Game 2 পর্ব -৪৫+৪৬

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৫_ও_৪৬

– মিঃ চৌধুরী হয়তো মিসেস’র ড্রেসআপ পছন্দ করে নি।

নির্ঝর হেসে বলল..
– কি করবো বলুন! আমার মিসেস তো আমার’ই খেয়াল রাখতে হবে।

মেহেরিন নির্ঝরের পাশে দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করে বলল..
– লেজ কাটা ব্যাঙ একটা। আমার টাকায় কেনা শাড়ি নষ্ট করে ফেলল। দেখবেন বাসায় গিয়ে আমি আপনার কি হাল টা করি।

নির্ঝর শুধু হাসল কিছু বললো না। অতঃপর ডিল সাইন হলো। এর উপলক্ষে সবাই একটা পার্টি থ্রু করার কথা বললো। নির্ঝর জানালো কয়েকদিন করেই সে পার্টির ব্যবস্থা করবে।

অতঃপর বেরিয়ে চলে গেল। মেহেরিন বাইরে এসে তাকে একগাদা কথা শোনাতে লাগলো। কথা শোনানোর যুক্তি ও আছে বটে। তবে নির্ঝর না শুনলেও ডেভিল সব শুনেছে আর সব শুনে তার কান এখন জ্বালাপালা!
.
ডেভিল গাড়ি চালাচ্ছে, মেহেরিন পিছনে বসা। হঠাৎ করেই ডেভিল কে বলে উঠলো..

– আচ্ছা দা’র কোন খবর পেলে ?

– স্যারের ফোন বন্ধ ম্যাম।

– ট্রেক করো দেখো নি।

– লাস্ট লোকেশন এয়ারপোর্ট এ দিকে ছিল।

– সেখানে..

– না ম্যাম। স্যার এয়ারপোর্টে ঢুকে নি।‌

– তাহলে!

– ম্যাম খোঁজ লাগাতে চাইছি কিন্তু স্যার আমাকে একদম নিষেধ করেছেন এসব করতে। গতকাল রাতে নিহা ম্যাম কল করে বললেন , স্যার তাকে জানিয়েছেন “আমি ঠিক আছি। তোরা চিন্তা করিস না। আদুরীর খেয়াল রাখিস। আর যখন আমি পারবো তখনই শুধু যোগাযোগ করবো। তোরা কিছু করার চেষ্টা করিস না”

– কি হলো বলোতো ডেভিল! দা হঠাৎ করে কেন চলে গেলো।

– জানি না ম্যাম। তবে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবেন সে

– হুম!

অতঃপর গাড়িতে হেলান দিয়ে বসল সে।

খান বাড়িতে…

নিশি আর নিশান ভিডিও কলে কথা বলছে।‌নিশান আদুরীর‌ ব্যাপারে সব টা জানে। নিশি তাকে বলেছে। এসব শুনে অনেকটাই মন খারাপ তার তবুও নিশি কে বিশেষ ভাবে যত্ন নিতে বলছে কারন এখন সে প্রেগন্যান্ট। এসময় এতো চিন্তা ভাবনা তার জন্য ক্ষতিকর।

ক্যাট কাব্য’র অবস্থা ও প্রায় সেম। কাব্য বার বার তাকে সাহস দিচ্ছে কিন্তু মেহেরিন’র জন্য তার মন তেমন একটা ভালো না।

অভ্র না থাকায় আনহা ভেঙে পড়েছে। নিহা আর আহিয়ান তাকে সামলাচ্ছে। এদিকে রোদ্দুর, ইহান বাচ্চাদের সামলাচ্ছে। নীলাশা আর আরিশা সংসার দেখছে আর নীল অফিস। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অভ্র না থাকায় সবকিছু মনে হচ্ছে হাতের বাইরে চলে যাবে অথচ এই ভাই একা তাদের এতো গুলো ভাই বোনদের সামলে ছিল।‌
.
মেহেরিন ঘরে এসে ধপাস করে বসে পরল। খুব ক্ষুধা লেগেছে তার। একবার উঠে জুসের বোতল, চিপস, বার্গার, চকলেট, আইসক্রিম, কেক সবকিছু নিয়ে এসে আবারো বিছানায় বসে পড়ল।‌ চিপস মুখে দিয়ে পুরো বিছানায় রিমট খুঁজতে লাগলো। পেয়েও গেল! অতঃপর সে কার্টুন দেখতে দেখতে খেতে লাগল।

