজ নিজ রুমে চলে যায়। অভ্র, আনহা আর শান্ত’র জন্য একরুম। নীল – নীলাশা’র জন্য এক রুম। আরিশা আর নিশি’র বেশ ভাব জমে যায় এজন্য তারা এক রুমে থাকে। বাকি সবাই তাদের নিজ নিজ জন্য আলাদা আলাদা ঘরে থাকে। তবে নির্ঝর এখানে চালাকি করে মেহেরিন’র ঠিক সামনে অর্থাৎ বিপরীত রুম বুক করে।

যে যার মতো ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের রিসোর্ট’টা সমুদ্রের পাশেই ছিল। রাতে ঘুমানোর সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ কানে আসে। মেহেরিন বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পর পর’ই ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ ভোরে কারো ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায় মেহেরিন’র। মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন কোম্বল মুড়ি দিয়ে বলতে থাকে….

– এই লেজ কাটা ব্যাঙ’টা সারাদিন আমাকে জ্বালিয়ে মন ভরে না এখন স্বপ্নতেও জ্বালাতে আসে।

– আমি তোমার স্বপ্ন না মেহু পাখি বাস্তব!

– ওহ্ আচ্ছা ভালো!
বলেই মেহেরিন ঘুমিয়ে পড়ে হঠাৎ মেহেরিন লাফ দিয়ে উঠে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..

– আমার রুমে আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?

নির্ঝর হেসে বলে..
– তুমি আমায় ব্যাঙ বলো কিন্তু ব্যাঙের মতো লাফালাফি তো তুমিই করো।

– আমার ঘরে আসলেন কি করে?

নির্ঝর হেসে বলল..
– এটা ইম্পর্ট্যান্টে না ইম্পর্ট্যান্টে হলো কেন এসেছি!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নির্ঝর হাতের ঘড়ি’র দিকে একবার তাকিয়ে বলে..
– তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো আর ৭ মিনিট আছে।

– ৭ মিনিট পড়ে কি?

– ৭ মিনিট পড়েই দেখবে এখন জলদি যাও লেট হচ্ছে!

কিন্তু মেহেরিন না উঠে বসেই রইল। নির্ঝর মেহেরিন টেনে উঠিয়ে বলল..
– প্লিজ যাও সত্যি বলছি বোর হবে না।

মেহেরিন বিরক্ত মুখে ফ্রেশ হয়ে এসে একটা কালো রঙের জ্যাকেট পড়ে নিল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র হাত ধরে বলল..

– আসো আমার সাথে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

– কিসের সময়?
কিন্তু এই কথা নির্ঝরের কানে গেল না। নির্ঝর মেহেরিন কে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। অতঃপর বেলকনিতে আনতেই মেহেরিন রেগে নির্ঝরের হাত ছেড়ে বলল..

– কি হয়েছে টা কি এমন করছেন কেন? এভাবে আমাকে ধরে রাখার মানে কি?

নির্ঝর মেহেরিন’র গাল দুটো চেপে ওপাশে মুখ ঘুরাল। মেহেরিন সেখানে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মেহেরিন’কে ছেড়ে দিয়ে গ্রিলে হাত দিয়ে বলল..

– কেমন এটা?

– ইটস জাস্ট ওয়াও!

মেহেরিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সমুদ্রের দিকে। সূর্য উদয় হচ্ছে সবে। খানিকক্ষণ’র মধ্যেই সূর্যের কিরন ছড়িয়ে যেতে দেখল। এটা সত্যি দারুন তবে। খুব অপূর্ব দেখায় যখন সূর্য তার কিরন ছড়িয়ে দেয়। সব অন্ধকার দূর হয়ে দেখা মিলে আলোর। একে একে সব আলোকিত হয়। এর মাঝে সমুদ্রের ধীরে স্থিরে বয়ে চলাও কম মনোমুগ্ধকর নয়। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব খানে দেখা যায় না। মেহেরিন চোখ ভরে এই সৌন্দর্য দেখছিল। সবে সূর্যের আলো এসে পড়েছে মেহেরিন’র মুখে। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে..
– এটা দেখাতেই এনেছিলাম, সূর্য উদয়। জানতাম তোমার ভালো লাগবে!

মেহেরিন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে..
– এটা খুব সুন্দর !

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে..
– অপূর্ব সুন্দর!
নির্ঝর সূর্য উদয়ের পুরোটা সময় মেহেরিন’র দিকেই তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই মেহেরিন তার দিকে নির্ঝর চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেহেরিন এবার সিরিয়ার হয়ে বলে..

– এখন বলুন রুমে আসলেন কিভাবে?

– তুমি এখনো ভুলো নি!

– নাহ কারন কাল আমি বেলকনির‌ দরজা আটকে দিয়েছিলাম তো বেলকনি দিয়ে আসবেন এটা অসম্ভব!

নির্ঝর শান্ত ভাবেই তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে নির্ঝর’র দিকে। অতঃপর বলে উঠে..
– ডুবলিকেট চাবি! আপনি ডুবলিকেট চাবি নিয়েছেন আমার ঘরের!

নির্ঝর দাঁত বের করে হেসে বলে..
– তুমি আসলেই খুব চালাক।

– ম্যানাজারের চাকরি খেয়ে ছাড়ব, শালা আমার রুমের চাবি আপনাকে দিয়েছেন?

– আরে আরে ম্যানেজার দেয় নি।

– তো!

– সেটা তোমার জানা লাগবে না!

– দা জানলে খবর করে ছাড়বে আপনার!

– তোমার রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে আমি জানি তবুও রিস্ক নিয়ে গেছি, বুঝলে!
মেহেরিন’র‌ নাকে টোকা দিয়ে বলল!

হঠাৎ গাড়ির শব্দ আসে। মেহেরিন নিচে তাকিয়ে দেখে এটা তাদের’ই গাড়ি। কিন্তু কথা হলো এতো ভোরে বাইরে গেল কে?

মেহেরিন আর নির্ঝর দুজনেই তাকিয়ে আছে। দেখল ডেভিল নামছে। মেহেরিন একটু অবাক হলেও কিছু বললো না। এর মাঝেই রুমে নক হলো। নির্ঝর দরজা খুলে দেখে একটা সার্ভেন্ট এসেছে দু কাপ কফি নিয়ে। নির্ঝর হেসে তার থেকে কফি নিয়ে তাকে ‌কিছু বকশিস দিল। অতঃপর তাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলো মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর এক কাপ কফি মেহেরিন’র হাতে দিয়ে বললো..

– তোমার ভালো মতো ঘুম হয় নি। এটা খাও ভালো লাগবে!

মেহেরিন কফি মগ টা ধরল। তবে কফি খাচ্ছে না। নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে হুট করেই তার হাতের কফি টা নিজে এক চুমুক দিলো। অতঃপর বলল..
– দেখলে কিছু মিশাই নি, এবার খাও!

মেহেরিন একটা ভেংচি কেটে কফি’র মগে চুমুক দিয়ে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল। বেলকনিতে থাকা বিন ব্যাগে বসে পড়ল। নির্ঝর এসে গ্রিলে ঠেসে দাঁড়াল। অতঃপর বলল..

