Game 2 পর্ব -৩৯+৪০+৪১

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৯+40+41

মোমবাতির আগুনে মেহেরিন’র লেহেঙ্গা’য় আগুন ধরে যাচ্ছে। মেহেরিন এক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন তার কোমরের পিছন থেকে ছোট একটা ধারালো ছুরি বের করে লেহেঙ্গা’র আগুন লাগা অংশ কেটে ফেললো। অতঃপর দাঁড়িয়ে নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়াল। তার কপাল থেকে রক্ত পরছে।

নির্ঝর এক হাত দিয়ে তার গাল ধরতে যাবে মেহেরিন তখনি তার হাত ধরে ফেলল। নির্ঝর হেসে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..

– কেন করলেন এরকম?

– ভয় পেয়ে গেলে নাকি মেহু… না আদুরী!

মেহেরিন অনেকটা অবাক হলো। নির্ঝর আজ পর্যন্ত ওকে মেহু পাখি ছাড়া ডাকে নি আর আজ! মেহেরিন বলে উঠে…

– তার মানে আপনি আমাকে ঠকালেন?

– এটা বুঝতে তোমার এতো দিন লাগল!

– শুরু থেকে… শুরু থেকে সবটা মিথ্যে ছিল। আপনার ভালোবাসা, কেয়ার, আবেগ, অনুভুতি সব!

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। অতঃপর বলল..

– না এর মাঝে শুধু তোমার ভালোবাসা’টা সত্যি ছিল যা তুমি আমাকে বেসেছিলে!

নির্ঝরের হাতে হাত রেখে..
– এতো কিছু শুধু আমাকে মারার জন্য!

– না! শুধু মারার জন্য না। কষ্ট দিয়ে ধীরে ধীরে মারার জন্য!

মেহেরিন নির্ঝরের হাত টা ছাড়িয়ে দিয়ে..
– এতো ঘৃণা!

– ঘৃণা না আদুরী! অনেক ঘৃণা আমি প্রচন্ড ঘৃনা করি তোমায়। গত ১১ বছর ধরে তোমাকে ঘৃণা করছি। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলাম আমি। আমার সব কিছু আমি হারিয়েছি তোমার জন্য। সব কিছু শেষ করে দিলে তুমি আমার, সব কিছু। জানো এই ১১ বছর ধরে শুধু এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম আমি। আর দেখো আজ তা পেয়ে গেলাম।

মেহেরিন ছুরি টা নির্ঝরের হাতে দিয়ে..
– নিন তাহলে মেরে ফেলুন। নিজের প্রতিশোধ পূর্ণ করুন!

নির্ঝর জোরে জোরে হেসে বলল..
– কি বললাম তোমায় এতো সহজে আমি মারবো না তোমায়।

– কেন করলেন এরকম আমার সাথে।

– চিন্তা করো না। তোমাকে সব বলবো কিন্তু সেটা তোমাকে মারার আগে। কিভাবে তুমি আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলে সেদিন বলবো।
বলেই নির্ঝর যেতে নেয়। তখন মেহেরিন পিছন থেকে বলে উঠে…

– আর যদি এর আগে আমি আপনাকে মেরে ফেলি। কি ভাবছেন আপনি। এতো কিছুর পর আপনি এভাবে এভাবে বেঁচে যাবেন।

নির্ঝর এবার ও এক দফা হেসে বলে..
– ওও কামন আদুরী! আমার জান! আমি জানি তোমার দুর্বলতা আমি। তুমি আমাকে মারবে না আর তুমি কাউকে মারতে দিবেও না।

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– হাউ ফুল আই এম।

– রাগ হচ্ছে না নিজের উপর খুব। কিন্তু একটা কথা কি জানো তোমার এই রাগ কমবে না। কারন তুমি কাঁদতে জানো না। মানুষের রাগ হলে সে কাঁদে, অনেক কাঁদে তখন তার রাগ কমে যায় কিন্তু তোমার!

– তাহলে আপনি বলতে চান ‌আপনি নিজেও কাঁদেন নি কখনো!

– হুম কেঁদেছি কিন্তু একটা কথা কি জানো নিজের জীবন থেকে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটাই হারিয়ে যায় না তখন যত’ই কাঁদো না কেন সেই হারিয়ে ফেলা জিনিসটা আর ফেরত পাবে না। ঠিক তখন সেই রাগ টা প্রতিশোধ এ পরিনত হয়।

অতঃপর নির্ঝর একটা চেয়ার টেনে মেহেরিন’র সামনে বসে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে শুধু তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝর বলে উঠে..
– আদুরী! আচ্ছা তোমার কাছে মানুষের জীবনটা ঠিক গেইম’র মতো না। আর এই গেইমের উইনার সবসময় তুমিই হয়। আর গেইম এর হোস্ট ও তুমি। তো আজ এখন আমি তোমাকে নিয়ে একটা নতুন গেইম শুরু করলাম আর এই গেইমের হোস্ট আর উইনার দুইটাই আমি হবো। কথা দিলাম তোমায়!

মেহেরিন কিছুক্ষণ হাসল। অতঃপর বলল..

– গেইম! নির্ঝর আপনি জানেন আমার লাইফটা নিজেই একটা গেইম। আর এই গেমের প্রতিটা লেভেল অনেক অদ্ভুত আর কঠিন। আপনি বলছেন গেইম এখন শুরু কিন্তু আমি বলছি গেইম সেদিন শুরু হয়েছিল যেদিন আপনি প্রথম আমার জীবনে এসেছেন। গেইম অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। এমন একটা গেইম এর আগেও আমি খেলেছি। আজ আবার! কিন্তু আপনি চান আমাকে মারতে তাই তো! ( মেহেরিন নির্ঝরের চেয়ারের দুই হ্যান্ডেল ধরে নির্ঝরের দিকে ঝুঁকে বলে..)
– আর আমি বলছি এই গেইমে আমি আপনাকে বুঝিয়ে দেবো, আপনি আমাকে ঘৃণা করেন না আমাকে ভালোবাসেন!

– ইন ইউর ড্রিমস!

– স্বপ্ন কিন্তু সত্যি হয় নির্ঝর!

– তাহলে আর কি বের হয়ে যাবে নিশ্চয়ই এই বাড়ি থেকে!

