#Love_with_vampire [২১]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
শরীরের গঠন বলতে বোঝা যাচ্ছিলো ছায়াটার চুল অনেক বড়,মাটিতে ছুঁই ছুঁই করছে,কোমড় সরু,বু’ক এবং কোমড়ের নিচ অংশটা মোটামুটি আকারের…
অহনা ভয়ে ভয়ে চোখে তাকিয়ে আছে, মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এখন কি করা উচিৎ সে নিজেও জানেনা।তবুও কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, ” কে তুমি? “।বলার সাথে সাথে ছায়াটা মনে হলো কেমন নড়েচড়ে উঠলো। মাথা ঘুড়িয়ে তাকালো অহনার দিকে।অহনা রীতিমতো ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ছায়াটা চাপা অস্পষ্ট স্বরে বললো
” এখান থেকে চলে যাও, চলে যাও, নইলে কেউ বাঁচবে না ”
” কি…কি…কিন্তু তু..তু..তুমি কে? ”
হাসির শব্দ ভেসে আসলো।ছায়াটা ভয়ঙ্কর ভাবে হাসছে।এই ভয়ঙ্কর হাসির শব্দে অহনার বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো।এই হাসির সৃষ্টি অন্য কোনো ভূবণে।
অহনা দু-হাতে মুখ চেপে ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে।ছায়াটা আবারো চাপা স্বরে বললো
” চলে যাও এখান থেকে, তোমরা এই গ্রন্থ কিছুতেই নিতে পারবে না।আমি এর রক্ষা করবো।চলে যাও,নইলে শেষ হয়ে যাবে ”
অহনা কিছুটা বিষ্মিত হলো।অহনা যেই গ্রন্থ নেওয়ার জন্য এখানে এসেছে এই ছায়াটা কি সেই গ্রন্থের কথাই বলছে? এই ছায়াটা কি সেই গ্রন্থকে রক্ষা করছে? কিন্তু আমি কিভাবে বোঝাবো আমি এই গ্রন্থের যথাযথ ব্যাববার করবো, সে কি আমার কথা শুনবে?।
অহনা ভয়ে ভয়ে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে বললো
” হে পবিত্র আত্মা, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি,আর এই গ্রন্থটিও সাথে নিয়ে যেতে আসিনি।আমি আমার স্বামীকে ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে এই গ্রন্থটা আমার খুব প্রয়োজন। আমায় সাহায্য করো তুমি!”
উত্তরপ কিছুটা সময় নিয়ে ছায়াটা খসখস আওয়াজে বললো ” কে তোর স্বামী,এই ভ্যাম্পেয়ার? ”
অহনার কিছুটা রাগ হলো।রাগকে চেপে ধরে বললো ” আমার স্বামীকে বাঁচাতে এই গ্রন্থের আমার প্রয়োজন। তুমি কি আমায় সাহায্য করবে? ”
” হাহাহাহা,, ”
অহনা এই হাসির শব্দে ভয়ে পেছনে সরে গেলো।কি কুৎসিত আওয়াজ, একটা পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে ভেসে আসছে,মনে হচ্ছে এই গন্ধে পেটের ভেতর থেকে সবকিছু বেড়িয়ে আসবে।পেছনে সরে যেতেই অহনার চোখ পড়লো অনুভবের ওপর।এতোক্ষণ সে অনুভবকে তেমন লক্ষ্য করেনি। অহনা দেখলো সারা ঘরে কালো বালির আস্তোরণ,আর সেখানে অনুভবের নিথর শরীর পড়ে আছে,তার সারা শরীর থেকে রক্ত পড়ছে।সেই রক্তে সেখানকার বালিও ভিজে উঠেছে। অহনা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে অনুভবের কাছে যায়।অনুভবের মাথা নিজের কোলে নেয়,কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
” অনুভব,এই অনুভব,কি হয়েছে আপনার? চোখ বন্ধ করে আছেন কেন? কি হয়েছে আপনার বলুন না, এভাবে কে মেরেছে আপনাকে? কি হলো বলুন না, অনুভব,এই অনুভব ”
