Love Treatment পর্ব -৩১+৩২

#Love_Treatment
Part- 31
Writer- Tanzin Islam Ishika

সেই দিনের রাতের পর থেকে সব পাল্টে যায়,,, এক রাতেই যেন নিশম আর তান্নাজের জীবন উলোটপালোট হয়ে যায়,,, এখন নিশম আর তান্নাজ এক নেই,,, নেই তাদের মধ্যে সেই ভালবাসা,, নেই সেই দুষ্টুমি,, নেই সেই চঞ্চলতা,, আছে এক রাশ অবহেলা,,, যার প্রভাব নিশম আর তান্নাজ উভয়ের উপরই পরছে,,, আর তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরছে তাদের সম্পর্কে,, যা দিন দিন তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দিচ্ছে,,,


তান্নাজের উপরে সূর্যের আলো পরতেই তান্নাজ আদো আদো করে চোখ খুলে,,, খুলে সে উঠে বসে,,, সে আশেপাশে নিশমকে খুজতে থাকে,,, কিন্তু না নিশম কোথাও নেই,,, প্রতিদিনই এমন হয়,, সে তার পাশে নিশমকে আশা করে,, কিন্তু আফসোস পায় না,, তার দোষেই আজ নিশম তার থেকে দুরে,,,আজ প্রায় এক সপ্তাহ এর উপরে হতে আসলো যে নিশম আর তান্নাজ এক সাথে এক রুমে থাকে না,, এক সাথে কগায় না,, ভাল মত কথা বলে না,, আগের মত যে এখন কিছুই নেই,, এইভেবে তান্নাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়,,
তারপর ঘড়িতে তাকিয়ে থেকে ৯.৩০ বাজে,, তার মানে সে অফিস চলে গিয়েছে, তান্নাজ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে কামিজ পরলো,, কেন না তার যে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে যে নিশম তাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে,,তাকে ছাড়া তান্নাজের শাড়ি পরতে একটুও ভাল লাগে না,,,সেই রাতের পর না নিশম তান্নাজের কাছে এসেছে না তান্নাজের আর শাড়ি পরা হয়েছে,,, তান্নাজ নাস্তা না করেই অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে,,, তার যে আজ কিছুই ভাল লাগছে না,,, এক শূন্যতা বিরাজ করছে তার মধ্যে,, কেন তা তান্নাজের অজানা নয়,,, সে যে আগের নিশমকে বড্ড বেশি মিস করছে,, কিন্তু সে তহ নিজেই তা সেই আগের নিশমকে স্বরিয়ে দিয়েছে,, তাহলে এখন কেন সে আগের নিশমকে খুজছে,,, আসহলে বলতে কি,, নিশম তার একটা বাজে অভ্যাসে পরিনত হয়েছে,,, যা বড্ড বাজে অভ্যাস,,যা সে চাইলে ছাড়তে পারছে না,,, কিন্তু তা যে এখন তার কাছে ধরা দিচ্ছে না,, আর না তান্নাজ তা নিজের কাছে আগলে রাখতে চাচ্ছে,,, তান্নাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়,,,

অফিসে গিয়ে সে নিশমের কেবিনে যায়,,,নিশমের কেবিনে যাওয়া যে তার সেই একটা বাজে অভ্যাসের অংশ,,, তান্নাজ কেবিনে গিয়ে দেখে সামিরা আগেই সেখানে বসে নিশমের সাথে গল্প করছে,,, তান্নাজকে দেখে নিশম বলে উঠে,,

নিশমঃ হোয়াট দ্যা হেল,, এইটা কি অফিস নাকি আপনার শ্বশুর বাড়ি যে যখন ইচ্ছা তখন চলে আসবেন,, টাইম দেখেছেন কয়টা বাজে,,, ১০. ২০ বাজে,, অফিস আওয়ার ১০ টা,, আমি কি জানতে পারি আজ লেট হওয়ার কারনটা কি,,,

