Game 2 পর্ব -৪২+৪৩+৪৪

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪২+43+44

মেহেরিন নিচে এসে চা বানাতে লাগল। খুব রাগ হচ্ছে। কিছু না কিছু তো করতেই হবে। ইটের জবাবে পাথর তাকে দিতেই হবে।‌ এমন কিছু করতে হবে যাতে নির্ঝর কে জব্দ করা যায়। যা করার একবারই করবে। আর এই একবারেই তাকে জবাব দিবে। মেহেরিন পানিতে চা পাতা দিল। তখন উপর থেকে নির্ঝর নামল।

মেহেরিন তার দিকে একবার তাকাল। অতঃপর কাজে মনোযোগ দিল। হঠাৎ কেউ দরজা নক করল। নির্ঝর নিজেই গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই নিহা কে দেখতে পায় সে। সে হাসিমুখে তাকে বলে ভিতরে আসতে। নিহা কে দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে। নিহা ভেতরে এসে দেখে মেহেরিন রান্না ঘরে। মেহেরিন নিহা কে দেখে অবাক!

– তুই রান্না ঘরে কি করছিস?

– চা বানাতে আসলাম দি। তুমি বসো না!

নিহা দ্রুত মেহেরিন’র হাত চেক করলো। অতঃপর বললো..
– হাত পুড়ল কি করে?

– রান্না করতে গিয়ে!

– এরপরও আবার রান্না করতে এসেছিস!

নির্ঝর দাঁড়িয়ে দু’জনের কথা শুনছে। নিহা নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে..
– আদুরীর হাত পুড়ে গেছে! তাও অনেকটা এরপরও তাকে দিয়ে রান্না করাচ্ছিস তুই।

– আমি তো বলেছিলাম শুধু চা বানাতে।‌ হাত বেশি জ্বললে না বলে তো।

– নির্ঝর এসব কি? তুই এটা কি রকম কথা বলছিস?

– যা সত্যি তাই বলছি। আর বিয়ের আগে এমন কোন শর্ত হয় নি তো যে আমি মেহেরিন কে রান্না করতে বলতে পারবো না তা না।

– খুব অচেনা লাগছে তোকে!

– তাহলে চিনে নাও কারন এটাই আমি।

– কিন্তু তোর এই আমি কে আমার সহ্য হচ্ছে না।

– তোমার বোন করে নিয়েছে দেখছো না রান্না করছে।

নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন চা বানাতেই ব্যস্ত। অতঃপর কাপে চা ঢেলে বলল..

– দি তুমি চা খাবে দেবো।

– তুই আমার সাথে এখন চলে যাবি বুঝলি তুই!

নির্ঝর সোফায় বসে দু বোনের কাহিনী দেখতে লাগল। নিহা এক পর্যায়ে মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে রান্না ঘর থেকে বের করলো। নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন নিহা’র হাতের উপর হাত রাখল। নিহা অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলল..

– দি আমাকে বিশ্বাস করো তো!

– আদুরী তুই!

– আমি হেরে পিছনে চলে যাওয়ার পাত্র না আপি। তুমি বাসায় যাও। আমি এখানে সব দেখে নেবো।

– কিন্তু..

– দি আমি একবার বলে দিয়েছি। কথার নড়চড় আর হবে না।

নিহা নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর বলল..
– খুব বড় ভুল করছো। কার সাথে কি করছো বুঝতে পারছো না। যখন বুঝতে পারবে তখন তোমার সব যাবে!

– দি তোমার মাথা গরম হয়ে আছে। একটু ঠান্ডা কিছু খেয়ে নাও!

নিহা রাগে চলে গেলো। মেহেরিন রান্না ঘর থেকে চায়ের কাপটা নির্ঝরের হাতে দিয়ে উপরে চলে গেল।

– বাহ দুই বোনের কি রাগ। একজন বাইরে আরেকজন উপরে নাহ একই রক্ত তো শরীরে বইছে। বংশধর বলে কথা। ( চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ) নাহ চা টা ভালোই বানিয়েছে!

অতঃপর সে সোফায় বসে চা খেতে থাকে।
.
নিহা বাড়িতেই আসতেই অভ্র তার কাছে গেল।‌ সবাই ঘিরে ধরল তাকে।

– আদুরী কোথায়? আসে নি তোর সাথে!

– না দা ও আসবেনা বলে দিয়েছে।

– কি বলছিস এসব। আমি যাচ্ছি ওকে আনতে

– দা ও আসবে না কোন মতে।

– নির্ঝর এমন ভাবো ধোঁকা দিলো আমাদের। আর এই ধোঁকা দেবার কারন টা কি?

– জানি না দা। মেহেরিন এসব কিছু বলে নি।

নীল বলে উঠে..
– যদি নির্ঝর আবারো এমন কিছু করে তখন!

– তখন নির্ঝর কে আমি জীবিত ছাড়বো না।
বলেই নিহা চলে গেলো। সবাই চুপচাপ বসে রইল। নিশি’র হাত ধরে বসে আছে নিলাশা। নিশান আজ সকালেই চলে গেছে লন্ডন! এখন তার এই অবস্থায় এমন একটা পরিস্থিতি। অনেক মনোবল হারিয়ে ফেলছে সে। নিলাশা আর নীল তাকে বুঝিয়ে সাত্বনা দিচ্ছে!
.

– মা আমি আসবো!

– তিশা! হ্যাঁ আয় ভিতরে আয়।

– কিছু কথা ছিল তোমার সাথে!

– বল!

