সব সময় দেখেছি বিয়ের সময় কনে কিডন্যাপ হতে।কখনও শুনি নি যে কনের বোন কিডন্যাপ হয়েছে।কিন্তু আজ আমার সাথে তাই হয়ে।আর হ্যা আমাকে আমার বোন বুঝে ভুল করে কিডন্যাপ করে আনা হয় নি। আমাকে আমি বুঝেই কিডন্যাপ করা হয়েছে।
ব্যাপারটা খুলে বলছি।
আজ আমার এক দূরসম্পর্কের কাজিনের বিয়ে।তাই বিয়েতে আমরা সব কাজিন বোনরা মিলে ঠিক করি এক সাথে পার্লার থেকে সাজবো।যেই ভাবা সেই কাজ।সকাল সকাল সবাই মিলে পার্লারে সাজগোজ করার জন্য গেলাম।অবশ্য বড়োরা বলেছিলো পার্লারের লোক বাসায় আনতে কিন্তু আমারই এক সাথে পার্লারের সাজগুজো করবো বলে জেদ ধরি।অবশ্য আমি ধরি নি আমার বড়ো গুলো ধরেছে আমি শুধু তাদের তালে তাল মিলিয়ে গেছি।কিন্তু কে জানতো এই তাল তাই আমার কাল হয়ে যাবে।সেইদিন বুঝলাম কেন সবাই বলে বড়োদের কথা শুনতে হয়।সেদিন যদি আমি বড়োদের কথা শুনে ওদের সাথে না যেতাম তাহলে কিডন্যাপ হতাম না।
পার্লার থেকে ময়দা সুন্দরী হয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলাম।যেই গাড়িতে আমাদের চড়ে বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো।সেই গাড়ি ভরে গেল।আর এক মাত্র আমি অসহায় বাচ্চার মত পরে রইলাম। কাজিনদের মধ্যে ছোটো হলেও সাহস আমার বরাবরই একটু বেশি।তাই ওরা ঠিক করলো সুন্দরীরা গাড়িতে বসে চলে জানি।আমি একা একা আসবো।ভাবা যায়??যেহেতু বড়োদের উপর কথা বলা ভালো দেখায় না তাই দাঁত চেপে ওদের কথা মেনে নিলাম।এমনি আমি অবাধ্য বলে অনেক পরিচিতি আছে।তাই আজ নতুন করে ট্যাগ লাগাতে চাই নি।
আমি পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।রিকশা নিবো বলে।এই এলাকার রাস্তাগুলি সচরাচর অনেক জনবহুল থাকে।কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যক্রমে বেশ ফাঁকা ছিলো রাস্তাগুলো।হয়তো সময়টা দুপুর এইজন্য।এই বৈশাখ মাসের খাঁ খাঁ করা রোদে দাঁড়িয়ে আছি আধ ঘণ্টা হতে চলেছে একটা রিক্সাও পেলাম না।দুর্ভাগ্য যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।কিন্তু হঠাৎই কোথা থেকে যেনো একটা কালো রঙের গাড়ি এসে উদয় হলো।কথা নেই বার্তা নেই আমার মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলো।নিজেকে বাঁচানোর বিন্দুমাত্র সময়টুকু আমাকে দেয়া হলো না।
আমি আস্থা ইয়াসমিন।ডাক নাম আসু। বয়স 20।দেখতে গেছো মেয়ের মতো। স্বভাব অবাধ্য বলেই চলে।
আমাকে কিডন্যাপ করে কোথায় আনা হয়েছে জানি না।যতোটুকু জানি আমি কেনো এক অফিসের বিল্ডিং এর মধ্যে আছি।কারণ কম্পিউটারের টাইপিং এর শব্দ কানে স্পষ্ট আসছে।কিন্তু মুখে কাপড় সরাতেই খুব সুদর্শন যুবক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
দেখতে মাশাআল্লাহ। ছয় ফুট তো নিশ্চিত হবে।আর আমি টেনেটুনে পাঁচ ফুট।বডি বিল্ডার টাইপ শরীর।যে কেউই দেখে ক্রাশ খাবে।যেকোনো মেয়ে চাইবে উনার মত কেউ এক দিনের জন্য হলেও বয়ফ্রেন্ড হোক।আমি লোকটার সৌন্দর্যে হাবু ডুবু খাচ্ছিলাম তখনই লোকটা বলল
এই কি পেত্নী ধরে এনেছ?
