Game 2 পর্ব -১৪+১৫

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_14+15

কেটে গেলো আরো কয়েকমাস। হঠাৎ করেই নীলাশা’র অবস্থা খারাপ যে হয়। সবাই বুঝে যায় সময় হয়ে গেছে। নীলাশা কে নিয়ে সবাই হাসপাতালে চলে যায়। নীলাশাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নীল ও তার সাথে যায়। এজন্য তাকে পারমিশন নিতে হয়। বাইরে সবাই টেনশন করছে। অবশেষে এতো দিনের প্রতিক্ষার পর নীল তার সন্তানকে নিয়ে বাইরে আসে। নীল কে দেখে সবার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। মেহেরিন দৌড়ে নীলের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর বাচ্চা টাকে নিজের কোলে নিল। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। খুব মিষ্টি একটা বাচ্চা। নীল হেসে বলে..

– আমার ছেলে!

মেহেরিন হেসে বলে..
– ফুফুজান আমার!

অতঃপর বাচ্চাটার কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দেয় মেহেরিন। একে একে সবাই কোলে নেয় বাচ্চা টাকে। নির্ঝর বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে বলে..

– দেখতে একদম ভাইয়ার মতো হয়েছে।

নীল হেসে বলে..
– আমার ছেলে বলে কথা।

নিহা বলে উঠে..
– নীল !

নীল বলে উঠে..
– ঠিক আছে, তবে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।

এদিকে আনহা খান বাড়িতেই ছিল বাচ্চাদের সাথে। খুব চিন্তা হচ্ছিল তার। অবশেষে হসপিটাল থেকে খবর পেয়ে অনেক শান্ত এখন সে। বাচ্চা কে নিয়ে নীলাশা’র কাছে রাখা হয়। অতঃপর সবাই খান বাড়িতে ফিরে আসে। শুধু নীল আর নিশি থাকে হসপিটালে।

সবাই বসে বাচ্চা’র বর্ণনা দিচ্ছে আনহা কে। আনহা তাকে দেখার জন্য ছটফট করছে। আহিয়ান বলে উঠে..
– একটা নাম বলো সবাই বাচ্চাটার!

কাব্য হেসে মেহেরিন কে বলে…
– কিরে মেহেরিন তোর ফুফুজান’র নাম কি দিবি।

মেহেরিন ভাবতে থাকে। তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– রাইয়ান!

সবাই অবাক হয়ে বলে..
– রাইয়ান!

– হ্যাঁ আমার মনে হলো তাই বললাম! তোমাদের কেমন লাগলো।

অভ্র বলে উঠে..
– হুম নামটা অনেক সুন্দর রাইয়ান। মেহেরিন তোমার কেমন লাগলো।

– হুম ভালোই রাখাই যায়।

রোদ্দুর বলে উঠে..
– রোদ্দুর রাইয়ান নামটা বেশ জমবে।

– শুরু হয়ে গেল।

আনহা বলে উঠে..
– কবে আসবে আমি দেখতে চাই রাইয়ান কে।

অভ্র বলে..
– দুদিন পর চলে আসবে।

মেহেরিন বলে উঠে..
– অনেক কিউটি কিউটি ছিল মিষ্টি ভাবী জানো!

– এভাবে বলো না গো ননদিনী! আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

নিশি বলে উঠে..
– আরে আমার মিষ্টি ভাবী ধৈর্য্য ধরো বুঝলে।

হঠাৎ করেই শান্ত আর অরনি এসে কাব্য’র কাছে এসে বলে…
– বাবু কে কখন আনবে আমি তাকে কোলে নেবো।

কাব্য অরনি কে কোলে নিয়ে শান্ত’র মাথায় হাত রেখে বলে..
– আরে আমার আম্মু জান আর চাচ্চুজান একটু অপেক্ষা করেন দুদিন পর’ই ‌আপনাদের ভাই চলে আসবে।