– ভাইয়া এমন কেন করছে মা। ভাবী কতো ভালো কিন্তু ভাইয়া সবসময় তার সাথে এমন ব্যবহার কেন করে।

– আমি ওকে বলেছি কিন্তু নির্ঝর বুঝতে চাইছে না।

– কিন্তু মা এটা অন্যায়।

– আমাদের কিছু করার নেই তিশা। তোর ভাই বুঝতে চায় না।

– ওরা কাখনো চাইবেও না!
বলেই তিশা চলে গেল।
.
রাতে…

নির্ঝর অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল। রুমে এসে দেখে মেহেরিন ঘুমিয়ে আছে অনেকটা অগোছালো ভাবে। খাটের এক কোনে গুটিসুটি মেরে, মাথার তলে বালিশ টাও নেই।

নির্ঝর মেহেরিন’র কাছে গেল। অতঃপর তাকে কোলে তুলে ঠিক মতো শুইয়ে দিল।মাথার তলে বালিশ দিল অতঃপর গায়ে চাদর টা টেনে দিল। পোড়া হাতটার দিকে খানিকক্ষণ তাকাল। ফোস্কা পড়ে হাতটার অবস্থা খারাপ। রাতে মনে হয় না আর মলম দিয়েছিল। নির্ঝর মলম এনে হাতে লাগিয়ে দিল। কপালে একটা চুমু খেল। খুব গভীরে ঘুমে আছে সে। সারাদিন এতো কাজ করেছে তাই হয়তো। কি করছে কেন করছে জানে না তবে তার মন বলছে এইসব করতে। পাশে বসে তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। অতঃপর উঠে এলো সেখান থেকে। বেলকনিতে এসে দাঁড়াল।

আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, চাঁদ আজ বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারা রা চিক চিক করছে। এখানে এইভাবে তাকাতেই তার আর মেহেরিন’র কিছু স্মৃতি তার চোখে সামনে ভেসে উঠলো। মেহেরিন কে সে বলেছিল..
“এইভাবে শত রাত তোমার সাথে বসে আমি চাঁদ দেখবো।” কিন্তু সেসব আজ অতীত। মেহেরিনকে সে ভালোবাসে এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তার লক্ষ্য তার কাছে অতি মূল্যবান। মেহেরিন তার সাথে যা করেছে এর পর তাকে ছেড়ে দিলে তার মন শান্ত হবে না।
.
কয়েকদিন পর..
নির্ঝর সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যায় বাসায় আসল। নির্ঝর সোজা রুমে গেলো। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে নিল। মেহেরিন তার জন্য এক কাপ চা নিয়ে এলো। নির্ঝর তার দিকে একবার তাকিয়ে বলল..

– দু মিনিট দাঁড়াও!

মেহেরিন দু’মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর কি ফাইল বের করছে। হঠাৎ করেই কাপ পড়ে ভেঙ্গে গেল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল মেহেরিন ও পড়ে যাচ্ছে। নির্ঝর দৌড়ে তাকে ধরল।

– মেহু পা.. আদুরী! এই আদুরী,আদুরী!

মেহেরিন’র জ্ঞান নেই। নির্ঝর তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল। অতঃপর ডাক্তার কে কল করল। ডাক্তার এসে মেহেরিন কে চেকআপ করছে। একপাশে উষা চৌধুরী আর তিশা বসে আছে। ঘরের এক কোনে আমান। নির্ঝর খাটের পাশে দাঁড়ানো। তিশা মেসেজ দিয়ে ইহান কে জানাল এসব। কয়েকদিন আগেই ইহানের সাথে সে পরিচয় হয়েছে। খুব ভালো একটা ছেলে। ভাবী’র অনেক খেয়াল। ওর মতে নির্ঝর মেহেরিন আরো কষ্ট দিবে। তাই সবার থেকে আড়াল করে মেসেজ দিল সে। এদিকে ডাক্তার বলল..

– পেশার লো, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার কারনে এমনটা হয়েছে। সুগার ও লো হয়ে গেছে। ওর প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখুন। ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিয়েছি আর কিছু মেডিসিন লিখে দিলাম। এগুলো এনে তাকে খাইয়ে দিবেন।

– আচ্ছা আসুন আপনাকে আমি দিয়ে আসছি।

অতঃপর নির্ঝর ডাক্তার কে বাইরে ছেড়ে দিয়ে এলো।
ভেতরে আসতে নিবে তখন’ই গাড়ি থামার শব্দ এলো। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল গাড়ি থেকে নিহা, নীল আর ইহান নামছে। নির্ঝর তাদের দেখে অনেকটা অবাক হলো। তারা ৩ জন’ই উপরে চলে গেলো। নির্ঝর ও গেলো তাদের পিছু পিছু!

নিহা, নীল আর ইহান দেখল মেহেরিন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। তাদের দেখে তিশা আর উষা চৌধুরী উঠে গেল। নিহা আর নীল মেহেরিন’র দু পাশে বসল। নিহা মেহেরিন’র হাত ধরে চুমু খেল। নীল মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাচ্ছে। ইহান দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। উষা চৌধুরী বলে উঠে..

– চিন্তা করো না একটু আগেই ডাক্তার দেখে গেছেন। পেশার লো তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে!

উষা চৌধুরী’র কথা কারো কানে ঢুকল বলে মনে হয় না। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। নির্ঝর রুমে এলো। নিহা তার দিকে তাকাল। নির্ঝর তিশা ওদের কে বের হতে বলল। সবাই চলে গেল। নির্ঝর এসে খাটের এক পাশে দাঁড়াল ‌। নিহা উঠে তার দিকে গেল। নির্ঝর মাথা নিচু করে আছে। নিহা খুব জোরে একটা চড় মারল নির্ঝর কে। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে সেট সহ্য করল। নিহা বলল..

– আমার বোন কখনো তোকে বিয়ে করতে চাইনি, সে ভালোবাসতো না তোকে। আমি জোর করেছি ওকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তোকে বিশ্বাস করা আমার উচিত হয় নি।আমার বোনটাকে শেষে কি না মেরে ফেলার চেষ্টা করলি তুই।

– দি..

– চুপ কর তুই। তোর থেকে কোন কথা শুনতে চাই না আমি। আমি আমার বোন কে এখান থেকে নিয়ে যাবো রাখবো না তাকে তোর কাছে।

নির্ঝর চুপ হয়ে রইল। নীল তাকে কোলে নিতে যাবে তখন নির্ঝর বলল..
– দি ও কিন্তু আমার বিবাহিতা স্ত্রী তুমি এভাবে ওকে নিয়ে যেতো পারো না।

– আমি কি করতে পারি এই সম্পর্কে তোর কোন ধারনা নেই। নীল চল!