তান্নাজঃ সরি স্যার,, উঠতে লেট হয়ে গিয়েছে,

নিশমঃ হোয়াট এ এসকিউজ,, অন্য কিছু বললেও তাও হত,, যতসব মেলো ড্রামা,,, যাই হোক আর আপনি আমার কেবিনে কি করছেন,, যান নিজের কেবিনে যান,,, আর মিস তান্নাজ যাওয়ার আগে আমার আর ম্যামের জন্য দুই কাপ কফি পাঠিয়ে দিয়েন,,

তান্নাজঃ জ্বী স্যার,

তান্নাজ তাদের জন্য দুইকাপ কফি পাঠিয়ে দেয়,,, আর নিজের কেবিনে গিয়ে বসে,,, তখনই তার ফোনে একটা কল আসে৷ আননোং নাম্বার থেকে,,তান্নাজ ফোন হাতে নিয়ে দেখে আবার পাশে রেখে দেয়,,, সে জানে ফোনের বিপরীত পাশে থাকা ব্যক্তি কি বলতে চায়,, যা সে শুনতে মোটেও ইচ্ছুক নয়,, আবার ফোনটি বেজে উঠে,,, কিন্তু তান্নাজ তা ধরলো না,, প্রায় ৩-৪ বার ফোন এসে কেটে যায়,, আবার যখন ফোনটি বেজে উঠে তান্নাজ এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুলে,,,

তান্নাজঃ কি সমস্যা কি আপনার,, কেন বার বার ফোন করছেন,,

লোকটিঃ কি করবো বলেন,, আপনি যে আমার কথা বুঝতে চাইছেন না,, তাই প্রতিদিনই ফোন করে জ্বালাই,,

তান্নাজঃ আপনার কথা আমি বুঝতে ইচ্ছুক নই,, তা কি আপনি বুঝে না,,, আর আমার পিছেই বা পরছেন কেন,,

লোকটিঃ আমি আগেও বলিছি আর এখনও বলছি,, আমি আপনার শুভ কামনা কারী,, আপনার ভালোটাই আমি চাই,, তাই তহ বলছি নিশমকে ছেড়ে দিন,,, সে তিলে তিলে আপনাকে শেষ করে দিবে,,, নিজের ভালবাসার জ্বালে আপনাকে আবদ্ধ করে প্রতিটা মুহূর্ত কষ্ট দিবে,,,

তান্নাজঃ দেক তাতে আপনার কি হা,,, আমাকে মেরে ফেলুক তাতেও আমার কিছু যায় আসে না,, সো আপনি আপনার এই ফালতু পেচাল আপনার কাছেই রাখেন,,,

লোকটিঃ কেন বুঝতে চাইছেন না,, সে সামিরার সাথে ভাল আছে,, সে এখন আপনাকে চায় না,, এত দিন সামিরা ছিল না তাই আপনাকে তার প্রয়োজন ছিল,, নিজের কামনা মিটাতে আপনার দরকার ছিল,, এখন যখন সামিরা এসে পরেছে তাই এখন আপনার প্রয়োজনও ফুরিয়ে এসেছে,,,

তান্নাজঃ আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে আসলে আমি নিজেই ওর লাইফ থেকে চলে যাব,, তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না,,, আর হা আমার একটা প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে,,,

লোকটিঃ কি প্রশ্ন,,,

তান্নাজঃ আপনি আমাদের সম্পর্কে এত কিভাবে জানেন,, আর আপনি কি সে,, যে আমাকে ৫ বছর আগে সেই ছবি আর ভিডিও টা আমাকে পাঠিয়েছিলেন,,,

লোকটিঃ আপনাদের সম্পর্কে এত কিভাবে জানি তা না হয় অজানাই থাক,,, আর হা আমি এই সে যে সেই ছবি আর ভিডিওটা আপনাকে পাঠিয়ে ছিলাম,, একবার তহ আপনাকে বাচিয়েছি,,, এইবারও বাচাতে চাই,,, তাই বলছি নিজের মন আবার ভাংগার আগে চলে যান নিশমের লাইফ থেকে,,,