– আমি জানি আপনি আমায় বের হতে দেবেন না। নিজের আসল রূপ টা এতোদিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। যখন আমি এই বাড়িতে এলাম আর আপনি আমাকে নিজের রূপ দেখালেন তার মানে আপনার লক্ষ্য ছিল যাতে আমি বাড়িতে আসি।

– তোমার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আমি কম পায়নি, তাই এখন আর অবাক হলাম না। কিন্তু এই গেইম এ যদি জিততে হয় তাহলে তোমায় এই বাড়িতেই থাকতে হবে আর তুমি যদি চলে যাও তাহলে নিজের ভীতু বলে স্বীকার করে হার মানবে।

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের কাছে যায়। অতঃপর তার গলা জরিয়ে ধরে বলে..
– আপনার মতলব কি বলুন তো! যেকোনো মূল্যে শুধু আমাকে নিজের কাছে রাখতে চান দেখছি। কি ভালোবেসে ফেললেন নাকি।

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত সরিয়ে দিয়ে..
– এটা সম্ভব না।

– কিন্তু আপনার চোখ আমাকে অন্য কিছু বলছে।

– চোখ সেটাই বলছে যেটা তুমি দেখতে চাও। এটা তোমার ভ্রম ছাড়া আর কিছু না।

– যদি সত্যি হয় তখন।

নির্ঝর মেহেরিন’র পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। মেহেরিন বলে..
– সাবধান নির্ঝর,‌বেশি ঘৃণা করতে যাবেন না তাহলে ভুল করে ভালোবেসে ফেলবেন। আমার দা বলতো আদুরী খুব কিউট তাই কেউ কখনো তার উপর রেগে থাকতে পারে না। আর এটা কিভাবে বাস্তব!

নির্ঝর মাথা নাড়িয়ে না বলে চলে যায়। মেহেরিন এবার তার বাসর ঘরের দিকে তাকায়। না অনেকটা সুন্দর করেই সাজানো সব। মেহেরিন বলে উঠে…

– ঠিক আছে আমার বাসর ঘর! আজ শেষ বার তোমাকে দেখে নি। এর পর আর দেখবো কি না জানি না!

কিছুক্ষণ রুমের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর রুমের লাইট অন করলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের কপালের কাটা জায়গা দেখতে লাগল। বলল..

– হায়রে আদুরী! তোর ভাগ্যের দেখ কি পরিহাস! বাসর রাতে সবাই তার বউ কে কতো কিছু গিফট করে। চুড়ি, কানের দুল, আন্টি আরো কতো কিছু। আর তুই.. তোর ভাগ্যে একটা চকলেট ও জুটল না। লেজ কাটা ব্যাঙ তোকে এমন একটা গিফট দিল যা তোর ভবিষ্যৎ বদলে দিলো। হায়রে ভালোবাসা! আর বলি মেহেরিন! আর কাউকে ভালোবাসতে পারলি না। এই লেজ কাটা ব্যাঙ টা কেই তোর ভালোবাসতে হলো। আজব! দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব ছিল নাকি।

অতঃপর এমন ভাবে বিড় বিড় করতে করতে পাশে তাকাল। দেখল নির্ঝর কপাল কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে মেহেরিন কি পাগল হলো নাকি যে এমন আবোল তাবোল বলছে।

নির্ঝর ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে‌ খাটে এসে বসল। মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি দিয়ে নিজের লাগেজ থেকে একটা হুডি আর জিন্স বের করলো। অতঃপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। এর মাঝেই নির্ঝর অন্যরুম থেকে চেঞ্জ হয়ে আসল। মেহেরিন এসেই ধপাস করে খাটে শুয়ে পরল। বেশ ক্লান্ত সে। তারমধ্যে রাতের এমন একটা সিচুয়েশন আরো অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। খাটের দিকে এবার ভালো করে তাকাল।

একটু আগেই ফুল দিয়ে সাজানো ছিল কিন্তু এখন কিছু নেই। সবকিছু নিচে ছড়িয়ে আছে। কাজটা নির্ঝরের! নির্ঝর খাটের এক পাশে ল্যাপটব নিয়ে বসল। মেহেরিন তার পুতুল পান্ডা কে সাথে করেই এনেছিল। তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল। নির্ঝরের সাথে কোন কথা বলল না। নির্ঝর অনেকটা অবাক হয়ে গেছে। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন রীতিমতো তখন ঘুমে বিভোর। অনেকটা শান্ত সে! মনে হচ্ছে যেনো কিছুই হয় নি। নির্ঝর তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। হঠাৎ কপালের কাটা জায়গা টা চোখে পরল। রক্ত জমে আছে! নির্ঝর জানে মেহেরিন আলসেমি করবে, কখনো ঔষধ লাগাবে না সেখানে।

নির্ঝর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ফার্স্ট এইড বক্স টা নিয়ে ওর কপালের জায়গায় ঔষধ লাগালো অতঃপর ব্যান্ডেজ করে দিল। মেহেরিন জাগল না। নির্ঝর কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে তাকে দেখতে লাগল। মেহেরিন’র মাথায় হাত দিতে যাবে তখন হাত সরিয়ে ফেলল। মেহেরিন’র সামনে নিজেকে দুর্বল করা যাবে না। তাহলে তার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে না। নির্ঝর উঠে তার রকিং চেয়ার’এ এসে বসল। চোখ বন্ধ করে মাথা কিছু স্মৃতি মনে করল। অতঃপর সেখানেই ঘুমিয়ে পরল!
.
সকাল বেলা নির্ঝরের ঘুম’ই আগে ভাঙল। মেহেরিন এখনো ঘুমাচ্ছে। নির্ঝর ‌ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। আজ তাদের বৌ ভাত আছে। আদুরী কে নিয়ে যাবে অভ্র! আচ্ছা আদুরী কি তাদের সব কিছু বলে দেবে। বলে দিলেই বা কি এতে আমার কিছু যায় আসে না। কারন আমার কাজ হয়ে গেছে! আদুরী এখন আমার বউ এটাই যথেষ্ট। সময় নিজ গতিতেই এর ফল দেখাব!

নির্ঝর তার সার্ভেন্ট দের অনুষ্ঠানের জোগাড় করতে বলল। তখন নিহা, আহিয়ান ওরা সবাই এলো। নির্ঝর তাদের দেখে হাসিমুখেই বলল..
– ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। তোমার নাস্তা করে নাও আমি তাদের আনতে গেলাম!

– আদুরী কোথায়?

– রুমে আছে, ঘুমাচ্ছে এখনো। আমি গেলাম!