হঠাৎ কেউ দরজা নক করলে মেহেরিন তাকে ভিতরে আসতে বলে। দরজা খুলে একে একে সব সার্ভেন্ট আসে। তাদের সবার হাতেই থালা টাইপের কিছু। আর তার উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। মেহেরিন চকলেট এ কামড় দিচ্ছে আর দেখছে। সার্ভেন্টদের‌ বলল সব কিছু বিছানায় রাখতে। অতঃপর কাপড় সরিয়ে দেখল এগুলোতে তে শাড়ি আর অর্নামিটস। কিন্তু এগুলো এভাবে আনার কারন কি?

মেহেরিন জিজ্ঞেস করল, তখন দরজা পাশ থেকে নির্ঝর বলে উঠে..

– আমি পাঠিয়েছি!

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। সার্ভেন্ট রা সব চলে গেল। নির্ঝর দরজা লক করে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরিন চকলেট এ একটা বড় কামড় দিয়ে বলল..

– আপনি এসব কেন এনেছেন? ( যা শুনতে নির্ঝরের বিরক্ত লাগলো )

– হয়তো খেয়ে নাও নাহলে বলে নাও

– আমি দুটোই করবো!

নির্ঝর হাত থেকে চকলেট টা কেড়ে নিল। মেহেরিন সেটা নেবার জন্য দাঁড়াতে গেলে নির্ঝর বলে উঠে..

– ফেলে দেবো কিন্তু!

– তো আমি আবার একটা নিয়ে আসবো

– তুমি যে আলসে, একটা চকলেট’র জন্য জীবনেও নিচে যাবে না।

মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বিছানায় ধপাস করে বসল।‌ নির্ঝর বলে উঠে..

– এই শাড়ি, তোমার জামাই’র টাকা কেনা এসব। সব পড়বা, যেভাবে ইচ্ছা পড়ো, যত ইচ্ছা সাজো কিন্তু সব ঘরে। বাইরে যাতে তোমাকে আমি শাড়ি পড়া না দেখি বুঝলে!

মেহেরিন ভালো মানুষের মতোই মাথা নাড়াল। নির্ঝর চকলেট’র প্যাকেট টা দিয়ে দিল। প্যাকেট হাতে নিয়ে মেহেরিন বিড় বিড় করে বলল..

– জামাই’র টাকা কেন বলল, তখন আমি নিজের টাকায় বলেছি বলে আত্মসম্মানে লেগেছে নিশ্চিত!

– কিছু বললে!

– হ্যাঁ‌ বলবো তো!

– চকলেট’র প্যাকেট টা দেওয়া ঠিক হয় নি।‌ যতক্ষন চকলেট ছিল ততক্ষণ চুপ ছিলা।

মেহেরিন মুখ ভেংচি কাটে অতঃপর বলে..
– শাড়ি পড়ে বাইরে না গেলে আমি কিভাবে বুঝবো আমাকে সুন্দর লাগছে। কেউ তারিফ না করলে কিভাবে আমার কনফিডেন্স আসবে।

– লাগবে কারো প্রশংসা নেবার। যা বলেছি সেটাই করবে। শাড়ি পরে বের হবে না।

– উনি বললেই করতে হবে।

– হ্যাঁ হবে নাহলে মনে আছে আজ কি হলো!

