Mr_Husband পর্ব ১৬+১৭

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১৬

আঁধার কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে রুশা’র দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

—“নাইস নেম।”

তারপর ওখান থেকে উঠে চলে গেল। রুশা বেকুবের মত দাঁড়িয়ে রইল। আর বাকিরা অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো। যেন ওরা এটাই আন্দাজ করেছিল। আঁধারের এরকম গাছাড়া ভাব রুশা’র ইগোতে লাগলো। ও রেগে হনহনিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। ক্লাস শেষে সবাই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আরুশ উত্তেজিত হয়ে বলল,

—“চল আজ সবাই মিলে মুভি দেখতে যাই।”

আরুশের কথায় আসিক সায় দিলো,

—“হ্যা চল, অনেক মজা হবে। মুভি দেখে ওখান থেকে লং ড্রাইভে চলে যাবো।”

অয়ন বলল,

—“ভালো কোনো হরর মুভি দেখবো।”

ইসী নাকচ করে বলল,

—“নো, রোমান্টিক মুভি দেখবো।”

আপন অয়ন কে সাপোর্ট করে বলল,

—“ওই চুড়েল তুই চুপ কর আমরা হরর মুভিই দেখবো।”

ইসী রেগে বলল,

—“বললাম না রোমান্টিক দেখবো।”

আরুশ ওদের থামিয়ে বলল,

—“আমরা হরর ও দেখবো না আর রোমান্টিক ও দেখবো না।”

ইসী বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,

—“তাহলে কি তোরে দেখবো?”

আরুশ ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল

—“হ্যা চাইলে দেখতেই পারিস। আফটার অল আমি দেখতে এতো হ্যান্ডসাম।”

ইসী ঠোঁট বাঁকালো। আঁধার চুপচাপ চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন স্কান করছে। ওর এসবে কোনো ইনট্রেস নেই। আরুশ আবারো বলল,

—“আমরা হরর দেখলে ইসী’র মন খারাপ হবে। আর রোমান্টিক দেখতে আমরা ছেলেরা কেউই ইনট্রেস্টেড না। তাই আমরা সবাই কমেডি দেখবো। এতে সবার মুন’ই রাখা হবে।”

অয়ন, আপন আর আসিক মেনে নিলো আর হেসে বলল,

—“ওকে ব্রো।”

ইসী ভেঙ্গচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আরুশ ইসী’র চুল টেনে বলল,

—“কিরে পেত্নি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো?”

—“ক্যান আই জয়েন ইউ?”

আবারো সেই মিষ্টি কন্ঠ স্বর আঁধারের কানে এসে বারি খেল। আঁধার ফোন থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি। রুশা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আরুশ হেসে বলল,

—“শিওর মিস।”

ইসী বাঁকা চোখে আরুশের দিকে তাকালো। রুশা আরুশ আর আঁধারের মাঝের চেয়ারে বসলো। আঁধার আবারো ফোন স্কান করায় মগ্ন হয়ে গেল। আরুশ’ই রুশার সাথে কথা বলেছে বিদায় রুশা ওকেই জিজ্ঞেস করলো,

—“তোমরা কি বিষয়ে কথা বলছিলে?”

—“আমরা মুভি দেখতে যাওয়ার প্লান করছিলাম। তুমি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারো।”

রুশা হেসে বলল,

—“অবশ্যই”

ইসী আড়চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। কেন যেন মেয়েটাকে ইসী’র সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ করেই রেগে যাচ্ছে। ইসী’র গালের দুপাশ লাল হয়ে গেছে। রাগে ফুঁসছে ও। আরুশ খেয়াল করলো ইসী ফুঁসছে। ও ইসী’র কাঁধে হাত রেখে মজা করে বলল,

—“কিরে পেত্নি এভাবে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছিস কেন? মৃগী রোগে ধরছে নাকি তোকে?”

ইসী চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আরুশ ফিক করে হেসে দিলো।

.