অনুভব কোনো কথা বলছে না।চোখ বন্ধ করে আছে।অহনা অনুভবের নাকের কাছে হাত এনে বোঝার চেষ্টা করলো শ্বাস চলছে কি না।হাত দিতেই অহনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো অনুভবের দিকে।
অনুভবের শ্বাস চলছে না।অহনা বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে।তখনি অহনার মনে পড়লো ফাহাদ স্যারের কথা।ফাহাদ স্যার হলো বায়োলজির শিক্ষক।কলেজে ওঠার দ্বিতীয় দিন’ই তিনি ক্লাসে এই বিষয়ে বলেছিলেন যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেলে কিভাবে কি করতে হবে।
বিষয়টা সহজ।দুইহাত সোজা করে বুকের কাছে একটা হাতের ওপর আরেকটা হাত রাখতে হবে।দুইহাত একদম সোজা রাখতে হবে।হাটুর ওপর ভর করে বসে বুকে চাপ দিতে হবে।হাটু গেঁড়ে বসার কারন হচ্ছে এতে চাপটা জোরে দেওয়া যায় এবং অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে করা যায়।এরপর বুকে চাপ দিতে হয়,প্রতিটি চাপে যেন বুক পাঁচ,ছয় সেন্টিমিটার ওপর নিচ হয়।তাহলে ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ হতে থাকবে।
অহনা হাটুতে ভর করে বসে দুইহাত অনুভবের বুকের ওপর রাখলো,এরপর চাপ দিতে থাকলো।আনুমানিক কিছুক্ষণ চাপ দেওয়ার পরেও অনুভবের শ্বাস চলছে না।
অহনার আরেকটা চিকিৎসার কথা মনে পড়লো।অহনা ঝুঁকে এসে অনুভবের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে প্রবল চাপে ফু দিলে সেই অক্সিজেন সাপ্লাই কাজ করে।বেশকিছুক্ষন অহনা এভাবে অনুভবের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অক্সিজেন সাপ্লাই দিলো।একসময় অনুভব একটু নড়ে উঠলো।অহনার চোখ চকচক করে উঠলো।সে এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে আবারো ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
অনুভব এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলছে।অহনা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো
” আ….আপনি ঠিক আছেন তো? শ্বাস নিতে পারছেন? ”
অনুভব কিছুটা গোঙানির মতো করে বললো ” হু ”
____________
ডাঃক্লার্ক অহনার শরীরের রক্ত এবং হাত থেকে পড়া রক্ত দুটোরই স্যাম্পল টেস্ট করলেন।রিপোর্টে যা দেখলেন তা অবাক হওয়ার মতোই।অহনার শরীরে যে রক্ত সেটার গ্রুপ এ.বি পজেটিভ।তাতে কোনো সমস্যা নেই,সমস্যা হলো হাত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে।সেই রক্তের কোনো গ্রুপ তিনি বেড় করতে পারলেন না।এমন মনে হচ্ছে যেন এই রক্ত পৃথিবীর কোনো মানুষের মধ্যেই নেই।রক্তে থ্রম্বোসাইটের পরিমান শূন্য, এমনকি সাধারণ মানুষের রক্তের পি.এইচ ৭.৩৫-৪৫ এর মধ্যেই,কিন্তু এই রক্তের পি.এইচ ৫।এমনকি রক্তে লিউকোসাইটের পরিমানও নেই বললেই চলে।
এরমধ্যেই তিনি আরেকটা বিষয় পরিক্ষা করেছেন আর সেটা হলো অহনার ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করছে কি না,তিনি যথারীতি পরিক্ষা করে দেখলেন অহনার ফুসফুস স্বাভাবিক মানুষের মতে না,খুবই দ্রুত ওঠা নামা করছে।ডাঃক্লার্কের মনে হচ্ছে মিস অহনার সকল বিষয় জানা দরকার।সে অন্য সাধারণ মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়।
