Love with vampire পর্ব ১৯+২০

#Love_with_vampire [১৯]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” হ্যা! ঠিক বলেছেন একদম,আমিও তাই ভাবছি, সিরিজে বিষ নিন,যা করার এখনি করতে হবে! ”

” সত্যি স্যার? আপনি সত্যি বলছেন? ”

” হ্যা সত্যি, সিরিজে বিষ নিয়ে সেটা আপমার মাথায় ঢুকিয়ে রাখেন ”

” ঠিক বুঝলাম না স্যার ”

” আমার সামনে থেকে সরে যান।আপনি নিজেই তো একটা সাইকো, আপনি অন্যের কি চিকিৎসা করবেন।পারলে নিজের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন ”

ডাঃ মনসুর অপমানিত বোধ করলেন। রাগে গিজগিজ করতে করতে কেবিন থেকে বেড় হয়ে গেলেন।ডাঃক্লার্ক তার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন,মনে মনে বললেন ” এ্যা’চ,বিগ এ্যা’চ “।

______________

সূর্যের আলো ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে। অহনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।অহনা ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে দেখতে পারে ঘরের ভেতর কি আছে,কিন্তু সে পারছে না।কোনো এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে রাখছে।অহনা ভয় ভয় নিয়ে দেয়ালে চোখ রাখলো।ভেতরে তাকাতেই অহনা দেখতে পেলো কেউ পেছন ফিরে দারিয়ে আছে।কে দারিয়ে আছে সেটা দেখার জন্য চাহনি একটু ওপরে তুলতেই অনুভবের ভ্যাম্পেয়ার রুপটা অহনার নজরে পড়লো।সাথে সাথেই অহনা ভয়ে কয়েক পা সরে গেলো।

” অনুভব ভ্যাম্পেয়ার রুপ নিয়েছে ঘরে ঢুকে? কিন্তু কেন? অকারণে তো সে ভ্যাম্পেয়ারে পরিণত হয় না,এখন তো পূর্নিমার রাত ও না,তাহলে কি অনুভব কোনো বিপদে পারেছে, তাই ভ্যাম্পেয়ারে পরিণত হয়েছে? আমি থাকতে অনুভবের কিচ্ছু হতে দিবো না ” এসব মনে মনে আওড়ানোর পর অহনা পাথরটা আবারো হাতে তুলে নিলো।যেভাবেই হোক এই দেয়াল ভাঙ্গতেই হবে।

দেয়ালের ওপাশে অনুভব দারিয়ে আছে।সেই ছায়াটা ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে,তখনই আবারো দুম দুম শব্দ শুরু হতে লাগলো দেয়ালে। “তার মানে কি অহনা আবারো দেয়াল ভাঙার জন্য দেয়ালে আঘাত করছে? অহনা এখানে আসলেই কোনো বিপদ হতে পারে।আমি তো কোনো না কোনো ভাবে বেড় হবোই,কিন্তু অহনা যদি কোনো বিপদো পড়ে তখন? নাহ,ওকে কোনো ভাবেই ভেতরে আসতে দেওয়া যাবে না ” কথাগুলি মনে মনে ভেবে অনুভব দেয়ালের আরো কাছে গেলো।

দেয়ালের খুব কাছে গিয়ে চিৎকার করে অহনাকে বললো ” অহনা তুমি থামো,এই ঘরে তোমার বিপদ,তুমি দেয়ালে আঘাত করা বন্ধ করো।আমি যেভাবেই হোক বেড় হতে পারবো,কিন্তু তুমি যদি এখাবে চলে আসো তাহলে এই ছায়াটা হয়তো তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে।এতোক্ষণে আমি বেড়িয়ে আসতাম,কিন্তু ও ছায়া জন্য আমি কিছিই করতে পারছি না।তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো অহনা? ”

দেয়ালের ওপাশ থেকে অহনা শুধু চাপা গর্জন শুনতে পেলো।অহনার মনে হলো অনুভব কষ্ট পাচ্ছে, তাই এভাবে চাপা গর্জন করছে।কিন্তু অনুভব যে তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে সেটা অহনার বোধগম্য হচ্ছে না।অহনা আরো জোরে জোরে দেয়ালে আঘাত করতে থাকলো।হাত বেয়ে রক্ত টপটপ করে পড়তে লাগলো সেখানে।