– আদুরীর জ্ঞান ফিরার পর ও কিন্তু আমার কাছেই চলে আসবে দি।

– যখন ওর জ্ঞান ফিরবে তখন দেখে নেবো!

বলেই তারা চলে গেল। নির্ঝর রেগে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করল।
.
মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরার পর সে নিজেকে খান বাড়িতে দেখতে পেল। অবাক হলো না শুধু ভাবল এই বাড়ি থেকে কিভাবে বের হবে সে। অভ্র তাকে কোনমতে যেতে দিবে না। ঠিক তাই হলো। মেহেরিন’র ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলো।

আজ ৩ দিন হলো মেহেরিন খান বাড়িতে। তার বের হবার সব রাস্তা বন্ধ। এদিকে নির্ঝর একবার ও কল করে তার খোঁজ খবর নিলো না। জিজ্ঞেস ও করল না কেমন আছে সে। ভুলে গেলো কি তাকে তাহলে। মেহেরিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইল।

এদিকে অভ্র উষা চৌধুরী কে মনে করতে গিয়ে শুধু আবছা কিছু তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আজ অনেক চেষ্টা করার পর একজন কে দেখতে পেলো না। অভ্র দাঁড়িয়ে গেল।তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।সে রুম থেকে বের হয়ে গেল। বসার ঘরে মেহেরিন কে খাবার খাওয়াচ্ছিল নিহা।

– দা! কি হয়েছে তোমার এতো অস্থির লাগছে কেন?

– শোন আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। আমি না আসা অবদি মেহেরিন কে কোথাও যেতে দিবি না।

আনহা বলে..
– এই ভোর সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছেন আপনি আর আসবেন কবে।

– বেশ কয়েকদিন লাগবে, ঠিক বলতে পারছি না।

– কি এতোদিন!

– হুম

শান্ত আর অরনি ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে..
– কোথায় যাবে তুমি বাপি!

– এখানেই যাবো আব্বু আর আম্মু। এসে পড়বো তোমাদের জন্য অনেক চকলেট আনবো ঠিক আছে।

মেহেরিন উঠে অভ্র’র কাছে গেল। অভ্র তার কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– নিজের খেয়াল রাখিস। কোথায় যাবার কোন দরকার নেই তোর দা এখনো বেঁচে আছে। আমি এসে পড়বো তাড়াতাড়ি।

– সাবধানে যেও।

– হুম!

অতঃপর আনহা, নিহা, নিশি সবার সাথে দেখা করল। অতঃপর অভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে চলে গেল।
.
মাঝ রাতে..

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে।

– খুব আরামে ঘুমিয়ে আছো না আদুরী। কিন্তু তোমার এই ঘুম হারাম করে দেবো আমি।

অতঃপর মেহেরিন’র নাকের সামনে অজ্ঞান করার ঔষধ স্প্রে করল। মেহেরিন অজ্ঞান হয়ে গেল। নির্ঝর তাকে কোলে করে বাইরে নিয়ে এলো। সবাই ঘুমাচ্ছে! নির্ঝর নিহা ওদের সবার রুম লক করে রেখেছিল। তাই কেউ জেগে গেলেও তাদের ধরতে পারবে না। নির্ঝর মেহেরিন’কে নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই ডেভিল সামনে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর পিছনে তাকিয়ে দেখল সেখানেও গার্ড।

– স্যার আপনি মেহেরিন কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।

– ডেভিল! আমি গেলে আদুরী কে এখান থেকে নিয়েই যাবো।

– না স্যার। ম্যাম এর বাইরে যাবার অনুমতি নেই। আমি আপনাকে যেতে দিতে পারবো না।

– সরি ডেভিল!
বলার সাথে সাথেই পেছন থেকে আমান খুব জোরে ডেভিলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করল। ডেভিল অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। নির্ঝর আবারো আগাতে যাবে তখন পেছন থেকে একজন গার্ড বলে উঠে..

– স্যার আপনি ম্যাম কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।

নির্ঝর পেছন ঘুরে সবার দিকে তাকাল। সবাই তার দিকে গান তাক করে আছে। নির্ঝর বলল..
– ভুলে যেও না তোমাদের ম্যাম আমার কোলে। ওকে বাঁচানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোমাদের। ওর কিছু হলে কিন্তু তোমরাই দায়ী থাকবে।

সবাই গান নামিয়ে ফেলল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। আমান গাড়ি স্টার্ট দিল।
.
ভোরে..

নিহা তাকিয়ে আছে ডেভিলের দিকে, ওর মাথায় ব্যান্ডেজ করানো হচ্ছে। নিহা দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে। ডেভিল বলে উঠে..

– সরি ম্যাম আমি পারি নি। তবে তুমি বললে আমি এক্ষুনি নিয়ে আসতে যাবো।

– না ডেভিল যাবার দরকার নেই।

– তাহলে!

নিহা বাঁকা হেসে বলল..
– ডেভিল এটা খান বাড়ি। এখান থেকে সবাই নিজের ইচ্ছায় আসলেও কেউ নিজের ইচ্ছায় যেতে পারে না। নির্ঝর এখানে নিজের ইচ্ছায় এলেও আমার ইচ্ছায় গেছে।

– ঠিক বুঝলাম না!

– সকাল হতে দাও বুঝে যাবে। এবারের চাল আমরা দেবো।

নিহা রোদ্দুর, কাব্য, ইহান আর নীলের তাকাল।সবাই হাসল। তারা ৫ জন মিলে যে প্ল্যান করেছে এটা বোঝায় যাচ্ছে।
আহিয়ান বলে উঠে…

– তোমরা কি করতে চলেছো!

– অপেক্ষা করুন সব জানতে পারবেন।

#চলবে….