তিনি তখনি ফাইল থেকে অহনার বাবা,মায়ের ঠিকানা যোগাড় করে সেখানো চলে গেলেন।দরজায় কলিংবেল চাপতেই বুড়ো করে একজন লোক দরজা খুললেন।তার দাঁত একটাও নেই।মুখ অনেকটা ভেতরে চলে গিয়েছে।তিনি খুলখুল শব্দে কি যেন বললেন,।ডাঃক্লার্ক সেটা বুঝতে পারলেন না।তিনি বুড়ো লোকটি তাকে ভেতরে আসার ইশারা দিলেন।ডাঃক্লার্ক সোফায় বসলেন।বুড়ো লোকটা ভেতরে গেলো।খুব সম্ভব তিনি এই বাড়ির কেয়ার টেকার আর তিনি অহনার বাবাকে ডাকতে গেছেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন ভদ্রমহিলা এসে উপস্থিত হলেন।ইনি অহনার মা।তিনি এসে সামনের সোফায় বসলেন।বিনয়ী ভাবে বললেন
[তারা ইংরেজিতেই কথা বলছেন।সেটার বাংলারুপ]
” ডাঃ আপনি? আমার মেয়ের বিষয়ে কি কিছু বুঝতে পারলেন? ”
” এখনো তেমন বুঝতে পারছি না।মিস অহনার বিষয়ে আমার কিছি জানার ছিলো।যদি বলতেন ”
” হ্যা অবশ্যই। তার আগে বলুন চা খাবেন না কফি? ”
” কফি ”
” রহিম চাচা এককাপ কফি আর এককাপ চা নিয়ে এসো তো ” বুড়ো লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন।
” এখন বলুন অহনার বিষয়ে কি জানতে চান ”
” তেমন কিছু না,এই মিস অহনার ছোট বেলার কোনো ছবি আছে কি? আর শিশু থাকা অবস্থায় ওর মধ্যে কি অস্বাভাবিক কোনো কিছু আপনার চোখে পড়েছে?যা অন্য শিশুর মধ্যে থাকে না? ”
” অহনার তো তেমন কিছু আমার চোখে পড়েনি।ওর আচরন সাধারন শিশুর মতোই ছিলো ছোট বেলার কিছু ছবি আমি পাঠিয়ে দিবো আপনার কাছে ”
” আচ্ছা আমি আসি,”
” সে কি কফি খেয়ে যান? ”
” অন্য একদিন খাবো,এখন যেতে হবে।”
” আচ্ছা ”
ডাঃক্লার্ক উঠে দারালেন।তার কাছে মনে হলো এই মহিলা তাকে সত্যি বলছে বা। কিছু একটা লোকাচ্ছে। কিন্তু সেটা কি? এসব ভাবতে ভাবতে তিনি দরজার কাছে যেতেই চোখ পড়লো বুড়ো লেকটার দিকে।এর আগেও তার চোখে চোখ পড়েছে ক্লার্কের।প্রত্যকবারই মনে হয়েছে সে কিছু বলতে চায়।তার কথা শোনা দরকার। ডাঃক্লার্ক চোখের ইশারায় তাকে বাহিরে ডাকলেন।
ডাঃক্লার্ক গাড়িতে অপেক্ষা করলেন।বুড়ে লোকটা আসলেন।এসে বাংলায় কিছু বলছেন যা ডাঃ ক্লার্ক কিছুই বুঝতে পারছে না। ডাঃ ক্লার্ক তার ড্রাইভারকে বললো যে এই লোকটিতে বলো তিনি যা বলতে চান সেটা যেনো লিখে দেয়।তার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
ড্রাইভার বলার পর বিড়ো লোকটি কিছি বললেন, বলে চলে গেলেন।ক্লার্ক ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলো তিনি কি বললেন।ড্রাইভার বললো ” স্যার ইনি এই বাড়িতে কাজ করে,পড়ালেখা খুব কম,টেন পাস,হাতের লেখা খারাপ,একটু কষ্ট করে বুঝে পড়তে বলেছে”।
বেশ কিছুক্ষন তিনি হাতে একটা কাগজ নিয়ে আসলেন।সেটা ডাঃ ক্লার্কের হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন।মনে হচ্ছে তিনি বড়ো অন্যায় কিছু করে ফেলেছেন।