অনুভব লক্ষ্য করলো বেশ কয়েকবার বলার পরেও অহনা থামছে না।এমনটা কেন হচ্ছে?এটা তো হওয়ার কথা নয়,অহনা অনুভবের কথা শুনবে না এটা অসম্ভব।তখনি অনুভবের মনে হলো যে সে তো ভ্যাম্পেয়ারের রুপে আছে।তাই তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না,যা বেড় হচ্ছে তা গর্জন,এজন্যই অহনা বুঝতে পারছে না।কিন্তু অহনাকে বোঝাতেই হবে যে ওর এই ঘরে আসা যাবে না।কিন্তু কিভাবে বলবো সেটা? আমি কি মানুষ রুপে ফিরে যাবো? তাহলেই তো অহনা শুনতে পাবে।হ্যা আমায় সেটাই করতে হবে “।

কয়েক মুহূর্ত ভেবে অনুভব সিদ্ধান্ত নিলো যে সে মানুষে পরিণত হবে।মনে মনে একটা ভয় ও হতে লাগলো,মানুষ রুপ নিলে তো তার আলাদা কোনো শক্তি থাকবে না।এবং এইটা’ই সুযোগ নিয়ে যদি ছায়াটা আমার কোনো ক্ষতি করে? আমার ক্ষতি করা মানে তো অহনাও সংকটে পড়বে।কিন্তু আপাতত আমায় ওকে বাঁচানোর জন্য মানুষ হওয়া জরুরি।

অনুভব চোখ বন্ধ করলো।বন্ধ করতেই তার শরীরে একটা জোড়ালো খিচুনির মতো হলো।সে এখন ভ্যাম্পেয়ার থেকে মানুষের রুপ ধারন করেছে।চোখ খুলতেই অনুভব বলার চেষ্টা করলো।কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বেড় হচ্ছে না।অনুভব অনেক চেষ্টার পরেও কোনো আওয়াজ বের করতে পারলো না।তখনই একটা হাসির শব্দ কানে ভেসে এলো।অনুভব পেছন ফিরে তাকালো।অনুভব বেশ বুঝতে পারলো এই হাসিটা এই ছায়াটার।আমার কন্ঠ এই বন্ধ করিয়ে দিয়েছে।যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটাই হলো।আমি কি অহনাকে তাহলে বাঁচাতে পারলাম না?

শুধু এইটুকু ভাবর সময়টার মধ্যেই অনুভব দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।অসম্ভব মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়েছে।অনুভব জানে এই ব্যাথার কারন কি,কে এই ব্যাথা দিচ্ছে।মাথা ব্যাথায় অনুভব ধপ করে কালো বালির ওপর পড়ে গেলো।এতো তীব্র মাথা ব্যাথায় অনুভব আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।কালো বালির ওপর পড়ে রইলো তার নিথর দেহ।ছায়াটা ভয়ঙ্কর শব্দ করে হাসছে।সে শব্দ শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

অহনা দেয়ালে আঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।দেয়ালের বেশ অনেকটা জায়গা ভেঙ্গে গেছে।এখন চাইলেই সেখান দিয়ে ভেতরে যাওয়া সম্ভব। অহনা আঁচলটা বুকের সাথে শক্ত করে বাঁধলো। তখন একটা অস্ফুটে আওয়াজ কালে ভেসে এলো

“অহনা,অহনা ”

অহনা বেশ বুঝতে পারলো এটা রুপার স্বর।অহনা একটু বিভ্রান্ত হলো।রাগী স্বরে উত্তর দিলো

” এখন চুপ থাকো,আমার ভেতরে যেতে হবে। একদম চুপ ”

বলেই অহনা দেয়ালের ওপর ডান পা’টা তুলে দিলো।তখনই আবারো রুপা বলে উঠলো

” অহনা দারাও,ভেতরে যেও না, আমার কথা একটু শোনো যেও না ভেতরে ”

অহনার এবার প্রচুর রেগে গেলো।রেগেমেগে উত্র দিলো

” তোমায় চুপ করতে বলেছি না? অনুভব ভেতরে বিপদে পড়েছে,জানিনা এখন কোন অবস্থায় আছে সে,আর আমি এখানো দারিয়ে থাকবো? ”

” অনুভবের বিষয়েই তেমাকে বলবো আমি।আমি তোমায় বারণ করবো না।শুধু আমার কথা শুনো তুমি ”

” যা বলার তারাতাড়ি বলে বিদেয় হও ” রেগে গিয়

” অনুভব এখন বিপদে আছে,সে বিপদের কারনটা তুমি ”

” কিহ্? আমি কারন? ”

