Love with vampire পর্ব ১৫+১৬

#Love_with_vampire [১৫]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

অহনা বিছানা থেকে উঠে দারালো।তার সারা শরীরে এখন আগুন জ্বলছে।বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই একটা গোঙ্গানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।অহনা চমকে উঠলো।এটাতো অনুভবের আওয়াজ,কি হয়েছে ওর?

ঘর থেকে ছুটে বেড় হয়ে সেই ঘরটার কাছে গেলো অহনা।ঘরের দরজা বন্ধ।তালাটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দরজার নিচেই পড়ে আছে।এতো বড় তালা এভাবে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে পড়ে আছে? কে ভাঙ্গলো এই তালা? ঘরে কি কেউ প্রবেশ করেছে? অনুভব নয় তো?।

অহনার মনে নানা প্রশ্ন সাড়া দিতে লাগলো।ঘরের ভেতরে কেউ থাকলে তো শব্দ হওয়ার কথা।ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাওয়া যায় নি।শব্দ শুনার জন্য অহনা দরজার সাথে একদম কান পেতে ছিলো কিছুক্ষণ। কিন্তু ভেতরে কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় নি
।এমনকি গোঙ্গানির আওয়াজ ও পাওয়া যাচ্ছে না।অহনার বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠলো।

ঘরে অনুভব যায়নি তো? অনুভব ছাড়া তো এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই যে ঘরে যেতে পারে।আর আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে তো অনুভব এখানে ছিলো।তার মানে কি গোঙ্গানির আওয়াজটা সত্যি সত্যিই অনুভবের? তাহলে কোথায় অনুভব?উনি কি ঘরের ভেতর? আমি কি ঘরে গিয়ে দেখবো?

অহনার ইচ্ছে করছে ঘরের ভেতরের রহস্য জানতে।কিন্তু একটা আতঙ্ক কাজ করছে নিজের মনের মধ্যে। কিছুতেই তার মন সায় দিচ্ছে না এই কাজে।অহনা কাঁপা কাঁপা স্বরে ডাকলো

” অ..অনুভব।অনুভব শুনছেন আমার কথা? আপনি কি ঘরের ভেতর? প্লিজ কিছু বলেন,আমার চিন্তা হচ্ছে,আপনি কি ঘরের ভেতর? ”

ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না।অহনা এবার ফিসফিস করে বললো

” রুপা, রুপা ”

” হ্যা ”

” কি করবো আমি? ”

” কি করতে চাচ্ছো?”

” সেটা তুমি নিজেও জানো।অযথা কথা বাড়াবে না ”

” আমার বলার মতো কিছু নেই ”

” এটা কেমন কথা।কিছু একটা তো বলো? ”

” আমার মনে হচ্ছে ভেতরে গেলে তোমার বিপদ হবে। মহা বিপদ।”

” আমি সেই বিপদকে ভশ পাই না।তোমার কি মনে হচ্ছে? ভেতরে কি অনুভব আছে? ”

” হ্যা ”

” কিহ্? কিভাবে বললে এটা? ”

” আমি অনুভবের অবস্থান খুঁজে পাচ্ছি না।অতএব ধরা যায় অনুভব এমন এক যায়গায় আছে যেখানে আমার দৃষ্টি পৌছাতে পারছে না।আমার জানা মতে এই সেই ঘর,যেখানে আমার দৃষ্টি পৌছাবে না কখনো ”

” তার মানে অনুভব এই ঘরেই আছে? ”

” আমার তে তাই মনপ হচ্ছে। আবার নাও থাকতে পারে।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না।আমার শক্তি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।”

” আমারো মনে হচ্ছে অনুভব এই ঘরের ভেতরেই আছে।কিন্তু ডাকার পরেও কথা বলছে না কেন? ”

” হয়তো সে বিপদে পড়েছে। মহাবিপদ ”

” কি সেই বিপদ? আমি থাকতে আমার অনুভবের কিচ্ছু আমি হতে দিবো না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ”

” কি সিদ্ধান্ত? ঘরের ভেতর যাওয়ার? সেটা কি ঠিক হবে? ”

” আমি এখন এই ঘরে ঢুকবো মানে ঢুকবো।এতো ভুল,ঠিক দেখদর সময় এটা না।তুমি শুনতে পাও নি অনুভব কেমন গোঙ্গাচ্ছিলো? ”

” কিন্তু একবার….”