[ আরেকটা পর্ব দেবার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে ]#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৩_ও_৪৪ (#ভালোবাসার_অত্যাচার )

সকাল বেলা মেহেরিন’র ঘুম অনেকটা দেরি করেই ভাঙল। সে ঘুম থেকে উঠে চোখ ঢলতে ঢলতে বিছানায় বসল। কিছুক্ষণ এভাবে ঠাঁই বসে থাকতে অনেক ভালো লাগে। অতঃপর ফ্রেশ হবার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠলো। ওয়াশরুম’র দরজা খুলতে যাবে তখন’ই কপালে একটা বারি খেলো। এর কারন দরজা কেউ খুলছে। মেহেরিন কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকাল। নির্ঝর তার সামনে দাঁড়ানো। সবে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।

তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছা থামিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। কারন মেহেরিন খুব অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন ঘাড় টা বাঁকা করে নির্ঝর কে দেখছে। নির্ঝর ও তার দেখাদেখি ঘাড় বাঁকাল। মেহেরিন রেগে আঙুল তুলে বলল..

– এই এই এই আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো।

নির্ঝর ভ্রু কুচকালো।

– এখন আমি জেগে আছি বুঝলিন স্বপ্নে না যে আপনি আমাকে এসে জ্বালাবেন!

নির্ঝর এবার কপাল কুঁচকালো। মেহেরিন ও কপাল কুঁচকে আঙ্গুল তুলে নির্ঝরের দিকে আগাতেই নির্ঝর নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে ওর হাত নামিয়ে বলল..

– মিসেস আদুরী আমি আপনার স্বপ্ন না বাস্তব বুঝলেন

– এটা হতেই পারে না কারন আপনি আমার স্বপ্নেই সুন্দর বাস্তবে না।

– কি এতো বড় অপমান।

– হুহ । এখন ভ্যানিস হন আমার স্বপ্ন থেকে।

– আমি বাস্তব ( মেহেরিন’র নাকে টৌকা দিয়ে ) ঘুমের ঘোর থেকে বের হও।

– আপনি সত্যি!

– তো তোমার কি মনে হয়?

মেহেরিন নির্ঝরের গালে হাত দিলো। সে নির্ঝর কে ছুঁতে পারছে। এর মানে এটা তার স্বপ্ন না। সে চোখ দুটো বড় বড় করে বলল..

– এটা সত্যি আপনি!

– হ্যাঁ আমি!

মেহেরিন খুশি হয়ে চট করেই নির্ঝর কে জরিয়ে ধরল।
আচমকা এমনটা হওয়ায় নির্ঝর অবাক হলো। মেহেরিন দু হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে মাথাটা উঁচু করে বলল..

– এই ৩ দিনে একটা ফোন ও করে নি আমায়। একটুও বুঝি মিস করেনি আমাকে।

নির্ঝরের মেহেরিন’র দিকে তাকাল।‌ কথাটা সত্যি অনেকটা আবেগ জড়ানো। নির্ঝরের ইচ্ছে করল মেহেরিন’র দু গাল ধরে বলতে “আমি অনেক মিস করেছিলাম তোমায়। বিশ্বাস করো আমার শ্বাস নেওয়া কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছিল তোমাকে ছাড়া”

নির্ঝর হাত দুটি মেহেরিন’ দিকে আগাল। কিন্তু তার গাল অবদি হাত পৌঁছাল না। বরং মেহেরিন দুই বাহু ধরে চেপে তার থেকে ছাড়িয়ে বলল..

– না ব্যস্ত ছিলাম। তাই!

মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– তাহলে ব্যস্ততা নিয়েই থাকতেন। আমার ঘরে কি করছেন এখন।

– আমি তোমার ঘরে!

– না হলে কার ঘরে, আমি তো আমার বাড়িতেই আছি নাহ!

নির্ঝর মেহেরিন’র গাল দুটো ঘরের এদিক থেকে ওদিক দেখিয়ে বলল..

– দেখলে এটা কার ঘর।

– আপনার!

– নাহ ভূতের বাড়ি!

– তার চেয়ে কম কিছু না।

– কি বললে!

– কিছু না, কিন্তু আমি আপনার ঘরে কি করছি!

নির্ঝর তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে খাটে গিয়ে বসে। মেহেরিন ও তার পিছু পিছু যায়।

– রাতে আমি নিয়ে এসেছি।

– ঘুমের মধ্যে!

– আমার তো তাই মনে হচ্ছে!

– ওহ আচ্ছা তাহলে এতো ভালোবাসেন আমাকে!

মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে..
– না অনেক দিন তো তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিলাম এবার একটু কষ্ট দেবো বলে নিয়ে এলাম।

মেহেরিন নির্ঝরের গলা জরিয়ে বলল..
– ভুল করলেন!

– তাই নাকি!

– হুম, কারন কষ্ট এবার আমি পাবো না।

– ওহ আচ্ছা তাহলে তুমি আমায় কষ্ট দেবে!

– নাহ! ( পা দুটো উঁচু করে নির্ঝরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল ) অত্যাচার করবো!

নির্ঝর অবাক চোখে তাকাল। মেহেরিন হেসে বলল..

– আরে আরে পুড়িয়ে মারবো না তো। বলেছি অত্যাচার করবো। সেটা হলো ভালোবাসার অত্যাচার। পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন হলো ভালোবাসার অত্যাচার। কারন না আপনি এই অত্যাচার গ্রহন করতে পারবেন আর না বর্জন! এটার চেয়ে বড় অত্যাচার পৃথিবীতে আর কিছু নেই!

– তুমি আমার জ্বালে আমাকে ফাঁসাতে চাইছো!

– না আপনি অলরেডি ফেঁসে গেছেন।

– মানে!

তখনই বাইরে কলিং বেল’র আওয়াজ আসল। মেহেরিন হেসে বলল..
– নিন অত্যাচারের প্রথম ধাপ এসে পড়েছে। সামলান গিয়ে এটা!