” হ্যা তুমি।অনুভব ভ্যাম্পেয়ার রুপে ছিলো,সেই রুপে ঘরে তার কোনো ক্ষতি করতে পারতো না সেই ছায়া।কিন্তু তুমি প্রবেশ করলে তোমার ক্ষতি হবে এই ভেবে অনুভব তোমায় বারবার বারন করেছিলো দেয়াল না ভাঙ্গার জন্য ”

” কি বলছো তুমি? অনুভব কখন আমায় বললো? ”

” বলেছিলো, যখন সে ভ্যাম্পেয়ার রুপে ছিলো।তখন তার আওয়াজ তোমার কাছে গর্জনের মতো শোনাচ্ছিলো ”

অহনার তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো হ্যা সত্যিই তো, অনুভব তো গর্জন করেছিলো।অহনা হতভম্ব হয়ে বললো

” কিন্তু আমি তো সেই গর্জন বুঝতে পারিনি ”

” তোমায় বলার জন্য অনুভব মানুষে রুপান্তর হয়েছিলো।কিন্তু বলার আগেই ”

” বলার আগেই মানে? অনুভবের কি কিছু হয়েছে? কি হলো চুপ করে গেলে কেনো বলো? ”

” মানুষ রুপে ফিরে যেতেই সেই ছায়ার শক্তিতে অনুভব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ”

” তুমি আমায় এসব আগে কেনো বলোনি ”

” আমি প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু তুমি তো সেটা শুনতেই পাচ্ছিলে না।কেমন একটা ঘোরে ছিলে ”

” এখন আমি কি করবো সেটা বলো।আমি কিচ্ছু বুঝতে পাচ্ছি না এখন আমার কি করা উচিৎ। আচ্ছা আগে এটা বলো তুমি কিভাবে এসব জানলে? তুমি তো বলেছিলে ওই ঘরের কিছু তুমি দেখতে পারো না? ”

” দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার সাথে সাথে সেই বলয়টা কেটে যায়,এজন্যই আমি সবটা দেখতে পাচ্ছিলাম।তেমায় বলার চেষ্টাও করেছি,কিন্তু তুমি কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছিলে না ”

তখনই অহনার কানে একটা শব্দ এলো।এমন মনে হলো যেনো দেয়ালের ওপারে ভারি কোনো কিছু ধুপধাপ আঁচড়ে পড়ছে। অহনা আতঙ্কে জমে গেলো।কি এভাবে আঁচড়ে পড়ছে?

চলবে?#Love_with_vampire [২০]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

তখনই অহনার কানে একটা শব্দ এলো।এমন মনে হলো যেনো দেয়ালের ওপারে ভারি কোনো কিছু ধুপধাপ আঁচড়ে পড়ছে। অহনা আতঙ্কে জমে গেলো।কি এভাবে আঁচড়ে পড়ছে?

অহনা ফ্লোর থেকে উঠে দারালো।ভয়ে ভয়ে ভেতরে কিসের শব্দ হচ্ছে সেটা দেখার চেষ্টা করলো।তেমন কিছু নজরে পড়ছে না,শুধুই অন্ধকার। সূর্যের আলোতেও এই অন্ধকার কাটছে না কেন?

অহনা অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে ঘরে যাবে,ভেতরে কি আছে তার মুখোমুখি হবে।তবে অহনার কেন জানি মনে হচ্ছে তার কোনো বিপদ হবে না,এমনটা কেন মনে হচ্ছে সে জানে না।হঠাৎ মনে পড়লো সেই সাধকের কথা।সাধক লোকটি তো বলেছিলো ঘরের ভেতরে একটা গ্রন্থ আছে।তাহলে কি সেই গ্রন্থটাই রক্ষা করছে এই শক্তি?।

দেয়ালের ভাঙ্গা অংশের ওপর পায়ে ভর করে ভেতরে প্রবেশ করলো অহনা।চারিদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না,শুধুই অন্ধকার।অহনার বুকটা ধরপর করতে লাগলো ভয়ে।সেই অন্ধকারে একটু সামনে পা বাড়াতেই কি যেন একটা পায়ে বাঁধলো। পায়ে আকষ্মিকভাবে কিছু একটা বাঁধার কারনে অহনা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।ভয়ে একটা অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠে অহনা।

