#Lover_Boss
#Season_2
#Part_2
#Mihika_Rahman
গুলির শব্দে এখনো নীরব চারপাশ । অফিসের সমস্ত স্টাফ আতঙ্কিত কিন্তু তাদের তো আর রিশাদের রুমে ঢোকার অনুমতি নেই । রিত্ত দুচোখ বন্ধ করে মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইল । চোখ খুলেই হাঁপাতে লাগল রিত্ত । রিশাদ গুলিটা শূণ্য করেছে কিন্তু ইতিমধ্যে রিত্তর ঘাম ঝরতে শুরু করেছে । রিশাদ ধীরে ধীরে রিত্তর দিকে এগোতে লাগল । রিভলবারটা রিত্তর কপাল থেকে নাক বেয়ে চিবুকে নামাতে নামাতে অদ্ভুত এক শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে ঠোঁটের কোণে ।
–রিত্ত,তুমি কি জানো আজ তোমার বিয়ে ।
–মা…..মা….মানে??
–আরেহ নাহ!!ভেবো না আমি বিয়ে করব তোমায় । তুমি যেরকম ফ্যামিলি থেকে বিলং করো,তারা যেমন ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিতেন,সেরকম ছেলের সাথেই বিয়ে হবে । বড়লোক বয়স্ক ! বাসায় যাও,গেট রেডি । যে ভুলগুলো করেছো তার শাস্তি পাওয়ার জন্য বি রেডি ।
রিত্তের হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেল । রিশাদ কি সব জেনে গেল?রিশাদের ধমকে দ্রুত অফিস থেকে বোরোল রিত্ত ।
“এটা তুমি ঠিক করোনি রিত্ত । আমি জানিনা দিব্যকে বাঁচাতে তুমি কার সাহায্য নিয়েছো কিন্তু তা আমি জেনেই ছাড়বো আর দিব্য ! কতদিন পালিয়ে বাঁচতে পারো আমি দেখবো ।”রিভলবারটা হাতের মধ্যে ঘুরাতে ঘুরাতে বলতে লাগল রিশাদ । দিব্যকে বাঁচানো যে রিত্তর একার কাজ নয় তা বেশ বুঝতে পারছে রিশাদ । কিন্তু রিত্তর সাহায্য কে করতে পারে?রিশাদের কোন শত্রু নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে?
🖤
“দিব্যকে নিরাপদ কোন জায়গায় পাঠিয়ে দাও । এবার আমি দেখবো ঐ রিশাদ আফসান কি করে নিজেকে অমার ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে?” বলেই আগের ন্যায় অট্টহাসিতে ব্যস্ত লোকটা ।
–বস!!সর্বনাশ হয়ে গেছে । রিশাদ আফসান রিত্তর বিয়ে ঠিক করছে ।
–কীহহহ!!
চিন্তিত ভাবে কয়েকবার পায়চারি করতে করতে আবার চিৎকার করে হাসতে লাগল লোকটা । তার এ হাসির কারণ সহযোগীরা বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে রইল । এখনো হেসেই চলেছে লোকটা ।
পড়নে কালো-খয়েরী বর্ণের শাড়ি,খোপা করা চুলে রজনীগন্ধার গাজরা বসানো,চোখে কাজল,কানে দুল,হাতভর্তি চুড়ি ।রিত্তর এ সাজ দেখলে আজ হয়তো রিশাদ আবার তার মায়ায় জড়িয়ে যাবে । কিন্তু রিশাদকে আর নিজের মায়ায় জড়াতে চায় না,হয়তো এবার দিব্যকে নিয়ে মুক্ত পায়রা হয়ে বেঁচে থাকাটা আর সম্ভব হবে না রিত্তর । রিত্তর সামনে আয়নায় থাকা প্রতিবিম্বটাও যেন তাচ্ছিল্য করছে তাকে । শাড়ি সামলে উঠে দাঁড়ালো রিত্ত । গাড়ির আওয়াজেই বুঝতে পারল রিশাদ চলে এসেছে আর হয়তো রিশাদের সাথেই চলে এসেছে রিত্তর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ । সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল রিত্ত ।
রিত্তকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায় রিশাদ । এই মেয়েটাকেই নিজের দুর্বলতা করতে চেয়েছিল রিশাদ কিন্তু রিত্ত যে রিশাদের দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করবে তা তো সে জানতো না । রিশাদ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই একটা মহিলা এবং দুজন পুরুষ বাড়িতে ঢুকল । রিত্ত তাদের বসতে বলল । খুব সম্ভবত এরাই রিত্তর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চাবিকাঠি । প্রায় ত্রিশ বছর বয়সী পুরুষটা বেশ লোভাতুর দৃষ্টিতে রিত্তর দিকে তাকিয়ে আছে । রিশাদ এসে তাদের সামনাসামনি সোফায় বসল । পড়নে হোয়াইট টি-শার্টের সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার । চুলগুলো থেকে টুপটুপ করে পানি কপাল বেয়ে গড়াচ্ছে । এইটুকু সময়ে শাওয়ারও নিয়ে ফেলেছে লোকটা?অদ্ভুত সব খেয়াল আসছে রিত্তর মাথায় । রিশাদ কথা বলছে লোকটার সাথে । রিশাদের ঠোঁটের নড়া দেখছে রিত্ত । রিশাদের দিকে রিত্তর এমন দৃষ্টি বেশ অপমানের মনে হলো মহিলার কাছে । তিনি বেশ কড়া কণ্ঠে রিশাদের নাম নিলেন ।
–জ্বী আন্টি,বলুন।
–আপনি রিত্তর কে হন?