– জানো তোমার আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না

– আপনাকে তো আমি ভালো’ই বাসি না তো কমাকমির প্রশ্ন আসছে কেন?

নির্ঝর একটা মুচকি হেসে সমুদ্রের দিকে তাকায়।আবারও গাড়িতে শব্দ এলো। নির্ঝর নিচে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল..

– এবারে ও আমাদের গাড়ি!

মেহেরিন উঠে নিচে তাকিয়ে বলল..
– আসলেই তো!

নির্ঝর কিছু বলতে যাবে হঠাৎ আবার কেউ রুম নক করল। নির্ঝর এসে দরজা খুলে দেখে ডেভিল দাঁড়ানো। নির্ঝর তাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। ডেভিল নির্ঝর কে কিছু না বলে রুমে ঢুকে যায়। নির্ঝর ডেভিল কে দেখে একটুও অবাক হয় না। সে এসেই মেহেরিন কে খুঁজতে থাকে। অতঃপর মেহেরিন কে দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে..

– ম্যাম আর ইউ ওকে!

– আমি ঠিক আছি ডেভিল!

নির্ঝর ডেভিল কে উদ্দেশ্য করে বলে…
– তুমি আসতে লেট করেছো ডেভিল। মেহু পাখি’কে আমি আরো আগেই এনেছি!

– সরি স্যার বাট আমি এখানে ছিলাম না। রোদ্দুর আর আরিশা ম্যামের সাথে বাইরে গিয়েছিলাম। তবে আপনার এটা করা একদমই উচিত হয় নি। না বলে ম্যামের রুমে গেছেন অভ্র স্যার জানলে অনেক রাগ করবে।

– কিন্তু আমি তো।

– তবুও স্যার এরপর এরকম কিছু করবেন না। ম্যামের রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা তার সুরক্ষা’র জন্য’ই লাগানো। কিছু হলে জবাবদিহিতা আমাকে করতে হবে।

– ওকে ডেভিল রিলেক্স ‌! এরপর তোমাকে বলেই যা করার করবো।

মেহেরিন বলে উঠে….
– রোদ্দুর আর আরিশা বাইরে গেছিল।

– জ্বি ম্যাম বিচে গেছিল। সূর্য উদয় দেখতে। আপনাকে নিতে চেয়েছিল তবে আমি মানা করেছি কারন কাল আপনি খুব টায়ার্ড ছিলেন এরপর অভ্র স্যার জানলে আমাকে বকতেন তাই!

– ওহ আচ্ছা!

নির্ঝর বলে..
– তলে তলে তো দেখি অনেকদূর। একদিনেই এতো আগায় তোমার ফ্রেন্ড!

মেহেরিন হেসে বলে..
– আমার ফ্রেন্ড তো তাই! আচ্ছা ডেভিল তুমি যাও রেস্ট নাও আমি ঠিক আছি।

– ওকে ম্যাম!
.
অতঃপর ডেভিল চলে যায়। খানিকক্ষণ বাদেই মেহেরিন নির্ঝর’র রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসতে নিলে দেখা হয় নিরবের সাথে। নিরব তাদের দেখে অনেক অবাক হয়। নিরব কিছু বলার আগেই মেহেরিন বলে..
– আমার খুব ঘুম পাচ্ছে নিরব পরে কথা বলবো!

অতঃপর মেহেরিন চলে যায়। নির্ঝর দরজা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিরব’র দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। নিরব রেগে চলে যায় সেখান থেকে।

সকাল ৯ টার দিকে সবাই ব্রেকফাস্ট করে বের হয় বিচে ঘুরতে। সবাই বিচের ধারে ঘুরে ফিরে। মেহেরিন নজর রাখে আরিশা আর রোদ্দুর’র দিকে। দুজনের হাব ভাব ভালো লাগছে না তার। তবে এটাও কি সম্ভব একদিনেই একটা মেয়েকে এভাবে পটাতে। কিন্তু রোদ্দুর বলে হয়তো পারে। শালা একটা প্লে বয়। এই না আরিশা’র সাথে দু দিন রিলেশন রেখে আবার ছেড়ে দেয়। এরকম কিছু‌ হলে মেহেরিন ছেড়ে কথা বলবে না।

নীল আর নীলাশা দুজনে জীপ নিয়ে বিচের পাশে ঘুরতে থাকে কারন নীলাশা’র জন্য বেশি হাঁটাহাঁটি এখন মোটেও ভালো না। এদিকে অরনি আর শান্ত সমুদ্রের ধারে বালি নিয়ে খেলতে থাকে। আহিয়ান আর অভ্র মিলে তাদের সাথে খেলছে আর তাদের পাহাড়া দিচ্ছে। যেই বিচ্ছু দুজন বলা যায় না কি করে বসে। বাকি সবাই অলরেডি সমুদ্রে নেমে গেছে। সমুদ্রের পানিতে এখন বেশি স্রোত নেই। সবাই একসাথে খুব মজা করছে। কিন্তু এখানে মেহেরিন আর নিরব দূরে জীপে বসে সবার কান্ড দেখছে। মেহেরিন তো বসে বসে কয়েক প্যাকেট চকলেট অলরেডি শেষ করে ফেলেছে। এখানে নিরব শুধু তার পাশে বসে বক বক করছে। নির্ঝর এসব দেখে মেহেরিন’র কাছে গিয়ে বলল..

– মেহু পাখি পানিতে নামবে না।

– না!

– কেন?

নিরব বলে..
– ও নামবে না ওর ইচ্ছে তুমি এতো কেন জিজ্ঞেস করছো।

নির্ঝর হেসে বলে..
– সেটাই তো আমি মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করেছি তুমি কেন বলছো!

মেহেরিন বলে উঠে..
– দুজনেই অফ যান আমি পানিতে নামবো না।

– বিচের কাছে যাবে!

– হাঁটতে ইচ্ছে করছে না!

নির্ঝর এসে মেহেরিন’র পাশে বসল। মেহেরিন ড্রাইভিং সিটের পাশে বসা ছিল। নির্ঝর বসে জীপ চালাতে শুরু করল। জীপ নিয়ে একদম সমুদ্রের বিচের কাছে নিয়ে গেল। এভাবেই হৈ হুল্লোড় করে দিনটা কাটাল সবাই!

রাতে ডিনারের জন্য সব ব্যবস্থা ছাদে করা হয়। ছাদ খুব সুন্দর করে লাইটিং করা। অনেক বড় একটা টেবিল রাখা হয়েছে মাঝখানে। সবাই সেখানে বসে। মেহেরিন বসে আছে তার পাশে আরিশা আর আরিশা’র পাশে নিরব। আর এপাশে নির্ঝর! আরিশা’র ঠিক উল্টো পাশে রোদ্দুর! মেহেরিন তাদের দু’জনের কাহিনী দেখছে। কেমন চোখে চোখে কথা বলছে তারা। আরিশা কেমন লজ্জা পাচ্ছে রোদ্দুর মুচকি মুচকি হাসছে। কাহিনী টা হচ্ছে কি?