তান্নাজঃ আমি কি করবো না করবো তা আপনার কাছ থেকে আমাকে জানতে হবে না,,, আর দয়া করে কোন দিন এই নাম্বারে ফোন করবেন না,,,

টুট টুট টুট

তান্নাজ ফোনটি রেখে অফ করে দেয়,,, আর ভাল লাগছে না তার,,, কি করবে সে বুঝতে পারছে না,, তার এক সিদ্ধান্তের জন্য আজ তান্নাজ এমন দোটানায় পরে গিয়েছে,, সে যে এর ফলাফল না দেখে কোথাও যেতে পারবে না,,, কেন যে সেই রাতে সে এমনটা করলো,, না সে ভুল ডিসিশন নেয় নি,,, তাকে এইসব সহ্য করতেই হবে,,, এর আগের বারের মত সে এই একই ভুল করবে না,, সে এইবার নিজের চোখে সব দেখে শুনে তারপর যাবে,,,, এইসব ভাবতেই ছিল তখন নিশমের ডাকে সে হচকিয়ে দাড়ায়,, সে তাকিয়ে দেখে নিশম তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,, সে কিছু বুঝার আগেই নিশম চেচিয়ে উঠে,,,

নিশমঃ এইসব কি মিস তান্নাজ,,

টেবিলের উপর কিছু ফাইল ছুরে মেরে,,, তান্নাজ ফাইল গুলো হাতে নিয়ে দেখে এস আর কোম্পানির রিপোর্ট,, যা সে পরশু সাবমিট করেছে,,, তান্নাজ নিশমকে বলে,,

তান্নাজঃ এইটা তহ এস আর কোম্পানির রিপোর্ট,, এতে কি হয়েছে স্যার,,

নিশমঃ কি হয়েছে মানে,, কি হয়নি,, আপনাকে আমার জায়গায় তাদের সাথে একটা মিটিং এ যেতে বলি আর তার ইনফরমেশন এর উপর রিপোর্ট দিতে বলি,, কিন্তু তার বদলে আপনি এই কি দিয়েছেন,,

তান্নাজ তারাতারি রিপোর্ট টা চেক করলো,,, দেখে সেখানে এস আর কোম্পানির মিটিং এর কোন ইনফরমেশন নাই,, বরং তার জায়গায় ১ বছর পুরনো রিপোর্ট দেয়া আছে,,, যা দেখে তান্নাজ একটু বিব্রত হয়,,, সে তহ নিজ হাতে রিপোর্টটা তৈরি করেছিল তাহলে,,, এইটা কিভাবে হলো,,,

তান্নাজঃ স্যার আমি জানি না এইটা কিভাবে হলো,, আমি তহ নিজ হাতেই রিপোর্টটা তৈরি করেছিলাম,,

নিশমঃ তহ সেটা কোথায়,,, ফাকিবাজির একটা লিমিট থাকে,,আর আপনি তা ছাড়িয়ে গেছেন,,, যদি কাজ করতে মন না চায় তাহলে আসেন কেন অফিসে,,, সব কিছু নিয়ে এত অবহেলা ঠিক না,,,, দুই এক সময় এই অবহেলার কারনে সব হাত ছাড়া হয়ে যায়,,,

তান্নাজ ভালো করেই বুঝতাসে নিশম কোন অবহেলার কথা বলতাসে,, কিন্তু তান্নাজ যে চেয়েও এর উত্তর দিতে পারছে না,,, তখনই সামিরা এসে বলে,,

সামিরাঃ ওহহ হো বেবি তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন,,, এইসব মিডিল ক্লাস মেয়েদের এইটাই প্রবলেম,,, কোন কাজ ঠিক মত করতে পারে,না,,, আসহলে তাদের বাবা-মাই তাদের ভালো শিক্ষা দেয় নি,, এইখানে তাদেরও দোষ কি,,,

তান্নাজঃ ম্যাম প্লিজ আমাকে যা বলার বলুন কিন্তু আমার বাবা মার শিক্ষা নিয়ে কোন কথা বলবেন না,,, তারা আমাকে যথেষ্ট ভালো শিক্ষা দিয়েছে,,, যা হয়তো আপনাদের বাবা মাও দিতে পারেনি,,,

