October Darkness
পর্ব দুই
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
🍁
ভোর ৫টা আমেরিকার মিয়ামি ফ্লোরিডা শহরে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,প্লেন ল্যান্ড করলো কিছুক্ষন আগে..মিলি ত ঘুমে বিভোর হয়ে আছে কিন্তু আয়রা চোখ কিছুক্ষন আগে খুললো এনাউন্সমেন্টের আওয়াজে..সে মিলিকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে জাগালো,মিলি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো যদিও তার অভ্যাস প্লেনে জার্নি করা আর ঘুমানো..এইবার সে বাংলাদেশ এসেছিলো আয়রাকে নিতে।।
মিয়ামি ফ্লোরিডা শহর খুব ঠান্ডা আর বৃষ্টিস্নাত, খুব শীতল পরিবেশ..সারাবছরই বৃষ্টি হয় আর ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে..সবসময় গরম কাপর পরে থাকতে কিছু না কিছু এখানকার মানুষজনদের..আয়রা নিজের সিটবেল্ট খুলে,মিলি তাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরলো..এয়ারপোর্টের সব কার্যক্রম শেষে রওনা দিলো বাহিরে দিকে..বাহিরে একটা ক্যাব দেখে মিলি নিজের বাড়ির লোকেশন জানিয়ে,দুইজনে সে গাড়িতে উঠে রওনা দিলো।।
আয়রা গাড়ি থেকে বাহিরের পরিবেশ দেখছে,বাহিরের বৃষ্টি হওয়ার কারনে একটু একটু শীত লাগছে আয়রার..তবে মিলির অভ্যাস্ত থাকার কারনে তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না তার..আয়রার একটু সমস্যা হবে নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে,গাড়িতে থাকা অবস্থায় অনেক ভয়ংকর একটা আওয়াজ শুনতে পেলো,রুহকে কাপিয়ে দেয়ার মতো..আয়রা ধড়ফড় করে উঠলে,মিলি তাকে রিল্যাক্স করতে বলে..সে জানায়,এই গভীর জঙ্গল থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভুতুড়ে আওয়াজ আসে কিন্তু খোজ নিলে কোন হদিস পাওয়া যায় না,না এই আওয়াজের না যে খোজ নিতে যায় তার..মানুষ গায়েব হয়ে যায় খোজ নিতে যেয়ে এটা শুনে আয়রার হাত পায়ের লোম আচমকা দাড়িয়ে গেলো..গাড়ির গ্লাসটা উঠিয়ে দিলো,বাহিরের তাকানোর আর সাহস নাই তার।।
আধাঘন্টার মাঝে আয়রা পৌছে গেলো তার মামার বাসায়..কাঠের তৈরি দোতালা বাড়ি,চারিদিকে অনেক ঝাউ গাছ দিয়ে ঘেরা,আর আশেপাশেও এরকম অনেক বাড়ি আছে আসলে পুরো শহরটায় এরকম গা ছমছমে শীতল পরিবেশ..মিলি আয়রার ট্রলি ব্যাগটা নিতে চাইলে সে বাধা দেয়,তারপর দরজার কাছে এসে কলিংবেল বাজালো।।
দরজা খুললো শিমুল বেগম(আয়রার নানী),৬৫ বছরের বয়স্ক মহিলা..যৌবনকালে যে উনি এক সময় অসম্ভব সুন্দরী নারী ছিলেন তা উনার চেহারা ছাপ দেখে বুঝা যায়..উনি দরজা খুলেই আয়রাকে জড়িয়ে ধরলো।।
“হুহ!!আমাকে ত মনে হচ্ছে ভুলেই গেছে!!” মিলি ভেঙচি দিয়ে বললো।।
শিমুল আয়রাকে ছেড়ে হেসে,মিলির কান হালকা টান দিলো..মিলিও বাচ্চাদের মতো আ আ করে উঠলো মিছে মিছে..তারপর উনি মিলিকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।।