মেহেরিন খাওয়া রেখে ওদের দুজনের কাহিনী দেখছে। হঠাৎ তার কানের কাছে এসে নির্ঝর বলে উঠে…

– খাওয়া রেখে ওদের কাহিনী কি দেখছো । দুজনে প্রেম করছে।

– প্রেম এভাবে করে বুঝি!

মেহেরিন”র কথা শুনে নির্ঝর ফিক করে হেসে দেয়। নিরব এসব খেয়াল করে। হঠাৎ অভ্র এসে মেহেরিন কে নিয়ে যায়। অতঃপর নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিতে থাকে।

খাওয়া দাওয়া’র পর সবাই একসাথে বসে আড্ডা দেবার জন্য। সবাই গোল হয়ে বসে। গান বাজনা শুরু হয়। মেহেরিন আর রোদ্দুর গিটার বাজায়। অভ্র গান শুরু করে একে একে সবাই গান গায়। রোদ্দুর পুরো গানটাই আরিশা’র দিকে তাকিয়ে বলে। মেহেরিন ভালোই সেটা খেয়াল করে। অতঃপর সবাই ঘুমানোর জন্য চলে যায় কিন্তু মেহেরিন রোদ্দুর কে রেখে দেয় কথা বলার জন্য।

#চলবে….

[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১২

রোদ্দুর ছাদের গ্রিলে এসে বসল। মেহেরিন ওর পাশে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। রোদ্দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন বলে উঠে…

– তুই আরিশা কে ভালোবাসিস!

রোদ্দুর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। অতঃপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে…

– হুম অনেক ভালোবাসি!

– সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি মিথ্যা মিথ্যা!

রোদ্দুর মেহেরিন’র গাল টেনে বলে..
– সত্যি সত্যি ভালোবাসা জান!

– ওহ্ আচ্ছা। তবে যদি মিথ্যা মিথ্যা ভালোবাসা হয় না রোদ্দুর তোর খবর আছে। আরিশা কিন্তু আমার ভালো বন্ধু!

– জান! তুই জানিস আমি সবাইকে মিথ্যে বললেও তোকে বলি না।

– হুম তো দেখছি তো। অনেক ভালোবাসা বাড়ছে!

– কোথায় আর ভালোবাসা বাড়ছে তোমার ফ্রেন্ড এখনো গ্রীন সিগন্যাল দেয় নি।

– আহারে বেচারা! ঢং কতো, ভাবে কিছুই দেখি নি।

– জান..

– তুই প্রপোজ করেছিলি যে গ্রীন সিগন্যাল পাবি!

– না তো!

– তাহলে বলছিস প্রপোজ না করা অবদি কোনো সিগন্যাল পাবো না।

তখন পিছন থেকে নির্ঝর বলে উঠে..
– আরে ব্রো আমি প্রোপজ করার পরও কোনো সিগন্যাল পায় নি আর তুমি বলছো এই কথা!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর প্যান্টের পকেটে দু হাত রেখে তাদের দিকে আসছে। সে এসেই রোদ্দুর’র ওপাশে দাঁড়ায়। রোদ্দুর বলে উঠে..

– মানে! তার মানে তুমি ও কাউকে প্রোপজ করেছিলে!

– কাউকে না আমার পাখি টা কে।

রোদ্দুর’র আর বুঝতে বাকি নেই নির্ঝর কার কথা বলছে। এদিকে মেহেরিন নির্ঝরের কথা ইগনোর করতে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে থাকে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– কবে করলে আর ভালোই না সব লুকিয়ে লুকিয়ে করো তোমরা।

– আরে ভাই না তেমন ভাবে করি নি। শুধু আর কি মুখেই বলেছিলাম এতে তোমার জান যেই ব্যান্ড আমার বাজিয়েছে তা আর এখন নাই বললাম!

– আচ্ছা ভাই বুঝতে পেরেছি। তো এবার আমায় কি করতে বলছো!

নির্ঝর ইশারা করে মেহেরিন’র দিকে।‌ রোদ্দুর তাকিয়ে দেখে মেহেরিনের কানে হেডফোন। রোদ্দুর খোঁচা মেরে মেহেরিন ডাকে। মেহেরিন কানের হেডফোন নামিয়ে বলে…

– আজাইরা প্যাচাল শেষ!

– 😒

রোদ্দুর বলে উঠে..
– তোরা দুজন অফ কর। মেহেরিন এরপর কি করবো সেটা বল!

– কি আর করবি প্রপোজ করবি।

– তবে প্রপোজ করাটা কিন্তু সহজ না এটা ভেবে নিও।

– নেগেটিভ কথা বলা কি আপনার স্বভাব!

– আমি বাস্তব কথাই বলছি।

– তোরা থামবি! কিভাবে প্রপোজ করবো সেটা বল।

দুজন একসাথে বলে..
– প্রেম করাও শিখিয়ে দেই!

রোদ্দুর বেক্কল এর মতো দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে আর দু’জন দু’জনের দিকে! রোদ্দুর অসহায় মুখ করে বলে..

– হেল্প চাচ্ছি গাইস!

অতঃপর নির্ঝর আর মেহেরিন দুজনেই সমুদ্রের দিকে তাকায়! অতঃপর দুজনেই একসাথে বলে..

– বিচে প্রপোজ কর!

রোদ্দুর দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। নির্ঝর আর মেহেরিন একে অপরকে দেখে আমার সমুদ্রের দিকে তাকায়। নির্ঝর বলে উঠে..

– কথায় বলে সমুদ্রের বিশালতা পরিমাণ ভালো বাসা উচিত। কারন ভালোবাসা সমুদ্রের মতোই সীমাহীন!

মেহেরিন আর রোদ্দুর নির্ঝরের দিকে তাকায়। অতঃপর মেহেরিন বলে..

– ভালোবাসার গভীরতা’র সাথে সমুদ্রের গভীরতা’র তুলনা করা যায়। সমুদ্রের প্রতি ঢেউয়ের মাঝে ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়। এক একটা ঢেউয়ের শব্দ নাকি ভালোবাসার স্লোগান দিয়ে যায়।

রোদ্দুর মেহেরিন’র কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– ভালোবাসা নিয়ে এতো উক্তি তুই কবে থেকে শিখলি।

মেহেরিন ভেংচি কেটে বলে..
– মন চাইলো বললাম!

রোদ্দুর বলে..
– যাই হোক বিচে প্রপোজ’র আইডিয়া টা খারাপ না। ওকে গাইস আমি যাই সব এ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে।
বলেই রোদ্দুর উঠে চলে গেল।

মেহেরিন আর নির্ঝর সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর বলে উঠে..
– ভালোবাসার গভীরতা যে সমুদ্রের গভীরতা সমান সেটা বুঝ অথচ আমার ভালোবাসা বুঝো না।

মেহেরিন হেসে বলে..
– যেটা অনুভব করি সেটাই বুঝি।

– তার মানে বলতে চাও আমার ভালোবাসা অনুভব করো না।

– হুম!

