Love with vampire পর্ব ২৩+২৪

#Love_with_vampire [২৩]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
[শেষাংশের প্রথম ভাগ]

অহনা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।সে কি বলছে? আমার শরীর ভয়ঙ্কর?। অহনা নির্বিকার হয়ে উত্তর দিলো

” আমার শরীর ভয়ঙ্কর? ”

” কোথায় থেকে এসেছিস তুই? ”

” পৃথিবী থেকে,”

ছায়াটা কেমন চুপচাপ হয়ে রইলো।অহনা ভয়ে ভয়ে বললো

” তুমি কি আমায় সাহায্য করবে? ”

” আমি কিভাবে সাহায্য করবো ”

” এই গ্রন্থটা আমায় দাও, আমি এর ভেতর থেকে অনুভবকে ভালো করার তথ্যটা জেনে আবার তোমায় দিয়ে দিবো ”

” না,এই গ্রন্থ কোনো মানুষের হাতে দেওয়া নিষিদ্ধ ”

” কিন্তু কেন? ”

” এই বই মহাকালের সাক্ষী, এখানে এমন সব তথ্য দেওয়া আছে যা একটা মানুষের কাছে পৌঁছালে সব শেষ হয়ে যাবে ”

” কিন্তু আমার তো এটা লাগবেই,যেকোনো মূল্যেই হোক না কেন ”

ছায়াটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে লাগলো।মূহুর্তেই সেই ছায়া মিলিয়ে গেলো। ঘরের ঠিক মাঝখানে ছাঁদ থেকে উপচে পড়া আলোর রশ্মি আরো প্রখর হতে লাগলো।সেই আলোর ভেতরে মনে হচ্ছে বালির ন্যায় ছোট ছোট আলোর বিন্দু বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে,।আলোটা পড়ছে ঘরের ঠিক মাঝখানে। যেখানে একটা তাঁরা আকা রয়েছে।আলোটা সেই তারার ওপর পড়ছে।তখন ঘটলো এক অদ্ভুদ ঘটনা।

সেখানকার কালো বালি গুলি নড়ছে,মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কিছু একটা বেড় হচ্ছে।দেখতে দেখতেই কালো বালি গুলি ভেদ করে তীব্র আলোর আভা বেড় হতে লাগলো,সেই আলোয় তীব্রতা অহনার চোখে পড়তেই অহনা দু’হাত চোখে রেখে চোখ বন্ধ করলো।এরপর ধীরে ধীরে চোখ মেললো।

সামনে ভাসমান অবস্থায় একটা বই ভেসে আছে।অহনা বইটার কাছে গেলো।বইটাকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো,পুরো বইটি কালো একটা কভারে আবৃত।অহনা তার কাঁপা কাঁপা হাতে বইটা নিলো।সাথে সাথেই ওপর থেকে আলো পড়াটা বন্ধ হয়ে গেলো,এবং পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেলো।এতো আলো যে মনপ হচ্ছে আস্তো একটা সূর্য ঘরে প্রবেশ করছে। অহনা বইটা হাতে নিয়ে একবার অনুভবের দিকে তাকালো।অহনার চোখে জল টুইটুই করছে।এতোদিনের ইচ্ছে তার আজ পূরণ হবে।অনুভব ঠিক হয়ে যাবে,তারা ফিরে যাবে পৃথিবীতে,তারপর তার’ও একটা ছোট পরিবার হবে, ছোট ছোট বাচ্চা-কাচ্চা হবে,তারা সারাক্ষণ অহনার আঁচল ধরে ঘুরবে।এসব ভাবতেই অহনার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।

