১০ বছর বয়সী আদুরী বসে আছে মেঝেতে। ঘরের এক কোনে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। পুরো ঘর অন্ধকারে আচ্ছন্ন! এই অন্ধকার ঘর টার মতোই তার জীবনে অন্ধকার ছেয়ে গেছে। চোখ থেকে ঝরছে অজস্র অশ্রু। তার অবাধ্য এলোমেলো চুল গুলো ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। আজ প্রায় দুদিন হলো এই অন্ধকার ঘরেই কেটেছে তার সারাটা দিন। একবারের জন্যও অশ্রু বন্ধ হয় নি তার। এই দুদিন ধরে না খেয়ে দেয়ে কাঁদার কারনে চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে তার। তার ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে আছে। ঠোঁট জোড়া কাঁপছে, তবুও কান্না থামছে না খানিকক্ষণের জন্য।
হাত দুটো মেঝেতে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে রাগ থামানোর চেষ্টা করছে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। হঠাৎ করেই ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ আসল কিন্তু এতে এক ফোঁটা বিচলিত হলো না সে। হাতে একটা খাবারের থালা নিয়ে একজন প্রবেশ করল ঘরে। মুখ শুকনো, না ঘুমানোর কারনে তারও অবস্থা বেহাল। ঘরে প্রবেশ করেই ঘরের আলো জ্বালালো সে। অতঃপর এসে দাঁড়ালো আদুরীর সামনে। আদরের বোনটি আজ দুদিন ধরে কিছু খায়নি খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আদুরী এখন খানিকক্ষণ এর জন্য কান্না থামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল…
– দ..দা!
খাবারের প্লেট বিছানায় রেখে আদুরীর সামনে মেঝেতে বসে পড়ল সে। বলে উঠল..
– আদুরী!
আদুরী এবার তার মুখের দিকে তাকায় দেখে অভ্র বসে আছে তার সামনে। অভ্র আদুরী কে এই অবস্থায় দেখে ভড়কে যায়, দু’চোখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে তবে অভ্র”র চেহারায় কাঁদার কোনো ছাপ নেই, আছে তো রাগ আর দুঃখের ছাপ। এটাই তার চেহারা বিষন্ন করে রেগেছে। তবুও একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে ছোট বোনের কান্না বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলো সে। আদুরী অভ্রের কোলে গিয়ে বসে জরিয়ে কাঁদতে লাগলো। অভ্র তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। খানিকক্ষণ বাদে কান্না থামে আদুরীর, তবুও অশ্রু গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে। চোখের অশ্রু ও আজ বেইমানি করছে বলে মনে হচ্ছে। অভ্র আদুরী’র মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে একটা চুমু দেয়। অতঃপর তাকে বলে উঠে…
– আদুরী!
– ….
– খাবার এনেছি খেয়ে নাও।
– ….
– দুদিন’ধরে কিছু খাও নি, খেয়ে নাও। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
– আম্মু কে এনে দাও।
– ….
– কি হলো আমার আম্মু কে এনে দাও।
অভ্র আদুরী’কে নিজের সামনে বসায়। আদুরীর শরীর কাঁপছে! অভ্র আদুরীর দু’চোখ মুছে দেয়। চোখ দিয়ে আবার অশ্রু ঝরার আগেই অভ্র শান্ত গলায় বলে ওঠে…
– এই কান্না এখানেই শেষ, আর যেন না কাঁদতে দেখি।
– তো কি করবো আমি।
– আদুরী! মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকে না এটা তোমাকে বুঝতে হবে।
– কিন্তু ওরা মেরেছে আমার আম্মু কে। আমি কি করে এটা ভুলে যাবো।
– ভুলে যাবে না বলেই আর কখনো কাঁদবে না।
আদুরী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে। অভ্র তার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে…
– শোন! মানুষ নিজের কষ্ট ভুলার জন্য’ই কান্না করে, আর আমি চাই তুমি নিজের কষ্ট যেন কোনোভাবেই না ভুলো তাই আর কখনো কাঁদবে না।
আদুরী মাথা নিচু করে নেয় কারন এটা তার পক্ষে সম্ভব না। অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– তোমাকে আমি আজ দুদিন সময় দিয়েছিলাম কাঁদার জন্য,তাই বাপি কেও আসতে দেয় নি এখানে। এই দুদিন ধরে এই বাড়িতেই শুধু তুমি কেঁদেছো আর কেউ কাঁদেনি এর মানে কি মা কে শুধু তুমিই ভালোবাসতে আমরা বাসতাম না। না আদুরী কারন টা এটা না। কারন হলো আমার মা’র শেষ কথা। উনি মারা যাবার আগে আমার কাছে শেষ বারের মতো এটাই চেয়েছেন যেন তার এই ছোট্ট প্রিন্সেস কখনো না কাঁদে, শুধু তুমি না বাকি সবাই। এই বাড়িতে কেউ যেনো কখনো না কাঁদে এটা তার মৃত্যুর পরেও বজায় থাকবে।
– ….