– আচ্ছা তাহলে এখন তোমাকে আমার ভালোবাসা অনুভব করাবো আমি!

মেহেরিন নির্ঝর’র দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যায়। নির্ঝরের কাছে হাসিটা উপহাস বলে মনে হয়। যেন মেহেরিন তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছে এমন কিছু হবে না। নির্ঝর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে..
– ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত! সবকিছু’র সাথেই এটা তুলনা করা যায়।‌ যুগে যুগে কবিরা এই আকাশ, সমুদ্র, নদী দিয়ে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছে তবে সেটা যদি কখনো কাউকে বোঝানোর কথা আসে তাহলেই আকাশ সমান চিন্তা এসে ভর করে তাকে। এই ভালোবাসা কখনো আগুন হয়ে জ্বালিয়ে আবার কখনো পানি হয়ে মিশে যায়। তবে মেহু পাখি! তোমার আমার ভালোবাসা যে কি হবে জানি না। কারন এখানে পানি ভালোবেসেছে জলন্ত আগুনকে। আর পানির ধর্ম’ই হলো আগুন নিভানো। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে বিপরীত কিন্তু ঘটবে। আগুন না এই পানিকেই শেষ করে দেয়!

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নির্ঝর!
.
এই কয়েকদিন ধরেই বেশ ঘোরাঘুরি চলে কক্সবাজারে। এর আশেপাশে জায়গায় ও বেশ অভিযান চলে। বেশ মজাদার ভাবেই কাটে এইসব। অবশেষে চলে যাবার দিন ঘনিয়ে এলো। রোদ্দুর ভেবেই পারছে না আরিশা কে কি বলবে। কেন জানি খুব অস্থির হয়ে পড়ছে আরিশা কে নিয়ে। পরশু সবাই চলে যাবে। রোদ্দুর ভেবেই নিয়েছে আজ তাকে কিছু না কিছু করতেই হবে। অবশেষে সবাই ঘুরে হোটেল ফিরার পর রোদ্দুর চলে যায় বিচে। বিচের এক পাশে একটা টেবিল রাখে। সেখানে বসার আয়োজন করে সে। তার চারপাশে কাপড় দিয়ে দেয়। অতঃপর বিভিন্ন ধরনের লাইটিং ও করে। মেহেরিন, নির্ঝর , নিরব, নিশি , কাব্য আর ইহান ও তার কাজে হাত লাগায়। বিচের আশেপাশে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের লাইটিং তো আছেই।

সন্ধ্যা হতে আর কিছুক্ষণ বাকি। নিশি আরিশা কে তৈরি করে চোখ বেধে নিয়ে আসে বিচের কাছে। তার পরনে লাল রঙের একটা গাউন। আরিশা’কে এখানে দাড় করানোর পর নিশি চলে যায়। আরিশা বোঝতে পারে সে এখানে একা। তাই সে চট করেই চোখে বাঁধা কাপড় টা খুলে ফেলে। অতঃপর চারদিক তাকিয়ে দেখে। এইরকম একটা রোমান্টিক পরিবেশ দেখে আরিশা’র আগ্রহ বেড়ে।

এদিকে নিশি, মেহেরিন ওরা সবাই দূর থেকে ওদের দেখছে! আরিশা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কারো উপস্থিত পায় না। অতঃপর সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্রের পানিতে ঢেউ আছে তবে স্রোত বেশি না। হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এখান দিয়ে। সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন একটা সময়। এমন একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আরিশা’র মন টা আবার ভালো হয়ে যায়। সে দু’হাত ছাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে এই বাতাস কে অনুভব করতে থাকে। খানিকক্ষণ পর কারো উপস্থিত পায় সে। সে এসে এক হাত আরিশা’র কোমরে হাত রেখে অপর হাত দিয়ে আরিশা’র এক হাত ধরে। আরিশা আনমনে বলে উঠে..
– রোদ্দুর!

সে মুচকি হেসে হাসে, এই হাসির আওয়াজ আরিশা’র কানে পৌছায়! রোদ্দুর আরিশা’র কানের কাছে মুখটা এনে বলে..
– বাহ এতো তাড়াতাড়ি চিনে ফেললে আমায়। জবাবে আরিশা হেসে উঠে।

মেহেরিন এসব দেখে চট করে চোখে হাত দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে…

– কি ভালোবাসা!

ওর কথা শুনে সবাই হেসে উঠে! ইহান মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে…
– ওরে ভালোবাসা রে কেন ওদের ভালোবাসা দেখে তোর জ্বলছে নাকি!

– ব্রো যার ভালোবাসার মানুষের অভাব তার জ্বলে আমার কোনো অভাব নেই বুঝলি।

কাব্য বলে উঠে..
– যাই হোক জান তোর এইসব দেখে কাজ নেই তুই আমার সাথে আয়।

নিশি বলে..
– কারো জ্বলছে আমি বুঝতে পারছি।

কাব্য বলে উঠে…
– হায় মেরা দিল, হায় মেরা দিল!

সবাই হেসে উঠে, নিশি বলে..
– আহা বেচারা, ঢং কতো। সবাই চল আমরা ভিতরে গিয়ে আড্ডা দেই।

নির্ঝর বলে..
– সেটাই ভালো না হলে অন্যের ভালোবাসা দেখে আমাদের কি?

নিরব বলে..
– নিজের ভালোবাসা না থাকলে কিছুই না!

সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকায় ‌, মেহেরিন ওদের ইগনোর করে কাছে থাকা ক্যাফে তে চলে যায়।

এদিকে রোদ্দুর আরিশা কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরায়। অতঃপর তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। বাতাসের গতি কিছুটা বাড়ে। আরিশা’র চুল গুলো তার মুখে এসে পড়ে। রোদ্দুর সেগুলো তার কানে গুঁজে দিয়ে আরিশা’র গালে হাত রাখে। অতঃপর তাকে কাছে টেনে দু’জনের কপাল ঠেকায়। কিছুক্ষণ এইভাবে থাকে দু’জন। এখানে শুধু তাদের দু’জনের অনুভূতি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়।

কিছুক্ষণ পর রোদ্দুর আরিশা গালে হাত রাখে। আরিশা রোদ্দুর’র হাত ধরে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। রোদ্দুর আরিশা’র দিকে তাকিয়ে বলে…

– আমার অনুভূতি গুলো বুঝতে পেরেছো তুমি! আমার অনুভূতি তে শুধু তুমি ছিলে, ছিল আমার ভালোবাসা। আমি ভালোবাসি তোমায়। প্রথম দেখায় আমি প্রেমে পড়েছিলাম তোমার ওই মায়াবী চোখ দেখে। কিছু ছিল এই চোখের মাঝে যা বারবার আমায় পাগল করে তুলতো। আমি ভালোবাসি তোমায় আরিশা! তুমি কি ভালোবাসা আমায়। আমার জন্য কি তোমার মনে সেই এক অনুভূতি যা আমাকে তোমার ভাবনায় নিয়ে আসে। তুমি কি হবে আমার আরু!