দুজনেই একথা শুনে নাচতে থাকে। এদিকে শুভ্র কে জানানো হয় তার আরেক নাতির কথা। দূর থেকে এই কথা শুনে বেশ খুশি হয় সে।
.
দু’দিন পর..
নীলাশা কে নিয়ে আসা হয় খান বাড়িতে। খান বাড়িতে নতুন বাচ্চা কে নিয়ে যেন উৎসব লেগে যায়। সবাই বেশ খুশি হয়। নীল আর নীলাশা’র কাছে নামটা অনেক ভালো লাগে রাইয়ান! অতঃপর সবাই এই নামেই ডাকতে থাকে তাকে।

কয়েকদিন পর..
আজ অফ ডে বিধায় সবাই বাসায়। বসার ঘরে বসে সবাই গল্প করছে। মেহেরিন রাইয়ান কে কোলে নিয়ে খেলছে। তার পাশে শান্ত আর অরনি বসে রাইয়ান কে আদর করছে। হঠাৎ করেই ইহান বলে..

– নির্ঝর লাইভে!

একথা শুনে নিশি বলে উঠে..
– দেখি!

সত্যি সত্যি নির্ঝর লাইভে এসেছে। আজ অনেক মাস পর তাকে লাইভে দেখে তার ফ্যান রা অনেক খুশি। সবার এক প্রশ্ন নির্ঝর কোথায় ছিল এতোদিন। নির্ঝর সবাইকে তার এক্সিডেন্ট এর কথা বলে। অতঃপর সবাই তাকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। নির্ঝর একটা গিটার নিয়ে বাজাতে শুরু করে। মেহেরিন’র নির্ঝরের লাইভের ওপর কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না তবে গানের সুর শুনে সে এবার তার দিকে তাকায়। নির্ঝর গান গাইতে শুরু করে…

কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব…..

গান শেষ হবার পর নির্ঝর আরো কিছুক্ষণ লাইভে থাকে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।‌ হঠাৎ একটা কথা তার মাথায় আসে। মেহেরিন তখন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে…

– আমার হাতে কিস করা নাহ এবার দেখেন আমি কি করি!
.
সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। নির্ঝর ও এখানেই ছিল। সবাই ভাবল ট্রুথ আর ডেয়ার খেলা যাক।‌ মেহেরিন প্রথম প্রথম খেলতে চাইলো না। তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– আপনাদের জান ভয় পেয়েছে!

মেহেরিন হেসে বলে..
– ভয় না তবে আমার সাথে খেললে খুব চাপ নিতে হবে পারবেন তো নিতে!

নির্ঝর হেসে বলে..
– সো ডান!

সবাই গোল হয়ে বসার পর একটা বালিশ দেওয়া হয়। গান বাজতে থাকবে আর সবাই বালিশ টাকে পাস করবে। গান থেমে যাবার পর যার কাছে বালিশ থামবে সে ট্রুথ বা ডেয়ার নিবে আর বাকি সবাই বলবে কি করতে হবে। এখানে সবার মাঝে আরিশা ও ছিল। অতঃপর খেলা শুরু হয়। প্রথমবার বালিশটা আরিশা’র কাছেই থামে। আরিশা মজা করে ডেয়ার নেয়। অতঃপর মেহেরিন বলে উঠে..

– একটা রোমান্টিক ডান্স পারফরমেন্স হয়ে যাক।

অতঃপর রোদ্দুর আর আরিশা একটা খুব সুন্দর রোমান্টিক ডান্স করে। খেলা আবারো শুরু হয়। একে একে সবাই গেম থেকে বের হয়ে যায়। বাকি থাকে শুধু মেহেরিন আর নির্ঝর! গান বাজতে থাকে নির্ঝর একবার বালিশ দিচ্ছে মেহেরিন কে মেহেরিন দিচ্ছে নির্ঝরকে। হঠাৎ মেহেরিন বালিশ দেবার আগে নির্ঝর কে চোখ টিপ দেয়। অতঃপর বালিশ তার দিকে দেয়। নির্ঝর হা হয়ে তাকিয়ে থাকে মেহেরিন’র দিকে। আর বালিশ মেহেরিন’কে দেবার আগেই গান বন্ধ হয়ে যায়। সবাই হেসে উঠে আর নির্ঝর হেরে যায়। নির্ঝরের হুশ ফিরার পর সে মেহেরিন’র দিকে তাকায়। দেখে মেহেরিন দাঁত বের করে হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নির্ঝর বুঝতে পারে মেহেরিন তাকে ফাঁসিয়েছে। মেহেরিন বলে উঠে..