___________

ডাঃক্লার্ক কিছু বইপত্র জোগাড় করেছে।সেগুলোয় চোখ বোলাচ্ছে এমন সময় একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো ” স্যার তাড়াতাড়ি চলুন, মিস অহনার শরীর থেকে আবারো রক্ত পড়ছে “।ডাঃক্লার্ক প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বইটা খোলা রেখেই উঠে চলে গেলেন।

রুম নাম্বার ৩০৮।অহনার নিথর শরীর বেডে পড়ে আছে।ঘরের দরজার কাছে ভয়ার্ত চাহনি নিয়ে দারিয়ে আছে ডাঃ মনসুর।ভয়ে তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।রুমে ডাঃমনসুর ব্যাতিত আর কাউকে দেখতে পেলো না ডাঃ ক্লার্ক।কাছে গিয়ে মনসুরের উদ্দেশ্য বললো

” মিস অহনার হাত দিয়ে কি আবারো রক্ত পড়ছে? ”

মনসুর কোনো কথা বললো না।হাসের ইশারায় ক্লার্ককে মিস অহনার হাতের দিকে দেখিয়ে দিলো।ক্লার্ক অহনার হাতে দিকে তাকাতেই একটু ভয় পেলো।চশমাটা খুলে পরিষ্কার করে আবারো চোখে দিলেন।দিয়ে অহনার কাছে দারালেন। নার্স যা বললো সেটা সত্যি! হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে সারা হাত কেমন থেঁতলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।টপটপ করে পড়তে থাকা রক্ত ক্লার্ক একটা টিউবে নিলেন।এই রক্ত তিনি নিজেই পরিক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন।মনসুরের দিকে তাকিয়ে বললেন ” এনার হাতটা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যান্ডেজ করে দিন। নইলে ইনফেকশন হয়ে যাবে!”।ডাঃ মনসুর কোনো উত্তর দিলেন না।তাকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে, আপাতত দারিয়েই থাকবে,ক্লার্ক যখন বেড় হয়ে যাবে তার পেছন পেছন সেও বেড় হবে।

নিরুপায় হয়ে ক্লার্ক নিজেই অহনার হাতের রক্ত ধুয়ে সেখানে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।সাথে সাথে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলো।ব্যান্ডেজ শেষে অহনার হাতের কব্জির কিছিটা ওপরে একটা সিরিঞ্জে করে কিছিটা রক্তও নিলেন।দুই রক্তের মধ্যে সম্পর্ক তিনি নিজেই গবেষণা করবেন।

_______________

গুহার ভেতর সাধক একটা বলয় তৈরি করলেন।সেখানে দেখছেন অনুভব রক্তাক্ত অবস্থায় বালির ওপর পড়ে আছে।ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার।অহনাও ইতোমধ্যে সেই ঘরে ঢুকেছে। সাধক মত্ত হয়ে গুহার বাহিরে বেড় হলেন।বলতে লাগলেন, মুক্তি,মুক্তির সময় এসে গেছে, হাহাহাহাহা।

তিনি তার ঝোলাটা কাঁধে নিলেন।নিয়ে হাঁটতে শুরি করলেন যেই বাড়িতে অহনা এবং অনুভব থাকে।মনে মনে বললেন ” আমি জানতাম রে মা তুই পারবি,তুই পারবি অসাধ্য সাধন করতে।আমি আসছি,একটু অপেক্ষা কর।”

সাধক হাটতে হাটতেই বিড়বিড় করে কি যেন বললেন।সামনে ছোট থেকে বড় আকারের একটা বলয়ের সৃষ্টি হলো।তিনি চোখ বন্ধ করলেন,তার শরীর ঘামতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে তিনি অহনার ভেতরে থাকা আত্মার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন।কিন্তু পারছেন না। তিনি আরো জোরে জোরে হাঁটতে লাগলেন।

______________

অহনা মুখ থুবড়ে বালির ওপর পড়ে আছে।হাতে ভর করে ওঠার চেষ্টা করলো।নিচে কিসের সাথে পা বিঁধে গেলো সেটা দেখার জন্য অহনা নিচে তাকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো, কেননা সে নিজেও জানে,অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পারবে না।তবুও নিচে তাকালো,অহনার ইচ্ছে করছে জিনিসটা কি সেটা জানতে।মনে মনে ভাবছে একবার ছুঁয়ে দেখবে কি না।