” আর কেনো কথা নয়,আমি যাবো।”

রুপার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাজ্য করে অহনা দরজার কাঠে হাত রাখলো।দরজায় হাত রাখতেই সারা শরীরে কেমন যেন একটা গরম বাতাস বয়ে গেলো।বাতাসে অহনার চুলগুলি উড়ছে।চোখে কৌতুহল, বুকে ভয়,আতঙ্ক নিয়ে অহনা দরজা সামান্য খুলতেই আবারো ধপ করে বন্ধ করে দিলো।দরজা থেকে সরে এলো।পাথর গুলির কাছে উবু হয়ে হরহর করে বমি করতে লাগলো।কেননা দরজা খোলার সাথে সাথেই ভোঁটকা পঁচা মাংসের দম আটকে আসার মতো তীব্র ঝাঝালো একটা গন্ধ অহনার নাকে লাগে।এই গন্ধ যেমন তেমন গন্ধ না।এটা সবাই সহ্য করতে পারবে না।

বেশ কিছুক্ষণ বমি করে অহনা ফ্লোরে বসে পড়লো।নিজেকে খুন ক্লান্ত লাগছে।মাথার ব্যাথাও প্রচন্ড বেড়ে গেছে।কেমন যেনো টকটক করছে মাথার ভেতর।মনে হচ্ছে হাজারটা ঘোড়া দৌড়াদৌড়ি করছে। অহনা নিজেকে ভালোমতো সামলে নিলো।ভর করে উঠে দারালো।

এই ঘরে নিশ্চই অদ্ভুত কিছি একটা আছে।এখানে এভাবে ঢোকা সম্ভব হবে না।অন্য কোনো একটা উপায় খুজে বের করতেই হবে,করতেই হবে।

সূর্য এখন পশ্চিম ভাগে।অর্থাৎ সূর্য রশ্মির গতি এখন পূর্ব দিকে।অহনা একটা বুদ্ধি বের করলো।যেহেতু এই ঘর সাধারণ ঘর নয়,সেহেতু সাধারণ মানুষের মতো যদি দরজা দিয়ে ঢোকা যায় তবে নিশ্চই বিপদ হতে পারে।দরজায় আক্রমনের নানাবিদ কর্মকান্ড হয়তো উপস্থিত করা আছে।তাকে অন্য কোনো উপায় অবশ্যই খুজে বেড় করতে হবে।

অনেক ভাবার পর অহনা সিদ্ধান্ত নিলো ভেতরে কি আছে সেটা প্রথমে দেখবে।কিন্তু সেটাই বা দেখবে কিভাবে? সেটা দেখতে হলে তো ঘর দৃষ্টিগচরে পৌছাতে হবে।কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা?

অহনা ঘরের পশ্চিম দিকে গেলো।সেখানে যেতেই চোখে পড়লো ওই খানটার ইট গুলি ভঙ্গুর হয়ে গেছে।হয়তো ইটগুলি সরিয়ে ফেলা যাবে।দু,একটা ইট সরিয়ে ফেলতে পারলেই সেই যায়গাটা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করবে,আর ভেতরে কি আছে সেটাও দেখা যাবে।

যেমন ভাবনা তেমনি কাজ।সেখানকার ইটের দেয়ালের শ্যাওলা গুলি অহনা হাত দিয়ে সরিয়ে ফেললো।ইটে হাত দিয়ে কয়েকবার আঘাত করলো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।ফলশ্রুতিতে অহনার হাত ব্যাথায় লাল হয়ে উঠলো।কি করা যায় সেটা মনে মনে ভাবতে লাগলো।