সামিরাঃ ছোট লোক জানি কথা কার,, আমার মুখে উপর বড় বড় কথা,, তুই জানিস ও আমি কে,,, আমার চাকর হওয়ারও সামর্থ্য নেই তোর বুঝলি,,, আসছে আবার আমার মুখের উপর কথা বলতে,,, তোকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে তোর বাবা মা তোকে কি শিক্ষা দিয়েছে,,,

তান্নাজঃ বাস আমার বাবা মার বিরুদ্ধে যদি আরেকটা কথা বলেছে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে,,,

সামিরাঃ তোর সাহস তহ কম না তুই আমাকে,, সামিরাকে থ্রেড দেস,,,তোকে তহ আমি আজ,,

সামিরা তেরে এসে তান্নাজকে থাপ্পড় মারতে নিলে নিশম সামিরার হাত আটকিয়ে ফেলে,, আর তান্নাজ দিকে তাকিয়ে বলে,,,

নিশমঃ ওর সাথে কি তুই ও তোর আদব কায়দা ভুলে গেলি,,, এমন মানুষের সাথে লাগতে নেই যাদের কোন ক্লাস নেই,,, যারা রত্নকে মূল্যায়ন করতে যানে না,,, রত্নকে কাছে পেয়েও পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়,,, চল তহ এইখান থেকে,, এদের বুঝানোই বেকার,,,

এই বলে নিশম সামিরা কে নিয়ে চলে যায়,,, আর তান্নাজ সেখানে বসেই কান্না করতে থাকে,,, তখন মিতু এসে তার সামনে দাড়ায় আর বলে,,,,

মিতুঃ এখন কান্না করে কি লাভ শুনি,,, তুই নিজেই এইটা বেছে নিয়েছিস,,, এখন তার ফল তহ তোকে পেতেই হবে,,,

তান্নাজঃ হা জানি,,, কিন্তু আমারও যে কিছু করার নেই,,,

মিতুঃ কেন করছিস এমন তুই,,, কেন তুই সেই রাতে এমন করলি,, আজ যে সেই জন্যই ভাইয়া তোর থেকে দূরে,,, তান্নাজ এখনও সময় আছে,, যা ভাইয়াকে আপন করে নে,,, তা না হলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে,, তখন তুই চাইলেও কিছু করতে পারবি না,,,

তান্নাজঃ আমি যা করছি বুঝে শুনেই করছি,, যেতে দে তাকে সামিরার কাছে,, সামিরার কাছে গেলেই যে আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে যাব,,, সে যত সামিরার সাথে থাকবে ততোই তারাতারি আমি আমার উত্তর পেয়ে যাব,,,

মিতুঃ কোন উত্তরের কথা বলছিস তুই,, আর তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস,, নিজের স্বামীকে তুই কিভাবে অন্যের কাছে ছেড়ে দিয়েছিস,,, কিভাবে অন্য একজনের সাথে তুই তাকে সহ্য করতে পারছিস,, ভাবতেও পারছিস এর পরিনাম কি হতে পারে,,,

তান্নাজঃ জানি,,, আবার জানিও না,,, সে যাই হোক তুই বুঝবি না,, এখন প্লিজ চলে যা এইখান থেকে,,, আমাকে একা থাকতে দে,,,

মিতুঃ আমি আবারও বলছি,, ভাইয়াকে এইভাবে দূরে সরিয়ে দিস না,,, প্লিজ,, তুই ভাল করেই জানিস তুই না বলা পর্যন্ত ভাইয়া তোর কাছে ফিরে আসবে না,,, তাহলে কেন জিদ ধরে বসে আছিস,,,,

তান্নাজঃ যাবি তুই এইখান থেকে,,,

মিতুঃ হুম যাচ্ছি,,,
এই বলে মিতু চলে যায়,,তান্নাজ বিভর হয়ে সেই রাতের কথা ভাবছে,,কি এমন হয়েছিল সেই রাতে যার কারনে নিশম আর তান্নাজের সম্পর্ক এমন মোড়ে এসে দাড়িয়েছে,,