পরোক্ষনে একটা উদ্ভট বিষয় তার মনে হলো,এটা কি অনুভব?।অনুভূতি একবার হতে শুরু হলে তা থেমে থাকে না,কিছুক্ষণ চলতে থাকে,ইচ্ছে করলেই সেই অনুভব বন্ধ করা সম্ভব হয় না,নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত এই অনুভূতি কাজ করে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।এই বিষয়টা এখন অহনার ক্ষেত্রে ঘটছে,তার মনে একটা অনুভূতি কাজ করছে।সেটা ভালো নয়,খারাপ,খুব খারাপ।অহনার মনে হচ্ছে অনুভব নিচে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,তার সারা শরীর থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে,।হয়তো মুখের অনেকটা অংশ থেঁতলে গিয়েছে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে,সে চোখ অসম্ভব লাল,চোখের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।অহনা এসব চিন্তা করতে চাচ্ছে না।কিন্তু এই চিন্তা একটা সময় পর্যন্ত হয়েই থেমে গেলো।

অনুভূতিটা সত্যি না মিথ্যে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে করছে অহনার।তার শরীর কাঁপছে, হাত কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে অন্ধকারে নিচে পড়ে থাকা অনুভবের শরীরে একটু স্পর্শ করেই আঁতকে উঠল অহনা।দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো,প্রচন্ড ভয়ে তার এখন খুব কান্না পাচ্ছে। তবুও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আবারো দ্বিতীয়বার ছুঁয়ে দেখলো। অহনা বেশ বুঝতে পারলো এটা একটা মানুষের শরীর।অহনা হাত একটু ওপরে তুলতেই অনুভবের চুলে অহনার হাত পড়লো।চুলে হাতের স্পর্শ পড়তেই অহনা একটু ভড়কে গেলো,এই চুলগুলো তার পরিচিত মনে হচ্ছে।পিঠে হাত দিতেই বুঝলো সে শার্ট পরিহিত, এবং শার্ট ভিজে চপচপ করছে।সেই ভেজাটা কিছুটা পিচ্ছিল।নিশ্চই রক্তে মাখামাখি হওয়া শার্ট।অহনার মনে একটা ক্ষীন ভাবনা এলো,এটা কি অনুভব? অনুভব কি রক্তাক্ত অবস্থায় এভাবে পড়ে আছে?।

অহনা কাঁপা কাঁপা স্বরে বার কয়েক অনুভব,অনুভব বলে ডাকলো।কোনো উত্তর পেলো না।অহনা এবার একটা হাসির শব্দ পেলো।অহনা চমকে উঠে দারালো।ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, কে? কে হাসছে? “।এবারেও কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না।

ঘরে এবার আলো আসা শুরু করছে।গাঢ় অন্ধকার সূর্যের আলোয় কিছিট কেটেছে।চারদিকটা আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে।একটু,আর একটু পরেই ঘরের আলো আরো বাড়তে লাগলো।ঘরে এখন তেমন আলো না থাকলেও এই আলোয় বেশ সব বোঝা যাচ্ছে। অহনা চারপাশটা একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো।

ঘরে তেমন কিছুই নেই।শুধু চারদিকে প্রকান্ড মস্ত বড়বড় জানালা।সেই জানালায় লতাপাতা পেচিয়ে আছে।বাহিরে থেকে তো এই জানালা গুলি চোখে পড়েনি।অহনা নিচে তাকালো,সেখানে মাটি,বা কংক্রিটের ফ্লোরের বদলে বালি।সে বালি গাঢ় কালো রঙ্গের। ঠিক মাঝখানে ছাদের একটু অংশ ফুটো হয়ে বলো পড়ছে।আলো পড়ার যায়গাটায় কি যেনো আঁকা।দেয়ালের কোনে অহনার চোখ পড়লো।একটা ছায়া সেখানে কেমন দল বেঁধে আছে।সেটা নড়ছে,বাতাসে যেমন চুল উড়ে সেভাবেই সেই ছায়ার দলটাও নড়ছে।

ছায়াটা এবার ধীরে ধীরে লম্বা হচ্ছে।লম্বা হয়ে একটা মানুষের মতো দেখাচ্ছে, মনে হবে কোনো মানুষ দারিয়ে আছে,যার দেহ নেই কিন্তু ছায়া আছে।অহনা বুঝতে পারলো এটা একটা মেয়ের ছায়া।কেননা ছায়ার শরীরের গঠন বোঝা যাচ্ছিলো।শরীরের গঠন বলতে বোঝা যাচ্ছিলো ছায়াটার চুল অনেক বড়,মাটিতে ছুঁই ছুঁই করছে,কোমড় সরু,বু’ক এবং কোমড়ের নিচ অংশটা মোটামুটি আকারের…..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here