#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_05+06
নিশি রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে..
– আমাদের রোদ্দুর ভাইয়া ইন অ্যা রিলেশনশিপ এ আছেন।
সবাই তাকিয়ে আছে রোদ্দুর দিকে তবে মেহেরিন এর চাহনি দেখে রোদ্দুর এর ইচ্ছে করছে যেন মরে যায়। কিভাবে ভ্রু নাচিয়ে তাকিয়ে আছে। এখন যখন তখন এটা নিয়ে তাকে ধরবে। পিন্চ মারবে!
নিহা বলে উঠে..
– তুই এই আকাম কবে করলি!
কাব্য বলে উঠে..
– তলে তলে এতো দূর!
মেহেরিন বলে উঠে..
– লা লা লা লা…
রোদ্দুর লজ্জায় লাল হয়ে গেছে! সবাই হাসছে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– প্লিজ গাইস বন্ধ কর এবার।
মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি করবো না তুমি তৈরি থাকো!
– আচ্ছা ঠিক আছে কি চাই তোর!
– এত্তো গুলা চকলেট, ইয়ামি ইয়ামি চকলেট!
– আচ্ছা পেয়ে যাবি!
ইহান বলে উঠে..
– তোর এভাবেও লো সুগার। চকলেট সহজে পেয়ে অন্যকিছু বল!
– সবসময় আমাকে বাঁশ দেবার ধান্দায় কেন থাকিস তুই!
সবাই হেঁসে উঠে। নিশি আবারও বলে..
– আরে এখনো বাকি শোন তো!
– হুম বল! কাব্য এর সিক্রেট বল..
– কাব্য! ওর কোন সিক্রেট নেই, মেয়েরা ওকে পছন্দ করে না।
সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশি’র দিকে। এমনকি কাব্য ও। পরে নিশি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে..
– মানে ওর কোনো মেয়ে পছন্দ হয় না!
ইহান বলে উঠে..
– এটাই বল! আমি বলি কি না বলছিস!
মেহেরিন বলে উঠে..
– ইহান বেশি বলছে! ওর সিক্রেট কি রে?
নিশি ইহানের দিকে তাকায়। ইহান অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকে। নিশি হাসতে হাসতে বলে..
– ইহান! ওর কথা জিজ্ঞেস করিছ না। ওর যে কি দুঃখ কি বলবো আমি!
ইহান অসহায় ভাবে বলে..
– নিশি বোন অফ যা না ইয়ার!
মেহেরিন বলে উঠে..
– তুই অফ যা। আপু তুই বল না কি হয়েছে!
নিশি সোফায় আসন পেতে বসে বলে..
– শোন তবে! ( সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে..) ইহান কে যেসব মেয়ে পছন্দ করে সে সবাইকে রিজেক্ট করে দেয়। ওর নাকি কোনো মেয়ে’ই পছন্দ হয় নি। তবে সেদিন কি হয়েছে জানিস! একটা মেয়ে নতুন এসেছে কলেজে! ইহান এই প্রথম মেয়েটাকে দেখে আমাকে খোঁচা মেরে বলে.. “দোস্ত দেখ মেয়েটা কি সুন্দর নাহ” ইহানের কথায় যেন আমি আকাশ থেকে পড়ি। এই প্রথম কোনো মেয়েকে সে সুন্দর বলছে তার মানে নিশ্চিত মেয়েটা সুন্দর। আমি তাকিয়ে দেখি আসলেই মেয়েটা অনেক সুন্দর। অতঃপর পরদিন কি হয়েছে জানিস!
মেহেরিন বলতে যাবে তার আগে নিহা বলে উঠে..
– কি?
মেহেরিন বলে..
– তোমার এক্সাইটেড বেড়ে গেলো কেন আবার।
– আহ্ শুনতে দে না। নিশি বল!
নিশি দাঁত বের করে হেসে হেসে বলল..
– আমি আর ইহান কলেজে গিয়ে দেখি সেই মেয়েটা পুরো কলেজের সামনে রোদ্দুর কে প্রপোজ করছে আর রোদ্দুর ও একসেপ্ট করে ফেলেছে!
সবাই হা আর অবাক হয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান একটা কুশন নিয়ে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। মেহেরিন হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যেতে নেয় তখন অভ্র ওকে ধরে রাখে। রোদ্দুর কি বলবে বুঝতে পারে না। ইহান মেহেরিন কে বলে..