বলেই নির্ঝর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। নিহা মেহেরিন’র রুমে গেল। পুতুল পান্ডা টাকে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ঘরের অবস্থা দেখে কিছুটা অবাক হলো কিন্তু হুট করেই কিছু ভাবতে পারছে না। নিহা এসে খাটের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে মেহেরিন কে ডাকতে লাগল। তখন তার কপালের ব্যান্ডেজ তার চোখে পরল। নিহা এবার চমকে উঠলো। মেহেরিন টেনে তুলে জিজ্ঞেস করল..

– তোর কপালে এই আঘাত কিসের?

মেহেরিন চোখ ঢলতে ঢলতে..
– কোন আঘাত!

– এই যে ব্যান্ডেজ করা!

মেহেরিন অবাক হয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখল আসলেই ব্যান্ডেজ করা কিন্তু এটা করল কে নির্ঝর! দি কে কি বলে দেবো সব! না এখন আর বলবো না আমি আগে জেনে নিই এর কারনটা কি তখন বলবো।

নিহা বলে উঠে..
– এতো কি ভাবছিস!

– আসলে দি কাল পা পিছলে পড়ে গেছিলাম তখন! আচ্ছা বাদ দাও উনি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। কিন্তু উনি কোথাও?

– তোর শাশুড়ি কে আনতে গেছে! এখন উঠে জলদি করে একটা শাড়ি পড়ে নে। শাশুড়ি’কে দেখাতে হবে তো।

– এগুলো আমার দ্বারা হবে না সরি। আমি ঘুমালাম!
বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। নিহা মেহেরিন কে টেনে তুলল। অতঃপর কোনমতে তাকে শাড়ি পরাল আর কিভাবে পরতে শিখিয়ে দিল। মেহেরিন বুঝল আর না বুঝল কিন্তু শুধু মাথা নাড়ল।

মেহেরিন’র শাশুড়ি উষা চৌধুরী আর বোন তিশা চৌধুরী এসে পরল। তার সাথে নির্ঝরের বেস্ট ফ্রেন্ড আমান ও এলো। মেহেরিন সবার সাথে পরিচিত হলো। কিন্তু তখনো কেউ নির্ঝর আর মেহেরিন’র মাঝে কাল রাতের কোন ঘটনা সম্পর্কে জানে না। উষা চৌধুরী মেহেরিন কে দেখে অনেক খুশি হলো। একটা সবুজ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে তাকে। বেশ লাগছে দেখতে তবে নির্ঝর একবার ভালো ভাবে তাকে দেখল না। তিশা’র সাথে মেহেরিন’র বেশ ভাব জমে গেলো। আমানের সাথেও কথা হলো তবে বেশি না।

নির্ঝর তার মাকে রুমে নিয়ে গেল। উষা চৌধুরী বলে উঠে..
– তুমি শেষে খান বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করলে!

– মা তুমি তো..

– কথা শেষ করতে দাও আমায়!

নির্ঝর মাথা নিচু করে দাঁড়াল। উষা চৌধুরী বলে..
– তুমি কি ভুলে গেলে খান রা আমাদের সাথে কি কি করেছিলো। এতো ছোট ছিলে না তুমি যে সব ভুলে যাবে। সব’ই জানতে তুমি তাই না।

– মা আমি আদুরী কে শুধু প্রতিশোধ নেবার জন্য বিয়ে করেছি।

– আমি মানা করেছিলাম এসব করতে।

– এইতো তুমি বললে মা ওরা আমাদের সাথে করেছে সেটা যাতে ভুলে না যাই। আর আমি ভুলি নি। তাই তো প্রতিশোধ নিতে এসেছি!

– এর ফল কি হবে তুমি কি সেটা জানো। তোমার বোন আছে এটা কি ভুলে গেছো!

– না মা সব মনে আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি যা করবো সব ভেবে চিন্তে করবো। তিশা’র কিছু হবে না।

– শুধুই কি তিশা!

– তোমাদের কারোই কিছু হবে না। অনেক জার্নি করে এসেছো। রেস্ট নাও আমি আসছি!
বলেই নির্ঝর চলে গেলো। উষা চৌধুরী বলেন..

– এর ফল খুব ভয়ানক হবে নির্ঝর! তুমি ঠিক করছো না এসব!
.
বিকালে বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শুরু হলো। খান বাড়ি থেকে মেহমান আসল। ক্যাট আর নীলাশা রয়ে গেলো। ক্যাট’র শরীর বেশ একটা ভালো না তাই সে যেতে পারে নি। এদিকে রাইয়ান ও অসুস্থ তাই নীলাশা রয়ে গেলো। তাদের দুজনকে দেখে রাখতে নীল আর কাব্য সেখানেই রয়ে গেল। শুধু অভ্র, আনহা, নিশি আর নিশান’ই এলো অনুষ্ঠানে।

মেহেরিন কে একটা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। এর উপর গোল্ডেন রঙের কারুকাজ! নির্ঝর ও সেম রঙের শেরোয়ানি পরেছে। দুজনকেই স্টেজে বসানো হলো।মেহেরিন ফিসফিসিয়ে নির্ঝর কে বলল..

– আপনি যে আমাকে ঠেকাচ্ছেন আপনার ফ্যামিলি কি এটা জানে!

নির্ঝর শান্তি গলায় বলল..
– যেমন তোমার ফ্যামিলি ঠিক তেমনি আমার ফ্যামিলি।

– 😒। লেজ কাটা ব্যাঙ একটা। আগে কতো রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলতো আর এখন আমার দিকেই তাকায় না।

নির্ঝর মুখে কিছু বলল না। মনে মনে বলল..
– তোমার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না। আমাকে আমার লক্ষ্য পূরণ করতে হবে!

এর মাঝেই তিশা এসে হাজির সেলফি তুলবে। মেহেরিন ও তার সাথে জুড়ে গেল‌‌। দুজনেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। ইহান দূর থেকে দেখছে তিশা কে। ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।

অভ্র ওদের সবাইকে দেখে মেহেরিন ছুটে অভ্র’র কাছে গেল। জরিয়ে ধরল তাকে। অভ্র তার মাথায় চুমু খেতে গিয়ে কপালের আঘাত দেখল। অতঃপর নিহা সবটা বলল।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নির্ঝর উষা চৌধুরী নিয়ে এলো সবার সাথে পরিচয় করানোর জন্য। অভ্র উষা চৌধুরী কে দেখে চমকে উঠলো। কিন্তু আবছা আবছা স্মৃতি তার মনে পড়তে লাগলো। কোথায় জেনো দেখেছে তাকে। কিন্তু কোথায়? মনে পড়ছে না কেন? অভ্র ভাবার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না।

অনুষ্ঠানের শেষে অভ্র নির্ঝর আর মেহেরিন কে সাথে করে সবাইকে নিয়ে খান বাড়িতে চলে এলো। তিশা ও খুব জেদ করছিল আসার কিন্তু নির্ঝর তাকে না বলে দিল। তাকে মা’র খেয়াল রাখতে বলল!