বইটা প্রথমে যেমন দেখেছিলো হাতে নিয়ে তার বিপরীত বিষয় লক্ষ্য করলো অহনা।বইটা এখন আর কালো কভারে আবৃত নেই।বইয়ের দুপাশে সোনার মোটা মোটা দুটি আস্তরন।ওপরের কভারে সোনার ওপর আরো কিছি রঙ্গিন পাথর বসিয়ে এতোটাই মুগ্ধকর একটা কারুকাজ যা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।এই পাথর গুলি যে মহা মূল্যবান সেটা বুঝতে অহনার দেরি হলো না।বইয়ের ওপরে মোটা মোটা অক্ষরে কি যেন লেখা,দেখে মনে হচ্ছে সংস্কৃত ভাষা।লেখাটার ওপর হাত বুলাতেই সেই লেখা দিয়ে একটা স্নিগ্ধ আলো অহনার মুখে এসে পড়লো,ভয়ে অহনা বইটা সরিয়ে ফেললো।লেখাটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠলো।লেখাটা এখন বাংলায় লেখা।বাংলাতে লেখা ” মহাকাল “।

অহনা প্রথম পৃষ্ঠা খুললো।সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ” দ্বিতীয় হস্তে স্পর্শ করিবা মাত্র ইহা মিলিয়া যাইবে,”।তার মানে কি? এই বইটা অন্য কারো হাতের স্পর্শেই কি মিলিয়ে যাবে? আর ছায়াটা কোথায় গেলো? তাকে তে দেখতে পাচ্ছি না।তবে কি এই ছায়াটাই এই গ্রন্থ? কি জানি।

দ্বিতীয় পৃষ্ঠা খুলতেই সেখানে লেখা ” একটি মাত্র উদ্দেশ্য সাধন করা ব্যাতিত দ্বিতীয় কোনো ইচ্ছা পূরন করিলে মহা বিপদ ঘনিয়া আসিবে। “।

বইয়ের পৃষ্ঠাগুলি হলুদ বর্ণের মোটা মোটা কাগজে তৈরী। সে কাগজগুলি জীর্ণশীর্ণ।পাশের কাগজগুলো কিছুটা ছিঁড়ে গেছে।অহনা খুব যত্নে পরের পৃষ্ঠা উল্টালো।

তখনই একটা ভাঙা গলার স্বর ভেসে এলো। অহনা স্পষ্ট শুনতে পেলো ” মা’রে তুই পেরেছিস,তুই পেরেছিস “।অহনা চমকে পেছনে তাকালো।তাকাতেই দেখলো বৃদ্ধ সেই সাধক।অহনা মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।তার দিকে বইটা দেখিয়ে বললো

” আমি গ্রন্থটা পেয়েছি,আমার অনুভব এবার একদম ঠিক হয়ে যাবে আর…..”

অহনাকে থামিয়ে দিয়ে সাধক বললো

” বইটা কি তুই খুলেছিস রে মা?”

” হ্যা, কেন? ”

” না কিছু না।বই খোলার আগে কি আমার কথা মনে হলো না? মনে হলো না যে তোকে এই পথ বলে দিলো তাকে ছাড়া বইটা খোলা ঠিক হবে কি না? ”

অহনা চুপ করে রইলো।মনে মনে তার অনুশোচনা হচ্ছে। ঠিকই তো, ইনি না বললে তো সে এই অব্দি আসতেই পারতো না।অথচ এতো বড় একটা কাজ সে একা একাই করে ফেললো? এটা অন্যায় হয়েছে,বিরাট বড় অন্যায় হয়েছে।অহনা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো

” আমার সত্যিই ভুল হয়েছে,আসলে আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম,আমি বুঝতে পারিনি।এই নিন, এটা আপনি রাখুন,অনুভবকে কিভাবে অভিশাপ মুক্ত করতে হবে সেটা আপনিই তো খুঁজে বেড় করবেন ”

অহনা এগিয়ে এসে বইটা এগিয়ে দিলো।বৃদ্ধ সাধক লোকটা আতঙ্কে কয়েকপা পিছিয়ে গেলো।আতঙ্কমাখা স্বরে বললো