– আর কতো হাসবি এবার একটু চুপ কর!
– কাহিনী টা কি হলো। ভাবলি বউ হয়ে গেল ভাবি! হায়রে কপাল…
– চুপ কর। একদিনে এতদূর আমিও যায় নি। শুধু দেখতে সুন্দর এটাই বলেছি আর কিছু না
রোদ্দুর বলে উঠে..
– দোস্ত সত্যি তো!
মেহেরিন আর পারে না। ধপাস করে নিচে বসে পড়ে। অতঃপর পেটে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। সবাই মুগ্ধ হয়ে তার হাসি দেখতে থাকে। ছোটবেলা থেকে এই হাসির জন্য’ই সবার কাছে প্রিয় সে। হাসির আওয়াজে ডেভিল ও ছুটে আসে। সেও তার হাসি দেখতে ব্যস্ত। এই হাসির মাঝে নাকি অধরার হাসি লুকানো। মেহেরিন ডেভিল কে হাসতে হাসতে বলে..
– ডেভিল! জানো কি হয়েছে? শুনলে হাসতে হাসতে তোমার পেট ব্যাথা হয়ে যাবে।
অভ্র মেহেরিন কে কোলে তুলে আবারও সোফায় বসিয়ে বলে..
– আচ্ছা শুনবে তার আগে তুই চুপ কর!
মেহেরিন অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে..
– ইহান রোদ্দুরের কথার উত্তর দিলি না!
ইহান তওবা করতে করতে বলে..
– ছিঃ এমন কিছু না। আমি প্রথম দিনও এমন কিছু ভাবিনি আর না আজ। এখন তো উনি আমার ভাবি!
রোদ্দুর বলে উঠে…
– আমি তোকে বিশ্বাস করি দোস্ত!
ইহান অসহায় ভাবে বলে..
– দোস্ত তুই ও শুরু করলি!
এবার আরেকদফা হাসির শব্দ হয়! অতঃপর আবার শুরু হয়। নিশি নীলের দিকে তাকিয়ে বলে..
– নীল দা! তুমি! আমার মনে হয় না কোনো মেয়ে তোমাকে চয়েজ করবে?
মেহেরিন বলে উঠে..
– জ্বি না তুমি ভুল! ভাইয়া তলে তলে অনেকদূর চলে গেছে।
মেহেরিন এর কথায় সবার আগ্রহ এখন তার দিকে। নীল বলে উঠে..
– মানে কি বলছিস?
– বেবী, হুম ১০০ টা মিসকল। ২০০ টা মেসেজ আমি সব দেখেছি!
নিহা বলে উঠে…
– সত্যি! নীল কি শুনছি এইসব!
নিশি বলে উঠে..
– নিশ্চিত মেয়েটা অন্ধ! দা তুই কিন্তু মেয়েটার সাথে অন্যায় করছিস। অন্ধ মেয়েটার সাথে এমন করা কিন্তু ঠিক না।
নীল রেগে বলে উঠে..
– প্লিজ ইয়ার, এটা আর কেউ না ইশা!
– ওহ্ আচ্ছা এই গায়ে পড়া মেয়ে, আমিও ভাবি এই ছাড়া আর কে তোকে পাত্তা দেয়!
– নিশি! তোকে তো আমি!
মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়েট গাইস এই ইশা টা কে?
– তোমার ভাইয়ার ক্লাসমেট।
– আস্তা গায়ে একটা গায়ে পড়া মেয়ে।
মেহেরিন বলে..
– ওর সাথে তুমি! কি করে মানে..
নীল বলে উঠে..
– আরে তেমন না। ও নিজেই নাম আমার ফোনে নাম সেভ করে দিয়েছে। আমি কি করবো। আর যত’ই হোক আমার ফ্রেন্ড ও নাও বলতে পারি না। তবে আমি ভালোবাসি নাহ! এটা সত্য!
কাব্য বলে উঠে..
– দা চিল আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। তবে এটাও জানি এই মেয়ে থাকতে অন্য কোনো মেয়েকে তোমার লাইফে আসতে দেবে না।
নিশি বলে উঠে…
– আহারে বেচারা!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– সবার সিক্রেট তুই খুলছিস তোর টা কে খুলবে?
নিহা বলে উঠে..
– ওর সিক্রেট থাকলে তো!