– তো মিঃ লেজ কাটা ব্যাঙ কি নিবেন বলেন ট্রুথ না ডেয়ার!

কাব্য বলে উঠে..
– নির্ঝর ভাই ভুলেও ডেয়ার নিস না জান তোকে নাচিয়ে ছাড়বে।

ইহান বলে উঠে..
– ভালো ছেলের মতো ট্রুথ নিয়ে নে ভাই।

রোদ্দুর বলে উঠে..
– ভালো কথা বলছি ট্রুথ নে!

মেহেরিন হেসে বলে..
– হ্যাঁ হ্যাঁ ট্রুথ নিন সেটাই বরং আপনার জন্য ভালো!

নির্ঝর বলে উঠে..
– নির্ঝর চৌধুরী মেঘ কখনো ভয় পায় না ওকে। আমি ডেয়ার’ই নিবো!

সবাই একসাথে বলে উঠে..
– নির্ঝর তুই এবার গেলি!

মেহেরিন বলে..
– সিউর তো!

নির্ঝর বলে উঠে..
– যখন একবার বলেছি ডেয়ার সো ডেয়ার।

মেহেরিন উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর চলে যায়। নির্ঝর দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে মেহেরিন কোথায় গেলো। নিশি এসে নির্ঝর’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..

– মারলি তো নিজের পায়ে কুড়াল।

– এভাবে ভয় দেখাচ্ছ কেন। সাহস দাও সাহস!

– সেটা আরেকটু পর’ই বুঝবে বাবাজি।

সবার কথা শুনে নির্ঝর একটা বড় ঢোক গিলল। অতঃপর মেহেরিন আসল। তবে তার হাতে কিছু ছিল যেটা সে তার হাত দিয়ে পিছনে রেখেছে। নির্ঝর উঁকি ঝুঁকি মেরে বলে উঠে..
– কি এনেছো মেহু পাখি!

মেহেরিন এক গাল হেসে নির্ঝরের সামনে একটা লাল শাড়ি রেখে বলে..

– শাড়ি পরে লাইভে আসুন!

মেহেরিন’র কথা শুনে নির্ঝর চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এদিকে সবাই চমকে উঠলো। হা করে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। নির্ঝর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল..

– শ শ শাড়ি! শাড়ি পরে লাইভে আসবো!

মেহেরিন হেসে মাথা নাড়াল। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে বলে..

– মেহু পাখি বলছিলাম কি?

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের হাতে শাড়ি টা রেখে তার গাল টেনে বলে..
– বিশ্বাস করুন খুব সুন্দর লাগবে আপনাকে। আপনার ফ্যান রা পাগল হয়ে যাবে আপনাকে দেখে! পুরোই হট লাগবে আপনাকে!
বলেই একটা চোখ টিপ দিলো তাকে।

নির্ঝর অসহায় মুখে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে!

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৫

নির্ঝর কে এরকম অসহায় ভাবে দেখে সবাই হেসে একাকার। নির্ঝর শাড়ি নিয়েই ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়ে। শেষে কি না শাড়ি পরে লাইভে আসতে হবে তাকে। সোশাল মিডিয়ায় তাহলে তার মান সম্মানের বারো টা বেজে যাবে। এখন কি করবে সে? হঠাৎ নিহা আর আহিয়ান আসে তখন। নির্ঝর কে এভাবে বসে থাকতে দেখে নিহা তার পাশে বসে পড়ে। চোখ পড়ে নির্ঝরের হাতে থাকা শাড়িটা’র দিকে। নিহা শাড়ি টা নিয়ে বলে..

– এই শাড়িটা কি সুন্দর কে কিনলো তুই!

আহিয়ান বলে উঠে..
– কার জন্য কিনলি এই শাড়ি!