ব্যাস।আমার আশা নিরাশা হতে সময় নিলো না। একেই বলে প্রেমের আগে ছেকা খাওয়া।যাই হোক এই টা নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে উনি আমাকে পেত্নী বলছে তা নিয়ে আমার চিন্তা।
আমি মুখে কিছু বলতে নিবো তখনই বুঝলাম আমার মুখে কাপড় বাঁধা।তাই যাই বলছি উম্ম উম্ম শব্দ করছে।
এই একে খুলে দাও।কি বলতে চায়? আমিও দেখি(লোকটা)
আমার মুখটা খুলতেই
ওই মিয়া,,,,আমার এই খানে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে কেনো?(চিৎকার করে বিল্ডিং কাপিয়ে কথা গুলো বললাম)
কেনো?তুমি জানো না?(লোকটা আমার থেকে দ্বিগুণ চিৎকার করে)
আপনি কি বলছেন?কই আমি তো শুনি নাই।একটু জোরে বলবেন প্লিজ।(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
নিহাল এই মেয়েকে তো আমি,,,
বলেই লোকটা আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।তখনই নিহাল নামের ছেলেটি ওনাকে ধরে বললো….
আভি শান্ত হ।ওকে বিষয়টা বুঝতে দে।
তো এই কিডন্যাপের নাম আভি।(আমি মনে মনে।)
কি বুঝবে? ওই তো করেছে সব(আভি)
এক্সকিউজ মী।আমি কি জানতে পারি আমি ঠিক কি করেছি?(আমি দুই জনের কথায় বাম হাত ঢুকিয়ে)
নিহাল একে দেখা।(আভি প্রচন্ড রাগে)
পরেই নিহাল নামের ছেলেটি আমার সামনে একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসলো।আর তার থেকে আমাকে একটা একাউন্ট দেখালো।
যা দেখেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমার চোখ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।তাই কৌতুহল নিয়ে বললাম….
আরে এ তো আমি!কিন্তু আবার আমিও না।
তখনই আভি চিতাবাঘের মতো তেড়ে এসে আমার বহু জোরে চেপে ধরলো।
আমি আহ্ করে উঠলাম ব্যাথায়।
কি বলতে চাইছো তুমি আবার তুমি না?(আভি প্রচণ্ড রাগে দাঁত চেপে চেপে কথা গুলো আমাকে বললো)
আমাকে ছাড়লে আমি বলবো না হলে বলবো না।(আমি আভির চোখের দিকে তাকিয়ে)
আভি ওকে ছাড়।আগে ওর কথাটা শুনি(নিহাল)
নিহালের কথা শুনে আভি আমাকে ছেড়ে দিলো।
বলো কি জানো তুমি?এই একাউন্টের বেপারে?(নিহাল)
আমি জানি না।আমার ছবি দিয়েকে এই একাউন্ট বানিয়েছে?কিন্তু এইটা আমি না…এটা শিউর।(আমি নির্ভয়ে বলে ফেললাম)
তুমি জানো এই একাউন্ট থেকে কি করা হচ্ছে?(আভি)
নাহ।(আমি)
এই একাউন্ট থেকে মেয়েদের বাজে ছবি বানিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে আর যার কবলে পড়েছে নিহাল এর বোন নিহাও।(আভি)
কি?এতো জঘন্য কাজ কে করতে পারে?(আমি)
তুমি বলো কে করতে পারে?(আভি)
আমি কি করে জানবো? ওয়েট আপনার কি এখনও মনে হয় এর পিছনে আমি আছি?(আমি আভির দিকে সন্দেহর দৃষ্টিতে)
আমার মনে হয় না।(আভি)
ওহ ভালো(আমি সস্থির নিশ্বাস নিয়ে)
আমি কনফার্ম যে এইটা তুমি করছো(আভি)