মেহেরিন বলে উঠে..
– আচ্ছা দি তোমার টা?
নিশি বলে উঠে..
– দি ওর নেই। আমি আর দি বোন বোন তো তাই একই রকম। তবে একটা ঝামেলা হয়েছে?
– কি ঝামেলা!
– গত দু’বছর ধরে একটা ছেলে দি এর পিছনে ঘুরছিল।আর আমাদের দি জানোতো কেমন। ছেলেকে পাত্তা দিলো না। দু’বছরের পরিশ্রম শেষে দুঃখে ছেলেটা কয়েক মাস আগে আত্নহত্যা করলো।
মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়াট এটা কোন ধরনের পাগলামি!
নিহা বলে উঠে..
– জানি না। তবে..
– দি বাদ দাও এতে তুমি দায়ী নও।
নিশি বলে উঠে..
– আচ্ছা আমি সবার মুড চেঞ্জ করি ওকে। এখন দা এর পালা!
মেহেরিন বলে উঠে..
– জানি দা এর এমন কিছু নেই! আমার দা তেমন না। কোনো মেয়ের প্রতি তার ইন্টারেস্ট নেই আর হবেও না চিল!
নীল বলে উঠে..
– জ্বি নাহ! আপনার দা এতো ভালো না।
মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে। অভ্র বলে উঠে..
– আরে তোরা আবার শুরু করলি!
মেহেরিন বলে উঠে..
– কি হয়েছে দা?
অভ্র বলে উঠে..
– আরে সেদিন একটা মেয়ে আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে গেছিল আমি শুধু তাকে ধরেছি এই!
– ওহ এটা তো একটা নরমাল ব্যাপার!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আচ্ছা মেয়ে পড়ে যেতে নিলে তাকে ধরে ইটস নরমাল!
কাব্য বলে উঠে..
– দু’জনে দু’জনের দিকে তাকানো ইট’স ও নরমাল! মনে লাড্ডু ফোটা সেটাও নরমাল!
নীল বলে উঠে..
– আবার তাকে ফেলে দেওয়া ইট’স নরমাল!
ইহান বলে উঠে..
– আবার তাকে কোলে তুলে নেওয়া ইট’স নরমাল!
নিশি কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠে..
– সে যদি আবার নতুন পিএ হয় সেটা তো আরো আগে নরমাল!
সবার কথা মেহেরিন বোঝার চেষ্টা করছে, এদিকে নিহা মুখ টিপে হাসছে। অভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– এটা সত্যি!
নীল বলে উঠে..
– তোমার দি কে জিজ্ঞেস করো!
মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকায়। নিহা মুচকি হেসে বলে..
– হ্যাঁ সত্যি!
মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমি সেই পিএ কে দেখতে চাই দা!
অভ্র তাড়াতাড়ি বলে উঠে..
– প্লিজ তুই আর না! এমনেতে সবার পিন্চ শুনে শুনে আমি অস্থির আর না।
অভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগে ডেভিল বলে উঠে..
– স্যার একটা খবর আছে!
– কি?
– ম্যাম ফিরে আসায় সবাই তার ইন্টারভিউ নিতে চাইছে!
নিহা বলে উঠে..
– না বলে দাও ডেভিল, এরকম কিছু হবে না।
– তাহলে কি বলবো ম্যাম।
মেহেরিন বলে উঠে..
– বলে দাও পড়ালেখার জন্য অন্যত্র ছিলাম। এর বেশি উওর যাতে আমার কাছে আসা না করে!
বলেই মেহেরিন উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই উঠে ওর পিছনে পিছনে যায়। এতো বছর নিজের ঘরে আসে সে। ঘরে এসে পুরো ঘর কে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। সবকিছুই আগের মতো আছে। কোনো কিছুর পরিবর্তন হয় নি। মেহেরিন ঘরের বিছানার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হাসি দেয়। অতঃপর পিছনে ঘুরে দাঁত বের করে হেসে বলে..
– জানো আমি সবথেকে বেশি কাকে মিস করেছি।
নীল বলে উঠে..
– আমাকে আমি জানি!
কাব্য বলে উঠে..
– না আমাকে করেছে!
ইহান মুখ ভেংচি কেটে বলে…
– তাহলে আমি কে?
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আমার জান আমাকে মিস করেছে!
নিশি বলে উঠে..