নির্ঝর অসহায় মুখ করে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য জোরে হেসে উঠে। আহিয়ান আর নিহা খানিকটা অবাক হয়। নিশি বলে উঠে…

– শাড়ি টা নির্ঝরের জন্য, আদুরী বলেছে এই পরে তাকে লাইভে আসতে!

আহিয়ান আর নিহা একসাথে বলে উঠে…
– কিহহহহহহহ?

নির্ঝর মাথা নাড়ায়। নিহা বলে উঠে..
– তুই রাজি হয়ে গেলি!

– এটা ডেয়ার দিয়েছে

আরিশা বলে উঠে..
– বেশ হয়েছে! দি জানো সবাই বলেছিলো ডেয়ার নিতে না বেশি ভাব দেখিয়ে ডেয়ার নিয়েছে এবার বুঝোক!

– তাহলে তো বেশ হয়েছে এতো দিনেও আমার বোন টাকে চিনলি না তুই!

নির্ঝর অসহায় মুখ করে আহিয়ান’র দিকে তাকায়। বলে..

– জিজু হেল্প মি!

– যার বোন তার ভাই হেল্প করতে পারবে তোমাকে।

ইহান বলে উঠে..
– আদুরী কি বলেছিলো সেটা শুনবে না।

– কিহ?

ইহান হাসতে হাসতে বলে..
– বলেছে এই শাড়ি পরলে আপনাকে পুরোই হট লাগবে!

নিহা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। সবাই হাসতে থাকে। নির্ঝর শাড়িটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে। কাব্য বলে উঠে..

– কি ভাবছিস?

নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে..
– কিভাবে কাল লাইভে আসবো!

সবাই একসাথে বলে..
– অল দা বেস্ট ব্রো!

নির্ঝর আহিয়ানের দিকে তাকায়। আহিয়ান বলে উঠে..
– নির্ঝর পরে নে, শাড়িতে নারী। এবার না হয় পুরুষ ও হবে।‌ বুঝলি তো!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে আহিয়ানের দিকে তাকায়। আহিয়ান মৃদু হাসি দিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকায়!
.
পরদিন..
মেহেরিন আজ সকাল থেকেই বেশ খুশি।নির্ঝর কে সেই ভাবে জব্দ করেছে সে। আজকে টের পাবে মেহেরিন বর্ষা খান কি জিনিস। মেহেরিন’র খুশি দেখে এর কারন জানতে কারো বাকি নেই। সবাই বেচারা নির্ঝরের জন্য হায় হায় করছে। অবশেষে সেই সময় চলে এলো। নির্ঝর লাইভে আসবে ৫ মিনিট পর। সেলিব্রেশন তো করতেই হবে তাই মেহেরিন চকলেট নিয়ে বসে পরল সবার সাথে। নীল টিভিতে কানেক্ট করে দিয়েছে মেহেরিন’র কথায়। এখানেই লাইভ দেখবে সবাই। অতঃপর লাইভ শুরু হয় আর মেহেরিন চকলেট’র প্যাকেট টা খুলে মুখে দেওয়ার জন্য তখন দেখতে পায় টিভিতে সব অন্ধকার। মেহেরিন চকলেট রেখে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর লাইট জ্বলে উঠে। নির্ঝর কে এখনো দেখা যায় না তবে তার দলের সবাই আছে এখানে। দেখে মনে হচ্ছে ডান্স করবে কারন পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড ডীম লাইট দিয়ে ডেকোরেট করা। গান শুরু হয় Aamir Khan এর অভিনীত গান Har Funn Maula বাজতে থাকে।
হঠাৎ এর মাঝেই নির্ঝর’র এনট্রি হয়। একটা লাল রঙের শার্ট আর কালো রঙের জিন্স পরা সে। শার্টের প্রথম কয়েকটা বোতাম খোলা তার মধ্যে একটা টাই ঝুলে আছে যেটা সে বাঁধে নি। তার দলের সবাই নীল রঙের শার্ট আর কালো রঙের জিন্স করা। তাদের ও টাই সেভাবেই ঝুলে আছে। এর মাঝ খানে নির্ঝর লাল রঙের শার্ট পড়ে নাচতে শুরু করে। তার সিল্কি চুল গুলো কপালে এসে বারি খাচ্ছে। এই গানের সাথে তার নাচ দেখে নিশি মেহেরিন কে বলে উঠে..

