Love with vampire পর্ব ১৭+১৮

#Love_with_vampire [১৭]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

ডাঃ ক্লার্ক গভীর মনযোগ দিয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখছেন।ভিডিওতে এক পর্যায়ে তিনি প্রচুর ঘাবড়ে গেলেন।এসির মধ্যেও তার শরীরে ঘাম জমতে শুরু করেছে।তিনি টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।

এসির মধ্যেও ঘামতে দেখে ডাঃমনসুর কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।ডাঃক্লার্কের মতো একজন নির্ভয়,সাহসী ডাক্তার হয়েও ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে, নিশ্চই এখানে কোনো রহস্য আছে।ডাঃ মনসুর নিচু স্বরে বললেন

” স্যার আপনি ঠিক আছেন তো? ”

ডাঃ ক্লার্ক আড় চোখে মনসুরের দিকে তাকালেন।কিছু না বলে আবারো ভিডিও ফুটেজ দেখতে লাগলেন।তাকে আগের থেকে এখন আরো চিন্তিত লাগছে।বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি মনিটরের ওপর থেকে চোখ সরালেন।চশমাটা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন

” ডাঃমনসুর ”

” জি স্যার ”

” আপনি প্যারানরমাল কোনো কিছুতে বিশ্বাস করেন? ”

” না স্যার,এসব আবার হয় নাকি,আমি স্যার অনেক সাহসী, লাশ কাটা ঘরে থাকতে বললে আমি থাকতে পারবো স্যার, কোনো সমস্যা হবে না”

” থামুন,এতো কথা তো জানতে চাইনি ”

” সরি স্যার ”

” মিস অহনার বিষয়টার ব্যাখ্যা আছে আপনার কাছে? ”

মনসুর শুকনো ঢোক গিললো।লজ্জাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।উত্তরে কিছু বললো না। ডাঃ ক্লার্ক চশমাটা টেবিল থেকে নিয়ে চোখে দিয়ে বললেন

” চা’য়ের ব্যাবস্থা করতে পারবেন? গত কয়েক মাস থেকে চায়ের ওপর আসক্তি বেড়েছে।বাড়িতে অবসর থাকি,টুকটাক বই পড়ি,বইয়ের সাথে চায়ের দারুণ কম্বিনেশন ”

কথাগুলি বলে ডাঃক্লার্ক গম্ভীর হয়ে গেলেন।প্রয়োজনের বেশি তিনি কথা বলেন না।এখন কেন এতো অপ্রয়োজনীয় কথা বলছেন?মনসুর নামের লোকটির বেশি কথা বলার বিষয়টা কি তাকে প্রভাবিত করছে? মানুষের স্বভাব হলো অন্যর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।সেটা হোক ভালো,কিংবা খারাপ।

” এক্ষুনি করছি স্যার।শুধু দুইটা মিনিট সময় দেন।গাঢ় লিকারের চায়ের ব্যাবস্থা করছি স্যার।তবে স্যার বাংলাদেশে চা বিপুল পরিমাণ উৎপন্ন হলেও আমরা আসল চা টা পাই না।আসল চা রপ্তানি হয় বিদেশে। আমরা আট নম্বর কোয়ালিটির চা টা পাই।এই চায়ের স্বাদ আমেরিকার চায়ের মতো হবে না ”

” আপনি অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা বলেন।এখন যান এখান থেকে আর মিস অহনাকে যে নার্স দেখাশোনা করতো তাকে আমার এখানে পাঠিয়ে দিন,”

” জি স্যার ”

মনসুর চলে গেলো।তার অপ্রয়োজনীয় কথায় ডাঃক্লার্কের এখন হালকা মাথা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। এই লোককে তিনি এখন তেমন পছন্দ করছেন না।চশমাটা খুলে টেবিলে রাখতেই নার্স দরজায় কড়া নাড়লো।ডাঃক্লার্ক আসতে বললেন।তিনি ভেতরে এসে ভয় ভয় নিয়ে দারিয়ে আছে।

” চেয়ারে বসুন ”

” ধন্যবাদ স্যার ”

