#Lover_Boss
#Season_2
#part_10
#Mihika_Rahman
বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে । রিশাদ আর রিত্তর সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হয় নি । রিত্তর বিষণ্ণতা কিংবা উদাসীনতা কোনোটাই বিন্দুমাত্র প্রশমিত হয় নি । রিশাদ চেষ্টা করেনি এমনটা বলা যায় না কিন্তু যে মানুষটা নিজেই খুশি থাকতে চায় না,হাজার চেষ্টা করলেও কি তাকে খুশি করা সম্ভব?সম্ভব না । রিশাদ-রিত্তর মাঝের দূরত্বটাও ধীরে ধীরে বাড়ছে । এখন আর রিশাদের বাড়িতে থাকে না রিত্ত । স্বামী-স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও দুইজনের অবস্থান দুই ছাদের নিচে । ডিভোর্সের জন্য এপ্লাইও করেছে রিত্ত তবে তার জন্য ছয়মাস একবাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে । রিত্ত তা চায় না । তাই কাগজপত্রহীন অঘোষিত একটা বিচ্ছেদকে জুড়ে দিয়েছে রিশাদ আর তার সম্পর্কের মাঝে । অবশ্য রিশাদ চাইলেই পারত রিত্তকে ফিরিয়ে এনে নিজের কাছে রাখতে কিন্তু জোর করতে চায়নি সে ।
সকাল থেকে শরীরটা ঠিক নেই রিশাদের আর আজকাল বাড়িতেও সে কাউকে থাকতে দেয় না,দারোয়ানকে অবধি না । যা দরকার হয় নিজেই আনে,নিজেই রান্না করে খায়,নিজেই ড্রাইভ করে অফিসে যায় । তাই হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় কাউকে যে ডাকবে সেরকম কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না । অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা ঘুরে উঠল,আবার বসে পড়তে হলো তাকে । বিছানার এককোণে পড়ে থাকা ফোনটাকে অনেক চেষ্টার পর হাতের নাগালে পেল । কিন্তু ফোন থেকে যে কাউকে কল করবে সেরকম অবস্থায়ও যেন সে নেই । ইমার্জেন্সিতে রিত্তর নম্বর সেভ করা ছিল,হয়তো সেখানেই কলটা গেল কিন্তু কিছু বলতে পারল না রিশাদ । তার আগেই চোখ বন্ধ হয়ে আসলো ।
সকালবেলা ফোনের রিংটোনটা বেশ বিরক্তিকর রিত্তর জন্য । রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল সে । আসতে আসতে ফোনের রিং বাজা বন্ধ হয়ে গেল । হাত মুছে ফোন হাতে নিতেই দেখল রিশাদের নম্বর থেকে কল এসেছিল । রিশাদ তো এই কয়েকমাসে একটাবারের জন্যও তাকে কল করেনি । আজ হঠাৎ কেন কল করল?কি প্রয়োজন পড়ল?এতদিন তো ভালোই ছিল রিত্তকে ছাড়া, একটাবার এসে বলেওনি রিত্ত ,চলো আমার সাথে । এমন অজস্র প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে রিত্তর মনে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ছেলেটার কোন বিপদ হলো না তো । তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে রিশাদের বাড়ির দিকে রওনা দিল রিত্ত ।
বাড়ির দরজাতে দারোয়ান অবধি নেই । এত নিস্তব্ধতা!ভীত-শঙ্কিত পায়ে ধীরে ধীরে রিশাদের রুমের দিকে এগোল রিত্ত । রিশাদের রুমে ঢুকতেই দেখল রিশাদ বেসামালভাবে বিছানার এক প্রান্তে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে । দ্রুত রিশাদের ফোন হাতে নিয়ে ডক্টরকে কল করল রিত্ত । রিশাদকে ধরে বিছানায় কোনরকম শুয়ে দিল । বেশ কয়েকবার ডাকলোও রিশাদকে কিন্তু নাহ!রিশাদের কোন সাড়াশব্দই নেই । উদ্বেগ যেন কয়েকশো গুণ বেড়ে গেল রিত্তর । কি করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । ডক্টর সাহেব এলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই । পাশের কোন একটা ক্লিনিকে ছিলেন বলে আসতে দেরি হয় নি । রিশাদকে চেক-আপ করে রিত্তর সামনে দাঁড়াতেই কপালে চিন্তার রেখা দেখা গেল তার । রিত্ত ছটফট করছে । সে বারবার তাড়া দিচ্ছে ডাক্তার সাহেবকে কি হয়েছে বলার জন্য ।
–ডক্টর সাহেব,কি হয়েছে রিশাদের?প্লিজ বলুন আমাকে ।
–দেখুন মিসেস রিত্ত,আপনার স্বামীর শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ । তার প্রেশার খুবই লো ,তার উপর তিনি কোন বিষয় নিয়ে সম্ভবত টেনশনে অছেন যার কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছেন । বলতে গেলে তিনি টাইম টু টাইম খাওয়া দাওয়া করেন না,এমনকি ওনার ছোট থেকেই কিছু সমস্যা ছিল আর ফ্যামিলি ডক্টর হওয়ার দরুন ওকে মেডিসিন প্রেসক্রাইব করেছিলাম । সেগুলো না খাওয়ার জন্য তার সমস্যাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে । আপনার উচিত এখন রিশাদের প্রোপার খেয়াল রাখা । আমি অবশ্য জানি আপনাদের বিচ্ছেদের কথা কিন্তু ছেলেটা আপনাকে খুব ভালোবাসে নয়তো আপনার চলে যাওয়ার পর নিজের এমন অবস্থা করতো না । মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি,খাওয়ায়ে দিয়েন উঠলে । আসি আজ ।
–ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব ।
ডাক্তার চলে যেতেই রিশাদের পাশে বসে পড়ে রিত্ত । চোখ থেকে পানি পড়ছে । আলতো করে রিশাদের বুকে মাথা রাখে রিত্ত ।
“দিব্যকে হারানোর পর ভেবেছিলাম হয়তো আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো না । তাই তোমার থেকে দূরে সরে এলাম কিন্তু দূরত্ব ভালোবাসাকে প্রশমিত করতে পারল না । কোথায় যেন শুনেছিলাম,দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায় । আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে । প্রতিদিন তোমার প্রতীক্ষায় আমার ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি মুনাফার হারে বেড়েছে কিন্তু তুমি আসো নি । একটাবার বলোনি,রিত্ত চলো আমার সাথে, ভালোবাসি তোমাকে । আমিও যায়নি । কি যেন একটা বাধা দিচ্ছিল তোমার কাছে ফিরতে ,হয়তো অভিমান । ভেবে বসেছিলাম তুমি বুঝি ভুলে গেছ আমায় । কি লাভ তোমার জীবনে ফিরে তোমার নতুন জীবনটাকে আবার তছনছ করতে?তবে ভালোবাসি আপনাকে খুব,কেন ভালোবাসলাম হঠাৎ করেই বলতে পারবো না ।”কথাগুলো বলতে বলতে রিত্তর চোখের জলে রিশাদের শার্ট ভিজে গেছে । রিশাদের বুকের উপর থেকে উঠতেই রিত্ত দেখল রিশাদ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ।
–আপনি সব শুনেছেন?
–জ্বী মিসেস চৌধুরী কিন্তু উঠলেন কেন?শান্তি পাচ্ছিলাম । বুকের ভেতরে চলা ঝড়টাকে প্রশান্তি দিচ্ছিলেন । আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে । এখন আবার বুকে আসেন ।
— না!আগে মেডিসিন ।
–মেডিসিন তো আপনিই আভার । আসেন বুকে ।
–ডক্টরের প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আগে ।
রিশাদকে মেঠিসিন খাইয়ে দিয়ে রিত্ত রিশাদের বুকে আবার মাথা রাখল । আজকের এই অসুখটা রিশাদের জন্য সেরা অনুভূতি । রিত্তকে নিজের করে পেয়েছে,আর কখনোই ছেড়ে যেতে দিবেনা ।
🖤
মিহি আর দীপ হাসপাতালে । মিহি ওপারেশন থিয়েটারে,বাইরে বসে নখ কামড়াচ্ছে দীপ । চিন্তায় কি করছে না করছে বুঝে উঠতে পারছে না । এমন সময় বাচ্চার কান্নার শব্দ পাওয়া গেল । দীপের হৃদস্পন্দন যেন থেমেই গেল । ডক্টর বের হলেন বেশ কিছুক্ষণ পর । জানালেন মা এবং বাচ্চা উভয়ই সুস্থ আছে,একটু পর দেখা করা যাবে ।
মিহির কেবিনে ঢুকল দীপ । মিহির কোলে তার ছোট্ট পরীটা খেলা করছে । একদম মিহির মতোই হয়েছে কিন্তু মিহিকে বললে সে বলবে দীপের মতো হয়েছে । মিহির কাছে যেয়ে আলতো হাতে বাচ্চাকে কোলে নিল দীপ । এসময় মিহির খুব খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে পারছে না । তার মনে হচ্ছে এই বুঝি দীপ বলবে,এখন এই সন্তান শুধু আমার । চলে যাও তুমি । ইতিমধ্যে চোখ ছলছল করছে মিহির কিন্তু মিহিকে অবাক করে দিয়ে দীপ বলল,”আমার মিহি আজ মা হয়েছে । সেরা অনুভূতি জীবনের । এই অনুভূতিটা আরো দশবার অনুভব করাতে হবে তাকে ।”বলেই মিহির দিকে চোখ টিপ মারলো দীপ । মিহি হাসতে লাগল । বাবা,মা আর তাদের ছোট্ট পরী,পার্ফেক্ট ফ্যামিলি ।
এমন সময় মাহিন সাহেব । হাতজোড় করে বসলেন মিহির সামনে ।
–মা আমায় মাফ করে দে । আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি । টাকার জন্য আমি মিথ্যে বুঝিয়েছিলাম তোকে । তোর মার মৃত্যুর জন্য দীপ আর রিশাদ দায়ী নয় । তোর মা এক্সিডেন্টে মারা যায় ।
–এতবড় মিথ্যা!!ছিঃ বাবা!!
–মাফ করে দে মা আমায় ।
–মিহি,মাফ করে দাও ওনাকে । আমাদের সন্তানেরও অধিকার আছে তার নানুভাই এর কোলে যাওয়ার ।
বাচ্চাকে মাহিন সাহেবের কোলে দিয়ে মিহিকে জড়িয়ে ধরল দীপ । আজীবন এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখতে চায় মিহিকে ।
সম্পর্কগুলো যেন এভাবেই পূর্ণতা পেতে থাকুক । ভালোবাসার মানুষগুলোর যেন কখনো বিচ্ছেদ না হয় । ভালো থাকুক ভালোবাসা ।
সমাপ্ত ।
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । খুব শীঘ্রই নতুন একজোড়া অভিমানী ভালোবাসার গল্প “কম্পেয়ারিজম ” লিখতে চলেছি । আশা করি সবার ভালো লাগবে । ধন্যবাদ সবাইকে ।]