।#Love_Treatment
Part- 32
Writer- Tanzin Islam Ishika

মিতু যাওয়ার পর তান্নাজ সেই রাতের কথা ভাবতে থাকে,,,

সেইদিন রাতে সামিরাকে ড্রপ করে নিশমের বাসায় আসতে একটু দেরি হয়ে যায় ,,, বাসায় এসে দেখে সব নরমাল,, নিশমের কিছুটা খটকা লাগে,,, সে ধীরে ধীরে বাসার ভিতরে যায়,,, গিয়ে দেখে তান্নাজ বারান্দায় দারিয়ে আছে,, আর তার চুল গুলো ছাড়া যা বাতাসে উড়ছে,,, তান্নাজ আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে,,, নিশম গিয়ে তান্নাজের পিছে দারায়,, তান্নাজ তার উপস্থিতিটা টের পায়,, এই প্রথম সে তান্নাজকে জরিয়ে ধরেনি,, কিন্তু তাতে তান্নাজের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,, সে আকাশের পানে চেয়ে বললো,,

তান্নাজঃ কিছু বলবে,,,

নিশমঃ তুমি বুঝলে কিভাবে আমি তোমার পিছে,,, তুমি তহ ঘুরে তাকাও নি,,

তান্নাজঃ কিভাবে বুঝিছি তা না জানলেও চলবে,,, তা এখন কি ঘুমাতে যাবে নাকি পরে,,

নিশমঃ খাবারের কথা জিজ্ঞেস করবে না,,,

তান্নাজঃ জিজ্ঞেস করার কি আছে,, নিশ্চয়ই খেয়ে এসেছো,,, তাই আগ বারিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হবে,,

নিশমঃ আমি খেয়ে আসি নি,,,

তান্নাজঃ ওও,, তহ তাহলে ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার বেড়ে দিচ্ছি,
এই বলে তান্নাজ নিশমের পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলে নিশম তার হাত ধরে টান দিয়ে তার সামনে দার করায়,,,

নিশমঃ তোমার কি একটুও খারাপ লাগে নি যে আমি আজ অন্য এক মেয়ের সাথে সারাদিন ছিলাম,, তার সাথে লাঞ্চ করেছি,, হেসে হেসে কথা বলেছি,, তার জন্য তোমার সাথে একটু রুড বিহেভ করেছি,,,

তান্নাজঃ খারাপ লাগার কি কথা,,, তুমি তহ শুরু থেকেই আমাকে খেলার পুতুল হিসাবে ইউস করে এসেছো,, আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছো,,

নিশমঃ আর আমার ভালবাসা সেটা চোখে পরেনি তোমার,,, তোমার জন্য যতটা পাগল হয়েছি তা দেখনি,,, তোমার একটা হাসির এর জন্য কি না করেছি,, আমার সেই করা ভুলের জন্য কতবারই না ক্ষমা চেয়েছি,, সেগুলা কি চোখে পরে নি তোমার,, নাকি দেখতে চাও না,,বুঝতে চাও না,,

তান্নাজঃ আমার যা দেখা,, যা বুঝার বুঝেছি,, এখন আর কিছু দেখার বা বুঝার শক্তি নেই,,, যা ছিল সব ভ্রম,, ছলনা,, সব ছিল সাজানো এক মরিচিকা,, যা দেখতে দেখতে আমি বড্ড ক্লান্ত,, ক্লান্ত আমি তোমার এই মিথ্যা ভালবাসা থেকে,,,

নিশমঃ আমার ভালবাসা তোমার কাছে মিথ্যা মনে হয়,,, আমার এই অনুভুতি গুলো মিথ্যে মনে হয়,, তোমাকে করা সকল ভালবাসার স্পর্শ মিথ্যে মনে হয়,,