কিছুক্ষণ ভাবার পর অহনার মনে পড়লো দরজার বাহিরে তো পাথর গুলি রাখা আছে।সেখান থেকে এলটা পাথর এনে তো ইটের ভঙ্গর দেয়ালটা ভেঙ্গে ফেলাই যায়?। ভবনা মাপিক অহনা দরজার কাছ থেকে একটা পাথর আনলো।পাথর হাতে দারিয়ে আছে দেয়ালের ওপাশে।সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।

________

দুম দুম শব্দে অনুভবের বন্ধ চোখ পিটপিট করে নড়লো।অনুভব ততক্ষণেও অজ্ঞান হয়নি।এতো সহজে তো সে অজ্ঞান হবে না,সে তো আর আট দশজন মানুষের মতো সাধারণ নয়।অনুভব জীর্ণ চোখ মেলতেই শব্দটা আরো স্পষ্ট হতে লাগলো।মনে হচ্ছে সে যে দেয়ালের পাশে পড়ে আছে সেই দেয়ালেই কেউ আঘাত করছে।প্রতিটি আঘাতে দুম দুম করে শব্দ হচ্ছে,সেই শব্দ খেলা করছে সারা ঘর জুড়ে।অনুভব বুঝতে পারছে না কে দেয়ালে আঘাত করছে।অহনা হবে কি? কিন্তু অহনা কিভাবে হবে? অহনা তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।এতো তারাতারি তো ওর জ্ঞান ফিরবে বলে মনে হয় না।তবে যদি সত্যিই এটা অহনা হয় তাহলে কিছুতেই ওকে এই ঘরে আসতে দিলে চলবে না।এই ঘরে প্রবেশ করলে অহনা নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।আমি অহনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।কিছুতেই না।

কথাগুলো মনে মনে আওড়ানোর পর অনুভব দেয়াল ধরে উঠে দারানোর চেষ্টা করলো।সারাশরীরে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার।বাতাসের বেগে ছিটকে দেয়ালে পড়ায় সারাশরীরে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু যতই যা হয়ে যাক,অহনাকে এই ঘরে আসতে দেওয়া যাবে না।

অনুভব ঘরের ভেতর থেকে চেচিয়ে উঠলো ” অহনা,তুমি ভুলেও এই ঘরে আসবে না।এখানে বিপদ অহনা।আমি যেভাবেই হোক বের হবো,তুমি আসবে না।অহনা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি? ”

বেশ কিছুক্ষন বলার পরেও কোনো লাভ হলো না।অহনা কোনো কথাই শুনতে পায়নি।সে আঘাত করতে করতে এতোক্ষনে দেয়ালের একটা ইট ভেঙে ফেলেছে।অনুভব লক্ষ্য করলো ঘরের ঠিক মাঝখানে হাটু মুড়ে বসে থালা সেই ছায়াটার শরীর আরো স্পষ্টতর হচ্ছে।এর মানে কি? এই অশরীরীর কি শক্তি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে?

ছায়াটা আরো তীব্র হচ্ছে। অনুভবের একটু একটু ভয় হতে লাগলো।সেটা নিজের জন্য না,অহনার জন্য।ছায়াটা উঠে দারালো,সে এখন হেটে চলেছে ভাঙা দেয়ালের ইটটার কাছে।ইটের দেয়ালটার ওপাশেই অহনা পাগলের মতো দেয়ালে আঘাত করেই যাচ্ছে। অনুভব শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ছায়াটা উঠে দারালো।সে এখন হাটছে।হেলেদুলে হাটছে।মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা শিশু প্রথম যখন হাটা শিখে তখন যেমন হেলেদুলে হাটে তেমনি ভাবে ছায়াটা হেলেদুলে হাটছে। একবার এদিকে হালছে,আরেকবার আরেকদিকে দুলছে।স্পষ্ট লক্ষ্য করলো ছায়াটার মুখ দিয়ে অস্বাভাবিক জিহ্বা বেড় হয়ে আসছে।দুইহাত সামনে তুলে দিয়ে হেলেদুলে হাটছে।

অনুভব আর চুপ করে দেখতে পারলো না।তার চোখ গাঢ় হলুদ হতে লাগলো।বিকট এক গর্জন করে উঠলো।সে নিজেও এখন ভ্যাম্পেয়ারের রুপ ধারন করেছে।
#Love_with_vampire [১৬]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