মেহেরিন পিছন ঘুরে বসে খেতে লাগল। এর মানে আর কথা বলবে না নির্ঝরের সাথে! অতঃপর নির্ঝর চলে গেল।
.
পরদিন…

মেহেরিন আজ মেরুন একটা শাড়ি পড়েছে আর অনেক সুন্দর করে সেজেছে। এতো সুন্দর করে সাজার পর কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করলো। অতঃপর নিচে আসল বসার ঘরে। এসে দেখে নির্ঝর সোফায় বসে কাজ করছে। মেহেরিন তার সামনে গিয়ে ঘুরাঘুরি করতে লাগলো যাতে নির্ঝরের চোখে সে পড়ে। কিন্তু নির্ঝর তার দিকে ফিরেও তাকাল না। মেহেরিন নির্ঝরকে অনেক বিরক্ত করল কিন্তু কোন প্রভাব পরল না নির্ঝরের উপর। সে নিজের মতোই কাজ করে যাচ্ছে।
একসময় নির্ঝর উঠে চলে গেল। মেহেরিন গালে হাত দিয়ে তার চলে যাওয়া দেখল!

অফিসে..
নির্ঝর অনেকক্ষন ধরেই অপেক্ষা করছে মেহেরিন’র কিন্তু আজ সে অফিসে আসে নি। নির্ঝর ভাবল আজ বোধহয় আসবে না।

লাঞ্চ টাইমে আমান ফোন করল নির্ঝর কে।

– হুম আমান বল!

– আচ্ছা তুই কি জানতি আজ বাসায় নিরব আসবে।

– নিরব!

– হ্যাঁ নিরব হাসান!

– ও বাড়িতে এসেছে!

– অনেকক্ষণ হলো এসেছে। মেহেরিন আর সে দুজনেই বাগানে বসে গল্প করছে।

– কিহহ!

– আচ্ছা তুই ওয়েট কর আমি দেখাচ্ছি!

অতঃপর আমান পিক তুলে নির্ঝর কে দিলো। নির্ঝর এসব দেখে মাথাই গরম হয়ে গেল। সে রেগে তখনই অফিস থেকে বের হয়ে গেল।‌

নির্ঝর চৌধুরী বাড়িতে গাড়ি নিয়ে ঢুকল তো তখন নিরব গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল।‌ নির্ঝর নিরব কে দেখেছে। অনেক খুশি খুশি লাগছিল তাকে। নির্ঝর রাগ আরো বেড়ে গেল। সে ‌ঘরে এসে মেহেরিন কে খুঁজতে লাগল। তাকে না পেয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগল “আদুরী আদুরী”!

মেহেরিন ডাক শুনে জলদি রুমে এলো।‌ এসে দেখে নির্ঝর আজও বেশ রেগে আছে। নির্ঝর রেগে গেলে প্রচুর ঘামে। এখন ও ঘামছে সে। মেহেরিন রুমের মধ্যে এসে বলল..
– আপনি!

নির্ঝর রেগে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর মেহেরিন’র টেনে বাহু জোরে চেপে ধরল। মেহেরিন তবুও তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। সে নির্ঝরের রাগ দেখছে আসলে নির্ঝর ঠিক কতোটা ক্ষিপ্ত! সে যতখানি ততখানি কি না। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে বলল..

– নিরব এসেছিল এখানে!

– হুম!

– কেন?

– আমি ইনভাইট করেছিলাম!

– কেন?

– যাতে বাসায় আসে তাই!

নির্ঝর রাগ কন্ট্রোল করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরিন কে আরো জোরে ধরল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল। কারন সে খুব ব্যাথা পাচ্ছে। নির্ঝর মনে হচ্ছে আজ তার হাত ভেঙ্গে ফেলবে। নির্ঝর এবার শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করল..

– আদুরী! নিরব কে তুমি ইনভাইট করেছিলে না তো ইনভাইটের কারন টা কি ছিল। কি উপলক্ষে!

– আমি তো আর বাইরে যেতে পারবো না তাই ওকে ডাকলাম না।

– আমি তোমাকে বাইরে যেতে মানা করেছি!

– শাড়ি পড়ে..

কথা শেষ হবার আগে নির্ঝর বলল..
– তাহলে তুমি নিজের সাজ দেখানোর জন্য ওকে ডেকেছিল! তাইতো!