#চলবে….#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪০_ও_৪১

[ ৪০ ]

মেহেরিন আর নির্ঝর খান বাড়িতে এসে পড়ে। সত্যি টা এখন অবদি কেউই জানে না! কিছুদিন তারা দুজনেই থাকে খান বাড়িতে। কিন্তু নির্ঝর একবারের জন্যও মেহেরিন’র সাথে ভালো মতো কথা বলে না। মেহেরিন চেষ্টা করে তবে সে বার বার ব্যর্থ হয়। অতঃপর তারা আবার চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। তাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। মেহেরিন বাড়িতে এসেই উষা চৌধুরী কে জরিয়ে ধরে বলে..

– শাশুড়ি আম্মু আমি চলে এসেছি!

– মেহেরিন, তুমি কি আমাকে শাশুড়ি আম্মু বলেই ডাকবে। মা বলবে না!

– না গো শাশুড়ি আম্মু তোমাকেই এই নামেই বেশি মানায়। আমার ননদিনী কোথায়?

– আমি এখানে!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে তিশা আর আমান সিঁড়ি দিয়ে নামছে। তিশা তাকে দেখেই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে।

– বাহ দেবরজী ও আছে দেখছি!

অতঃপর আমান এসেও কুশল বিনিময় করে। নির্ঝর কোনে দাঁড়িয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে কিন্তু কিছু বলছে না। মেহেরিন কথা বলেই উপরে চলে যায়। নির্ঝর তার মা’কে এসে জরিয়ে ধরে। অতঃপর তিশা আর আমানের সাথেও কথা বলে। তিশা আর আমান চলে যায়। তখন উষা চৌধুরী বলে উঠে..

– মেহেরিন মেয়েটা খুব ভালো নাহ রে!

– মা! ওর এই ইনোসেন্ট ফেস দেখে পটে যেও না। ও মেহেরিন বর্ষা খান, অধরা খানের মেয়ে! এতো সহজে সবকিছু ঠান্ডা হবে বলে মনে করো না।

– নির্ঝর শোন! যখন এতো কিছু হয়েছে তখন ও নিতান্তই ছোট ছিলো।

– ছোট ছিল বলে ভুল করেছে এটা বলতে চাও।‌ভুলে যেও না ওর প্রতিটা পদক্ষেপ তখন ও প্ল্যান মোতাবেক ছিল আর আজ ও আছে! যা করে ফল ভেবেই করে!

উষা চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যার মানে উনি নির্ঝর কে বোঝাতে পারে নি। নির্ঝর কথা বলা শেষ করে উপরে চলে আসে।

মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে সবে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। নির্ঝর দরজা লক করে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে…

– আমার ফ্যামিলির সাথে এতো ভালো ব্যবহার কেন করছো তুমি! প্ল্যান কি তোমার!

মেহেরিন নির্ঝরের কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ ফোন টিপতে থাকে। নির্ঝর খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আবার বলে..
– কি হলো কথা বলছো না যে!

এতেও মেহেরিন’র কোন ভাবান্তর নেই। সে নির্ঝর কে পাশ কাটিয়ে সোফায় বসতে নিবে তখন’ই নির্ঝর রেগে তার বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। মেহেরিন এখন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখছে। নির্ঝর আবারো বলে উঠে..

– কি এতো ভাবছো! আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার। কি জিজ্ঞেস করছি আমি, শুনতে পারছো তুমি!

মেহেরিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহেরিন’র দিকে। খুব শান্ত ভাবেই তাকিয়ে আছে সে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। কিছু বলছে না কেন মেহেরিন। এর কারন কি? এমন শান্ত কেন সে?

অতঃপর নির্ঝর আরো কিছুক্ষণ বকবক করতে থাকে তবুও মেহেরিন’র মুখ দিয়ে একটা কথাও আসে না। হঠাৎ মেহেরিন ঘড়ির দিকে তাকায়। মেহেরিন’র দেখাদেখি নির্ঝর ও ঘড়ির দিকে তাকায়। অতঃপর সামনে ঘুরতেই মেহেরিন নির্ঝরের ঠোঁটে একটা কিস করে। নির্ঝর থতমত খেয়ে মেহেরিন কে ছেড়ে দেয়।

অতঃপর মেহেরিন হেসে নির্ঝরের গলা জরিয়ে ধরে। নির্ঝর বলে উঠে..

– পাগল হলে নাকি তুমি!

– না পাগল কেন হবো জামাই জান! গত কয়েকদিন ধরে আপনি আমার সাথে যা করলেন আজ ও আমি ঠিক তাই করলাম।

– মানে!

– এটাই যে, গত কয়েকদিন ধরে আপনি আমার কথা বলছেন না। কিন্তু জিজ্ঞেস করি তো পাঁচ মিনিট পর উওর দেন। তাই আমিও আজ সেটাই করলাম। দেখলেন তো দেরি করে উওর দিলে কেমন লাগে। তবে হ্যাঁ কিস তো আপনি করেন আমি করলাম এর কারন হলো খুশি। আসলে খুশিতে আমি একটু সেলিব্রেশন করতে চেয়েছিলাম।

– কিসের খুশি!

– আপনাকে কেন বলবো। আচ্ছা বাদ দিন এসব কি জানি বলছিলেন?

– ফ্যামিলি..

– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে আপনার ফ্যামিলি নিয়ে কিছু বলছিলেন! আসলে আপনি আমার ফ্যামিলির সাথেপ ভালো ব্যবহার করেন তো তাই আমিও করলাম। আর সবচেয়ে বড় কথা এটাই যে মেহেরিন বর্ষা খান কখনো পেছন থেকে ছুরি না। এটা তার শত্রুদের কাজ মানে আপনার!

– আদুরী..

– উফ ভালোই লাগে এই নামটা শুনতে। আচ্ছা শুনুন এখন আমার টাইটেল চৌধুরী হয়ে যাবে নাহ! তাহলে পুরো নাম কি হবে মেহেরিন বর্ষা খান নির্ঝর চৌধুরী! বাহ ভালো কিন্তু নামটা।

মেহেরিন’র হাত ছাড়িয়ে..
– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!