তখনি হসপিটালের একজন টি-বয় এসে চা দিয়ে গেলো।দু’কাপ চা।ডাঃক্লার্ক একটি কাপ হাতে নিয়ে বললেন

” আপনি হয়তো কোনো কারনে কোনো বিষয় লুকাচ্ছেন।কেনো লুকাচ্ছেন সেটা আমি জানিনা।তবে জেনে যাবো।ভালো হয় যদি আপনি সত্যিটা আমায় বলে সাহায্য করেন ”

” স্যার আমি তো সব সত্যিই বলেছি ”

” সত্যি বলেছেন,তবে অনেকটাই লুকিয়েছেন। কি লুকাননি? ”

নার্সকে দেখে মনে হলো সে ঘাবড়ে গেছে।ডাঃক্লার্ক তার সামনের জলের গ্লাসটা ওনারদিকে এগিয়ে দিলেন।নার্স এক নিশ্বাসে সব জল খেয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললেন

” স্যার আমি কিছু লুকাইনি ”

” আচ্ছা মানলাম আপনি কিছি লুকাননি।মিস অহনার হাতে যখন রক্ত দেখলেন তখন ছুটে এলেন, অথচ মিস অহনার কপাল বেয়ে যখন রক্ত পড়ছিলো তখন কেনো এলেন না? ”

” স্যার আমি সবটা খুলে বলি ”

” হ্যা বলুন ”

” আমি যখন সন্ধায় ডিউটিতে আসি তখন আমার হালকা খিদে পেয়েছিলো।তো আমি বাইরে গেলাম হালকা নাস্তা করার জন্য। আর এসেই দেখি…. ”

” থাকলেন কেন? বলুন? ”

” এসেই দেখি রোগীর কপাল দিয়ে রক্ত পড়ছে।আমি দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই,এমনকি ভয়ে আমি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠি।আমার চিৎকারে কয়েকজন স্টাফ ছুটে এলো।আমি চোখ বন্ধ করে দরজার বাহিরে হাটু মুড়ে বসে ছিলাম।ওনারা এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে আমি হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলাম রোগীর দিকে।তখনও আমি চোখ বন্ধ করে আছি ভয়ে।তারা ভেতরে দেখে আমায় বললো ভেতরে তো সব ঠিক আছে।আমি কি দেখে ভয় পেয়েছি জানতে চাইলে আমি বললাম রোগীর কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। তারা সবাই বললেন আমি নাকি ভুল দেখেছি। আমি অবাক হয়ে গিয়ে দেখি সত্যিই রোগীর কপালে রক্ত নেই।”

” তারপর? ”

” তারপর সবাই চলে গেলো।আমি বিষয়টা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। এতো বড় ভুল আমি দেখলাম কি করে ভেবে নিজের কাছে নিজেই লজ্জা হতে লাগলো।এরপর ওয়াসরুমে গেলাম ফ্রেস হতে।কাল রাতে আমার ঘুম তেমন ভালো হয়নি। ভুম ও পাচ্ছিলো।তাই ফ্রেশ হতে গেলাম।ওয়াসরুমে থেকে বেড় হয়েই দেখলাম রোগীর হাত থেকে রক্ত পড়ছে।তারপর তো আপনি জানেনই ”

” হুম।আচ্ছা কপালে যখন রক্ত পড়ছিলো তখন কি কপালে কোনো আঘাতের চিন্হ ছিলো?ধরুন কেটে যাওয়া বা এমন কিছু? ”

” না স্যার,তবে কপালের আশেপাশে কিছু যায়গার চামড়া ছিলে যাওয়া ছিলো।আমার তেমন মনে পড়ছে না ”

” আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি এখন যেতে পারেন।”

নার্সটি চলে গেলো।সঙ্গে সঙ্গে চলে আসলেন ডাঃমনসুর।তিনি এসেই বলা শুরু করলেন ” স্যার চা’টা কেমন হয়েছে? স্পেশাল ভাবে তৈরি করা চা স্যার “।ক্লার্ক গম্ভীর স্বরে বললেন,চা ভালো হয়েছে। অথচ এখনো তিনি চা মুখে দেননি।এবার কাপে চুমুক দিলেন।চা যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে।ডাঃ মনসুর বললেন