– আমি সবাই কে তো সামলাতে পেরেছি কিন্তু তোমাকে ছাড় দিয়েছি এর কারণ আছে। কারন টা এটাই তুমি অধরা খানের মেয়ে মেহরিন বর্ষা খান। সবার মতো তুমি বাবা’র পরিচয়ে না মায়ের পরিচয়ে বড় হয়েছো। সব জায়গায় তুমি নিজেকে অধরা খানের মেয়ে হিসেবে পরিচিত পেয়েছো। এমন কি সবাই তোমাকেই জুনিয়র অধরা খান বলতো। আর অধরা খানের জীবন এতোটা সহজ ছিল না। তার মতোই তোমার জীবনটা এতো সহজ না। সবার চেয়ে আলাদা হবে তোমার জীবন। তোমার ওপর নির্ভর করে আমার বাকি ভাই বোনদের জীবন।
– ….. ( নীরবে চোখের জল ফেলছে আদুরী )
– মেহেরিন!
আদুরী এবার ঘাবড়ে যায়, অভ্র রেগে গেলেই তাকে নাম ধরে ডাকে। আদুরী এবার সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে যায়। চোখের অশ্রু এবার শুকিয়ে যায়। অভ্র বলে ওঠে…
– জীবন একটা game এর মতো। ভিডিও গেইমস খেলো তো। সবসময় কি জিতো, একবার ও কি হেরে যাও না। যখন হেরে যাও তখন সেই লেভেলেই থাকো আর জিতলে উপরের লেভেল উঠো। জীবনটাও ঠিক তেমনি। শুধু পার্থক্য এখানে হারলে সেই লেভেলে থাকবে না বরং নিচে পরে হারিয়ে যাবে। তাই জীবনে কখনো হেরে গেলে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না উপরে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আর পাঁচটা জীবনের মতো তোমার জীবন না এটা মাথায় রাখতে হবে। এখন একজন মারা গেছে সামনে হয়তো তোমার পাশে আর কেউ’ই থাকবে না তখন কি করবে তুমি! এভাবে বসে কাঁদবে, অধরা খান হলে কি এটাই করতো বলো আমায়! নিজেকে অধরা খানের মেয়ে বলে পরিচয় দাও আর এতোটুকুতেই ভেঙ্গে পরছো? সারা বাড়িতে শুধু তোমার কান্নার আওয়াজ আসছে, আর কেউ কাঁদছে। আমাকে দেখেছো কাঁদতে, না বাপি কে! আমরা কি ভালোবাসতাম না মা কে। জানো তো কারা মেরেছে, কেন মেরেছে, কিভাবে মেরেছে সব জানো। তাহলে জেনে বসে আছো কেন? কিছু করছো না কেন? Khan”রা কি এতো দুর্বল! শত্রু দের নিজের দুর্বলতা’র সু্যোগ কেন দিচ্ছ? যেন তারা আবার এসে তোমার ক্ষতি করতে পারে তাই!
আদুরী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র’র কথা অর্থ সে বুঝতে পারছে। অভ্র এবার আদুরীর গালে হাত রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে…
– কি করতে হবে বুঝতে পারছো তো! আমি জানি আমার ছোট্ট বোনটা পারবে।
আদুরীর ঠোঁটের কোনে এবার হাসি ফুটে। সে অভ্র’র হাত ধরে বলে ওঠে…
– yep, they game is begin now and i promise you that I win this game everytime.
অভ্র কিঞ্চিত হেসে বলে…
– আমি জানি তুমি পারবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা’র শেষ প্রতিশ্রুতি আমি রাখবো। কখনো কাঁদতে দেবো না তোমায় কখনো না!
বলেই আদুরীর কপালে আলতো করে একটা চুমু দেয়। আদুরী গিয়ে জরিয়ে ধরে অভ্র কে।
[ ৬ বছর পর… ]
রাস্তায় সাইকেল হাতে নিয়ে কাব্য বলে উঠে..
– কিরে আর কতোক্ষণ! দি কখন আসবে?
ইহান হেলমেট লাগাতে লাগাতে বলে..
– দা কল করতে গেছে এখন’ই আসবে।
রোদ্দুর সাইকেলে বসে বলে..
– দি আজ অনেক দেরি করছে! ওই তো দা আসছে।
সবাই তাকিয়ে আছে, হাতে গ্লাফস পরে আসছে নীল। নীল কে দেখে রোদ্দুর বলে উঠে..
– কি বললো দি?
– ফোন বাজছে কিন্তু রিসিভ করছে না। আমি মেসেজ দিয়েছি।
– তাহলে কি ওয়েট করবো।
– নাহ চল আমরা শুরু করি!
– আচ্ছা!