– সত্যি খুব হট লাগছে নির্ঝর কে!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আসলেই তেমন লাগছে নির্ঝর শাড়ি না পরায় মেহেরিন খুব রেগে গেল কিন্তু নির্ঝর সলো ডান্স করছিল। এর উপর মেহেরিন’র খুব ইন্টারেস্ট। সে নিজেও সলো ডান্সার তাই সে পুরো নাচটাই দেখল। মেহেরিন’র আর চকলেট খাওয়া হলো না। লাইভ শেষ হলো।

মেহেরিন রেগে বসে আছে। আজ নির্ঝরের মাথা ফাটাবে সে। এর মাঝে রোদ্দুর বলে উঠে..

– মেয়েদের কমেন্ট দেখে অবাক হচ্ছি। নির্ঝরের হটনেস দেখে তারা পাগল হয়ে গেছে।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আজব। উনি তো আমার ডেয়ার পূরন করলেন না। শাড়ি কেন পরলেন না উনি।

পেছন থেকে নির্ঝর বলে উঠে..
– আমি শাড়ি পড়েছি মেহু পাখি!

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– কোথায় শাড়ি পরেছেন!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে মেহেরিন’র সামনে এসে বলে..
– এই যে!

– মানে!

– আমার গায়ের শার্ট দেখছো না!

কাব্য বলে উঠে..
– তুই শাড়ি কেটে শার্ট বানিয়েছিস!

নির্ঝর বলে উঠে..
– হুম! মেহু পাখি তো তাই বললো!

মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি বলেছিলাম শাড়ি পরতে!

– এক্সক্টলি! তুমি বলেছো শাড়ি পরতে। এখন এটার নাম’ই তো শাড়ি। তো আমি তো শাড়ি’ই পরে আছি। পার্থক্য এইটাই মেয়েদের মতো শাড়ি না পরে ছেলেদের মতো শার্ট বানিয়ে পড়েছি।

মেহেরিন কিছু বলতে যাবে তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– নো নো মেহু পাখি! তুমি বলেছো শাড়ি পরতে এটা বলো নি মেয়েদের মতো পরতে। আর ডেয়ার অনুযায়ী আমি শাড়ি’ই পরে লাইভে এসেছি!

মেহেরিন কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
আনহা বলে উঠে..
– হ্যাঁ শর্ত অনুযায়ী ঠিক’ই তো আছে ননদিনী!

মেহেরিন নির্ঝর দিকে তাকিয়ে রেগে চলে যায়। সবাই হেসে উঠে! নিহা এসে নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– কি বুদ্ধি রে তোর!

আনহা বলে উঠে..
– নির্ঝর এটা তোমার পক্ষেই সম্ভব। মেহেরিন’র জ্বালে তাকেই ফাঁসিয়ে দিয়েছো।

নির্ঝর হেসে অভ্র আর আহিয়ান’র দিকে তাকায়। নিহা আর আনহা বলে উঠে..
– আপনি!

– আপনি!

সবাই একসাথে বলে উঠে..
– তোমরা! দা আর জিজু তোমার বলেছিলে এটা করতে!

অভ্র আর আহিয়ান হেসে উঠে। নিহা বলে উঠে..
– ভালোই প্ল্যান করলে!

নির্ঝর হেসে বলে..
– বুঝতে হবে কার দা আর কার জিজু!

আনহা বলে..
– আমার ননদিনী’র দা আর জিজু বলে কথা।

নির্ঝর হেসে বলে..
– ঠিক’ই বলেছো!