” স্যার,কিছু ভেবে পেলেন? ”

” এখনো তেমন কিছু বুঝতে পারছি না।এমন জটিল রহস্য এর আগে আমি কখনো পাইনি। এখানে আসুন।ভিডিও ফুটেজটা দেখুন। ”

ডাঃমনসুর উৎসুক হয়ে কাছে গেলেন।ভিডিও ফুটেজটা দেখে রীতিমতো তার মুখ হা হয়ে গেছে।তিনি ধপ করে চেয়ারে বসলেন।ডাঃক্লার্ক বললেন

” ডাঃ মনসুর, আপনি ঠিক আছেন তো? ”

” জ..জ..জি স্যার ”

” ভিডিও দেখে কি বুঝলেন? ”

” স্যার এটা কিভাবে সম্ভব স্যার? আ…বআমি তে আমার কেরিয়ারে এমন দৃশ্যর মুখোমুখি হইনি ”

” হুম, কিছু একটা রহস্য আছে।মিস অহনার হঠাৎ কপাল ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে,আবার কিছুক্ষণ পর সেটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।তারপর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে ”

মনসুর কিছু বললো না।ক্লার্ক চায়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললেন,

” ব্লাড টেস্ট করতে বলেছিলাম, করেছেন? ”

” জি স্যার,রিপোর্ট আসলো বলে ”

বলতে বলতে একজন এসে রিপোর্টটা টেবিলে রাখলো।ক্লার্ক চশমাটা চোখে দিয়ে রিপোর্টে চোখ বুলালেন।রিপোর্ট দেখে তাকে বেশ চিন্তিত মনে হলো।তিনি রিপোর্টটা মনসুরের হাতে দিলেন।মনসুর রিপোর্টটা দেখতেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে ক্লার্ককে জিগ্যেস করলেন।

“স্যার,কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো অলৌকিক ব্যাপার।রীতিমতো ভূতূড়ে কান্ড।মিস অহনার রক্তের কোনো গ্রুপ ই নেই? এটা কিভাবে সম্ভব স্যার ”

” আপনি কি ঠিক মতো পরিক্ষা করেছেন? ”

” জি স্যার,আমি নিজ হাতে পরিক্ষা করিয়েছি ”

” একটা রোগীর রক্ত পরিক্ষা করা হলো,আর সেই রক্ত কোনো গ্রুপের আওতায় পড়লো না।কিভাবে? ”

” স্যার, আমি এই কেইচ থেকে সরে যেতে চাই,আমি এই কেইচে থাকতে চাই না স্যার ”

” ডাঃ মনসুর আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনি একজন ডাক্তার। আর ডাক্তার হয়ে আপনি প্যারানরমাল বিষয়ে ভয় পেয়ে সরে যাবেন এটা আমি মেনে নিবো না।”

” এখন তাহলে কি করবেন স্যার? ”

” মিস অহনাকে এক্স-রে করাতে হবে।ওনার বিষয়ে সকল খুটিনাটি বিষয় আমি জানতে চাই”

কথামতো কিছুক্ষণ পর অহনাকে এক্স-রে করাতে নিয়ে যাওয়া হলো।এক্স-রে রশ্মি অহনার শরীরে পড়তেই ডাঃক্লার্ক একটা বিষয় লক্ষ্য করলো,অহনার শরীরে রশ্মি প্রবেশ করছে না,এমন দেখাচ্ছে যে রশ্মির নিচে কোনো মানুষই নেই.!

চলবে?#Love_with_vampire [১৮]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

কথামতো কিছুক্ষণ পর অহনাকে এক্স-রে করাতে নিয়ে যাওয়া হলো।এক্স-রে রশ্মি অহনার শরীরে পড়তেই ডাঃক্লার্ক একটা বিষয় লক্ষ্য করলো,অহনার শরীরে রশ্মি প্রবেশ করছে না,এমন দেখাচ্ছে যে রশ্মির নিচে কোনো মানুষই নেই.!