বলেই মেহেরিন তাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। নির্ঝর নিচে নামল। অতঃপর দেখল একে একে ১২ জন বাড়িতে ঢুকছে। নির্ঝর, উষা চৌধুরী, তিশা আর আমান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ঠিক ১২ জন’র পর আরো একজন ঢুকল। এটা ডেভিল ছিল। নির্ঝরের বুঝতে বাকি নেই এগুলো সব আদুরীর প্ল্যান।

ডেভিল ঘরে এসে নির্ঝরের হাতে একটা পেপার দিল। নির্ঝর পড়ে দেখল এটাতে মেহেরিন’র গার্ড দেল পারমিশন আছে। মানে তাকে গার্ড নিয়ে চলার পারমিশন দেওয়া হয়েছে কিন্তু পারমিশন কেন দিলো। এর আগেই তো মেহেরিন গার্ড নিয়ে চলাফেরা করতো অতঃপর সে বুঝতে এটা তার জন্য’ই। যেনো সে ইচ্ছে করলেও গার্ডদের বের করে দিতে না পারে।

ডেভিল বলল…

– গার্ডদের লিডার আমি। এখানের ৬ জন বাড়ির কাজ করবে আর বাকি ৬ জন বাড়ির চারপাশে থাকবে। আর ম্যাম যখন যেখানে যাবে আমি তার সাথে যাবো।

– আমি বাড়ির গার্ড কি কম আছে নাকি!

– তাদের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে?

– কি? তোমার এতো সাহস কিভাবে হলো তুমি আমার বাড়ির গার্ডদের বরখাস্ত করো!

মেহেরিন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল..
– আমি বরখাস্ত করেছি তাদের। চৌধুরী বাড়ির বউ হিসেবে এটা তো আমি করেতেই পারি তাই না শাশুড়ি আম্মু!

উষা চৌধুরী মাথা নাড়লেন। নির্ঝর বিরক্ত হয়ে বলল..
– তাহলে সার্ভেন্ট পাঠালো কেন?

– ওটা তো বিয়ের যৌতুক হিসেবে আমার দি পাঠিয়েছে। আপনার বাড়ির সার্ভেন্ট রা তো কাজ করতে পারে না তাই আর কি রান্না বান্না, আপনার খেয়াল রাখা, আপনার পুরো পরিবারের খেয়াল রাখার জন্য দি গিফট দিল। এটা তো নিয়ম না। আগে ছিল যৌতুক আর এখন গিফট!

নির্ঝর রেগে ঘরে চলে এলো। ডেভিল সবাইকে তাদের নিজ নিজ কাজে যেতে বলল। মেহেরিন নির্ঝরের পিছু পিছু ঘরে এলো।

– তুমি কি ভাবলে এতো কিছু করলে আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না।

– না নির্ঝর আমি মোটেও এটা ভাবে নি। কারন আপনার উদ্দেশ্য যা আপনি তাই করবেন সেটা যেমন পরিস্থিতি হোক না কেন।

– তাহলে এসব কেন করলে!

– আমি কোথায় করলাম এসব তো দি দিলো। আর আপনিও ভাবুন আমি আপনার স্ত্রী, আপনি এতো বড় একজন সেলিব্রিটি! যদি সবাই জানতে পারে আপনি আপনার স্ত্রী কে দিয়ে বাড়ির কাজ করান তাহলে মানুষ কি বলবে বলেন।প্রেস মিডিয়া তাদের কাছে আপনার মান সম্মান তো একেবারে শেষ হয়ে যাবে।

নির্ঝর মেহেরিন’র দুই বাহু চেপে বলল..
– এই গেম তুমি জিততে পারবে না এখন যত’ই চেষ্টা করো না কেন।

মেহেরিন জবাবে হাসল।
.
বিকালে ডেভিল চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকটা জায়গায় সিসি টিভি লাগাল। শুধু নজর রাখার জন্য। আমান এসব দেখে নির্ঝর কে ফোন করে জানাল। নির্ঝর অফিসে নিজের কেবিনে ছিল। ফোনে এসব শুনে নির্ঝর হাসল। অতঃপর বলল..

– তুমি নিজের ফাঁদ নিজে খুড়ছো আদুরী!
.
মেহেরিন নিজের রুমে বসে তার আর নির্ঝরের বিয়ের ছবি দেখছে। খুব অদ্ভুত লাগছে, কোন একটা ছবি দেখে মনে হচ্ছে না তার আর নির্ঝরের ভালোবাসায় কোন কমতি আছে।

ডেভিল রুমে এসে নক করল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ডেভিলের হাতে খাবার। সে ভিতরে এসে মেহেরিন কে খাবার খেতে বলল। মেহেরিন তেমন একটা গুরুত্ব দিলো না। ডেভিল বলল..

– ম্যাম আপনি না খেলে ইহান স্যার যে খবর পাঠিয়েছি, সেটা আপনাকে আমি দিতে পারবো না।

– ব্লাকমেইল করছো নাকি।

– নিহা ম্যাম আমাকে বলেছেন। আমি শুধু সেই দায়িত্ব পালন করছি।

– এতো বিশ্বস্ত কেন তুমি ডেভিল। সবাই তোমার উপর ভরসা কেন করে বলে তো

– কারন আমি অধরা ম্যামের বিশ্বস্ত ছিলাম। তার জুনিয়র গার্ড হওয়া সত্ত্বেও তিনি খুব বিশ্বাস করতেন আমায়। তাই আপনার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন!

মেহেরিন খাবার মুখে দিল। অতঃপর বলল..
– কি বলেছে ইহান!

ডেভিল একটা ফাইল দিয়ে..
– এটাতে চৌধুরী কোম্পানির সব তথ্য আছে। আপনি যা যা জানতে চেয়েছিলেন সেই সব!

– গুড!