চারজন মিলে সাইকেল রেস করার জন্য প্রস্তুত নেয়। খানিকক্ষণ পরই সাইকেল চালাতে শুরু করে। সবার আগে নীল, তারপর রোদ্দুর, শেষে ইহান আর কাব্য। কাব্য ইচ্ছে করেই ধীরে ধীরে চলছে। কারন তার খুব ঘুম পাচ্ছে। এই সকাল সকাল সাইকেল চালানোর কোনো শখ ছিল না তার। কাব্য একটা হাই তুলে পাশে তাকাতেই একজন থেকে ঘাড়বে যায়। সে কাব্য কে দেখে চোখ টিপ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে চলে যায়। ইহান বলে উঠে..
– এতো..
– দি! দি চলে এসেছে এবার মজা হবে।
বলেই দুজন হেসে সাইকেল জোরে চালাতে শুরু করে। এদিকে সে রোদ্দুর কে ওভার করে সামনে চলে যায়। নীল পিছন থেকেই তার আভাস পেয়ে আরো জোরে চালায় থাকে। সেও হারবার পাত্র নয়। অবশেষে নীল কেও অভারটেক করে ফেলে অবশেষে জিতে যায় এই রেস। নীল হেলমেট খুলে বলে উঠে..
– দি ইট’স নট ডান। তুমি রেস’র মাঝে এসেছো।
সে হেলমেটটা খুলে হেসে বলে উঠে..
– না মাঝে ঢুকি নি বরং দেরি করে রেস এ এসেছি। বাট তুমি তাও হেরে গেলে। ( নীলের গাল ধরে টেনে )
ইহান হেসে বলে উঠে..
– প্রত্যেক বারের মতো তুমি জিতে যাও।
সে কাব্য এর মাথায় হালকা মেরে বলে..
– এখানে এসে আলসেমি কেন করিস, কচ্ছপের মতো সাইকেল চালাস কেন?
কাব্য মাথার হাত দিয়ে বলে…
– তবুও জিততে পারি না, কিন্তু কচ্ছপ কিভাবে জিতল এটাই ভেবে পাই না।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– এটা কিভাবে হলো দি! তুমি শেষে এসেও কেন জিতলে
সে হেসে বলে উঠে..
– কজ ইট’স মি,নিহারিকা নিহা খান!
নীল বলে উঠে..
– আমিও আদ্রিয়ান খান নীল, একদিন না একদিন আমিও তোমাকে হারাবো।
নীলের মাথার চুল এলোমেলো করে..
– আমি সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করবো, কিন্তু আরেকজন কোথায়?
ইহান বলে উঠে..
– সে হলো অমাবস্যা চাঁদের মতো কয়েকদিন পর পর দেখা পাওয়া যায়।
নিহা বলে উঠে..
– সকাল ৮ টা বাজে এখনো ঘুমায় সে!
নীল বলে উঠে..
– এখন উনার কাছে সকাল ৬ টা বাজে বুঝলে। আপাতত আজ ১১ টার আগে ঘুম থেকে উঠবে না।
কাব্য বলে উঠে..
– তো কি করবে, কাল অনেক রাত করে বাড়ি এসেছিল।
নিহা কাব্য’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– হুম জানি, আর ফ্রেন্ড’র সার্পোট টানা লাগবে না তোর। এখন বাসায় চল। দেখি তিনি স্বপ্নে কি দেখে।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– তার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হবে।
সবাই একসাথে হেসে উঠে। অতঃপর সবাই খান বাড়িতে পৌঁছায়!
নীল দৌড়ে রুমে ঢুকে বিছানা থেকে নিশি কে কোলে তুলে নেয়। অতঃপর ওকে নিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়। নিশি লাফিয়ে উঠে। অতঃপর রেগে তাকিয়ে থাকে নীলের দিকে। নীল নিশি’র মুখ দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা। নিহা, কাব্য, ইহান আর রোদ্দুর ও হাসতে থাকে। নিশি চেঁচিয়ে বলে উঠে..
– দা… দা!
– দা বাসায় নেই, এখন তার অফিস টাইম ভুলে গেছিস।
– আজ দা আসুক! তোমার নামে যদি না বিচার দিয়েছি আমি।
– আমিও দেবো সকাল সকাল এক্সারসাইজ না করে ঘুমানো দা জানলে মজা বুঝাবে।
নিশি অসহায় মুখ করে নিহা’র দিকে তাকায়। নিহা তার কাছে একটা তোয়ালে নিয়ে যায়। অতঃপর নিশি কে উঠিয়ে তাকে চেঞ্জ করে আসতে বলে।
নিশি চেঞ্জ করে এসে নীলের পিছনে দৌড়ায় থাকে। নীল ও দৌড়াতে থাকে। পুরো বাড়ি জুড়ে দুজনে ছুটছে বাকি তাদের কান্ড দেখে হাসতে থাকে।
.
শাহরিয়ার অভ্র খান অফিসে ঢোকার সাথে সাথে তার পিএ এসে উপস্থিত।
– গুড মর্নিং স্যার!