ডাঃক্লার্ক কেবিনে এসে কাগজটা বেড় করলেন।মনে হচ্ছে ক্লাস টু,থ্রির বাচ্চার হাতের লেখা।লেখাটা বেড় করতেই ঠিক মাঝখানে চোখ পড়লো ডাঃ ক্লার্কের।সেটা দেখে ক্লার্ক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।সেখানে লেখা ছিলো
” অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো ”
ডাঃক্লার্ক এইটুকু দেখে চোখের চশমা খুলে টেবিলে রেখে চেযারে বসলেন।এতোক্ষণ তিনি দারিয়েই কাগজটা খুলেছিলেন।তিনি গম্ভীর হয়ে ভাবলেন,
” এ আবার নতুন এক রহস্যই উন্মোচন হলো ”
চলবে?#Love_with_vampire [২২]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
” অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো ”
ডাঃক্লার্ক এইটুকু দেখে চোখের চশমা খুলে টেবিলে রেখে চেয়ারে বসলেন।এতোক্ষণ তিনি দারিয়েই কাগজটা খুলেছিলেন।তিনি গম্ভীর হয়ে ভাবলেন,
” এ আবার নতুন এক রহস্যর উন্মোচন হলো ”
তিনি পুরো চিঠিটা প্রথমেই ফোনে ইংরেজিতে ট্যান্সসিলেট করেছিলেন।কেননা রহিম চাচা বাংলায় লিখে নিয়ে এসেছিলো।ক্লার্ক সেখান থেকেই পড়তে শুরু করলেন
আমার জন্মের পর থেকে আমি এই বাড়িতে বড় হয়েছি।বড় সাহেব আমারে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।তখন থেকেই আমি এখানে কাজ করি।অহনা মা’র জন্ম হয় হসপিটালে।আহা! কি ফুটফুটে বাচ্চা একটা মেয়ে।অহনা মা’রে আমি নিজে স্কুলে নিয়ে যাই,নিয়ে আসি।সে চুপচাপ ধরনের ছিলো।প্রয়োজনের অধিক কথা বলতো না।অন্ধকারে বসে থাকতো,আর ভয়ঙ্কর কিসব যেন ভাবতো।অহনা মায়ের এই আলাদা থাকা,এই অদ্ভুত চরিত্রের জন্য তাকে ডাক্তার ও দেখানো হয়।শুধু এখন বলি, অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো”।
এটুকুই লেখা ছিলো চিঠিতে।ডাঃক্লার্কের মনে হলো এই বুড়ো লোকটির সাথে কথা বলা দরকার।কেননা এখন ক্লার্কেরও মনে হচ্ছে অহনা সাধারণ কোনো মেয়ে না।এই রহস্যর উন্মোচন করতে হলে তাকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে,অনেক তথ্য।
রহিম মিয়া সামনের চেয়ারে বসে আছেন। ডাঃক্লার্ক তাকে তখনি খবর দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন। সাথে গাড়িও পাঠিয়েছেন যেন সেই গাড়িতেই চলে আসে।রহিম মিয়া এখন ক্লার্কের সামনে বসে আছে।তার রুক্ষ শরীর,মাথার চুল ধবধবে সাদা,শরীরের চামড়া কিছুটা ঝুলে গেছে।তিনি নির্বিকার ভঙ্গিতে চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন
” আমারে কি বইলবেন বইলেন স্যার, আমি বেশিক্ষন থাইকতে পাইরবো না “।
ক্লার্ক তার কথা কিছিই বুঝতে পারলেন না।তিনি মনসুরকে ডেকে পাঠালেন। মনসুর রহিম মিয়ার কথা ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করে ক্লার্ককে বলছেন।
[তাদের কথোপকথন]
” আপনি কিভাবে জানলেন মিস অহনা তাদের সন্তান না? ”