আরিশা কিঞ্চিত হেসে রোদ্দুর’র দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। আরিশা’র মুখে হাসি দেখে রোদ্দুর’র ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। সে আরিশার কপাল বরাবর একটু চুমু খায়। অতঃপর তাকে ছেড়ে একটু দুরে তাকায়। আরিশা এবার রোদ্দুর’ দিকে তাকায়।‌ একটা কালো রঙের ব্লাক স্যুট পরা সে। দেখতে খুব সুদর্শন লাগছে। তার মুখের হাসি তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলছে। হুট করেই রোদ্দুর আরিশা’র সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। অতঃপর আরিশা’র হাত ধরে বলে..

– ভালোবেসে আমি একবার ঠকেছি আরু! সেই কথা তোমার অজানা নয়। তোমাকে সব কিছুই বলেছি আমি। আবার সেই এক ভুল করতে চাই না।
বলেই রোদ্দুর পকেট থেকে একটা রিং বের করে আরিশা’কে বলে..

– উইল ইউ ম্যারি মি আরু!

আরিশা কথাটা শুনে প্রথমে থমতম খেয়ে যায়। রোদ্দুর আরিশা কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। আরিশা কি না বলে দেবে তাকে। কিছুক্ষণ থমথমে পরিবেশ থাকে। রোদ্দুর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিশা’র দিকে। খানিকক্ষণ পর আরিশা’র ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা যায়। রোদ্দুর যেন প্রান ফিরে আসে। আরিশা’র মাথা নাড়ানো হ্যাঁ সম্মতি পেয়ে রোদ্দুর তার অনামিকা হাতে রিং পড়িয়ে দেয়। অতঃপর সেই হাতে কিস করে উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আরিশা তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে। রোদ্দুর ও তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। অতঃপর আরিশা বলে..

– আমি সারাজীবন থাকতে চাই তোমার সাথে। থাকবে তো সারাজীবন আমার সাথে!

– শেষ নিঃশ্বাস অবদি!

আরিশা হেসে রোদ্দুর’র বুকে মুখ লুকায়!
.
রোদ্দুর আর আরিশা’র প্রেম কথা সবার জানা হয়ে যায় বিশেষ করে রোদ্দুর’র দেওয়া আরু নামটা। মেহেরিন এখন থেকেই তাকে আরু ভাবী বলে ডাকতে থাকে। সবাই বেশ মজা নেয় এই নাম টা নিয়ে!

পরদিন..
নির্ঝর অনেক জোর করে মেহেরিন কে নিয়ে আসে বিচে। আজ তাদের শেষ দিন কাল’ই চলে যাবে। মেহেরিন কোনো মতে বিচে আসতে চায় নি তবে নির্ঝর ও হার মানার পাত্র না। মেহেরিন শক্ত করে নির্ঝরের হাত ধরে রেখেছে। নির্ঝর তাকে বলে..

– জুতো খুলো খালি পায়ে ভেজা মাটিতে হাটবো।

– ন..না আমি খুলবো না।

– মেহেরিন বর্ষা খান কে কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। সে কি ভয় পাচ্ছে!

– মেহেরিন কোনো কিছু তে ভয় পায় না।

– তাহলে চিন্তা কিসের আর আমিও তো আছি। জুতো খুলো।

মেহেরিন তার পায়ের জুতো ভেজা মাটিতে পা রাখল। এই অনুভূতি টা চমৎকার লাগলো তার কাছে। সে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে বলল..

– বললাম না ভালো লাগবে তোমার। চলো হাঁটা যাক।

অতঃপর নির্ঝর ও জুতো খুলে ফেলল। দুজনেই হাঁটতে লাগলো সমুদ্রের কাছে। দূর থেকে নিহা, অভ্র, নীল আর আহিয়ান এসব দেখছিল। নিহা হেসে বলল..

– দেখলে দা মেহেরিন বিচে হাটতাছে!

নীল বলে উঠে..
– এটা সত্যি অবিশ্বাস্য! নাহ হলে তো ও কখনো বিচের কাছে যায় না।

আহিয়ান বলে উঠে..
– কিন্তু কেন?

অভ্র বলে..
– আছে কিছু স্মৃতি তবে আজ থাক সেসব কথা তবে মেহেরিন কে খুশি দেখে খুব ভালো লাগছে।

নিহা বলে উঠে..
– নির্ঝর’ই একমাত্র যে তোমার পর সামলাতে পারবে আদুরী কে।

অভ্র নিহা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে..
– তোর পছন্দে আমার কোনো সন্দেহ নেই তবে মেহেরিন’কে নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।

নিহা বলে উঠে…
– চিন্তা করো না দা! আদুরী আমার বোন একদিন ও বুঝতে পারবে নির্ঝর ওর জন্য ঠিক।

অভ্র এই জবাবে মুচকি হাসে। দূর থেকে নিরব এইসব কথা শুনে। এসব শোনার পর অনেকটা রেগে যায় সে। মেহেরিন’র পাশে অন্য কাউকে কখনো সহ্য করতে না সে। নির্ঝরের মেহেরিন’র এতোটা কাছে আসা মেনে নিতে পারছে না সে। কিন্তু তবুও নিরব সেখানে চুপ থাকে।
.
পরদিন সবাই ঢাকায় ফিরে আসে, ফিরে আসার পর পর’ই নিরব’র জমে থাকা রাগ বের হয়। পুরো ঘর তছনছ করে দেয় সে। ডেসিন টেবিলের আয়নায় ঘুষি মেরে ভেঙ্গে ফেলে সে। তার হাত গড়িয়ে রক্ত পড়তে থাকে। নিরব রক্তের দিকে তাকিয়ে বলে..

– এর ফল তোমাকে পেতে হবে নির্ঝর। মেহেরিন শুধু আমার! আর কাউকে হতে দেবো না তাকে,তোমাকে না! দরকার পড়লে তোমার চাপ্টার ক্লোজ করবো আমি। খুব শীঘ্রই!

কয়েকদিন পর..

নিরব রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নির্ঝরের গাড়ির পিছু করতে থাকে। আজ কিছু না কিছু করবেই সে। অনেকক্ষন পর গাড়ি টা এক জায়গায় থামে। নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে একটা দোকানে যায়। অতঃপর সেখান থেকে কিছু চকলেট নিয়ে গাড়ির কাছে আসতে যায় তখন নিরব তার গাড়ি নিয়ে নির্ঝরকে ধাক্কা মারে। নির্ঝর ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে। নিরব গাড়ি থামিয়ে দূর থেকে তাকে দেখতে থাকে। তখন হঠাৎ করেই তার চোখে গাড়ির বাইরের গ্লাস দিয়ে মেহেরিন কে দেখা যাচ্ছে। নিরব এটা দেখেই চমকে উঠে!