তান্নাজঃ হা হয়,,, কেননা তুমি নিজেই মিথ্যে,, তোমার প্রত্যেকটা কথা মিথ্যে,, তোমার ভালবাসা একটা নাটক,,, তোমার সব অনুভুতি শুধু দেখানোর জন্য,,, তোমার সব স্পর্শকে ঘৃণা করি আমি,,,

নিশমঃ তাহলে ঠিক আছে,,অনেক হয়েছে আর না,,,আমার ভালবাসা মিথ্যা তাই তহ,, তাহলে আজ থেকে আমি তোমার কাছে আমি আমার মিথ্যা ভালবাসা নিয়ে আসবো না,, বরং তুমি আসবে,,, যখন আমি তোমার হয়ে থাকবো না তখন বুঝবে আমার ভালবাসা,, আমার #Love_Treatment তোমার কাছে টর্চার ছিল তাই না,, এখন তুমি আমার সেই #Love_Treatment নামক টর্চারের জন্য ছটফট করবে,,, এখন তুমি হাড়ে হাড়ে বুঝবে নিশমের ভালবাসা,,,যতদিন না তুমি নিজ থেকে এসে বলছো যে তুমি আমায় ভালবাস ততদিন আমি তোমার দিকে ফিরেও তাকাবো না,, আসবো না তোমার কাছে আমার ভালবাসা নিয়ে,, এতদিন তুমি নিশমের ভালবাসা দেখেছো,, এখন দেখবে তার অবহেলা,,

এই বলে নিশম গটগট করতে করতে ওয়াসরুমে চলে যায়,,, নিশম যাওয়ার পর তান্নাজ সেখানে বসে পরে,, আর চোখের পানি বিসর্জন দিতে থাকে,, সে মনে মনে বলতে থাকে

তান্নাজঃ আমি তহ তাই চাই,, দেখতে চাই তোমার এই অবহেলা,,যে তুমি কি আমাকে অবহেলা করেও আমাকে ভালবাসতে পারো কিনা,,,দেখতে চাই তোমার ভালবাসা,,, আমিও দেখবো আমার ভালবাসার জন্য তুমি আদো যোগ্য কি না,,, আমিও চাই তুমি যাও অন্যের কাছে, সেই সামিরার কাছে,,যার জন্য হয়তো তোমার মনে কোন একসময় ফিলিংস ছিল,, ছিলও কিনা জানি না,,আমি চাই তুমি সামিরার সাথে মিশো,, আমি দেখতে চাই তুমি সামিরার সাথে মিশে কি আমাকে ভুলতে পারো কিনা,,, আমার পাশে থেকে আমার থেকে দুরে থাকতে পারো কিনা,,, আমার জন্য যা তোমার ফিলিংস তা অন্যের জন্য হয় কি না,,,আদো কি তোমার মনে সত্যি আমার জন্য ভালবাসা আছে কিনা,, যেদিন বুঝবো তুমি আমায় ভুলে গেছো,, আমায় ছাড়া তুমি চলতে সক্ষম আমার জন্য তোমার মনে যে ভালবাসা আর ফিলিংস তা অন্য কাউরো জন্য জন্মেছে,, সেদিন তুমি মুক্ত,,মুক্ত তুমি,,, চিরদিনের জন্য মুক্ত,,, আর যদি তোমার মনে আমি বাদে কেউ জায়গা করতে না পারে,, তোমার প্রতি হৃৎস্পন্দনে অন্যের নাম না লিখতে পারো,, সেই দিনই তোমাকে চিরকালের জন্য আপন করে নিব,,, সব ভুলে নতুন করে শুরু করবো আমি,,,

তান্নাজ সেখানে বসেই কান্না করতে থাকে,, আর দেয়ালে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে,,, সে কি ভুল করছে নাকি ঠিক সে যানে না,,, হয়তো এই পরিক্ষায় সে নিশমকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিবে,, নয়তো সারাজীবনের জন্য নিশম পর করে দিবে,,, এখন এর পরিনাম কি হবে তা কাউরো জানা নেই,,,
তান্নাজ সেইভাবে বসে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পরে,,,,