–আমি ওর অফিসের বস ।
–তাহলে রিত্ত আপনার সাথে এই ফাঁকা বাড়িতে একা কেন থাকে আর আপনিই বা কেন ওর বিয়ের কথাবার্তা বলছেন??ওর ফ্যামিলি কোথায়?
–আপনি ভুল ভাবছেন । ওর ফ্যামিলি গ্রামে থাকে আর ও আমার সাথে থাকে না । কাল অসুস্থ ছিল আর আমি ওর বাসা চিনতাম না দেখে এখানে এনেছি ।
–দেখুন,আপনার রক্ষিতাকে আপনি আপনার কাছেই রাখুন । আমাদের কারো রক্ষিতাকে নিজেদের বাড়ির বউ করার ইচ্ছে নেই ।
রিত্ত কিছু বলছে না,মাথা নিচু তার । কাঁদতে বারণ বলে অশ্রুগুলোও চোখের কোণে এসে থমকে যাচ্ছে । রিশাদ তাকাতে পারছে রিত্তর দিকে । এই প্রথম এতটা অসহায় চাহনি রিত্তের । মহিলা তার স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে উঠে গেলেন । রিত্ত কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রিশাদের দিকে তাকাল,তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,”পরিবারের কাছে থাকলে হয়তো কারো রক্ষিতার পদবীটা পেতে হত না ।”আর কথা না বাড়িয়ে উপরে চলে যায় রিত্ত ।রিশাদ কী করবে বুঝতে পারে না । এটা সে বেশি বেশি করে ফেলেছে । মেয়েটার আত্মসম্মানে এতবড় আঘাতের কারণটা তো রিশাদই ।
রিত্ত রুমে ঢুকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল,চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে রিত্তের । কিন্তু শেষমুহূর্তে এই ট্রিকটা ইউজ না করলে হয়তো বিয়েটা হয়েই যেত । স্বভাবতই কোন শাশুড়ি সহ্য করবেনা তার হবু পুত্রবধূ অন্য কারো দিকে তাকায়ে থাকে,আবার তার বাড়িতেই থাকে । ট্রিকটা কাজ করেছে তবে রিশাদের দিকে তাকানোর মাঝে অদ্ভুত এক ভালোলাগা অনুভূত হচ্ছিল রিত্তের । কিন্তু এই মায়াবী মুখটার পেছনে যে একজন কতটা ভয়ঙ্কর মানুষ লুকিয়ে আছে তা শুধু রিত্তই জানে।
🖤
দূরে কোথাও গিটারের মৃদু সুর বাজছে । খুবই ক্ষীণ সে সুর ,পূর্ণিমার চাঁদের ঝলকানিতে রাতটা যেন আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত । দীপের মাথাটা ধরেছে আজ খুব । মিহি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে । মিহিকে আর ডাকলো না সে । রাত জেগে কাজ করাটা দীপের অভ্যাস আর এই অভ্যাসই একটা মাথাব্যথা । স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যেতেই দীপ দেখল ডাইনিংয়ে এক মগ কফি,এখনো ধোঁয়া উঠছে । কফির মগটা হাতে নিয়ে আশেপাশে লক্ষ্য করল দীপ । ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে মিহি । অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা যেন দীপকেও ঘিরে ধরল । মিহির পাশে দাঁড়ালো দীপ ।
–কি ভাবছো?