– না আমার বোন আমাকে মিস করেছে!
নিহা বলে উঠে..
– আমার মনে হয় দা কে!
এদিকে অভ্র মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে মেহেরিন এর দিকে। কারন সে জানে মেহেরিন কার কথা বলবে। ঠিক তাই হলো। মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– ঘোড়ার ডিম! কারো টাই হয় নি।
বলেই বিছানায় চলে যায়। অতঃপর তার পুতুল পান্ডার কোলে বসে বলে..
– আমার এই নাদুসনুদুস কালো চশমা ওয়ালা পান্ডা টা কে বুঝলে। তার কিউট কিউট কালো চশমা, এর মোটা পেট টা কে! হি হি হি!
সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিহা আর অভ্র দাঁত বের করে হাসতে থাকে।
.
এদিকে সে রাগে পুরো ঘরের জিনিসপত্র ভেঙ্গে ভাঙছে। কারন একটাই আদুরী বেঁচে আছে। কোনোমতে মেনে নিতে পারছে না এটা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা শুধু মেহেরিন বর্ষা খান’কেই করে আর তার পরিবারকে। কোনোমতে তাদের শেষ করতে চায় সে যেকোনো মূল্যে!
#চলবে….
[ ৯ টার দিকে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬
পরদিন সকালে অভ্র তৈরি হয়ে যায় অফিসে। বাকি সবাই আজ বাসায়। কেউ কোথাও যাবে না, আজ সারাদিন শুধু মেহেরিন”কেই দেবে। সারাদিন ওরা সবাই মিলে গন্ডগোল করবে আর নিহা সব ঠিকঠাক করবে এটাই হলো প্ল্যান। এদিকে আনহা আজ ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে অভ্র কে সরি বলতে। অভ্র অফিসে ঢোকার সাথে সাথে তার মুখের সামনে ফুলের তোড়া তুলে ধরে। অভ্র সানগ্লাস নামিয়ে ফুলের তোড়া দেখে অতঃপর জিজ্ঞেস করে..
– কে?
আনহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে..
– স্যার আমি!
অভ্র এবার ফুলের তোড়া সরিয়ে মুখ দেখার চেষ্টা করে।দেখে এটা আনহা। অতঃপর শান্ত গলায় বলে..
– তুমি!
– সরি স্যার। আসলে সেদিন আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি। আমি জানতাম না এটা আপনি তাই! প্লিজ স্যার এবারের মতো মাফ করে দেন আর কখনো করবো না। চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন না দয়া করে!
– আচ্ছা আচ্ছা রিলেক্স! দম নিয়ে কথা বলো। তাড়াহুড়ো কিসের আমি অফিসেই আছি।
– জ্বি স্যার!
– কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তোমাকে।
– হ্যাঁ স্যার। আমাকে সব বলে দেওয়া হয়েছে। দেখুন আমি আজকের রুটিন ও তৈরি করে ফেলেছি।
– রুটিন!
– হুম। আজকে আপনার দুটৌ মিটিং আছে, আর আমাদের দুই সাইডে কাজ চলছে সেটা দেখতে যাবেন। এছাড়া আমাদের ফ্যাক্টরিতে একটু যেতে হবে।
– ওহ্ আচ্ছা! আর কিছু।
– নাহ স্যার এরপর আপনার ও ছুটি আর আমারও।
অভ্র মুচকি হেসে বলে..
– তোমার ছুটি আমার না। আচ্ছা আমি একটা ফাইল খুঁজছি পাচ্ছি না হয়তো তোমার ডেস্ক এ একটু গিয়ে চেক করো।
– কি রঙের ফাইল স্যার, মানে দেখতে কেমন। কি বিষয়ে , মোটা না পাতলা।
– ব্লাক রঙের একটা ফাইল!
– মানে স্যার আমি বলতে চাইছিলাম কি..
– তোমার ডেস্ক এ শুধু ব্লাক রঙের একটা ফাইল’ই থাকবে। কারন সব ফাইল আমার কাছে বুঝেছো এবার যাও!
– ওহ্ আচ্ছা। স্যার ফুল’টা নেন তাহলে!
– এটা!
– হ্যাঁ এটা আপনার জন্য। আপনার রাগ ভাঙাতে এনেছিলাম। দেখেছেন আমার প্ল্যান কাজ করেছে। ফুল টা সুন্দর না স্যার।
– হ্যাঁ খুব সুন্দর!