এইসব ভাবছিল তখন রিয়াজের ডাকে সে বর্তমানে ফিরে আসে,,, তারপর সে রিয়াজের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে বলে,,,

তান্নাজঃ জ্বী কিছু বলবেন,,

রিয়াজঃ না তেমন কিছু না,, আজকে সন্ধ্যার পরে কি করছেন,,,,

তান্নাজঃ যাই করি আপনার তাতে কি,,,

রিয়াজঃ না মানে এক সাথে ডিনার করতাম আর কি,,,

তান্নাজঃ নো থেংক্স,, আপনি অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন,,,

রিয়াজঃ আমার যে আপনাকে প্রয়োজন,,,

তান্নাজঃ কি বললেন,,

রিয়াজঃ না মানে আমি আপনার সাথে যেতে ইচ্ছুক,,,

তান্নাজঃ সরি বাট আমি নই,,,

এই বলে তান্নাজ চলে যেতে নিলে লিজা তান্নাজের সামনে এসে বলে,,,

লিজাঃ আরেহ যাও এই না,, রিয়াজ ভাই কত সুন্দর করে বলছে,,,

তান্নাজঃ তোমার এত ভাল লাগলে তুমি যাও না,,, আমার পিছে পরসো কেন,,,

লিজাঃ বারে,, স্যারের সাথে যেখানে সেখানে যেতে পারো আর রিয়াজ ভাইয়ের সাথে সামন্য ডিনারে যেতে পারো না,,

তান্নাজঃ মাইন্ড ইউর অউন বিজেন্যাস,, আমি কার সাথে কই যাব কি করবো তা তোমার দেখার বিষয় নয়,,, নিজের কাজে মন দাও তাহলে তা কাজে লাগবে,, অন্যের লাইফে নাক ঢুকাতে যেও না,, তা না হলে নাক চ্যাপ্টা হয়ে যাবে,,

লিজাঃ ইউউউউউউ,,,

তান্নাজঃ জাস্ট শাট আপ,, এন্ড নাও লিভ ফ্রোম মাই কেবিন,,, রাইট নাও৷

লিজা রাজে ফুসতে ফুসতে চলে যায়,, তান্নাজ রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,।

তান্নাজঃ আপনাকে কি স্পেশিয়াল ইভেটেশন দেওয়া লাগবে নাকি,,,
রিয়াজ তান্নাজ কাছে এসে বলে,,,

তান্নাজঃ ইউ আর টু স্পাইসি,,, আই লাইক ইট,,,
ওই বলে রিয়াজ চলে যায়,, আর তান্নাজের রাগে জিদে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে,, না পারছে সইতে,, না পারছে সত্যিটা বলতে,,, এই রিয়াজ দিন দিন খালি তার লিমিট ক্রশ করেই চলেছে,,, তান্নাজ বুঝতে পারছে না সে কি করবে,,, রাগে তার মাথা কাজ করা অফ করে দিয়েছে,,, তাই সে কিছু না ভেবেই কাউকে না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে,,,


রাত প্রায় ৮ টা বাজে,,,
তান্নাজ সেই ৪ টার দিকে বের হয়েছে কিন্তু এখনও বাসায় আসি নি,, নিশমের জানা নেই তান্নাজ কোথায়,, অবশ্য এখন সে প্রায়ই জানে না তান্নাজ কোথায়,, কেন না সে আর তান্নাজ না,এক সাথে অফিস যায় আর না আসে,, দুইজন এখন শুধু নাম মাত্র এক ছাদের নিচে থাকে,, কেউ দরকার ছাড়া একটা বারতি কথাও বলে না,, নিশম বলে না মান অভিমানে,, আর তান্নাজ বলে না তার ফলাফল জানার আশায়,,

নিশম সোফায় বসে আছে,,, আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,,, এক এক মিনিট যেন তার কাছে ঘন্টার সমান লাগছে,,, কিছু সময় বাদেই কলিংবেল বেজে উঠে,, নিশম গিয়ে দরজা খুলে দেখে তান্নাজ,,, তান্নাজ নিশমকে দেখে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে থাকে,, নিশম দরজা আটকিয়ে দেখে তান্নাজের নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে,, যা,দেখে নিশমের রাগ উঠে যায়,, আর হুংকার দিয়ে বলে,,