সবাই হেসে উঠে! এদিকে মেহেরিন মারাত্মক রেগে আছে। নির্ঝর এমন যুক্তি দেবে তার ধারনাই ছিল না। তবে এটা তার একার পক্ষে সম্ভব না। নিশ্চিত কেউ ওর সাধ দিচ্ছিল।‌ আরে কেউ বলছি কেন আমার ফ্যামিলির সবাই তো ওর জন্য’ই পাগল।

মেহেরিন রাগ কমানোর জন্য ছাদের দোলনায় এসে বসে পা দুলাতে লাগল। সেখানে নির্ঝর এসে হাজির হলো। মেহেরিন তাকে দেখে উঠে চলে যেতে নির্ঝর মেহেরিন’র‌ হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনল।‌ দুজনেই খুব কাছাকাছি ছিল। মেহেরিন হাত ছুটানোর চেষ্টা না করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর হেসে বলে..

– জানি খুব হট লাগছে আমায়! তাই এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি!

মেহেরিন হেসে বলে..
– আপনাকে হট লাগছে এটা সত্যি তবে এটার কোনো প্রভাব আমার উপর পড়বে না।

– আই নো! বাট তোমার শর্ত আমি পূরন করেছি।

মেহেরিন আলতো করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল..
– একবার বেঁচে গেছেন বার বার বাঁচবেন না।

– এভাবে বলো না মেহু পাখি, কবেই তো তোমার প্রেমে মরে আছি আমি!

– এটা তো শুধু টেইলার ছিলো পিকচার এখনো বাকি!
( নির্ঝরের গালে হাত রেখে বলল ) বেস্ট অফ লাক!

নির্ঝর নিজের গালে হাত রেখে বলল..
– হায় মে মারযাওয়া।

মেহেরিন বাঁকা হেসে চলে গেল।
.
এদিকে সেই লোক গুলো’র কথোপকথন…
– আদুরীর’র জন্য নতুন কিছু ভেবেছো।

– অনেক বড় কিছু! মনে আছে মিঃ রায়’র কথা যার এক ছেলেকে নিহা মেরে ফেলেছে।

– হুম! তারপর যে সেই হামলা করল।

– হুম তবে এরপর এদের কোনো খবর পাওয়া যায় নি।

– হ্যাঁ আর তাদের পায় নি বলে নিহা তাদের বিজনেস’র দফারফা করে দিয়েছে আর তাই এখন সে আর তার বড় ছেলে প্রতিশোধের নেশায় জ্বলছে!

– আগুনে তাহলে ঘি টা ঢেলেই দিলে!

– হুম কিন্তু এখন কি করবো সেটা বলো!

– নিরব!

– নিরব!

– হুম নিরব হাসান! তাকে কাজে লাগাও, মেহেরিন’র প্রেমে পাগল সে। এই পাগলামি আমাদের কাজে আসবে। কারন এখন আমার লক্ষ্য মেহেরিন কে মেরে ফেলা না তাকে তিলে তিলে কষ্ট দেওয়া বুঝলে!

– হুম, দেখছি আমি।

– হুম ঠিক আছে!
.
এদিকে..

নির্ঝর আজ কিছুদিন হলো মেহেরিন’র বাসায়’ই আসতে পারছে না। আসবে কিভাবে? যেদিন’ই ভাবে আসবে সেদিন’ই কিছু না কিছু ঘটছে আর এদিকে মেহেরিন ভার্সিটিতেও আসছে না। নতুন বাবু কে নিয়েই অনেক ব্যস্ত সে। আর নির্ঝর যেদিন ভাবে আজ যাবে সেদিন হয়তো ওর গাড়ি মাঝ পথে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা নাহলে শুরু থেকে। তবে নির্ঝরের এটা বুঝতে বাকি নেই এসব মেহেরিন’র কাজ। কিন্তু ওকে এই কাজে সাহায্য করছে কে। মনে হচ্ছে এই হোটেলের কোনো সার্ভেন্ট। নির্ঝর যখন’ই বাইরে বের হয় তখনই একটা সার্ভেন্ট কে দিয়ে তার গাড়ি পরিষ্কার করায় হয়তো সেই তখন এই কাজ করে। নির্ঝর আজ প্ল্যান করল। সকাল সকাল সার্ভেন্ট কে গাড়ি পরিষ্কার করতে বলে তৈরি হয়ে নিচে আসল। অতঃপর এসে দেখল গাড়ির টায়ার পাংচার। তবে নির্ঝর আজ এসবের জন্য তৈরি হয়েই এসেছিল। সে হেসে তার বাইকে উঠে গেল। অতঃপর সেই সার্ভেন্ট কে বললো গাড়ি ঠিক করিয়ে রাখতে এই বলে বাইক নিয়ে চলে গেল সে।