– ভয় যে পাচ্ছেন বুঝতে পেরেছি। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম আমার প্রশ্নের উত্তর দেরি করলে ফল কিন্তু ভালো হবে না। এখন উওর ভালো আসুক কি মন্দ আই ডোন্ট কেয়ার টাঠা!

বলেই মেহেরিন ঘুমিয়ে পরল। নির্ঝর রাগে আর কোন কথা বলতে পারল না।

এদিকে অভ্র শুধু উষা চৌধুরী’র কথা ভাবছে। কোথাও না কোথাও তাকে সে দেখেছিল। কিন্তু কোথাও সেটা মনে করতে পারছে না। বার বার চেষ্টা করছে কিন্তু তখন শুধু উষা চৌধুরী’র চেহারা ভেসে উঠছে। কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল সে! কিন্তু বার বার এমন আবছা আবছা দেখার মানে কি?

সকালে..

নির্ঝর এক গ্লাস পানি মেহেরিন’র মুখে ফেলল। সে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। নির্ঝর তার দিকে একটা কিচেন অ্যাপ্রন ছুঁড়ে দিয়ে বলল…

– জলদি গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাও আমি নাস্তা খেয়ে অফিস যাবো। এরপর আমার একটা গানের রেকর্ডিং ও আছে!.

মেহেরিন কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে অতঃপর ঘড়ি দেখল। ৭.২০ বাজে এখন। মেহেরিন বলে উঠে..
– এতো সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট কিন্তু আমি তো রাঁধতে পারি না। কি করবো?

– আমি কি করে জানবো কি করবে। আমার নামের টাইটেল নিয়ে ঘুরো এর মানে নিজেকে আমার বউ হিসেবে দাবি করো। তো বউয়ের কাজ কি রান্না বান্না করা তাই না।

– এইজন্য কি বাড়ির সব সার্ভেন্ট দের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন!

– তারা থাকলেও তোমার হেল্প করবে না। জলদি যাও বলছি!

মেহেরিন আর কথা বাড়ালো না। উঠে চেঞ্জ করে নিল। জামা কাপড় সব ভিজে গেছে। চেঞ্জ করে একটা জ্যাকেট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরল। মেহেরিন শেষ বার শুধু সেই বৌ ভাতের অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়েছিল। এরপর আর পড়েনি।

অতঃপর নিচে চলে এলো নাস্তা বানাতে। সার্ভেন্ট’রা নিচে কাজ করছে। কেউ সোফা ঘর পরিষ্কার করছে কেউ খাবার টেবিল সাজাচ্ছে কিন্তু রান্না ঘরে কেউ নেই। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে রান্না ঘরে এলো। কি বানাবে সে আজ পর্যন্ত রান্না ঘরের কোন কাজ’ই করে নি সে। সার্ভেন্ট দের জিজ্ঞেস করলে বলে গেল “স্যার আপনাকে কিছু বলতে না করেছে”!

মেহেরিন একটা হাসি দিল তবে এই হাসিটা উপহাস করে হাসল। অতঃপর কিছুক্ষণ ভেবে পাউরুটি তে মাখন লাগিয়ে টেবিলে রাখল। অতঃপর ভাবল একটা ডিম অমলেট করবে। কিন্তু তেলের ফুটে উঠা দেখলেই সে শেষ।না থাক এতোটুকু যথেষ্ট! এর বেশি আর কিছু লাগবে না। অতঃপর ফ্রিজ থেকে জুস বের করে গ্লাসে ঢেলে টেবিলে সাজিয়ে রাখল। অতঃপর নির্ঝর নিচে এলো।

খাবার টেবিলে বসে পাউরুটি আর জুস দেখে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল…

– তুমি শুধু এগুলোই করলে!

– আর কি করবো! কিছু পারি না আমি!

– তা পারবে কেন?
বলেই নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন বলে উঠে..
– খাবেন না!

– না অফিসে গিয়েই খেয়ে নিব।
বলেই নির্ঝর চলে গেল।

মেহেরিন কিছুক্ষণ তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। অতঃপর মুখ ভেংচি দিয়ে টেবিলে বসে নিজেই খেয়ে খেয়ে নিল। তার ও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে। খাওয়া দাওয়ার পর প্রায় ২ ঘন্টা টেবিলে বসেই ঘুমাল। ঘুম ভাঙল শাশুড়ি আম্মু’র ডাকে।

– এখানে কেন ঘুমিয়ে আছো মেহেরিন!

– শাশুড়ি আম্মু তুমি!
অতঃপর মেহেরিন সব বলল।

– ও আসলে সকালে । আচ্ছা তুমি বরং ওর জন্য লাঞ্চ নিয়ে যাও। তাহলে দেখবে ওর ভালো লাগবে ‌

– আমি রাঁধতে পারি না শাশুড়ি আম্মু।

– আচ্ছা আমি শিখিয়ে দিচ্ছি আসো!
অতঃপর শাশুড়ি আম্মু’ই পুরো রান্নাটা করল। মেহেরিন সব দেখল কিন্তু তার মাথায় কিছু ঢুকেছে বলে তার মনে হচ্ছে না। শাশুড়ি আম্মু হেসে বলে..

– আচ্ছা তুমি বরং এই খাবার টা নিয়ে ওকে দিয়ে আসো আর বলো তুমি রেঁধেছো!

– না আমি বলবো আপনিই রেঁধেছেন। মিথ্যে বলার দরকার নেই!
( আমি রান্না করেছি জানলে খাবেই না)

অতঃপর মেহেরিন লাঞ্চ প্যাক করে নির্ঝরের অফিসে রওনা হলো!
.
নির্ঝর অফিসে নিজের ক্যাবিনে ছিল। তখন কথা আসে তার সাথে দেখা করতে। দুজনেই পুরোনো বন্ধু তাই প্রায় অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়।

– সরি রে শুটিং’র কারনে তোর বিয়েতে আসতে পারি নি।

– ইটস ওকে! বাদ দে!

বলেই ল্যাপটপে চোখ পরল, সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখল মেহেরিন অফিসে ঢুকছে! নির্ঝর বাঁকা হাসল!