মেহেরিন মাথা নাড়লো। নির্ঝর দাঁত দিয়ে ঠোট গুলো কামড়ে ধরল। অতঃপর বলল..

– এতো শখ তোমার! তোমার সাজ দেখানোর জন্য তুমি ওকে ডাকলে। ওই স্টুপিড টাকে!

– কি করবো বলুন আপনার সামনে এতো ঘুরাঘুরি করলাম কিন্তু আপনি তো আমাকে পাত্তাই দিলেন না। তাই যে দিতো তাকেই ডাকলাম।

– মনে হচ্ছে অনেক প্রশংসা করেছে তোমার, তোমাকে ওর কাছেই‌ রেখে দিতে আসতে হবে!

– চলুন!

– আচ্ছা দাঁড়াও!
বলেই মেহেরিন’র হাত টেনে সোজা বাথরুমে গেল। মেহেরিন বলে উঠে..
– এখানে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

নির্ঝর কোন কথা না বলে ওকে ঝরণার নিচে দাড় করিয়ে দিল। অতঃপর ঝর্ণা ছেড়ে দিল। মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে তার। মেহেরিন অস্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। পানির বেগের কারনে ঠিক মতো দেখতেও পারছে না। মেহেরিন হাত দুটো মুঠ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। নির্ঝর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে!

অনেকক্ষণ পর নির্ঝর ঝর্ণা বন্ধ করে দিল। মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। রাগ এখনো কমছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্ঝর মেহেরিন’র কাছে এসে দেওয়ালে এক পাশে হাত রেখে বলে..

– তোমাকে দেখাকে, তোমাকে ছোঁয়ার,‌তোমার প্রশংসা করার সব কিছুর অধিকার শুধু আমার। অন্য কাউকে এই অধিকার আমি দিতে দেবো না।

– আমি এমন কাউকে এতো অধিকার কেন দেবো যে আমাকে ভালোই বাসে না।‌

নির্ঝর মেহেরিন’র এক গালে হাত রেখে বলল..
– ভালোবাসা বেড়ে যাচ্ছে দেখি নিরবের প্রতি!

– তাতেই বা সমস্যা কি? আপনার ও তো ভালোবাসা বেড়ে যাচ্ছে কারো প্রতি!

– আমি কখনো তোমাকে বুঝতে পারবো না। খুব জটিল তুমি। জটিলতা’র শেষ নেই।

– কি ভাবছেন চলে যাবো।

– আমি আটকাবো না।

– যখন আমার এই ভালোবাসা আপনার ঘৃণার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে না ঠিক তখনই চলে যাবো আমি! তখন ‌শত চেষ্টা করেও আমাকে পাবেন না আপনি!
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে বের হয়ে গেল!
.
রাত ২ বাজতে চলল নির্ঝর এখনো বাসায় আসে নি। মেহেরিন আজ জেগে আছে। ঘুম আসছে না তার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল নির্ঝর এখনো বাড়ি ফিরেনি।‌তাহলে কোথায় সে?

মেহেরিন ডেভিল কে কল করে নির্ঝরের খোঁজ করতে বলল। আধঘন্টা পর ডেভিল ফোন করে জানাল “নির্ঝর বারে ছিল। অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে যার কারনে তার কোন জ্ঞান নেই। বারে নাকি ঝামেলায় করেছিল। ডেভিল তাকে নিয়ে আসছে”।

মেহেরিন সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এটা তার রাগের প্রতিফলন। নির্ঝরের ভালোবাসা তার জন্য কখনোই কমে নি। শুধু তার ঘৃণার চাপে পড়ে আছে। এই ভালোবাসা যে করেই হোক তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

বাইরে গাড়ির শব্দ আসা মাত্রই ‌মেহেরিন ছুটে নিচে গেল। গেট খুলে দাঁড়িয়ে দেখল নির্ঝর ঢুলছে। ডেভিল তাকে ধরে আছে। নির্ঝর ঝাপসা ঝাপসা চোখে মেহেরিন কে দেখল। একটা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ডেভিল মেহেরিন কে বলল সে নির্ঝর কে রুমে দিয়ে আসবে কিন্তু মেহেরিন তাকে না বললো। অতঃপর সে নিজেই তাকে ধরে রুমে নিয়ে গেল।

নির্ঝরের অবস্থা বেশ খারাপ। কেমন অগোছালো হয়ে আছে। মেহেরিন খেয়াল করলো নির্ঝরকে নিয়ে আসার সময় সে বার বার বলছিল “মেহু পাখি”!