আঁধার আর আরুশ পাশা পাশি বসেছে। আঁধারের ফোন আসাতে আঁধারের ফোন নিয়ে উঠে সাইডে চলে গেল। রুশা পপকর্ন, জুস, বার্গার আরো কিছু খাবার জিনিস নিয়ে এসে আঁধারের সিটে বসে পরলো। এর’ই মধ্যে আঁধার ও কথা বলা শেষ করে এসে দেখে ওর সিটে রুশা বসে আছে। আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। রুশা একবার আঁধারের দিকে আরেকবার আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ জোর পূর্বক হেসে বলল,

—“এটা আসলে ওর সিট তাই ও ওভাবে তাকিয়ে আছে।”

রুশা উঠেতে উঠতেই বলল,

—“ওহ সরি সরি! আমি আসলে জানতাম না। খালি ছিলো তাই বসে পরেছি।”

আরুশ বলল,

—“থাক সমস্যা নেই তুমি বসো। পাশের সিট খালি আছে আঁধার তুই ওই সিটে বসে পর।”

আঁধার বিনা বাক্য ব্যয়ে চুপচাপ পাশের সিটে বসে ফোনে মুখ গুঁজলো। ইসী এতোক্ষণ আরুশের পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে সব দেখছিল। অয়ন, আপন আর আসিক মুভি নিয়ে কথা বলছে এদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেই। কিছুক্ষণ পর মুভি শুরু হলো। যেখানে মুভি দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেখানে আঁধার ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর ভঙ্গিতে মুভি দেখছে। রুশা অবাক চোখে কিছুক্ষণ আঁধারের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার মুভি দেখায় মনোযোগ দিলো। রুশা হাসতে হাসতে আঁধারের গায়ে ঢলে পরছে। আঁধারের এসব একদম পছন্দ না। ওর গায়ে কেউ হাত দিলে ও রেগে যায়। কিন্তু রুশা কে কিছু বলল না। রুশা এবার হাসতে হাসতে আরুশের গায়ে পরলো। ইসী’র দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। ইসী উঠে আরুশের কলার ধরে বলল,

—“ওঠ”

আরুশ বোকা বেনে গেল।

—“মানে?”

—“বাংলা বুঝছ না? ওঠতে বলছি ওঠ”

আরুশ ইসী’র কথা মতো চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো। ইসী আরুশের সিটে বসে বলল,

—“বস”

—“কানে কম শোনোছ? বসতে বলছি বসে চুপচাপ মুভি দেখে।”

আরুশ রেগে বলল,

—“কেন আমি কি তোর গোলাম না কি?”

—“হ্যা তুই আমার গোলাম। তাই এখন যা বলছি চুপচাপ কর।”

আরুশ আর কিছু বলল না কারণ এখনে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করলে পাবলিক ইসী কিছু না বললেও ওকে ঠিকই ধোলাই দিবে। ইসী’র সিটৈ ফুঁসতে ফুঁসতে বসে পরলো আরুশ।

.

সবাই মিলে আঁধারের জিপে করে লং ড্রাইভে বেরিয়েছে। আঁধার ড্রাইভ করছে আর আরুশ ওর পাশের সিটে বসে আছে। বাকিরা পিছনে দাঁড়িয়ে হিল্লোলের করছে। অয়ন বিয়ার বের করে সবাইকে একটা একটা করে বিয়ারের ক্যান দিলো। আরুশ বিয়ারে এক ছিপ নিয়ে আঁধার কে দিলো। আঁধার ড্রাইভ করতে করতে হেসে আরুশের হাত থেকে ক্যান টা নিয়ে চুমুক লাগালো। সবাই সবার মতো করে ইনজয় করছে। হঠাৎ করেই গাড়ি ঝাক্কি খেলো। পিছনের সবাই কোনো রকম নিজেদের সামলে নিলো। গাড়ি অফ হয়ে গেছে। আঁধার বারবার গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। আরুশ বলল,

—“কি হলো গাড়ি থামালি কেনো?”