নিশমঃ যেখানে আছো সেইখানেই দাড়িয়ে থাকো,,সেখান থেকে এক পাও লড়বে না,,,

নিশমের এমন হুংকার শুনে তান্নাজ সেখানেই দাড়িয়ে যায়,, নিশম তান্নাজের সামনে এসে বলে,,,

নিশমঃ কোথায় ছিলে এতক্ষন,,
তান্নাজ চুপ হয়ে দারিয়ে থাকে,,,তা দেখে নিশমের রাগ উঠে যায়,, সে এইবার একটু জোর গলায়ই বলে,,
নিশমঃ কোথায় ছিলে এতক্ষণ,, সেই কখন অফিস থেকে বেরিয়ে ছিলে,, আর এখন বাসায় আসছো,,, এমন কোথায় বিজি ছিলে যে আসতে এত লেট হয়ে গেল,,

তান্নাজঃ তোমাকে বলতে আমি ইচ্ছুক নই,, আর কোন অধিকারব জিজ্ঞেস করছো যে আমি কোথায় ছিলাম,,

নিশম তান্নাজের দুই বাহু চেপে বলে,,

নিশমঃ মানে কি,,,তুমি কোথায় যাও কি করো না করো,, সব জানার অধিকার আছে আমার,,,

তান্নাজঃ ভাল,, কিন্তু দয়া করে এই অধিকার নিজের কাছেই রাখো,, দয়া করে আমার উপর খাটাতে এসো না,,,

নিশমঃ তুমি কিন্তু বারাবারি করছো,,,

তান্নাজঃ আমি মোটেও বারাবারি করছি না,,,

নিশমঃ কোথায় ছিলে তুমি,,, যদি না বলো তাহলে কি বড্ড খারাপ কিছু হয়ে যাবে,,, ভালোই ভালোই বলছি কই ছিলে এতক্ষণ,,,

তান্নাজ নিশমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে তা ভিষণ লাল হয়ে আছে,,, যা তান্নাজকে ভশম করে দিতে যথেষ্ট,,, সে আর কথা না বারিয়ে বলে,,

তান্নাজঃ অনাথ আশ্রম,,

নিশম এইবার তান্নাজের বাহু দুটো আলগা করে দেয়,,, আর ছোট ছোট চোখ করে তান্নাজেত দিকে তাকিয়ে বলে,,

নিশমঃ কেন গিয়েছিলে,,

তান্নাজঃ ভাল লাগছিল না তাই গিয়েছিলাম,,,

নিশমঃ আগে বললে কি হত,।

তান্নাজঃ যার উপর আমি নিজের কোন অধিকার দাবিই করি না,, তার থেকেও আমি কোন অধিকার দাবি আশা করি না তাই,,,

এই বলে তান্নাজ তার রুমে চলে যায়,, আর নিশম তান্নাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে,, নিশম মনে মনে বলতে থাকে,,

নিশমঃ কেন এমন করছো জান,,, না তুমি নিজে খুশি আছো না আমি,,, আমি যে তোমার থেকে দুরে থাকতে পারছি না,,, কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমাকে এই দুরত্ব,, কেন তুমি আমার কাছে ধরা দিচ্ছো না,,, তুমি কি বুঝ না যে আমি কত কষ্টে আছি,,, না পারছি সইতে না পারছি কিছু বলতে,, আর কত সইবো আমি,, আমিও মানুষ,, আমারও কষ্ট হয়,, তোমায় না যত আঘাত করেছি তার চেয়েও বেশি নিজে কষ্ট পেয়েছি,, তোমায় অবহেলা করা যে আমার জন্য বড্ড দায়,, কিন্তু এইবার আর,যাই হক যত খুন না তুমি নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দিচ্ছো,, আমিও যাব না তোমার কাছে,,
এই বলে নিশম এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়,, আর অন্যরুমে চলে যায়,,,


চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here