আজ প্রায় অনেকদিন পর এই নাম শুনে তার অনেকটা ভালো লাগলো। মনের কোথাও একটু শান্তি অনুভব করলো সে। মেহেরিন নির্ঝর কে খাটে বসিয়ে দিয়ে আলমারির দিকে গেল।‌ নির্ঝর খাট থেকে মেহেরিন কে দেখছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে মেহেরিন’র কাছে যেতে লাগল। এদিকে মেহেরিন নির্ঝরের জন্য শার্ট বের করে ঘুরতেই নির্ঝর তাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল। মেহেরিন কিছুক্ষণ’র থমকে গেল।

নির্ঝরের সব নিঃশ্বাস মেহেরিন’র ঘাড়ে পড়ছে। নির্ঝর কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে..

– ম..মেহু পাখি আম আমি ‌ভালোবাসি তোমাকে। অনেক ভালোবাসি তোমাকে অনেক!

মেহেরিন চোখ বন্ধ করে একটা হাসি দিল। নেশা করে হলেও নির্ঝর আজ তার মনের কথা বলেছে! কিছুক্ষণ এভাবে জরিয়ে থাকার নির্ঝর মেহেরিন’র ঘাড়ে চুমু গেল। মেহেরিন’র হাত থেকে শার্টটা পড়ে গেল।‌ তার শরীর কাঁপছে। নির্ঝর মেহেরিন’কে ছেড়ে দিয়ে তাকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে তাকে জরিয়ে ধরল। তার চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে নিল। অতঃপর তার ঘাড়ে থিতুনি রেগে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করল।‌ মেহেরিন কোনমতে নির্ঝর কে বলল..

– নির্ঝর ছাড়ুন আমায়!

কিন্তু নির্ঝরের কানে কোন কথায় ঢুকল না। সে ‌মেহেরিন কে আবার নিজের দিকে ঘুরাল। অতঃপর তার গালে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে রইল।‌ নির্ঝর তার ঠোঁটের দিকে আগাতে থাকে। মেহেরিন সরে যেতে চাইলে নির্ঝর তার কোমর আলতো করে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন নির্ঝরের শার্ট আঁকড়ে ধরে। নির্ঝর ধীরে ধীরে মেহেরিন’র ঠোঁট দুটো দখল করে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর নির্ঝর তাকে ছেড়ে দেয়। অতঃপর তাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়। মেহেরিন কোনমতে চাইলো না এসব হোক সে নির্ঝরের প্রতি দুর্বল হয়ে গেল।‌ পারলো না তাকে আটকাতে।

সকালে সবসময়’র মতো নির্ঝরের ঘুম’ই আগে ভাঙল। তবে দেরিতে ভাঙল। নির্ঝর ঘুম ঘুম চোখেই মাথা ধরল। বেশ যন্ত্রনা করছে তার মাথায়। হঠাৎ নির্ঝর নিজের বুকের মাঝে কারো উপস্থিত পেল। সে এবার ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। নির্ঝর কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল।‌ সবকিছু বুঝতে তার বেশ অনেকক্ষণ লাগলো।

নির্ঝর চট করে মেহেরিন কে তার বুক থেকে সরিয়ে বসে পরল। মেহেরিন’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে চোখ ঢলতে ঢলতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল..

– কি হয়েছে? সকাল সকাল কি শুরু করলেন আপনি!

– এসব কি আদুরী!

মেহেরিন চুপ করে তাকিয়ে রইল। সে জানে নির্ঝর তাকে কি জিজ্ঞেস করছে। নির্ঝর আবারো বলে উঠল..