” নাহ!দূরে যা, আমার কাছে আসবি না।এই বই এখন তোর আদেশে চলবে,আমার স্পর্শ পেলে এই বই মিলিয়ে যাবে ”

অহনার মনে পড়লো প্রথম পৃষ্ঠা খোলার সময় সে নিজেও দেখেছিলো সেখানে হরফ করে লেখা দ্বিতীয় হস্তে বই স্পর্শ করতেই বই মিলিয়ে যাবে।অহনার মনে মনে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে।সাধক লোকটি বললেন

” বই যখন নিয়েছিস তখন তোকেই সব করতে হবে।ভালোই করেছিস আমায় দিস নি,আমায় দিলে হয়তো বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতো ”

” কি ক্ষতি হতো? ”

” আমি কিছুটা লোভী রে মা।শক্তি,ক্ষমতার লোভী। এই বইটা পেলে আমি অতীত, বর্তমান,ভবিষ্যৎ সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম,এতো বড় ক্ষমতা থাকলে তার অপব্যবহার হয়তো হতো আমার দ্বারা।এখন যা করার সব তোকেই করতে হবে ”

অহনা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।সে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।

” আমি এখন কি করবো? ”

” বইয়ে দেখ মাঝখানে একটা লাল সুতো দেওয়া আছে।সেখানে একটা মন্ত্র আছে।সেটা উচ্চারণে অনুভব এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে ”

অহনা বইটার মাঝখানে সত্যিই একটা লাল সুতো দেখলো।পরম যত্নে সেই সুতোর পৃষ্ঠা মেললো।কিন্তু পৃষ্টা মেলতেই অহনা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।কেননা এই মন্ত্রের ভাষা সে বুঝতে পারছে না।এমন লেখা সে আগে কখনো দেখেনি।অহনা ভয় পেয়ে সাধকের দিকে তাকিয়ে বললো

” এখানকার লেখা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কিভাবে বলবো আমি? ”

” এজন্যই বলেছিলাম বইটা আমার খোলা উচিৎ ছিলো।দ্বারা দেখি আমি কিছি করতে পারি কিনা ”

সাধক লোকটি চোখ বন্ধ করলো।বন্ধ চোখ মেললো সামনের বালিতে।সেখানে একটা বিশাল পাত্র দৃশ্যৃমান হলো।সেই পাত্র ভরা জল।কাঁচের মতো স্বচ্ছ জল। সেখানে অহনা নিজের মুখ দেখতে পারছে।

” বইটা উপুড় করে ধর,এই জলে বইয়ের ছায়া পড়লে সেখান থেকে মন্ত্রটা আমি দেখে নিতে পারবো ”

কথা মতো অহনা বইটা পাত্রেই ওপর উপুড় করে ধরলো।বৃদ্ধ সাধক বইয়ে লেখা মন্ত্রটা মুখে মুখে আওড়ালো,।অহনা লক্ষ্য করলে যখন বৃদ্ধ সাধক মন্ত্রটা মুখে মুখে আওড়াচ্ছে তখন তার চোখে হলুদের আভা ভেসে আসছিলো,সেটা আবার মিলিয়েও যাচ্চিলো।এমন ভয়ানক চোখ অহনার চেনা।কোথায় যেনো এর আগেও এমন ভয়ানক চোখ দেখেছে।বেশ কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধ লোকটা চোখ বন্ধ করলো।তার কাধের ঝোলাটা ধপ করে নিচে পড়লো।তিনি পাথরের মতো দারিয়ে রইলেন।

অহনার একটু ভয় ভয় করছে।ভয়ে বইটা বন্ধ করে বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো।বিড়বিড় করে কারো আওয়াজ শোনা গেলো।অনুভব হাত তুলে কিছু বলার চেষ্টা করছে। অহনা কাছে গেলো,অনুভব কি বলার চেষ্টা করছেমসেটা বোঝার চেষ্টা করলো

” অনুভব,এই অনুভব,আপনি কি কিছু বলার চেষ্টা করছেন? কি বলছেন, একটু জোরে বলুন,আমি বুঝতে পারছি না, ”