শত আঘাতের ফলশ্রুতিতে ভঙ্গুর দেয়ালের একটা ইট সরাতে পেরেছে অহনা।সেখান দিয়ে ভেতরে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষন আগে একবার সেখানে দূর থেকে মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা করলো অহনা।কিন্তু লাভ হলো না।তার দৃষ্টিতে যতদূর নজরে পড়ে সব অন্ধকার, শুধুই অন্ধকার। অহনা পাগলের মতো দেয়ালে পাথরটা দিয়ে আঘাত করছে।সে আঘাতে কখনো ইটের কোনগুলি ভেঙে,আবার কখনো হাত চাপে পড়ে অহনার হাতে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে।রক্ত হাত বেয়ে মাটিতে টপটপ করে পড়ছে।হাতের এহেন অবস্থায় অহনা থেমে নেই,সে পাগলের মতো পাথর দিয়ে দেয়ালে আঘাত করেই চলেছে।সে এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।একটা ঘোর কাজ করছে নিজের মধ্যে। তার শুধু বারবার মনে হচ্ছে, যেভাবেই হোক,ভেতরে তাকে যেতেই হবে,কেউ তাকে ডাকছে,প্রবল আকর্ষন করছে,সে আকর্ষন সাধারণ কোনো আকর্ষন নয়।

______

বৃদ্ধ লোকটির ভয়ঙ্কর হাসিতে সারা গুহা কাঁপছে।সে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে সেখানকার প্রতিটি বালিকণা।উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে বৃদ্ধ সেই সাধক বলে উঠলো

” মুক্তি, মুক্তি, এবার সবার মুক্তি হবে।এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো আমি।হা হা হা,সময় এসে গেছে।ভেঙ্গে ফেল এই দেয়াল,মুক্ত কর সেই শক্তিকে, আজ এতো যুগ পর আমার মুক্তি হবে।মুক্তি, হা হা হা ”

______

কোমা অবস্থায় অহনা পড়ে আছে হসপিটালের বেডে।ডাক্তাররা তার অবস্থা সনাক্ত করতে পারেননি।ডাক্তাররাও অহনার এই অস্বাভাবিক অবস্থায় প্রচুর ঘাবড়ে গেছে।তবে তারাও হাল ছারছে না,মেডিকেল সাইন্সে এমন ঘটনা তাদের কখনো মুখোমুখি করতে হয়নি।এমন যে হতে পারে সে বিষয়েও তাদের কোনো ধারণা কখনোই ছিলো না।কোমায় থাকলে একজন রোগী যেমন অবস্থায় থাকে, অহনা তেমন অবস্থায় নেই।

এই বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের ডাক্তারদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে কয়েকবার।অহনাকে এখন ইউ.কে থেকে একজন স্পেশাল ডাক্তারের আওতায় রাখা হয়েছে।তিনিই অহনার চিকিৎসা করবে। তার নাম ডাঃ ক্লার্ক।অহনার এই অদ্ভুত বিষয়টা যখন ডাক্তারদের মধ্যে বেশ ছড়িয়ে গেছে তখন ডাঃ ক্লার্ক নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অহনার চিকিৎসা তিনি করবেন।যদিও তিনি অবসরপ্রাপ্ত।

ডাঃ ক্লার্ক কেবিনে বসে অহনার ফাইল দেখছেন।তার বিষয়ে কিছু জানার চেষ্টা করছেন।বেশ কিছুক্ষণ ফাইল দেখে একটা সাদা কাগজে লিখলেন

Name : Ahana, Age : 18, Class : Intermediate, Problem : Infinite

এইটুকু লিখে ডাঃ ক্লার্ক ফোন করলেন।ডাঃমনসুর কে ফোন করে নিজের কেবিনে ডাকলেন।কিছুক্ষন পর ডাঃ মনসুর কেবিনে আসলেন।