– হুম আপনি সব চেক করে আমাকে পরবর্তি কাজের কথা বলবেন।

– আচ্ছা। কিন্তু যাই বলো এবার লেজ কাটা ব্যাঙ কে এমন চমক দেবো না, রাগে হার্টফেল করবে।

ডেভিল এই কথা শুনে হেসে দিলো। মেহেরিন ও তার সাথে সাথে হেসে দিল। ডেভিল হাসি থামিয়ে মেহেরিন’র হাসি দিকে তাকিয়ে রইল।

– আপনাকে হাসতে দেখলে মনে হয় জেনো অধরা ম্যাম হাসছে। খুব মিল আপনাদের মাঝে।

– আই নো!
.
কয়েকদিন পর…

নির্ঝর অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে তখন হঠাৎ করেই মেহেরিন আসলো। সে এসে নির্ঝরের সামনে দাঁড়ালো অতঃপর তার গলায় টাই বাঁধতে লাগলো।

– কি ফাঁসি দিয়ে মারার প্ল্যান নাকি।

– আপনি জানেন আপনাকে আমি মারতে পারবো না তবুও বার বার এই কথা বলেন কেন? আচ্ছা আজ এতো তৈরি হচ্ছেন কেন কারন কি?

– মিটিং আছে, স্পেশাল ক্লাইন্টদের সাথে!

– ওহ্! তার মানে মিটিং ও স্পেশাল নাহ!

– হ্যাঁ তা তো বটেই! আচ্ছা আমার দেরি হচ্ছে।
বলেই নির্ঝর বের হতে নিবে নির্ঝর ওর টাই ধরে আটকালো। অতঃপর ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল..

– বেস্ট অফ লাক। আশা করি আপনার মিটিং আজ দারুন হবে।

নির্ঝর কিছু না বলে বের হয়ে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে হেসে বলে..
– আজ মিটিং এ যে কি হবে তা আপনার ধারনার বাইরে লেজ কাটা ব্যাঙ!
.
নির্ঝর মিটিং এ বসে আছে ধরতে গেলে সবাই উপস্থিত! নির্ঝরের সামনের সিট বরাবর আজকের আসন কিন্তু এখনো সে আসে নি। সবাই তার জন্য’ই ওয়েট করছে। কিন্তু নির্ঝর বুঝতে পারছে না কে আসবে আর না তাকে কেউ বলছে। শুধু সবাই বলছে স্পেশাল কেউ।

নির্ঝর ফোন টিপছে তখন তার কাছে মনে হলো মেহেরিন আসছে। সে সামনে তাকাল। তার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেল। হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। উঠে দাঁড়ালো সে। মেহেরিন আসছে। ব্লাক রঙের একটা জর্জেটের শাড়ি পড়া। ঠোঁটে ‌হালকা রঙের গোলাপি লিপস্টিক! চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া। চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে যা তার চলার পথে বার বার উড়ছে। ওর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মেহেরিন’র পিছন পিছন আসছে ডেভিল আরো একটা লোক। মনে হচ্ছে তার পিএ। কিন্তু মেহেরিন এখানে কেন?

মেহেরিন ভিতরে আসার সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন সেই আসনটার সামনে এসে দাঁড়াল। অতঃপর বলল..

– গাইস ইট’স মি মেহেরিন বর্ষা খান! খান কোম্পানির ওনার আর চৌধুরী কোম্পানির ফিফটি পার্সেন্ট ওনার। আই থিংক এখানকার সবাই আমাকে চিনেন। আর বেশি আর কিছু?

– নো ম্যাম। এভরিঅন নো খান’স।

– দেটস গুড। সো সিড ডাইন গাইস। আজকের মিটিং এর প্রেজেন্টেশন আমি দেখাবো আর আই থিংক সবার ভালো লাগবে সেটা।

– ম্যাম আপনার সাথে কাজ করতে পারবো এটাই আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে বড় সাফল্য। আপনি প্রেজেন্টেশন না দেখালেও আমরা এই ডিলটার জন্য রেডি।

– ইয়াপ মিসেস চৌধুরী! আমাদের খ্যাতি বিজনেস জগতে ছড়িয়ে আছে। বাট বাই দ্যা ওয়ে ইউ লুক সো প্রিটি!

– ইয়েস ম্যাম! এই প্রথম বার খান বাড়ির কোন মেয়েকে শাড়ি পড়তে দেখলাম তাও আপনাকে। ইউ লুক সো গর্জিয়াস!

মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর এক হাতে কলম দিয়ে টেবিলের নিচে শুধু সেটা ঘুরাচ্ছে। প্রথতমত তার রাগ কমানোর চেষ্টা এটা। মেহেরিন বলে উঠে..

– থ্যাংকু এভরিঅন! বাট আই নো আই’ম কিউট! তাহলে মিটিং শুরু করা যাক!

অতঃপর মিটিং শুরু হলো। মেহেরিন পর্দায় প্রেজেন্টেশন দেখাচ্ছে। নির্ঝর সবাইকে দেখছে কারো নজর প্রেজেন্টেশন এ না। সবাই নজর মেহেরিন’র দিকে। খুব হট লাগছে তাকে।‌ সবাই যে কি নজরে তাকে দেখছে নির্ঝরের চোখে সেটা আটকালো না। নির্ঝর পুরো রাগে লাল হয়ে গেছে।

মিটিং শেষ হলো, মেহেরিন’র প্রেজেন্টেশন এ সবাই বেশ খুশি। প্রেজেন্টেশন নির্ঝর ও এনেছিল কিন্তু সেটা আর সে উপস্থাপন করলো না। এখান কার সবাই জানতো মেহেরিন আসবে মিটিং এ কিন্তু শুধু সে নিজেই জানতো না। এটা যে ডেভিলের কাজ এটা তার বুঝতে বাকি নেই। কালকে ডিল সাইন হবে সবাই ঠিক করলো।

নির্ঝর এসে বাইরে দাঁড়াল। মেহেরিন বাইরে ক্লাইন্টের সাথে কথা বলছিল। এখানেও সে তার প্রশংসা করছে। নির্ঝর সব শুনতে পেয়ে তার কাছে গেল। ক্লাইন্টের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে মেহেরিন’র কোমর হাত দিয়ে ধরল। ক্লাইন্ট হেসে বলে..

– হিংসা হচ্ছে মিঃ চৌধুরী! সত্যি আপনার ওয়াইফ অনেক সুন্দরী!