অনুভবের সারা শরীর ঘামছে,ঘেমে একাকার হয়ে গেছে তার শরীর।এক হাত উঁচিয়ে কি যেন বলছে,সেটা বোঝা যাচ্ছে না।অহনার মনে হতে লাগলো হয়তো অনুভব বলার চেষ্টা করছে

” এমনটা করো না,আমার কথা শোনো,আমার কষ্ট হচ্ছে ”

চলবে?#Love_with_vampire [২৪]
[শেষাংশের দ্বিতীয় ভাগ]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

অনুভবের সারা শরীর ঘামছে,ঘেমে একাকার হয়ে গেছে তার শরীর।এক হাত উঁচিয়ে কি যেন বলছে,সেটা বোঝা যাচ্ছে না।অহনার মনে হতে লাগলো হয়তো অনুভব বলার চেষ্টা করছে

” এমনটা করো না,আমার কথা শোনো,আমার কষ্ট হচ্ছে ”

অহনা ভেবে পেলো না এখন সে কি করবে। অনুভবের হাতে হাত রাখলো অহনা।রাখতেই আঁতকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো অহনা।অনুভবের হাত গরম, অসম্ভব গরম,মনে হচ্ছে জলন্ত আগুনের লাভার ওপর হাত রেখেছিলো।অনুভবের চোখ গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারন করছে।

বৃদ্ধ সাধক অহনার দিকে তাকালেন।সেই,চাহনিতে বিশাল শূন্যতা।চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ঘরের মাঝখানে গেলেন তিনি।হাত দিয়ে বালির ওপর কি যেন আঁকতে লাগলেন।তার কর্মকান্ড স্বাভাবিক মনে হলেও শরীরে কেমন যেন জীর্ণতায় ভরা।উপুড় হয়ে নখ দিয়ে বালির ওপর এখনো আঁকছেন। অহনা উঠে দারালো, একটু কাছে যেতেই দেখলো তিনি বালির ওপর একটা তারকা চিহ্ন আঁকছেন।তার পাশদিয়ে কিসব দাগ টানছেন, সেগুলি অহনার বোধগম্য হলো না।অহনা এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

বৃদ্ধ সাধক উঠে দারালেন। ঝোলা থেকে পাঁচটা মোমবাতি বেড় করলেন।সেগুলো তারকার পাঁচ কোনে পাঁচটা বসিয়ে দিয়ে মোম বাতি গুলিতে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন।অহনা একবার তাকে জিগ্যেস করলে তিনি বললেন

” বালির ওপর এসব কি আঁকছেন? ”

” চক্র ”

” চক্র মানে কি?”

” এতো বলার সময় নেই।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে,সূর্যের আলো থাকা অবস্থায় সব করতে হবে।”

” আচ্ছা ”

” অনুভবকে এই তারকার ভেতরে বসিয়ে দিতে হবে ”

” তারপর? ”

” তারপর এক মনে, গভীর মনোযোগে ডাকতে হবে সেই ভ্যাম্পেয়ারকে, যে অনুভবের গলায় কামড় বসিয়ে ছিলো ”

” কি বলছেন আপনি এসব ? ”

” হ্যা, সময় খুব কম,যাও অনুভবকে নিয়ে এসো ”

” ওনার শরীর তো আগুনের মতো গরম হয়ে আছে, আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, ওনার কোনো ক্ষতি হবে না তো? ”

” হবে না রে মা,এই নে এই কড়িটা ওর শরীরে স্পর্শ করিয়ে নিয়ে আয়,এটা স্পর্শ করার সাথে সাথে শরীরের তাপ নষ্ট হয়ে যাবে ”