– ধন্যবাদ স্যার। আমি এখন’ই যাচ্ছি আর এখন’ই আসছি।
– সমস্যা নেই ধীরে যাও।
– জ্বি স্যার!
অতঃপর আনহা ফাইল নিয়ে আবার আসে অভ্র এর কাছে। অভ্র ফাইল টা নিয়ে বলে..
– গিয়ে চেক করুন সবাই ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা।
– আর কোনো কাজ নেই আমার!
– আপাতত না তবে দরকার পড়লে আমি আবার ডাকবো আপনাকে।
– আচ্ছা স্যার!
আনহা বাইরে এসে বিড় বিড় করতে থাকে..
– স্যার এতো শান্তশিষ্ট কেন। আমি তো শুনেছি স্যার রা অনেক রাগী হয়, অনেক বকা দেয়। কিন্তু এখানে তো আমার স্যার খুব শান্ত। এটা কিভাবে হলো? যাই হোক এতে আমার ভালো। আমাকে না বকলেই চলবে হি হি হি
.
সন্ধ্যায়…
অভ্র সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। পুরো বাড়ি শান্ত বলে একটু কেমন কেমন লাগছে ওর। মেহেরিন বাসায় তবুও সব এতো শান্ত ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে আদুরী বলে ডাকতে থাকে সে। অতঃপর নিহা এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। তার হাতে থাকা কাগজ গুলো অভ্র’র সামনে দেয়। অভ্র তাকিয়ে বলে..
– এগুলো কি?
– আপনার আদরের বোন আদুরীর কার্যকলাপ!
– মানে?
– পড়ে দেখুন।
অতঃপর অভ্র কাগজগুলো পড়তে শুরু করে। পড়ে সে অবাক হয়ে যায়। তাকিয়ে থাকে নিহা’র দিকে। নিহা বলে উঠে..
– হুম এটাই সত্য! আপনার বোন আজকে ওর ৩ বাঁদর বন্ধুকে নিয়ে আম চুরি করেছে, ফুটবেল খেলতে গিয়ে কারো মাথা ফাটিয়েছে তো কারো গাড়ির কাচ ভেঙেছে আবার কারো দোকানের মিষ্টি চুরি করেছে।
– এক দিনে এতো কিছু!
– তবে আর কি? এতো কমপ্লেইন আসতে দেখে আমি নিজেই অবাক।
– নিশি আর নীল!
– ওনাদের সাথে আজ খুব খেলেছে। অবশেষে তারা হয়রান হয়ে এখন ঘুমোতে গেছে।
– এই সময়! আদুরী কোথায়?
– কার্টুন দেখতে বসেছে।
– আদুরী আদুরী!
মেহেরিন এক দৌড়ে চলে আসল। অভ্র’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল…
– দা! তুমি কখন এলে।
– মাত্র এসেছি কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে বলো।
– কি বলবো?
অভ্র কাগজগুলো মেহেরিন কে দিয়ে বলে..
– এই গুলো তুমি করেছো।
মেহেরিন কাগজ গুলো পড়ে মাথা নাড়িয়ে না বলে। নিহা আর অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন বলে উঠে..
– শুধু এতো টুকু না আরেকটা কাজ করেছি।
– আবার কি অঘটন ঘটালে!
মেহেরিন সোফায় গিয়ে বসল। অভ্র আর নিহা ওর পিছে পিছে গেল। নিহা বলে উঠে..
– আর কি করেছিস তুই!
মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে..
– বেশি কিছু না একটা ফলের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছি তবে কেউ আহত হয় নি।
অভ্র আর নিহা হা করে তাকিয়ে আছে। নিহা মেহেরিন এর পাশে বসে পড়ে। অভ্র জিজ্ঞেস করে..
– এটা কিভাবে হলো?
মেহেরিন টি টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বলে..
– আসলে হয়েছিল কি আমি একটু ড্রাইভ করতে চেয়েছিলাম তো সেটাই করেছিলাম মন দিয়ে। কিন্তু হুট করেই একটা বেলুন ওয়ালাকে দেখলাম। জানো ওর কাছে একটা কালো বিড়ালের বেলুন ছিল। আমি সেটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আর হুট করে ফলের গাড়ি’টা আমার সামনে এসে পড়ল আর অঘটন টা হয়ে গেল।
নিহা এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে..