মেহেরিন নির্ঝরের কেবিনের দিকে আগাল। রিসেপশন থেকে জেনেছি এসেছে সে রুমে আছে। তাই মেহেরিন আর নক করল না। সোজা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। মেহেরিন চোখ ছোট ছোট করে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর কথার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন জানে এসব তাকে দেখানোর জন্য। তাই সে কোন ভ্রুপ না করে খাবার বক্স টা টেবিলে রেখে বলল..

– শাশুড়ি আম্মু আপনার জন্য রেঁধে পাঠিয়েছেন। খেয়ে নিবেন আর কথা আপু তুমিও খেয়ে নিও উনার সাথে!

– না মেহেরিন আমি এখন চলে যাবো। তোমরা থাকো দুজন!

নির্ঝর কথার’হাত শক্ত করে ধরে বলে…
– না তুই থাক তোর সাথে আমার কথা আছে। মেহেরিন তুমি চলে গেলে যাও।

– টাঠা কথা আপু!
বলেই মেহেরিন বেরিয়ে গেল। কথা বলে উঠে..
– কিরে তুই এমন করলি কেন?

– পরে বলছি আগে খেয়ে নে!

– কিন্তু!

– তোকে আমি পরে সব বলবো। এখন বরং তুই খেয়ে নে!
বলেই নির্ঝর বসল। তখন হুট করেই ম্যানেজার এসে বলল..

– স্যার স্যার!

– কি হয়েছে! এতো খাবড়ে আছো কেন?

– স্যার! ম্যাম আমাদের একজন স্টাফ এর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে?

– কিহহ!

– জ্বি স্যার! স্টাফ টা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর ম্যাম চলে গেছে গাড়ি নিয়ে!

– অ্যাম্বুলেন্স কল করেছো!

– জ্বি স্যার আসছে?

নির্ঝর আর না দাঁড়িয়ে ছুটে নিচে গেল। আসলেই স্টাফটার অবস্থা খারাপ। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সে। মনে হচ্ছে কোন কিছু দিয়ে খুব জোরে মাথায় মেরেছে। মেহেরিন তার রাগ যে এই লোকের উপর ঝেড়েছে এতে তার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। কথা ও এটা বুঝতে পেরে বলে..

– দেখলি তো রাগিয়ে দিলি ওকে!

নির্ঝর কিছু বললো না। স্টাফ কে দ্রুত হসপিটালে নেবার ব্যবস্থা করল। অতঃপর কেবিনে গিয়ে বসে পরল। কথা এসে বলল..

– দেখ মেহেরিন একা ইচ্ছে করে নি। নিশ্চিত কোন ঘাপলা আছে এর মধ্যে!

– ওয়েট!
বলেই নির্ঝর ম্যানেজার কে ডাকল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো মেহেরিন কেন এমনটা করল। ম্যানেজার বলল..

– আসলে স্যার এই স্টাফ একটা মেয়েকে বিরক্ত করছিল। আর এক পর্যায়ে তার হাত ধরল। তখনই ম্যাম রেগে ওর মাথা ফাটিয়ে দিল।

– কিহহ? এমন লোককে অফিসে রাখো কেন?

– সরি স্যার! ওকে আগে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তবুও আবার এই কাজ করল।

– সুস্থ হওয়া মাত্র চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে মাইন্ড ইট। আমার অফিসে এমন লোকের জায়গা নেই।

– ইয়েস স্যার!

– যেতে পারো এখন!

অতঃপর সে চলে গেলো। নির্ঝর চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে বসল। কথা এসে ওর মাথায় হাত রাখল। নির্ঝর চোখ মেলে তাকাল। কথা বলল..

– বললাম তো তোকে মেহেরিন যখন করেছে তখন নিশ্চিত কারন আছে। ও এভাবে এভাবে এমন কিছু করে না। তুই বরং ওর কাছে যা। রেগে আছে ও।

– হুম যাবো। তুই কি এখন চলে যাবি।

– হুম আমার শুট আছে। যেতে হবে, ভালো থাকিস।

– সাবধানে যাস।

অতঃপর কথা চলে গেলো। নির্ঝর সেখানেই বসে রইল!
.
মেহেরিন বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে গেল। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। স্টাফ টার মাথা ফাটিয়ে রাগ তেমন একটা কমলো না। মেহেরিন একটা শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুই ভালো লাগছে না তার। নির্ঝর কি সত্যি’ই তাকে ভালোবাসে না নাকি কথার সাথে সব দেখানোর জন্য করল। কিছুই ভাবতে চায় না সে। ভাবলেই মাথা ব্যাথা করে!

কিছুদিন পর…

নির্ঝর আজ কিছু একটা ভেবে রোদ্দুর,আরিশা,কাব্য, ক্যাট আর ইহান কে দাওয়াত করল আর তার সমস্ত দায়িত্ব দিলো মেহেরিন কে। তার সাথে একগাদা কথা শোনাল। মেহেরিন জানে নির্ঝর কি বলবে সেই এক কথা রান্না বান্না করো। বউদের কাছ এটা। অসহ্য! যা পারে না সেটা বলার কি দরকার। মেহেরিন শুধু শুনল আজ রোদ্দুর,ইহান, কাব্য ওরা সবাই আসবে। সব দায়িত্ব তাকেই করতে হবে। এরপর আরো কিছু বললো কিন্তু মেহেরিন সেটা শুনল না। কানে ব্লুটুথ গুঁজে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। আর নির্ঝর ও বক বক করে গেল। বেশ লেগেছে এভাবে তাকে বোকা বানাতে।

মেহেরিন সকাল থেকেই রান্না শুরু করল। আজ অফ ডে। তাই নির্ঝর ও বাসায় থাকবে। উষা চৌধুরী একবার এসে মেহেরিন কে সবকিছু বলে দেবে ভেবেছিল কিন্তু নির্ঝর তাকে বের করে দিল। অতঃপর বসে পরল ডয়িং রুমে যেখান থেকে রান্না ঘর ভালোই দেখা যায়। নজর রাখবে তাকে এখান থেকে‌। মেহেরিন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। ম্যাগাজিন পড়ছে আবার একটু পর পর তার দিকে তাকাচ্ছে। মেহেরিন কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল…

– এভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন রান্না শুরু করো। কিছুক্ষণ পর’ই তো ওরা এসে পড়বে।

– তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে জানেন না নাকি। তা জানবেন কি করে শুধু জানবেন কিভাবে আমাকে ঘাটানো যায়।

– কথা বন্ধ করে কাজ শুরু করো। যেভাবে তোমার মুখ চলে সেভাবে কাজ করলে মনে হয় অনেক লাভ হতো।

– হেই ওয়েট! মেহেরিন বর্ষা খান কোন অবলা নারী না বুঝলেন আর না খান রা আপনার মতো গরীব। ওদের বাসায় সার্ভেন্ট থাকে আর রান্না তারাই করে। আপনার মতো কিপ্টা না বুঝলেন।

– যাই বলো না কেন রান্না তোমাকেই করতে হবে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে ফোন বের করলো। ভিডিও দেখেই আজ রানা করবে সে! অতঃপর…

#চলবে….