—“থামাই নি বন্ধ হয়ে গেছে। দাঁড়া দেখছি কি হয়েছে।”

আঁধার জিপ থেকে নেমে ডিক্কি খুললো। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো। কিন্তু কিছু হলো না। ইসী নেমে এসে জিজ্ঞেস করল,

—“কি হয়েছে?”

—“বুঝতে পারছি না। অয়ন দেখতো ধারে কোথাও গ্যারেজ আছে নাকি?”

অয়ন ফোনে ম্যাপ সরকার করে দেখলো তারপর বলল,

—“নো ব্রো। আমরা ঢাকার বাইরে আছি। আর এখানে ধারে কাছে কোথাও গ্যারেজ নেই। একটা আছে কিন্তু সেটা অনেক দুরে।”

—“ওকে, তুই ফোন করে ঢাকা থেকে ম্যাকানিক ডাক।”

—“কিন্তু ব্রো এখন ম্যাকানিক ডাকলেও আসতে আসতে সকাল হয়ে যাবে। ততক্ষণ আমরা এখানে কি করবো?”

ইসী অ্যাক্সসাইটেড প্রবল হয়ে বলল,

—“বন ফায়ার করবো। খুব মজা হবে।”

আরুশ ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

—“পরেছি বিপদে আর ইনি আসছে বন ফায়ার করতে।”

রুশা বলল,

—“আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না।”

ইসী আঁধারের দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে বলল,

—“প্লিজ দোস্ত না করিস না। দেখ হালকা ঠান্ডা ও পরেছে আর জানিস আমার অনেক ইচ্ছে ছিল এরকম অয়েদারে বন ফায়ার করার। আজকে সুযোগ পেয়েছি। প্লিজ।”

আঁধার বলল,

—“আপন আর আসিক তোরা কাঠ জোগাড় কর। অয়ন তুই বিয়ার আর ফাস্ট ফুড গুলো নিচে নামা। আর আরুশ তুই গাড়ি থেকে ম্যাসবক্স নিয়ে নিচে আয় আগুন জ্বালাতে হবে।”

আরুশ ইসী কে হুকুম দিয়ে বলল,

—“ওই পেত্নি তুই বসে থাকবি কেনো? গাড়ি থেকে আমার আর আঁধারের গিটার দুটো নামিয়ে সুন্দর করে নিয়ে আয়।”

রুশা বলল,

—“আমি কি কোনো সাহায্য করতে পারি?”

আরুশ হেসে বলল,

—“না, সব তো হয়েই গেছে। তুমি আবার কি করবে?”

ইসী চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। খুব রাগ লাগছে ওর। ইচ্ছে করছে আরুশ কে কেটে কুচি কুচি করে গরম তেলে ভেজে খেয়ে ফেলতে। আরুশ হাসতে হাসতে ম্যাসবক্স নিয়ে আঁধারের কাছে চলে গেল।
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১৭

সময়টা সন্ধ্যার। আকাশে ইতি মধ্যে তাঁরারা উঁকি দিচ্ছে। থালার মতো গোল চাঁদ টা নিজের আলোয় শত অন্ধকারকে হার মানাচ্ছে। কিছু অবাধ্য মেঘ বারবার চাঁদ টিকে নিজের আলো ছড়াতে বাঁধা দিচ্ছে। জোনাকি পোকারা ও নিজেদের সবুজ আলোয় মুখরিত করছে চারপাশ। জ্বল জ্বল করে জ্বলছে আগুনের শিখা। আর ওই আগুনের শিখা কে কেন্দ্র করে বসে আছে আঁধার,আরুশ,আসিক, অয়ন,আপন,ইসী আর রুশা। সবাই গোল হয়ে গল্পের ঝুঁড়ি নিয়ে বসেছে। আসিক একটা বোতল নিয়ে বলল,

—“সবাই মিলে একটা গেইম খেলা যাক।”

ইসী কৌতুহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,

—“কি গেইম?”