– মনিং! তা আজকে কি কি আছে বলো।
– স্যার গুড নিউজ আছে।
– বলো।
– অবশেষে আমরা আমাদের নিউ কোম্পানির ব্রাঞ্চ লঞ্চ করতে যাচ্ছি যার কারনে পরশু প্রেস কনফারেন্স হবে। আপনাদের সবাইকে থাকতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু..
– হ্যাঁ স্যার…
– বলো।
– এ্যাকচুয়েলী স্যার আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।
– ওহ congratulations!
– Thank you স্যার এই যে বিয়ের কার্ড। আপনাদের সকলকে আসতে হবে। প্লিজ স্যার…
– চেষ্টা করবো!
– প্লিজ স্যার, ম্যাম আর স্যারদের নিয়ে অবশ্যই আসবেন।
– ঠিক আছে। তাহলে তো তুমি রিজাইন নিচ্ছো!
– হ্যাঁ স্যার, রিজাইন লেটার টেবিলে দিয়ে দিয়েছি।
– নতুন পিএ এর Advertisement দিয়েছো।
– না স্যার আসলে আমার একজন বান্ধবী ছিল, আমি এই জন্য ওকে সিলেক্ট করেছি। শুধু একবার আপনি তার cv দেখে নিবেন। সে এটার জন্য একদম যোগ্য!
– তুমি দেখেছো এতেই হবে, তুমি জানো আমার কেমন পিএ লাগবে।
– জ্বি স্যার!
– কবে থেকে জয়েন করবে!
– স্যার আমার বিয়ে অ্যাটেন্ড করেই জয়েন করবে, অন্য শহর থেকে আসছে তো তাই…
– আচ্ছা ঠিক আছে!
.
খান বাড়িতে…
সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে। নিশি বলতে শুরু করে..
– দা জানো আজ ভাইয়া কি করেছে আমার সাথে..
– কি করেছে?
নিহা বলে উঠে..
– ঘুমের কোলে সুইমিংপুলে ফেলে দিয়েছে!
কাব্য বলে উঠে..
– এরপর তোমার বোন ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে!
সবাই হেসে উঠল। নিশি রেগে কাব্য’র দিকে তাকায়। কাব্য এবার চুপচাপ খেতে থাকে। নিশি আবারও অভ্র কে ধরে..
– কি হলো কিছু বলো?
- রিভেঞ্জ নিয়ে নেবে কেউ কিছু বলবে না।
অভ্র’র এই কথায় নীল শুকনো ঢোক গিলে। নিশি বাঁকা হেসে ওর দিকে। অভ্র আবার বলে উঠে..
– পরশু প্রেস কনফারেন্স আছে, নিহা আমার সাথে যেতে হবে তোকে!
– ঠিক আছে দা কিন্তু..
– কিন্তু!
সবাই চুপ হয়ে গেল। নিহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– ভুলে গেছিলে আর আগে একবার কি হয়েছিল? তারা কার কথা জিজ্ঞেস করবে!
নীল বলে উঠে..
– সবসময় এর মতো এবারও..
অভ্র মাথা নিচু করে বসে আছে। নিহা বলে উঠে..
– দা এবারও এমন কিছু হবে আমি জানি! তারা আবারও জিজ্ঞেস করবে.. আদুরী কোথায়?
অভ্র কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায়।
এদিকে দুই সাংবাদিক এর কথোপকথন..
– এই যে পরশু দিনের প্রেস কনফারেন্স এর জন্য প্রশ্ন! পড়ে নে..
– সব’ই তো আছে কিন্তু একজন নেই!
– কার কথা বলছিস? শাহরিয়ার অভ্র খান হলো খান বংশের বড় ছেলে আর বর্তমানে খানদের কোম্পানির ওনার, আর তার দুই যময দুই ভাই বোন মানে নিহারিকা নিহা খান আর আদ্রিয়ান খান নীল যার মধ্যে নিহা বড় আর ছোট বোন নিশিতা নিশি খান এই.. তবে নিহা আর নীল যময হলেও নিহা বড় হওয়ায় সে থাকবে প্রেস কনফারেন্স এ। আর কার কথা বলছিস ইহান,রোদ্দুর আর কাব্য ওদের কথা!
– সবার কথাই তো বললি শুধু একজন এর নাম বাদে যার কথা এখনো তোর মনেও গেঁথে আছে!
– আ…আদুরী মানে অধরা খান এর ছোট মেয়ে মেহরিন বর্ষা খান আদুরী!
– হুম!
– তুই কি পাগল হলি, বড় স্যার বলে দিয়েছে তাকে নিয়ে যেনো কোনো কথা না বলি!
– স্যার বললেই হলো নাকি! আমি তো তার কথা জিজ্ঞেস করবোই। তোর মনে আছে প্রায় ৬ বছর আগে অধরা খান মারা যায় তার ১ বছর পর তার ছোট মেয়ে কি কি নাই করলো। এতো ছোট মেয়ে কমপক্ষে ৬ টা খুন করেছিল না জানি আরো কতো এটা তো পুলিশ রের্কড বলেছিল, এমন কি নিজের গ্যাং ও নাকি আছে তাও খুব বড়! অথচ ৫ বছর আগে হুট করেই সে উধাও, একটা কার এক্সিডেন্ট এর পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাকে ভুলে যাবো!