[ ৪১ ]

মেহেরিন ফোন বের ভিডিও অন করলো। আজকের রেসেপি হলো মুরগির গোশত আর গরুর গোশত ভুনা আর সাদা ভাত। ব্যস এর বেশি না তার পক্ষে সম্ভব আর না সে পারবে। মেহেরিন চাল নিতে গিয়ে নির্ঝর কে জিজ্ঞেস করল..

– আচ্ছা কত টুকু চাল নেবো বলেন তো!

– কেন জানো না নাকি। মানুষ হিসেব করো।

– জানলে কি আর আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম। বলুন জলদি! নাহলে যদি ভাত কম হয় আপনার মান সম্মান যাবে!

নির্ঝর উঠে ঘরে গেলো মা কে জিজ্ঞেস করতে,অতঃপর জেনে মেহেরিন কে এসে বলল। মেহেরিন সেই পরিমাণ চাল নিলো। সেগুলো ধুতে গেলো ‌ প্রায় ২০ মিনিট ধরেই সেগুলো ধুতে লাগল। কারন সে যত বার পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে তত বারই পানি ঘোলা আসছে। তার ধারনা চাল আরো ধোয়া লাগবে। কিছুক্ষণ এমন করার পর অতঃপর ভাত বসাল। কিন্তু এর মাঝেই গন্ডগোল করল। সেটা পরে জানা যাবে।

নির্ঝরের কাছে এসে বলল..

– মুরগির গোশত আর গরুর গোশত কোনটা?

– চিন না।

– সব এক লাগছে আমার কাছে!

নির্ঝর আবারো উঠে তাকে সব বের করে দিলো আর চিনিয়েও দিল। অতঃপর সে চলে গেল, মেহেরিন কিছুক্ষণ পর আবার এলো তার কাছে।

– লবন কোথায়, আর গরম মশলা!

নির্ঝর উঠে তার হাতে ধরিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর আবার..

– আচ্ছা টক দই কোথায়?

নির্ঝর উঠে টক দই থেকে শুরু করে বাকি যা লাগবে সব তাকে ধরিয়ে দিল। অতঃপর গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর মেহেরিন তার কাছে এলো। নির্ঝর মুখ তুলে বলল..

– এখন আবার কি? সব তো দিলাম!

– পেঁয়াজ কেটে দিন আমি পারবো না এটা কাঁটতে আমার চোখ জ্বলবে।

– বাড়ির বউ হয়ে পেঁয়াজ কাটতে পারো না!

– কি তখন তখন বাড়ির বউ বাড়ির বউ করছেন আপনি ও তো আমার জামাই! কোথায় স্বামীর মতো একবারো কথা বলেছেন, স্বামীরা কি এভাবেই শুধু হুকুম করে নাকি। আমার দা ও মিষ্টি ভাবী’র স্বামী। কোথাও দা কে তো দেখলাম না আজ পর্যন্ত এমন করতে!

নির্ঝর হাত থেকে পেঁয়াজ গুলো নিয়ে বলল..

– যাও কাজ করো গিয়ে। বেশি কথা বলে সবসময়!

– যা বলি একদম ঠিক বলি!
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। নির্ঝর কাটতে যাবে তখনই তার চোখ জ্বলতে শুরু করল। এর মাঝে তিশা এসে হাজির। সে নির্ঝর কে পেঁয়াজ কাটতে দেখে মজা করতে লাগলো। নির্ঝর রেগে সব গুলো পেঁয়াজ তাকে দিয়েই কাটাল। তিশা বেচারি বিড় বিড় করতে করতে সব পেঁয়াজ কাটলো। চোখ ফুলে গেছে তার!

অতঃপর মেহেরিন রান্না শেষ করলো। কিন্তু রান্না করতে গিয়ে ওর হাতে অনেকটা গরম তেল লেগেছে। মেহেরিন এইজন্য বেশি একটা লাফালো না। কেন জানি মনে হলো এর থেকে বেশি ব্যাথা নির্ঝর তাকে দিয়েছে। সে চুপচাপ পানি ছেড়ে হাত কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখল। কিন্তু তবুও পোড়া জায়গাটা ফোস্কা পড়ে গেল

মেহেরিন কোন খাবার’ই চেক করে নি। দেখেনি র
লবন হয়েছে কি না।‌ সে তো এসব জানেই না। রোদ্দুর ওরা সবাই এলো। নির্ঝর ওর মা সবাই তাদের সাথে কুশল বিনিময় করল। ইহানের চোখ গেলো তিশা’র উপর। ভাবছে আজ তার সাথে কথা বলবেই। এদিকে সবাইকে খাবার টেবিলে বসানো হলো। কিন্তু সবাই শুধু মেহেরিন কেই খুঁজছে। ওকে দেখতে চায় সবাই!

কিছুক্ষণ পর মেহেরিন নামল। নির্ঝর ওকে বলল খাবার সার্ভ করতে। সবাই এতে খানিকটা অবাক হলো। কারন নির্ঝর মেহেরিন কে হেল্প করছে না সে বসে আছে। মেহেরিন সবাইকে খাবার দিল। ভাত অনেকটা নরম হয়ে গেছে। আর তরকারি গুলো খুব অদ্ভুত দেখতে। সবাই খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।

নির্ঝর হেসে বলল..
– তোমাদের আদুরী রেঁধেছে, তাই আজ এই অবস্থা!

সবাই মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল। সবার তাকানো দেখে সে দাঁত বের করে হেসে দিল।‌মেহেরিন’র হাসি দেখে সবাই হেসে দিল। খাবার মুখে দিল। খাবারে লবণ অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে কিন্তু তবুও মেহেরিন’র মন রাখতে সবাই খাচ্ছে। তাদের ধারণা মেহেরিন খুব শখ করে রেঁধেছে খারাপ বলে তাকে কষ্ট দিবে না। কিন্তু নির্ঝর..