– ছিঃ তুমি এমনটা কিভাবে করতে পারো।

– নির্ঝর! কাল রাতে আপনি ড্রিংক করে..
আর বলতে পারল না মেহেরিন’র গলা কেমন জানি ভারী হয়ে আসল। নির্ঝর রেগে বলে উঠে..

– ড্রিংক করেই ছিলাম, তাই বলে তুমি এমনটা করবে। তাহলে কি পার্থক্য রইল তোমার আর বাজারের মেয়েদের সাথে!
বলেই নির্ঝর বিছানা থেকে উঠে চলে এলো। মেহেরিন থমকে গেল। শেষে কি না নির্ঝর তাকে বাজারের মেয়েদের সাথে তুলনা করল। নিজের স্বামী’র মুখে এটা শুনতে হলো তাকে!

মেহেরিন একটা ঢোক গিলে ঠাঁই সেখানে বসে রইল। নির্ঝর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। মেহেরিন তাকিয়ে রইল তার দিকে কিন্তু নির্ঝর তার দিকে ফিরেও তাকাল না। নির্ঝর অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বের হতে যাবে তখন মেহেরিন একবার বলে উঠে.. “নির্ঝর”!

নির্ঝর তার দিকে ফিরে তাকায়। মেহেরিন তার চোখে স্পষ্ট ঘূণা দেখতে পাচ্ছে। নির্ঝর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর মেহেরিন ও তৈরি হয়ে বের হয়ে গেল। ঘরে থাকলে কোন কিছুতে তার মন বসবে না তাই সে অফিসে চলে গেল!
.
বেশ কয়েকদিন হলো! সেই রাতের পর নির্ঝর আর মেহেরিন কেউই কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলে না। মেহেরিন ও কেমন জানি হার মেনে নিচ্ছে মনে হচ্ছে।

সেদিন মেহেরিন’র ইচ্ছে‌ করল না বাড়িতে ফিরতে। সে খান কোম্পানিতে বসে ফাইল দেখতে লাগল। রাত প্রায় ২ দুটো বাজে। বর্ষাকাল চলে এসেছে! বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস বইছে হয়তো বৃষ্টি আসবে। মেহেরিন কি মনে করে অফিস থেকে বের হলো। ডেভিল তাকে দেখে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। অতঃপর তাকে নিয়ে চলে এলো চৌধুরী বাড়িতে!

মেহেরিন বাড়িতে এসে রুমে ঢুকতে যাবে তখন খেয়াল করল নির্ঝরের রুম লক করা। মেহেরিন’র কাছে বেশ অবাক লাগল। সে ‌আর নক করল না। সোজা চলে গেলো বসার ঘরে। সেখানে বসে সিসি টিভি ক্যামেরা চেক করতে লাগলো।‌ তখন দেখতে পেলো নির্ঝর কথা কে হাসতে হাসতে নিজের রুমে যাচ্ছে। কিন্তু রুমের যাবার ভিডিও দেখতে পেলেও বার হবার ভিডিও পেলো না।

মেহেরিন ধরেই নিল কথা এখন নির্ঝরের সাথে নির্ঝরের বেডরুমে। মেহেরিন একটা উপহাসের হাসি দিয়ে অফিসের কিছু কাজ করতে লাগলো।‌ আজ তার আর ক্লান্ত লাগছে না। চোখে ঘুম ও নেই। বেস কাজ করছে বসে বসে।

ভোরের দিকে নির্ঝরের রুমের দরজা খুলল। মেহেরিন এখানে বসেই সেই আওয়াজ পেল। সে এখনো ল্যাপটপ টিপছে। উপর থেকে নির্ঝর আর কথা নামছে। তাদের হাসির আওয়াজ আসছে। নির্ঝর আর কথা দেখতে পেলো মেহেরিন বসার ঘরে বসে আছে। তাকে দেখে কথা চুপ হয়ে গেল।