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৩

নিরব ভাবতেই পারে নি মেহেরিন এখানে থাকবে। এদিকে মেহেরিন নিরবের গাড়ি দেখতে পায়। নির্ঝর দূরে পড়ে আছে। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে না থেকে নির্ঝরের কাছে যায়। সেখানে মানুষ এসে দাঁড়িয়ে সব দেখছে অথচ কেউ ধরছে না নির্ঝর কে। এরকম কান্ড দেখে মেহেরিন’র মাথা গেল গরম হয়ে। সে একটা ঝাড়ি দিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলল।

এদিকে নিরব গাড়ি থেকে বের হয়ে মেহেরিন’র কাছে আসল। মেহেরিন একবার নিরবের দিকে তাকাল অতঃপর তার থেকে চোখ সরিয়ে নির্ঝরের কাছে বসে তাকে ডাকতে লাগল। নিরব মেহেরিন’র ডেকে কিছু বলতে গেলে মেহেরিন ইশারায় তাকে থামতে বলে। এদিকে ডেভিল কল করে মেহেরিন কে। মেহেরিন ব্লুটুথ অন করে বলে..

– কোথায় আছো ডেভিল!

– ভার্সিটির কাছেই আছি আমি ম্যাম। গাড়ি নিয়ে আসছি।

– শোন প্রথমে আমার লোকেশন চেক করো আর সেখানে ফার্স্ট একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠাও।

– ম্যাম আর ইউ ওকে।

– ইয়াপ আইম ফাইন তোমাকে যা বললাম করো।

– আমি এক্ষুনি আসছি ম্যাম!
.
মেহেরিন কল কেটে নির্ঝর’র গালে হাত রাখে। শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে রক্ত বের হচ্ছে। মেহেরিন এতোটা শান্ত এই কারনে যে সে জানে এতে নির্ঝরের এতে বেশি কিছু হবে না। শুধু কয়েকদিন বেড রেস্ট এ থাকতে হবে। নির্ঝর ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তার দিকে তাকিয়ে বলে..

– বেশি কিছু হয় নি ঠিক হয়ে যাবেন। শুধু জ্ঞান হারাবেন না।

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে বলে…
– মেহু পাখি..বলা মাত্র’ই নির্ঝর অজ্ঞান হয়ে যায়। মেহেরিন নির্ঝরের গাল ধরে বলে..

– নির্ঝর! নির্ঝর!

নিরব বলে উঠে..
– মেহেরিন আমি বলছিলাম কি আমরা ওকে হসপিটালে যাই। অ্যাম্বুলেন্সআসতে সময় লাগবে।

মেহেরিন নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে..
– যা করেছিস যথেষ্ট আর কিছু করা লাগবে না।

নিরব কিছু বলতে যাবে মেহেরিন রেগে তার দিকে তাকায় সে চুপ হয়ে যায়। মেহেরিন নির্ঝর কে ডেকে ডেকে তার জ্ঞান রাখার চেষ্টা করছে। খানিকক্ষণ’র মধ্যেই ডেভিল চলে আসে। তার সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স আসে। সবাই ধরে নির্ঝর কে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যায়। কিন্তু নির্ঝর মেহেরিন’র হাত’ই ছাড়ে না। অতঃপর মেহেরিন নির্ঝরের সাথে করে অ্যাম্বুলেন্স এ করে হসপিটালে আসে। ডেভিল অভ্র কে কল করে হসপিটালে আসতে বলে দেয়। নিরব ও যায় হসপিটালে!
.
অভ্র, নিহা আর আহিয়ান দ্রুত এসে হসপিটালে পৌঁছায়। এসে দেখে মেহেরিন অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়ানো। নিহা মেহেরিন কে গিয়ে জরিয়ে ধরে বলে..

– ঠিক আছো তুমি এই রক্ত কিসের?

– আমার না নির্ঝরের! উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে অপারেশন থিয়েটারের আছে।

অভ্র বলে উঠে..
– বেশি চোট পেয়েছে নির্ঝর!

– নাহ আমার মতে ডাক্তার বেড রেস্ট এ থাকতে বলবে এর বেশি কিছু না।

আহিয়ান বলে উঠে..
– এতো নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলছো!

মেহেরিন মুচকি হেসে বলে..
– আমার ও এমন এক্সিডেন্ট হয়েছিল বেশ কয়েকবার তাই। দেখবেন ডাক্তার আংকেল এসে বলবে ৩ মাস রেস্ট এ থাকতে হবে উনাকে।

আহিয়ান হেসে বলে..
– ভালোই এক্সপিরিয়েন্স আছে দেখছি!

নিহা বলে উঠে..
– মজা করা বন্ধ করুন তো ছেলেটার কি অবস্থা কে জানে!

– আরে মেহেরিন যখন বলেছে টেনশন নিয়ো না সব ঠিক হবে।

এর মধ্যে রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য এসে পড়ে। সবাই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়ানো। হঠাৎ ইহান বলে উঠে..
– এক্সিডেন্ট টা কি করে হলো?

মেহেরিন বলে উঠে…
– এখন আবার এক্সিডেন্ট করে দেখাবো তোকে!

– জান!

– 😒

– বলছি কি গাড়িটা কি ইচ্ছে ধাক্কা মেরেছিল কি না!

ইহানের কথা শুনে সবাই খানিকটা অবাক হয়। মেহেরিন তাকিয়ে দূরে নিরব দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন ইহান কে বলে..
– জানি না খোঁজ করতে হবে!

– ওহ আচ্ছা!

– আচ্ছা আমি আসছি!
বলেই মেহেরিন চলে যায় ওখান থেকে। নিরব মেহেরিন’র পিছু পিছু যায়। নিরব মেহেরিন কে ডেকে বলে..

– মেহেরিন!

মেহেরিন পিছনে ঘুরে, সামনে তাকিয়ে দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন রেগে খুব জোরে এক চড় মারে নিরবের গালে। নিরব গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেহেরিন বলে উঠে..

– আমার কোনো ইচ্ছে নেই এটা জানার, যে কেন তুই মারতে চেয়েছিল উনাকে। শুধু একটা কথা শুনে রাখ আমার দি’র জান বাঁচিয়েছে উনি। আমার আম্মু জান’র আম্মু কে বাঁচিয়েছে। তোর জন্য উনার কিছু হলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবো না।

– মেহেরিন!

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– আমার ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ। এরপর আমার সামনে আসার চেষ্টা করবি না।
বলেই মেহেরিন চলে যায় সেখান থেকে। নিরব পিছন থেকে মেহেরিন কে বার বার ডাকে কিন্তু মেহেরিন কোনো জবাব দেয় না।
.
কয়েকঘণ্টা পর নির্ঝরের জ্ঞান ফিরে। নির্ঝর তাকিয়ে দেখে তার সামনে সবাই দাঁড়ানো। নির্ঝর সবাইকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে..

– হে গাইস!

নিহা বলে উঠে..
– এখন কেমন লাগছে!

– বিন্দাস তবে হাতে একটু ব্যাথা ব্যাথা লাগছে!

– ডাক্তার বলেছে ৩ মাস বেড রেস্ট এ থাকতে!

– ৩ মাস!

আহিয়ান বলে উঠে..
– আমার শালিকা যা বললো তাই সত্যি হলো দেখলে!