– আদুরী ফলের গাড়ি তোর সামনে আসে নি। বরং তুই ফলের গাড়ির কাছে চলে গেছিস।
– ওই একই। মিষ্টি কুমড়ে ছুরিতে পড়ুক বা ছুড়িতে মিষ্টি কুমড়া শেষে মিষ্টি কুমড়োই তো কাটবো নাকি।
– প্রবাদ বাক্য টা অন্যরকম ছিল না।
– হ্যাঁ তবে আমার মনে নেই। হি হি হি!
অভ্র মেহেরিন এর মাথায় হাত রেখে বলে..
– ড্রাইভ তুমি কেন করছিলে? ড্রাইভার কোথায় ছিল আর গার্ড। ডেভিল কোথায় ছিল। তোমার সাথে না ইহান ওরা ছিল তাহলে!
– আরে আরে একটা একটা করে বলো। একসাথে এতো প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করো। বলছি বলছি! ডেভিল কাজ করছিল আমি ওর থেকে গাড়ি’র চাবিটা চুরি করে নিজে লুকিয়ে চলে যাই। খুব ইচ্ছে করছিল তো তাই। আর ইহান ওদের বলিনি কারন ওরা আমাকে একা যেতে দিতো না তাই!
– কারো ক্ষতি হয় নি তো!
– না না না কারো ক্ষতি হয় নি।
– কার ফলের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছো বলো জরিমানা দেওয়া লাগবে তো।
– হ্যাঁ জরিমানা ডেভিল দিয়েছে। যখন এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন ডেভিল সেখানে চলে গেছিল পরে ও সব ঠিক করেছে। আমি সরিও বলেছি।
অভ্র মুচকি হেসে নিহা কে বলে…
– তুই আরো একবার দেখে সবার জরিমানা দিয়ে আসিস।
– হুম তোমার বোন কান্ড করবে আর আমি ঠিক করবো।
মেহেরিন বলে উঠে…
– হ্যাঁ এটাই তোমার একমাত্র কাজ।
– দেবো একটা। অন্যের জিনিস কেন চুরি করিস, কিনে নেওয়া যায় না।
– আরে চুরি করে খাওয়াতে একটা মজা আছে সেটা তুমি বুঝবে না।
– …
– এভাবে তাকানোর কি আছে। তবে আমি চুরি করলে কি হবে কি করে যে সবাই বুঝে ফেলে জানি না।
অভ্র বলে উঠে..
– তবে চুরি করা ভালো না এটা জানো না।
– কিন্তু আমি তো মূল্যবান কিছু চুরি করছি না। তাই না!
মেহেরিন’র মাথায় চুমু খেয়ে..
– যাই হোক এরকম আর কখনো করবে না।
– আচ্ছা দা শোন না!
– কিহ?
– আমার একটা কালো কিউট বিড়াল চাই!
– কিহহ বিড়াল!
– হ্যাঁ হ্যাঁ বিড়াল। ওই বেলুন ওয়ালা’র কাছেও বিড়াল ছিলো আমার কাছে নেই কেন? আমার ও বিড়াল চাই।
নিহা বলে উঠে..
– ওইটা বিড়াল বেলুন ছিলো।
– আচ্ছা বিড়াল তো। ওই দা এনে দাও না একটা কিউট কিউট কালো বিড়াল।
– বিড়াল আনবো পালবে কে?
– কেন আমি!
– আজ পর্যন্ত নিজ হাতে ঠিক করে খেতে পারো না তুমি আবার পালবে বিড়াল।
– দা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু! আমার বিড়াল চাই মানে বিড়াল চাই ব্যস। তুমি আমাকে বিড়াল এনে দিবা।
– আচ্ছা এনে দেবো।
– সত্যি তো।
– হ্যাঁ বাবা সত্যি! আচ্ছা খেয়েছো!
– না তবে ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে!
– নিহা!
নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– রান্না হয়েছে বাসায় যে খাবে!
– মানে!
– তোমার বোন রান্না করতে দেয় নি।
– কেন?
মেহেরিন বলে উঠে..
– রান্না করতে দেয় নি মানে তুমি তো রান্না করতেই জানো না। দা আমি বলছি দেখো তোমার এই বোন কে নিয়ে কতো জ্বালা হুম রান্না’ই করতে পারে না। শেষে তো কেউ বিয়েই করবে না! আমি একটু বলেছিলাম বিরিয়ানি খাবো বলে কি যে সার্ভেন্ট বানিয়ে দেবে ইশ নিজে বানাতে পারে না।
নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা আমার বোন আমি না সার্ভেন্ট দের রান্না করতে দেয় নি। হয়েছে এবার.., দা তোমার বোন তোমার হাতের রান্না খাবে। দয়াকরে রান্না টা করুন!
– হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে। দা বিরিয়ানি খাবো।
অভ্র স্যুট খুলে বলে..
– বসো আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বানিয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা!
অতঃপর অভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে বিরিয়ানি রাঁধতে শুরু করে। অবশ্য সে রান্না পারে।সব ধরনের রান্না করতে শিখেছে সে। নিহা আর নিশি এসে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন সোফায় বসে দুলতে দুলতে বলে..
– দি তোমরা বরং দাঁড়িয়ে থেকে শিখে নাও কিভাবে রান্না করে। ভবিষ্যতে লাগবে তোমাদের?
নিশি বলে উঠে..
– কেন লাগবে?
– ওমা বিয়ে করে শশুড় বাড়িতে গেলে লাগবে না বুঝি। তাদের রান্না করে খাওয়াবি না।
– কিন্তু আমরা তো বিয়েই করবো না তাই না দি!
– হ্যাঁ ঠিক বলেছিস!
মেহেরিন উঠে রান্নাঘরের কাছে এসে বলে উঠে..
– বিয়ে করবে না মানে? এখানে থাকবে আজীবন..
অভ্র বলে উঠে..
– থাকলেই বা দোষ কি আদুরী! আমার বোন সারাজীবন থাকবে আমার কাছে। বিয়ে না হলে কি মানুষের জীবন চলে না নাকি!
– আমি তা বললাম কখন! কিন্তু দি তোমাদের বিয়ে না হলে আমি বিয়ে খাবো কিভাবে?
– বিয়ে আবার খাই কিভাবে?
– কেন তুমি শোন নি মানুষ বিয়ের দাওয়াত খেতে যায়!
নিশি মেহেরিন এর মাথায় টোকা মেরে বলে..
– ওটা বিয়ের দাওয়াত হবে সেটা বল!
– আরে শর্ট ফ্রম বুঝো না।
অভ্র বলে উঠে..
– আচ্ছা হয়েছে যা ওদের ডেকে নিয়ে আয় খাবার তৈরি, খেতে হবে।
– আচ্ছা।
বলেই মেহেরিন দৌড়ে চলে যায়। অভ্র, নিহা আর নিশি টেবিলে খাবার সার্ভ করতে থাকে তখন নীল, ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য এসে হাজির হয়। সবাই ভিজে একাকার! অভ্র অবাক হয়ে বলে উঠে..
– তোদের এই হাল কেন?
নীশ বলে উঠে..
– আদুরী করেছে!
– আদুরী কিন্তু কেন?
মেহেরিন বলে উঠে..
– তুমি না বললে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য!
– তাই বলে এভাবে!
– আরে ওরা অনেক গভীর ঘুমে ছিল আমি ডেকেছি অনেকবার কিন্তু উঠেনি তাই সবাইকে এক বালতি পানি ঢেলে ঘুম থেকে জাগিয়েছি!
ইহান বলে উঠে..
– কই তুই তো ডাকিস নি?
– আরে ডাকলে তোরা উঠতি না তাই আমি আগেই পানি ঢেলে দিয়েছি। ভালো করেছি না দা!
এদিকে নিশি ওদের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসতে থাকে। অভ্র জানে মেহেরিন এটা ইচ্ছে করেই করেছে। তাই বলে উঠে..
– আচ্ছা যা হবার হয়েছে তোরা চেঞ্জ করে আয় নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
কাব্য বলে উঠে..
– পুরো বিছানা ভিজে একাকার! রাতে ঘুমাবো কিভাবে?
মেহেরিন বলে উঠে…
– এতোক্ষণ ঘুমানোর পরেও তোদের আবার ঘুমোতো যাওয়া লাগবে!
রোদ্দুর বলে..
– খুব মজা লাগছে না তোর! দেখিস আমাদের সময় ও আসবে।
দাঁত বের করে হেসে বলে…
– আচ্ছা!
#চলবে….