তারা ইংরেজিতে কথা বলছে।কথোপকথনের বাংলায় অনুবাদ –

ডাঃ মনসুর- ” শুভ সন্ধ্যা স্যার।কেমন আছেন? ”

” ভালো।আমি মিস অহনাকে দেখতে চাচ্ছি।ওনার কাছে নিয়ে যান আমায় ”

” স্যার আপনি আজকেই এসেছেন। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর…”

ডাঃ মনসুরের কথা আটকে দিয়ে ডাঃ ক্লার্ক বললেন

” ডাঃমনসুর।প্রয়োজনের অধিক কথা বলবেন না।অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু আমার পছন্দ না।”

” দুঃখিত স্যার ”

” মিস অহনাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে ২ দিন আগে। এই দুদিনে আপনারা কি কি ট্রিটমেন্ট করেছেন সেগুলির ফাইল আমার ডেস্কে রাখবেন।আর এখন আমায় মিস অহনার কাছে নিয়ে চলুন ”

” অবশ্যই স্যার।চলুন”

ডাঃক্লার্ক চেয়ার ছেড়ে উঠতেই একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলেন।তাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।ভয়ে চেহারা একদম স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে।নার্স ছুটে এসে আঞ্চলিক ভাষায় ডাঃক্লার্কের উদ্দেশ্য কিছু বললো।ডাঃক্লার্ক, ডাঃমনসুরের দিকে তাকালেন।তার তাকানোর অর্থ হলো নার্সের কথা ইংরেজিতে ট্রানসিলেট।ডাঃ মনসুর ট্রানসিলেট করলেন

” স্যার মিস অহনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে।হঠাৎ করেই হাত ফেটে গলগল করে রক্তপাত হচ্ছে ”

” লেটস চেক ”

” কিম্তু স্যার মিস অহনা তো কোমায়,তাহলে হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে কিভাবে? স্যার আমার ভয় করছে ”

” ইউ সাট আপ।ভুলে যাবেন না আপনি একজন ডাক্তার ”

” আপনি কিছিই জানেন না স্যার।নতুন এসেছেন,আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবেন।এই মেয়ে সাধারণ মেয়ে না।অলৌকিক কিছু আছে এর মধ্যে ” ডাঃমনসুর ফিসফিস করে বললেন।

” ডাঃমনসুর,ফিসফিস করা আমার পছন্দ না।যা বলার স্বাভাবিক হয়ে বলবেন।আর এটা অস্বাভাবিকের কিছু হয়নি।রোগীর হাতে হয়তো নার্সের অসাবধানতার কারনে লেগে গেছে,তাই রক্ত বেড় হচ্ছে ”

” জি স্যার হতে পারে ”

তারা দু’জনই অহনাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গেলেন।ডাঃমনসুর ঘরের ভেতরে ঢুকলেন না।তিনি ইতোমধ্যে অহনাকে অন্য চোখে দেখছেন।তার মনে অহনা মানুষ না,অন্য কিছু,যার জন্ম এই পৃথিবীতে নয়,অন্য কোথাও।ডাঃ ক্লার্ক তার এই কর্মকান্ডে অতি বিরক্ত হলেন।মনে মনে বললেন ” এই হলো ডাক্তারের অবস্থা”।

তিনি অহনার কাছে দারালেন।তার সুক্ষ্ম দৃষ্টি আরো সুক্ষ্ম হয়ে গেলো।চোখ থেকে চিকন ফ্রেমের ধূসর রঙ্গের চশমাটা খুলে হাতে নিলেন।এদিকে ভয় ভয় নিয়ে ডাঃ মনসুর ক্লার্কের পাশে দারালেন।ক্লার্কের কাছে এসে ভয়ার্ত স্বরে বললো

” স্যার,নার্সকে রাগারাগি করেছি।ভয়ও দেখিয়েছি,বলেছি সত্যিটা না বললে তার চাকরি নট করে দিবো,কিন্তু সে বারবার বলছে সে কিচ্ছু করেনি।আমারো মনে হচ্ছে নার্স কিছু করেনি।এই রোগী সাধারণ কেউ না স্যার ”