ডাঃক্লার্ক মনিটরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহনার শরীরের ওপর রশ্মি প্রবেশ করছে, কিন্তু তার প্রতিবিম্ব কম্পিউটারে ভেসে উঠছে না।বিষয়টা খুবই অস্বাভাবিক। ক্লার্ক তার এই জীবনে না দেখা অনেক কিছিরই সম্মুখীন হচ্ছেন।চিন্তা,ভয় দুটোই কাজ করছে।এমন কেন হচ্ছে সে হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিনি।ডাঃক্লার্ক মিস অহনার কাছে গেলেন।অহনাকে একটু পর্যবেক্ষন করলেন তিনি,অহনার শ্বাস প্রশ্বাস ঠিকি চলছে।কিন্তু তার শারীরবৃত্তীয় কোনো অংশই কাজ করছে না।শুধু শ্বাস চলছে এইটুকুই। এমন অবস্থায় রোগীর রোগ হিসেবে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে সেটা ভেবেই খুন হয়ে যাচ্ছে ক্লার্ক।

__________

দেয়ালের তিনটি ইট ইতোমধ্যে অহনা ভেঙ্গে ফেলেছে।তার হাত বেয়ে টপটপ করে করে পড়ছে,কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।বেশ কিছুটা যায়গা তৈরী হয়েছে,এইদিক দিয়ে ভেতরে কি আছে তা অনায়াসে দেখা যেতে পারে।সূর্যের রশ্মি একশো আশি ডিগ্রি বরাবর অবস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত ভেতরে আলো যেতে পারছে না।একশো আশি ডিগ্রি কোন বরাবর সূর্যের আলো দেয়ালে পড়তে আরো বেশ কিছি মুহূর্ত অহনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

দেয়ালের অন্যপ্রান্তে অনুভব হিংস্র হায়েনার রুপ ধারন করেছে।তার ধারালো চকচকে দাঁত তীব্র অন্ধকারেও কিছুটা স্পষ্ট বেঝা যাচ্ছে। সাদা জিনিষের ওপর প্রতিফলন ঘটে বেশি।যেমন যত অন্ধকারই হোক না কেন,তীব্র অমাবস্যাতেও শীতপ্রধান দেশে জমে থাকা তুষার স্পষ্ট দেখা যায়।ছায়াটা ক্রমশ দেয়ালের ভাঙা অংশটার কাছে যাচ্ছে। হেলে দুলে হাটছে।অনুভব এখন সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।ভ্যাম্পেয়ার রুপে তার কাছে সূর্যের আলো যেমন স্পষ্ট, তেমনি গাঢ় অন্ধকার ও স্পষ্ট। অনুভব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে একটা ছায়া নারীমূর্তি অহনার আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া দেয়ালের প্রতি দুই হাত উঁচিয়ে দিয়ে এগোচ্ছে। অনুভব একটা তীব্র গর্জন করলো।গর্জনে পুরো ঘর জুড়ে একটা ভয়ঙ্কর রেশ চলে এসেছে।অনুভব এক লাফ দিয়ে সেই ছায়ার ওপর পড়লো,।দু’হাতে সেই ছায়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।এটা ছায়া ! কোনো দেহ নয়,।এই ছায়াকে অনুভব স্পর্শ করতে পারছে না।স্পর্শ করতেই বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। অনুভব গোঙ্গানির মতো গর্জন করতেই থাকলো।বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া সেই ছায়া আবারো মিলিত হলো।

ছায়াটার গলা অস্বাভাবিক লম্বা।চুলগুলি মাটিতে ছুঁই ছুঁই করেও ছুঁতে পারছে না।অনুভব বুঝতে পারলো এভাবে সে কিছুই করতে পারবে না।তবুও সে সেই ছায়ার ওপর বার বার ঝাপিয়ে পড়ছে। এক পর্যায়ে অনুভব সেই ভাঙ্গা অংশের সামনে দারালো।যেনো ছায়াটা আর এগোতে না পারে।