– শোন সে যে খুন করেছে এটার কোনো প্রমান না আছে আমাদের কাছে আর না পুলিশদের কাছে তাই এই কথা তুলে লাভ নেই! আর গ্যাং.. সেটাও না বলাই ভালো।
– খবর আছে আমার কাছে তার ৩ বেস্ট ফ্রেন্ড মানে কাব্য, রোদ্দুর আর ইহান জড়িত আছে তার সাথে। আর ভাই বোন’রা তো জন্মগত!
– তাদের ফ্রেন্ড শিপ অনেক পুরোনো। আর তুই যদি ভাবিস তাদের আদুরী’র কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে তাহলে তুই সম্পূর্ণ ভুল। এই ৫ বছরে অন্যান্য সাংবাদিকরা কম জিজ্ঞেস করে নি। কিন্তু তারা কিছুই বলে নি!
– হয়তো তারা ঠিক মতো জিজ্ঞেস করতেই পারি নি। তাই..
– মানে কি বলতে চাস তুই!
– সেটা না হয় পরশু দেখবি। পুরো মিডিয়া থাকবে ওখানে সেখানে তারা কোনোমতেই না বলে থাকতে পারবে না!
– দেখ তুই যা’ই করিস না কেন আমি তোর সাথে নেই কারন আমার চাকরি আমার কাছে অনেক প্রিয়!
– আচ্ছা আমি একাই দেখবো তাহলে! তুই শুধু দেখ কি কি হয়…
#Game
#পর্ব : ০২
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
[ সবার কাছে দুঃখিত! অনেকেই গল্পের প্রথম পর্ব টা বুঝতে পারি নি। আমি একটু বেশিই সাসপেন্স দিয়েছিলাম। আবার দুঃখিত! তবে পরবর্তী পর্ব গুলো সহজ ভাষায় দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর গল্পটা পুরোই কাল্পনিক। ]
পরদিন সকাল বেলা..
নীল তৈরি হচ্ছে ভার্সিটিতে যাবার জন্য, এদিকে নিশি ছাদে অপেক্ষা করছে নীলের জন্য কখন সে বের হবে। অবশেষে নীল বের হলেই নিশি নীলের গায়ে এক বালতি রঙ ফেলে দিলো। নীলের পুরো শরীর রঙে ভর্তি। নীলের এমন অবস্থা দেখে সব গার্ড মুখ টিপে হাসতে লাগলো। নিশি নাচতে নাচতে বলতে লাগলো..
– রিভেঞ্জ কমপ্লিট!
নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলে..
– রিভেঞ্জ! ওয়েট আমিও দেখাচ্ছি..
বলেই দৌড়ে আসতে নিলো নীল, নিশি নীলকে দেখে দৌড়ে চেঁচাতো লাগল..
– দা দা বাচাও আমাকে ছোট দা আমাকে মারছে।
দুইজন দৌড়াদৌড়ি করতে করতে একসময় অভ্র’র কাছে চলে আসে। অভ্র বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিল। নিশি দৌড়ে অভ্র’র পিছনে চলে গেল। অভ্র সামনে তাকিয়ে দেখে নীলের অবস্থা পুরোই খারাপ। পুরো শরীরে রঙ লেগে তাকে চেনা মুশকিল। নিশি বলতে শুরু করল..
– দা তুমি বলেছো রিভেঞ্জ নিতে নিয়েছি, কেউ কিছু বলবে না বলেছিলে তাহলে দা এভাবে আসছে কেন?
অভ্র নীলের দিকে তাকিয়ে বলে..
– ওহ্ আচ্ছা এটা বুঝি নীল!
নীল অসহায় মুখে বলে..
– দা তুমিও..
অভ্র হেসে বলে..
– নীল এক হাতে তালি বাজে না, তুমি মজা করেছো নিশিও করেছে হিসাব বরারব!
নিশি মুখ ভেংচি দিয়ে বলে..
– দেখলি হিসাব বারবার!
– তোকে তো আমি!
– নীল, আর না! ভার্সিটিতে যেতে লেট হয়ে যাবে। যাও চেঞ্জ করে ভার্সিটি যাও!
নিশি দাঁত বের করে হেঁসে বলে..
– যাও যাও!
নীল রেগে বেরিয়ে যায়। নিশি অভ্র’র গলা জড়িয়ে বলে..
– তুমি আমার কতো মিষ্টি দা..
– তেল মারা বন্ধ কর..
– আমি মোটেও তেল মারছি না। ছোট দা সবসময় ইচ্ছে করে আমার পিছনে লেগে থাকে। এখানে আমার দোষ নেই। নিহা দি বড় বলে তাকে কিছু বলে না কিন্তু আমাকে ছাড়ে না…
– হয়েছে, এখন তুই আর কিছু বলবি না ব্যস। তাহলেই ও আর তোকে জ্বালাবে না।
– দা’র সাথে কি আমি পারি নাকি। আমি কিছু করলে সে তার দ্বিগুণ করে আমার সাথে।
– জানি তো আমি!