অহনা কথা মতো কড়িটা হাতে করে নিয়ে এলো।অনুভবের কাছে বসতেই অনুভব গর্জনের মতে করে উঠলো।অহনা ভয়ে পেছনে সরে গেলো,।অনুভব এখন মানুষ নেই,সে এখন অন্য কিছু।চোখ গাঢ় হলুদ,সারা শরীরে বড়বড় কালো ঘন লোম,মুখের ভেতর থেকে দুই দিকে দুটি দাঁত বেড়িয়ে এসেছে,সেই দাঁতে আলো পড়ে চকচক করছে,শরীর থেকে কেমন একটা বিকট গন্ধ বের হচ্ছে। অহনা ভয়ে বৃদ্ধ সাধকের দিকে তাকালো।বৃদ্ধ সাধক জোড়লো স্বরে বললো ” দেরি করিস না, গায়ে স্পর্শ করা, ও এখনো পুরোপুরি রুপ নেয় নি,তারাতাড়ি “।অহনা ঝাপিয়ে পড়ার মতো করে অনুভবের হাতে কড়িটা স্পর্শ করালো।অহনার দীর্ঘ বিশ্বাস, অনুভব তার কোনো ক্ষতি করবে না।কড়িটা স্পর্শ করতেই অনুভবের শরীর মুহূর্তেই শীতল হয়ে আসলো,চোখ বন্ধ,বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করলো।

অহনা এবং বৃদ্ধ লোকটা দু’জনই মিলে অনুভবকে ধরে সেই তারকা চিহ্নের ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দিলো।অনুভব চোখ বন্ধ করে আছে।তার শ্বাস এখন খুব দ্রুত ওঠা নামা করছে।

বৃদ্ধ সাধক খুব তাড়াহুড়ো করে উঠে বাইরে চলে গেলেন।অহনা বুঝতে পারলো না তিনি কোথায় গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো তার কোনো খোঁজ মিললো না।এদিকে ভয়ে আতঙ্কে অহনার জমে যাওয়ার অবস্থা। অহনা বার বার ভীরু চোখে অনুভবের দিকে তাকাচ্ছে।

পুরো ঘরটা অন্ধকার,সূর্য অস্ত নিয়েছে।ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর পাঁচটা মোমবাতি ধুকধুক করে জ্বলছে।একটা তারকা চিহ্ন আকা,তার মধ্যে হাটু মুড়ে বসে আছে অনুভব।তার চোখ বন্ধ,বুক উঠা নামা দেখে অনুমান করা যায় তার শ্বাস খুব দ্রুত ওঠা নামা করছে।তার কিছু দূরে অহনা প্রচন্ড ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে,।বারবার ভাঙ্গা দেয়ালের দিকে তাকাচ্ছে যেদিকে বৃদ্ধ সাধক উঠে চলে গিয়েছিলেন।তার এখনো দেখা মিলছে না।অহনা মনে মনে যেমন ভয় তেমনি রাগ হতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষন পর বৃদ্ধ সাধক আসলেন।তার হাতে একটা বিড়াল।বিড়ালের চোখ গাঢ় হলুদ,পুরো শরীর কালোয় কিশকিশ করছে,মোমবাতির আলোয় বিড়ালটার চোখ চকচক করছে।বিড়ালটিকে অনুভবের পাশে রাখলেন। অহনা ফুপাতে ফুপাতে বললো

” কোথায় গিয়েছিলেন আপনি? এতক্ষণ প…..”

” এখন এতো প্রশ্ন করিস না রে মা,তুই মাথায় আঁচল দে, চুল যেন দেখা না যায় ”

” এই ভয়ঙ্কর বিড়ালটা দিয়ে কি হবে? ”

” যখন ওই আত্মা আসবে তখন তার শক্তি একটা শরীরে করে নিয়ে যাবে,।এখানে কোনো প্রান না থাকলে তুই নইলে আমি দু’জনার মধ্যে কাউকে বলি হতে হতো ”

অহনা চুপ করে শুনছে।তার বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা যেন নষ্ট হয়ে গেছে।অহনা মাথায় আঁচল গুঁজে দিলো।অনুভবের সাথেই বিড়ালটা বসে লেজ নাড়াচ্ছে।বৃদ্ধ সাধক অহনাকে বললেন

” মনে মনে সেই পশুটার কথা ভাবতে থাক,যে অনুভবকে কামড় দিয়েছিলো ”

” কিন্তু আমি তে তাকে দেখিনি ”

” কল্পনাতে তার কথা ভাবতে থাক,আর হ্যা,কি হয়প যায় যাক চোখ খুলবি না!”