ছায়াটা অনুভবের সামনে দারিয়ে। অনুভব তার তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত বেড় করে গর্জন করছে,সেই ছায়া অনুভবের একদম কাছে দারালো।হাত বাড়ালো অনুভবের প্রতি,ছায়াটার কোনো আকৃতি না থাকলেও অদৃশ্য ভাবে অনুভবের চোখের দিকে ছায়াটার চোখে পড়লো,কি স্নিগ্ধ, মায়াবী সেই চোখ।অনুভব একপলকে চেয়ে আছে।অনুভবের দৃষ্টি কোমল হচ্ছে,সে ফিরে যাচ্ছে মানুষ রুপে।এক পর্যায়ে অনুভব আর হিংস্র পশুর রুপে থাকতে পারলো না।সে এখন মানুষ রুপে ফিরে এসেছে।এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছায়াটার অদৃশ্য মায়াবী সেই চোখে।

সূর্যের আলো এবার ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে। অহনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।অহনা ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে দেখতে পারে ঘরের ভেতর কি আছে,কিন্তু সে পারছে না।কোনো এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে রাখছে।অহনা ভয় ভয় নিয়ে দেয়ালে চোখ রাখলো।ভেতরে তাকাতেই
____________

ডাঃক্লার্ক নিজের কেবিনে আসলেন।অহনার ফাইল থেকে সাদা কাগজটা বেড় করলেন।যেখানে আগে থেকে অহনার নাম,বয়স এবং রোগের বিষয় উল্লেখ ছিলো।রোগ তখন তেমন উল্লেখ করা ছিলো না।রোগের জায়গায় লেখা ছিলো ইনফিনিটি, অসীম।ডাঃক্লার্ক মনসুরকে টেলিফোন করলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর ডাঃমনসুর আসলেন।

” স্যার আমায় ডেকেছেন,? ”

” মিস অহনার আগের ফাইল দেখলাম,সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে মিস অহনা কোমায় আছেন ”

ডাঃ মনসুর লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলেন।এরুপ একটা রিপোর্ট তৈরী করা ছাড়া তার কোনো উপায় ও ছিলো না।সে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো

” স্যার প্রথমত আমাদের তো তাই মনে হচ্ছিল, যে মিস অহনা কোমায় আছেন ”

” এখনও কি তাই মনে হয়? ”

” না স্যার।আমার তো মনে হয় মিস অহনা ভূ…..”

” আপনি থামুন।আপনি কি বলতে চান সেটা বুঝতে পেরেছি। আপনি ডাক্তার হলেন কিভাবে সে বিষয়েই সন্দেহ আছে আমার।”

” সরি স্যার ”

” কিসের জন্য সরি ”

” জানিনা স্যার ”

ডাঃক্লার্ক মনে মনে মনসুরকে গাধা বললেন।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে বললেন

” আমি মিস অহনার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।ব্যাবস্থা করতে পারবেন? ”

” অবশ্যই পারবো স্যার ”

ডাঃমনসুর চলে গেলেন।ডাঃক্লার্ক চশমাটা খুলে টেবিলের ওপর রাখলেন।চোখ বন্ধ করে তিনি সিটি টিভি ফুটেজের ভিডিওটা মনে মনে কল্পনা করতে লাগলেন।

ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অহনা চোখ বন্ধ করল শুয়ে আছে।তার কোমড় অব্দি চাঁদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।হঠাৎ কোনো কারনে অহনার কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো।হঠাৎ কপাল ফেটে যাওয়ার রহস্যটা কি ? কি হতে পারে? শএধু তাই নয়,রক্ত গড়িয়ে পড়লো ফ্লোরে।ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে যে ঘটনাটা ঘটলো সেটা ছিলো আরো আতঙ্কজনক।কপাল বেয়ে গড়িয়ে রক্ত যখন ফ্লোরে পড়লো তখন অদৃশ্য মনে হচ্ছে কেউ রক্তগুলি খাচ্ছে,।একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে কোনো একটি অদৃশ্য জিহ্বা রক্ত চেটে চেটে খাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফ্লোরে এবং অহনার কপাল বেয়ে গলা বেয়ে গড়িয়ে পরা রক্তগুলিও খেয়ে ফেললো,এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অহনার কপাল থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলো।একপর হাত থেকে রক্তপাত শুরু হলো।সব বিষয়টা কেমন অস্বাভাবিক। এর ব্যাখ্যা কি আদোও বের করতে সম্ভব?।