আসিক বোতল টা নিচে ঘুরিয়ে বলল,

—“আমি এই বোতল টা ঘুরাবো। এই বোতল যাদের দিকে গিয়ে থামবে তারা একে অপরকে নিজের ইচ্ছে মতো প্রশ্ন করবে। এবং ওই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে সবাইকে। আর যদি উওর দিতে না পারে তাহলে তাকে পানিসমেন্ট হিসেবে একটা টাস্ক দেওয়া হবে যেটা তাকে করতে হবে।”

সবাই আসিকের বলা গেইম খেলতে রাজি হলো। আসিক সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল,

—“তো সবাই রেডি?”

সবাই হুল্লোড় করে বলল,

—“ইয়েস”

আসিক বোতল ঘুরানো শুরু করলো। বোতল টা কিছুক্ষণ ঘুরে গিয়ে ওর আর আরুশ দিকে থামলো। আরুশ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আসিক কে প্রশ্ন করলো,

—“তোর আর সুপ্রিয়া’র মধ্যে কি চলছে?”

আসিক আরুশের কথা শুনে ভড়কে গেল। অন্যরাই ফাটা চোখে তাকিয়ে আছে আরুশের দিকে। আসিক জোড় পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,

—“কি চলবে কিছু না। ও তোর মামাতো বোন মানে আমারো বোন। ও ভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? আমি সত্যি বলছি।”

আরুশ এখনো আসিকের দিকে ওভাবেই তাকিয়ে আছে। ইসী তাড়া দিয়ে বলল,

—“আরে ভাই জলদি করে না। এই আসিকের বাচ্চা তুই তাড়াতাড়ি প্রশ্ন কর তারপর আবার বোতল ঘোরা।”

আসিক আরুশের দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করলো,

—“তুই সেদিন আমার কাজিন রিয়ার সাথে কি করছিলি?”

ইসী কড়া দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকায়। আরুশ রুক্ষ গলায় বলল,

—“তোর ওই গায়ে পরা কাজিন কে রাস্তায় পরে পাই। রিকশা পাচ্ছিল না তাই জোর করে আমার ঘাড়ে চেপে বসে। আমি ও কোনো উপায় না পেয়ে লিফট দেই। এন্ড ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার এইসব মেয়ের প্রতি কোনো ইন্ট্রেস নেই।”

আরুশের জবাবে আসিকের মুখটা চুপসে গেল। ইসী যেন এটাই শুনতে চাইছিল আরুশের মুখে। আসিক মুখটা ছোট করে বোতল ঘুরাতে শুরু করলো। এবার বোতল গিয়ে ইসী আর রুশার দিকে থামলো। ইসী ফটাফট জিজ্ঞেস করলো,

—“এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছো? মানে কটা ছেলেকে ঘুরিয়েছো?”

ইসী”র কথায় রুশা থতমত খেয়ে গেল। আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

—“এগুলো কোন ধরনের প্রশ্ন?”

—“প্রশ্ন তো প্রশ্ন’ই তার আবার ধরন আছে নাকি? আর গেইমে এধরণের কোনো রুলস দেওয়া ছিল না। বলা হয়েছে নিজেদের ইচ্ছে মতো প্রশ্ন করতে পারব। আমি তাই করেছি। রুশা অ্যান্সার দেও।”

রুশা হাসার চেষ্টা করে বলল,

—“আমি এখনো পর্যন্ত রিলেশনে যাই নি।”

ইসী’র বিশ্বাস হলো না। কিন্তু ও আর কথা বাড়ালো না। রুশা প্রশ্ন করলো,

—“তোমরা সবাই এক সাথে আছো কত বছর ধরে?”

—“দশ বছর।”

রুশা শুনে অনেক অবাক হলো। দশ বছর ধরে এরা সবাই এক সাথে আছে ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। আসিক আবার বোতল ঘুরানো শুরু করলো একে একে সবার দিকে বোতল যাচ্ছে সবাই সবাইকে প্রশ্ন করছে। এবার বোতল গিয়ে থামলো রুশা আর আঁধারের দিকে রুশা প্রশ্ন করলো,

—“আপনি সব সময় এতো চুপচাপ বসে থাকেন কেন?”