” সেদিন মেট্রিক পরিক্ষার ফলাফল দিছে।অহনা মা চইললা গেছে স্কুলে। বড় সাহেব তার আগের দিন বাড়িতে ছিলেন না।বাড়িতে ফিরলেন মেট্রিক পরিক্ষার ফলাফলের দিন।এসেই খোঁজ করলেন অহনা মা কোথায়,আমি গিয়ে বললাম স্কুলে গেছে।তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে আমার চা দিতে বলে ওপরে চলে গেলেন।আমি হাতের কাজ শেষ কর একটু দেরি করে চা নিয়ে গেলাম।দরজার কাছে আসতেই শুনতে পেলাম ছোট সাহেব বলছেন,অহনা আমাদের মেয়ে না।”
” শুধু এই কথাতেই বুঝতে পারলেন অহনা তাদের মেয়ে না? ”
” আমি তাদের আরো কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।যদিও এজন্য নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছে। তবুও শুনেছি ”
” কি শুনলেন? ”
” তারা একটা কিসের টেস্টের কথা যেন বলছিলো,।ছোট সাহেবা তখন বললো এসব যেন অহনা জানতে না পারে।ছোট সাহেবা নাকি আগে থেকেই জানতো ”
” তারপর? ”
” তারপর এই বিষয়ে কিছু বলতে শুনিনি ”
” অহনা কি এটা জানে? ”
” না,কেউ তাকে বলেনি,আমিও বলিনি।বললে কষ্ট পাবে তাই বলিনি।অহনা মা’কে আমি মেয়ের স্নেহ করি,ওর কষ্ট আমার সহ্য হয় না ”
” আপনি চিঠিতে বলেছিলেন মিস অহনা স্বাভাবিক নয়,সেটার কারন কি? কি দেখে আপনার এটা মনে হলো? ”
” এটা আমার নজরে পড়ে অহনা মা যখন কলেজে উঠে তখন।রাতে যখন আমি দুধ নিয়ে যেতাম অহনা মা’কে দেওয়ার জন্য তখন আমায় কিসব গল্প করতো ”
” কি গল্প করতো? ”
” কোন মানুষ নাকি রক্ত খায়,আবার শেয়ালের মতো হয় এসব।আর যখন সে এসব বলে তখন তার শরীর একটুও নড়ে না।মনে হয় কাঠের পুতুল ”
” ক্ষমতার কথা যে বললেন সেটা কিভাবে বললেন? ”
” ওই বাড়ির পাশে বিরাট বড় জঙ্গল,।সেখানে হিংস্র সব পশুরা বেড় হয় সন্ধায়।তখননকলউ বাইরে বেড় হয় না।একদিন গভীর রাতে হঠাৎ চুপটাপ বৃষ্টি পড়ছিলো,ছাদে কাপড় ছিলো,সেটা আনতে যখন ছাদে যাই তখন দেখলাম অহনা মা দারিয়ে আছে,তার সামনে কয়েকটা শেয়াল গোল হয়ে বসে আছে।আমি ভয়ে ছোট সাহেবকে ডাকতে নিচে যাই,পড়ে যখন ছাদে আসি তখন দেখি কেউ নেই ”
” এমন ও তো হতে পারে যখন আপনি নিচে ডাকতে গেলেন তখন অহনা নেমে নিজের রুমে চলে গিয়েছিলো? ”
” সেটা দেখার জন্য অহনা মা’র ঘরে ছোট সাহেবের সাথে আমিও গেলাম।ছোট সাহেব জিগ্যেস করলে সে বললো,”সে ছাঁদে যায় নি “।তারপর যখন ছোট সাহেব চলে গেলো।তখন অহনা মা আমায় ডাকলো,আমি গেলাম,গিয়ে দেখি অহনা মায়ের চোখ টকটকে লাল।আমায় বললো ” চাচা, আপনি কাজটা ঠিক করেননি,আমার কথা বলার সময় আর কখনো এমন করবেন না “।এখন আশা করি আপনিও বুঝতে পেরেছেন অহনা মা সেদিন রাতে ছাদে গিয়েছিল, এবং শেয়ালের সাথে কথা বলেছিলো।এটা কি স্বাভাবিক কোনো মেয়ে করতে পারে? ”
ডাঃক্লার্ক চশমা টেবিলে রাখলেন।মনসুরকে বললেন তিনি যেন রহিম মিয়াকে গাড়ি করে রেখে আসে।
রহিম মিয়াকে দিয়ে এসে মনসুর ক্লার্কের সামনের চেয়ার টেনে বসলো।ক্লার্ক নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে মনসুরকে বললেন
” ডাঃ মনসুর,রহিম মিয়ার কথাগুলি দারা কি এটাই প্রমান হয় যে মিস অহনা স্বাভাবিক না? ”
” অবশ্যই স্যার, কোনো সন্দেহ নাই ”
” রহিম মিয়ার বয়স হয়েছে, তার চোখের দৃষ্টি এখন তেমন প্রখর না।”
” মানে স্যার আপনি বলতে চাচ্ছেন তিনি মিথ্যা বলছেন?!”