ডাঃক্লার্কের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।ডাঃমনসুর অহনার বাবা,মাকে নিয়ে এসেছে।ক্লার্ক চশমাটা চোখে দিলেন।একজন মাঝারি বয়সী লোক বসে আছেন,বয়স আনুমানিক ৩৫-৪০ বছর,এরমধ্যেই হবে। তার সঙ্গেই বসে আছেন অল্পবয়সী একজন মহিলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার বয়স ২৫ এর বেশি হবে না।ডাঃক্লার্ক স্বাভাবিক ভাবেই বললেন

” কেমন আছেন? ”

” জি ভালো আছি ” মাঝ বয়সী লোকটা বললেন।

” এখানে আসতে কষ্ট হয়নি তো? ”

” না, হয়নি ”

” আসলে আমি মিস অহনার বিষয়ে কিছু জানতে চাচ্ছিলাম ”

” হ্যা বলুন কি জানতে চান ”

” আপনারা কখন জানতে পারলেন যে মিস অহনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে? ”

” আমি ঠিক জানিনা।আমি বাহিরে ছিলাম।বিয়ের পরেরদিন আমি আমার বন্ধুকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। তখনি অহনার মা ফোন করে বিষয়টা জানায় ”

” আপনি তাহলে তেমন কিছুই জানেন না? ”

” আমি জানা মাত্র অহনাকে হসপিটালে নিয়ে আসি।এই পর্যন্ত ”

ডাঃক্লার্ক অহনার মা’কে উদ্দেশ্য করে বললেন

” আপনি বিয়ের দিন রাতে,মানে বাসর রাতে ঢোকার আগে পর্যন্ত তো ছিলেন তাই না? ”

” হ্যা ছিলাম ”

” অহনার মধ্যে কি কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে পড়েছিলো আপনার? ”

” না ডাক্তার সাহেব, অহনা ভালোই ছিলো।বাসর ঘরে ঢোকার আগেও ওর বোনদের সাথে কত হাসি মজা করছিলো।পরেরদিন সকাল ১০ টা বাজে তবুও অহনা নিচে নামছিলো না।আমার তখনি একটু সন্দেহ হয়েছিলো,অহনা ভোর ৫ টায় উঠতো রোজ।কিন্তু আমি তেমন গুরুত্ব দিই নি,তারপর যখন নাস্তা নিয়ে ওর ঘরে যাই তখন কয়েকবার ডাকাডাকি করলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাইনি।তখন দরজা ভাঙ্গা হলো,আর তারপর দেখলাম অহনা মা বিছানায় শুয়ে আছে,কোনো কথা বলছে না ”

বলেই তিনি কান্না শুরু করলেন।ডাঃক্লার্ক হাতের ইশারায় ডাঃমনসুর কে বললেন ঢ়েন তাদের নিয়ে যায়।ডাঃমনসুর তাদের বাইরে নিয়ে গেলেন।ক্লার্ক চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রইলেন।মনসুর এসে চুপিচুপি ডাঃক্লার্কের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো

” স্যার, আমি একটা কথা বলি,মিস অহনাকে ইনজেকশনে মেডিসিন দিয়ে ফেরে ফেলি,নইলে স্যার আমরা কেউ বাঁচবো না।এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে না স্যার। এক্স-রে মনিটরে তার শরীরের কোনো ছাপ তুলতে পারলো না,আরো কত ভৌতিক ব্যাপার ঘটছে।আরেকটা কথা স্যার,আপনি কোনোদিন কোনো বিষয়ে হার মানেননি,যদি এই বিষয়ে হার মানেন তাহলে আপনার সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে,ঠিক বললাম তো স্যার?স্যার আপনি বললে আজ রাতেই ব্যাবস্থা করি?

” হ্যা! ঠিক বলেছো একদম,আমিও তাই ভাবছি, সিরিজে বিষ নাও,যা করার এখনি করতে হবে! ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here