– দা কে শুধু একজনই ঠিক করতে পারে, সে হলো আদুরী! একদম বরাবর। তোমার মনে আছে দা ছোট বেলায় দুজন কিভাবে লেগে থাকতো।
নিশি’র কথা শুনে অভ্র’র মুখ মলিন হয়ে যায়। সে কিছু না বলেই সেখান থেকে উঠে চলে যায়। নিশি বুঝতে পারে সে কি বলেছে। অবশেষে সেখানেই মনমরা হয়ে বসে থাকে সে…
প্রেস কনফারেন্স এর দিন…
একে একে সবাই প্রশ্ন করে অভ্র আর নিহা কে। তারা দুজনেই উওর দিতে থাকে। হুট করেই একজন সাংবাদিক বলে উঠে..
– ম্যাম আরেকটা প্রশ্ন!
– হুম বলুন!
– ম্যাম এটা আমার না সবার প্রশ্ন, সবার কৌতূহল আছে এটাতে! সে হলো মেহেরিন বর্ষা খান ওরফে আদুরী, আপনার ছোট বোন যে গত পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ! কোথায় তিনি!
নিহা একটা মুচকি হাসি দেয়। সে জানতো এই প্রশ্নের মুখোমুখি তাকে হতে হবে। সে বলে ওঠে..
– এখানে আমাদের কোম্পানির বিষয় নিয়ে কথা বার্তা হচ্ছে, ব্যক্তিগত বিষয়ে না। আর এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়। তাই সরি.. আর আপনাদের সময় এখন শেষ ধন্যবাদ!
বলেই নিহা আর অভ্র উঠে পড়ে। চলে যেতে নিলে এবার সে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে..
– ম্যাম আপনি এই কথাটা এড়িয়ে যেতে পারেন না। এই প্রশ্ন টাও আপনাদের নতুন কোম্পানি’কে নিয়েই, জানা গেছে তার ওনার আদুরী! তাহলে.. আচ্ছা আদুরী কি আর কখনো ফিরবেন না, তিনি কি মারা গেছেন!
নিহা এবার দাঁড়িয়ে যায়। সে পিছনে ফিরে সবার উদ্দেশ্য মাইকের সামনে এসে বলে..
– আদুরী ফিরবে আর খুব জলদি ফিরবে। মাইন্ড ইট মেহেরিন বর্ষা খান ও, অধরা খানের মেয়ে আদুরী!
বলেই চলে যায় তারা। পুরো নিস্তব্ধ হয়ে যায় পরিবেশ। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না। কারন নিহা কথা গুলো রেগেই বলেছে এটা আর কারো বুঝতে বাকি নেই।
.
রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই…
ঈশান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে য্বোয়ার বাসার বাইরে আর বির বির করছে…
– এই মেয়েটা সবসময় জ্বালায় আমাকে, কি দরকার এতো রাতে ঘুড়তে যাবার! কেউ দেখলে নিশ্চিত ভাববে এই মেয়েকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাবার প্ল্যান করছি। এখন তো পরিক্ষাও শেষ তাই সারাদিন ঘুমিয়ে শেষে রাতে এসে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে। কিন্তু এখনো আসছে না কেন মহারানি!.
বলতে বলতে হঠাৎ কিছু পড়ার আওয়াজ পেল। তাকিয়ে দেখে দেওয়ালের ওপাশ থেকে কেউ জুতো ফেলল। ঈশানের বুঝতে বাকি নেই য্বোয়া আসছে। এটাই ওর কাজ দেওয়াল টপকে ওর বাইকে চড়ে সারারাত ঘোরাঘুরি করা। ঈশান উঠে দেওয়ালের কাছে আসল। য্বোয়া দেওয়ালের ওপাশ থেকে এখানে উঠে ঈশান কে দেখে একটা চোখ টিপ দিলো। ঈশান দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
– মজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি নাম। কেউ এসে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যায়।
য্বোয়া এপাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল..
– মেয়ে আমি তুই কেন মেয়েলি কথা বলছিস। চল এখন..
বলেই বাইকে চড়ে বসল। ইশান বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল..
– সিনিয়র তোর সম্মান দে, পরিক্ষা কেমন দিলি বল।
– রাখ তোর সিনিয়র, আর পরিক্ষাটাও আপাতত রাখ।
– পিচকু মেয়ে, সবে এসএসসি দিয়েছো। এখন’ই এতো সাহস।
– এটা তো আমার জন্মগত। এখন বাইক চালানো শুরু কর।
– করছি করছি!
ঈশান বাইক চালানো শুরু করে। বাইকে চালিয়ে মেইনরোডের দিকে এসে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে থামে। সেখান থেকেই থেকে দুকাপ চা নিয়ে একটা য্বোয়া কে দেয় আরেকটায় নিজে চুমুক দেয়। ঈশান বলতে শুরু করে..