নির্ঝর হেসে বলে..
– আপনার শালিকা কোথায় জিজু!

কাব্য বলে উঠে..
– হুম হুম জ্ঞান না ফিরতেই তার খোঁজ!

ইহান বলে উঠে..
– আছে আছে এখানেই আছে আসবে একটু পর!

হঠাৎ পেছন থেকে মেহেরিন বলে উঠে..
– কে আসবে?

রোদ্দুর হেসে বলে..
– লেজ কাটা ব্যাঙ’র মেহু পাখি!

মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। রোদ্দুর মুখ বন্ধ করে ফেলে। অভ্র মেহেরিন’র সাথেই আসে। নির্ঝর অভ্র কে দেখে বলে..

– আরে দা যে!

– কেমন লাগছে!

– ভালো না এরকম বেড এ শুয়ে থাকার অভ্যাস নেই!

মেহেরিন বলে উঠে..
– অসুবিধা নেই ৩ মাস থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যাবে!

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেহেরিন’র গায়ে থাকা হলুদ রঙের হুডি টায় এখনো তার রক্ত লেগে আছে। নির্ঝর বলে উঠে..
– জানো দি আমি যখন পড়েছিলাম তখন তোমার বোন আমায় কি বলে!

– কিহ?

– বলে কি আপনার বেশি কিছু হবে না শুধু জ্ঞান হারাবেন না। অথচ দেখো আমার হাত পা দুটোই ব্যান্ডেজ করা।

মেহেরিন বলে উঠে..
– ভুল কি বলেছি!

– দেখলে দি আমার মতো একটা রোগীর সাথে কিভাবে কথা বলছে!

নিহা বলে উঠে…
– এর বেশি আশা করো না, কিছুই হবে না!

এরমধ্যে এসে হাজির হয় নিশি! নিশি কে দেখে নির্ঝর বলে উঠে..
– এতোক্ষণে এসেছে এই ম্যাম!

– 😒। কি হয়েছে তোর, ডাক্তার বলেছে ৩ মাস বেড রেস্ট এ থাকলে ঠিক হয়ে যাবি!

নির্ঝর বলে..
– তা এই ৩ মাস আমার দেখা শোনা কে করবে শুনি!

নিহা বলে উঠে..
– এতো জনকে দেখতে পারছিস না তুই। এই ৩ মাস আমাদের বাড়িতে থাকবি তুই বুঝলি। আমি ডাক্তার কে বলে এই ব্যবস্থা করছি।

নির্ঝর ঘুড়ে তাকায় মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন কিছু না বলে চলে যায়!

দুদিন পর নির্ঝর কে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। মেহেরিন, কাব্য আর ইহান আসে তাকে নিয়ে যেতে। নির্ঝর এখন হাটতে পারে না পায়ে ব্যান্ডেজ বলে তাই তাকে হুইল চেয়ারে বসে নিয়ে যাওয়া হয়। হসপিটাল থেকে বের হবার সময় নির্ঝরের সাথে দেখা হয় নিরবের। নিরব কে দেখে নির্ঝর তার কাছে আসে। নির্ঝর সবাইকে বলে..

– নিরবের সাথে একটু একা কথা বলতাম!

এই কথা শুনে কাব্য একটু দূরে এসে দাঁড়ায়। মেহেরিন আর ইহান এসে গাড়িতে বসে। নির্ঝর হেসে নিরব কে বলে..
– কেমন লাগছে আমাকে দেখে!

– ( নিরব মুখ ঘুরিয়ে নেয় )

নির্ঝর হেসে বলে..
– ভেবেছিলে আমাকে মেরে মেহেরিন’র জীবনে তুমি থাকবে কিন্তু দেখো কি হলো তুমিই চলে গেলে তার জীবন থেকে!

– ( নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকায় নির্ঝরের দিকে )

নির্ঝর বাঁকা হেসে বলে..
– একটা কথা বলি তোমায় আমি জানতাম তুমি এমন কিছু করবে আর তুমি সেটাই করলে। আর এখানে আমার প্ল্যান মোতাবেক তোমার আর মেহেরিন’র ফ্রেন্ডশিপ ভাঙল। তোমার আর এখন কোনো অস্তিত্ব নেই ওর জীবনে আর কখনো হবে না।

– তার মানে তুমি সব জানতে!

– অবশ্যই! তাইতো ইচ্ছে করেই সেদিন মেহেরিন কে নিজের গাড়ি তে উঠিয়েছি। ওকে দেখাতে চেয়েছিলাম তুমি কেমন!

– তোমাকে আমি দেখে নিবো!

– হুম অবশ্যই তো আমার সাথে মেহেরিন কেও দেখো ঠিক আছে!
বলেই বাঁকা হাসি দেয় নির্ঝর। অতঃপর কাব্য এসে তাকে নিয়ে যায়। নিরব রেগে গাড়িতে জোরে লাথি মারে। শেষে কি না নির্ঝরের কাছে এভাবে হেরে গেলো সে!
.
নির্ঝর কে বাড়িতে আনার পর সবাই খুব ভালো ভাবে সেবা যত্ন শুরু করে তার। নির্ঝর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে।‌ সবাই তার দেখাশোনা করলেও মেহেরিন মোটেও
নির্ঝরের ধারে কাছে আসে না।
সেদিন নিহা আর আনহা কাজের বাহানা করে মেহেরিন হাত দিয়ে নির্ঝরের খাবার পাঠায়। মেহেরিন প্রথম আসতে না চাইলেও পরে ঠিক’ই আসে। এসে দেখে নির্ঝর বিছানায় শুয়ে আছে আর এক হাত দিয়ে ফোন টিপছে। মেহেরিন কে আসতে দেখে নির্ঝর বলে..

– অমাবস্যা চাঁদ দেখি আজ আমার ঘরে!

মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে সুপের বাটি টা বিছানার পাশে টেবিলে রেখে বলে..

– খেয়ে নিন!

নির্ঝর উঠে বলে..
– কিভাবে খাবো দেখছো না আমার হাত ব্যান্ডেজ করা।

– দি কাজ করছে আর মিষ্টি ভাবী নীল ভাবীকে নিয়ে আছে।

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন চমকে বলে উঠে..
– অসম্ভব! আমি নিজেই ঠিক মতো খেতে পারি না। দা খাইয়ে দে আমায়। আমি খাওয়াতে পারবো না আপনাকে।

– আমি অসুস্থ!

– আপনার বা হাত ব্যান্ডেজ করা খাবেন তো ডান হাত দিয়ে!

– এই হাত দিয়ে খাবার খেলে এই হাতেও জোর পড়বে তখন!

– সরি!

– মেহু পাখি! একজন রোগী কে এভাবে বলছো তুমি। এটা কিন্তু একদম ঠিক না। একটু ইমোশনাল হওয়া উচিত তোমার!

– সরি আমার ইমোশন নেই আর রইল আপনার উপর ইমোশন! আপনি কোনো বেচারা না যে ইমোশন দেখাবো।

– দয়া তো দেখাতে পারো অসুস্থ আমি কিভাবে খাবো!