” না।আমি শুধু তার দেখা,এবং বাস্তবটা মেলাতে চেষ্টা করছি।এর পেছনে একটা হাইপোথিসিস দার করিয়েছি।”
” সেটা কি স্যার? ”
” রহিম মিয়া গভীর রাতে ছাঁদে গেলেন,ঝড়-বৃষ্টির রাত।তার মধ্যে তিনি ছাঁদে যাচ্ছেন,মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করা শুরু হলো।এরপর তিনি দেখলেন মিস অহনা ছাঁদে দারিয়ে আছে।এটা দেখে তিনি আরো ভয় পেয়ে গেলেন। কেননা তিনি আশা করেননি এতো রাতে কেউ ছাঁদে থাকবে। যেকেউ হলেই ভয় পেতো,কি পেতো না?! ”
” জি স্যার ”
” ভয় পেলে আমাদের নার্ভ সিস্টেমও ঠিকমতো কাজ করে না,এরপর তিনি দেখলেন কয়েকটা শেয়াল তার চারদিকে গোল হয়ে বসে আছে। আসলে কোনো শেয়ালই ছিলো না সেখানে ”
” কি বলছেন স্যার? শেয়াল ছিলো না? তাহলে কি ছিলো? ”
” আমি যখন তাদের বাড়িতে যাই তখন ওপরের বারান্দার রেলিঙের সাথে ৩টা কুকুর বাঁধা দেখেছিলাম।যত সম্ভব তারা শিকারী। শিকারী কুকুর গুলিই মিস অহনার পাশে বসে ছিলো ”
” কিন্তু স্যার,রহিম মিয়া শেয়াল বসে আছে সেটা দেখতে পেলো, আর সেটা শেয়াল নয়,বরং কুকুর এটা দেখতে পেলো না? এটা কিভাবে সম্ভব স্যার? ”
” ভালো বলেছেন মনসুর।তিনি একটু আগেই উল্লেখ করেছেন যে,রাত হলে কেউ শেয়াল ভীতিতে বেড় হয়না।আর এতো রাতে ছাঁদে যাওয়ায় তার মনে সেই ভীতি কাজ করছিলো।আর যখন সেখানে দেখতে পেলো মিস অহনা দারিয়ে আছে, আর সামনে কুকুর বসে আছে,কাজেই সে ভেবে নিলো এগুলো শেয়াল। বুঝতে পারছেন? ”
” জি স্যার ”
” তার মানে এখান থেকে প্রমাণ হলো মিস অহনার কোনো আলাদা ক্ষমতা,শক্তি নেই ”
” স্যার আরেকটা কথা,রহিম মিয়া তো আওয়াজ করেনি,তাহলে কিভাবে মিস অহনা বুঝতে পারলো যে ছাদে কেউ এসেছে,আর তখনি সে ঘরে চলে গেলো? ”
” ভয়ে সে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমেছিলো,সেই শব্দেই হতে পারে মিস অহনা বুঝতে পারে কেউ ছাঁদে এসেছে।আর তখনি সে ঘরে চলে যায়।সহজ বিষয় ”
” স্যার,আমি এই জীবনে আপনার মতো যুক্তি দিতে পারে এমন কাউকে দেখিনি।স্যার আপনার হাতটা আমার মাথায় রাখবেন প্লিজ,”
বলেই মনসুর হাটু গেঁড়ে ক্লার্কের সামনে বসে তার হাত নিজের মাথায় ধরলো।ক্লার্ক কিঞ্চিৎ হাসলেন।
___________________
অহনা সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ছায়াটা বড় হচ্ছে, ঘরের আলো ক্রমশ কমে আসছে,তার মানে কি? সূর্যাস্ত হয়ে আসছে নাকি?অন্ধকার হওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে।অনুভবকে দেয়ালে ভর করে আধশোয়া করে রাখলো।অনুভব চোখ বন্ধ করে আছে।অহনা হাঁটু গেড়ে আকুতি মিনতি করতে করতে বললো
” আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি,আর গ্রন্থটাও নিতে আসিনি,চআমি শুধু এই গ্রন্থে থাকা কিভাবে অনুভব ঠিক হবে সেটা দেখার জন্য এসেছি,আমায় সাহায্য করো তুমি, ”
” এর আগেও কিছু লোক এসেছিলো এই গ্রন্থকে নিতে,আমি তাদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেইনি।তুইও তাদের মতোই কেউ ”
” না,আমি তাদের মতো কেউ না,বিশ্বাস করো,আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে এসেছি ”
ছায়াটা অহনার আরো একটু কাছে আসলো।অহনা ভয়ে কাঁপছে। তখন ছায়া বললো
” কে তুই ? ”
” আমি অহনা,এই যে দেখছো,ইনি আমার স্বামী, সে একজন ভ্যাম্পেয়ার,তাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতেই আমার এই গ্রন্থটা প্রয়োজন ”
” তোর শরীর এতো ভয়ঙ্কর,! ”
অহনা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।সে কি বলছে? আমার শরীর ভয়ঙ্কর?। অহনা নির্বিকার হয়ে উত্তর দিলো
” আমার শরীর ভয়ঙ্কর? ”
চলবে?