–রিশাদের কথা ।
–এতবছর বাদে হঠাৎ?
–এতবছর বাদে না দীপ,রিশাদের প্রতি অনুতাপ আমাকে বরাবরই কুঁড়ে কুঁড়ে খায় কিন্তু আজ মনটা ঠিক নেই । কি হচ্ছে বুঝে উঠছি না । বাবাকেও মিস করছি খুব ।
–মিহি,একটা কথা বলবে?
–হুম।
–রিশাদকে কি তুমি ভালোবাসতে??
–বাসলে বুঝি তোমায় বিয়ে করতাম??
–করতেই পারো । হয়তো রিশাদের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি চেয়েছিলে ।
কথাটা নিছক মজার ছলে বললেও মিহির দিকে তাকাতেই দীপ বুঝল সে কতবড় ভুল করে ফেলেছে । এই মেয়েটা এমনিতেই মারাত্মক জেদি আর অকারণ অভিমানী । খুব কম কয়েকবার দীপের সামনে চোখের পানি পড়েছে মিহির । আজ হয়তো পঞ্চমবারের মতো মিহির অশ্রুবিসর্জন প্রত্যক্ষ করছে দীপ । মিহি ঘরে ঢুকেই ব্যাগ গোছাতে লাগল ।
–প্যাকিং কেন??
–দেশে ফিরবো।
–আচ্ছা, আমি সিফাত ভাইয়াকে বলে দিচ্ছি । ও আমাদের পিক করতে আসবে ।
–কেন??আমি বলেছি তোমায়??আমি রিশাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ।
–মিহি……
–ওর বন্দিত্বে কোন কষ্ট ছিল না দীপ,আমিই অকারণ মুক্ত পায়রা হতে চেয়েছিলাম । ভালোবাসিনি আমি রিশাদকে এটা ঠিক,হয়তো আমার প্রতারণার জন্য রিশাদ কখনো আর আমার মুখও দেখবে না কিন্তু এই অনুতাপ আমি আর নিতে পারছি না ।
–যা ইচ্ছে ।
কথা বাড়াল না আর দীপ । মিহি একটাবারও বুঝদো না এইমুহূর্তে দীপের মনের ভেতর কি চলছে । মেয়েটা কখনো বুঝবেই না । শুধু দীপ কেন কারো মনের কথাই মিহি কখনোই বুঝবে না । সে আপনাতেই ব্যস্ত । তার ধারণা খারাপ লাগার অধিকার শুধুই তার ।
রাত পেরোতেই ভোরের আলো জানালা বেয়ে দীপের মুখে এসে পড়ছে । ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকাল দীপ,মিহি নেই । এত সকালে কোথায় যেতে পারে মেয়েটা?বেডের পাশে টেবিলে একটা চিরকুট পেল দীপ ।
“সকালের ফ্লাইট ছিল,নিজের খেয়াল রাখবেন আমি না ফেরা অবধি । ফোন অফ,কল করলে পাবেন না ।সময়মতোই ফিরবো,আপনার সাথে প্রতারণা করবো না যেমনটা রিশাদের সাথে করেছিলাম ।”
চিরকুটটা পাশে রাখলো দীপ । এইমুহূর্তে দীপের ইচ্ছে করছে আশেপাশের সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে । কী পরিমাণ ননসেন্স হলে এরকম কেও করতে পারে ভাবছে দীপ । মিহি কেন বারবার ভুলে যায় সে কারো স্ত্রী,ফ্যামিলি আছে তার । সত্যি সত্যি রিশাদকে ভালোবাসত না মিহি??নাকি মিহি মিথ্যা বলেছে??
🖤
ফ্লাইট ল্যান্ড করতেই সিমটা ডাস্টবিনে ফেলল মিহি । ব্যাগে থাকা নতুন সিমটা ফোনে লাগিয়ে এগোতে লাগল । মিহি প্রথমে ভেবেছিল রিশাদের আগের বাড়িতে যাবে কিন্তু রিশাদের মুখোমুখি কি আদৌ হতে পারবে মিহি??যে ভুল সে করেছে তার জন্য রিশাদ কি পারবে মিহিকে মাফ করতে??
চলবে…….
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । অবশ্যই নিজেদের মতামত প্রকাশ করবেন । সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য ।]