– …

– প্লিজ খাইয়ে দাও না!

– ধুর ভালো লাগে না!

নির্ঝর উঠে মুচকি হাসে। মেহেরিন বিছানায় বসে সুপের বাটি টা নিজের কোলে রাখে। অতঃপর নির্ঝর খাইয়ে দিতে থাকে। নির্ঝর চোখ ভরে দেখতে থাকে মেহেরিন কে। মেহেরিন খাওয়াচ্ছে কম ফেলছে বেশি। বেশিরভাগ খাবার’ই ওর জামার ওপর পড়ছে।‌ নির্ঝর কে খাইয়ে দিতে গিয়ে ওর নাজেহাল অবস্থা। নিহা আর আনহা দূর থেকে এসব দেখে খুশিতে নাচতে থাকে। তাদের প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে। এদিকে কোনোমতে মেহেরিন নির্ঝর কে খাইয়ে দেয়। অতঃপর তার মুখে পানির গ্লাস টা ধরে। নির্ঝর মুচকি হেসে পানি খেয়ে নেয়। অতঃপর মেহেরিন উঠতে যাবে তখন নির্ঝর বলে..

– মেহু পাখি শোন।

– কি?

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে আলতো করে তার হাতে একটা কিস করে। মেহেরিন চমকে উঠে। তখন নির্ঝর বলে..
– আরে থ্যাংকু দিলাম তোমায়।

– আপনাকে আর জীবনেও খাওয়াতে আসবো না আমি!
বলেই মেহেরিন চলে যায়! নির্ঝর বসে হাসতে থাকে।
.
কয়েকমাস পর…
নির্ঝর এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো। হাঁটাচলা করতে পারে। তবে সে এখনো মেহেরিন’র বাসায়’ই থাকে। আর সারাদিন মেহেরিন কে জ্বালায়। সেদিন রাতে মেহেরিন রেগে ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে পড়ে। হঠাৎ তার পাশে কারো উপস্থিত পায় সে। মেহেরিন’র চিনতে কষ্ট হয় না এটা দা। সে অভ্র’র কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র বলে উঠে…

– মন খারাপ!

– হুম!

– কি হয়েছে?

মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– এই লেজ কাটা বাদর’টা বাসা থেকে যায় না কেন?

– লেজ কাটা ব্যাঙ না ছিল।

– এখন আমাকে যে পরিমাণ জ্বালায় বাদর টা দিতে হচ্ছে। শুধু দি’র কারনে সহ্য করছি।

অভ্র হেসে উঠে। মেহেরিন আবার বলে..
– তোমার হাসি পাচ্ছে দা। আচ্ছা দা এখন তো ও সুস্থ তো আমাদের বাসায় এখনো থাকছে কেন?

– আদুরী এসব বলে না।

– কিন্তু দা তুমি তো জানো আমাকে কতো জ্বালায় উনি।

– হুম কিন্তু এটাও ভেবে দেখো আমাদের ছাড়া এই দেশে কেউ নেই তার। আর নির্ঝর আজ আমাকে বলেছে কাল সে চলে যাবে।

– ভাগ্যিস যাচ্ছে আজ রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।

– নির্ঝর কে পছন্দ হয় না তোমার।

– হুহ হুহ একটু ও না।

– কেন দেখতে খারাপ!

– হ্যাঁ খারাপ! তবে এতোটাও না।

– আচ্ছা হয়তো ওকে বাইরে থেকে তোমার ভালো লাগে না তবে ও ভিতর থেকে অনেক ভালো।

মেহেরিন অভ্র’র এর কথার মানে বুঝতে পারে না। কথামতো পরদিন নির্ঝর চলে যায়। এই খুশিতে মেহেরিন টানা দুঘন্টা করে গান বাজিয়ে নাচতে থাকে। কিন্তু তার এই খুশি বেশিক্ষণ থাকে না। কারন নির্ঝর প্রতিদিন তার বাসায় আসতে থাকে। আর এসেও খালি মেহেরিন’র পিছনে ঘুর ঘুর করতে থাকে।
.
মেহেরিন আজ বসার ঘরে এসে দেখে আনহা কি একটা ফেস প্যাক নিয়ে নিহা আর নিশি’র মুখে লাগিয়ে দিচ্ছে। মেহেরিন লাফাতে লাফাতে সেখানে গিয়ে বলে..

– আমিও দেবো।

আনহা হেসে বলে..
– তুমি বসো আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।

মেহেরিন খুশিতে বসে পড়ে। অভ্র এসে মেহেরিন কে উঠিয়ে দিয়ে বলে..
– তোমরা দিচ্ছ দাও আমি ওর মুখে যেন এইসব না দেখি।

মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে। আনহা বলে উঠে..
– একটু দিলে কি হবে।

– আমি মানা করেছি।

নিহা বলে উঠে..
– দা একটু দিবে ও। আমরাও তো দিচ্ছি।

– আমি যখন না বলেছি মানে না। আর একটা কথা কেউ বললে এরপর থেকে এই বাড়িতে কেউ এসব দিতে পারবে না।‌

মেহেরিন বলে উঠে..
– ধুর কিছু ভালো লাগে না। কেউ ভালোবাসে না আমায়। থাকবো না আমি আর এই বাড়িতে!

– দরজা খোলা আছে!

অভ্র’র কথা শুনে মেহেরিন রেগে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিহা বলে উঠে..
– আরে দা ও সত্যি চলে যাবে তো।

নিশি বলে..
– দা এমন করো না তুমি তো জানো ও কতো জেদি।

অভ্র বলে…
– ও কোথায় যাবে না আবার ঘরে ফিরবে দেখে নিস!

– কি? কিন্তু কেন?

– কারন বাইরে ওর সবচেয়ে বড় শত্রু আছে!

অভ্র’র কথার অর্থ কেউই বুঝতে পারে না। তবে সত্যি সত্যি মেহেরিন আবার ফিরে আসে। সে বিড় বিড় করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে। অভ্র হেসে দরজার দিকে তাকায়। সবাই তাকিয়ে দেখে নির্ঝর আসছে। এটা দেখেই সবাই হেসে উঠে।

এদিকে মেহেরিন ঘরে এসে ধপাস করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় তার কালো চশমা পড়া পান্ডা পুতুলের কোলে বসে পড়ে। অতঃপর বলতে শুরু করে…
– ধুর কি একটা জিনিস, যখন তখন আমার বাসায় এসে বসে থাকে। এই লোকটাই আমার একমাত্র শত্রু যাকে আমি কিছুই করতে পারি না। কোনো কাজ কাম নাই সারাদিন আমার বাসায় এসে বসে থাকে। কাউকে কিছু বলাও যায় না। সবাইকে যেন বস করে রেখেছে। দা কে সেদিন বললাম দেখতে ভালো না তো দা বলে ওর ভেতরটা নাকি অনেক ভালো। আরে ভিতরের কলিজা, হৃদপিন্ড আর হাড্ডি ভালো হলে আমি কি করমু। আমি কি রাক্ষস নাকি যে এগুলো খামু! আজব!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here