– কেন যে তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলাম!
– আফসোস হচ্ছে!
– না ভয় হচ্ছে, তুই যা মেয়ে। শুনলাম কার নাকি মাথা ফাটিয়েছিস।
– তো কি করবো। আমাকে শুধু জ্বালাতন করে তাই শিক্ষা দিয়ে দিলাম।
– আন্টি আংকেল কিছু বলে নি। শুনলাম বিচার নিয়ে গিয়েছিল।
– হ্যাঁ গেছে তো, আব্বু জরিমানা দিয়ে দিয়েছে। আর আম্মু আমাকে বিরিয়ানি রেঁধে খাইয়েছে।
– মার খাওয়ানি!
– যাহ মারবে কেন? আমি কি ভুল করেছি নাকি। আব্বু অনেক বাহবা দিয়েছে জানিস।
– হ্যাঁ এটা শুধুই তোর ফ্যামিলি তে সম্ভব।
– …
– এভাবে তাকাস কেন?
– কিছু না এমনি! তোর এক্সাম জানি কবে?
– সবে তো তোর টা শেষ হলো। আমার হাতে এখনো অনেক সময় আছে। আচ্ছা আজকের ব্রেকিং নিউজ শুনেছিস!
– না নিউজ দেখি নি আর দেখিও না।
– জানতাম এটাই বলবি। সারাদিন শুধু ঘুমিয়ে থাকিস আর রাত হলে পেঁচার মতো ঘুরে বেড়াস।
– আচ্ছা পেঁচা দেখতে কি আমার মতোন সুন্দরী!
– দেবো এখন একটা।
– হি হি হি!
– হাসা বন্ধ কর আর আমার কথা শোন।
– হুম কি হয়েছে! তোর ক্রাশের বিয়ে নাকি!
– না ক্রাশের বিয়ে না তবে ক্রাশ একটা কান্ড করেছে।
– তোর ক্রাশ আছে! আমি তো এভাবেই মজা করে বলেছিলাম তা কে সে?
– নিহা খান!
– এই টা আবার কে?
– তুই উনাকে চিনিস না! কিভাবে? পুরো শহর চিনে তাকে আর তুই চিনিস না।
– না।
– এতো সহজে বলে ফেললি নাহ!
– এখন না চিনে থাকলে কি বলবো বল। কিন্তু হয়েছে টা কি? কি করেছেন তিনি!
– আবারও প্রেস কনফারেন্স এ মিটিং এ রেগে গেছেন।
– কেন কেন কেন?
– একবার বল আমি তোর মতো কালা না! শোন.. উনার বোন কে নিয়ে কথা উঠেছিল তাই!
– আচ্ছা উনার বোন ও আছে!
– বইন তুই অফ যা। ওয়েট.. ( মোবাইল ফোন থেকে সবার ছবি বের করে ) এই দেখ।
– এখানে তো অনেকজন! কোনটা তোর ক্রাশ আর এরাই বা কারা?
– তোর আসলেই এদেশে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। কোনো খবর রাখিস না আর এদের চিনিস না। পাবলিক জানলে তোর কি যে করবে?
– বেশি বক বক না করে ওদের পরিচয় দে।
– আচ্ছা শোন!
– ওয়েট ওয়েট একটা কথা!
– আবার কি?
– সবাই একরকমে পোশাক কেন পড়েছে!
– এটা একটা অনুষ্ঠানে তুলেছিল আর ওরা সবাই একরকম ড্রেস আপ করে।
– দেখে মনে হচ্ছে একটা মাফিয়া গ্যাং।
– বাহ তোর ধারনা তো হাই লেভেলের!
– সত্যি মাফিয়াদের সাথে জড়িত ওরা।
– সেটা সবাই বলে তবে কোনো প্রমান নেই। তারা সবাই খান নামে খুব ফেমাস। এই যে পিক টা দেখছিস, এই হলো শুভ্র আর অধরা খানের বড় ছেলে শাহরিয়ার অভ্র খান, এবার ২৫ এ পা দিলো তবে এই বয়সেই অনেক ভালো খ্যাতি অর্জন করেছে বিজনেস এ। খান কোম্পানির ওনার। আর এই হলো আমার ক্রাশ নিহারিকা নিহা খান এই হলো ওর ছোট বোন, এবার ২২ বছর হলো। “ল” নিয়ে পড়ালেখা করছে। আদ্রিয়ান খান নীল হলেন এনি। নিহা’র যময ভাই তাই বয়স ও সেম। কিন্তু নিহা বড়। নীল এবার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। এই যে মাঝখানে বসে আছে এটা হলো ছোট বোন নিশিতা নিশি খান, খুব সুইট না দেখতে। এবার ২০ এ পা দিলো। ডাক্তারি নিয়ে পড়বে বলে ইচ্ছা।
– বাহ ক্রাশ হলো নিহা আর সুইট বলছো নিশি কে।
– কারন সেটা না। নিহা’র মাঝে একটা এটিটিউড আছে আর নিশি মাঝে সুইটনেস বুঝলি।
– আর এরা কারা?