কিন্তু মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। তাকে দেখে কথা’র একটু ভয় করতে লাগলো। মেহেরিন উল্টা পাল্টা কিছু করবে না। একই ভাবনা নির্ঝরের ও। মেহেরিন ডায়নিং টেবিলে’র কাছে এসে পানি খেতে লাগল। কথা নির্ঝর কে বাই বলে তাকে জরিয়ে ধরল। নির্ঝর এক হাত দিয়ে তাকে হাগ করল। মেহেরিন ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি টা নিল। কথা এখনো নির্ঝরের সাথে দাঁড়িয়ে যাবার কথাই বলছিল।‌

হুট করেই মেহেরিন কথা’র চুলের মুঠি ধরে তার দিকে ঘুরাল। অতঃপর তার হাতের তালু কেটে তার মাথা টেবিলের সাথে ঠেকাল। নির্ঝর হা হয়ে গেল। মেহেরিন কথার দিকে ছুরি মারল। কথা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। নির্ঝর হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তবে মেহেরিন ছুরি টা কথা’র চোখ বরাবর টেবিল রাখে। অতঃপর বলে..

– শেরনি চুপ আছে এর মানে এটা না যে শিকার করতে ভুলে গেছে। এখনো খুব ভালো শিকার করতে পারি!

অতঃপর কথা কে উঠিয়ে তার গাল দুটো চেপে ধরল। কথা মেহেরিন’র হাত ধরে ছুটানোর চেষ্টা করছে। মেহেরিন ছুরি টা কথা’র মুখের চারদিকে ঘুরাচ্ছে। কথা শুকনো ঢোক গিলল। মেহেরিন ছুরি টা গলায় ঠেকাল। নির্ঝর বলে উঠে “আদুরী”!

মেহেরিন হেসে বলে..
– দেখলে কি ভালোবাসা। কতো চিন্তা করছে।‌ কিন্তু একটা কথা কি জানো উনার ভাগ কাউকে দেওয়া তো দূর আর ভাববোও না। ঠিক এইখানে, এখানে ছুরি টা ঠেকিয়ে দিলে আজ আর সূর্য উদয় দেখা তোমার হবা না।‌ তাই বলছি দূরে থাকো। বেঁচে থাকবে!

– মে…মেহেরিন!

মেহেরিন তাকে ছেড়ে দিল। কথা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।‌খুব ভয় পেয়েছে সে। হাত পা সব কাঁপছে তার। নির্ঝর বলে উঠে..

– তুমি কিভাবে করতে পারো এমনটা!

– করতে তো অনেক কিছু পারি। কোনটা আগে করবো বলুন।

– তুমি এটা একদম ঠিক করো নি।

– জীবনে আজ পর্যন্ত যা করেছি সব নিজের মনের ইচ্ছাতে করেছি। আজও তাই করেছি। যান আপনার বন্ধুকে গিয়ে সামলান বেচারা ভয়ে আধমরা হয়ে যাবে।

– আদুরী!

– চেঁচাবেন না।
বলেই মেহেরিন চলে যেতে নিল। কিন্তু আবারো সামনে ঘুরল। অতঃপর বলল..

– সেদিন আপনি ঠিক বলেছিলেন নির্ঝর। আমি আসলেই বাজারের মেয়ে! কিন্তু একটা কথা কি জানেন বাজারের মেয়েদের কাছে আপনাদের মতো ছেলেদের ছাড়া আর কেউ আসে না।
বলেই মেহেরিন চলে গেল।

নির্ঝর তার প্রত্যেকটি কথা কানে বাজল। কথা গুলোতে আকাশ সমান যে অভিমান আছে তা বোঝাই যাচ্ছে!

মেহেরিন রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। অনেক ঘুম আসছে তার। সে খানিকক্ষণ’র মধ্যেই দু’চোখের পাতা এক করে ফেলল!

এদিকে নির্ঝর বসে কথা’র হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।
– তুই এমনটা কেন করলি নির্ঝর!

– ( নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল )

– তুই মেহেরিন কে ভুল বোঝাতে পারিস নি। সে খুব বিশ্বাস করে তোকে।

– আমি জানি ও কিছুই বিশ্বাস করে নি।

– এটা তো হবার’ই ছিল। আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক নেই। আমরা শুধু দু বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। শুধু তোর কারনে আমি ইচ্ছে করেই দেরি করে বের হলাম রুম থেকে। তুই জানতি না মেহেরিন বাইরে ছিল। তাই তুই ইচ্ছে করে আমাকে বসিয়ে রেখেছিলি।

– তোকে ঘুস ও দিয়েছি। তুই আমার ৫ টা আইসক্রিম’র বাটি শেষ করেছিস।

– নির্ঝর আমি মজা করছি না। আমি যদি জানতাম মেহেরিন বাইরে আছে তাহলে আমি কখনোই তোর সাথে একা থাকতাম না।

– ওহ আচ্ছা!

– এভাবে কেন কথা বলছিস। তুই কি জানিস না মেহেরিন তোকে কতোটা ভালোবাসে। তুই কি কম বাসিস। তাহলে এমন করছিস কেন? ওকে কষ্ট কেন দিচ্ছিস!

নির্ঝর ততোক্ষণে হাতের ব্যান্ডেজ শেষ করে ফেলেছে। অতঃপর নির্ঝর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে..

– এটা খুব জরুরি! মেহু পাখি আমাকে ভালোবাসতে পারে না। আমি চাই ও আমাকে ঘৃণা করুক।

– কিন্তু কেন?

– কারন আমার অতীত কথা! মেহু পাখি আমার অতীত জানলে আমাকে মেরে ফেলতেও ওর হাত কাঁপবে না। আমাকে অনেক ঘৃণা করে সে।‌ আর আমি চাই না আমাকে এতো ভালোবাসার পর আমার অতীত জানার পর ওর কষ্ট দ্বিগুন হোক।

– কি এমন অতীত!

– বাসায় যাবি তো আমি ড্রপ করে দেবো।

– না আমি একাই যেতে পারবো। জানি বলতে চাস না তাই আমি আর জোর করবো না। বাই!

অতঃপর কথা চলে গেল। নির্ঝর হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এলো। বিছানায় চাদর জরিয়ে তার মেহু পাখি ঘুমিয়ে আছে। সে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে তাকে। আকাশে আজ অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। তাই ঠান্ডা ও লাগছে অনেক।

নির্ঝর হাঁটতে হাঁটতে মেহেরিন’র কাছে এলো। অতঃপর বসে তাকে দেখতে লাগল। তার কপালে হাত রেখে একটা চুমু খেল। মেহেরিন’র ঘুম ভাঙে নি। ভাঙার কথা না সারারাত জেগে ছিল। এই ভোরে ঘুমাচ্ছে সে। নির্ঝর বলতে লাগল..

– ভালোবাসা নাকি সবসময় সুন্দর হয়! তাহলে আমাদের ভালোবাসা কেন এমন হলো বলতো মেহু পাখি। কি দরকার ছিল এমন ভালোবাসার! আমাদের ভাগ্য আমাদের দেখা না করালেই হয়তো ভালো হতো। না তোমাকে আমি এতো কষ্ট দিতাম আর না নিজে এতো কষ্ট পেতাম।

তোমাকে যতটুকু কষ্ট দেই তার দ্বিগুণ কষ্ট আমি পাই। কারন একটাই আমি ভালোবাসি তোমাকে! তবে এই ভালোবাসার শেষ কোথায় মেহু পাখি। এই গেমের শেষে কি হবে? তুমি কি শেষমেষ আমার মুখটা দেখতে পারবে তো। জানি না কি হবে তবে আমার ভালোবাসা কখনো তোমার জন্য কমবে না। এই ভালোবাসা কখনো হারায় নি মেহু শুধু আমি আড়াল করে রেখেছি। কারন এই ভালোবাসা যে খুব ভয়ানক!

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত দুটো হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে সেখানেই ঘুমিয়ে পরল। সকালে ‌তার ঘুম মেহেরিন’র আগেই ভাঙল। অতঃপর সে আবারো মেহেরিন’র কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেল।

#চলবে….

[ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here