আঁধার কাঁটা ভ্রুটা কিছুটা উঁচু করে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত স্বরে জবাব দিলো,

—“ভালোবাসি তাই”

রুশা আর কিছু বলল না। আরুশ আঁধার কে ধাক্কা মেরে বলল,

—“এবার তোর পালা প্রশ্ন কর?”

আঁধার ঘাড় কাত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলো,

—“এতো গুলো ছেলের সাথে একা আসতে ভয় করে নি?”

আঁধারের এমন ভয়ঙ্কর কথায় রুশা কেঁপে উঠলো। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে হেসে বলল,

—“মোটেও না। ভয় কিসের? আর আমি তো একা নই ইসী ও তো আছে। ওর যখন ভয় করছে না। তখন আমার কেন ভয় করবে।”

আঁধার বাঁকা হাসি দিলো। আসিক আবারো বোতল ঘুরানো শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর বোতল টা ইসী আর আরুশের দিকে মুখ করে থামলো। ইসী কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো,

—“কাউকে ভালোবাসিস? মানে তোর কোনো গালফ্রেন্ড আছে?”

—“এখনো পর্যন্ত তো না সামনে দেখা যাক কি হয়।”

ইসী সবার আড়ালে বিজয়ীর হাসি দিলো। খেলা শেষে আরুশ আর আঁধারের গানে মেতে উঠলো সবাই। কিন্তু হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি শুরু হলো। সবাই ছোটা ছুটি করে বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে শুধু দুটি মানুষ ছাড়া। আঁধার খোলা আকাশের নিচে এক’ই জায়গা চোখ বন্ধ করে বসে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা গুলো কে অনুভব করছে। বৃষ্টিরা এসে আঁধার কে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সুঠাম দেহে সাদা শার্ট টা লেপটে গেছে। কপালের উপর পরে থাকা হালকা বাদামী চুলগুলো বেয়ে পানি পরছে। শুকনো লাল মেয়েলী ঠোঁট জোড়ায় বৃষ্টির ফোঁটা পরে সতেজ হয়ে উঠেছে। আঁধার চোখ মেলে তাকাতেই ওর চোখ আটকে যায় সদ্য ফোঁটা হলুদ ফুলের মতো রুশাতে। আঁধার তার বৃষ্টি’র পানিতে ভেজা স্বচ্ছ নীল মনি বিশিষ্ট চোখ দিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে রুশা কে দেখছে। আঁধার কে যদি এখন জিজ্ঞেস করা হয় ওর দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে কে তাহলে আঁধারের উওর হবে রুশা। আঁধারের বৃষ্টি বরাবর’ই খুব পছন্দ। এই বৃষ্টি যেন ওর ভিতরের এক আলাদা সত্তাকে জাগিয়ে তুলে। অনুভুতি গুলো ডানা মেলে। রুশা কে দেখে আঁধারের মনে এক অজানা অনুভুতি দাগা দেয়।

.

রুশা বাড়ি ফিরে শাওয়ার নিয়ে সবে মাত্র চুল পেচাতে পেচাতে বের হলো।

—“কি রে তোর চ্যালেঞ্জের কি হলো? পাটাতে পারলি?”

রুশা ভ্রু কুচকে ওর ফ্রেন্ড রিমার দিকে তাকালো। তারপর ভ্রু কুচকানো অবস্থাতেই বলল,

—“মানে?”

—“বোঝোনা কিছু? এখন না বোঝার ভান ধরছো?”

রুশা রিমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বেডের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে সোফায় বসে পরলো। রিমা গিয়ে রুশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,

—“বল না এমন করছিস কেন?”

রুশা বিরক্ত হোএ রেগে বলল,

—“কি বলব তোকে হ্যাঁ ? কি বলব? ওই সালা কে পোটানোর এতো চেষ্টা করছি কিন্তু ওই সালা আমাকে পাত্তা ও দিচ্ছে না! পুরো এক দিন এক রাত ওর পেছনে হুদাই নষ্ট করেছি।”

—“তার মানে তুই লিজার কাছে হেরে গেলি?”

রুশা সয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

—“নো ওয়ে। আমি একবার যা বলি তা’ই করি। ওই আঁধার রেজওয়ান কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে না পারলে আমার নাম রুশা চৌধুরী না।”

.

আরুশ ফোনে কথা বলছে আর মেইন রোড দিয়ে হাটছে।পেছনে বাকিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর হাটছে। আঁধার আরুশ কে বারবার ফোন রেখে দেখে শুনে হাটতে বলছে। কারণ ওরা মেইন রোড আছে। ফুল স্প্রিডে সব গাড়ি চলছে। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। কিন্তু আরুশ শুনছে না। দু’মিনিট দু’মিনিট করে কথা বলেই যাচ্ছে। আঁধারের নজর আরুশের উপরই। আরুশ বেখেয়ালি ভাবে রোড পাড় হচ্ছে। আঁধার খেয়াল করলো সামনে থেকে একটা গাড়ি ঝড়ের গতিতে আরুশের দিকে ছুটে আসছে। আরুশ রোডের একদম মাঝে আর আঁধার এবং বাকিরা রোডের এপাশে। আঁধার ছুটে যায় আরুশ কে বাচাতে কিন্তু আঁধারের যাওয়ার আগেই গাড়ি টা আরুশ কে সজোড়ে ধাক্কা মেরে চলে যায়। আঁধারের পা ওখানেই থেমে যায়। আরুশ গাড়ির ধাক্কা খেয়ে দূরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে। ইসী দেখে চিৎকার করে রাস্তার মাঝে বসে পরে। আরুশের মাথা থেকে ফিকনি দিয়ে রক্ত পরে ওর সারা শরীর ভিজিয়ে দেয়। আঁধার ওভাবেই দাড়িয়ে আছে এই ধাক্কা টা ওর মস্তিষ্ক নিতে পারছে না। আঁধারের যখন হুশ আসে ও দৌড়ে আরুশের কাছে ছুটে যায়। আপন ইসী কে ধরে রেখেছে আর অয়ন,আসিক ও আরুশের কাছে ছুটে যায়। আঁধার আরুশের মাথাটা কোলের মধ্যে নেয় আর কম্পিত গলায় ডাকে,

—“আরুশ? আরুশ? এই আরুশ?”

আসিক আঁধারের কাধে হাত রেখে বলল,

—“আঁধার ওকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আর টাইম ওয়েস্ট করা ঠিক হবে না।”

অয়ন ও সহমত হয়ে বলল,

—“আঁধার ও একদম ঠিক বলছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরুশ কে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”

আঁধারের চোখ ইতিমধ্যে লাল হয়ে উঠেছে। আঁধার ভারী গলায় বলল,

—“এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে আয়।”

আসিক একটা চলন্ত গাড়ি মাঝ পথে দাড় করায়। আঁধার আর অয়ন মিলে আরুশ কে গাড়িতে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায়। আপন ইসী কে নিয়ে অন্য গাড়ি করে হসপিটালে যায়। আরুশ কে অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবাই অপারেশন থিয়েটরের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটা নার্স থিয়েটর থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“আপনারা পেশেন্টের কি হন?”

অয়ন সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

—“আমরা সবাই ওর বন্ধু।”

আপন নার্স কে পশ্ন করলো,

—“কি হয়েছে সিস্টার? ও ঠিক আছে তো?”

—“পেশেন্টের অবস্থা খব’ই ক্রিটিক্যাল ইমিডিয়েটলি রক্ত দিতে হবে। আপনাদের মধ্যে যার ব্লাড গ্রুপ AB- সে আমার সাথে আসুন।”

আঁধার শান্ত গলায় বলল,

—“সিস্টার আমার ব্লাড গ্রুপ AB-”

অপারেশন শেষে আরুশ কে কেবিনে সিফ্ট করা হয়। দু ঘন্টা পর আরুশের জ্ঞান ফিরে। আরুশ চোখ মেলে সবাইকে দেখতে পায় শুধু আঁধার বাদে। আঁধার ওই দু ঘন্টা আরুশের পাশেই ছিল। এক সেকেন্ডের জন্যও ও ওখান থেকে নড়েনি। কিন্তু যখন দেখে আরুশে’র জ্ঞান ফিরছে তখন ও অভিমান করে ওখান থেকে চলে যায়। ইসী সেই কখন থেকে মরা কান্না করেই যাচ্ছে। ইসী’র এহেম কান্ডে আরুশ তো মহা অবাক। আরুশ অবাক ভঙ্গিতে’ই বলল,

—“এই পেত্নি তুই কাদছিস কেনো? মরে যাই নি এখনো বেঁচে আছি।”

আরুশে’র এই কথা যেন ইসী’র কান্না কে আরো তিন বারিয়ে দিলো। ইসী আরো জোরে জোরে কান্না করছে। আরুশ দুহাত দিয়ে নিজের দু’কান চেপে ধরে অয়ন কে বলল,

—“ওই সালা এই ছাগলটা কে থামা। না থাক থামাতে হবে না। একে এখান থেকে নিয়ে যা। আর আঁধার কে পাঠিয়ে দে।”

অয়ন মাথা চুলকে বলল,

—“এই ছাগল কে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আঁধার? ওকে কি করে পাঠাবো? এমনিতেই যা রেগে আছে তোর উপর!”

আরুশ হেসে বলল,

—“রাগ না অভিমান। অভিমান করে আছে।”

—“সে যা’ই হোক আমি পারবো না।”

আরুশ এবার রেগে বলল,

—“সালা এক লাথি মেরে বাংলাদেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো। যা গিয়ে ওকে বল আমি ডাকছি।”

অয়ন ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

—“এহ দাড়াতে পারে নাকি সন্দেহ সে আবার আসছে ভাঙা পা দিয়ে আমাকে লাথি মারতে।”

আরুশ ঝারি মেরে বলল,

—“তুই গেলি?”

অয়ন যেতে যেতে বলল,

—“যাচ্ছি তো।”

আরুশ বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলল,

—“তোরা ও যা।”

আরুশের এক কথায় সবাই বেরিয়ে গেল। আঁধার ওয়েটিং সিটে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে চোখ দুটো এখনো হালকা লাল। বাবা-মায়ের পর আঁধার সবচেয়ে বেশি আরুশকেই ভালোবাসে। কিন্তু আঁধারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অন্যের সামনে নিজের ফিলিংস গুলো প্রকাশ না করতে পারা। আঁধার সবার মতো বারবার বলতে পারে না ভালোবাসি। দেখাতেও পারে না। কিন্তু ওকে যারা সত্যিই ভালোবাসে তারা ওর দুর্বলতা সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। অয়ন কাচুমাচু করতে করতে আঁধারের সামনে এসে দাঁড়। আঁধার মাথা তুলে তাকিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে?”

অয়ন ঢোক গিলে বলল,

—“আরুশ তোকে ডাকছে।”

আঁধার কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে কেবিনের ভিতরে চলে গেল। আরুশ কাছে ডেকে বলল,

—“এখানে এসে বস।”

আঁধার একটা টুল টেনে বসল। আরুশ ওর হাত ধরে বলল,

—“রেগে আছিস না অভিমান করে আছিস? রেগে থাকলে মারতে পারিস আর অভিমান করে থাকলে বকতে পারিস। তোর মার ও আমি সহ্য করতে পারবো আর তোর বাকা ও। কিন্তু তোর এই দূরে দূরে থাকা সহ্য করতে পারবো না।”

আঁধার কিছু না বলেই আরুশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরুশ হেসে দিলো। ও জানতো এটাই হবে।

#চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here