আজ প্রায় কয়েকদিন পর মেহেরিন কে দেখবে সে। ভাবতেই কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছে তার তবে এই অনুভূতি টা দারুন। কিছুক্ষণ পর’ই নির্ঝর চলে এলো খান বাড়িতে। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ সবার সাথে দেখা করল। অতঃপর রাইয়ান কে কোলে নিয়েও কতোক্ষণ বসে গল্প করল কিন্তু এখনো মেহেরিন’র কোনো পাত্তা পেল না সে।

নিশি ব্যাপারটা দেখে বুঝতে পারল। সে বলে উঠলো…
– চিন্তা করবেন না আপনার মেহু পাখি এখনো ঘুমাচ্ছে!

– এই মেয়ে কি সারাদিন’ই ঘুমায়।

– খাইয়া দাইয়া কোন নাম নাই তাই।

– 😒

– 😁

নির্ঝর এবার উঠে দাঁড়াল।‌ রাইয়ান তার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে তাকে নিশি’র কাছে দিয়ে হাঁটা ধরল মেহেরিন’র‌ ঘরের দিকে। অনেকক্ষন ধরে মেহেরিন’র ঘরের দরজা নক করার পর অবশেষে মেহেরিন এসে দরজা খুলল।‌ তাও হাই তুলতে তুলতে। এর মানেই এখন’ই উঠেছে ঘুম থেকে। নির্ঝর হেসে বলে..

– গুড মর্নিং মেহু পাখি!

– মনিং কিন্তু আপনি তো সকাল সকাল।

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে একটু ঝুঁকে বলল..
– কি ভাবলে তোমার লোক আজও আমায় আটকে রাখবে।

মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে দরজা বন্ধ করে দিলো। নির্ঝর দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল..
– জলদি ফ্রেশ হয়ে এসো নাহলে তোমার ঘুম হারাম করে ছাড়বো!
মেহেরিন বিড় বিড় করতে করতে ফ্রেশ হয়ে আসল। অতঃপর আসার পর মেহেরিন বসে পড়ল। অভ্র খাবার নিয়ে এসে মেহেরিন কে খাইয়ে দিতে লাগলো। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলল..

– এতো বড় মেয়েকে খাইয়ে দিতে হয়!

– আপনার সমস্যা কোনো?

– না আমার কেন সমস্যা থাকবে জিজ্ঞেস করলাম শুধু!

মেহেরিন মনে মনে বলে..
– লেজ কাটা ব্যাঙ কোথাকার, যদি পারতাম উনার মাথায় এক বালতি গোবর ঢালতে শান্তি পেতাম।

হঠাৎ মেহেরিন কি জানি ভেবেই হেসে দিলো। এদিকে নির্ঝর খানিকক্ষণ পর বলে..

– দা আজ যাচ্ছি কিছু কাজ আছে আমার!

– এখনি তো এলে চলে যাবে।

– হ্যাঁ দা আবার কাল আসবো!

বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যায়। এদিকে নির্ঝর বাইরে আসছে শুনে মেহেরিন দ্রুত তার ঘরে চলে যায়। বেলকনিতে এক দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে নির্ঝরের। নির্ঝরের মাথায় হয়তো গোবর ফেলতে পারবে না তবে গোবরের মতোই কিছু ফেলবে তাই এক বালতি পানিতে মাটি মিশিয়ে নেয়। মাটি গুলো আনা হয়েছিল বাগানে গাছ লাগানোর জন্য। অতঃপর নির্ঝর বাইরে আসা মাত্রই মেহেরিন সেসব ঢেলে দেয়। নির্ঝর পুরো পানি আর মাটিতে মিশে একাকার। মেহেরিন আর সেখানে না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিচে সবার সাথে এসে বসে পড়ে। এদিকে নির্ঝর উপরে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই বুঝতে আর বাকি নেই কাজটা যে তার মেহু পাখির!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here