– কি করবো বলেন, বেশি সুন্দর জিনিস নিজের না থাকলে আমার ভালো লাগে না। যেকোন মূল্যে সেটা নিজের করতে চাই আমি!
( শালা মেয়ে দেখলেই নজর দিতে ইচ্ছে করে। এখানে এসেছে টাংকি মারতে। চাপাবাজ একটা! আর মেহু পাখি টাও কি, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতো কথা শুনছে। ও কি বুঝতে চাইছে না লোকটা ভালো না। বুঝলেও বা কি বেশি সাহসী হলে যা হয় আর কি। বাসায় গিয়ে তোমার ব্যবস্থা আমি করছি আদুরী। )

মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। কতোটা ভালো অভিনেতা সে এটাই দেখছে। মেহেরিন নির্ঝরের হাতটা ছাড়িয়ে বলে..
– আমাকে যেতে হবে জান। আমি এখন বেরুবো।

– কিন্তু!

– চিন্তা করবেন না ডেভিল যাচ্ছে!

ক্লাইন্ট হেসে বলে..
– আরূ সুন্দরী বউ থাকলে এরকম চিন্তা তো করবেই মিসেস চৌধুরী!

মেহেরিন হেসে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।
.
মেহেরিন বের হবার পর নির্ঝর ও বের হলো। নির্ঝর মেহেরিন’র ফোনে ট্রেকিং ডিভাইস লাগিয়ে রেখেছে। নির্ঝর দেখল মেহেরিন তার আশেপাশে একটা ক্যাফে তেই আছে। নির্ঝর ক্যাফে তে না ঢুকে পিছন দরজা দিয়ে ক্যাফের মেইন রুমে গেল। ক্যাফেতে সিসি টিভি ক্যামেরা ছিল। নির্ঝর লোকদের টাকা দিল। অতঃপর সেই ক্যামেরায় মেহেরিন কে দেখতে লাগল।

মেহেরিন একজনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে। কিন্তু কে এটা! নির্ঝর একটু ভালো করে দেখল। এটা নিরব! ওকে দেখেই নির্ঝরের রাগ মাথায় উঠে গেল। নিরব মেহেরিন’র ঠোঁটে হাত দিয়ে ঠোঁটে লাগা কফিটা মুছে দিল। নির্ঝর এসব দেখেই রেগে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। ডেভিল নির্ঝর কে গাড়িতে উঠতে দেখে মেহেরিন কে ফোনে জানাল। মেহেরিন ব্লুটুথ’র মাধ্যমে সব শুনল। সব শুনে সে বাঁকা হেসে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।

ডেভিল গাড়ির দরজা খুললে মেহেরিন ভেতরে বসল। ডেভিল ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। অতঃপর বলে উঠে..

– স্যার এখানে আসবে আপনি জানতেন!

– ডেভিল! তোমার স্যার নিজেকে একটু বেশিই বুদ্ধিমান ভাবে বুঝলে।

– মানে!

– তোমার স্যার আমার ফোনে ট্রেকিং ডিভাইস লাগিয়ে রেখেছে। ভেবেছিল আমি জানতে পারবো না। কিন্তু সে ভুলে গেছে আমি কে? এসব জানা আমার জন্য কঠিন কিছু না!

ডেভিল শুনে হেসে দিয়ে বলল..
– আপনি সব জেনে শুনে তাকে রাগিয়ে তুলছেন।

– রেগে গেলে মানুষ সত্য কথা বলে। রাগ মানুষ কে সব কিছু ভুলিয়ে দেই। আমি দেখতে চাই সে কি ভুল করে কারন ওর ভুল আমার লাভ হবে।

– হুম ঠিক বলেছেন।

অতঃপর মেহেরিন সোজা বাসায় আসলো। বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখে নির্ঝর বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। টাই টা লুজ করা, মাথার চুল গুলো এলোমেলো। ঘেমে অস্থির!
মেহেরিন তার থেকে চোখ সরিয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।

নির্ঝর মেহেরিন’র পিছু পিছু উপড়ে গেল। মেহেরিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল টা খোঁপা করতে নিল ঠিক তখনই নির্ঝর এক হাত দিয়ে তার কোমর চেপে তাকে নিজের দিকে ঘুরাল। মেহেরিন চুল গুলো খুলে সব মুখের উপর পরল। নির্ঝর ওর চুল গুলো কানে গুঁজে দিলো।‌
মেহেরিষ তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।

হুট করেই নির্ঝর মেহেরিন’র আঁচল টেনে শাড়িটা ফেলে দিলো। মেহেরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর মেহেরিন’র কোমরে হাত দিয়ে পুরো শাড়ি টা একটানে খুলে ফেলল। নির্ঝর রেগে শাড়িটা হাতে মুঠ করে নিল।‌

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে..
– কি ব্যাপার রোমান্স করার মুডে আছেন নাকি!

– শাড়ি কে দিল তোমায়!

– ওহ এই ব্যাপার!

– কি জিজ্ঞেস করলাম?

– শাশুড়ি আম্মু কিনে দিয়েছে কেন?

নির্ঝর শাড়িটা ফেলে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– ক্লিন করতে দেবেন নাকি!

নির্ঝর সোজা আলমারির দিকে গেল। অতঃপর সব শাড়ি এনে মেঝেতে ফেলল। মেহেরিন চোখ ছোট ছোট করে দেখছে। নির্ঝর ড্রয়ার থেকে দেশলাই এনে শাড়ি গুলোতে আগুন ধরিয়ে। মেহেরিন চিৎকার করে বলে..

– আরে আরে কি করছেন? আমার এতো এতো এতো কিউট কিউট সুন্দর সুন্দর শাড়ি গুলো পুড়িয়ে ফেললেন! এ্যা এ্যা এটা কেন করলেন আপনি!

নির্ঝর মেহেরিন’র বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে বলল..

– এরপর যাতে তোমাকে আর শাড়ি পড়তে না দেখি আমি বুঝলে!

বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেল নির্ঝর। মেহেরিন হেসে হেসে বলল..

– আগুন যে কোথায় জ্বলছে আমি ঠিকই বুঝতে পারছি!
.
অতঃপর পরদিন মিটিং এ…

নির্ঝর হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। গাঢ় লাল রঙের একটা জর্জেটের শাড়ি, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল টানা। মুখের উপর চুল গুলো পড়ছে। তার ফর্সা শরীরে সব কিছু ফুটে উঠেছে!

নির্ঝর উপর থেকে চোখ আস্তে আস্তে কোমরের কাছে গেল। নির্ঝরের রাগে পুরো শরীর জ্বলছে। মেহেরিন’র কোমর দেখা যাচ্ছে। সে আজ একটু ভিন্ন ভাবে শাড়ি পড়েছে যার কারনে তার কোমর পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।

সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে, নির্ঝরের রাগ যেনো আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তারা। নির্ঝর কাউকে ফোনে একটা মেসেজ করলো। অতঃপর ঠোট দুটো ভিজিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে..

– গাইস মিটিং এ একটু ব্রেক নিচ্ছি। ১০ মিনিট পর মিটিং শুরু হবে।

মেহেরিন সহ সবাই অবাক হলো। একজন কিছু বলতে যাবে তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– ইট’স আর্জেন্ট গাইস প্লিজ!

অতঃপর সবাই বের হতে নিল। মেহেরিন বলে উঠে..

– আচ্ছা ডিল টাই তো শুধু সাইন হবে এতে ব্রেক নেবার কি আছে। কাজটা কি মিটিং এর পরে করা যাবে না।

নির্ঝর হেসে বলল…
– জান ১০ মিনিট ওকে, আপনারা প্লিজ!

অতঃপর সবাই বের হয়ে গেল। কিন্তু ডেভিল রুমেই ছিল।‌ নির্ঝর তাকেও বের হতে বলল। সে মেহেরিন’র দিকে তাকাতেই ডেভিল বের হলো। নির্ঝর রুমের দরজা লক করে মেহেরিন’র কাছে গেলো। মেহেরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে কিছু বলতে যাবে এর আগেই নির্ঝর মেহেরিন’র কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে তার ঠোঁট দুটো দখল করে নিল। মেহেরিন’র চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। সে নির্ঝর কে সারানোর জন্য হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে যাবে নির্ঝর ওর হাত টা চেপে ধরে পিছনে ঘুরিয়ে নিল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে আছে কারন নির্ঝর ওর ঠোঁটে রীতিমতো কামড় দিচ্ছে।

প্রায় কিছুক্ষণ পর নির্ঝর মেহেরিন কে ছেড়ে দিল। মেহেরিন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে যেত মনে হচ্ছে। নির্ঝর মেহেরিন’র ঠোঁটে হাত দিল।‌ ঠিক সেভাবেই যেভাবে নিরব হাত দিয়েছিল। নির্ঝর কাল কিছু না বললেও আজ যে তার সুদ নিচ্ছে সেটা সে বুঝতেই পারছে। মেহেরিন কিছু বলতে যাবে এর আগেই নির্ঝর আবারো ওর শাড়ি টেনে নিল। অতঃপর নিচে ফেলতে যাবে এর আগে মেহেরিন বলে উঠে..

– দেখুন এটা আমার টাকায় কেনা শাড়ি আপনার টাকায় না যে পুড়িয়ে ফেলবেন!

– না পুড়াবো না।
বলেই ডাস্টবিনে ফেলে দিল।

– এটা কি হলো?

– সেটাই যা তুমি চেয়েছিল! মানা করেছিলাম তো শাড়ি পড়তে না। তুমি ঠিক সেই শাড়ি’ই পড়লে আর পড়লে তো পড়লে তাও কোমর দেখিয়ে!

– আমার কোমর আপনার সমস্যা কি?

নির্ঝর মেহেরিন’র কোমর টেনে নিজের কাছে টানল। অতঃপর তার গাল দুটো চেপে বলল..
– কোমর তোমার না কার সেটা আমার দেখার বিষয় না। কিন্তু এটা মনে তুমি আমার এটাই যথেষ্ট! বুঝলে!

মেহেরিন নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..
– তো এখন কি এভাবে মিটিং করবো।

– বেশ হট লাগছে তোমাকে! আর সবচেয়ে বেশি তোমার ঠোঁটের সেই লাল রঙের লিপস্টিক!

– রাখুন আপনার আজাইরা কথা।

– এখন তো আজাইরা’ই লাগবে।‌ এটা তো আর ক্যাফে না আর না এখানে আমার জায়গায় যাকে আশা করেছিল সে আছে।

– আই ডোন্ট কেয়ার!

– তুমি সেটা করো বলে তো আমার মনে হয় না।
এর মাঝে রুমের দরজা কেউ নক করল। মেহেরিন রেগে এক সাইডে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর দরজা খুলে একটা প্যাকেট নিল। অতঃপর দরজা আবারো বন্ধ করে মেহেরিন’র কাছে আসল। তাকে প্যাকেট টা দিয়ে বলল..

– ওই যে ওইখানে ওয়াশরুম। দ্রত সেখানে গিয়ে চেঞ্জ করো আর হ্যাঁ মুখের এইসব ধুয়ে আসবে বুঝলে!

– পারবো না। কিছু করবো না। আমি এভাবেই থাকবো।

– আদুরী! এখানে বাসর করতে বাধ্য করো না ‌

মেহেরিন রেগে প্যাকেট টা নিয়ে চলে গেল।
.
কিছুক্ষণ পর..

মেহেরিন বাইরে এসে দেখল সবাই চলে এসেছে। নির্ঝর মিটিং শুরু ও করে দিয়েছে। সবাই মেহেরিন’র দিকে তাকাল। এটা কালো রঙের হুডি আর জিন্স পরা। আর হুডিটাও অনেকটা বড়।মেহেরিন’র কাছে বিরক্ত লাগছে আবার খুশিও লাগছে নির্ঝর কে জ্বালাতে পেরে। ডেভিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন বির বির করতে করতে নির্ঝরের দিকে তাকাল। একজন হেসে বলে উঠল..

– মিঃ চৌধুরী হয়তো মিসেস’র ড্রেসআপ পছন্দ করে নি।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here