সে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর মেহেরিন’র ওপর চেঁচিয়ে বলতে লাগল..
– কি রেঁধেছো এইসব! মুখে তোলা যাচ্ছে না কেন? যদি রাঁধতে নাই পারো তাহলে রাঁধতে যাও কেন?

নির্ঝরের এমন ব্যবহারে সবাই অবাক। এমনকি তিশা ও। শুধু অবাক না উষা চৌধুরী আর আমান! তারা জানতো নির্ঝর এমন কিছু একটা করবে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– নির্ঝর এটা কেমন ব্যবহার!

– তো দেখছো না কিভাবে সব রেঁধেছে ও।

কাব্য বলে..
– তুমি তো জানো এসব ও পারে না। তুমি তখন’ই বারন করে দিতে ওকে তাহলেই এসব কিছু হতো না।

– হুম এখন সব ভুল তো আমার’ই!.

মেহেরিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল..
– সরি আমি বুঝতে পারি নি!

সবাই তার দিকে তাকাল। ইহান তার হাতের তলায় পোড়া জায়গাটা দেখে ফেলল। সে খাবার ছেড়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন’র হাত ধরে বলল..
– এটা কি? কিভাবে হলো

– এটা মানে!

সবাই উঠে গেল তার কাছে। আরিশা হাত ধরে বলল..
– অনেক খানি পুড়ে গেছে দেখছি। গরম তেল পড়েছিল নাকি মেহেরিন!

– হ্যাঁ ওই রাঁধতে গিয়ে আর কি!

ক্যাট বলে উঠে…
– ঔষধ লাগাও নি কেন? ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে দেখি!

– নির্ঝর তুই দেখিস নি এইসব!

– না আমি জানি না। ও বলে নি আমাকে।

– ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?

তিশা বলে..
– আমি নিয়ে আসছি!

সবাই মেহেরিন কে নিয়ে সোফায় বসায়। কাব্য বলে…
– নির্ঝর তোর মেহেরিন কে মানা করা দরকার ছিল।

– আজব আমি কি জানি নাকি এতো কিছু হবে। আর রান্না সব মেয়েরাই করে। হাত পুড়িয়ে ফেলল কিন্তু রান্না টা ঠিক করে করতে পারলো না। এতো আদর না দেখিয়ে একটু ঘরের কাজ শিখাতে পারতে!

কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না। খুব অচেনা লাগছে সবার কাছে নির্ঝর কে। অতঃপর নির্ঝর হাত দেখিয়ে খাবার সব ফেলে দিয়ে উপরে চলে গেল। তিশা ফার্স্ট এইড বক্স আনতেই ইহান দ্রুত তার থেকে ওটা নিয়ে মেহেরিন’র হাতে মলম লাগাতে লাগল।

মেহেরিন বলে উঠে..
– তোরা খাওয়া হয় নি না। সরি রে..

কেই কোন কথা বলল না। মেহেরিন আবার বলল..
– আচ্ছা তোরা ওয়েট কর আমি খাবার অর্ডার করছি।

– না লাগবে না। আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আর..

– আর আমাদের সাথে তুই ও যাবি।

– আরে আমার কথা টা তো শোন!

– মেহেরিন আমরা অবুঝ না ঠিক আছে!

– সব বুঝি আর এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারছি।

– নির্ঝর রেগে ছিল তাই বলেছে তোরা শোন তো!

ইহান মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল..
– আমাদের কাছে মিথ্যে টা হয়তো নাই বললি!

– সবার কাছে তোর মিথ্যে চললেও আমাদের কাছে আর চলবে না।

– আমরা তোকে ছোট থেকেই বড় করেছি। আগলে রেখেছি! এতো কিছু আজকের এই দিনটা দেখার জন্য করি নি।

কাব্য মেহেরিন’র হাত ধরে টেনে নিয়ে দরজার কাছে গেল‌। বলল..
– এমন মানুষের কাছে থাকার চেয়ে আমাদের সাথে থাকা অনেক ভালো তোর!

– মেহেরিন বর্ষা খান নির্ঝর চৌধুরী না চাইলে কেউ তাকে এই বাড়ি থেকে বের করতে পারবে না। মনে রাখিস!

কাব্য মেহেরিন’র হাত টা ছেড়ে দিল। রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য’র চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। ইহান কপালে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে খানিকটা ঘসল। অতঃপর হেসে বলল..

– এরপর বাকিটা দি দেখবে!

বলেই সে চলে গেল। রোদ্দুর আর কাব্য মেহেরিন’র দিকে একবার তাকাল। অতঃপর চলে গেল। আরিশা মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। ক্যাট বলে উঠল..
– নিজের খেয়াল রেখো। কিছু হলে ফোন করো কিন্তু!

– নিশ্চিন্তে থাকো মিয়াও ভাবী। আমি একদম ঠিক আছি।

আরিশা বলে..
– হুম দেখতেই পারছি!

অতঃপর তারা চলে গেলো।মেহেরিন উপরে গেল। নির্ঝর সোফায় বসে পির্জা খাচ্ছে। মেহেরিন’র রাগ মাথায় চড়ে বসল। সে এসেই নির্ঝরের পির্জা গুলো ছুড়ে ফেলে দিল।

– আদুরী!

মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর জানে মেহেরিন’র বেশ রেগে আছে। নির্ঝর হেসে বলল..

– কি হলো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড রা চলে গেছে।

– আপনি ভাবতেও পারছেন না এর ফল ঠিক কতোটা খারাপ হতে পারি। আমি সব কিছু সহ্য করতে কিন্তু ওদের কষ্ট পারি না।

– এজন্য’ই তো এতো কিছু করলাম জানেমান। আরো অনেক কিছু হবে রেডি থাকো।

মেহেরিন ছোট করে একটা উপহাসের হাসি দিল। নির্ঝর মেহেরিন’র গাল ধরে বলে..

– আদুরী তোমার উপর এতো চেঁচিয়ে আমার মাথা ধরে গেছে। যাও গিয়ে চা করো আর হ্যাঁ চিনি একটু বেশি দিবে।

– আই উইশ আপনাকে আমি বিষ খাওয়াতে পারতাম!

– সেটা তুমি পারবে না জান!

– আদুরীর ধৈর্য্য’র পরিক্ষা নিয়েন না। প্রমিস করছি সুদে আসলে সব ফেরত পাবেন আর সেদিন কিছু করতে পারবেন না।
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর পেছন থেকে বলল..

– আচ্ছা আমিও অপেক্ষায় থাকলাম!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here