মামা সোফাতেই বসে ছিলেন,মনে হচ্ছে ঘুম থেকে তাকে জোর করে তোলা হয়েছে পরনে তার এখনো রাতের জামা,কেমন ঢুলুঢুলু করছে তার দুচোখ..মিলি আর আয়রাকে দেখে মামা কেমন ঘুমন্ত চোখেই প্রশান্ত হাসি দিয়েছে।।
“আমার মা তাহলে হাজির হলো এই ভিনদেশী শহরে?” মামা বললো।।
“হ্যা তা ত আল্লাহ পাকের রহমতে চলে আসছি মামু” আয়রা বললো।।
“মিলি?যাও নিজের রুমে আর আয়রাকে তার ঘরে দেখিয়ে দাও?আর মা তোমার এতো সকালে উঠা বারন তাই উঠেছো??নাতনী এসেছে এইবার না হয় ঘুমোতে যাও??” রাজ্জাক সাহেব বললো(আয়রার মামা)
নানী নিজের রুমে গেলো তার আগে আয়রা আর মিলিকে তাদের রুমে খাবার দিয়ে আসলো,মিলি নিজের রুমে ত গেলো সাথে আয়রাকে তার রুম দেখিয়ে দিলো।।
আয়রার রুমটা দোতালা কাঠের ঘর,অবশ্য পুরো বাড়িটায় কাঠের তৈরি তবুও বাড়িটার অপরুপ সৌন্দর্য আছে..ছোট রুমের ভিতরে একটা সিঙ্গেল বেড,একটা বেড সাইড ল্যাম্প,পাশে কারুকার্য বসানো গোল আয়না,এটাচ ওয়াশরুম,আর একটা পুরোনো ছোট আলমারি, জানাল্র সাথে বেড হওয়ায় সবথেকে বেশি প্রশান্তির..বারান্দা আছে ছোট করে,মন খারাপ হইলে হাওয়া বাতাস খেয়ে মন ভালো করা যাবে..সব মিলিয়ে মনের মতোন ঘর পেয়েছে আয়রা।।
লাগেজ থেকে জামা বের করে চেঞ্জ করে নিয়ে খাবার খেয়ে নিলো,বারান্দার দিকে একটু উকি মেরে লম্বা বুকভর্তি নিঃশ্বাস নিলো..ঠান্ডা হিম শীতল আবহাওয়া গা কে কাটা দিয়ে উঠছে বারবার আয়রার..বারান্দা দিয়ে সে দেখতে পাচ্ছে গভীর জঙ্গলে ঘেরা চারপাশ, একটু পরপর ঝি ঝি পোকার ডাক..আয়রা ঘুম দিলো শান্তিভাবে,অনেকটায় সকাল এখন তবুও ঘুমাতে চায় সে।।
বেলা ২ টা,
শিমুল এসে আয়রাকে উঠিয়ে দিলো দুপুরে খাবারের জন্য কিন্তু মিলি এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে মুখ হা করে..আয়রা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলে,তার মামীকে দেখতে পায়..আসলে উনি অনেক গম্ভীর মুখি মানুষ বুঝা যায় না উনার মনে কখন কি চলছে..আয়রা সালাম দিয়ে ডাইনিং এ বসলো..মেন্যুতে ছিলো চিকেন কারি,সালাদ আর প্লেইন রাইস..নানু জানেন চিকেন আয়রার পছন্দ ত তাই তিনি আজকে এটা রান্না করেছেন..এদিকে মিলিও আসলো নিচে,বুঝা যাচ্ছে সে আরো ঘুমাতে চায়।।
“আয়রা যেহেতু ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট এখানে কোন ব্যাসিস নিয়ে পড়তে চাও??” রাজ্জাক জিজ্ঞেস করলো।।
“মামা আমি বায়োলজি নিয়ে পড়তে চাই আর বিভিন্ন ভিনগ্রহের প্রানী বা যেকোন অদ্ভুত জিনিসের প্রতি আগ্রহ বেশি আমার ওই বেসিস নিয়ে পড়তে চাই,রিসার্চ করতে চাই?” আয়রা মুখে ভাত দিয়ে বললো।।
“ওকে আমি দেখি এমন কোন ভার্সিটি আছে কিনা খোজ নিব খেয়ে নিয়ে?আর মিলি পড়াশোনাতে মন দাও অনেক ঘুরা হলো” রাজ্জাক বললো।।
মিলি ঢুলতে ঢুলতে হ্যা বললো,মামী চুপ হয়ে আছে..আপনমনে ভাত খাচ্ছে,নানী এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে আয়রাকে।।
চলবে🍁
গল্প কেমন হয়েছে জানাবেন,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।