– এরা হলো ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর!
– ওরা কি করে…
– ওরা সব ডান্সার। ওদের একটা গ্রুপ আছে নাচের। এছাড়া অভ্র’র বিজনেস এ শেয়ার আছে। তবে এখন নিশি’র সাথে পড়ালেখা করে। এরা হলো ওদের বেস্ট ফ্রেন্ড। বলতে গেলে অধরা খানের তিন বান্ধবী ছিল এরা তার ছেলেই তবে ওরা অভ্র’দের সাথে থাকে।
– আর অভ্র’র মা বাবা!
– মা মারা গেছেন আজ ৬ বছর। তবে আমি শুনেছি মেরে ফেলা হয়েছে অনেক নির্মমভাবে। আর বাবা.. মা মারা যাবার পর তার বাবা কে আর দেখা যায় নি।
– তার মানে এই ৪ ভাই বোন একসাথে থাকে।
– না আরো একজন আছে!
– কোথায় সে?
– সে আজ নিখোঁজ ৫ বছর হলো। তাকে নিয়েই কথা হয়েছিল আর নিহা রেগে গেছে।
– ওর ছবি নেই কেন?
– ওর ছবি কোথায় নেই। ভাই বোনরা মিলে ওকে একেবারে মুছে দিয়েছে বলতে পারিস তবে ওর ছোট বোন নাকি মাফিয়া গ্যাং এর লিডার!
– বাহ সব জানিস দেখছি!
– আমি না সবাই জানে কিন্তু প্রমান ছাড়া সব কথা! ওর বোনের নাম কি জানিস?
– কি?
– মেহেরিন বর্ষা খান! তবে ডাক নাম আদুরী, ভাই বোনরা এই নামে ডাকে। এমনকি সবাই এই নামেই চিনে তাকে।
– ওহ্ আচ্ছা অনেক শুনলাম।
– মনে হয় তুই প্রথম ব্যক্তি যে কিনা দেশের সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর রাখে না।
– না প্রথম না বল একমাত্র ব্যক্তি!
য্বোয়া’র দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। য্বোয়া বলে উঠে..
– সেন্টি খেয়ে কাজ নেই কাজের কথা শোন।
– কি?
– এই গলি থেকে মোড় নিলে তিন রাস্তার মোড়ে সেই গলি টা আছে সেখানে আমাকে দিয়ে আসবি
– দিয়ে আসবো মানে, ওই গলিটা ভালো না আর তোকে রেখে আসবো আমি ওখানে। পাগল হলি নাকি।
– এতো বেশি কথা কেন বলিস বল তো। রেখে আসতে বলেছি রেখে আসবি।
– আসবি কিভাবে?
– সেটা নিয়ে তোর ভাবা লাগবে না। আমি ঠিক এসে পড়বো। এখন আমাকে নিয়ে চল লেট হচ্ছি আমরা।
– অনেক রাত হয়ে গেছে এখন যাওয়া কি ঠিক হবে।
– যাবি নাকি আমি একা যাবো!
– আচ্ছা বাবা যাচ্ছি রেগে যাচ্ছিস কেন। কিন্তু আগে একটা কথা দে!
– ওয়াট?
– বাসায় এসে একটা কল দিয়ে বলবি যে তুই বাসায় চলে এসেছিস। তুই প্রতিদিন এভাবে চলে যাওয়ার পর খুব টেনশন হয় আমার।
– আচ্ছা তুই ঠিক ৪ ঘন্টা পর আমাকে একটা কল দিবি আমি কল কেটে দিলে বুঝবি আমি বাসায় চলে এসেছি।
– …
– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– কি বুদ্ধি বাহ বইন বাহ!
– ধন্যবাদ!
– এমন চটকানি দেবো না তোকে!
– আমি লেট হচ্ছি!
– যাচ্ছি…
.
In Bangkok….
ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখে যাচ্ছে একজন। আজ ৫ বছর ধরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছটফট করছে সে। হঠাৎ আরেকজন প্রবেশ করে তার ঘরে। তার উপস্থিতি পেয়ে জিজ্ঞেস করে..
– কি হয়েছে?
– গুড নিউজ আছে!
– আজ ৫ বছর পর গুড নিউজ নিয়ে এসেছো তুমি! তা কি গুড নিউজ!
– আদুরীর খবর পাওয়া গেছে! এখনো দেশেই আছে সে.. ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নিখোঁজ হওয়ার কারনও জানা গেছে।
এমন একটা খবর শোনার জন্যই আজ এতো বছর ধরে অপেক্ষা করছিল সে। খবর টা শোনার পর’ই বাঁকা হাসি দিয়ে কফি’র মগে চুমুক দিলো। অতঃপর জিজ্ঞেস করল…
#Game
#সূচনা_পর্ব
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )