I’m Mafia lover পর্ব -৩১+৩২

#i_m_mafia_lover
#part_31
#sabiha_kh

ইশান জোরে হেসে উঠে দাড়ালো এবং একপা দুপা করে জহির এর দিকে এগিয়ে আসতে অসতে বললো – আপনার সময় শেষ মিস্টার জহির চৌধুরী।।।

জহির রেগে আবার গুলি চালাতে যাবে সেই সময় ইশান জহিরের হতে লাথি মারতেই জহিরের হাত থেকে রিভলবার পড়ে যায়।।।





জহির উঠে ইশান কে মারতে গেলে ইশান জহির এর বুকে লাথি মারে । জহির মাটিতে পড়ে যায়। এমন সময় সামনের দরজা দিয়ে জনি তার লোক জন নিয়ে ঢুকে।। আর ঠিক সেই সময় পিছনের দরজা দিয়ে জহিরের লোকজন আসে।।। শুরু হয় দুই দলের মধ্যে গুলা গুলি।। ইশান ইমা ,ইসমা কে নিয়ে সোফার পিছনে গিয়ে বসে। ইসমা খুব ভয় পাই ।। ইশান ইসমা কে ভয় পেতে দেখে তারা তারি বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় এবং কাপা সুরে বলে-

ইশান – ভয় নেই মা তোমাকে কিছু হতে দিবো না।।।

ইমা অবাক চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে ইসমার প্রতি ঈশানের আদর মাখা ভালোবাসা দেখছিল।। ইশান ইমার দিকে তাকিয়ে ইমার হাতের উপর হাত রেখে কাপা সুরে বললো –

ইশান – ইমা তুমিও ভয় পেওনা আমি তোমাদের দুইজনার কিছু হতে দিবো না।। আমার কথা এখন মন দিয়ে শুনো।। তোমাকে ইসমাকে এখান থেকে বের করবো।

ইমা – কিন্তু তুমি??

ইশান – আমার কথা চিন্তা করোনা।।। তোমরা ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো।

ইমা – ইশান ,,,,,,,

বলতেই জনি আসে।।

জনি উত্তেজিত সুরে বলল – স্যার। ওরা জহির স্যার কে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চলে গেছে।।

ইশান জনির হাত থেকে রিভলবার নিয়ে বললো –

ইশান – তুমি এক কাজ করো ইমা ইসমা কে নিয়ে এই জায়গা থেকে চলে যাও।। এখন আমার যেতে হবে । এবার সব হিসাব মিটানোর পালা।

জনি – কিন্তু স্যার আপনার কাধে তো গুলি লেগেছে।।!!!

ইশান – আরে ও কিছু না ।আমি ঠিক আছি।। তুমি যাও এখানে দেরি করা ঠিক হবে না ।।

ইশান ইসমার দিকে তাকালো দেখে ইসমা মায়া ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। ইশান ইসমার কাছে এসে হাঁটু ভেঙ্গে বসলো।।

ইসমা ঈশানের গালে হাত দিয়ে কান্না সুরে বললো –

ইসমা – বাবা তুমি যেও না।। তোমার কাঁধ থেকে রক্ত বের হচ্ছে চলো আমরা বাসায় যাই। আম্মু তোমাকে ওষুধ লাগিয়ে দিবে তুমি একদম ভালো হয়ে যাবে।।।

ঈশানের চোখে পানি টলমল করতে লাগে ইশান ইসমাকে জড়িয়ে ধরে আবেগী সুরে বলে –

ইশান – তোমাকে অনেক ভালোবাসি মামনি।।

ইশান ইসমাকে ছেড়ে তারা তারি চোখ মুছে নিলো।। এমন সময় ইমা বললো –

ইমা – ইশান ইসমা ঠিকি বলেছে। যেও না ।

ইশান ইমার সামনে এসে দাড়িয়ে ধীর সুরে বললো –

ইশান – জীবনে অনেক ভুল করেছি তার একটা বিচার হাওয়া উচিত ইমা।।। আমি তোমার সাথেও অপরাধ করেছি।। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।।। আমার জন্য তুমি জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়েছো।।। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি । যায় হোক আমি এখন আসি।। ইসমার এবং নিজের খেয়াল রেখো ।।

জনি – স্যার নিজের খেয়াল রাখবেন।।

ইশান – হম ।। তুমি এদের খেয়াল রেখো।।( মুচকি হেসে)

ইমা – নিজের খেয়াল রেখো ইশান।।

ইশান ইমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে হম বলে চলে গেলো।।

ইমা ঈশানের চলে যাওয়া দেখে এবং মনে মনে বলে – I am sorry ইশান আমি তোমাকে সত্যি চিন্তে পারিনি।। আল্লাহ তুমি ঈশানের খেয়াল রেখো।।। (চোখ ছলো ছলো হয়ে গেলো ইমার)

এইদিকে ইশান জহির কে ধরার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হলো ।

ইশানের চোখের সামনে ইমার চেহারা ভেসে উটল। এবং গত কাল রাতে ইমা যা বলেছে সেগুলো মনে হতে লাগলো –

( ইমা – তুমি এতোটা নিষ্ঠুর কি ভাবে হতে পারলে ইশান । আমাকে পাওয়ার জন্য অভি কে মেরে ফেললে???
যখন জানতে পারলে অভি আমার স্বামী।। তাহলে কেনো আমাদের জীবন থেকে চলে গেলে না??? তুমি আমার জীবন থেকে সবাইকে কেরে নিলে।। আমার বাবা কে মা কে আর এখন আমার ভালো একজন বন্ধু কে।।। চলে যাও ইশান চলে যাও তোমার মুখ আমাকে আর কোনো দিনও দেখিও না।। )

ইশানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইশান চোখ মুছে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ি আরো জোরে চালিয়ে চলে গেলো ।।

এইদিকে জনি ইমা ইসমাকে নিরাপদে সেই জায়গা থেকে বের করে নিয়ে যেতেই আকাশ আসলো। আকাশের হাতে রিভলবার।। মুখে হতে রক্তের ছিটা।।।

আকাশ উত্তেজিত সুরে বলল – স্যার কোথায়??

জনি – জহির স্যার এর পিছে গিয়েছি ।।।

আকাশ – ok আমি যাচ্ছি তুই ম্যাডাম আর ইসমা কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আই ।।

জনি – ok।।।

আকাশ দ্রুত তাদের লোক জন কে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলো ।।

এদিকে জহির গাড়িতে বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।। আর বলছে –

জহির – আমার বুকে লাথি মেরেছে।। সাহস কত বড়। আমি দুধ খাইয়ে কাল সাপ পুসেছি।। আমি ছাড়বো না ওকে মেরে ফেলবো।।

বলতেই গুলি লাগে গাড়ির গ্লাসে ।।। বুলেট প্রুভ গ্লাস হওয়াতে বুলেট গ্লাস ভেদ করতে পারে না ।।

জহির পিছনে ঘুরে তাকাই দেখে ইশান আসছে।।। হাতে রিভলবার ।।।

জহির – ইশান!!!! ( দাত কটমটিয়ে রেগে বললো ) তোমরা বসে আমার চেহারা না দেখে ওকে গুলি করো। (রেগে)

জহিরের লোকজন জহিরের কথা মত গাড়ির জানালা খুলে ইচ্ছা মত ঈশানের গাড়িতে গুলি করতে লাগলো।। ইশান গাড়ি এদিক ওদিক করতে লাগে যেনো তার গুলি না লাগে।।। এমন সময় পিছন থেকে একটা গাড়ি স্প্রিডে এসে ঈশানের গাড়ির সামনে আসে ইশান একদম অবাক হয়ে যায় । ।। ইশান বুঝে এটা আকাশ ছাড়া কেও করবে না।। আকাশের লোক জহিরের দুই জন লোক কে গুলি করে।। সাথে সাথে তারা মারা যায় । জহির ভয় পেয়ে যায় এমনটা দেখে।।।

জহির – আরো জোরে গাড়ি চালাও।।( ভিত সুর)
জহির সেই দুই ছেলের দেড বডি গাড়ি থেকে ফেলে দেই ।।। গাড়ির ড্রাইভার খুব ভয় পেয়ে গেলো ।। ভয়ে ছেলেটি আরো জোড়ে গাড়ি চালাতে লাগে।। ইশান আকাশ কে ইশারা করে আরেক রাস্তা দিয়ে যেতে বলে । আকাশ ঈশানের কথা মত গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়।। জহির পিছনে তাকাই দেখে ঈশানের গাড়ি অনেক স্প্রিডে আসছে ।

জহির – আরো জোরে গাড়ি চালাও । আরো জোরে (রাগান্বিত সুরে)

ছেলেটা আরো জোরে গাড়ি চালায় এমন সময় পাশ থেকে আকাশ গাড়ি দিয়ে জহিরের গাড়িকে মেরে দেই। ছেলে টা গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে এবং গাড়িটা একটা নির্মাণাধীন ব্রীজের উপর উঠে যায়।।। ছেলেটি গাড়ি ব্রেক করতে করতে গাড়ি এক চাকা নির্মাণাধীন ব্রিজের বাইরে চলে যায়। এবং গাড়ি নিচে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ।।

জহিরের কপাল কেটে যায়।। জহির কপাল ধরে পিছনে তাকাই দেখে ঈশানের গাড়ি তাদের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে ।।

জহির কোনো কিছু না ভেবে নিজের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বের হতেই যাবে এমন সময় ইশান পিছন থেকে তার গাড়ি দিয়ে জহির এর গাড়ি ধাক্কা মারে গাড়ি ব্রীজ থেকে ৬০ ফুট নিচে পানির মধ্যে পরে যায়।।।

আকাশ জহিরের গাড়ি নিচে পড়তে দেখে সস্থীর একটা নিশ্বাস ছাড়ে।।। এবং আসতে ধীরে গাড়ি নিয়ে ঈশানের গাড়ির দিকে আসতে লাগে।।।

ইশান গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে সামনে তাকাই দেখে লাল বর্ণের সূর্যটা আকাশের বুকে লুকিয়ে যাচ্ছে আসতে আসতে। ইশান গাড়ির সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে ইমা ইসমার চেহারা মনে করে নিল এবং গাড়ি স্টার্ট দিলো।।। পিছনে আকাশ গাড়ি নিয়ে আসতেই দেখে ঈশানের গাড়ি সামনে ব্রিজের ধারে দিকে যাচ্ছে।।। আকাশ ভয় পেয়ে যায় ।

আকাশ উত্তেজিত সুরে বললো-

আকাশ – না স্যার না আপনি এটা করতে পারেন না।। স্যার ,,,,,( বলে চিৎকার দিলো)

ইশানের কানে কোনো শব্দই যাচ্ছে না।। ইশান ইমা ইসমার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করছে ।।। ইসমার হাসি ইমার কথা ইসমার বাবা বলে ডাক দেওয়া সব যেনো ছবির মত ঈশানের চোখের সামনে ভাসছে।।।

আকাশ কান্না করে দিলো এবং আরো জোড়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে লাগলো । আকাশ আসতে আসতে ঈশানের গাড়ি ৬০ ফুট উঁচু ব্রীজ থেকে নিচে পানিতে পরে যায়।।।। ধীরে ধীরে গাড়ি পানির নিচে ডুবে যেতে লাগে।।। ইশান চুপ করে চোখ বন্ধ করে ইসমা ইমার ভাবনায় ডুবে থাকে ।।

এদিকে আকাশ গাড়ি থেকে বের হয়ে জোরে স্যার বলে চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠে।।।।

আকাশ – এটা কেনো করলেন স্যার এটা করলেন।। (বলে হাওমাও করে কাদতে লাগে।)

ইশান – আমি ইশান এই পৃথিবী তে এসেছি এক এতিম হয়ে ।।। যাকে বাবা বলে জেনে এসেছি বুঝতেই পারিনি সে আমাকে তার কাজে ব্যবহারের জন্য বাবার পরিচয় দিয়ে বড় করেছে।।। আমি ছিলাম সেই প্রথম থেকেই এক অগোছালো দুষ্ট ছেলে । যার কাছে সব কিছু টাকার বিনিময় মনে হতো । এই চিন্তা বদলাতে আসলো আমার জীবনে ইমা ।। যার হাত ধরে ভালো পথে হাঁটতে শুরু করেছিলাম কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল তার জীবন থেকে আমি ছিটকে পড়লাম অনেক দূর।।।। আবার তার সাথে দেখা হলো ৬ বছর পর ।।। অনেক কিছু বদলে গেলেও ইমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো বদলায়নি।।। কিন্তু বুঝতে পারনি আমার অজান্তেই আমি ওর জীবনটা শেষ করে ফেলেছি।।। যখন জানতে পেরেছি ভেবেছি ওকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। তারপর একদিন জানতে পড়লাম ইসমা আমার মেয়ে।।। তখন নিজের জীবনটা খুব পূর্ণ পূর্ণ লাগতে লাগলো ।। ঠিক করেছিলাম ইমার হাত ধরে অন্ধকার থেকে আলোতে আসবো। নতুন করে জীবন শুরু করবো ইমা ইসমাকে নিয়ে ।। কিন্তু আর হলো না ।। যেই মানুষটাকে আমি আমার প্রাণ মনে করতাম তার চোখে আজ আমি অনেক বড় অপরাধী ।।। আমি এই অপরাধী জীবন নিয়ে কি ভাবে বাঁচবো।। আমার বাচার মতো ও তো কোনো কারণ নেই।। আমি একা বড় একা গেছি।। তাই জীবনের সমাপ্তিটা এ ভাবেই করলাম।।।। এই অভিসপ্ত জীবন থেকে মুক্তি নিলাম।। ভালো থেকো তুমি ইমা তোমার জীবন থেকে এই অভিশপ্ত ঈশানের নাম কেটে দিলাম সারা জীবনের মতো।।।।
#i_m_mafia_lover
#part_32
#sabiha_kh

ইশান আসছে কিনা দেখার জন্য ইমা বার বার জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে।। ইমা জানালার সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বললো –

ইমা – ইশান কখন আসবে তুমি?? আর অপেক্ষা করতে পারছিনা ।। আজ তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।। ইশান আমাদের ভালোবাসা যেখানে শেষ হয়ে গিয়েছিল আমরা আবার সেখান থেকে শুরু করব।। সব নতুন ভাবে সাজাবো।। তোমাকে কখনো নিজেকে একা ভাবতে দিবো না।।। প্রমিস।।

রাত ৯ টা,,,,,

ইমা – জনি অনেক টা সময় পার হয়ে গেলো তো।। ঈশান এখনও আসছে না কেনো??? (চিন্তিত সুরে)

জনি – ম্যাডাম আমি কিছুই বুঝতে পারছি না রাত ৯ টা বাজে (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো) এখনও কোনো খবর নাই আর আকাশের তো ফোন টাও বন্ধ।। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।।।

রোকসানা আসলো।। ইমা রোকসানার দিকে তাকিয়ে বললো – ইসমা ঘুমিয়েছে ??

রোকসানা – জী ম্যাডাম।।

ইমা – রোকসানা তুমি কপালে চোট পেয়েছ যাও এখন একটু আরাম করো।।

রোকসানা – না ম্যাডাম আমি ঠিক আছি ।

এমন সময় জনির ফোন বেজে উঠলো।। জনি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননন নাম্বার ।।।

জনি – এটা আবার কে?? (বিস্মিত চোখে ) জনি ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো।।

ইমা কে কল করেছে সুনার জন্য ওয়েট করছে।।

জনি – কি???( উত্তেজিত সুরে)

ইমা জনির এমন উত্তেজিত হাওয়া দেখে তার মনের মধ্যে উল্টা পাল্টা চিন্তা আসতে লাগে।।।

ইমা আর বসে থাকতে পারলো না উঠে জনির হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলো।।

আকাশ কান্না করতে করতে বলল – সব কিছু এত দ্রুত হয়ে গেছে যে আমি কিছুই করতে পারলাম না।।। আমি স্যার কে বাচতে পারলাম না রে।। (বলে হাওম করে কেঁদে উঠে )

ইমা আকাশের কথা শুনে যেনো বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।।। ইমার হাত থেকে ফোন টা মেঝেতে পরে যায়।। জনি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে কাদতে লাগে।।। রোকসানা হতবাক হয়ে যায়।।। রোকসানা কাকে শান্তনা দিবে। এমন একটা ঘটনা কেও মানতে পাড়ছে না।।

ইমা জনির দিকে তাকালো দেখে জনি কান্নায় ভেঙে পড়েছে।।।

ইমা – এই জনি কাদঁছো কেনো?? ঈশানের কিচ্ছু হতে পারে না।। আমি জানি ওর কিছু হয় নি।।।। (জনি ইমার কোথায় কোনো সারা দেই না শুধু কান্না করেই যাচ্ছে )

ইমা দ্রুত হেঁটে নিজের রুমে গেলো এবং রেডি হতে লাগলো। ইমার কানে আকাশের বলা কথা গুলো বার বার বাজতে লাগলো।।।

ইমার চোখে পানি আসলেও ইমা খুব কষ্টে নিজের চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে এবং নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে যে ঈশানের কিছুই হয়নি ।।।

ইমা আর দেরি না করে বের হলো।।।

জনি – ম্যাডাম চলুন ।।। আমিও যাবো।।। (কান্না সুরে)

ইমা জনির সাথে চলে গেলো সেই জাগায়।।।

ইমা, জনি দেখে ব্রিজের উপর পুলিশ এর গাড়ি।। লোকজনের ভিড়।।। সবাই নানান ধরনের কথা বলছে।।। জনি গাড়ি সাইড করে রাখলো।। জনি ইমা গাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর যেতে দেখে আকাশ এক সাইডে আঁটোসাঁটো হয়ে আনমনে বসে আছে।।

জনি – ওই তো আকাশ ম্যাডাম ।।।

ইমা জনি দ্রুত আকাশের কাছে গেলো।। জনি আকাশের কাধে হাত রাখতেই আকাশ চমকে জনির দিকে তাকাই।।

জনি – আকাশ!!!

আকাশ কোনো কথা না বলে ঝাপটে ধরলো জনি কে এবং জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো।।।

ইমা আকাশের এমন কান্না দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।।।

ইমা জনি কে সরিয়ে দিয়ে আকাশের শার্ট এর কলার ধরে রাগান্বিত সুরে বললো – কেনো বিশ্বাস করাতে চাচ্ছ ??আমি বিশ্বাস করি না ।। ঈশানের কিছু হয়নি। বলো ঈশানের কিছু হয় নি।।

বলতেই একজন পুলিশ আসে।। ইমা আকাশ কি ছেড়ে দিল।।

পুলিশ – মিস্টার আকাশ পানি থেকে মিস্টার ঈশানের গাড়ি তুলা সম্ভব হয়নি।।। ডুবুরিরা জানিয়েছে গাড়ির ভেতরে মিস্টার ঈশানের বডি পাওয়া যায়নি।।।

জনি – মানে??( অবাক সুরে)

পুলিশ – আসলে এতো উপর থেকে গাড়ি পড়ার কারণে গাড়ির দরজা জয়েন্ট থেকে ছুটে গেছে।।। তারা উপর পানির স্রোত ।। তবুও ডুবুরিরা অনেক খুজা খুঁজি করেছে কিন্তু কোথাও পাইনি মিস্টার ইশান এর বডি।। তাই তারা ধারণা করছে পানির স্রোতে হয়তো মিস্টার ঈশানের বডি ভেসে চলে গেছে।।। আ,,, মিস্টার আকাশ আমরা আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা বাদ করতে চাই।।। আসুন আমার সাথে।।। ( আকাশ পুলিশের সাথে চলে গেলো।। )

জনি – হায় আল্লাহ এগুলো কি হয়ে গেলো ??( কান্না করে )

জনি ইমার দিকে তাকায় দেখে ইমা পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে।।।। যেনো তার কানে কোনো শব্দ ,কথা, কিছুই পৌঁছাচ্ছে না ।। এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকে গর্জন দিয়ে উঠে।।। জনি ঘড়ির দিকে তাকাই দেখে রাত ১১: ৩০ বাজে।। জনি চোখ মুছে ইমার কাছে এসে বলে –

জনি – ম্যাডাম মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। আপনি এখন বাসায় চলুন ।। ইসমা বাসায় আছে ওর ঘুম ভেঙে গেলে আপনাকে খুঁজবে।।

ইমা কোনো কথা বললো না একপা দুপা করে গাড়ির দিকে যেতেই মাথা ঘুরে ঠাস করে মাটিতে পড়ে যায়।।। জনি ম্যাডাম বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে ।। লোকজন ধরাধরি করে ইমাকে গাড়িতে বসাই জনি পানি ছিটা দিলে ইমার জ্ঞান ফিরে।।

জনি – ম্যাডাম আপনি ঠিকাছেন!! (চিন্তিত সুরে)

ইমা – হম ।।।( মাথা ঝুঁকিয়ে)

জনি গাড়িতে উঠে আকাশ কে কল করে জানিয়ে দিল সে ইমাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।।।

Time Skip

ইমা বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।।। রোকসানা জনির দিকে তাকালো দেখে জনির চেহারা মলিন হয়ে আছে।। রোকসানা জনির কাছে আসলে জনি আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না।।। কান্না করতে লাগে ।।। রোকসানা জনি কে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেই।। জনি কাদতে কাদতে বলে –

জনি – এগুলো কি হয়ে গেল রোকসানা ।। কখনো ভাবিনি স্যার কে এভাবে হারাতে হবে।।। স্যার আমাদের মাথার ছাতা হয়ে ছিল। কি করে মানবো স্যার আর নেই।।।

রোকসানা – নিজেকে সামলাও জনি।। এভাবে ভেঙে পড়লে আকাশের কি হবে।।।

জনি রোকসানা কে ছাড়লো এবং চোখ মুছে বললো – হম ঠিক বলেছ । আমার এখন আকাশের কাছে যাওয়া উচিত । ও তো সব কিছু নিজের চোখে দেখেছে।। ওর ভিতরে তাহলে কি হচ্ছে।। Ok আমি আসি তুমি ম্যাডাম আর ইসমার খেয়াল রেখো।।।

জনি চলে গেলো।।। রোকসানা ইমার রুমের দরজার সামনে গেলো দরজায় নক করতে গিয়ে আর করলো না।। মনে মনে ভাবলো –

রোকসানা – ম্যাডাম কে কান্না করতে দেওয়া উচিত।। (রোকসানা ইমার দরজার সামনে থেকে চলে গেলো)

ইমা মেঝের উপর আটোসাটো হয়ে বসে আছে।। তার চোখে এক ফোঁটা পানিও নেই । যেন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইমা।
এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠে এবং বিকট গর্জন দিয়ে উঠে আকাশে। ইমা চমকে উঠে বাইরে তাকাই দেখে জোরে বৃষ্টি নেমেছে।।। ইমা মেঝে থেকে উঠে ব্যালকনিতে আসে।। বৃষ্টির পানিতে ইমা ভিজে যাচ্ছে।।। ইমার ঈশানের সাথে শেষ দেখা এবং ঈশানের বলা শেষ কথা মনে হয়ে যায়।।।
( ইশান – জীবনে অনেক ভুল করেছি তার একটা বিচার হাওয়া উচিত ইমা।।। আমি তোমার সাথেও অপরাধ করেছি।। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।।। আমার জন্য তুমি জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়েছো।।। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি । যায় হোক আমি এখন আসি।। ইসমার এবং নিজের খেয়াল রেখো ।।)

ইমা দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।।

ইমা – কেনো কেনো এমন করলে ইশান।। আমার উপর তোমার এত অভিমান ছিল।।। আমাকে আমার কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলে না।। একটা বারও ইসমার কথা টাও তোমার মাথায় আসলো না!! তুমি একটা কাপুরুষ ইশান ।।আমি তোমাকে ঘৃণা করি । ঘৃণা করি ইশান তুমি শুনতে পেয়েছ।। তোমাকে ঘৃণা করি।।। (চিৎকার দিয়ে কান্না করে বললো)

ইমা মেঝেতে ঠাস করে বসে পড়লো এবং জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো ।।

১০ দিন পর,,,,,,

কেও এখনও তেমন শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি ।।। কিন্তু সবাই চেষ্টা করছে শোক কাটিয়ে উঠতে।।

বিকাল বেলা ,,, ইমা জানালার কাছে বসে প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ দেখছে।। এবং ঈশানের কথা ভাবছে ।। এমন সময় ইসমা আসলো ইমার কাছে।।

ইসমা – আম্মু!!!

ইমা চমকে পিছনে তাকালো দেখে ইসমা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।। ইমা উঠে ইসমার কাছে আসলে ইসমা ইমাকে জড়িয়ে ধরে।।।

ইমা – ইসমা কি হয়েছে মা ??

ইসমা – আম্মু ইশান বাবাকে স্বপ্নে দেখেছি।। দেখি বাবা আমাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। আমাকে নিয়ে অনেক সুন্দর জাগায় বেড়াতে গিয়েছে।। আম্মু বাবাকে এনে দাও প্লিজ।। প্লিজ আম্মু বাবাকে খুব মিস করছি ।। (কান্না করে)

ইমার কান্না চলে আসলো।ইমা ইসমাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো –

ইমা – আমি কি ভাবে তোমাকে বলবো মামুনি তোমার বাবা আর নেই।।।

Time Skip

রোকসানা জনির মন ভালো করার জন্য কল করে বাসায় আসতে বললো।। জনি আসলে রোকসানা জনিকে তার সাথে কাজে সাহায্য করতে বলে।।। রোকসানা চেষ্টা করছে সবাই যেনো আবার সাভাবিক হয়ে যায়।।।

রোকসানা জনিকে বললো –

রোকসানা – জনি আকাশ কোথায় আছে ??

জনি – জানিনা ৪ /৫ দিন থেকে কথা হয়নি । আর আমার সাথে দেখাও করেনি।।।

বলতেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।। রোকসানা যেতে লাগলে জনি রোকসানা কে থামতে বলে।।

জনি – তুমি কাজ করো আমি দেখছি।।।

জনি গিয়ে দরজা খুলে দেখে আকাশ ।।

আকাশ – কি খবর ??

জনি – এইতো।। কোথায় ছিলি তুই । তোর ফোন বন্ধ!!

আকাশ – ফোন টা নষ্ট হয়ে গেছে।।

জনি – আয় ভিতরে আয়।।

আকাশ ভিতরে এসে বসলো।। রোকসানা আসে দেখে আকাশ।।

রোকসানা – আকাশ !!

আকাশ – কেমন আছো রোকসানা??

রোকসানা – ভালো আছি তুমি কেমন আছো??

আকাশ- হম ভালো।। আ,, ইমা ম্যাডাম আছে বাসায়??

রোকসানা – আছে। আমি ডেকে আনছি।। (বলে রোকসানা চলে গেলো।)

আকাশ – জনি আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।। আমি এই শহর ছেড়ে চলে যাবো।

জনি – কেনো ?(কপাল কুঁচকে) আকাশ তুই চলে গেলে আমার কি হবে।। আচ্ছা তাহলে আমিও তোর সাথে যাবো।।

আকাশ – না ।। জনি তোর এখানে থাকা উচিত।।( জনির কাধে হাত রেখে ) তুই জানিস স্যার চেয়েছিল তোর এর রোকসানার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাক । তোরা নতুন করে সব শুরু কর।।

জনি – আমি জানি।। স্যার রোকসানাকে ভাবতে বলেছিল ।। কিন্তু রোকসানা আর কোনো কথা বলেনি।। হয়তো ও চাইনা আমাকে ।।

বলতেই পিছন থেকে রোকসানা বললো – আমি চাই তোমাকে।।।

জনি আকাশ রোকসানার দিকে তাকালো।

রোকসানা – জনি আমি তোমার মত ছেলে কোনোদিন পাব না।। হয়তো মুখে কিছু বলিনি কিন্তু মনে মনে তোমাকে ভালোবাসি।। আর আজ প্রকাশ ও করে দিলাম।।

এমন সময় ইমা আসলো।।

ইমা – আমিও চাই রোকসানা জনির বিয়ে টা হোক।। ইশান ও চেয়েছে।।

আকাশ – হম শুনে সত্যি খুব ভালো লাগছে।। যায় হোক।। ম্যাডাম ওদের বিয়ে টা তারাতারি দিয়ে দিয়েন।।।

জনি – এমন করে কেনো বলছিস তুই ও তো থাকবি।।

আকাশ – না আমি থাকতে পারবো না।। আসলে আজ রাতেই এই শহর ছেড়ে দিবো ।

ইমা – কথাই যাবে ??

আকাশ – জানি না।। তবে এই শহরে আর থাকতে পারছি না ম্যাডাম ।।দম বন্ধ হয়ে আসছে । শহরটা এখন আমার কাছে অপরিচিত।। আসলে আমি সব চেয়ে বেশি সময় ইশান স্যারের সাথে ছিলাম। সব জাগায় গিয়েছি।। তাই সবকিছু আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত কষ্ট দিচ্ছে।। (আবেগী সুরে)

ইমা – হম বুঝেছি।। তুমি যাও আকাশ নিজের খেয়াল রেখো ।।

জনি – তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি ভালো কথা।। কিন্তু অন্তত বিয়ে পর্যন্ত থাক।।।

আকাশ – না রে।। আমার যেতে হবে।। আল্লাহ যদি বাচিয়ে রাখে আবার আমাদের দেখা হবে।।

জনি – আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস ভাই।।

আকাশ – হম।। ( জনি আকাশ কে জড়িয়ে ধরলো)

তারপর আকাশ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ।।

এভাবে সময় কাটতে লাগে। জনি রোকসানার বিয়ে হলো ।।। সময়ের সাথে সব কিছু আবার সাভাবিক ভাবে চলতে লাগল তাদের জীবনে।।। জনি রোকসানা বিবাহিত জীবন খুব সুন্দর ভাবে কাটতে লাগলো।। ইমা খুব বড় ফেমাস ডাক্তার হয়ে উঠলো। ইসমা আসতে আসতে বড় হচ্ছে এবং পড়া শুনাই খুব ভালো হয়েছে ।।।

প্রায় ২ বছর কেটে গেলো,,,,,,,

ইমা কার্ডিওলজি উপর পড়াশুনা করতে আমেরিকা যাবে ঠিক করলো।।

ইমা ইজমার সাথে কথা বলতে ইসমার রুমে রুমে আসে।।

ইমা – ইসমা !!!!

ইসমা – আম্মু তুমি আসো ভিতরে আসো।

ইমা – তোমার সাথে একটু কথা বলতে আসলাম।।

ইসমা – হম বলো।।

ইমা – সামনের সপ্তাহে আমরা আমেরিকা যাবো। কার্ডিওলজি এর উপর আমি ডিগ্রি নিতে চাই। তো তোমাকে ওখানে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দিবো ।। তোমার কিন্তু আরো ভালো করে পড়া শুনা করতে হবে ।।

ইসমা – ঠিকাছে আম্মু।।

ইমা – ok অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরও।।

ইমা ইসমাকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো।।। ইমা চলে গেল ইসমা উঠে বসে এবং চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে –

ইসমা – আল্লাহ প্রতিদিনের মতো আজকেও আমার মনের কথা তোমাকে বলতে আসলাম।। তুমি তো জানো আমি ইশান বাবাকে কতো ভালোবাসি।। প্লিজ আল্লাহ আমার ইশান বাবাকে তুমি আমার কাছে ফিরিয়ে দিও।। আমার আর কিচ্ছু চাই না শুধু বাবাকে চাই । এখন আমি শুয়ে পড়ছি। Good night ।।।

,,,,,,, Continue,,,,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।।
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।।।

,,,,,,,,,,, Continue,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here