ওয়েট! হোয়াট?(আমি অবাক হয়ে)
নিশ্চয়ই তুমি আর তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড মিলে এই জঘন্য কাজ করে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করছো(আভি)
হুহ!আপনার এইটা মনে হয়?(আমি বাকরুদ্ধ হয়ে)
হুম আমার এইটাই মনে হয়।(আভি)
ওকে।আমি এইটা করছি।আপনি তো আমাকে ধরেই ফেললেন।এখন আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডকে ধরুন।আমিও দেখতে চাই…এ আমার কোন জন্মের বয়ফ্রেন্ড যার সাথে মিলে আমি এই চমৎকার কাজ করছি(আমি আভির সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে এক দমে কথা গুলো বললাম)
ঠিক আছে।এখন কয়টা বাজে নিহাল?(আভি)
দুপুর সাড়ে বারোটা।(নিহাল)
আজ রাত আটটার আগে তোমার ঐ বয়ফ্রেন্ডকে আমি এইখানে এনে হাজির করবো।তারপর তোমাদের দুই জনকে এক সাথে শাস্তি দিবো(আভিও আমার সামনে এসে আমার চোখে চোখ রেখে)
নিহাল ওর বয়ফ্রেন্ডকে খুঁজতে যা করার কর।আর হ্যা তুমি(আমাকে)তোমার বয়ফ্রেন্ড কে না ধরা পর্যন্ত তুমি আমার কেবিন থেকে এক পাও বের হবে না।(আভি আমাকে চোখ রাঙিয়ে কথা গুলো বললো)
আপনার কেবিনে WiFi আছে?(আমি)
আমার আচমকা এই প্রশ্নে আভি অনেক অবাক হয়ে গেলো…
হুম।কেনো?(আভি)
তাহলে আমাকে একটা ল্যাপটপ দিন।আমি সেইখানে বসে সারাক্ষণ কার্টুন দেখব।তাহলে আপনার কেবিন থেকে এক পা তো দূর এক চুলও নড়ব না।কলি প্রমিজ(আমি)
এই মেয়েটা কি?একে কিডন্যাপ করে আনছি আর এর কোনো ফিলিংস নাই।এখন এইখানে বসে কার্টুন দেখবে(আভি আস্থার দিকে তাকিয়ে ভাবছে)
কি হলো দিবেন তো?(আমি উনার সামনে তুরি বাজিয়ে)
হুম।যা মজা করার এখনই করে নাও ভবিষ্যতে কপালে কি আছে?কে জানে?(আভি বলেই ওর চেয়ারে গিয়ে বসলো)
আমিও মুখ ভেংচি দিলাম।
নিহাল আমাকে একটা ল্যাপটপ দিয়ে।আমি ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসলাম।সোফাটা একদম আভির টেবিলের সামনে।এইদিকে নিহাল আমার এই হটাৎ জন্ম নেওয়া বয়ফ্রেন্ডকে খুঁজতে বের হয়ে গেলো।
আধ ঘণ্টা পরে…
আভি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।আর তার কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে..
আচ্ছা। ওয়াশরুমটা কোথায়?(আমি)
আভি আমাকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিলো।দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি আমার উপর খুব বিরক্ত।কিন্তু আমার উনাকে বিরক্ত করতে ভালোই লাগছে।
ওয়াশরুমে গিয়েই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করলাম।
সাথে সাথেই আভি দৌড়ে আসলো।
কি হলো?চিৎকার করছো কেনো?তেলাপোকা দেখেছো নাকি?
।
।
চলবে….
#Marriage_With_Benefits
#part_1
Writer::Shaanj Nahar Sanjida