” কোনো রোগীই সাধারণ নয় ”

” স্যার আমি সেটা বলিনি। আমি বলতে চাচ্ছি ”

” এই রোগীর প্যারানরমাল শক্তি আছে।তাই তো? ”

” জি স্যার ”

” আপনি আপাতত চুপ করে থাকুন।এই রোগীর আগে দেখছি আেনার চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন ”

” সরি স্যার।আমি চুপ।একদম চুপ ”

অহনার হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে।পুরো হাত কেটে গেছে,আবার কোথাও কোথাও কালো হয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেখানটায় কালো হয়েছে সেখানে চাপা লেগেছে।ডাঃক্লার্ক একটু অবাক হলো।এমনটা হওয়ার কারন তিনি বুঝতে পারছেন না।তিনি অহনার হাত থেকে রক্ত নিলেন।রক্ত একদম তাজা।কিন্তু কিভাবে?।

” ডাঃ মনসুর ”

” জি স্যার ”

” রক্তটা পরিক্ষা করে দেখুন।এই রক্ত আর মিস অহনার শরীরে থাকা রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করে আমায় জানান।আর এই রুমে তো সিসি ক্যামেরা আছে তাই না? ”

” জি স্যার আছে ”

” গুড।ভিডিও ফুটেজটা আমার ওখানে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন এক্ষুনি ”

” জি স্যার।আমি এক্ষুনি দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি ”

” আর এখানে ডিটটিরত নার্সকে ডাকুন।ওনার কাছে কিছু জানার আছে”

নার্সকে ডাকা হলো।নার্স এসে গুটিসুটি হয়ে দরজার কাছে দারিয়ে আছ।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অহনাকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে।সম্ভবত আজকেই নার্স থেকে তিনি রিজাইন নেবেন।ডাঃক্লার্ক ডাঃ মনসুর কে যা যা বলছেন ডাঃ মনসুর সেসব নার্সকে জিগ্যেস করছেন

” আপনি প্রথম থেকেই এনার দেখা শোনা করছেন? ”

নার্স ” না স্যার,আমার ডিউটি আজ সকাল থেকে ছিলো ”

” কাল কে ডিউটিতে ছিলো? ”

” জানিনা স্যার ”

” আপনি সকালে যখন ডিউটিতে আসেন তখন কি রোগী স্বাভাবিক ছিলো? মানে রোগীর কি হাত কাটা ছিলো? ”

” না স্যার।তার হাত কাটা ছিলো না।সারাদিন ভালোই ছিলো।কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ রক্ত পড়া শুরু হলো ”

” একটু খুলে বলুন বিষয়টা ”

” স্যার আমার ঘুম পাচ্ছিলো হঠাৎ। ওয়াসরুমে গেলাম চোখে জল দিতে।চোখে জল দিয়ে এখানে এসেই দেখি রোগীর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।তখনি আমি ছুটে গেলাম ডাঃ ক্লার্কের কাছে।”

” হঠাৎ করেই এমনটা হলো? আচ্ছা যখন ওয়াসরুমে গেলেন তখন কি রুমে কেউ এসেছিলো? ”

” না স্যার,আমি দরজা ভেতর দিয়ে লক করে রেখেছিলাম ”

” আচ্ছা আপনি এখন যান ”

” স্যার আমি আরেকটা অদ্ভুত জিনিস দেখছিলাম ”

” কি দেখেছেন? ”

” দেখলাম রোগী ঘাড় নড়াচড়া করছে ”

” উনি এখনে কোমায় আছেন।কিভাবে ঘাড় নড়াচড়া করবেন উনি? ”

” স্যার আমি নিজেই দেখেছি,”

” আপনি এখন যান।সময় হলে আপনাকে ডাকা হবে।”

ডাঃ ক্লার্ক গভীর মনোযোগ দিয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখছেন।ভিডিওতে এক পর্যায়ে তিনি প্রচুর ঘাবড়ে গেলেন।এসির মধ্যেও তার শরীরে ঘাম জমতে শুরু করেছে।তিনি টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।

চলবে?
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here