” আচ্ছা ”

অহনা মনে মনে ভাবতে থাকলো সেই পশুর কথা।এক মনে সে ভাবছে।বেশ কিছুক্ষণ পর অহনার কেমন যেন গরম বাতাস অনুভূত হচ্ছে, সাথে একটা চাপা স্বর,।এই গরম বাতাস কি শুধু তাকেই লাগছে? চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আলোর উপস্থিতি সে বুঝতে পারছে।কিন্তু এখন কেন যেনো সে অনুভূতি আর পাচ্ছে না,মনে হচ্ছে এই গরম বাতাসে মোমবাতি নিভে গেছে।কি হচ্ছে এসব? তবে কি সেই পশুর আত্মাটা এসে গেছে? গরম বাতাস, আলো নিভে যাওয়া,এসব কি তার’ই ইঙ্গিত? আমার এাকন কি করা উচিৎ? আমি কি চোখ খুলবো? কিন্তু ইনি তে আমায় বলেছেন যাই হেক না কেন তিনি বলার আগপ যেন আমি চোখ না খুলি।

_________________

ক্লার্ক বই পড়ছেন এমন সময় একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন,এসে বললেন, ” স্যার মিস অহনা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন,তারাতাড়ি আসুন “।ক্লার্ক চোখে চশমাটা দিতে দিতে বললেন “ইউ গো, আই এম কামিং সুন,”। বই রেখে ক্লার্ক দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলেন অহনার বেডে।গিয়ে দেখলেন অহনা ছটফট করছে,তার চোখ নড়ছে,অসম্ভব ভাবে নড়ছে,এতো দ্রুত কেউ চোখ নড়াতে পারে না।তিনি ক’ড়া ঘু’মের একটা ইন’জেকশন পু’শ করলেন।কিন্তু কোনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না,অহনা এখন ছটফট করছে।তার সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ছে।এতে কড়া ঘুমের ঔষধ ও তার শরীরে এখন কাজ করছে না….

__________________

অহনার খুব ইচ্ছে করছে চোখ খুলতে,সামনে কি হচ্ছে সেটা দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।দু চোখ যেনো আর বাঁধ মানছেই না।কি করবে সে? বাধা অমান্য করে কি চোখ মেলবে? এতে অনেক বড় বিপদ হতে পারে সেটা অহনা বুঝতে পারছে,কিন্তু কিচ্ছু করার নেই, তাকে চোখ খুলতেই হবে।

অহনা মনে মনে ভাবলো চোখ খুললে কি এমন দেখতে পারে? একটা ভয়ঙ্কর পশু,যার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে,দাঁত বেড়িয়ে আছে,সেই দাতে মোমবাতির আলো পড়ে চকচক করছে,মোমবাতির আলো পড়বে কিভাবে? আলো তো নিভে গেছে,আর বিড়ালটাই বা কি করবে,?আচ্ছা বিড়ালটা কি আমার দিকে চেয়ে থাকবে? নাকি ভয়ঙ্কর পশুটা আমার দিকে চেয়ে থাকবে? তারপর বড় করে মুখ খুলবে,আর আমার ঘাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দিবে? আর আমি তখন ছটফট করতে করতে মারা যাবো?।

শুধু ভেবেই বসে থাকলো না অহনা, কৌতুহলবশত চোখ মেললো।দেখলো চোখের সামনে ভয়ঙ্কর একটা………

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here